সত্যজিৎ রায়ের ‘কর্ভাস’ কাহিনিতে কর্ভাস হল একটি কাক যাকে প্রোফেসর শঙ্কু তাঁর পাখি সংক্রান্ত গবেষণার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। কর্ভাসের চরিত্রের পরিচয়-প্রোফেসর শঙ্কু অন্যান্য অনেক পাখির মধ্য থেকে এই কাকটিকেই বেছে নিয়েছিলেন, কারণ তার চেহারা ও আচরণের মধ্যে কিছু বিশেষত্ব ছিল।
কর্ভাস কে? তার চরিত্রের কী পরিচয় এই গল্পে পাওয়া যায়?
কর্ভাসের পরিচয় – সত্যজিৎ রায়ের ‘কর্ভাস’ কাহিনিতে কর্ভাস হল একটি কাক যাকে প্রোফেসর শঙ্কু তাঁর পাখি সংক্রান্ত গবেষণার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন।
কর্ভাসের চরিত্রের পরিচয়-প্রোফেসর শঙ্কু অন্যান্য অনেক পাখির মধ্য থেকে এই কাকটিকেই বেছে নিয়েছিলেন, কারণ তার চেহারা ও আচরণের মধ্যে কিছু বিশেষত্ব ছিল। ‘কর্ভাস’-এর চরিত্রের বৈশিষ্ট্য নীচে দেওয়া হল —
বন্ধুপ্রীতি – একদিন কর্ভাস প্রফেসারের বিড়াল নিউটনের জন্য বাইরে থেকে সদ্য-কাটা মাছের টুকরো নিয়ে আসে, যেটি নিঃসন্দেহে বন্ধুত্বসুলভ।
স্বাতন্ত্র্যবোধ – কর্ভাস অন্য কাকেদের থেকে নিজেকে আলাদা করে নিয়েছিল। একদিন বাজ পড়ে একটি কাক মারা যায়। কাকের দল কোলাহল শুরু করলেও কর্ভাস সেই ঘটনায় কোনো আগ্রহ দেখায়নি।
মানবসুলভ বুদ্ধি ও সচেতনতা – শিক্ষা চলাকালীন কর্ভাসের মধ্যে একপ্রকার মানবসুলভ বুদ্ধি জেগে ওঠে। প্রোফেসর শঙ্কুর সুটকেসের চাবি ঠোঁটে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কিংবা তাঁকে পাসপোর্টের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার ঘটনা তার মানবসুলভ বুদ্ধি ও সচেতনতারই প্রমাণ।
মানবসুলভ অনুভূতি ও উপস্থিত বুদ্ধি – জাদুকর আর্গাসের সামনে টেবিল ল্যাম্পের আলো নিভিয়ে দেওয়া কিংবা তাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় আর্গাসের চশমা খুলে নেওয়ার মধ্য দিয়ে কর্ভাসের মানবসুলভ অনুভূতি ও উপস্থিত বুদ্ধিরই প্রমাণ মেলে।
রসিকতায় পারদর্শিতা – জাপানি পক্ষীবিজ্ঞানীর ক্লান্তিকর ভাষণের সময় চেয়ারের হাতলে কর্ভাসের ঠোঁটতালি সবাইকে আনন্দ দিয়েছিল। এই ঘটনা কর্ভাসের রসবোধেরই প্রমাণ।
চিলিয়ান জাদুকর আর্গাসের চরিত্র সম্পর্কে যা জান লেখো।
আর্গাসের চরিত্র – সত্যজিৎ রায়ের ‘কর্ভাস’ গল্পে প্রোফেসর শঙ্কু কর্ভাসকে নিয়ে সানতিয়াগোতে পক্ষীবিজ্ঞানীদের সম্মেলনে গিয়ে চিলিয়ান জাদুকর আর্গাসের ম্যাজিক দেখেছিলেন। ওই গল্পে আর্গাসের চরিত্রের বিশেষ কয়েকটি দিক আমরা দেখতে পাই।
চেহারার স্বতন্ত্রতা – আর্গাস ছিলেন ছ-ফুটেরও বেশি লম্বা। তাঁর টিয়াপাখির মতো নাক, গ্রামোফোন রেকর্ডের মতো চকচকে চুল সামনে সিঁথি করে পিছনে টান করে আঁচড়ানো আর চোখে মাইনাস কুড়ি পাওয়ারের চশমা। এই চেহারা এবং শীর্ণ ও ফ্যাকাশে হাতের বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির দ্বারা তিনি দর্শকদের সম্মোহিত করতেন।
অতিরিক্ত কৌতূহল – আর্গাসের ম্যাজিকের একটি বিশেষত্ব ছিল যে, তিনি তাঁর ম্যাজিকের খেলায় বিভিন্ন পাখিকে ব্যবহার করতেন। কর্ভাসের খবর পেয়ে তিনি সেই রাত্রেই হোটেলে কর্ভাসকে দেখতে চলে আসেন তাঁর কৌতূহল মেটাতে। কর্ভাসের বুদ্ধির নমুনা তিনি তক্ষুনিই দেখতে চান ৷
লোভ ও অহংকার – কর্ভাসের বুদ্ধির পরিচয় পাওয়ার পর আর্গাস আর নিজের লোভ সংবরণ করতে পারেননি। টাকার বিনিময়ে তিনি প্রফেসারের কাছ থেকে কর্ভাসকে কিনে নিতে চান। তিনি অহংকারের সঙ্গে এও বুঝিয়েও দেন যে তিনি কোটিপতি, তাই তিনি চাইলে কর্ভাসকে যে-কোনো মূল্যে কিনে নিতে পারেন। কিন্তু প্রোফেসর শঙ্কু সেই প্রস্তাবে রাজি না হলে তিনি চালাকির আশ্রয় নিয়ে কর্ভাসকে চুরি করে নিয়ে যান।
কর্ভাসের মানবসুলভ বুদ্ধির পরিচয় কোন্ কোন্ ঘটনায় পাওয়া যায় লেখো।
ঘটনার উল্লেখ – অরনিথন যন্ত্র তৈরির সময় থেকেই ‘কর্ভাস’- এর নিজস্বতা শঙ্কুকে আকৃষ্ট করেছিল। এই কারণে তাকেই তিনি ছাত্র হিসেবে নির্বাচন করেন। একাধিক ঘটনায় কর্ভাসের মধ্যে মানবসুলভ বুদ্ধি ও বিবেচনাবোধের প্রকাশ দেখা যায়।
কর্ভাস ও নিউটন – নিউটনের সঙ্গে কর্ভাস বন্ধুত্ব তৈরি করে নেয়। নিউটনের জন্য সংগ্রহ করে আনে সদ্য কাটা মাছের টুকরো।
শিখন ক্ষমতা – কর্ভাস দু-সপ্তাহে ইংরেজি কথা ও সংখ্যা লিখতে শিখে যায়। কাগজে নিজের নাম ইংরেজিতে লেখে, সহজ যোগ-বিয়োগ করতে পারে, কী বার তা ও লিখে দিতে পারে।
শঙ্কুকে সাহায্য – সানতিয়াগো যাওয়ার জন্যে সুটকেস গোছানো শেষ হওয়ার পরে বাক্সের ঢাকনা বন্ধ করার জন্য শঙ্কু পাশ ফিরে দেখেন সুটকেসের চাবি ঠোঁটে নিয়ে কর্ভাস দাঁড়িয়ে আছে। আবার শঙ্কু পাসপোর্ট নিতে ভুলে গেলে তা মনে করানোর দায়িত্বও নিয়েছে কর্ভাস
আগাসের প্রতি আচরণ – হোটেলের ঘরের আলো নিভিয়ে দিয়ে আর্গাসের উপস্থিতিকে পছন্দ না করার কথা কর্ভাস জানিয়ে দিয়েছে। আবার তাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময়ে আত্মরক্ষার জন্য আর্গাসের চশমা খুলে নিয়েছে সে। এ সব ঘটনাই প্রমাণ করে মানবসুলভ বুদ্ধির অধিকারী কর্ভাস ব্যতিক্রমী ছিল।
নবম শ্রেণির বাংলা কার্ভাসটি পড়ে শিক্ষার্থীরা বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে পারে এবং তাদের ভাষাজ্ঞান, পাঠ্য বোঝার ক্ষমতা, সৃজনশীল চিন্তাভাবনা ইত্যাদি দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে।