অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – মাসিপিসি – বিষয়সংক্ষেপ

Gopi

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের পঞ্চত্রিংশ অধ্যায়মাসিপিসি’-এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবো। এই অধ্যায়ের প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে।

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – মাসিপিসি – বিষয়সংক্ষেপ
অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – মাসিপিসি – বিষয়সংক্ষেপ

মাসিপিসি অধ্যায়ের কবি পরিচিতি

আধুনিক বাংলা কাব্যের জগতে একজন স্মরণীয় কবি হলেন জয় গোস্বামী। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ নভেম্বর কলকাতাতেই কবি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ধীরানন্দ গোস্বামী এবং মাতা সবিতা গোস্বামী। ১৩ বছর বয়সেই কবিতা লেখা শুরু করেন তিনি। মাত্র ১৯ বছর বয়সে একইসঙ্গে তিনটি পত্রিকায় তাঁর প্রথম কবিতা ছাপা হয়েছিল। এই পত্রিকাগুলি হল – ‘সীমান্ত সাহিত্য’, ‘পদক্ষেপ’ ও ‘হোমশিখা’। বহু কাব্যগ্রন্থ তিনি রচনা করেছেন। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – ‘প্রত্নজীব’, ‘আলেয়া হ্রদ’, ‘উন্মাদের পাঠক্রম’, ‘ভুতুম ভগবান’, ‘গোল্লা’, ‘বিষাদ’, ‘সূর্য-পোড়া ছাই’, ‘সন্তান-সন্ততি’, ‘বিকেল বেলার’ কবিতা, ‘পাগলি তোমার সঙ্গে’ প্রভৃতি। জয় গোস্বামীর লেখা স্মরণীয় কাব্য – উপন্যাস গ্রন্থটি হল – ‘যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল’। এ ছাড়াও ‘সেইসব শেয়ালেরা’, ‘সুরঙ্গ ও প্রতিরক্ষা’ তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস গ্রন্থ। সাহিত্যকীর্তির জন্য তিনি নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে ‘ঘুমিয়েছো ঝাউপাতা’ কাব্যের জন্য ও ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে ‘যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল’ কাব্য-উপন্যাসের জন্য তিনি ‘আনন্দ পুরস্কার’ লাভ করেন। ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে ‘বজ্রবিদ্যুৎ ভর্তি খাতা’ কাব্যের জন্য ‘পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পুরস্কার’ এবং ২০০০ খ্রিস্টাব্দে ‘পাগলি তোমার সঙ্গে’ কাব্যগ্রন্থের জন্য ‘সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার’ লাভ করেন। এখনও তিনি অবিরতভাবে সাহিত্যসৃষ্টি করে চলেছেন।

মাসিপিসি অধ্যায়ের উৎস

মাসিপিসি কবিতাটি ‘পাগলি তোমার সঙ্গে’ কাব্য থেকে গৃহীত। পরে কবিতাটি ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ সংকলনে স্থান পায়। (প্রকাশক-প্রতিভাস)।

মাসিপিসি অধ্যায়ের পাঠপ্রসঙ্গ

সমাজজীবনে প্রতিদিন আমরা বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের পরিচয় জানতে পারি, তাদের মধ্যে অধিকাংশই দরিদ্র, খেটে-খাওয়া, শ্রমজীবী সমাজের অন্তর্ভুক্ত। তাদের সঙ্গে হয়তো আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক সর্বদা ও গড়ে ওঠে না কিন্তু তাদের বেদনাপূর্ণ পরিশ্রমী জীবনের পরিচয় আমাদের জানা উচিত। সেই প্রসঙ্গেই কবি জয় গোস্বামীর ‘মাসিপিসি’ কবিতাটির অবতারণা করা হয়েছে।

মাসিপিসি অধ্যায়ের বিষয়সংক্ষেপ

আমাদের সমাজে বহু পরিবার আছে, যাদের ঘরের মহিলারা জীবিকার তাগিদে শ্রমজীবীরূপে জীবন অতিবাহিত করেন। তাদের জীবন সর্বদাই দারিদ্র্যপূর্ণ, সংগ্রামমুখর। এদের সঙ্গে আমাদের অনেক ক্ষেত্রেই কাজের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তাদের ব্যক্তিপরিচয় থেকে যায় অজানা। এমন মহিলা শ্রমজীবীরা আমাদের কাছে ‘মাসিপিসি’ বলেই পরিচিতি পেয়ে থাকেন। চোখের ঘুমকে সরিয়ে রেখে চোখের পাতা আর ঠোঁটে জল সিঞ্চন করে এরা দিনের কাজ করেন শুরু। আকাশে তখনও দেখা দেন না সূর্যদেব, প্রকাশিত হয় না দিনের আলো কিন্তু শুরু হয়ে যায় ‘মাসিপিসি’দের নিত্যদিনের কাজ; তখনও চাঁদ আকাশ ছেড়ে যায় না, আকাশে জ্বলজ্বল করে শুকতারা, তখনও বাসি কাপড় কেচে ট্রেন ধরতে ছুটে যায় ‘মাসিপিসি’রা। দুই-এক ফোঁটা শিশির তখন ঘাসের মাথায় জেগে ওঠে। ঘুমকে তারা দূরে সরিয়ে বেরিয়ে পড়ে, গ্রাম থেকে শহরে আসার উদ্দেশ্যে ট্রেন ধরেন ‘মাসিপিসি’রা। এই শ্রমজীবী মহিলাদের পরিবারে সদস্যসংখ্যা অনেক, কিন্তু উপার্জন করার মানুষ কেউ নেই। ফলে অনেকগুলি পেট চলে একজনের সামান্য উপার্জনে। তাই প্রতিদিনই এদের কালঘাম ফেলে ছুটতে হয় শহরের উদ্দেশ্যে। ট্রেনে ওঠার আগে-পরে নানা বাধার সামনে পড়তে হয় তাদের। রেলবাজারের হোমগার্ডরা নানা সমস্যায় ফেলে এদের। বছর বা মাসের হিসাব নয়-সারাবছরই ‘মাসিপিসি’দের এমনভাবে জীবনসংগ্রামে লিপ্ত থাকতে হয়। বছর আসে, বছর যায়-এদের জীবনের কোনো পরিবর্তন ঘটে না। পরিবারের মুখে ক্ষুধার অন্ন তুলে দেওয়ার জন্য এরা লালগোলা-বনগাঁয় চালের বস্তা তুলে ছুটে যায় শহরের দিকে, উপার্জনের আশায়।

এভাবেই আলোচ্য কবিতায় ‘মাসিপিসি’র প্রতীকে সমাজে দরিদ্র, খেটে-খাওয়া মহিলাদের জীবনের কাহিনি কবি তুলে ধরেছেন।

মাসিপিসি অধ্যায়ের নামকরণ

নামকরণ সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। নামকরণের মধ্য দিয়ে পাঠক সাহিত-বিষয়টি পাঠ করার পূর্বেই সাহিত্য বিষয়টি সম্পর্কে খানিক ধারণা পেতে পারে। কবি জয় গোস্বামীর ‘মাসিপিসি’ নামক কবিতাটির মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে গ্রাম থেকে শহরে আসা চালবিক্রেতা রমণীদের জীবনসংগ্রামের ছবি ফুটে উঠলেও এর অন্তরে নিহিত আছে মহিলা শ্রমজীবী জনতাদের দারিদ্র্যপূর্ণ জীবনসংগ্রামের চিত্র।

পরিবারের মুখে দু-মুঠো ভাত তুলে দেওয়ার জন্য এরা রাত থাকতে উঠে, বাসি জামাকাপড় কেচে ট্রেন ধরতে ছোটে। শারীরিক আরাম গ্রহণের কোনো অবকাশ তাদের নেই। কিন্তু শহরের পথে যাওয়ার সময়ও তাদের সম্মুখীন হতে হয় নানা প্রতিবন্ধকতার। রেলবাজারের হোমগার্ডরা বিভিন্ন ঝামেলার সৃষ্টি করে। এদের জীবনে কোনো দিনবদল ঘটে না। এরা কোনো মাস বা বছরেরও হিসাব রাখে না। দৈনন্দিন রোজগারই এদের একমাত্র ভরসা। অনন্ত সময় বয়ে চলে, শ্রমজীবী জনতার কর্মপ্রবাহে কোনো ছেদ পড়ে না।

কবি জয় গোস্বামী কবিতার যে নামকরণ করেছেন তাকে দুটি পন্থায় বিশ্লেষণ করা যায়। প্রথমত, আমরা ঘুমপাড়ানি ছড়াতে ছেলেবেলায় ঘুমপাড়ানি মাসিপিসির কথা জেনেছি। যারা খোকার চোখে ঘুমের আবেশ এনে দিত। কিন্তু বাস্তবের মাসিপিসিরা নিজেদের চোখের ঘুমকে সরিয়ে রেখে কঠিন জীবন-সংগ্রামের পথে বের হয়। তাই এর মধ্য দিয়ে একদিকে কবির লোকজ উপাদানের প্রতি ঐতিহ্য প্রদর্শন এবং অন্যদিকে প্রবল বাস্তববোধের পরিচয় পাওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, শ্রমজীবী জনতাদের সাথে শহরের মানুষদের অনেকসময়ই ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। তাই তাদের নাম-ধামও থেকে যায় অনেক ক্ষেত্রেই অজানা। তারা শুধুমাত্রই ‘মাসি’ বা ‘পিসি’। এই দুই দিক বিচার করে বলা যায় কবিতাটির নামকরণ সার্থকভাবে প্রযুক্ত হয়েছে।

মাসিপিসি অধ্যায়ের শব্দার্থ ও টীকা

মাসিপিসি – এটি একটি জোড় শব্দ। ‘মাসি’ ও ‘পিসি’ এই দুটি শব্দ একত্রে ‘মাসিপিসি’ শব্দটি গঠিত হয়েছে। প্রসঙ্গত বলা যায় যে, মা-এর বোনকে মাসি এবং বাবার বোনকে পিসি বলা হয়। শুকতারা – শুক্রগ্রহ; সূর্যোদয়ের আগে পূর্ব আকাশে এবং সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশে এই জ্যোতিষ্কটি দীপ্তি পায়। ছাড়া কাপড় – আগের দিনের পরিধান করা কাপড়; বাসি কাপড়। শিশির – হিম। মস্ত – বড়ো। পরিবার – পরিজন। একমুঠো – এক মুষ্টি পরিমাণ; (এক্ষেত্রে অর্থ) অল্প। রোজগার – উপার্জন। পোঁটলা – বড়ো পুঁটলি; বোঁচকা; গাঁটরি। পুঁটলি – ছোটো গাঁটরি; বোঁচকা। হোমগার্ড – দেশরক্ষী বাহিনীর স্বেচ্ছাসৈনিক। সাল – বছর। মাহিনা – মাস। জষ্টি – জৈষ্ঠ মাস; বাংলা বছরের দ্বিতীয় মাস। শতবর্ষ – একশো বৎসর।


আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের পঞ্চত্রিংশ অধ্যায়মাসিপিসি’ এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণির বাংলা পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পরীক্ষায় এগুলো প্রায়ই আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনার জন্য সহায়ক হয়েছে। যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আরও সহায়তা চান, টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। বন্ধুদের সঙ্গে পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে তারাও উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ!

Please Share This Article

Related Posts

নবাব সিরাজউদ্দোলা কে ছিলেন? পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল লেখো।

পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

About The Author

Gopi

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

মাধ্যমিক ইতিহাস – সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – বিশ্লেষণমূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন

মাধ্যমিক ইতিহাস – সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ইতিহাস – সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন

মাধ্যমিক ইতিহাস – সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ইতিহাস – সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – বিষয়সংক্ষেপ