মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – পরিবেশ তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ – নাইট্রোজেন চক্র – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

Rahul

 আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের পঞ্চম অধ্যায় “পরিবেশ, তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ” অধ্যায়ের ‘নাইট্রোজেন চক্র‘ বিভাগের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

নাইট্রোজেন চক্র – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
নাইট্রোজেন চক্র – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
Contents Show

একটি রেখাচিত্রের বা পর্যায়চিত্রের মাধ্যমে নাইট্রোজেন চক্রের বর্ণনা দাও।

অথবা, নাইট্রোজেন চক্রের ধাপগুলি একটি পর্যায় চিত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো।

নাইট্রোজেন চক্র –

বাতাসে নাইট্রোজেনের পরিমাণ শতকরা 78.09 ভাগ। এ ছাড়াও মাটির মধ্যে নাইট্রেট, নাইট্রাইট এবং অন্য যৌগ হিসেবে নাইট্রোজেন আবদ্ধ থাকে। প্রকৃতির নাইট্রোজেন চক্র যে পর্যায়ে হয়, সেগুলি হল – নাইট্রোজেন স্থিতিকরণ বা আবদ্ধকরণ, মাটির নাইট্রোজেন জীবদেহে প্রবেশ, জীবদেহ থেকে নাইট্রোজেনের মাটিতে পুনঃপ্রবেশ এবং নাইট্রোজেনের মুক্তি।

নাইট্রোজেন স্থিতিকরণ বা আবদ্ধকরণ –

যে পদ্ধতিতে বায়ুর নাইট্রোজেন মাটিতে মেশে এবং নাইট্রোজেনঘটিত যৌগে পরিণত হয়, তাকে নাইট্রোজেন সংযোজন বা স্থিতিকরণ বা আবদ্ধকরণ বলে। এই স্থিতিকরণ প্রধানত তিনটি পদ্ধতিতে ঘটে থাকে। এগুলি হল –

প্রাকৃতিক আবদ্ধকরণ – বজ্রপাত ও অগ্ন্যুৎপাতের সময়ে বাতাসের নাইট্রোজেন গ্যাস অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নাইট্রিক অক্সাইড (NO) গঠন করে। এই নাইট্রিক অক্সাইড অক্সিজেনের দ্বারা জারিত হয় ও নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড (NO2) গঠন করে। নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড বৃষ্টির জলে দ্রবীভূত হয়ে নাইট্রাস অ্যাসিড (HNO2) ও নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3) -এ পরিণত হয় এবং তা মাটিতে নেমে আসে।

N2 + O2 → 2NO; 2NO + O2 → 2NO2;

2NO2 + H2O → HNO2 + HNO3

এই দু-প্রকার অ্যাসিড মাটির ধাতব লবণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নাইট্রেট যৌগ (পটাশিয়াম নাইট্রেট, ক্যালশিয়াম নাইট্রেট প্রভৃতি) গঠন করে।

জীবজ আবদ্ধকরণ –

  • বিভিন্নপ্রকার অণুজীব, যেমন – Azotobacter (অ্যাজোটোব্যাকটর), Clostridium (ক্লসট্রিডিয়াম) প্রভৃতি, বাতাসের মুক্ত নাইট্রোজেনকে নিজদেহে আবদ্ধ করে। মৃত্যুর পরে এদের দেহের নাইট্রোজেনঘটিত যৌগগুলি মাটিতে মিশে যায়। এই ব্যাকটেরিয়াগুলিকে নাইট্রোজেন স্থিতিকারী ব্যাকটেরিয়া বলে।
  • বিভিন্ন প্রকার নীলাভ-সবুজ শৈবাল সরাসরি বাতাসের নাইট্রোজেনকে আবদ্ধ করে মাটির নাইট্রোজেন যৌগের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। যেমন – Anabaena (অ্যানাবিনা), Nostoc (নস্টক) ইত্যাদি।
  • মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া, যেমন – Rhizobium (রাইজোবিয়াম) ছোলা, মটর প্রভৃতি শিম্বগোত্রীয় উদ্ভিদের মূলে অর্বুদ (nodule) গঠন করে বসবাস করে এবং বায়ু থেকে সরাসরি নাইট্রোজেন শোষণ করে নানাপ্রকার নাইট্রোজেনঘটিত যৌগ উৎপাদন করে। এইসব ব্যাকটেরিয়ার মৃত্যুর পরে তাদের দেহের নাইট্রোজেনঘটিত যৌগগুলি মাটিতে মিশে যায় ও নাইট্রোজেনের আবদ্ধকরণ ঘটে।

শিল্পজাত আবদ্ধকরণ – কলকারখানায় বিভিন্ন ধরনের নাইট্রোজেন-সমৃদ্ধ সার তৈরি হয়। যেমন – হ্যাবার বস (Haber Bosch) পদ্ধতিতে 300-400°C তাপমাত্রায় এবং 35-100 MPa চাপে (MPa = মেগাপাসকাল, চাপের মেট্রিকবা SI একক) N2 ও H2 যুক্ত হয়ে NH3 উৎপন্ন হয়। NH3 ও অন্যান্য N2 যুক্ত সার প্রয়োগের ফলে মাটিতে নাইট্রোজেন সংবন্ধন ঘটে।

N2+3H235100MPa300400°C2NH3

মটর গাছের মূলের অর্বুদ-
মটর গাছের মূলের অর্বুদ-

মাটির নাইট্রোজেন জীবদেহে প্রবেশ –

উদ্ভিদ, মাটিতে আবদ্ধ নাইট্রোজেনঘটিত লবণ শোষণ করে এবং নিজদেহের চাহিদাপূরণ করে। এই নাইট্রোজেন উদ্ভিদদেহে উদ্ভিজ্জ প্রোটিনরূপে অবস্থান করে। প্রাণীরা খাদ্যের মাধ্যমে তা গ্রহণ করে নিজদেহে প্রবেশ করায় এবং প্রাণীদেহে প্রাণীজ প্রোটিনরূপে অবস্থান করে।

জীবদেহ থেকে নাইট্রোজেনের মাটিতে পুনঃপ্রবেশ –

জীবদেহ থেকে নাইট্রোজেনের মাটিতে পুনঃপ্রবেশ ঘটে দুটি পদ্ধতির মাধ্যমে। এই পদ্ধতি দুটি হল –

  • অ্যামোনিফিকেশন – উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃতদেহ এবং প্রাণীর নাইট্রোজেনযুক্ত রেচন পদার্থ বিভিন্ন বিয়োজক দ্বারা বিয়োজিত হয়ে মাটিতে নাইট্রোজেনঘটিত যৌগের পরিমাণ বাড়ায়। এরপর এই যৌগগুলি অ্যামোনিফাইং ব্যাকটেরিয়া Bacillus mycoides (ব্যাসিলাস মাইকয়ডিস) ও Micrococcus (মাইক্রোকক্কাস) -এর দ্বারা বিশ্লিষ্ট হয়ে যে প্রক্রিয়ায় অ্যামোনিয়ায় পরিণত হয়, তাকে অ্যামোনিফিকেশন বলে।
  • নাইট্রিফিকেশন – মাটির অ্যামোনিয়া বিভিন্নপ্রকার নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা বিশ্লিষ্ট হয়ে নাইট্রাইট ও নাইট্রেটে পরিণত হয়, যে প্রক্রিয়ায় তাকে নাইট্রিফিকেশন বলে। নাইট্রিফিকেশনে অংশগ্রহণকারী ব্যাকটেরিয়াগুলিকে নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া বলে। এই প্রক্রিয়ায় প্রথমে অ্যামোনিয়া বা অ্যামোনিয়াম আয়নগুলি মাটিতে Nitrosomonus (নাইট্রোসোমোনাস) নামক ব্যাকটেরিয়ার ক্রিয়ায় নাইট্রাইট যৌগে পরিণত হয় (নাইট্রাইটেশন)। তারপর মাটিতে বসবাসকারী Nitrobacter (নাইট্রোব্যাকটর) নামক ব্যাকটেরিয়া নাইট্রাইট যৌগকে নাইট্রেটে পরিণত করে (নাইট্রেটেশন)।

2NH4++3O24NO2+2H++2H2O; 2NO2+O22NO3

নাইট্রোজেনের মুক্তি বা মোচন বা ডিনাইট্রিফিকেশন –

যে প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকাস্থিত নাইট্রাইট ও নাইট্রেট যৌগ থেকে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে নাইট্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়ে পুনরায় বায়ুমণ্ডলে ফিরে আসে, তাকে ডিনাইট্রিফিকেশন বা নাইট্রোজেন মোচন বলে। এতে সাহায্য করে Thiobacillus (থায়োব্যাসিলাস), Pseudomonas (সিউডোমোনাস) ইত্যাদি ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া।

NO3NO2NO+N2ON2

নাইট্রোজেনের মুক্তি বা মোচন বা ডিনাইট্রিফিকেশন
নাইট্রোজেনের মুক্তি বা মোচন বা ডিনাইট্রিফিকেশন

নাইট্রোজেন চক্রে, বায়ুর N₂ অণুজীব দ্বারা কীভাবে আবদ্ধ হয় তা আলোচনা করো।

বায়ুর নাইট্রোজেন অণুজীব দ্বারা আবদ্ধকরণ –

কিছুকিছু অণুজীব বায়ুর নাইট্রোজেনকে, নাইট্রোজেনঘটিত যৌগে রূপান্তরিত করে মাটিতে আবদ্ধ করে। অণুজীব দ্বারা নাইট্রোজেন স্থিতিকরণকে জীবজ আবদ্ধকরণ বলে। দুই ধরনের অণুজীব দ্বারা এই পদ্ধতিটি সম্পন্ন হয়। এখানে সেগুলি আলোচনা করা হল।

স্বাধীনজীবী অণুজীব দ্বারা আবদ্ধকরণ –

কিছু স্বাধীনজীবী ব্যাকটেরিয়া, যেমন – Clostridium (ক্লসট্রিডিয়াম), Azotobacter (অ্যাজোটোব্যাকটর) প্রভৃতি ও Nostoc (নস্টক), Anabaena (অ্যানাবিনা) প্রভৃতি সায়ানোব্যাকটেরিয়া (নীলাভ-সবুজ শৈবাল) বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেনকে আবদ্ধ করে নাইট্রোজেন-ঘটিত যৌগ গঠন করে। এদের মৃত্যুর পরে নাইট্রোজেনঘটিত যৌগগুলি মাটিতে মিশে যায়।

অ্যাজোটোব্যাকটর-
অ্যাজোটোব্যাকটর-

মিথোজীবী অণুজীব দ্বারা আবদ্ধকরণ –

ছোলা, মশুর, সিম প্রভৃতি শিম্বগোত্রীয় উদ্ভিদের মূলে যে অর্বুদ বা নডিউল থাকে, তাতে Rhizobium (রাইজোবিয়াম) নামক ব্যাকটেরিয়া বসবাস করে। এই ব্যাকটেরিয়া বায়ুমণ্ডল থেকে সরাসরি নাইট্রোজেন শোষণ করে, তার কিছুটা ভাগ আশ্রয়দাতা উদ্ভিদকে সরবরাহ করে তাকে সাহায্য করে ও বাকি অংশ নিজের দেহে সঞ্চিত রেখে পরবর্তীকালে ব্যবহার করে। ব্যাকটেরিয়া ও উদ্ভিদটির মৃত্যুর পরে তাদের দেহের নাইট্রোজেন যৌগ মাটিতে মিশে যায়।

মানব ক্রিয়াকলাপ কীভাবে নাইট্রোজেন চক্রকে প্রভাবিত করে এবং মানব ক্রিয়াকলাপে মুক্ত অধিক নাইট্রোজেনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো।

অংশ প্রশ্ন, নাইট্রোজেন চক্র ব্যাহত হওয়ার ফলে যেসব ঘটনা ঘটছে তার যে-কোনো প্রধান তিনটি ঘটনা ব্যাখ্যা করো।
অংশ প্রশ্ন, মানুষের ক্রিয়াকলাপের ফলে নাইট্রোজেন চক্র ব্যাহত হচ্ছে – দুটি ঘটনা উল্লেখ করে এর যথার্থতা প্রমাণ করো।
অথবা, মানব ক্রিয়াকলাপের ফলে নাইট্রোজেন চক্র ব্যাহত হচ্ছে – ব্যাখ্যা করো।

নাইট্রোজেন চক্রে প্রভাব সৃষ্টিকারী মানব ক্রিয়াকলাপ –

নাইট্রোজেন সারের ব্যবহার –

জমির ফসল বৃদ্ধির জন্য জমিতে নাইট্রোজেন (নাইট্রেট, N-P-K সার প্রভৃতি) সার ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে পরিবেশে N2O, NO2 প্রভৃতি গ্যাসগুলির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

নাইট্রোজেন স্থিতিকারী উদ্ভিদচাষ –

শিম্বগোত্রীয় উদ্ভিদ, যেমন – বিন, মটর, ডাল, বাদাম, ছোলা, রাজমা, সয়াবিন প্রভৃতি কৃষিজ উদ্ভিদগুলি প্রোটিনের জোগানদার বলে তাদের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বায়ুর নাইট্রোজেন অধিকমাত্রায় মাটিতে আবদ্ধ হচ্ছে।

জীবাশ্ম জ্বালানির দহন –

খনিজ তেল, কয়লার দহনে নাইট্রিক অক্সাইড (NO), নাইট্রাস অক্সাইড (N2O) ও নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড (NO2) গ্যাসের মুক্তি ঘটে। ফলে পরিবেশে নাইট্রোজেনের জোগান বৃদ্ধি পায়।

মানব ক্রিয়াকলাপে মুক্ত অধিক নাইট্রোজেনের ক্ষতিকর প্রভাব –

অতিরিক্ত নাইট্রোজেনের প্রভাবে পরিবেশের প্রদত্ত ক্ষতিকর পরিবর্তনগুলি ঘটে থাকে।

বিশ্ব উষ্ণায়ন –

নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাসটি তাপশোষী গ্রিনহাউস গ্যাস বা সূর্যালোকের প্রতিফলনে সৃষ্ট অবলোহিত আলো বা উত্তাপ শোষণ করে গ্রিনহাউস প্রভাব তথা বিশ্ব উষ্ণায়ন ঘটায়।

আলোক রাসায়নিক ধোঁয়াশা বা ফোটোকেমিকাল স্মগ –

পেট্রোলিয়াম দহনজাত নাইট্রিক অক্সাইড, হাইড্রোকার্বন ও আলোকের উপস্থিতিতে PAN (পারঅক্সি-অ্যাসিটাইল নাইট্রেট) উৎপন্ন করে যা আলোক-রাসায়নিক ধোঁয়াশা উৎপন্ন করে। এটি দৃশ্যদূষণ ও শ্বাসনালীর প্রদাহ, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি সমস্যা সৃষ্টি করে।

অম্লীকরণ –

নাইট্রোজেনের অক্সাইডগুলি বৃষ্টির জলের সঙ্গে বিক্রিয়ায় নাইট্রিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে, যা অম্লবৃষ্টির অন্যতম উপাদান। অম্লবৃষ্টি জলজ জীব ও উদ্ভিদ ধ্বংস করে নদী, হ্রদ, পুকুর প্রভৃতির বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য বিনষ্ট করে। এ ছাড়া অম্লবৃষ্টির প্রভাবে বনজ সম্পদের বিনাশ, স্থাপত্য ও ভাস্কর্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

নাইট্রোজেন চক্র কাকে বলে? নাইট্রোজেন চক্রের যে-কোনো তিনটি ধাপে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

নাইট্রোজেন চক্র –

যে সুনির্দিষ্ট চক্রাকার পথে পরিবেশ থেকে নাইট্রোজেন জীবদেহে প্রবেশ করে ও দেহ থেকে আবার পরিবেশে ফিরে এসে পরিবেশে নাইট্রোজেনের সাম্য বজায় রাখে, তাকে নাইট্রোজেন চক্র বলে।

নাইট্রোজেন চক্রে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা –

নাইট্রোজেন চক্রের বিভিন্ন ধাপে ব্যাকটেরিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। এর মধ্যে কয়েকটির কথা এখানে উল্লেখ করা হল।

জীবদেহ থেকে নাইট্রোজেনের মাটিতে পুনঃপ্রবেশ –

জীবদেহ থেকে নাইট্রোজেনের মাটিতে পুনঃপ্রবেশ ঘটে দুটি পদ্ধতির মাধ্যমে। এই পদ্ধতি দুটি হল –

  • অ্যামোনিফিকেশন – উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃতদেহ এবং প্রাণীর নাইট্রোজেনযুক্ত রেচন পদার্থ বিভিন্ন বিয়োজক দ্বারা বিয়োজিত হয়ে মাটিতে নাইট্রোজেনঘটিত যৌগের পরিমাণ বাড়ায়। এরপর এই যৌগগুলি অ্যামোনিফাইং ব্যাকটেরিয়া Bacillus mycoides (ব্যাসিলাস মাইকয়ডিস) ও Micrococcus (মাইক্রোকক্কাস) -এর দ্বারা বিশ্লিষ্ট হয়ে যে প্রক্রিয়ায় অ্যামোনিয়ায় পরিণত হয়, তাকে অ্যামোনিফিকেশন বলে।
  • নাইট্রিফিকেশন – মাটির অ্যামোনিয়া বিভিন্নপ্রকার নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা বিশ্লিষ্ট হয়ে নাইট্রাইট ও নাইট্রেটে পরিণত হয় যে প্রক্রিয়ায়, তাকে নাইট্রিফিকেশন বলে। নাইট্রিফিকেশনে অংশগ্রহণকারী ব্যাকটেরিয়াগুলিকে নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া বলে। এই প্রক্রিয়ায় প্রথমে অ্যামোনিয়া বা অ্যামোনিয়াম আয়নগুলি মাটিতে Nitrosomonus (নাইট্রোসোমোনাস) নামক ব্যাকটেরিয়ার ক্রিয়ায় নাইট্রাইট যৌগে পরিণত হয় (নাইট্রাইটেশন)। তারপর মাটিতে বসবাসকারী Nitrobacter (নাইট্রোব্যাকটর) নামক ব্যাকটেরিয়া নাইট্রাইট যৌগকে নাইট্রেটে পরিণত করে (নাইট্রেটেশন)।

2NH4++3O22NO2+4H++2H2O;2NO2+O22NO3

নাইট্রোজেনের মুক্তি বা মোচন বা ডিনাইট্রিফিকেশন –

যে প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকাস্থিত নাইট্রাইট ও নাইট্রেট যৌগ থেকে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে নাইট্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়ে পুনরায় বায়ুমণ্ডলে ফিরে আসে, তাকে ডিনাইট্রিফিকেশন বা নাইট্রাজেন মোচন বলে। এতে সাহায্য করে Thiobacillus (থায়োব্যাসিলাস), Pseudomonas (সিউডোমোনাস) ইত্যাদি ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া।

NO3NO2NO+N2ON2


আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের পঞ্চম অধ্যায় “পরিবেশ, তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ” অধ্যায়ের ‘নাইট্রোজেন চক্র‘ বিভাগের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন যার এটি প্রয়োজন হবে তার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

উত্তর ভারতের নদনদীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তর ভারতের নদনদীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

দেশীয় রাজ্য বলতে কী বোঝো? দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিকরণের ক্ষেত্রে ভারত সরকার কী ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল?

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিকরণের ক্ষেত্রে ভারত সরকার কী ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল?

ভারত-বিভাজনের অনিবার্যতার কারণ বিশ্লেষণ করো।

ভারত বিভাজনের অনিবার্যতার কারণ বিশ্লেষণ করো।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

উত্তর ভারতের নদনদীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিকরণের ক্ষেত্রে ভারত সরকার কী ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল?

ভারত বিভাজনের অনিবার্যতার কারণ বিশ্লেষণ করো।

ভাঙ্গর ও খাদার বলতে কি বোঝো? ভাঙ্গর ও খাদারের মধ্যে পার্থক্য

দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে জাতীয় কংগ্রেসের মনোভাব আলোচনা করো।