মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – পরিবেশ তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ – পরিবেশ এবং মানব জনসমষ্টি – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

Rahul

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের একটি অংশ হিসাবে পরিবেশ তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনা করা হয়। পরিবেশ হলো আমাদের চারপাশের সবকিছুর মিলিত সমষ্টি, যা বায়ু, জল, মাটি, প্রানী, উদ্ভিদ এবং অন্যান্য সংজ্ঞায়িত এবং অসংজ্ঞায়িত উৎসগুলি সংক্রান্ত। এই বিজ্ঞানটি পরিবেশের সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে, মানুষের পরিবেশের প্রভাব এবং মানব জনসমষ্টির উপরের প্রভাব নির্ধারণ করে।

Table of Contents

পরিবেশের সম্পদ বৃদ্ধি, উৎপাদন এবং বিপণনের মাধ্যমে মানুষের অর্থনীতি এবং সমাজের উন্নতি ঘটার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। একটি পরিবেশসম্পদের মূল উৎস হলো মাটি, যা মানুষের খাদ্য উৎপাদনের জন্য প্রধান উৎস।

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সমস্যাগুলি উল্লেখ করো।

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সমস্যা হলো বৃদ্ধিশীল জনসংখ্যার আন্দোলন ও সামরিক এলাকা, অপরিপাক সেবাপ্রাপ্তি ও বেসামরিক রাষ্ট্র উপাত্তের চাপে উদ্ভব হওয়া সমস্যা।

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সমস্যা

উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা একটি দুশ্চিন্তার বিষয়, যেটি উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করে। ফলে অর্থনৈতিক পরিকাঠামো ভেঙে পড়ে এবং বিভিন্ন প্রকার সমস্যার সৃষ্টি হয়। নীচে কয়েকটি সমস্যা সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।

  • বাসস্থানের অভাব জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মানুষের বাসস্থানের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। বাসস্থান নির্মাণের জন্য গ্রামাঞ্চলে বহু বনভূমি এবং চাষের জমি পরিষ্কার করে ব্যবহার করা হচ্ছে।
  • খাদ্যসংকট জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য সমস্যাও প্রকট আকার ধারণ করছে। একই জমিতে বার বার চাষ করে ফসল ফলানোর ফলে জমির উর্বরাশক্তি কমে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশগুলির ক্ষেত্রে তাদের মানুষের খাদ্য উৎপাদন ও তার সঠিক বণ্টন করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
  • জলদূষণ ও মিষ্টি জলের অভাব জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষিতে ব্যবহৃত কীটনাশক, শিল্পজাত বিষাক্ত পদার্থ, রাসায়নিক সার এবং আবর্জনার দ্বারা জলদূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে ভূগর্ভস্থ্য জল তোলার ফলে মিষ্টি জলের পরিমাণও দিনের পর দিন ক্রমশ হ্রাস পেতে শুরু করেছে।
  • বায়ু দূষণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মানুষ বাসস্থান, রাস্তাঘাট প্রভৃতি নির্মাণের জন্য গাছ কেটে ফেলেছে। ফলে বায়ুতে কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে সালোকসংশ্লেষের হার হ্রাস পাচ্ছে এবং বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হতে পারছে না।
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সমস্যাগুলি উল্লেখ করো ।
  • প্রাকৃতিক সম্পদের অতিব্যবহার জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে অনবীকরণযোগ্য সম্পদগুলি ধীরে ধীরে শেষ হতে চলেছে।
  • চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য বিভ্রাট জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে হাসপাতালে রোগগ্রস্তদের চিকিৎসার জন্য শয্যা, প্রকৃত চিকিৎসা এবং ওষুধ পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
  • বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তন ও বিশ্ব উষ্ণায়ণ জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত নগরায়ণের ফলে নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাসের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধীরে ধীরে গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রিনহাউসের প্রভাবে পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে অর্থাৎ, বিশ্ব উষ্ণায়ণ ঘটছে।
  • অরণ্য ও বাস্তুতন্ত্রের ক্ষয় জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মানুষের চাহিদা পুরণ করতে গিয়ে জলাভূমি বন্ধ করতে হচ্ছে, ফলে বহুপ্রাণী প্রজাতি বাসস্থান হারাচ্ছে এবং অবলুপ্ত হচ্ছে। এইভাবে বাস্তুতন্ত্রের ক্ষয়সাধন ঘটছে। এ ছাড়া বনজ দ্রব্য (যেমন — কাঠ, মধু) আহরণ, কৃষিজমির বিস্তার, গবাদিপশুর চারণভূমি বৃদ্ধি প্রভৃতি নানা কারণে বর্তমানে অরণ্য ধ্বংসের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।
  • আবর্জনা বৃদ্ধি জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে রাস্তাঘাটে আবর্জনার পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। অনেক সময় নর্দমায় আবর্জনা জমে জনস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করছে।

জনসংখ্যা বিস্ফোরণ কাকে বলে? জনসংখ্যা বৃদ্ধি কীভাবে জনস্বাস্থ্য বিঘ্নিত করে, তা সংক্ষেপে লেখো।

জনসংখ্যা বিস্ফোরণ হলো অবাধ্য ক্রমে বৃদ্ধি পাওয়া জনসংখ্যার অব্যাহতি এবং তার ফলে সমাজ, অর্থনীতি ও পরিবেশের সমস্যার সৃষ্টি।

জনসংখ্যা বিস্ফোরণ

অল্প সময়ে পৃথিবীর জনসংখ্যার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনাকে জনসংখ্যা বিস্ফোরণ বলে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জনস্বাস্থ্য

জনসংখ্যা বৃদ্ধি যেভাবে জনস্বাস্থ্যকে বিঘ্নিত করে, তা নীচে উল্লেখ করা হল।

  • খাদ্যাভাব ও অপুষ্টি জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কৃষিজমির অভাবে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং খাদ্যের অভাব দেখা যায়। খাদ্যাভাব এবং অপুষ্টি জনস্বাস্থ্যকে ব্যাহত করে।
  • শিল্পঘটিত দূষন ও জনস্বাস্থ্য বৃহৎ জনসংখ্যার বিভিন্ন চাহিদা মেটাতে প্রচুর সংখ্যায় শিল্পস্থাপন করা হয়েছে। এইসব শিল্প থেকে নির্গত ধোঁয়া, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ, ধাতব বর্জ্য পদার্থ ক্রমেই বায়ু, জল ও মাটিকে দূষিত করে তোলে। এর ফলে জনস্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে।
জনসংখ্যা বিস্ফোরণ কাকে বলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি কীভাবে জনস্বাস্থ্য বিঘ্নিত করে, তা সংক্ষেপে লেখো।
  • আবর্জনাঘটিত রোগের প্রকোপ জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আবর্জনার পরিমাণ বাড়ে। আবর্জনা সময়মতো অপসারণ করা না হলে, সেখানে ইঁদুর, মাছি, মশার উপদ্রব বাড়ে। সেখান থেকে কলেরা, বসন্ত, প্লেগ, ম্যালেরিয়া প্রভৃতি রোগের প্রকোপ বেড়ে জনস্বাস্থ্য বিঘ্নিত করে।
  • চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা হ্রাস জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য শয্যা এবং ওষুধ পাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। অনেক সময় শয্যার অভাবে মেঝেতে শুইয়ে রোগীর চিকিৎসা করতে হয়।

ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ কী? জনসংখ্যা বৃদ্ধির কুফলগুলি উল্লেখ করো।

ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হলো উচ্চ জন্মহার ও ক্রমবর্ধমান জীবনযাপনের ফলে কম মৃত্যুহার ও বৃদ্ধি প্রবৃদ্ধির সংক্রমণ।

ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ

জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণগুলি হল — 1. চিন, জাপান, ফ্রান্স, ইতালি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি দেশের তুলনায় ভারতে জন্মহার অনেক বেশি। শিক্ষার অভাব, কুসংস্কার ও ধর্মীয় প্রভাবের জন্যই মূলত জন্মহার বেশি। 2. দেশবিভাগের পরবর্তী দশকগুলিতে প্রতিবেশি দেশগুলি, যেমন- বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল থেকে বিপুল সংখ্যায় শরণার্থী ভারতে চলে আসায় জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। 3. খাদ্য, ওষুধপত্র ও অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র অধিক উৎপাদনের ফলে মানুষের গড় আয়ু যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির ফলে মৃত্যুর হারও কমেছে। 4. বিভিন্ন প্রকৃতিক দুর্যোগের আগাম অনুমান ও বিভিন্ন মহামারিজনিত রোগের প্রকোপ কম হওয়াতে জনসংখ্যাও ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির কুফল

জনসংখ্যা বৃদ্ধির কুফলগুলি হল — 1. জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে খাদ্যের জোগানের জন্য কৃষিব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করা হচ্ছে। এর ফলে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চলগুলি দ্রুত ধ্বংস করা হচ্ছে। 2. বৃহৎ জনসংখ্যার বিভিন্ন চাহিদা মেটাতে প্রচুর সংখ্যায় শিল্পস্থাপন করা হচ্ছে। এইসব শিল্প থেকে নির্গত ধোঁয়া, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ, ধাতু, বর্জ্য পদার্থ ক্রমেই বায়ু, জল ও মাটিকে দূষিত করে তুলছে। 3. যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে চলায় তা থেকে নির্গত ধোঁয়ায় বায়ুদূষণের মাত্রা ভীষণভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। 4. মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ ও খনিজগুলির ভাণ্ডার ক্রমেই নিঃশেষিত হচ্ছে। 5. জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে প্রবল খাদ্য সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

অ্যাজমা বা হাঁপানি কাকে বলে? অ্যাজমার পরিবেশগত কারণ সংক্ষেপে আলোচনা করো।

অ্যাজমা বা হাঁপানি হলো শ্বাসকোষের অবক্ষেপ বা সঙ্কোচনের ফলে শ্বাসক্ষতি ও ব্যাথা সহ দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস ক্ষমতা হারানো শ্বাসসমস্যা।

অ্যাজমা বা হাঁপানি

মানুষের শ্বাসনালী প্রদাহজনিত কারণে স্ফীত হয়ে বায়ুচলাচলের পথ রূদ্ধ করে ও শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য সমস্যার সৃষ্টি হওয়াকে অ্যাজমা বা হাঁপানি বলে। অ্যাজমা বা হাঁপানি হল একটি দীর্ঘকালীন পরিবেশ ঘটিত শ্বাসতন্ত্রীয় রোগ।

অ্যাজমার পরিবেশগত কারণ

অ্যাজমা অ্যালার্জিজনিত এবং অ্যালার্জিহীন দুই প্রকারের হয়। এখানে তাই দুই প্রকার অ্যাজমার পরিবেশগত কারণ আলোচনা করা হল।

অ্যাজমা বা হাঁপানি কাকে বলে অ্যাজমার পরিবেশগত কারণ সংক্ষেপে আলোচনা করো।
  • অ্যালার্জিজনিত অ্যাজমা এইপ্রকার অ্যাজমার জন্য দায়ী মূলত বায়ুদূষণ। পরিবেশের বিভিন্ন পদার্থ, যেমন — ধূলিকণা, পরাগরেণু ইত্যাদি অ্যালার্জেন তথা অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থ দেহের ভেতরে প্রবেশ করলে অ্যালার্জি ঘটে। অ্যালার্জি ঘটলে রক্তে ইওসিনোফিল কণিকার সংখ্যা বেড়ে যায়। ইওসিনোফিল ও মাস্ট কোশ থেকে হিস্টামিন, লিউকোট্রাইন নামক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয়। এগুলি ব্রংকিওলের সংকোচন ঘটিয়ে অ্যালর্জিজনিত অ্যাজমা সৃষ্টি করে। এইজাতীয় অ্যাজমা শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
  • অ্যালার্জিহীন অ্যাজমা এইজাতীয় অ্যাজমার জন্য দায়ী হল অত্যধিক ধূমপান ও ভাইরাস সংক্রমণ। অনেক সময় নাকের ভেতর পলিপ সৃষ্টি হলেও এইজাতীয় হাঁপানি বা অ্যাজমা ঘটে। এক্ষেত্রে ক্লোমশাখার প্রাচীরগাত্রে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। এর ফলে ক্লোমশাখার অন্তঃস্থ গহ্বরের ব্যস কমে যায় এবং অ্যালার্জিহীন অ্যাজমা ঘটে।

পরিবেশের ওপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব আলোচনা করো।

পরিবেশের ওপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব হলো সামরিক ও আবাসিক দ্বারা উপভোগ্য সংসাধন বা উৎপাদনের বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক সম্পদের উপচার ও সংরক্ষণের চাপ বা অপ্রশিক্ষিত ব্যবহার দ্বারা পরিবেশের দুর্বলতা ও বাতাসের দূষণ।

পরিবেশের ওপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব

পরিবেশের ওপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাবগুলি নীচে আলোচনা করা হল।

  1. অরণ্যের পরিমাণ হ্রাস বিপুল সংখ্যক জনগণের খাদ্যের চাহিদা মেটানোর জন্য কৃষিজমির পরিমাণ বাড়াতে হয়। এর জন্য বনাঞ্চল কেটে সাফ করে সেই জায়গায় চাষের জমি তৈরি করার ফলে পরিবেশ ব্যাহত হয়।
  2. প্রাকৃতিক দুর্যোগ জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাবে বনাঞ্চল ধ্বংস করা হচ্ছে। গাছপালা কাটার ফলে একদিকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে, অন্যদিকে ভূমিক্ষয়ের পরিমাণ বাড়ে। ভূমিক্ষয় থেকে নদীতে পলির পরিমাণ বাড়ে এবং নাব্যতা হ্রাস পায় ফলে বর্ষাকালে নদীর জল পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলিকে প্লাবিত করে তোলে অর্থাৎ, বন্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
  3. মাটির উর্বরাশক্তি হ্রাস অত্যধিক খাদ্যের চাহিদা মেটানোর জন্য একই জমিতে বারে বারে চাষ করতে হয়। ফলন বাড়ানোর জন্য রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়, যার ফলে মাটি অধিক অম্ল হয়ে যায় এবং মাটির উর্বরাশক্তি ক্রমে হ্রাস পায়।
  4. জলাশয়ের বাস্তুতন্ত্রে প্রভাব খাদ্যের চাহিদা মেটাতে পুকুর, ডোবা, নদী ও সমুদ্র থেকে অত্যধিক মাছ ধরার ফলে মাছের সংখ্যা বিপজ্জনকভাবে কমতে থাকে। ফলে জলাশয়ের বাস্তুতন্ত্রের প্রভূত ক্ষতি হয়।
  5. খনিজ সম্পদের ওপর প্রভাব ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে ভূগর্ভ থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে কয়লা, খনিজ তেল ও বিভিন্ন প্রকার খনিজ দ্রব্য আহরণ করতে হয়। ফলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে এদের অনেকগুলিই নিঃশেষিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
  6. দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পানীয় জল ও চাষের ক্ষেত্রে জলসেচের প্রয়োজনে ভূগর্ভস্থ জল অধিক মাত্রায় তুলে নেওয়ার ফলে একদিকে যেমন জলস্তর নীচে নেমে যায়, অন্যদিকে আর্সেনিক দূষণ, ফ্লুরাইড দূষণ প্রভৃতির আশঙ্কা বেড়ে যায়।
  7. সমাজের ওপর প্রভাব সমাজে দরিদ্রতা, বেকারত্ব, অপরাধ প্রবণতা প্রভৃতিও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সমানুপাতিক হারে বাড়তে থাকে।

আরো পড়ুন, মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – পরিবেশ তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ – জীববৈচিত্র্য এবং সংরক্ষণ – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

ব্রংকাইটিস কী? রংকাইটিসের পরিবেশগত কারণ লেখো।

ব্রংকাইটিস হলো হাঁপানির সমস্যা, যা শ্বাসপ্রশ্বাসের কষ্ট, শ্বাসপ্রশ্বাসের সংকোচ ও অবক্ষেপ সহ মানসিক ও শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করে।

ব্রংকাইটিস

ক্লোমশাখা বা ব্রংকাসের প্রদাহকে ব্রংকাইটিস বলা হয়। এটি হলে ফুসফুসের ব্রংকাস ও ব্রংকিওলগুলির শ্লেষ্মাপর্দায় প্রদাহ ঘটে। এটি প্রধানত দু-প্রকারের হয়। যথা — 1. তীব্র ব্রংকাইটিস, 2. দীর্ঘস্থায়ী ব্রংকাইটিস।

ব্রংকাইটিসের পরিবেশগত কারণ

ব্রংকাইটিসের জন্য দায়ী হল কিছু রাসায়নিক দূষক এবং ধোঁয়া। এইগুলি নীচে আলোচনা করা হল।

  1. রাসায়নিক দূষক বিভিন্ন রাসায়নিক দূষকগুলি পরিবেশ থেকে শ্বাসক্রিয়ার সময় নাক দিয়ে শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে। যেমন — অ্যাসবেস্টস, সিলিকন ইত্যাদি বায়ু থেকে শ্বাসক্রিয়ার সময় শ্বাসনালীতে প্রবেশ করলে ব্রংকাইটিস ঘটে।
  2. ধোঁয়া দীর্ঘকালিন বা ক্রনিক ব্রংকাইটিসের প্রধান কারণ হল ধোঁয়া। যেসব ব্যক্তি ঝালাই কাজের সঙ্গে যুক্ত এবং যারা দমকলকর্মী, তাদের ক্ষেত্রেও এই রোগের প্রকোপ লক্ষ করা যায়। পরিবেশদূষণকেও এই রোগের জন্য দায়ী করা যায়। কলকারখানার ধোঁয়া, গাড়ির পেট্রোল ও ডিজেলের ধোঁয়াও ব্রংকাইটিসের অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই রোগের ফলে শ্বাসনালীর ক্লোমশাখার শ্লেষ্মাস্তর থেকে অধিক পরিমাণ শ্লেষ্মা বা মিউকাস ক্ষরিত হয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে।

ক্যানসার রোগ সৃষ্টিতে পরিবেশের ভূমিকার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

ক্যানসার রোগ সৃষ্টিতে পরিবেশের ভূমিকা হলো জীবনযাপনের পরিবর্তন, দূষিত পরিবেশ, ক্ষতিগ্রস্থ খাদ্য এবং ক্ষতিগ্রস্থ জীবনযাপন পদ্ধতির প্রভাব।

ক্যানসার রোগ সৃষ্টিতে পরিবেশের ভূমিকা

ক্যানসার রোগটি জিন ও পরিবেশগত কারণের সমন্বয়ে ঘটে থাকে। ক্যানসার রোগ সৃষ্টিতে পরিবেশের ভূমিকা নীচে আলোচনা করা হল।

  • কীটনাশক ও আগাছানাশক কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রকার কীটনাশক, আগাছানাশক এবং তেজস্ক্রিয় পদার্থ খুব সহজেই মানবদেহে প্রবেশ করে ক্যানসার সৃষ্টি করে।
  • পরিবেশগত অধিবিষ বৈজ্ঞানিক গবেষণায় জানা গেছে পরিবেশগত অধিবিষের সঙ্গে ক্যানসারের যোগসূত্র স্থাপিত হয়েছে। কারসিনোজেন বা কারসিনোজেনিক পদার্থগুলি (যেমন — নিকোটিন, টার, কার্বন মনোক্সাইড, বেঞ্জোপাইরিন, হাইড্রোজেন সায়ানাইড প্রভৃতি) স্বাভাবিক কোশের DNA-র স্থায়ী পরিবর্তন ঘটায়। যার ফলে কোশের প্রোটোঅঙ্কোজিন ক্যানসার জিনে (অঙ্কোজিনে) রূপান্তরিত হয়। অঙ্কোজিন প্রকৃতপক্ষে ক্যানসার সৃষ্টি করে।
  • তামাক সেবন জর্দা, খৈনি ইত্যাদি সেবন করলে, তাতে উপস্থিত তামাক শরীরে প্রবেশ করে। তামাকে নিকোটিন নামক কারসিনোজেন থাকে, যা দীর্ঘদিন সেবন করলে দাঁত, মুখ, জিহ্বা ও গলায় ক্যানসার সৃষ্টি করে।
  • ধূমপান যারা নিয়মিত ধূমপান করে তাদের দেহে বেঞ্জোপাইরিন, দগ্ধ টার ইত্যাদি কারসিনোজেনিক পদার্থগুলি খুব সহজে প্রবেশ করে এবং ফুসফুসের ক্যানসার ঘটায়।
ক্যানসার রোগ সৃষ্টিতে পরিবেশের ভূমিকার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
  • তেজস্ক্রিয় পদার্থ যে সমস্ত ব্যক্তি তেজস্ক্রিয় পদার্থ নিয়ে নিয়মিত কাজ করে তাদের শরীরে তেজস্ক্রিয়তাজনিত ক্যানসার বেশি দেখা যায়। খনিতে কর্মরত শ্রমিকরা র‍্যাডন নামক তেজস্ক্রিয় গ্যাসের সংস্পর্শ এলে তাদের ফুসফুস ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • রাসায়নিক দূষক বিভিন্ন রাসায়নিক দূষক, যেমন — অ্যাসবেস্টস, ক্রোমিয়াম ইত্যাদির গুঁড়ো থেকেও ফুসফুসের ক্যানসার ঘটে। নির্মান কর্মী, ঝালাই-এর কাজে নিয়োজিত কর্মী, স্টিল কারখানার কর্মীদের ক্ষেত্রে খুব সহজেই অ্যাসবেস্টস, ক্রোমিয়াম ইত্যাদি দেহে প্রবেশ করে। সেখান থেকে ফুসফুসের ক্যানসারের প্রবণতা বাড়ে।
  • প্লাস্টিক দ্রব্য এ ছাড়া যে সমস্ত কর্মী প্লাস্টিকজাত দ্রব্য উৎপাদনের কারখানায় কাজ করে তাদের মধ্যে যকৃৎ ও ইউরিনারি ব্লাডারের ক্যানসারের প্রবণতা বেশি হয়।

সামগ্রিকভাবে বলা যায় যে, মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের পাঠটি পরিবেশের সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ সম্পর্কিত বিষয়গুলি আমাদের জানানোর ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের জ্ঞান প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে মানব জনসমষ্টির পরিবেশ সংরক্ষণ ও রচনাধর্মী সমাধানে বিশেষ গুরুত্ব দেয়।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer