আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের পঞ্চম অধ্যায় “পরিবেশ, তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ” অধ্যায়ের ‘নাইট্রোজেন চক্র‘ বিভাগের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

জৈব-ভূরাসায়নিক চক্র কাকে বলে?
যে চক্রাকার পথে জীবদেহের গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় মৌলগুলি (C, H, O, N, P, S, Ca) পরিবেশ থেকে জীবদেহে এবং জীবদেহ থেকে পরিবেশে আবর্তিত হয়, তাকে জৈব-ভূরাসায়নিক চক্র বলে। প্রকৃতির জৈব-ভূরাসায়নিক চক্রগুলির মধ্যে অন্যতম হল নাইট্রোজেন চক্র।
ব্যবহৃত হলেও পরিবেশের মৌলিক উপাদানগুলির ঘাটতি না হওয়ার কারণ কী?
জীব পরিবেশ থেকে অনবরত বিভিন্নপ্রকার মৌলিক উপাদান গ্রহণ করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও পরিবেশে ওইসব উপাদানগুলির ঘাটতি হয় না, তার প্রধান কারণ –
- জীব পরিবেশের কোনো মৌলিক উপাদানই স্থায়ীভাবে অপসারিত করে না। এ ছাড়া উপাদানগুলি অনির্দিষ্টকাল ধরে আবদ্ধ করেও রাখে না।
- জীব পরিবেশ থেকে যেসব মৌলিক উপাদান গ্রহণ করে তা রেচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অথবা মৃত্যুর পরে পচনের মাধ্যমে পুনরায় পরিবেশে ফিরিয়ে দেয়।
পতঙ্গভুক উদ্ভিদের পাতাগুলি বিভিন্নভাবে রূপান্তরিত হয় কেন?
পতঙ্গভুক মাংসাশী উদ্ভিদেরা যে মাটিতে জন্মায়, সেখানে নাইট্রোজেনের ঘাটতি দেখা যায়। নাইট্রোজেনের চাহিদা মেটানোর জন্য এরা পতঙ্গ ধরে। সেইজন্য এই উদ্ভিদের পাতাগুলি বিভিন্নভাবে রূপান্তরিত হয়। এরা প্রোটিনভঙ্গক উৎসেচকের সাহায্যে প্রাণীজ প্রোটিনকে ভেঙে সরলতর করে যা উদ্ভিদ দ্বারা শোষিত হয়। যেমন – কলসপত্রী, সূর্যশিশির প্রভৃতি।

নাইট্রোজেন সংবন্ধন বা সংযোজন বা স্থিতিকরণ কাকে বলে?
বায়ুর নাইট্রোজেন যে সকল পদ্ধতিতে মাটিতে মেশে এবং নাইট্রোজেনঘটিত যৌগে পরিণত হয়, সেই পদ্ধতিগুলিকে একত্রে নাইট্রোজেন সংবন্ধন বা সংযোজন বা স্থিতিকরণ বলে।
বজ্রপাতের সঙ্গে নাইট্রোজেন চক্রের সম্পর্ক কী?
অথবা, নাইট্রোজেনের প্রাকৃতিক আবদ্ধকরণ বলতে কী বোঝ?
বজ্রপাতের সময়ে বাতাসের নাইট্রোজেন গ্যাস অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নাইট্রিক অক্সাইড (NO) ও নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড (NO2) গঠন করে। এই NO2 বৃষ্টির জলে নাইট্রাস অ্যাসিড (HNO2) বা নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3) রূপে মিশে মাটিতে নেমে আসে। এভাবে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে নাইট্রোজেন আবদ্ধকরণ ঘটে।
N2 + O2 → 2NO, 2NO + O2 → 2NO2
নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড বৃষ্টির জলে দ্রবীভূত হয়ে কী তৈরি করে?
অথবা, নাইট্রোজেন চক্রে অ্যাসিড সৃষ্টির ভূমিকা কী?
নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড বৃষ্টির জলে দ্রবীভূত হয়ে নাইট্রাস অ্যাসিড এবং নাইট্রিক অ্যাসিড -এ পরিণত হয় ও অ্যাসিড বৃষ্টির উপাদানরূপে পৃথিবীপৃষ্ঠে নেমে আসে। এর ফলে মাটি, নদী ও সমুদ্রের অম্লীকরণ ঘটে।
2NO2 + H2O → HNO2 + HNO3
জীবজ নাইট্রোজেন আবদ্ধকরণ বলতে কী বোঝ?
নীলাভ-সবুজ শৈবাল বা সায়ানোব্যাকটেরিয়া এবং কিছু বিশেষ প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া, বাতাসের নাইট্রোজেনকে বিশেষ উৎসেচক, নাইট্রোজিনেজ -এর সাহায্যে বিজারিত করে অ্যামোনিয়ায় পরিণত করে এবং প্রোটোপ্লাজমে অঙ্গীভূত করে। একে জীবজ নাইট্রোজেন আবদ্ধকরণ (biological nitrogen fixation) বলে।
মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধিতে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা কী?
রাইজোবিয়াম, ক্লসট্রিডিয়াম প্রভৃতি ব্যাকটেরিয়া বায়ুর মুক্ত N2 -কে বিভিন্ন যৌগে পরিণত করে মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ তথা জমির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি করে। মাটিতে বসবাসকারী বিভিন্ন অণুজীবেরা বিয়োজনের মাধ্যমে জৈববস্তু (হিউমাস) গঠন করে, যা মাটির মৌলের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে ও মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি করে।
নাইট্রোজেন চক্রে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা কী?
নাইট্রোজেন চক্রে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছু ব্যাকটেরিয়া পরিবেশ থেকে মুক্ত নাইট্রোজেন সংবন্ধন করে মাটিতে নাইট্রাইটরূপে আবদ্ধ করে। পরে অন্য কিছু ব্যাকটেরিয়া মাটির নাইট্রাইটকে জারিত করে নাইট্রেটে পরিণত করে। নাইট্রোজেন চক্রের অন্তিম পর্যায়ে, মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহকে বিশ্লিষ্ট করে ব্যাকটেরিয়া বিভিন্নপ্রকার মৌলিক উপাদান পরিবেশে মুক্ত করে।
মুক্তজীবী ডাইঅ্যাজোট্রফ বা মুক্ত নাইট্রোজেন আবদ্ধকারী জীবাণুর নাম লেখো।
অবায়ুজীবী নাইট্রোজেন আবদ্ধকারী জীবাণু –
মাটিতে থাকা Clostridium (ক্লস্ট্রিডিয়াম), কাদায় থাকা Methanococcus (মিথেনোকক্কাস) নামক আর্কিয়া, সমুদ্রের তলদেশে থাকা Desulfovibrio (ডিসালফোভিব্রিও)।
বায়ুজীবী নাইট্রোজেন আবদ্ধকারী জীবাণু –
Azotobacter vinelandii (অ্যাজোটোব্যাকটার ভাইনল্যানডি)।
অক্সিজেন উৎপাদনকারী সালোকসংশ্লেষকারী জীবাণু –
এরা সালোকসংশ্লেষ করলেও নাইট্রোজেন আবদ্ধ করতে সক্ষম হয়। যেমন – Anabaena cylindrica (অ্যানাবিনা সিলিনড্রিকা), Nostoc commune (নস্টক কমিউন) প্রভৃতি নীলাভ সবুজ শৈবাল, Plectonema (প্লেকটোনিমা)।
ডাইঅ্যাজোট্রফ ব্যাকটেরিয়া কাকে বলে?
যেসব ব্যাকটেরিয়া ও আর্কিয়া (একপ্রকার এককোশী প্রোক্যারিওটিক জীবাণু) বায়ুর নাইট্রোজেন গ্যাস স্থলভাগে অ্যামোনিয়া প্রভৃতি যৌগরূপে আবদ্ধ করে তাদের ডাইঅ্যাজোট্রফ বলে। যেমন – Rhizobium (রাইজোবিয়াম), Azospirillum (অ্যাজোস্পাইরিলাম) প্রভৃতি। এরাই মূলত মাটিতে নাইট্রোজেন আবদ্ধ করে।
লেগহিমোগ্লোবিন কী? এর গুরুত্ব কী?
অনুরূপ প্রশ্ন, লেগ হিমোগ্লোবিন কোথায় থাকে?
লেগহিমোগ্লোবিন –
লেগহিমোগ্লোবিন হল শিম্বগোত্রীয় উদ্ভিদের নাইট্রোজেন সংবন্ধনকারী অর্বুদে উপস্থিত গোলাপি বর্ণের রঙ্গক পদার্থ, যা রাসায়ানিকভাবে হিমোগ্লোবিন সদৃশ।
গুরুত্ব –
এই রঙ্গকটি অর্বুদ, ব্যাকটেরয়েড এবং তার চারাপাশের পোষক কোশের কোশপর্দার মধ্যবর্তী স্থানে থাকে। এই রঙ্গকটি হল অক্সিজেন গ্রাহক, যা মুক্ত অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে।
অ্যামোনিফিকেশন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
অ্যামোনিফিকেশন –
যে পদ্ধতিতে বিভিন্ন জীবাণুর দ্বারা উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃতদেহ অথবা প্রাণীর নাইট্রোজেনযুক্ত যৌগ অ্যামোনিয়ায় রূপান্তরিত হয়, তাকে অ্যামোনিফিকেশন বলে।
)উদাহরণ –
Bacillus mycoides (ব্যাসিলাস মাইকয়ডিস) এবং Micrococcous (মাইক্রোকক্কাস) প্রভৃতি অ্যামোনিফাইং ব্যাকটেরিয়া এই পদ্ধতি সম্পন্ন হতে সাহায্য করে।
নাইট্রিফিকেশন কাকে বলে?
যে পদ্ধতিতে বিভিন্ন জীবাণুর দ্বারা মৃত্তিকাস্থিত অ্যামোনিয়া, নাইট্রাইটে ও তারপর নাইট্রেটে রূপান্তরিত হয়, তাকে নাইট্রিফিকেশন বলে। বিভিন্ন নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া, যেমন – Nitrosomonas (নাইট্রোসোমোনাস) এবং Nitrobacter (নাইট্রোব্যাকটর) এই পদ্ধতিটি সম্পন্ন করে।
নাইট্রিফিকেশন প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা কী?
বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃতদেহ এবং বর্জ্য পদার্থে উপস্থিত নাইট্রোজেন অ্যামোনিয়ায় পরিণত হয়। Nitrosomonas (নাইট্রোসোমোনাস) নামক ব্যাকটেরিয়া অ্যামোনিয়াকে জারিত করে নাইট্রাইটে পরিণত করে। পরে Nitrobacter (নাইট্রোব্যাকটর) নামক ব্যাকটেরিয়া মাটির নাইট্রাইটকে জারিত করে নাইট্রেটে পরিণত করে। এইভাবে ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে নাইট্রোজেন মাটিতে আবদ্ধ হয়।
নাইট্রিফিকেশনের জন্য দায়ী জীবাণুগুলির নাম লেখো।
অ্যামোনিয়া থেকে নাইট্রাইট তৈরি –
- ব্যাকটেরিয়া – Nitrosomonas (নাইট্রোসোমোনাস), Nitrosococcus (নাইট্রোসোকক্কাস)।
- আর্কিয়া – Nitrosopumilus (নাইট্রোসোপিউমিলাস), Nitrososphaera (নাইট্রোসোস্ফেরা)।
নাইট্রাইট থেকে নাইট্রেট তৈরি –
Nitrobacteria (নাইট্রোব্যাকটেরিয়া), Nitrospira (নাইট্রোস্পাইরা) নামক ব্যাকটেরিয়া।
ডিনাইট্রিফিকেশন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
ডিনাইট্রিফিকেশন –
যে পদ্ধতিতে, জীবাণুর দ্বারা নাইট্রেট বা অন্য নাইট্রোজেন-ঘটিত যৌগ ভেঙে গিয়ে পুনরায় নাইট্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয় এবং তা পুনরায় বায়ুমণ্ডলে ফিরে যায়, তাকে ডিনাইট্রিফিকেশন বলে।
)
উদাহরণ –
Pseudomonas (সিউডোমোনাস), Thiobacillus (থায়োব্যাসিলাস) প্রভৃতি ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া এই পদ্ধতি সম্পন্ন হতে সাহায্য করে।
নাইট্রোজেন চক্রের গুরুত্ব কী?
- নাইট্রোজেন চক্রের মাধ্যমে পরিবেশে নাইট্রোজেনের ভারসাম্য রক্ষিত হয়।
- জীবদেহের কোশ গঠনের জন্য যে নাইট্রোজেনের প্রয়োজন হয়, তা নাইট্রোজেন চক্রের দ্বারা জীবদেহে পরিবাহিত হয়। ফলে জীবজগতের অস্তিত্ব বজায় থাকে।
নাইট্রোজেন চক্রকে মানুষের কোন্ ক্রিয়াকলাপ প্রভাবিত করে?
- জমিতে ব্যবহৃত নাইট্রোজেন সার শিম্বজাতীয় উদ্ভিদ চাষে অর্বুদ গঠন দ্বারা মাটিতে নাইট্রোজেন মাত্রা প্রভূত বৃদ্ধি পায়।
- কয়লা, তেল প্রভৃতি জীবাশ্ম জ্বালানির দহনে মুক্ত NO₂ কালক্রমে বাতাসে নাইট্রোজেন গ্যাস মুক্ত করে।
- অটোমোবাইল নির্গত নাইট্রোজেন অক্সাইডগুলি অ্যাসিড বৃষ্টির মতো ক্ষতিকর ঘটনা ঘটায়।
মানুষের ক্রিয়াকলাপ কীভাবে নাইট্রোজেন চক্র তথা পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে?
অনুরূপ প্রশ্ন, অতিরিক্ত নাইট্রোজেনের প্রভাবে পরিবেশে দুটি ক্ষতিকর পরিবর্তন সম্পের্ক লেখো।
- জীবাশ্ম জ্বালানি ও নাইট্রোজেন সার-জাত নাইট্রাস অক্সাইড (N₂O) একটি গ্রিনহাউস গ্যাস। এটি বায়ুর উষ্ণতা বৃদ্ধি করে বিশ্ব উষ্ণায়ন ঘটিয়ে থাকে।
- অটোমোবাইল-জাত নাইট্রিক অক্সাইড (NO) আলোক রাসায়নিক ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে, এটি একটি পরিবেশদূষক যা শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতিসাধন করে।
- নাইট্রোজেনের অক্সাইডগুলি অ্যাসিড বৃষ্টি ঘটায়, ফলে বাস্তুতন্ত্র, স্মৃতিসৌধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের পঞ্চম অধ্যায় “পরিবেশ, তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ” অধ্যায়ের ‘নাইট্রোজেন চক্র‘ বিভাগের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন যার এটি প্রয়োজন হবে তার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন