অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – দাঁড়াও – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের দাঁড়াও অধ্যায়ের রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর গুলি পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইভাবে দাঁড়াও অধ্যায়ের রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর গুলি যদি তোমরা প্রস্তুত করে না যাও তাহলে পরীক্ষায় দাঁড়াও অধ্যায়ের রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর গুলোর উত্তর দিতে পারবে না। তাই দাঁড়াও অধ্যায়ের রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর গুলি ভালো করে মুখস্ত করে গেলে তোমরা পরীক্ষায় খুব ভালো ফলাফল পাবে।

বিশ শতকের বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি হিসাবে সন্মানিত শক্তি চট্টোপাধ্যায়। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ২৫ নভেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহড়ু গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা বামানাথ চট্টোপাধ্যায়, মাতা কমলাদেবী। চার বছর বয়সে পিতৃহারা শক্তি চট্টোপাধ্যায় মাতামহের সহযোগিতায় কলকাতায় আসেন এবং ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার বাগবাজারে বসবাস শুরু করেন ও মহারাজা কাশিমবাজার পলিটেকনিক স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভরতি হন। এখানে মার্কসীয় দর্শন সম্পর্কে এক শিক্ষকের কাছ থেকে জানেন এবং ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ‘প্রগতি’ গ্রন্থাগার চালু করেন ও হাতে লেখা পত্রিকা ‘প্রগতি’ শুরু করেন। পরবর্তীকালে এই পত্রিকা ‘বহ্নিশিখা’ নামে প্রকাশিত হয়। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে বাণিজ্য বিভাগে সিটি কলেজে ভরতি হন। পরে পুনরায় বাংলা স্নাতক স্তরে প্রেসিডেন্সি কলেজে চলে আসেন।

১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁর প্রথম কবিতা ‘যম’ প্রকাশিত হয় বুদ্ধদেব বসুর পত্রিকায়; এরপর ‘কৃত্তিবাস’ ও অন্যান্য পত্রপত্রিকায় তিনি লিখতে শুরু করেন। মানবসমাজ এক অদৃশ্য শৃঙ্খলে আবদ্ধ। ‘মানুষ’ শব্দটি এখানে মানবতার সমার্থক। মান এবং হুঁশ যার আছে প্রকৃত অর্থে সে-ই মানুষ। সমাজের অবক্ষয় কবিমনকে ব্যথিত করে তুলেছে। সমাজে অগ্রগণ্য মানুষ। কিন্তু তারা কেমন? আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর, সাহিত্য বিচিত্রা সুযোগসন্ধানী, ক্ষমতালোভী, অর্থলোভী। কবি সেই মানুষকেই খুঁজেছেন যে প্রেম-ভালোবাসা, দয়ামায়ার বন্ধনে মানুষকে আবদ্ধ করতে পারবে। মানবিকতার অবক্ষয়ে কবিমন তথা মানবমন ক্রন্দিত। প্রকৃত মানুষের মতো অসহায়, সম্বলহীন, বিপর্যস্ত মানুষের হৃদয়ে আশার সঞ্চার করতে হবে।

বিধাতার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ সমগ্র বিশ্বে তার ভালোবাসার ফাঁদ পাতা। পাখির মতো ইচ্ছাডানায় ভর করে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে তার সহমর্মী রূপটিকে তুলে ধরতে হবে। নিঃসঙ্গ, অবসাদগ্রস্ত মানুষের সহযোগী আর-এক মানুষ। এই ‘তুমি’ কথাটি মানবতার সমার্থক। পাঠককে কবি যেন বলতে চেয়েছেন তার অন্তরে কখন মানবতাবোধের উদয় হয়। তিনি এই মানবিক মুখটিকে দিনরাত খুঁজে বেড়িয়েছেন এবং শুধু নিজের মনকেই নয় পাঠকমনকে মানবতাবোধে উদবুদ্ধ করে সহায়সম্বলহীন একাকী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেছেন। সকল কঠিন মুহূর্তে খরা, বন্যা, ভূমিকম্প প্রভৃতি বিভিন্ন দুর্যোগে অসহায়, অনাহারী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেছেন কবি। সেই সহযোগিতা আন্তরিক, নিঃস্বার্থ এবং প্রেমপূর্ণ হোক কবির এই একমাত্র কামনা। ‘মানুষ বড়ো কাঁদছে’ – বাক্যটি বেশ কয়েকবার কবি ব্যবহার করেছেন।

সম্ভবত এখানে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন মানুষের অন্তরাত্মা কাঁদছে – সেই একাকিত্ব, নিঃসঙ্গবোধকে কাটানোর জন্য প্রকৃত সহযোগী মানুষ হয়ে উঠতে হবে। আমাদের যান্ত্রিক গতিশীল জীবনে এই অসহায় মানুষের জন্য মানুষ হয়ে আমরা কিছু সময় যেন ব্যয় করি, একটু অপেক্ষা করে তাদের সমব্যথী হয়ে উঠি আর ক্ষণিকের জন্য নিজেদের কর্তব্যবোধ, দায়বদ্ধতাকে পালন করার চেষ্টা করি। মানবতার স্খলন বা পতন কবিচিত্তকে অস্থির করে তোলে। কবি যেন পক্ষান্তরে বলতে চেয়েছেন ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না ও বন্ধু।”

দাঁড়াও – অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

কবিতাটির নাম ‘দাঁড়াও’ কতটা সার্থক? কবিতাটির নাম ‘মানুষ বড়ো কাঁদছে’ হতে পারে কি – তোমার উত্তরের ক্ষেত্রে যুক্তি দাও।

আধুনিক সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘দাঁড়াও’ কবিতায় আজকের যান্ত্রিক সভ্যতার স্বার্থপর মানুষদের কাছে তাদের একটু মানবিক হয়ে ওঠার আবেদন জানিয়েছেন। বিপন্ন, দুঃখী অসহায় মানুষদের পাশে তারা যাতে নিজেদের স্বার্থপরতা ও হীনতাকে দূর করে ভালোবেসে দাঁড়ায়, কবি সেটাই প্রত্যাশা করেছেন। সমগ্র কবিতায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আবেদনটাই মুখ্য হয়ে উঠেছে এবং সে হিসেবে কবিতাটির ‘দাঁড়াও’ নামকরণ সার্থক।

মানুষ বড়ো কাঁদছে বাক্যটি কবিতায় দুইবার এবং ‘দাঁড়াও’ শব্দটি মোট সাতবার প্রযুক্ত হয়েছে। শুধু তাই নয়, দুঃখকষ্টে জর্জরিত মানুষের কান্নার কথা বললেও কবি কিন্তু এই কবিতায় তাদের পাশে মানুষকে ভরসা দিতে, নির্ভরতা দিতে দাঁড়ানোর কথাই প্রধানত বলতে চেয়েছেন। সেই কারণে ‘মানুষ বড়ো কাঁদছে’ – এই শিরোনামটির চেয়ে প্রদত্ত ‘দাঁড়াও’ শিরোনামটিকেই অধিকতর সঙ্গত ও বক্তব্যের উপযোগী বলে মনে হয়।

দাঁড়াও কবিতাটির প্রথম স্তবকে প্রকাশিত কবির অন্তর্নিহিত ভাবনার পরিচয় দাও।

মানুষ আজ প্রকৃতি ও সমাজের বুকে তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করলেও বিশ্বাসহীনতা, স্বার্থপরতার কবলে পড়ে খুবই অসহায়। এই অসহায় মানুষের একাকিত্ব ও যন্ত্রণা কবিকে ব্যথিত করেছে। সেই কারণেই আজ প্রতিটি মানুষেরই উচিত তার মনুষ্যত্বকে আশ্রয় করে প্রত্যেক অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানো। এক মানুষের সঙ্গে অন্য মানুষের আন্তরিক ও সহানুভূতিশীল সম্পর্ক রচনার মধ্য দিয়েই সকল মানুষের দুঃখযন্ত্রণা ও অসহায়তার ভাবটি দূর হতে পারে। কবি এই কবিতার প্রথম স্তবকে মানুষকে এই মানবিক দায়িত্বপালনের আবেদনটুকুই প্রকাশ করেছেন। মানুষে মানুষে গড়ে তোলা মানবিক বন্ধন রচনার বাসনাই কবিতার প্রথম স্তবকে ধরা পড়েছে।

তোমাকে সেই সকাল থেকে তোমার মতো মনে পড়ছে-তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও। — অন্তর্নিহিত তাৎপর্য লেখো।

আজকের সমাজের যন্ত্রণা ও অসহায়তাবোধে জর্জরিত মানুষের পাশে ভালোবাসা ও নির্ভরতা নিয়ে দাঁড়াতে পারে এমন একজন মানুষকে কবি যেন সকাল থেকে প্রত্যাশা করছেন। সকাল থেকে সন্ধে, সন্ধে থেকে রাত-অর্থাৎ সারাটি সময় ধরে কবি মানবিকতাবোধসম্পন্ন একজন মানুষকে মনে করছেন, তাকে পেতে চাইছেন। কবি অনুভব করছেন বর্তমান যুগে মানুষ ভিতরে ভিতরে বড়ো একা এবং অসহায়। তাই তার পাশে এসে তাকে নির্ভরতা দিতে পারার মতো একজন মানুষের আজ বড়ো প্রয়োজন। সেই ধরনের একজন মানুষকেই কবি মনে মনে কামনা করছেন। সে এসে মানুষের কষ্ট লাঘব করবে, এটাই কবির কামনা।

এসে দাঁড়াও ভেসে দাঁড়াও এবং ভালোবেসে দাঁড়াও/তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও।’- পঙ্ক্তিগুলির অন্তর্নিহিত অর্থ লেখো।

কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় প্রতিটি মানুষকে মানবিক অনুভবের টানে প্রত্যেক অসহায় নিঃসঙ্গ মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানোর আবেদন জানিয়েছেন। তিনি অনুভব করছেন আজকের সভ্যতায় মানুষের অন্তরাত্মা গুমরে কাঁদছে। সেই কাতর মানুষের দুঃখ ভুলিয়ে কাছে টেনে নিতে হবে প্রতিটি মানুষকেই। কেবল কর্তব্য বা দায়িত্বপালনের তাগিদে নয়। মানুষকে ‘ভালোবেসে’ আপন করে নিতে হবে, কবি এটাই আশা করেন। ‘তাহার’ শব্দটি সাধু ভাষায় ব্যবহার করে কবি এখানে অসহায় মানুষের পরিচয়কে বিশেষভাবে চিহ্নিত করেছেন। ‘দাঁড়াও’ কথাটির মাধ্যমে কবি মানুষকে ক্লান্ত, দুঃখী মানুষের পাশে ভরসা হয়ে থাকার জন্য আবেদন জানিয়েছেন।

দাঁড়াও কবিতাটি একটি অনুপ্রেরণামূলক কবিতা। এই কবিতাটি আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সাহসী হয়ে লড়াই করার শিক্ষা দেয়।

শক্তি চট্টোপাধ্যায় কেবল একজন কবিই ছিলেন না, তিনি ছিলেন মানবিকতার প্রতীক। তার কবিতায় বারবার উঠে এসেছে মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও সহানুভূতি। সমাজের অধঃপতিত, নিপীড়িত মানুষের প্রতি তার করুণা ছিল অপরিসীম।

তার কবিতায় ‘মানুষ’ শব্দটি بارবার ব্যবহৃত হয়েছে। কবির বিশ্বাস ছিল, প্রকৃত মানুষ তার মনের মহত্ত্ব ও মানবিক গুণাবলীর মাধ্যমেই পরিচিতি লাভ করে। কিন্তু সমাজের বাস্তবতা ভিন্ন। কবি দেখেছেন, সমাজে অধিকাংশ মানুষই স্বার্থপর, ক্ষমতালোভী ও অর্থলোভী। তারা মানবিক মূল্যবোধ ভুলে গেছে।

এই অবক্ষয় কবির মনে যন্ত্রণা জাগিয়ে তোলে। তিনি স্বপ্ন দেখেন এমন এক সমাজের যেখানে মানুষ মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও সহানুভূতির দ্বারা আবদ্ধ থাকবে।

কবি বারবার পাঠককে অনুরোধ জানান, নিঃসঙ্গ ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে। তিনি বিশ্বাস করতেন, মানুষের মনের মধ্যে ভালোবাসার শক্তি অপরিসীম।

শক্তি চট্টোপাধ্যায় কেবল একজন কবিই ছিলেন না, তিনি ছিলেন মানবতার প্রতীক। তার কবিতা আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও সহানুভূতির বাণী ছড়িয়ে দিতে।

Share via:

মন্তব্য করুন