এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – পদার্থের ভৌত রাসায়নিক ধর্মসমূহ – জৈব রসায়ন – দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর

আমরা আমাদের আর্টিকেলে দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায়ের ‘পদার্থের ভৌত রাসায়নিক ধর্মসমূহ‘ থেকে ‘জৈব রসায়ন’ এর কিছু দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য ও চাকরির পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান-পদার্থের ভৌত রাসায়নিক ধর্মসমূহ-জৈব রসায়ন-দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর
Contents Show

জৈব ও অজৈব যৌগের পার্থক্যগুলি লেখো।

জৈব ও অজৈব যৌগের পার্থক্যগুলি নিম্নরূপ –

ধর্মজৈব যৌগঅজৈব যৌগ
উপাদানজৈব যৌগে কার্বন থাকবেই। বেশিরভাগ জৈব যৌগে কার্বন ছাড়া H, N, O, হ্যালোজেন, S, P ইত্যাদি মৌল থাকে। জ্ঞাত জৈব যৌগের সংখ্যা প্রায় 20 লক্ষেরও বেশি।অজৈব যৌগে কার্বন নাও থাকতে পারে। 92টি প্রাকৃতিক ও কতগুলি কৃত্রিম উপায়ে তৈরি মৌল দ্বারা গঠিত অজৈব যৌগের সংখ্যা 90000 -এর মতো যা জৈব যৌগের তুলনায় অনেক কম।
গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্কজৈব যৌগগুলি সমযোজী হওয়ায় এদের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক কম।অজৈব যৌগ সাধারণত তড়িৎযোজী হওয়ায় এদের গলনাঙ্ক এবং স্ফুটনাঙ্ক উচ্চ।
দ্রাব্যতাজৈব যৌগগুলি সমযোজী ও অধ্রুবীয় দ্রাবকে (যেমন – বেঞ্জিন, কার্বন টেট্রাক্লোরাইড প্রভৃতি) দ্রাব্য কিন্তু ধ্রুবীয় দ্রাবকে (যেমন – জল) অদ্রাব্য।অজৈব যৌগগুলি সাধারণত ধ্রুবীয় দ্রাবকে (যেমন – জল) দ্রাব‍্য কিন্তু অধ্রুবীয় দ্রাবকে (যেমন – বেঞ্জিন) অদ্রাব্য।
তড়িৎ পরিবাহিতাএরা সাধারণত গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় আয়নিত হয় না, তাই তড়িৎ পরিবহণ করে না। ব্যতিক্রম – কিছু জৈব অ্যাসিড ও ক্ষার।অধিকাংশ অজৈব যৌগ গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় আয়নিত হয় ও তড়িৎ পরিবহণ করে।
বিক্রিয়ার গতি ও প্রকৃতিজৈব যৌগের বিক্রিয়াগুলি ধীরগতিসম্পন্ন ও উভমুখী প্রকৃতির হয়।অজৈব যৌগের বিক্রিয়াগুলি দ্রুতগতিতে ঘটে এবং এগুলি একমুখী প্রকৃতির হয়।
সমাবয়বতাবেশিরভাগ জৈব যৌগ সমাবয়বতা ধর্ম প্রদর্শন করে।অতি অল্প সংখ্যক অজৈব যৌগ সমাবয়বতা ধর্ম প্রদর্শন করে।

কয়েকটি সমাবয়ব যৌগের সাধারণ আণবিক সংকেত C4H8। যৌগগুলির গঠনগত সংকেত কী কী হবে?

সমাবয়বগুলির সাধারণ আণবিক সংকেত C4H8। n = 4 হলে সংকেতটি হয় CnH2n, যা অ্যালকিন শ্রেণির যৌগের সাধারণ সংকেত। অতএব,

1. সরল শৃঙ্খলযুক্ত সমাবয়বের গঠনগত সংকেত –

(a) \(\overset4CH_3-\overset3CH_2-\overset2CH=\overset1CH_2\) (বিউট-1-ইন),

(b) \(\overset4CH_3-\overset3CH-\overset2CH=\overset1CH_3\) (বিউট-2-ইন),

2. পার্শ্ব শাখাযুক্ত সমাবয়বের গঠনগত সংকেত –

(c) \(\overset3CH_3-\overset2{\underset{\underset{CH_3}╵}C}=\overset1CH_2\) (2-মিথাইলপ্রোপিন)

সমগণীয় শ্রেণির বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

সমগণীয় শ্রেণির বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ –

  • একই সমগণীয় শ্রেণির সব সদস্য একই উপাদান মৌলসমূহ দ্বারা গঠিত।
  • একই সাধারণ সংকেতের সাহায্যে একটি সমগণীয় শ্রেণির সকল সদস্যকে প্রকাশ করা যায়।
  • কোনো সমগণীয় শ্রেণির সদস্যদের ক্রমবর্ধমান আণবিক ভর অনুসারে সাজালে পরপর দুটি সদস্যের মধ্যে আণবিক সংকেতের পার্থক্য হয় CH2 এবং ভরের ব্যবধান হয় 14 একক।
  • যে-কোনো সমগণীয় শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত যৌগগুলির রাসায়নিক ধর্মে সাদৃশ্য দেখা যায়।
  • আণবিক ভর বৃদ্ধির সাথে সাথে একই সমগণীয় শ্রেণির যৌগগুলির ভৌত ধর্ম, যেমন – গলনাঙ্ক, স্ফুটনাঙ্ক, ঘনত্ব ইত্যাদি বৃদ্ধি পায়, কিন্তু দ্রাব্যতা ও উদ্‌বায়িতা হ্রাস পায়।
  • একই সমগণীয় শ্রেণির প্রতিটি সদস্যকে একটি সাধারণ পদ্ধতিতে প্রস্তুত করা যায়।

মিথেনের প্রধান প্রধান ব্যবহারগুলি উল্লেখ করো।

মিথেনের প্রধান প্রধান ব্যবহারগুলি হল –

  • মিথেনের তাপ-বিভাজনে প্রাপ্ত ‘কার্বন ব্ল‍্যাক’ রং ও ছাপার কালি প্রস্তুতিতে এবং গাড়ির টায়ার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
  • মিথেন থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় রাসায়নিক পদার্থ যেমন – মিথাইল ক্লোরাইড, অ্যাসিটিলিন, ফর্মালডিহাইড, মিথানল ইত্যাদি উৎপাদন করা হয়।
  • এটি জ্বালানিরূপে ব্যবহৃত হয়, কারণ এর তাপনমূল্য বেশ উচ্চ (প্রতি ঘনফুটে 1000 Btu)।
  • হাইড্রোজেনের পণ্য উৎপাদনে মিথেন ব্যবহৃত হয়।

ইথিলিনের প্রধান প্রধান ব্যবহারগুলি উল্লেখ করো।

ইথিলিনের প্রধান প্রধান ব্যবহারগুলি হল –

  • কাঁচা ফল পাকাতে ও পাকা ফল সংরক্ষণে ইথিলিন ব্যবহৃত হয়।
  • ইথিলিন ডাইক্লোরাইড, ইথিলিন ডাইব্রোমাইড, বিষাক্ত মাস্টার্ড গ্যাস ইত্যাদি প্রস্তুত করতে ইথিলিন ব্যবহৃত হয়।
  • বিভিন্ন দ্রাবক (যেমন – গ্লাইকল, ডাইঅক্সেন, ইথানল ইত্যাদি) প্রস্তুতিতে ইথিলিন ব্যবহৃত হয়।
  • পলিথিন, পলিস্টাইরিন প্রভৃতি প্লাস্টিক এবং নাইলন, টেরিলিন প্রভৃতি কৃত্রিম তন্তু উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • শল্যচিকিৎসায় চেতনানাশক-রূপে ইথিলিন (80%) ও O2 (20%) -এর মিশ্রণ ব্যবহৃত হয়।

অ্যাসিটিলিনের প্রধান প্রধান ব্যবহারগুলি উল্লেখ করো।

অ্যাসিটিলিনের প্রধান প্রধান ব্যবহারগুলি হল –

  • ইস্পাত বা অন্য ধাতু গলিয়ে জোড়া লাগানো (welding) বা কাটার কাজে ব‍্যবহৃত অক্সি-অ্যাসিটিলিন শিখা (উষ্ণতা প্রায় 3300°C) সৃষ্টিতে অ্যাসিটিলিন গ্যাস ব্যবহৃত হয়।
  • কার্বাইড বাতিতে (carbide lamp) উজ্জ্বল আলোক সৃষ্টিতে অ্যাসিটিলিন ব্যবহৃত হয়।
  • অ্যাসিট্যালডিহাইড, অ্যাসিটিক অ্যাসিড, ইথাইল অ্যালকোহল, অ্যাসিটোন প্রভৃতির শিল্পোৎপাদনে এটি ব্যবহৃত হয়।
  • চর্বি, তেল ও রেজিনের দ্রাবক হিসেবে ব্যবহৃত অ্যাসিটিলিন টেট্রাক্লোরাইড (ওয়েসট্রন, C2H2Cl2) ও ট্রাইক্লোরোইথিন (ওয়েসট্রসল, Cl2C=CHCl) প্রভৃতি অদাহ্য দ্রাবক প্রস্তুতিতে এটি ব্যবহৃত হয়।
  • কৃত্রিম রবার, কৃত্রিম তন্তু ও প্লাস্টিকের পণ্য উৎপাদনে কাঁচামালরূপে অ্যাসিটিলিন বহুল ব্যবহৃত হয়। 
অ্যাসিটিলিনের প্রধান প্রধান ব্যবহারগুলি উল্লেখ করো।

নীচের যৌগ জোড়াগুলির প্রতিটির মধ্যে কীভাবে পাথক্য করবে – ইথিলিন ও অ্যাসিটিলিন, ইথেন ও অ্যাসিটিলিন এবং ইথেন ও ইথিলিন?

বিকারকইথিলিনঅ্যাসিটিলিন
অ্যামোনিয়াযুক্ত Cu2Cl2 দ্রবণকোনো অধঃক্ষেপ পড়ে না।লাল অধঃক্ষেপ পড়ে।
বিকারকইথেনঅ্যাসিটিলিন
Br2/CCl4 দ্রবণব্রোমিন দ্রবণের বর্ণের কোনো পরিবর্তন হয় না।ব্রোমিন দ্রবণের লাল বর্ণ বিলীন হয়।
বিকারকইথেনইথিলিন
Br2/CCl4 দ্রবণদ্রবণের বর্ণের কোনো পরিবর্তন হয় না।ব্রোমিন দ্রবণের লাল বর্ণ অন্তর্হিত হয়।

LPG -এর ব্যবহারগুলি উল্লেখ করো।

LPG -এর ব্যবহারগুলি হল –

  • LPG -এর তাপনমূল্য প্রায় 29500 (kcal/m3), একে মূলত রান্নার কাজে জ্বালানিরূপে ব্যবহার করা হয়।
  • শিল্পে ও মোটরগাড়ির জ্বালানি হিসেবেও LPG -কে ব্যবহার করা হয়।
  • LPG -এর স্ফুটনাঙ্ক খুব কম হওয়ায় একে অনেক সময় হিমায়ক (refrigerant) হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

জ্বালানিরূপে LPG ব্যবহারের সুবিধাগুলি উল্লেখ করো।

জ্বালানিরূপে LPG ব্যবহারের সুবিধাগুলি হল –

  • LPG অতি উচ্চ তাপনমূল্যবিশিষ্ট (29500 kcal/m3) হওয়ায় কোনো বস্তুকে অতিদ্রুত হারে উত্তপ্ত করতে পারে।
  • LPG -এর দহন সম্পূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়, তাই এর দহনে ছাইজাতীয় পদার্থের সৃষ্টি হয় না। এছাড়া দহনের ফলে CO -এর মতো দূষণ সৃষ্টিকারী বিষাক্ত গ্যাসের সৃষ্টি হয় না।
  • উপযুক্ত রেগুলেটরের মাধ্যমে বার্নারে LPG -এর প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে এর তাপন-ক্ষমতাকে প্রয়োজনমতো বৃদ্ধি বা হ্রাস করা যায়।
  • LPG -পূর্ণ সিলিন্ডারগুলি বহনযোগ্য হওয়ায় অতি দূরবর্তী অঞ্চলেও এই জ্বালানি সরবরাহ ও ব্যবহার করা যায়।
  • LPG -এর মধ্যে কার্বন মনোক্সাইড না থাকায় এটি স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক নয়।

LPG সিলিন্ডারের গ্যাসের মধ্যে কোন্ সালফার যৌগটি মিশ্রিত থাকে? উক্ত যৌগটি মেশানোর কারণ কী?

LPG সিলিন্ডারের গ্যাসের মধ্যে ইথাইল মারক্যাপটান (C2H3SH) নামক সালফার যৌগটি মিশ্রিত থাকে। এটি একটি দুর্গন্ধযুক্ত পদার্থ।

LPG -এর উপাদান গ্যাসগুলি বর্ণহীন ও গন্ধহীন। এই গ্যাসগুলি অত্যন্ত দাহ্য পদার্থ। অসাবধানতাবশত যদি সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বেরিয়ে আসে তবে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই সিলিন্ডারের গ্যাসের মধ্যে সামান্য পরিমাণে দুর্গন্ধযুক্ত ইথাইল মারক্যাপটান মেশানো থাকে। ফলে কোনো কারণে সিলিন্ডার থেকে গ্যাস লিক্ করলে তীব্র দুর্গন্ধ পাওয়া যায়। ফলে দ্রুত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।

CNG -এর ব্যবহারগুলি লেখো। CNG ব্যবহারের একটি পরিবেশগত অসুবিধা উল্লেখ করো।

CNG -এর ব্যবহারগুলি হল –

  • CNG -এর তাপনমূল্য অনেক বেশি (21300 Btu/Ib) হওয়ায় এটি মূলত জ্বালানিরূপেই ব্যবহৃত হয়।
  • যন্ত্রচালিত পরিবহণ শিল্পে CNG ব্যবহার করলে পরিবেশ দূষণের মাত্রা সবচেয়ে কম হয়। তাই বাস, ট্যাক্সি, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন গণপরিবহণ ব্যবস্থায় জ্বালানিরূপে CNG ব্যবহৃত হয়।

CNG ব্যবহারের সময় সামান্য পরিমাণ পরিত্যক্ত মিথেন গ্যাস বায়ুতে মিশে যায়, যা একটি গ্রিনহাউস গ্যাস।

জ্বালানিরূপে CNG ব্যবহারের সুবিধাগুলি উল্লেখ করো।

জ্বালানিরূপে CNG ব্যবহারের সুবিধাগুলি হল –

  • CNG -তে কার্বনের পরিমাণ কম থাকায় এই জ্বালানির দহনে কার্বন কণা ও CO2 গ্যাসের উৎপাদন অন্যান্য জ্বালানি অপেক্ষা অনেক কম হয়। ফলে পরিবেশ কম দুষিত হয়। 
  • CNG -এর জ্বলনাঙ্ক (1350°F) খুব বেশি হওয়ায় সহজে জ্বলে ওঠে না, তাই নিরাপদে ব্যবহার করা যায়।
  • CNG -এর দহনে ধোঁয়া বা ছাই উৎপন্ন হয় না।
  • CNG -এর তাপনমূল্য (প্রায় 21300 Btu/Ib) ডিজেল বা LPG অপেক্ষা অনেক বেশি।

জ্বালানি হিসেবে CNG ব্যবহারের অসুবিধাগুলি উল্লেখ করো।

জ্বালানি হিসেবে CNG ব্যবহারের অসুবিধাগুলি হল –

  • গ্যাসীয় অবস্থায় থাকায় CNG -এর প্রতি একক আয়তনের দহনে উৎপন্ন শক্তির পরিমাণ অন্যান্য জ্বালানি অপেক্ষা কম হয়।
  • CNG -কে সঞ্চয় করতে প্রয়োজনীয় ট্যাংকের আয়তন, ডিজেল ট্যাংকের আয়তন অপেক্ষা 3 থেকে 5 গুণ বেশি হয়।
  • বায়ু অপেক্ষা হালকা হওয়ায় সিলিন্ডার থেকে CNG নির্গত হলে তা ওপরের দিকে উঠতে থাকে এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ফলে অঞ্চলটি গ্যাস দ্বারা আচ্ছাদিত হয়, যা ভয়ংকর বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।
  • CNG ব্যবহারের সময় সামান্য পরিমাণ পরিত্যক্ত মিথেন বায়ুতে মেশে, যা একটি গ্রিনহাউস গ্যাস।

ইথিলিনের পলিমেরাইজেশনের ফলে কী উৎপন্ন হয়? উৎপন্ন যৌগটির ধর্মের সাথে ইথিলিনের ধর্মের কী পার্থক্য দেখা যায়?

ইথিলিনের পলিমেরাইজেশনের ফলে পলিইথিলিন বা পলিথিন নামক পলিমার উৎপন্ন হয়।

ইথিলিন ও পলিথিনের ধর্মে প্রদত্ত পার্থক্যগুলি দেখা যায় –

ইথিলিনপলিথিন
সাধারণ অবস্থায় ইথিলিন একটি গ্যাসীয় পদার্থ।সাধারণ অবস্থায় পলিথিন একটি কঠিন পদার্থ।
ইথিলিনের মোলার ভর নির্দিষ্ট, এর মান 28।পলিথিন অণু বহুসংখ্যক ইথিলিন অণুর সমন্বয়ে গঠিত বলে এর মোলার ভর খুব বেশি (প্রায় 20000)।
গ্যাসীয় পদার্থ হওয়ায় STP -তে ইথিলিনের মোলার আয়তন অনেক বেশি (22.4 লিটার)।কঠিন পদার্থ হওয়ায় STP -তে পলিথিনের মোলার আয়তন খুবই কম।

জৈববিশ্লেষ্য পলিমারগুলি পরিবেশ দূষণ ঘটায় না – উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।

জৈববিশ্লেষ্য পরিমারগুলি পরিবেশে উপস্থিত বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক প্রভৃতি অণুজীব নিঃসৃত উৎসেচক দ্বারা বিশ্লিষ্ট হয়ে সরল যৌগ যেমন – CO2, H2O ইত্যাদিতে পরিণত হয়। এগুলি ক্ষতিকর না হওয়ায় জৈববিশ্লেষ্য পলিমারগুলি দ্বারা পরিবেশ দূষিত হয় না। যেমন – খড়, কাঠ, কাগজ, তুলো প্রভৃতি পদার্থগুলি উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত জৈব পলিমার বা বায়োপলিমার দ্বারা গঠিত। ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক প্রভৃতি অণুজীব নিঃসৃত এনজাইমের উপস্থিতিতে সেলুলোজ বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া দ্বারা বিশ্লিষ্ট হয়ে পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর নয় এরূপ যৌগে পরিণত হয়। তাই এগুলি পরিবেশ দূষণ ঘটায় না।

জৈব অবিশ্লেষ্য পলিমার যৌগ ব্যবহারের ফলে পরিবেশ কীভাবে দূষিত হতে পারে?

জৈব অবিশ্লেষ্য পলিমার ব্যবহারে পরিবেশ বিভিন্নভাবে দূষিত হয় –

  • জৈববিশ্লেষ্য না হওয়ায় ব্যবহারের পর এরা সহজে নষ্ট হয় না। বর্জ্য পদার্থ হিসেবে পরিত্যক্ত হয়ে এগুলি ক্রমে নালানর্দমা, পুকুর, নদী ইত্যাদি জলাশয়ে সঞ্চিত হয়। এগুলি মাটিতে সঞ্চিত হওয়ার ফলে মাটিতে বায়ু ও জল চলাচল রুদ্ধ হয়ে মাটি অনুর্বর ও কৃষিকাজের অনুপযোগী হয়ে ওঠে। এগুলি মাটির নীচে দীর্ঘদিন থাকার ফলে জলবায়ুকরণের মাধ্যমে বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান নিঃসরণ করে, যার দ্বারা মাটির অভ্যন্তরস্থ উপকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আবার, প্লাস্টিকজাত পদার্থগুলি জমে নালানর্দমার মুখ বন্ধ হয়ে বিশেষত শহরাঞ্চলের জলনিকাশি ব্যবস্থা ভীষণভাবে বিপর্যস্ত হয়, বর্ষাকালে রাস্তাঘাট জলে ডুবে যায় এবং পরিবেশ মাত্রাতিরিক্তভাবে দূষিত হয়ে পড়ে।
  • প্লাস্টিকজাতীয় পলিমারের দহনে CO, SO2, NO2 প্রভৃতি বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়ে বায়ুতে মেশে, ফলে বায়ু দূষিত হয়।
  • PVC পলিমারে অনেক সময় মুক্ত ভিনাইল ক্লোরাইড মনোমার উপস্থিত থাকতে পারে। জলের পাইপ, পাত্র, ট্যাংক ইত্যাদি PVC -নির্মিত হয়; এগুলি ঘর্ষণে ক্ষয়ে গেলে কিছু কিছু মনোমার পৃথক হয়ে জলে মিশতে পারে। এই যৌগটি লিভারে ক্যানসার রোগ সৃষ্টি করে। তাই PVC -নির্মিত পাত্রে পানীয় জল রাখা নিরাপদ নয়।
জৈব অবিশ্লেষ্য পলিমার যৌগ ব্যবহারের ফলে পরিবেশ কীভাবে দূষিত হতে পারে?

জৈব-অবিশ্লেষ্য পলিমার দ্বারা সৃষ্ট দূষণ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত?

জৈব-অবিশ্লেষ্য পলিমার দ্বারা সৃষ্ট দূষণ প্রতিরোধের জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলি গ্রহণ করা আবশ্যক –

  • জৈব অবিশ্লেষ্য পলিমারের ব্যবহার হ্রাস – পলিথিন, PVC বা অন্যান্য প্লাস্টিকজাতীয় কৃত্রিম পলিমারের যথেচ্ছ ব্যবহার কমাতে হবে।
  • কৃত্রিম জৈবভঙ্গুর পলিমারের ব্যবহার বৃদ্ধি – বর্তমানে কিছু জৈববিশ্লেষ্য কৃত্রিম পলিমার তৈরি করা সম্ভব হয়েছে, যেমন – নাইলন 2-নাইলন 6, PHBV ইত্যাদি। এই পলিমারগুলির দাম খুব বেশি হওয়ায় বর্তমানে এদের ব্যবহার সীমিত, স্বল্পব্যয়ে এধরনের পলিমার উৎপাদনের জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে।
  • কৃষিজাত প্রাকৃতিক পলিমারের ব্যবহার বৃদ্ধি – পাট, তুলো, কাগজ প্রভৃতিতে প্রাকৃতিক পলিমার থাকে। এগুলি জৈববিশ্লেষ্য বলে ব্যবহারের পর সহজেই মাটিতে মিশে যায় এবং পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না। সহজ বিকল্পরূপে এদের ব্যবহার বাড়াতে হবে। প্যাকেজিং -এর কাজে পাটের বা কাগজের ব্যবহার বৃদ্ধিতে সরকারের সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
  • বর্জ্য পলিমারের রিসাইক্লিং – বর্জ্য প্লাস্টিকজাত পদার্থগুলিকে রিসাইক্লিং পদ্ধতিতে রি-মোল্ড করে পুনরায় ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুত করতে হবে।

ইথাইল অ্যালকোহলের উল্লেখযোগ্য ব্যবহারগুলি উল্লেখ করো।

ইথাইল অ্যালকোহলের উল্লেখযোগ্য ব্যবহারগুলি হল –

  • শিল্পক্ষেত্রে রজন, সাবান, বার্নিশ, রং, রেয়ন, সুগন্ধি, রঞ্জক দ্রব্য, গালা, কৃত্রিম রবার, কৃত্রিম তন্তু ও ওষুধ প্রস্তুতিতে দ্রাবক হিসেবে ইথাইল অ্যালকোহল ব্যবহৃত হয়।
  • ইথার, ইথাইল হ্যালাইড, ইথাইল এস্টার, ক্লোরোফর্ম, অ্যাসিটিক অ্যাসিড, ইথিলিন, মেথিলেটেড স্পিরিট প্রভৃতি প্রস্তুতিতে ইথাইল অ্যালকোহল ব্যবহৃত হয়।
  • পেট্রোলের সাথে মিশিয়ে মোটরগাড়ির জ্বালানি পাওয়ার অ্যালকোহল উৎপাদনে এটি ব্যবহৃত হয়।
  • বিভিন্ন মদজাতীয় পানীয় প্রস্তুতিতে প্রধান উপাদান হিসেবে ইথাইল অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয়।
  • জীবাণুনাশকরূপে চিকিৎসাকার্যে রেকটিফায়েড স্পিরিট (95.6% ইথানল + 4.4% জলের মিশ্রণ) ব্যবহৃত হয়।
  • শীতপ্রধান দেশে মোটরগাড়ির রেডিয়েটরে জলের পরিবর্তে জল ও ইথানলের মিশ্রণ হিমায়ন রোধকরূপে ব্যবহৃত হয়।

ইথাইল অ্যালকোহল জৈব যৌগ হলেও জলে দ্রাব্য কেন?

জলের অণুতে H ও O -পরমাণুর মধ্যে তড়িৎ-ঋণাত্মকতার পার্থক্যের জন্য O -পরমাণু আংশিক ঋণাত্মক আধানগ্রস্ত ও H -পরমাণুগুলি আংশিক ধনাত্মক আধানগ্রস্ত হয়। ইথাইল অ্যালকোহলের -OH মূলকের O ও H -পরমাণুগুলিও অনুরূপ কারণে যথাক্রমে আংশিক ঋণাত্মক ও আংশিক ধনাত্মক আধানযুক্ত হয়। এর ফলে ইথাইল অ্যালকোহল অণুর OH -মূলকের O ও H, যথাক্রমে জলের অণুর H ও O -প্রান্তের সঙ্গে তড়িতাকর্ষণে আবদ্ধ হয়। এধরনের আকর্ষণকে হাইড্রোজেন বন্ধন বলে। এর ফলে ইথানল যে-কোনো অনুপাতে জলে মিশে যায়।

ইথাইল অ্যালকোহল জৈব যৌগ হলেও জলে দ্রাব্য কেন?

অ্যাসিটিক অ্যাসিডের উল্লেখযোগ্য ব্যবহারগুলি উল্লেখ করো।

অ্যাসিটিক অ্যাসিডের উল্লেখযোগ্য ব্যবহারগুলি হল –

  • গ্লেসিয়াল অ্যাসিটিক অ্যাসিড (অনার্দ্র) বিভিন্ন জৈব পদার্থের দ্রাবকরূপে ব্যবহৃত হয়।
  • অ্যাসিটোন, ইথাইল অ্যাসিটেট, অ্যাসিটিক অ্যানহাইড্রাইড, অ্যাসিটাইল ক্লোরাইড ইত্যাদি প্রস্তুতিতে অ্যাসিটিক অ্যাসিড ব্যবহৃত হয়।
  • অ্যাসিটিক অ্যাসিড থেকে সেলুলোজ অ্যাসিটেট তৈরি করা হয় যা ফটোগ্রাফিক ফিল্ম ও কৃত্রিম তন্তু (রেয়ন) প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।
  • হোয়াইট লেড নামক রং প্রস্তুতিতে অ্যাসিটিক অ্যাসিড ব্যবহৃত হয়।
  • ভিনিগার (অ্যাসিটিক অ্যাসিডের 5-8% জলীয় দ্রবণ) হিসেবে অ্যাসিটিক অ্যাসিড মাছ, মাংস সংরক্ষণে, নানাবিধ আচার, চাটনি ইত্যাদি প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।

আমরা আমাদের আর্টিকেলে দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায়ের ‘পদার্থের ভৌত রাসায়নিক ধর্মসমূহ‘ থেকে ‘জৈব রসায়ন’ এর কিছু দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য বা চাকরির পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি দশম শ্রেণীর পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Share via:

মন্তব্য করুন