চন্দ্রনাথ, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা একটি বিখ্যাত বাংলা গল্প। এটি নবম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। গল্পটিতে একজন উচ্চাভিলাষী তরুণের জীবনের সংগ্রাম ও পরিণতি বর্ণিত হয়েছে।
এ ও হয়তো সেই বিচিত্র সমাবেশ। — মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করো।
মন্তব্যের ব্যাখ্যা – চন্দ্রনাথ, হীরু এবং গল্পকথক নরেশ ছিল স্কুলের সহপাঠী এবং একই গ্রামের বাসিন্দা। কিন্তু স্কুলজীবনে তাদের সম্পর্কের রসায়ন ছিল বেশ জটিল। দরিদ্র ঘরের মেধাবী সন্তান চন্দ্রনাথের সঙ্গে ধনীর সন্তান হীরুর সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং কথকের মধ্যস্থতার কাহিনি স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে কথকের মনে হয় যে, একই গ্রামে তাদের তিনজনের উপস্থিতি যেন আগ্নেয়গিরির গর্ভের ভিতরে প্রলয়ংকর দাহ্যবস্তুর বিচিত্র সমাবেশের মতোই।
দুর্দান্ত চন্দ্রনাথের আঘাতে সমস্ত স্কুলটা চঞ্চল, বিক্ষুব্ধ হইয়া উঠিয়াছে। — মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
মন্তব্যের বিশ্লেষণ – চন্দ্রনাথ স্কুলের পরীক্ষায় জীবনে প্রথমবার দ্বিতীয় হওয়ার ঘটনাকে মেনে নিতে পারেনি। পরীক্ষায় প্রথম স্থানাধিকারী হীরুর সাফল্যের পেছনে সে অসাধু চক্রান্তের গন্ধ পায়। প্রশ্ন জেনে নেওয়া এবং মূল্যায়নের ক্ষেত্রে মাস্টারমশায়ের, যিনি আবার তার গৃহশিক্ষকও, মাস্টারমশায়ের সেই সহযোগিতার কথাই এখানে বলে। পাশাপাশি অঙ্ক পরীক্ষায় তারই সাহায্য নেওয়া হীরু কীভাবে প্রথম হল সেই প্রশ্নও তোলে চন্দ্রনাথ। এই কারণে সে দ্বিতীয় পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে স্কুলে চিঠি দেয়, যা নিয়ে গোটা স্কুলে শোরগোল পড়ে যায়।
এই দান্তিকটা যেন ফেল হয় — এ কামনাও বোধ হয় করিয়াছিলাম। – বক্তার এই মন্তব্যের কারণ গল্প অবলম্বনে আলোচনা করো।
মন্তব্যের কারণ – চন্দ্রনাথ বাড়িতে বসে নিজের মতো করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার যে সম্ভাব্য ফলাফল তৈরি করে তা অনুযায়ী সে যদি পরীক্ষায় সাড়ে পাঁচশো বা তার বেশি পায় তবে স্কুলে দুজন ফেল করবে। আর সে নিজে যদি পাঁচশো পঁচিশের নীচে পায়, তাহলে দশ জন ফেল করবে এবং সেক্ষেত্রে কথক অর্থাৎ নরেশ থার্ড ডিভিশনে পাস করবে। এ কথা শুনে কথক অত্যন্ত রেগে যান এবং দাম্ভিক চন্দ্ৰনাথ যেন ফেল করে এই কামনা করেন।
দিস ইজ ম্যাথম্যাটিক্স। — গল্পাংশটি অবলম্বনে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
মন্তব্যের বিশ্লেষণ – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের চন্দ্ৰনাথ গল্পাংশে চন্দ্রনাথ তার নিজের পাওয়া সম্ভাব্য নম্বরের অনুপাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় অন্য সকলের নম্বর হিসাব করেছিল। তার তৈরি করা পরীক্ষার ফলাফল নরেশের পছন্দ হয়নি। কারণ সেখানে চন্দ্রনাথ তার থার্ড ডিভিশনে পাস করার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল। এ কথায় কথক রেগে গেলে চন্দ্রনাথ বলে যে অনুপাতের আঙ্কিক নিয়মে যার মূল্য যতবারই কষে দেখা যাবে তা একই হবে। এটি ম্যাথম্যাটিক্স বা অঙ্ক বলে চন্দ্রনাথ মন্তব্য করে।
তাহার কথা শুনিয়া আশ্চর্য হইয়া গেলাম। —বক্তা কে? কেন তিনি আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন?
বক্তা – গল্পকথক নরেশ উল্লিখিত মন্তব্যটির বক্তা।
বক্তার অবাক হওয়ার কারণ – স্কুলের পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়ে চন্দ্রনাথ পুরুস্কার প্রত্যাখ্যান করে। এ বিষয়ে চন্দ্রনাথের বক্তব্য জানার জন্য কথক হেডমাস্টার মশায়ের নির্দেশে চন্দ্রনাথের বাড়িতে যায় । সেখানে সে দেখে যে আপন মনে চন্দ্রনাথ কাগজে কিছু লিখে চলেছে। জিজ্ঞাসা করায় বলে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফলাফল তৈরি করছে। কে কত নম্বর পাবে সেটাই সে দেখছে। এ কথা শুনেই কথক আশ্চর্য হয়ে যান ৷
আমি সেকেন্ড প্রাইজ রিফিউজ করেছি। — বক্তার এই সিদ্ধান্তের কারণ সংক্ষেপে পরিস্ফুট করো।
বক্তার সিদ্ধান্তের কারণ – স্কুলজীবনে প্রথমবার দ্বিতীয় হওয়া চন্দ্রনাথ কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। স্কুলের মাস্টারমশাই ছিলেন প্রথম স্থানাধিকারী হীরুর ব্যক্তিগত শিক্ষক। তিনি প্রশ্ন বলে দিয়েছেন, উত্তর মূল্যায়নেও পক্ষপাত করেছেন। তা ছাড়া চন্দ্রনাথ নিজে হীরুকে তিনটে অঙ্ক টুকতে দিয়েছে। অর্থাৎ হীরুর সাফল্য তার নিজের নয়। তাই চন্দ্রনাথ নিজেকে দ্বিতীয় ভাবতে পারেনি এবং পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছে।
তোমার অক্ষমতার অপরাধ! — বক্তা কে? অক্ষমতার অপরাধ বলতে বক্তা কী বোঝাতে চেয়েছেন?
বক্তা – চন্দ্রনাথ গল্পের উল্লিখিত অংশটির বক্তা চন্দ্রনাথের দাদা নিশানাথ।
অক্ষমতার অপরাধ – চন্দ্রনাথ স্কুলের পরীক্ষায় জীবনে প্রথমবার দ্বিতীয় হয়ে পুরস্কার নিতে অস্বীকার করে। সে এই পুরস্কার গ্রহণকে তার মর্যাদার পথে অবমাননাকর বলে মন্তব্য করে। কিন্তু তার দাদা নিশানাথ ভাইয়ের এই আচরণকে মানতে পারেননি। যে প্রথম হয়েছে তার সাফল্যকে মর্যাদা না দিয়ে চন্দ্রনাথের নিজের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার এই চেষ্টাকে চন্দ্রনাথের দাদার ঔদ্ধত্য বলে মনে হয়েছে। একেই তিনি অক্ষমতার অপরাধ বলেছেন।
আজ থেকে আমরা পৃথক। — আমরা কারা? তাঁরা পৃথক হলেন কেন?
আমরার পরিচয় – উল্লিখিত অংশে আমরা বলতে চন্দ্রনাথ এবং তার দাদা নিশানাথকে বোঝানো হয়েছে।
পৃথক হওয়ার কারণ – চন্দ্রনাথ বিদ্যালয়ের পরীক্ষায় তার দ্বিতীয় হওয়া মেনে নিতে পারেনি বলে পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে প্রধানশিক্ষককে চিঠি দিয়েছিল। নিশানাথ চন্দ্রনাথকে বলেছিল সেই চিঠি প্রত্যাহার করে ক্ষমা চেয়ে প্রধানশিক্ষকমহাশয়কে চিঠি দিতে। কিন্তু একাধিকবার বলা সত্ত্বেও চন্দ্রনাথ নিশানাথের কথা মানতে রাজি হয়নি। এতেই ক্ষুদ্ধ নিশানাথ চন্দ্রনাথের সঙ্গে সমস্ত সংস্রব বিচ্ছিন্ন করার কথা বলেন ।
এমন বুকে দাগ কাটা দৃষ্টি আমার জীবনে আমি খুব কমই দেখিয়াছি। — কী দেখে বক্তা এই মন্তব্য করেছেন আলোচনা করো।
মন্তব্যের কারণ – স্কুলের পরীক্ষায় বরাবর প্রথম হওয়া চন্দ্রনাথ দ্বিতীয় পুরস্কার গ্রহণে অসম্মতি জানিয়ে স্কুলে চিঠি দেয়। তার দাদা নিশানাথবাবু ভাইকে ক্ষমা প্রার্থনা করে আগের চিঠির বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অটল চন্দ্রনাথ সেই নির্দেশ মানে না। এর জন্য দাদার সঙ্গে তার সম্পর্কও ছিন্ন হয়ে যায়। এই ব্যবহারে নির্বিরোধী শান্ত প্রকৃতির মানুষ নিশানাথবাবু নীরবে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন। দুঃখ এবং রাগ মেশানো তাঁর সেই দৃষ্টির কথাই বলেছেন গল্পকথক।
আমারই অন্যায় হলো। — বক্তা কে? যে পরিস্থিতিতে তিনি এই মন্তব্য করেছেন তা আলোচনা করো।
বক্তা – উল্লিখিত মন্তব্যটির বক্তা চন্দ্রনাথের স্কুলের হেডমাস্টারমশাই।
যে পরিস্থিতিতে এরূপ মন্তব্য – চন্দ্রনাথ স্কুলের পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয় এবং দ্বিতীয় পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করায় হেডমাস্টারমশাই গল্পকথক নরুকে তার বাড়িতে পাঠান। ক্ষমা চেয়ে চিঠি প্রত্যাহারের জন্য দাদা নিশানাথের দেওয়া নির্দেশ অমান্য করে চন্দ্রনাথ। দুই ভাইয়ের মধ্যে সম্পর্কে ছেদ পড়ে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন দাদা নিশানাথ। এই খবর কথকের মুখে শুনে প্রধানশিক্ষক বলেন যে চন্দ্রনাথের দাদাকে এই বিষয়টি জানানোই তাঁর ভুল হয়েছে।
এই প্রস্তাবই আমার পক্ষে অপমানজনক। — কার কাছে, কোন্ প্রস্তাব অপমানজনক মনে হয়েছিল? মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করো।
উদ্দিষ্ট ব্যক্তি এবং প্রস্তাব – চন্দ্রনাথ এখানে তার প্রতি হওয়া অপমান – এর উল্লেখ করেছে।
মন্তব্যের ব্যাখ্যা – চন্দ্রনাথ স্কুলের পরীক্ষায় জীবনে প্রথমবার প্রথম না হয়ে দ্বিতীয় হওয়ার পরে বিদ্যালয়ের সম্পাদক এবং প্রথম স্থানাধিকারী হীরুর কাকা হীরুর মাধ্যমে চন্দ্রনাথকে বিশেষ পুরস্কার দেওয়ার কথা বলে পাঠান। কিন্তু চন্দ্রনাথ তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলে পাঠায় যে তার পক্ষে তা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। প্রকৃতপক্ষে, যে হীরুকে যথার্থ প্রথম স্থানাধিকারী বলে চন্দ্রনাথ মনে করে না, তারই কাকা তাকে সান্ত্বনা পুরস্কার দিচ্ছেন— এটা চন্দ্রনাথের পক্ষে অপমানজনক ছিল।
চন্দ্রনাথের অনুমান অক্ষরে অক্ষরে মিলিয়া গিয়াছে – কোন্ বিষয়ে চন্দ্রনাথ অনুমান করেছিল ? তার অনুমান কী ছিল?
উদ্দিষ্ট বিষয় – বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফলাফল বিষয়ে চন্দ্রনাথ আগাম অনুমান করেছিল।
চন্দ্রনাথ কৃত অনুমান – চন্দ্রনাথের অনুমান ছিল যে, পরীক্ষায় সে যদি সাড়ে পাঁচশো বা তার বেশি পায় তাহলে স্কুলে অমিয় আর শ্যামা ছাড়া সকলে পাস করবে। আর সে যদি পাঁচশো পঁচিশের নীচে পায় তাহলে দশজন ফেল করবে এবং কথক সেক্ষেত্রে থার্ড ডিভিশনে পাস করবে।
ছাত্র তাঁহার অধিকারের গণ্ডি পার হইলেই সে আর তুই নয়, তখন সে তুমি হইয়া যায় তাঁহার কাছে। — কার সম্পর্কে মন্তব্যটি করা হয়েছে? উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য আলোচনা করো।
উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের চন্দ্রনাথ গল্পাংশে স্কুলের প্রধানশিক্ষক মহাশয় সম্পর্কে কথক আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
তাৎপর্য – পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরে হীরুর বাড়ির প্রীতিভোজে কথকের সঙ্গে প্রধানশিক্ষকমহাশয়ের দেখা হলে কথককে তিনি তুমি সম্বোধন করেন। স্কুলজীবন শেষ করার পরে ছাত্রের ওপরে শিক্ষকের অধিকার আগের মতো থাকে না বলেই প্রধানশিক্ষক এই স্কুল-উত্তীর্ণ ছাত্রের সঙ্গে সম্ভ্রমসূচক দূরত্ব তৈরি করে নিয়েছেন বলে কথক মনে করেন।
একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া মাস্টারমহাশয় নীরবেই চলিয়া গেলেন — মাস্টারমহাশয়ের এই দীর্ঘনিশ্বাসের কারণ আলোচনা করো।
দীর্ঘনিশ্বাসের কারণ – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের চন্দ্রনাথ গল্পাংশে হীরু স্কলারশিপ পাওয়ায় তার বাড়িতে আয়োজিত প্রীতিভোজে আমন্ত্রণ সত্ত্বেও চন্দ্রনাথ সেখানে না গিয়ে সেদিনই দুপুরে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। এ কথা জানতে পেরে হেডমাস্টারমশাই নীরব হয়ে যান, তাঁকে সেসময় চিন্তিত মনে হয়। এরপরই তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেখান থেকে চলে যান। মেধাবী এবং সম্ভাবনাময় ছাত্রের এই অজানার পথে চলে যাওয়াই মাস্টারমশায়ের দীর্ঘশ্বাসের কারণ।
পার্শ্বে কালপুরুষ নক্ষত্র সঙ্গে সঙ্গে চলিয়াছে। – মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করো।
মন্তব্যের ব্যাখ্যা – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের চন্দ্রনাথ গল্পাংশে হীরুর তুলনায় কম নম্বর পাওয়ায় কাউকে না জানিয়ে চন্দ্রনাথ গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু কথক কল্পনা করেন যে কিশোর চন্দ্রনাথ কাঁধে লাঠির প্রান্তে পোঁটলা বেঁধে সেই রাতে জনহীন পথ ধরে চলেছে—আত্মপ্রতিষ্ঠা ও আত্মমর্যাদার সেই পথে তাকে একাই যেতে হবে। দু-পাশের মাঠ-ঘাট-প্রান্তর পিছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে সে—তার সঙ্গী হয়েছে আকাশের কালপুরুষ।
উৎসবের বিপুল সমারোহ সেখানে — কোথায় কেন উৎসবের আয়োজন হয়েছিল?
উৎসবের স্থান – চন্দ্রনাথ গল্পে উৎসবের আয়োজন হয়েছিল হীরুর বাড়িতে।
উৎসব আয়োজনের কারণ – স্কুলের পরীক্ষায় চন্দ্রনাথকে টপকে প্রথম হওয়ার পরে ইউনিভার্সিটির পরীক্ষাতেও সে চন্দ্রনাথকে পিছনে ফেলে দেয়। শুধু তাই নয়, হীরু স্কলারশিপও পায়। ধনীর সন্তান হওয়ায় হীরুর স্কলারশিপ পাওয়া উপলক্ষ্যে তার বাড়িতে উৎসবের আয়োজন হয়েছিল।
হীরুকে স্পষ্ট মনে পড়িতেছে – হীরুর কোন্ রূপের কথা মনে পড়েছে?
হীরুর রূপ – চন্দ্রনাথ গল্পে পরিণত বয়সে কথক স্কলারশিপ পাওয়ার কারণে হীরুর বাড়িতে যে উৎসব হয়েছিল তার স্মৃতিচারণা করেছেন এই প্রসঙ্গেই তিনি হীরুর কথা মনে করেছেন। হীরুর ছিল লাবণ্যময় দেহ। তার আয়ত কোমল চোখে ছিল মায়াভরা দৃষ্টি। চন্দ্রনাথকে দেখলে যেমন তাঁর কালপুরুষ নক্ষত্রের কথা মনে পড়ত, ঠিক সেরকমই হীরুকে দেখে মনে হত শুকতারার কথা। — সেরকমই প্রদীপ্ত, কিন্তু কোমল ও স্নিগ্ধ।
চন্দ্রনাথ গল্পে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় একজন মেধাবী ও নীতিবান যুবকের সংগ্রামী জীবনচিত্র তুলে ধরেছেন। চন্দ্রনাথ ছিলেন একজন আদর্শবাদী মানুষ। তিনি সবসময় ন্যায় ও সত্যের পথে চলতে চেয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা তাকে কঠোর বাস্তবতার মুখোমুখি করেছে। তার দাদার দোষে তিনি সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তার প্রিয় শিক্ষকের মৃত্যুর পর তিনি হতাশ হয়ে পড়েছেন। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। তিনি নিজের চেষ্টায় জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন।
চন্দ্রনাথ একটি শিক্ষণীয় উপন্যাস। উপন্যাসটি পড়ে আমরা অহংকার ও যশ-আকাঙ্ক্ষার ভয়ংকর পরিণতি সম্পর্কে জানতে পারি। এছাড়াও, আমরা বন্ধুত্বের গুরুত্ব ও জীবনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিয়মিত পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করতে পারি।