নবম শ্রেণি – বাংলা – ব্যোমযাত্রীর ডায়রি

Gopi

নবম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যপুস্তকের একটি অন্যতম জনপ্রিয় গল্প হল ব্যোমযাত্রীর ডায়রি। এই গল্পটি লেখক সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত প্রফেসর শঙ্কু সিরিজের একটি গল্প। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হলেন প্রফেসর শঙ্কু, একজন বিজ্ঞানী যিনি তার উদ্ভাবিত অদ্ভুত যন্ত্রপাতি দিয়ে বিভিন্ন অভিযানে বের হন।

এই গল্পে, প্রফেসর শঙ্কু তার বন্ধু মিস্টার আলিপুরের সাথে একটি গোপন পরীক্ষার জন্য বের হন। পরীক্ষাটি হল একটি নতুন রকেট তৈরির পরীক্ষা। প্রফেসর শঙ্কুর তৈরি করা রকেটটি সফলভাবে উড়ে যায় এবং তারা দুজন মহাকাশে চলে যান।

মহাকাশে তারা অদ্ভুত সব জিনিস দেখতে পান। তারা একটি গ্রহ দেখেন যেখানে মানুষের মতো প্রাণী বাস করে। তারা আরও একটি গ্রহ দেখেন যেখানে শুধুমাত্র গাছপালা থাকে। তারা এমন এক গ্রহেও যান যেখানে কোনো বাতাস নেই।

নবম শ্রেণি–বাংলা–ব্যোমযাত্রীর ডায়রি 2

উৎস

১৩৬৮ বঙ্গাব্দে (১৯৬১ খ্রিস্টাব্দ) সন্দেশ পত্রিকার আশ্বিন-কার্তিক-অগ্রহায়ণ সংখ্যায় সত্যজিৎ রায় লিখিত ব্যোমযাত্রীর ডায়রি প্রথম প্রকাশিত হয়। এই কাহিনির মধ্য দিয়েই বাংলা সাহিত্যের পাঠকরা প্রোফেসর শঙ্কু নামের এক বিস্ময়কর চরিত্রের সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠে।

বিষয়সংক্ষেপ

লেখক প্রোফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কুর ডায়রিটা তারক চাটুজ্যের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। একদিন দুপুরে অফিসে বসে যখন লেখক পুজোসংখ্যার একটি লেখার প্রুফ দেখছিলেন, সেই সময় তারক চাটুজ্যে তাঁকে একটি লাল খাতা পড়তে দেন। খাতাটিকে তারকবাবু গোল্ড মাইন বা সোনার খনি বলেও উল্লেখ করেন। গল্পের বদলে ডায়রি দেখে লেখক কিছুটা অবাক হয়েছিলেন। প্রোফেসর শঙ্কু বছর পনেরো ধরে নিরুদ্দেশ। কারও মতে তিনি গবেষণা করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন, আবার কারও কারও মতে তিনি ভারতবর্ষের কোথাও গা- ঢাকা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন, সময় হলে আত্মপ্রকাশ করবেন। তারকবাবু লেখককে জানান, সুন্দরবনে মাথারিয়া অঞ্চলে একটি উল্কাপাত ঘটেছিল। সেই উল্কাপাতের পর তারকবাবু সেখানে গিয়েছিলেন বাঘের ছাল পাওয়ার আশায়। বাঘের ছালের পরিবর্তে উল্কাপাতের গর্তের মধ্যে তিনি লাল রঙের এই খাতাটি পেয়েছিলেন। তারকবাবু লেখককে বলেছিলেন ওই খাতার মজাদার লেখাটি পড়তে। লেখক খাতাটির বিনিময়ে তারকবাবুকে কুড়িটা টাকা দিয়েছিলেন। কারণ তিনি ছিলেন লেখকের বাবার পরিচিত এবং পোশাক-আশাক দেখে তাঁকে বেশ গরিব বলেই মনে হত।

পুজোর পর লেখক খাতাটি আলমারি থেকে বের করে দেখেন খাতায় কালির রং লাল। কিন্তু প্রথমবার তিনি যখন খাতাটি দেখেছিলেন তখন কালির রং ছিল সবুজ। লাল থেকে হঠাৎ কালির রং হয়ে যায় নীল। পরে তা হয়ে যায় হলুদ। কালির এই রং বদলে যাওয়াটা লেখকের কাছে খুবই আশ্চর্যের মনে হয়। আরও আশ্চর্যের কথা হল, লেখকের কুকুর ভুলো খাতার কাগজ কামড়ালেও তা ছেঁড়েনি। এমনকি উনুনের আগুনেও খাতাটা পোড়েনি। লেখক রাত তিনটে পর্যন্ত একটানা খাতার লেখাটা পড়ে শেষ করেন। তিনি স্থির করেন, এই আশ্চর্য লেখাটা তুলে দেবেন পাঠকদের হাতে।

১ জানুয়ারি – প্রোফেসর শঙ্কু প্রতিদিনের প্রাতর্ভ্রমণ সেরে বাড়ি ফিরে আয়নাতে দীর্ঘদিন পরে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে চমকে গিয়ে চিৎকার করে ওঠেন। আয়নার ওপর থেকে ভৃত্য প্রহ্লাদ পুরোনো ক্যালেন্ডারটা সরিয়ে দেওয়ার জন্যই এই বিপত্তি। তাই নিজের আবিষ্কৃত নস্যাস্ত্র প্রয়োগ করে তিনি প্রহ্লাদকে শাস্তি দেন। তাঁর হিসাব অনুযায়ী তেত্রিশ ঘণ্টার আগে প্রহ্লাদের হাঁচি থামবে না।

২ জানুয়ারি – মঙ্গলযাত্রার দিন এগিয়ে আসতেই প্রোফেসর শঙ্কুর উৎসাহ বাড়তে থাকে। তাঁর মনে পড়ে মঙ্গল অভিযান করবেন বলে তিনি এর আগে একটি রকেট তৈরি করেছিলেন। কিন্তু তাঁর প্রথম রকেটটি ধ্বংস হয়ে যায় ভৃত্য প্রহ্লাদের ভুলে। প্রহ্লাদ ঘড়ির কাঁটা ভুল করে ঘুরিয়ে ফেলেছিল। তার ফলে শঙ্কুর সাড়ে তিন ঘণ্টা লেট হয়ে যায়। রকেট কিছুদূর উঠেই অবিনাশবাবুর মুলোর খেতে পড়ে যায়। অবিনাশবাবু সহানুভূতি দেখানোর বদলে ক্ষতিপূরণ চান প্রোফেসর শঙ্কুর কাছে।

৫ জানুয়ারি – প্রহ্লাদ বোকা হলেও সাহসী ছিল, তাই প্রোফেসর শঙ্কু প্রহ্লাদকে মঙ্গলযাত্রার সঙ্গী করতে চেয়েছিলেন। রকেটে মোট কুড়ি মন পর্যন্ত জিনিস নেওয়া যেত, প্রহ্লাদ ছিল দু-মন সাত সের ওজনের। বিধুশেখর ছিল সাড়ে পাঁচ মনের। প্রোফেসর শঙ্কু নিজে ছিলেন এক মন এগারো সের।

৬ জানুয়ারি – অবিনাশবাবু প্রোফেসর শঙ্কুর রকেটযাত্রা নিয়ে রসিকতা করতেন। প্রোফেসর শঙ্কুও তাই একদিন অবিনাশবাবুকে চা এ স্যাকারিনের বদলে নিজের তৈরি বড়ি মিশিয়ে দিয়েছিলেন, যা খেলে হাই উঠে ঘুম আসবে এবং ঘুমের মধ্যে অসম্ভব ভয়ংকর সব স্বপ্ন আসবে। প্রোফেসর শঙ্কু নিজেও সেই বড়ি খেয়ে এমন স্বপ্ন দেখেছিলেন যে, তাঁর দাড়ির বাঁ-দিকটা একেবারে পেকে গিয়েছিল।

৮ জানুয়ারি – বেড়াল নিউটনকে সঙ্গে নেওয়ার জন্য প্রোফেসর শঙ্কু ফিসপিল বানিয়েছিলেন। পরীক্ষা করে দেখলেন একটি বড়ি ও মাছের মুড়ো পাশাপাশি রাখায় নিউটন বড়িটাই খেয়ে নিল।

১০ জানুয়ারি – প্রোফেসর শঙ্কুর তৈরি রোবট বিধুশেখর শুধু চুপচাপ কাজ করা ছাড়াও মাঝেমধ্যেই বুদ্ধির প্রমাণ দিত। রকেটের পরিকল্পনা করবার সময় প্রোফেসর শঙ্কু ট্যানট্রাম বোরোপ্যাক্সিনেট অথবা একুইয়স্ ভেলোসিলিকা ব্যবহার করবেন ভাবছিলেন। তিনি ট্যানট্রাম ব্যবহার করতে গেলেই বিধুশেখর অসম্মতিসূচক মাথা নেড়েছিল। কিন্তু ভেলোসিলিকা হাতে নিলে সে সম্মতিসূচক মাথা নেড়েছিল। ভেলোসিলিকা মিশিয়েই প্রোফেসর শঙ্কু ধাতুটি তৈরি করেছিলেন কিন্তু পরে ট্যানট্রাম দিয়ে ওই পরীক্ষাটা করতে গিয়ে তিনি এক ভয়ংকর বিস্ফোরণের মুখোমুখি হন।

১১ জানুয়ারি – বিধুশেখরের কাজে প্রোফেসর শঙ্কু আশ্চর্য হননি কারণ তিনি লক্ষ করেছিলেন যে, তাঁর বৈজ্ঞানিক বিদ্যাবুদ্ধি দিয়ে তৈরি জিনিস অনেকসময় তাঁর হিসাবের থেকে বেশি কাজ করে। শঙ্কু বুঝেছিলেন, বাইরের কোনো জগতের প্রতি তাঁর একটা টান আছে। সেটা যেন অনেকটা মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীত। আশ্বিন মাসে যেহেতু উল্কাপাত বেশি হত, তাই প্রোফেসর শঙ্কু তাঁর বাগানে রোজ রাত্রে আরামকেদারায় তিন ঘণ্টা শুয়ে থাকতেন উল্কাপাত দেখার জন্য। একদিন হঠাৎ তিনি দেখেন, একটা উল্কা ক্রমশ বড়ো হয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে। উল্কাটি তাঁর বাগানের গোলঞ্চ গাছের পাশে প্ৰকাণ্ড জোনাকির মতো জ্বলতে থাকে। এটা শুধুই স্বপ্ন ছিল না, কারণ এই ঘটনার পর থেকেই তিনি রকেটের বিষয়ে ভাবতে শুরু করেন। আর দ্বিতীয় কারণ হল গোলঞ্চের বদলে ওই গাছে তিনি এক নতুন ফুল ফুটতে দেখেন। আঙুলের মতো পাঁচটি করে ঝোলা পাপড়ি, দিনের বেলা সেগুলি দেখাত কালো কিন্তু রাত হলেই ফসফরাসের মতো জ্বলত। সেগুলি হাওয়ায় দুললে মনে হত হাতছানি দিয়ে ডাকছে।১২ জানুয়ারি-মঙ্গলে যাত্রা করার আগের দিন ভৃত্য প্রহ্লাদকে পোশাক ও হেলমেট পরালে সে হাসতে শুরু করে। বিধুশেখরও প্রহ্লাদকে দেখে হাসতে থাকে। নিউটনকেও পোশাক ও হেলমেট পরানো হয়।

২১ জানুয়ারি – মঙ্গলের উদ্দেশ্যে পৃথিবী ছাড়ার পর সাত দিন পেরিয়ে গেছে। এবার আর যাত্রায় কোনো বাধা পড়েনি। যাত্রী এবং মালপত্র নিয়ে তাদের মোট ওজন হয়েছিল পনেরো মন বত্রিশ সের তিন ছটাক। পাঁচ বছরের মতো রসদও সঙ্গে ছিল। নিউটনের জন্য ছিল ফিসপিল, যা একটা খেলেই সাত দিনের খাওয়া হয়ে যেত। প্রোফেসর শঙ্কু ও প্রহ্লাদের জন্য ছিল বটিকা-ইন্ডিকা, যা একটা খেলেই চব্বিশ ঘণ্টার জন্য খিদে মিটে যেত। নিউটন প্রথম ক-দিন ছটফট করলেও পরে শান্ত হয়ে শুধু জ্বলন্ত গ্রহনক্ষত্র দেখত। বিধুশেখরের কোনো কাজকর্ম ছিল না, সে চুপচাপ ছিল। প্রহ্লাদ প্রোফেসর শঙ্কুর কাছে বাংলা শেখায় রামায়ণ পড়ে সময় কাটাতে পারত।

২৫ জানুয়ারি – প্রোফেসর শঙ্কু বিধুশেখরকেও বাংলা শেখাচ্ছিলেন। বিধুশেখরেরও আগ্রহ ছিল। বিধুশেখরকে পরীক্ষা করার জন্য তার কেমন লাগছে জিজ্ঞাসা করায় সে নিজের ভাষায় যা উত্তর দেয়, তা থেকে প্রোফেসর শঙ্কু বুঝতে পারেন যে সে বলেছে ভালো। বিধুশেখর নিজের ভাষায় গুনগুন করে যে গান গাইছিল তা খাতায় লিখে প্রোফেসর শঙ্কু বুঝতে পারেন, সেটা হল দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা। বিধুশেখরের উচ্চারণের প্রশংসা না করলেও তার স্মরণশক্তি দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন প্রোফেসর শঙ্কু।

জানালা দিয়ে মঙ্গলগ্রহ ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। গ্রহে নামার সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিস হাতের কাছে গুছিয়ে রাখা হয়েছিল। মঙ্গলগ্রহে ছোটো না বড়ো, হিংস্র না শান্ত-কেমন প্রাণী আছে, তা না জানলেও প্রাণী যে আছে, সে বিষয়ে প্রোফেসর শঙ্কুর কোনো সন্দেহই ছিল না। প্রহ্লাদের কোনো ভাবনা ছিল না, কেননা তার মনে হয়েছিল, যেহেতু গ্রহটির নাম মঙ্গল, তাই কোনো অনিষ্ট হবে না। বিধুশেখর চুপচাপ ছিল ক-দিন ধরেই। কিন্তু হঠাৎ সে এক লাফে যন্ত্রপাতির বোর্ডের কাছে গিয়ে যে হ্যান্ডেলটা টানলে রকেট উলটো দিকে যায়, সেটা ধরে টান দিলে সবাই রকেটের কেবিনের মেঝেতে পড়ে গেল। কোনোমতে প্রোফেসর শঙ্কু বিধুশেখরের কাঁধের বোতামটা টিপে তাকে বিকল করলেন। মঙ্গলগ্রহে পৌঁছোনোর পাঁচ ঘণ্টা আগে যে জায়গাগুলিকে জল বলে মনে হয়েছিল সেগুলি আসলে কী, তা আর বোঝা যাচ্ছিল না।
মঙ্গলগ্রহে পৌঁছোনোর দু-ঘণ্টা পর একটি হলুদ রঙের নরম পাথরের ঢিপির উপরে বসে ডায়রি লিখছিলেন শঙ্কু। লাল রঙের নদী বয়ে যাচ্ছিল সামনে দিয়ে। জলটা স্বচ্ছ পেয়ারার জেলির মতো। গাছপালাগুলি ছিল নীল রঙের, আকাশ ছিল সবুজ রঙের। নিউটনকে জল খেতে দেখে প্রোফেসর শঙ্কুও জল খাওয়ার ভরসা পেয়েছিলেন। জলটা ছিল অমৃততুল্য, যা শরীর ও মনের সব ক্লান্তি দূর করেছিল। বিধুশেখর চুপচাপ বসেছিল, রকেট থেকে নামতে চাইছিল না। কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে গম্ভীর ভাষায় তার উচ্চারণে জানিয়েছিল, বিপদ! ভীষণ বিপদ।
মঙ্গলগ্রহের মাটিতে বিধুশেখর ছাড়া বাকিরা নেমেছিল। প্রহ্লাদ পাথর কুড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই অভিযাত্রীরা এক ভয়ানক
ঘটনার সম্মুখীন হলেন। হঠাৎ তিন্তিড়ি তিন্তিড়ি শব্দ করে মানুষও নয়, জন্তুও নয়, মাছও নয়, এরকম তিন হাত লম্বা, পা-ওয়ালা, হাতের বদলে ডানাওয়ালা, বিশাল মাথায় দন্তহীন হাঁ এবং একটা প্রকাণ্ড সবুজ চোখবিশিষ্ট অদ্ভুত এক প্রাণী প্রহ্লাদকে তাড়া করছিল। প্রহ্লাদ নিউটনকে নিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে রকেটের দিকে ছুটছিল। জন্তুটা যখন বিশ-পঁচিশ গজ দূরে, তখন প্রহ্লাদ রকেটে উঠে পড়ে। প্রোফেসর শঙ্কুও তাঁর সাংঘাতিক অস্ত্র হাতে জন্তুটির পিছু নিয়েছিলেন, কিন্তু বিধুশেখরই প্রথম রকেট থেকে নেমে জন্তুটার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। প্রোফেসর শঙ্কু থমকে দাঁড়ান। ঠিক সেই সময় আঁশটে গন্ধ ছড়িয়ে দুশো-তিনশো জন্তু ছুটে আসে। বিধুশেখরের লোহার হাতের এক আঘাতেই প্রথম জন্তুটা চী শব্দ করে মাটিতে পড়ে যায়। বাকি মঙ্গলীয় জন্তুগুলো যখন একশো গজের মধ্যে, তখন বিপদ বুঝে বিধুশেখরকে আটকানোর জন্য তাকে বিকল করে দেন শঙ্কু। এরপর তার কোমরের কবজাটা খুলে ফেলে কোনোমতে তাকে দুটি ভাগে ভাগ করে রকেটের দরজার কাছে নিয়ে যান তিনি। ততক্ষণে প্রায় হাজার খানেক জন্তু রকেটের পঞ্চাশ গজের মধ্যে এসে যায়। শঙ্কু কোনোরকমে বিধুশেখরের দেহাংশ নিয়ে রকেটের মধ্যে পৌঁছোতে পারেন। তারপর তাঁর আর কিছুই মনে ছিল না। জ্ঞান ফিরলে প্রোফেসর শঙ্কু দেখেন রকেট উড়ে যাচ্ছে। রকেট কীভাবে উড়ল তা প্রোফেসর শঙ্কু বুঝতে পারেন না। সৌরজগতের কোন অজানা পথে তাঁরা যাচ্ছিলেন তাও বুঝতে পারেন না তিনি। সমস্ত রসদ তিন বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। রকেটের যন্ত্রপাতি কোনোটাই কাজ করছিল না, তবুও রকেট চলছিল। অন্ধকার ভবিষ্যতের পথে তাঁরা এগিয়ে চললেন।
প্রহ্লাদ কিছুটা সুস্থ হয়ে জানায় যে, নদীর ধারে যখন পাথর কুড়োচ্ছিল তখন সে মঙ্গলীয় জন্তুটিকে দেখতে পায়। নিউটনই প্রথম জন্তুটার হাঁটুতে কামড়ে দেয়। জন্তুটি বিকট চিৎকার করে পালিয়ে যায়। কিন্তু তার একটু পরেই আর একটি জন্তু প্রহ্লাদকে ভাড়া করে। তারপরের ঘটনা প্রোফেসর শঙ্কু দেখেছেন। বিধুশেখরকে জোড়া লাগানোর পর সে স্পষ্ট উচ্চারণে বলে ওঠে Thank you। তারপর থেকেই বিধুশেখর সাধুভাষায় কথা বলতে শুরু করে।
সময়ের হিসাব সব গুলিয়ে যায়, প্রহ্লাদ এবং নিউটন নির্জীব হয়ে পড়ে। বিধুশেখর সাধু ভাষায় জানলা খোলার কথা বলে। প্রোফেসর শঙ্কু বাইরে তাকিয়ে দেখেন, অসংখ্য সোনার বল নিজে থেকেই বড়ো হতে হতে হঠাৎ ফেটে সোনার ফোয়ারা হিসেবে ছড়িয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে। এই ঘটনায় সবাই অবাক হয়। তারপর থেকেই রকেটের জানলা আর বন্ধ করা হয়নি।
একসময় অভিযাত্রীদের ভয় পাইয়ে দিয়ে বিশাল সব পাথরের চাঁইয়ের মধ্য দিয়ে এগোতে থাকে মহাকাশযান। এরপর বিধুশেখর বাইরের দৃশ্য দেখে শুধুই বলতে থাকে টাফা। একসময় বিধুশেখর চেঁচিয়ে উঠে জানলার ধারে গেলে সেই দিকে তাকিয়ে প্রোফেসর শঙ্কু দেখেন, তাঁরা চাঁদের মতো ঝলমলে একটা সাদা গ্রহের কাছে পৌঁছে গিয়েছেন। বিধুশেখর বলে যে টাফায় নাকি সৌরজগতের প্রথম সভ্য লোকেরা বাস করে। পৃথিবীর সভ্যতার চেয়ে তাদের সভ্যতা নাকি অনেক পুরোনো। এর বাসিন্দারা নাকি সবাই বুদ্ধিমান।
ওই গ্রহে নামলে অতিকায় পিঁপড়েজাতীয় প্রাণী শঙ্কুদেরকে অভ্যর্থনা জানায়। তাদের বাড়িঘরও নেই। ফলে বিধুশেখর যে তাদের সম্বন্ধে মিথ্যা বলেছিল সেটা স্পষ্ট হয়। পিঁপড়েদের সঙ্গে কথা বলে শঙ্কুর তেমন ভালো লাগে না। এরপর কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা সেখানে আর ঘটবে না ভেবে ডায়রি লেখা বন্ধ করেন শঙ্কু।

প্রোফেসর শঙ্কুর লেখাটা পড়ার পর লেখক ভেবেছিলেন, ডায়রিটা ছাপানোর পর কালিটা পরীক্ষা করে নিয়ে সেটা জাদুঘরে দিয়ে দেবেন। কিন্তু লেখাটা কপি করে প্রেসে দেওয়ার পরই লেখক দেখেন, ডায়রিটা যেখানে ছিল সেই জায়গাটা ফাঁকা। কিছু ডেয়োপিঁপড়ে বাকি থাকা লাল মলাটের সামান্য অংশটিও শেষ করে লেখকের সামনেই। যে জিনিসটাকে লেখকের অক্ষয়, অবিনশ্বর বলে মনে হয়েছিল সেটা হঠাৎ পিঁপড়ের খাদ্যে পরিণত হয়েছে দেখে লেখক বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান৷

ব্যোমযাত্রীর ডায়রি একটি অনন্য এবং আকর্ষণীয় গল্প। এটি পাঠকদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা। গল্পটি পাঠকদেরকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং কল্পনার এক অপূর্ব জগতে নিয়ে যায়।

গল্পটি থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। আমরা শিখতে পারি যে বিজ্ঞান আমাদের জীবনকে আরও উন্নত করতে পারে। আমরা শিখতে পারি যে প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজতর করতে পারে। এবং আমরা শিখতে পারি যে কল্পনা আমাদেরকে নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে।

ব্যোমযাত্রীর ডায়রি একটি অনন্য এবং অবিস্মরণীয় গল্প। এটি পাঠকদের জন্য এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Tom Loses a Tooth

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

The North Ship

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer