মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের অধ্যায়ের মধ্যে একটি বিশেষ অংশ আছে পরিবেশ এবং তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ। পরিবেশ কমপক্ষে দুটি উপাদানের সমন্বয়, যেখানে একটি উপাদান অন্যটির অবস্থা প্রভাবিত করতে পারে। পরিবেশের উপাদানগুলি মানুষের জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যেমন বাতাস, জল, মাটি, উষ্ণতা, আলো, শব্দ ইত্যাদি। এগুলি পরিবেশের সম্পদ হিসেবে পরিচিত।
নাইট্রোজেন চক্র হল একটি মাইক্রোবিয়াল প্রক্রিয়া যা প্রকৃতির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি মাইক্রোবিয়াল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবেশের নাইট্রোজেন উপস্থিতি বৃদ্ধি করে। এই প্রক্রিয়া বাকস্পেশি নাইট্রোজেন অক্সাইড হিসেবে পরিবেশে ছাড়ায় যায়, যা সূস্থ জীবনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
জৈব-ভূরাসায়নিক চক্র কাকে বলে?
যে চক্রাকার পথে জীবদেহের গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় মৌলগুলি (C, H, O, N, P, S, Ca) পরিবেশ থেকে জীবদেহে এবং জীবদেহ থেকে পরিবেশে আবর্তিত হয়, তাকে জৈব- ভূরাসায়নিক চক্র বলে। প্রকৃতির জৈব-ভূরাসায়নিক চক্রগুলির মধ্যে অন্যতম হল নাইট্রোজেন চক্র।
পরিবেশে জৈব-ভূরাসায়নিক চক্রে ব্যাঘাত ঘটলে কী হতে পারে?
পরিবেশে জৈব-ভূরাসায়নিক চক্রে ব্যাঘাত ঘটলে বায়ুমণ্ডলের মৌলিক উপাদানের পরিমাণের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।
পরিবেশের মৌলিক উপাদানগুলির ঘাটতি না হওয়ার কারণ কী?
জীব পরিবেশ থেকে অনবরত বিভিন্ন প্রকার মৌলিক উপাদান গ্রহণ করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও পরিবেশে ওইসব উপাদানগুলির ঘাটতি হয় না, তার প্রধান কারণ — 1. জীব পরিবেশের কোনো মৌলিক উপাদানই স্থায়ীভাবে অপসারিত করে না। এ ছাড়া উপাদানগুলি অনির্দিষ্টকাল ধরে আবদ্ধ করেও রাখে না। 2. জীব পরিবেশ থেকে যেসব মৌলিক উপাদান গ্রহণ করে তা রেচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অথবা মৃত্যুর পরে পচনের মাধ্যমে পুনরায় পরিবেশে ফিরিয়ে দেয়।
নাইট্রোজেন চক্র কাকে বলে?
যে সুনির্দিষ্ট চক্রাকার পথে পরিবেশ থেকে নাইট্রোজেন জীবদেহে প্রবেশ করে ও দেহ থেকে আবার পরিবেশে ফিরে এসে পরিবেশে নাইট্রোজেনের সাম্য বজায় রাখে, তাকে নাইট্রোজেন চক্র বলে।
জীবদেহে নাইট্রোজেনের প্রয়োজনীয়তা কী?
জীবকোশ গঠনের প্রধান উপাদান হল প্রোটিন এবং এই প্রোটিনের প্রধান উপাদান হল নাইট্রোজেন। এই কারণে জীবদেহে নাইট্রোজেন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
ডিনাইট্রিফিকেশন কাকে বলে?
যে পদ্ধতিতে, জীবাণুর দ্বারা নাইট্রেট বা অন্য নাইট্রোজেন- ঘটিত যৌগ ভেঙে গিয়ে পুনরায় নাইট্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয় এবং তা পুনরায় বায়ুমণ্ডলে ফিরে যায়, তাকে ডিনাইট্রিফিকেশন বলে। সিউডোমোনাস, থায়োব্যাসিলাস প্রভৃতি ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া এই পদ্ধতি সম্পন্ন হতে সাহায্য করে।
কয়েকটি নাইট্রোজেন স্থিতিকারী (nitrogen fixing) ব্যাকটেরিয়ার নাম লেখো।
কয়েকটি নাইট্রোজেন স্থিতিকারী ব্যাকটেরিয়া হল — ক্লসট্রিডিয়াম, অ্যাজোটোব্যাকটর, রাইজোবিয়াম ইত্যাদি।
দুটি নাইট্রোজেন স্থিতিকারী উদ্ভিদের নাম লেখো যারা শিম্বগোত্রীয় নয়।
শিম্বগোত্রীয় নয় এমন দুটি নাইট্রোজেন স্থিতিকারী উদ্ভিদ হল – ঝাউ এবং পাইন।
অ্যামোনিফিকেশন কাকে বলে?
যে পদ্ধতিতে বিভিন্ন জীবাণুর দ্বারা উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃতদেহ অথবা প্রাণীর নাইট্রোজেনযুক্ত যৌগ অ্যামোনিয়ায় রূপান্তরিত হয়, তাকে অ্যামোনিফিকেশন বলে। ব্যাসিলাস মাইকয়ডিস এবং মাইক্রোকক্কাস প্রভৃতি অ্যামোনিফাইং ব্যাকটেরিয়া এই পদ্ধতি সম্পন্ন হতে সাহায্য করে।
নাইট্রিফিকেশন কাকে বলে?
যে পদ্ধতিতে বিভিন্ন জীবাণুর দ্বারা মৃত্তিকাস্থিত অ্যামোনিয়া, নাইট্রাইটে ও তারপর নাইট্রেটে রূপান্তরিত হয়, তাকে নাইট্রিফিকেশন বলে। নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া, যেমন — নাইট্রোসোমোনাস এবং নাইট্রোব্যাকটর এই পদ্ধতিটি সম্পন্ন করে।
অম্লীকরণ কীভাবে বাস্তুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে?
নাইট্রিক অক্সাইড (NO), অন্যান্য নাইট্রোজেনযুক্ত অক্সাইড ও সালফার অক্সাইডের সঙ্গে মিশে অ্যাসিড বৃষ্টি ঘটায়। অ্যাসিড বৃষ্টি বিভিন্ন অঞ্চলে মাটি এবং নদী বা হ্রদের জলের অম্লীকরণ ঘটায় ও বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতিসাধন করে।
বিয়োজক কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
বিয়োজক – যেসব আণুবীক্ষণিক জীব মৃত জীবদেহ অথবা জৈব রেচন বা বর্জ্যবস্তুর পচন ও বিয়োজন ঘটিয়ে বিভিন্ন জটিল জৈব যৌগকে সরল জৈব যৌগে বিশ্লিষ্ট করে এবং তা থেকে পুষ্টি লাভ করে, তাদের বিয়োজক বলে।
উদাহরণ – ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি।
পরিবেশে বিয়োজক কী ভূমিকা পালন করে?
বিয়োজক মৃত উৎপাদক ও খাদকের দেহকে বিয়োজিত করে সরল মৌলিক উপাদানে পরিণত করে। ফলে বাস্তুতন্ত্রে বিভিন্ন মৌলিক উপাদান কখনোই নিঃশেষ হয়ে যায় না এবং পরিবেশে উপাদানগুলির ভারসাম্য বজায় থাকে। তা ছাড়া, মৃত জীবদেহের বিয়োজন ঘটিয়ে বিয়োজক পরিবেশদূষণ করে।
নাইট্রোজেন সংযোজন বা স্থিতিকরণ বলতে কী বোঝ?
বায়ুর নাইট্রোজেন কয়েকটি পদ্ধতিতে মাটিতে মেশে এবং নাইট্রোজেনঘটিত যৌগে পরিণত হয়, সেই পদ্ধতিগুলিকে একত্রে নাইট্রোজেন সংযোজন বা স্থিতিকরণ বলে।
বজ্রপাতের সময়ে বাতাসের নাইট্রোজেন গ্যাস অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কী তৈরি করে?
বজ্রপাতের সময়ে বাতাসের নাইট্রোজেন গ্যাস অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নাইট্রিক অক্সাইড (NO) এবং নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড (NO2) গঠন করে।
N2 + O2→2NO, 2NO + O2→2NO2
নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড বৃষ্টির জলে দ্রবীভূত হয়ে কী তৈরি করে?
নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড বৃষ্টির জলে দ্রবীভূত হয়ে নাইট্রাস অ্যাসিড (HNO2) এবং নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3)-এ পরিণত হয়।
2NO2+ H2O→HNO2 + HNO3
লেগহিমোগ্লোবিন কী?
লেগহিমোগ্লোবিন হল শিম্বগোত্রীয় উদ্ভিদের নাইট্রোজেন সংবন্ধনকারী অর্বুদে উপস্থিত গোলাপি বর্ণের রঙ্গক পদার্থ, যা রাসায়ানিকভাবে হিমোগ্লোবিন সদৃশ। এই রঙ্গকটি অর্বুদ, ব্যাকটেরয়েড এবং তার চারাপাশের পোষক কোশের কোশপর্দার মধ্যবর্তী স্থানে থাকে। এই রঙ্গকটি হল অক্সিজেন গ্রাহক, যা মুক্ত অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে।
পতঙ্গভুক উদ্ভিদের পাতাগুলি বিভিন্নভাবে রূপান্তরিত হয় কেন?
পতঙ্গভুক মাংসাশী উদ্ভিদেরা যে মাটিতে বৃদ্ধি পায়, সেখানে নাইট্রোজেনের ঘাটতি দেখা যায়। নাইট্রোজেনের চাহিদা মেটানোর জন্য এরা পতঙ্গ ধরে। সেইজন্য এই উদ্ভিদের পাতাগুলি বিভিন্নভাবে রূপান্তরিত হয়। এরা প্রোটিন ভঙ্গক উৎসেচকের সাহায্যে প্রাণীজ প্রোটিনকে ভেঙে সরলতর করে। যা উদ্ভিদ দ্বারা শোষিত হয়। যেমন – সূর্যশিশির, কলশপত্রী প্রভৃতি।
হিউমাস কাকে বলে?
জীবের মৃত্যুর পরে, সেই মৃতদেহ পচে গলে মাটির সাথে মিশে যে জৈববস্তু তৈরি হয়, তাকে হিউমাস বলে। হিউমাস প্রধানত তিন প্রকারের হয় — কাঁচা হিউমাস, পিট হিউমাস এবং মৃদু হিউমাস।
মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধিতে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা কী?
রাইজোবিয়াম, ক্লসট্রিডিয়াম প্রভৃতি ব্যাকটেরিয়া বায়ুর মুক্ত নাইট্রোজেনকে, নাইট্রোজেনের বিভিন্ন যৌগে পরিণত করে মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে, ফলে জমির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি পায় ৷
মাটিতে বসবাসকারী অণুজীবদের গুরুত্ব কী?
মাটিতে বসবাসকারী অণুজীবেরা বিয়োজনের মাধ্যমে জৈববস্তু (হিউমাস) গঠন করে, যা মাটির মৌলের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে এবং তার ফলে মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি পায়।
জীবজ নাইট্রোজেন আবদ্ধকরণ বলতে কী বোঝ?
নীলাভ-সবুজ শৈবাল বা সায়ানোব্যাকটেরিয়া এবং কিছু বিশেষ প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া, বাতাসের নাইট্রোজেনকে বিশেষ উৎসেচক, নাইট্রোজিনেজ-এর সাহায্যে বিজারিত করে অ্যামোনিয়ায় পরিণত করে এবং প্রোটোপ্লাজমে অঙ্গীভূত করে। একে জীবজ নাইট্রোজেন আবদ্ধকরণ বলে।
নাইট্রোজেন চক্রের তাৎপর্য লেখো।
1. নাইট্রোজেন চক্রের মাধ্যমে পরিবেশে নাইট্রোজেনের ভারসাম্য রক্ষিত হয়। 2. জীবদেহের কোশ গঠনের জন্য যে নাইট্রোজেনের প্রয়োজন হয়, তা নাইট্রোজেন চক্রের দ্বারা জীবদেহে পরিবাহিত হয়। ফলে জীবজগতের অস্তিত্ব বজায় থাকে।
নাইট্রোজেন চক্রে ব্যাকটেরিয়ার কাজ কী?
নাইট্রোজেন চক্রে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছু ব্যাকটেরিয়া পরিবেশ থেকে মুক্ত নাইট্রোজেন সংবন্ধন করে মাটিতে নাইট্রাইট-রূপে আবদ্ধ করে। পরে অন্য কিছু ব্যাকটেরিয়া মাটির নাইট্রাইটকে জারিত করে নাইট্রেটে পরিণত করে। নাইট্রোজেন চক্রের অন্তিম পর্যায়ে, মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহকে বিশ্লিষ্ট করে ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন প্রকার মৌলিক উপাদান পরিবেশে মুক্ত করে।
নাইট্রিফিকেশন প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা কী?
বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃতদেহ এবং বর্জ্য পদার্থে উপস্থিত নাইট্রোজেন অ্যামোনিয়ায় পরিণত| হয়। নাইট্রোসোমোনাস নামক ব্যাকটেরিয়া অ্যামোনিয়াকে জারিত করে নাইট্রাইটে পরিণত করে। পরে নাইট্রোব্যাকটর নামক ব্যাকটেরিয়া মাটির নাইট্রাইটকে জারিত করে নাইট্রেটে পরিণত করে। এইভাবে ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে নাইট্রোজেন মাটিতে আবদ্ধ হয়।
আরো পড়ুন, মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – পরিবেশ তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ – পরিবেশদূষন – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
পরিবেশ এবং তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। পরিবেশের উপাদানগুলি মানুষের জীবন ও প্রাণীজগতের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। মানুষ এবং প্রাণীরা পরিবেশের উপাদানগুলি ব্যবহার করে আপনাদের প্রয়োজনে তৈরি করে নেয় এবং পরিবেশের সংরক্ষণ করে থাকেন। নাইট্রোজেন চক্র একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যা পরিবেশের নাইট্রোজেন সংরক্ষণে সাহায্য করে। এটি পরিবেশের নাইট্রোজেন উপস্থিতি বৃদ্ধি করে এবং সাধারণ জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও এটি সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ।