আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের ত্রয়োদশ অধ্যায় ‘দাঁড়াও’ নিয়ে রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করা হবে। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসতে দেখা যায়।
কবিতাটির নাম দাঁড়াও কতটা সার্থক? কবিতাটির নাম মানুষ বড়ো কাঁদছে হতে পারে কি – তোমার উত্তরের ক্ষেত্রে যুক্তি দাও।
আধুনিক সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘দাঁড়াও’ কবিতায় আজকের যান্ত্রিক সভ্যতার স্বার্থপর মানুষদের কাছে তাদের একটু মানবিক হয়ে ওঠার আবেদন জানিয়েছেন। বিপন্ন, দুঃখী অসহায় মানুষদের পাশে তারা যাতে নিজেদের স্বার্থপরতা ও হীনতাকে দূর করে ভালোবেসে দাঁড়ায়, কবি সেটাই প্রত্যাশা করেছেন। সমগ্র কবিতায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আবেদনটাই মুখ্য হয়ে উঠেছে এবং সে হিসেবে কবিতাটির ‘দাঁড়াও’ নামকরণ সার্থক।
মানুষ বড়ো কাঁদছে বাক্যটি কবিতায় দুইবার এবং ‘দাঁড়াও’ শব্দটি মোট সাতবার প্রযুক্ত হয়েছে। শুধু তাই নয়, দুঃখকষ্টে জর্জরিত মানুষের কান্নার কথা বললেও কবি কিন্তু এই কবিতায় তাদের পাশে মানুষকে ভরসা দিতে, নির্ভরতা দিতে দাঁড়ানোর কথাই প্রধানত বলতে চেয়েছেন। সেই কারণে ‘মানুষ বড়ো কাঁদছে’ – এই শিরোনামটির চেয়ে প্রদত্ত ‘দাঁড়াও’ শিরোনামটিকেই অধিকতর সঙ্গত ও বক্তব্যের উপযোগী বলে মনে হয়।
দাঁড়াও কবিতাটির প্রথম স্তবকে প্রকাশিত কবির অন্তর্নিহিত ভাবনার পরিচয় দাও।
মানুষ আজ প্রকৃতি ও সমাজের বুকে তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করলেও বিশ্বাসহীনতা, স্বার্থপরতার কবলে পড়ে খুবই অসহায়। এই অসহায় মানুষের একাকিত্ব ও যন্ত্রণা কবিকে ব্যথিত করেছে। সেই কারণেই আজ প্রতিটি মানুষেরই উচিত তার মনুষ্যত্বকে আশ্রয় করে প্রত্যেক অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানো। এক মানুষের সঙ্গে অন্য মানুষের আন্তরিক ও সহানুভূতিশীল সম্পর্ক রচনার মধ্য দিয়েই সকল মানুষের দুঃখযন্ত্রণা ও অসহায়তার ভাবটি দূর হতে পারে। কবি এই কবিতার প্রথম স্তবকে মানুষকে এই মানবিক দায়িত্বপালনের আবেদনটুকুই প্রকাশ করেছেন। মানুষে মানুষে গড়ে তোলা মানবিক বন্ধন রচনার বাসনাই কবিতার প্রথম স্তবকে ধরা পড়েছে।
তোমাকে সেই সকাল থেকে তোমার মতো মনে পড়ছে-তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও। — অন্তর্নিহিত তাৎপর্য লেখো।
আজকের সমাজের যন্ত্রণা ও অসহায়তাবোধে জর্জরিত মানুষের পাশে ভালোবাসা ও নির্ভরতা নিয়ে দাঁড়াতে পারে এমন একজন মানুষকে কবি যেন সকাল থেকে প্রত্যাশা করছেন। সকাল থেকে সন্ধে, সন্ধে থেকে রাত-অর্থাৎ সারাটি সময় ধরে কবি মানবিকতাবোধসম্পন্ন একজন মানুষকে মনে করছেন, তাকে পেতে চাইছেন। কবি অনুভব করছেন বর্তমান যুগে মানুষ ভিতরে ভিতরে বড়ো একা এবং অসহায়। তাই তার পাশে এসে তাকে নির্ভরতা দিতে পারার মতো একজন মানুষের আজ বড়ো প্রয়োজন। সেই ধরনের একজন মানুষকেই কবি মনে মনে কামনা করছেন। সে এসে মানুষের কষ্ট লাঘব করবে, এটাই কবির কামনা।
এসে দাঁড়াও ভেসে দাঁড়াও এবং ভালোবেসে দাঁড়াও/তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও। – পঙ্ক্তিগুলির অন্তর্নিহিত অর্থ লেখো।
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় প্রতিটি মানুষকে মানবিক অনুভবের টানে প্রত্যেক অসহায় নিঃসঙ্গ মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানোর আবেদন জানিয়েছেন। তিনি অনুভব করছেন আজকের সভ্যতায় মানুষের অন্তরাত্মা গুমরে কাঁদছে। সেই কাতর মানুষের দুঃখ ভুলিয়ে কাছে টেনে নিতে হবে প্রতিটি মানুষকেই। কেবল কর্তব্য বা দায়িত্বপালনের তাগিদে নয়। মানুষকে ‘ভালোবেসে’ আপন করে নিতে হবে, কবি এটাই আশা করেন। ‘তাহার’ শব্দটি সাধু ভাষায় ব্যবহার করে কবি এখানে অসহায় মানুষের পরিচয়কে বিশেষভাবে চিহ্নিত করেছেন। ‘দাঁড়াও’ কথাটির মাধ্যমে কবি মানুষকে ক্লান্ত, দুঃখী মানুষের পাশে ভরসা হয়ে থাকার জন্য আবেদন জানিয়েছেন।
আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের ত্রয়োদশ অধ্যায় ‘দাঁড়াও’ – এর রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসতে দেখা যায়। আমি আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনার জন্য সহায়ক হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে বা অতিরিক্ত সহায়তার প্রয়োজন হয়, অনুগ্রহ করে টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করুন। এছাড়াও, আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এই পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে তারাও উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ!