এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – অদ্ভুত আতিথেয়তা – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়অদ্ভুত আতিথেয়তা’ সম্পর্কিত রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসতে দেখা যায়।

Table of Contents

অদ্ভুত আতিথেয়তা – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর
অদ্ভুত আতিথেয়তা – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

যাহাতে আপনি সত্বর প্রস্থান করিতে পারেন, তদবিষয়ে যথোপযুক্ত আনুকূল্য করিব।

প্রসঙ্গ – প্রশ্নোক্ত অংশটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ নামক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। উক্তিটির বক্তা হলেন আরব সেনাপতি। আরব সেনাপতি আশ্রয় দিয়েছিলেন এক মুর সেনাপতিকে। তার আহার ও নিদ্রার সুব্যবস্থাও করে দিয়েছেন তিনি। পরের দিন প্রভাতে মুর সেনাপতি যাতে স্বস্থানে প্রত্যাবর্তন করতে পারেন, সেই প্রসঙ্গেই বক্তা মুর সেনাপতির উদ্দেশে কথাগুলি বলেছেন।

তাৎপর্য – আরব সেনাপতি মুর সেনাপতির সঙ্গে কথোপকথনের সময় জানতে পেরেছেন যে মুর সেনাপতিই তার পিতৃহন্তা। তখনই তিনি মনে মনে স্থির করে ফেলেন যে, মুর সেনাপতি তার চরম শত্রু এবং তাকে নিধন করার চেষ্টা করবেন। কিন্তু আরবজাতির আতিথেয়তা জগতে তুলনাহীন। পরম শত্রুকেও তারা অতিথি রূপে সেবা করে থাকে। অতিথির ক্ষতি তারা করে না। তাই মুর সেনাপতি যখন অতিথি, তখন তার ক্ষতি আরব সেনাপতি করতে চাননি। তাই তার নিজ শিবিরে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা তিনি করে দেবেন বলে জানিয়েছেন।

এই বিপক্ষ শিবির-মধ্যে, আমা অপেক্ষা আপনকার ঘোরতর বিপক্ষ আর নাই।

প্রসঙ্গ – প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ নামক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। উক্তিটির বক্তা হলেন আরব সেনাপতি। আরব সেনাপতি যুদ্ধক্লান্ত মুর সেনাপতির জন্য নিজ শিবিরে আশ্রয় প্রার্থনা করলে, আরব সেনাপতি তার আশ্রয় ও আহার-নিদ্রার ব্যবস্থা করেছেন। পরের দিন প্রাতঃকালে মুর সেনাপতিকে বিদায় দেওয়ার সময় তাদের দুজনের সম্পর্ক কেমন অবস্থায় পৌঁছেছে-সেই প্রসঙ্গে মুর সেনাপতিকে প্রশ্নোক্ত কথাগুলি বলেছেন আরব সেনাপতি।

তাৎপর্য – আরব সেনাপতি ও মুর সেনাপতি যখন একাসনে বসে কথোপকথনে মগ্ন ছিলেন, তখন মুর সেনাপতির কথায় আরব সেনাপতি বুঝতে পারেন যে, মুর সেনাপতিই আরব সেনাপতির পিতৃহন্তা। তখনই আরব সেনাপতি সেই স্থান থেকে চলে যান এবং মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন সুযোগ পেলেই মুর সেনাপতিকে তিনি সংহার করবেন। কিন্তু বর্তমানে মুর সেনাপতি তার অতিথি, তাই অতিথির কোনো ক্ষতি তিনি করবেন না। সে কারণে প্রভাতে যখন মুর সেনাপতিকে বিদায় দিতে প্রস্তুত, তখন তাকে তিনি জানিয়ে দেন যে তিনিই তার পিতৃহন্তা এবং পরম শত্রু। তাই সূর্যোদয়ের পরেই তিনি তাকে নিধন করতে সচেষ্ট হবেন। একে মুর সেনাপতি বিপক্ষীয়, তাতে আবার পিতৃহন্তা, কাজেই অতিথি না হলে তাকে তখনই সংহার করা হত, কিন্তু অতিথিকে তারা সংহার করেন না। তাই মুর সেনাপতির উচিত সূর্যোদয়ের পূর্বেই বিপক্ষশিবির ত্যাগ করা। প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মাধ্যমে বক্তা এ কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।

আমাদের জাতীয় ধর্ম এই, প্রাণান্ত ও সর্বস্বান্ত হইলেও, অতিথির অনিষ্টচিন্তা করি না।

প্রসঙ্গ – প্রশ্নোক্ত উদ্ধৃতাংশটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ নামক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। এক যুদ্ধক্লান্ত মুর সেনাপতি আরব সেনাশিবিরে আশ্রয় প্রার্থনা করলে, আরব সেনাপতি তার আশ্রয় ও আহার-নিদ্রার ব্যবস্থা করে দেন। পরদিন প্রত্যুষে মুর সেনাপতিকে বিদায় দেওয়ার সময় নিজেদের অতিথিসেবার পরিচয় প্রসঙ্গে আরব সেনাপতি মুর সেনাপতির উদ্দেশে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি করেছেন।

তাৎপর্য – অতিথিসেবার বিষয়ে আরবজাতির তুলনীয় পৃথিবীতে আর কেউ নেই। চরম শত্রুকেও তারা অতিথিরূপে সেবাদান করে থাকে। আলোচ্য গল্পের আরব সেনাপতি জানতে পেরেছেন যে, যাকে তিনি অতিথি হিসেবে আশ্রয় দিয়েছেন, সেই ব্যক্তিই তার পিতাকে হত্যা করেছিল। তবুও শত্রু অতিথি বলেই তিনি তার কোনো অনিষ্ট তো করেনইনি, বরং তার আহার-নিদ্রার সুব্যবস্থা করেছেন এবং তিনি যাতে ফিরে যেতে পারেন তারও ব্যবস্থা করেছেন। বিদায়কালে মুর সেনাপতিকে আরব সেনাপতি সে-কথাও জানিয়েছেন যে, তিনি (মুর সেনাপতি) তার পিতৃহন্তা এবং আরব সেনাপতি সূর্যোদয়ের পরে তাকে সংহারের চেষ্টা করবেন। তাই তিনি যেন দ্রুত প্রস্থান করেন। অর্থাৎ অতিথিকে সতর্ক হওয়ার সুযোগ দিয়ে আরব সেনাপতি নিজ ধর্মপালন করেছেন এবং প্রমাণ করেছেন যে, অতিথি চরম শত্রু হলেও তার অনিষ্টচিন্তা তারা করেন না।

গল্পে কার আতিথেয়তার কথা রয়েছে? তিনি কীভাবে অতিথির আতিথেয়তা করেন? তাঁর সেই আতিথেয়তাকে অদ্ভুত আখ্যা দেওয়া হয়েছে কেন?

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে জনৈক আরব সেনাপতির আতিথেয়তার কথা বলা হয়েছে।

একজন ক্লান্ত-অবসন্ন মুর সেনাপতি দিকভ্রম করে আরব সেনাপতির শিবিরে উপস্থিত হয়ে আশ্রয় প্রার্থনা করলে আরব সেনাপতি বিপক্ষীয় সেনা জেনেও তাকে আশ্রয় দেন। এরপর তার আহার ও নিদ্রারও সুব্যবস্থা করে দেন। বিদায়কালে তাকে তেজস্বী ঘোড়াও দেন, তিনি যাতে নির্বিঘ্নে আপন শিবিরে ফিরে যেতে পারেন। এইভাবে তার সমস্তরকম ব্যবস্থা করে নিজের আতিথেয়তা ধর্মপালন করেন।

মুর সেনাপতির সঙ্গে কথোপকথনকালে আরব সেনাপতি জানতে পারেন যে মুর সেনাপতিই তার পিতৃহন্তা, অর্থাৎ তার সব থেকে বড়ো শত্রু। তবু মুর সেনাপতির কোনো অনিষ্ট তো তিনি করেনইনি, বরং তার আহার ও নিদ্রার সুব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সে যাতে সুর্যোদয়ের পূর্বে নির্বিঘ্নে বিপক্ষশিবির ত্যাগ করতে পারে তারও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আরবজাতি অতিথির কোনো অনিষ্ট কল্পনাও করে না। এমন ধরনের আতিথেয়তা সত্যিই বিরল ও অদ্ভুত। তাই আরব সেনাপতির আতিথেয়তাকে ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ বলা হয়েছে।

আরব-মুর সংঘর্ষের ইতিহাসাশ্রিত কাহিনি অবলম্বনে রচিত এই আখ্যানে লেখকের রচনাশৈলীর অনন্যতার পরিচয় দাও।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর হলেন বাংলা গদ্যের প্রথম যথার্থ শিল্পী। অর্থাৎ তাঁর হাত ধরেই গদ্য শিল্পসম্মত রূপ পায়। আলোচ্য ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে লেখক বিদ্যাসাগর সাধুরীতির প্রচলন ঘটিয়েছেন। যার ফলে বহুস্থানেই তৎসম শব্দের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। যেমন – পটমণ্ডপদ্বার, অশ্বারোহণ, আলয়, ক্ষুৎপিপাসা, পিতৃহন্তা ইত্যাদি। তবে এই শব্দ ব্যবহার রচনাকে দুর্বোধ্য করেনি, বরং লেখাকে প্রাঞ্জল করে তুলেছে। গল্প বলার ছলে লেখক কাহিনির বর্ণনা করেছেন, ফলে কাহিনি সরসতা লাভ করেছে। সাধুরীতি অনুসারে বহুস্থানে সন্ধিবদ্ধ ও সমাসবদ্ধ পদের ব্যবহার দেখা যায় আলোচ্য রচনায়। যেমন – অশ্বারোহণ, শিবিরসন্নিবেশ, সাধ্যানুসারে, আহারাদি, কথোপকথন, আহারসামগ্রী, দর্শনমাত্র ইত্যাদি। এইভাবে শব্দ ব্যবহার রচনার মাধুর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে। আলোচ্য কাহিনিটিতে গল্পচ্ছলে লেখক আতিথেয়তা যে পরম গুণ তা বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। রচনাটি কোথাও শব্দের জটিলতায় ভারাক্রান্ত হয়নি বরং সুমিত শব্দের ব্যবহারে কাহিনিটি সুখপাঠ্য হয়েছে। বিদ্যাসাগরের পূর্বে এত সরল বাংলা গদ্য কেউ লেখেননি; সেই কারণে তাঁর রচনাশৈলী অনন্যতার দাবি করতে পারে।

আতিথেয়তা বিষয়ে পৃথিবীর কোনও জাতিই আরবদিগের তুল্য নহে। – গল্পের ঘটনা বিশ্লেষণ করে মন্তব্যটির যথার্থতা প্রতিপন্ন করো।

একদা আরবদের সঙ্গে মুরদের যুদ্ধ হয়েছিল। আরব সেনারা বহুদূর পর্যন্ত এক মুর সেনাকে অনুসরণ করলে সেই সেনাপতি দ্রুতবেগে পলায়ন করে। কিন্তু শেষে দিকভ্রম হয়ে বিপক্ষ শিবিরের সামনে ক্লান্ত ও অবসন্ন শরীরে উপস্থিত হন। কিছুক্ষণ পরে তিনি এক আরব সেনাপতির তাঁবুর সামনে উপস্থিত হয়ে, তার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। আতিথেয়তার ব্যাপারে আরবদের সমতুল্য কেউ নেই। শত্রুকেও তারা যথাসাধ্য আতিথেয়তা করেন। আরব সেনাপতি আগত মুর সেনাকে ক্লান্ত ও ক্ষুধা-তৃষ্নায় কাতর দেখে তার আহারাদির ব্যবস্থা করেন। তারা বন্ধুভাবে কথোপকথনে মগ্ন হন। তারা পরস্পর পরস্পরের ও তাদের পূর্বপুরুষদের সাহস, পরাক্রম প্রভৃতির পরিচয় দিতে থাকেন। এমন সময় হঠাৎই আরব সেনাপতি বিবর্ণ মুখে সেখান থেকে প্রস্থান করেন এবং কিছুক্ষণ পরেই নিজের অসুস্থতার সংবাদ পাঠিয়ে মুর সেনাপতিকে জানান যে তার আহার ও শয্যা তৈরি আছে, তিনি যেন আহার করে শয়ন করেন। তার ঘোড়াও ক্লান্ত, হতবীর্য হয়েছে, তাই পরের দিন সকালে তার জন্য তেজস্বী ঘোড়া সাজিয়ে রাখা হবে তাঁবুর সামনে। সেই সময় আবার দুজনের সাক্ষাৎ হবে এবং মুর সেনাপতি যাতে নিজ স্থানে পৌঁছোতে পারেন, তার ব্যবস্থাও তিনি করে দেবেন।

মুর সেনাপতি আশ্রয়দাতার এমন আচরণের কোনো কারণ বুঝতে না পেরে সন্দিগ্ধ মনেই শয়ন করেন। প্রভাতে আরব সেনাপতির লোকজন এসে তার নিদ্রাভঙ্গ করে এবং তারা বলে যে মুর সেনাপতির ফিরে যাওয়ার সময় উপস্থিত হয়েছে। মুর সেনাপতি শিবিরের দ্বারদেশে উপস্থিত হয়ে দেখেন আরব সেনাপতি ঘোড়ার মুখরশ্মি ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছেন। মুর সেনাপতিকে দেখামাত্র আরব সেনাপতি তাকে ঘোড়ায় আরোহণ করিয়ে দ্রুত বিপক্ষশিবির ত্যাগ করতে বলেন, তিনি আরও বলেন যে, এখানে তার (মুর সেনাপতির) সবথেকে বড়ো শত্রু তিনিই (আরব সেনাপতি)। কারণ কথোপকথনের সময় আরব সেনাপতি জানতে পেরেছেন মুর সেনাপতিই তার পিতার প্রাণহত্যার আদেশ দিয়েছিলেন এবং সে-কথা শুনে আরব সেনাপতি প্রতিজ্ঞা করেছেন সূর্যোদয় হলেই তিনি পিতৃহন্তার প্রাণনাশে প্রবৃত্ত হবেন। তাই মুর সেনাপতি যেন দ্রুত সেই স্থান ত্যাগ করেন। এরপর আরব সেনাপতি অতিথির সম্ভাষণ ও করমর্দন করে বিদায় জানান।

সুতরাং গল্পটি আলোচনা করে দেখা গেল যে, এমন আতিথেয়তার দৃষ্টান্ত জগতে বিরল ঘটনা। পৃথিবীর অপর কোনো জাতি জেনেশুনে শত্রুকে এমন সমাদরে আতিথ্য দান করবে না। তাই লেখকের প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ বলে মেনে নেওয়া যায়।

বন্ধুভাবে উভয় সেনাপতির কথোপকথন হইতে লাগিল। – কোন্ দুই সেনাপতির কথা এখানে বলা হয়েছে? তাঁদের কীভাবে সাক্ষাৎ ঘটেছিল? উভয়ের কথোপকথনের সারমর্ম নিজের ভাষায় আলোচনা করো।

প্রশ্নে প্রদত্ত অংশে আরব সেনাপতি ও মুর সেনাপতির কথা বলা হয়েছে।

মুর সেনাপতি আরব সেনাদের হাত থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য দ্রুত পলায়ন করে দিকভ্রান্ত হয়ে বিপক্ষশিবিরে আশ্রয় প্রার্থনা করে। তখনই আরব ও মুর সেনাপতির সাক্ষাৎ ঘটেছিল।

আরব সেনাপতি মুর সেনাপতিকে নিজ শিবিরে আতিথ্য দান করেন। কিছুক্ষণ পরে দুই সেনাপতি বন্ধুভাবে একাসনে বসে কথোপকথনে নিমগ্ন হন। তখন উভয় সেনাপতিই নিজের নিজের এবং তাদের পূর্বপুরুষদের সাহস, পরাক্রম, সংগ্রামকৌশলের পরিচয় ব্যক্ত করেন। কিন্তু তখন মুর সেনাপতির কথা থেকে আরব সেনাপতি বুঝতে পারেন যে, মুর সেনাপতিই তার পিতৃহন্তা। তাই হঠাৎই তিনি বিবর্ণ মুখে গাত্রোত্থান করেন এবং বলে পাঠান তিনি অসুস্থ, তবে মুর সেনাপতির আহার ও শয্যা প্রস্তুত আছে। মুর সেনাপতির বিদায়কালেও উভয়ের সাক্ষাৎ হয় এবং তখন আরব সেনাপতি মুর সেনাপতিকে দ্রুত প্রস্থান করতে বলেন এবং স্মরণ করিয়ে দেন যে – এই বিপক্ষশিবিরে সে-ই তার সবথেকে বড়ো শত্রু। কারণ মুর সেনাপতিই তার পিতৃহন্তা।

তিনি নির্বিঘ্নে স্বপক্ষীয় শিবিরসন্নিবেশ স্থানে উপস্থিত হইলেন। – কার কথা বলা হয়েছে? কীভাবে তিনি স্বপক্ষের শিবিরে নির্বিঘ্নে পৌঁছোলেন? তার জীবনের এই ঘটনার পূর্বরাত্রের অভিজ্ঞতার কথা নিজের ভাষায় আলোচনা করো।

প্রশ্নে প্রদত্ত অংশে মুর সেনাপতির কথা বলা হয়েছে।

প্রভাতে মুর সেনাপতির জন্য তেজস্বী ঘোড়া প্রস্তুত করে রেখেছিলেন আরব সেনাপতি। দ্রুতগতিসম্পন্ন সেই ঘোড়ায় আরব সেনাপতি আরোহণ করে সূর্যোদয়ের পূর্বেই বিপক্ষশিবির ত্যাগ করেন এবং নির্বিঘ্নে স্বপক্ষীয় শিবিরে পৌঁছে যান।

ঘটনার পূর্বরাত্রে দুই সেনাপতি একাসনে উপবেশন করে বন্ধুভাবে কথোপকথন করছিলেন। সেই সময় দুই সেনাপতি নিজেদের এবং নিজ নিজ বংশের পূর্বপুরুষদের সাহস, পরাক্রম, সংগ্রামকৌশল প্রভৃতির পরিচয় প্রদান করছিলেন। সেই সময় হঠাৎ আরব সেনাপতির মুখ বিবর্ণ হয়ে যায় এবং তিনি তৎক্ষণাৎ গাত্রোত্থান করে সেখান থেকে চলে যান। একটু পরেই তিনি মুর সেনাপতিকে বলে পাঠান যে তার অসুস্থবোধ হচ্ছে, কিন্তু মুর সেনাপতির আহার ও শয়নের সুব্যবস্থা তিনি করে দিয়েছেন। আরব সেনার এমন আচরণে মুর সেনাপতি চমকিত হন এবং ভয়ের সঙ্গে শয়ন করেন। বিদায় নেওয়ার পূর্বরাতে মুর সেনাপতির এমন অভিজ্ঞতা হয়েছিল।

তাঁহার অনুসরণ করিতেছিলেন – কার কথা বলা হয়েছে? তিনি কাকে অনুসরণ করছিলেন? তাঁর এই অনুসরণের কারণ কী? শত্রুকে কাছে পেয়েও তিনি বৈরসাধন সংকল্প সাধন করেননি কেন?

প্রশ্নে প্রদত্ত অংশে আরব সেনাপতির কথা বলা হয়েছে।

তিনি মুর সেনাপতিকে অনুসরণ করছিলেন।

মুর সেনাপতি ছিলেন আরব সেনাপতির পিতৃহন্তা। কথোপকথনের সময় মুর সেনাপতির কথা থেকে আরব সেনাপতি এ কথা জানতে পারেন এবং মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন সূর্যোদয় হলেই তিনি পিতৃহন্তার প্রাণনাশ সাধনে প্রবৃত্ত হবেন। তাই সূর্যোদয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরব সেনাপতি মুর সেনাপতির অনুসরণ করেছিলেন।

আরব সেনাপতি মুর সেনাপতিকে অনুসরণ করেও শেষ পর্যন্ত ‘বৈরসাধন সংকল্প’ ত্যাগ করেন। কারণ তিনি বেশ খানিকটা অনুসরণ করার পরেই দেখতে পান যে, মুর সেনাপতি স্বপক্ষীয় শিবিরে প্রবেশ করেছেন। আরব সেনাপতি বুঝতে পারেন মুর সেনাপতিকে নিধন করার চেষ্টা সফল হবে না।

আপনি সত্বর প্রস্থান করুন – কে, কাকে এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন? এমন নির্দেশের কারণ কী?

প্রশ্নোক্ত অংশটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ নামক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন আরব সেনাপতি মুর সেনাপতিকে উদ্দেশ করে।

আরব সেনাপতি ও মুর সেনাপতি যখন একাসনে বসে বিভিন্ন বিষয়ে কথোপকথনে মগ্ন ছিলেন, তখন মুর সেনাপতির কথায় আরব সেনাপতি বুঝতে পারেন যে, মুর সেনাপতিই তার পিতার হত্যার জন্য দায়ী। তখন আরব সেনাপতি বারবার প্রতিজ্ঞা করেন যে, সূর্যোদয়ের পরেই তিনি মুর সেনাপতিকে বৈরসাধন হত্যা করার জন্য উদ্যত হবেন। পরের দিন প্রত্যুষে যখন মুর সেনাপতির সঙ্গে আরব সেনাপতির সাক্ষাৎ হয়, তখন তিনি মুর সেনাপতিকে এই সংবাদ দিয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ তাকে সূর্যোদয়ের পূর্বেই শিবির ত্যাগ করতে হবে এবং এরপরে তিনি শত্রু সেনাপতি এমনকি পিতৃহন্তারূপে চিহ্নিত হবেন। আর সূর্যোদয়ের বেশি বিলম্বও ছিল না। তাই আরব সেনাপতি মুর সেনাপতিকে সত্বর শিবির ত্যাগ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

অদ্ভুত আতিথেয়তা গল্প অবলম্বনে আরব সেনাপতির চরিত্রের পরিচয় দাও।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে জনৈক আরব সেনাপতির চরিত্রের কিছু বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে।

আতিথেয়তা বিষয়ে আরবজাতির সমতুল্য পৃথিবীতে আর কেউ নেই। আলোচ্য গল্পে আরব সেনাপতির আচরণের মধ্যে বোঝা যায় যে, আতিথেয়তার জন্য তার হৃদয় ছিল ব্যাকুল। মুর সেনাপতি ছিল তার বিপক্ষীয়, তবু তাকে আতিথ্য দান করতে তার কোনো দ্বিধা হয়নি। অতিথির যেন কোনোরূপ অমর্যাদা না হয় সেদিকে তার সতর্ক দৃষ্টি ছিল। তাই অতিথির আহার-নিদ্রার সুবন্দোবস্ত করে দিয়েছেন তিনি, এমনকি বিদায়ের সময়ে অতিথিকে নতুন ঘোড়া সাজিয়ে দিয়েছেন।

আলোচ্য গল্পে আরব সেনাপতির ধৈর্যশীলতার পরিচয় আমরা পেয়েছি। মুর সেনাপতির সঙ্গে কথোপকথনের সময় তিনি বুঝতে পারেন যে মুর সেনাপতিই তার পিতৃহন্তা, তবুও অসম্ভব সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে তিনি তাকে আঘাত করা থেকে বিরত থেকেছেন; অপেক্ষা করেছেন পরের দিনের সূর্যোদয়ের। কারণ সূর্যোদয় হলেই মুর সেনাপতি আর তার অতিথি থাকবেন না, তখন আরব সেনাপতি পিতৃহন্তাকে আক্রমণ করতে পারবেন। এই ঘটনায় একদিকে তার ধৈর্যশীলতার প্রমাণ পাওয়া যায়, আবার ধর্মের প্রতি তার অনুরাগের পরিচয়ও পাওয়া যায়। অতিথিকে আঘাত করলে তার ধর্মকে অপমান করা হত, তা তিনি করেননি।

আরব সেনাপতি স্পষ্টভাষী, পূর্বরাতে কথোপকথন থেকে হঠাৎ উঠে আসার কারণ তিনি মুর সেনাপতিকে জানিয়েছেন। তিনি মুর সেনাপতিকে বলেন – “এই বিপক্ষশিবির-মধ্যে, আমা অপেক্ষা আপনকার ঘোরতর বিপক্ষ আর নাই।” এরূপ স্পষ্টবাদিতা তার চরিত্রকে স্বচ্ছ করে তুলেছে।

এইভাবে আলোচ্য গল্পাংশে আরব সেনাপতির চরিত্রের নানা বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে।


আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়অদ্ভুত আতিথেয়তা’–এর রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়শই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনার জন্য সহায়ক হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে বা আরও সহায়তার প্রয়োজন হয়, দয়া করে টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করুন। এছাড়াও, আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এই পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে তারাও উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ!

Share via:

মন্তব্য করুন