অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – একটি চড়ুই পাখি – বিষয়সংক্ষেপ

Rahul

আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের দ্বাদশ অধ্যায়একটি চড়ুই পাখি’ নিয়ে আলোচনা করবো। এই বিষয়সংক্ষেপটি অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখান থেকে প্রশ্নোত্তর প্রায়ই পরীক্ষায় আসে।

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – একটি চড়ুই পাখি – বিষয়সংক্ষেপ
অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – একটি চড়ুই পাখি – বিষয়সংক্ষেপ

একটি চড়ুই পাখি অধ্যায়ের কবি পরিচিতি

বিশিষ্ট কবি ও রম্যরচনাকার তারাপদ রায় ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের ১৭ নভেম্বর অধুনা বাংলাদেশের টাঙ্গাইলে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানকার বিন্দুবাসিনী ইংলিশ হাই স্কুলে পড়াশোনো শেষ করে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় আসেন। সেন্ট্রাল কলকাতা কলেজ আজ যেটি মৌলানা আজাদ কলেজ নামে পরিচিত সেখানে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেন। এই সময় তিনি হাবড়ার একটি বিদ্যালয়ে পড়াতেন।

১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে ‘তোমার প্রতিমা’ নামে কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। এ ছাড়াও তিনি লিখেছেন ‘ছিলাম ভালোবাসার নীল পাতাতে স্বাধীন’, ‘কোথায় যাচ্ছেন তারাপদবাবু’, ‘নীলদিগন্তে এখন ম্যাজিক’, ‘পাতা ও পাখিদের আলোচনা’, ‘ভালোবাসার কবিতা’, ‘দারিদ্র্যরেখা’, ‘জলের মতো কবিতা’, ‘কবি ও পড়শিনী’ ইত্যাদি। ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘শিরোমণি’ ও ‘কথা’ পুরস্কারে ভূষিত হন। বাংলা শিশুসাহিত্যে পরিচিত ডোডো ও তাতাই তাঁর সৃষ্টি। ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের ২৫ আগস্ট এই বিখ্যাত কবির মৃত্যু হয়। কথ্যভঙ্গি ও পরিহাসমিশ্রিত কাব্যভাষায় তিনি স্বাতন্ত্র্য অর্জন করেছিলেন।

একটি চড়ুই পাখি অধ্যায়ের বিষয়সংক্ষেপ

আধুনিকতাকে অনেকেই জীবনমুখিনতা বলে প্রকাশ করতে চান। জীবনের সঙ্গেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে প্রকৃতি এবং ঈশ্বরসৃষ্ট প্রাণীকুল। অনেক সময় অতি সামান্যও আমাদের জীবনে অসামান্য হয়ে ওঠে। বাংলার চিরপরিচিত সাধারণ চড়ুইপাখি কবির মনের গভীরে রেখাপাত করে। তার চাঞ্চল্য, অস্থিরতা, বুদ্ধিমত্তা আর চাতুর্য কবিকে বিচলিত করে তোলে। ‘বাসা’ কথাটির মধ্যে কোথাও একটা নিরাপদ আশ্রয়ের কথা লুকিয়ে থাকে। ঝড় ও বাতাসে পাখির নীড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। হয়তো সেই চিন্তা করেই চড়ুই ইট, কাঠ, পাথরের তৈরি শক্তপোক্ত অট্টালিকায় বাসা তৈরি করে, আবার ইচ্ছামতো এ-বাড়ি ও-বাড়ি উড়ে যায়। কবি দেখেছেন চড়ুই – এর বাসা প্রস্তুতির দক্ষতা। সারাদিন সে ইচ্ছামতো ঘুরে বেড়ায় আর সন্ধেবেলা খড়কুটো ও ধান বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করে। তার সঙ্গে আনন্দের সুরই ধ্বনিত হয়, যাকে কবি সংগীত বলেছেন। কখনও তার দৃষ্টিতে কবি দেখেন অসীম কৌতূহল। কবি বাইরে গেলেই হয়তো সে ভাবে এই ঘরের সব কিছুই তার; টেবিলে ফুলদানি, বইখাতা সব কিছুই একদিন বিধাতার কৃপায় তার হয়ে যাবে।

কল্পনাপ্রবণ কবি আবার কখনও চড়ুই – এর দৃষ্টিতে তাচ্ছিল্যের ভাবটিও লক্ষ করেছেন। কার্নিশে এসে হয়তো সে ভাবে মায়ার টানেই এই ভাঙাচোরা ঘরে সে আছে। কোনো সময় ওপাড়ার পালেদের, বোসেদের বাড়িতে সে আশ্রয় নিতে পারে। তবু কোনো এক অজানা বন্ধনে কবির সঙ্গে সে আবদ্ধ হয়ে গেছে। কবির মনে হয় তার একাকিত্ব নিরসনের জন্য চড়ুইপাখিটি নির্জন রাত্রে কবির একমাত্র সঙ্গী হয়ে রয়ে গেছে।

একটি চড়ুই পাখি অধ্যায়ের নামকরণ

মানবজীবনের সহজ সত্যটি কবি একটি চড়ুইপাখির মধ্যে তুলে ধরতে চেয়েছেন। আমাদের প্রত্যেকেরই আত্মীয়স্বজনে পূর্ণ গৃহটির প্রতি অদম্য আকর্ষণ আছে। দিনান্তে বিশ্রাম গ্রহণের জন্য আমরা এই আনন্দঘন স্থানটিতে পারিবারিক মিলনের জন্য ফিরে আসি। প্রাণীকুলের মধ্যেও এই সহজাত ভাবনার প্রকাশ ঘটে। ‘গৃহ’ অর্থ নিরাপদ আশ্রয়, কিন্তু নির্জন গৃহ মানুষকে গভীর একাকিত্বের মধ্যে ঠেলে দেয়। এই কবিতায় কবি জীবনের একাকিত্ব দূর করতে এই চড়ুইপাখির বিশেষ ভূমিকা আছে, তাই তার থাকা বা না থাকা দুটি বিষয়ই কবিকে ভাবিয়ে তুলেছে। বহু মানুষের সঙ্গে এই চড়ুইপাখিটির অদ্ভুত সাদৃশ্য আছে। কবি বলেছেন ইচ্ছামতো সে এই বন্ধন ছিন্ন করে ভাঙা ঘর ছেড়ে পালেদের, বোসেদের গৃহে আশ্রয় নিতে পারে এমনই তার মনোভাব। মানুষের ক্ষেত্রেও আজকাল পুরোনো ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি খুব একটা সম্ভ্রম নেই। আধুনিকতার স্রোতে ভাসতে ভাসতে সেও এক সম্পন্ন জীবনের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে, যার পরিসমাপ্তি দুঃখজনক হয়ে ওঠে। জীবন আর-একটা জীবনের হাত ধরেই সম্পূর্ণ হয়। একাকিত্ব বড়ো বেদনাদায়ক। কবির জীবনে শূন্য ঘরে নির্জন রাতে এই চিরপরিচিত চড়ুইপাখি পূর্ণতা এনেছে। গল্পের বা কবিতার নামকরণ বিষয়, চরিত্র, গূঢ়ার্থের উপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে একটি চড়ুইপাখির চাঞ্চল্য, তার সারাদিনের কর্মকাণ্ড নির্জন রাতে একাকী কবিকে আশ্বস্ত করে। সেই চিন্তাধারা থেকে নামটি যথার্থ বলা যায়।

একটি চড়ুই পাখি অধ্যায়ের শব্দার্থ ও টীকা

চতুর – চালাক। চড়ুই – বাংলার চিরপরিচিত পাখিবিশেষ। ঘর – কক্ষ। খড় কুটো – শুকনো তৃণ বা অনুরূপ তুচ্ছ বস্তু। শব্দ – আওয়াজ। টুকরো – কোনো জিনিসের ক্ষুদ্র অংশবিশেষ। জুড়ে – ভরে। গান – সংগীত। কাছাকাছি – নিকটবর্তী। কৌতূহলী – আগ্রহী; উৎসুক। চোখ – নয়ন। অবাক – আশ্চর্য; বিস্ময়। দৃষ্টিতে – নজরে। ঘর – কক্ষ। দোর – দুয়ার; দরজা। ফুলদানি – ফুল সাজানোর পাত্র। সব – সমস্ত। বিধাতা – ঈশ্বর। কার্নিশে – ছাদ বা দেয়ালের যে অংশ বাইরে বেরিয়ে থাকে। চাহনি – দৃষ্টি। তাচ্ছিল্য – অবজ্ঞা। মজা – আনন্দ। বাজে – খারাপ। নিতান্ত – অতিশয়। ইচ্ছে – অভিলাষ। আজ – অধুনা। এতটুকু – সামান্য। দয়া – কৃপা। রাত্রি – নিশি। নির্জন – জনহীন। একাকী – নিঃসঙ্গ।


আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের দ্বাদশ অধ্যায়একটি চড়ুই পাখি’–এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই বিষয়সংক্ষেপ অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনার জন্য সহায়ক হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে বা আরও সহায়তার প্রয়োজন হয়, আপনি টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়াও, আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এই পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে তারাও উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ!

Please Share This Article

Related Posts

নবাব সিরাজউদ্দোলা কে ছিলেন? পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল লেখো।

পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

উত্তর ভারতের নদনদীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিকরণের ক্ষেত্রে ভারত সরকার কী ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল?

ভারত বিভাজনের অনিবার্যতার কারণ বিশ্লেষণ করো।

ভাঙ্গর ও খাদার বলতে কি বোঝো? ভাঙ্গর ও খাদারের মধ্যে পার্থক্য

দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে জাতীয় কংগ্রেসের মনোভাব আলোচনা করো।