নবম শ্রেণি – বাংলা – ধীবর-বৃত্তান্ত – অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

কালিদাস রচিত অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ কাব্যনাটকের একটি অংশ হল ধীবর-বৃত্তান্ত। এটি একটি সংক্ষিপ্ত নাট্যাংশ। নাট্যাংশের শুরুতে নগর রক্ষায় নিযুক্ত রাজশ্যালক ও দুই রক্ষী এক অতিসাধারণ ধীবরের কাছে রাজ-নামাঙ্কিত, মণিখচিত, বহুমূল্য একটি আংটি উদ্ধার করে। ধীবর আংটিটি চুরি করেছে বলে সন্দেহ করে রাজশ্যালক তাকে গ্রেপ্তার করে। ধীবরের স্ত্রী ও সন্তানদের কান্না দেখে রাজশ্যালক ধীবরকে কিছু প্রশ্ন করে। ধীবরের উত্তরে রাজশ্যালক বুঝতে পারে যে ধীবর নিঃসন্দেহে সৎ ও সত্যবাদী। পরে রাজশ্যালক জানতে পারে যে আংটিটি আসলে ধীবরের স্ত্রী শকুন্তলার। শকুন্তলা রাজা দুষ্মন্তের স্ত্রী। ঝড়ের রাতে শকুন্তলাকে ঋষি দুর্বাসার অভিশাপের ফলে ভুলে যায় রাজা দুষ্মন্ত। ধীবরের স্ত্রী শকুন্তলাকে কুশ ও লস্কর নামে দুই পুত্রসন্তান সহ নিয়ে কলিঙ্গ দেশের একটি নদীর তীরে বাস করে। একদিন ধীবর মাছ ধরতে গিয়ে নদীর তীরে শকুন্তলাকে দেখে তাকে চিনতে পারে। ধীবর শকুন্তলার কাছ থেকে আংটিটি নিয়ে নেয় এবং তা রাজশ্যালকের হাতে তুলে দেয়। রাজশ্যালক আংটিটি দেখে রাজা দুষ্মন্তের কাছে নিয়ে যায়। আংটিটি দেখে রাজা দুষ্মন্ত শকুন্তলার কথা মনে করে ফেলে এবং শকুন্তলাকে ফিরে পায়।

Table of Contents

ধীবর-বৃত্তান্ত – অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

অভিজ্ঞান শকুন্তলম্ নাটকের কোন্ অঙ্ক থেকে ধীবর-বৃত্তান্ত নাট্যাংশটি নেওয়া হয়েছে?

অভিজ্ঞান শকুন্তলম্ নাটকের ষষ্ঠ অঙ্ক থেকে ধীবর বৃত্তান্ত নাট্যাংশটি নেওয়া হয়েছে।

ধীবর বৃত্তান্ত নাটকটি বাংলায় কে তরজমা করেছিলেন?

ধীবর বৃত্তান্ত নাটকটি বাংলায় তরজমা করেছিলেন সত্যনারায়ণ চক্রবর্তী।

ধীবর-বৃত্তান্ত নাট্যাংশে কোন্ কোন্ চরিত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়?

ধীবর-বৃত্তান্ত নাট্যাংশের চরিত্রগুলি হল — জানুক ও সূচক নামে দুই রক্ষী, নগরপাল রাজশ্যালক এবং ধীবর।

মহর্ষি কণ্বের অনুপস্থিতিতে দুষ্মন্ত কী করেছিলেন?

মহর্ষি কণ্বের অনুপস্থিতিতে দুষ্মন্ত শকুন্তলাকে বিয়ে করেছিলেন এবং তাঁকে রেখে রাজধানীতে ফিরে গিয়েছিলেন।

তপোবনে রাজার দূতকে প্রত্যাশা করা হয়েছিল কেন?

তপোবনে রাজার দূতকে প্রত্যাশা করা হয়েছিল এই ভেবে যে, সে শকুন্তলার খোঁজ নিতে সেখানে আসবে।

ঋষি দুর্বাসা যখন তপোবনে এসেছিলেন তখন শকুন্ডলার অবস্থা কেমন ছিল?

ঋষি দুর্বাসা যখন তপোবনে এসেছিলেন তখন শকুন্তলা স্বামীর চিন্তায় মগ্ন থাকার কারণে অন্যমনস্ক ছিলেন।

ঋষি দুর্বাসা কেন অপমানিত বোধ করেছিলেন?

আশ্রমে ঋষি দুর্বাসা এলে স্বামীর চিন্তায় অন্যমনস্ক শকুন্তলা তাঁর উপস্থিতি টের পান না। এতে ঋষি দুর্বাসা অপমানিত বোধ করেছিলেন।

ঋষি দুর্বাসা শকুন্তলাকে কী অভিশাপ দিয়েছিলেন?

দুর্বাসা অভিশাপ দিয়েছিলেন যে, যাঁর চিন্তায় মগ্ন থাকার কারণে শকুন্তলা তাঁকে লক্ষ করেননি, তিনি শকুন্তলাকে ভুলে যাবেন।

প্রিয়ংবদার অনুরোধে ঋষি দুর্বাসা কী বলেছিলেন?

ঋষি দুর্বাসা বলেছিলেন যে, প্রিয়জন শকুন্তলাকে ভুলে গেলেও কোনো স্মৃতিচিহ্ন দেখালে এই অভিশাপ দূর হবে।

সখীরা কোন্ জিনিসকে ভবিষ্যতের স্মারকচিহ্ন ভেবেছিলেন?
অথবা, শকুন্তলার কাছে কোন্ স্মারকচিহ্ন ছিল?

দুষ্মন্ত রাজধানীর উদ্দেশে বিদায় নেওয়ার সময়ে শকুন্তলাকে যে আংটি দিয়েছিলেন তাকেই সখীরা ভবিষ্যতের স্মারকচিহ্ন ভেবেছিলেন।

মহর্ষি কণ্ব তীর্থ থেকে ফেরার পরে কী করেছিলেন?

মহর্ষি কণ্ব তীর্থ থেকে ফেরার পরে শকুন্তলাকে স্বামীর ঘরে পাঠানোর আয়োজন করেছিলেন।

দুষ্মণ্ড প্রদত্ত আংটিটি শকুন্তলা কীভাবে হারিয়ে ফেলেছিলেন?

শচীতীর্থে স্নানের পরে অঞ্জলি দেওয়ার সময়ে হাত থেকে খুলে জলে পড়ে গিয়ে শকুন্তলার আংটিটি হারিয়ে যায়।

শকুন্তলা দুষ্মন্তকে আংটি দেখাতে পারেননি কেন?

শচীতীর্থে অঞ্জলি দেওয়ার সময়ে শকুন্তলার আংটি খুলে জলে পড়ে যাওয়ায় শকুন্তলা দুষ্মন্তকে আংটি দেখাতে পারেননি।

রাজসভায় শকুন্তলা অপমানিতা হয়েছিলেন কেন?

রাজসভায় দুষ্মন্ত শকুন্তলাকে চিনতে না পারায় শকুন্তলা অপমানিতা হয়েছিলেন।

রাজা দুষ্মন্তের শ্যালকের কাজ কী ছিল?

রাজা দুষ্মন্তের শ্যালকের কাজ ছিল নগর রক্ষা করা।

রক্ষীরা কাকে, কীভাবে সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করেছিল?

পিছনে হাতবাঁধা অবস্থায় এক ধীবরকে সঙ্গে নিয়ে রক্ষীদের প্রবেশ ঘটেছিল।

আমি একজন জেলে। — জেলেটির বাসস্থান কী ছিল?

জেলেটি তার বাসস্থান শক্রাবতারে বলে জানিয়েছিল।

ধীবরের পাওয়া আংটিটি কেমন ছিল?

ধীবরের পাওয়া আংটিটি ছিল মণিখচিত এবং রাজার নাম খোদাই করা।

আমরা কি তোর জাতির কথা জিজ্ঞাসা করেছি? – বক্তা কখন এ কথা বলেছে?

ধীবর যখন বলে যে সে একজন জেলে এবং শক্রাবতারে থাকে, তখনই দ্বিতীয় রক্ষী আলোচ্য মন্তব্যটি করে।

পুরুষ চরিত্রটি কীভাবে সংসার চালানোর কথা বলেছে?

পুরুষ অর্থাৎ জেলে চরিত্রটি জাল, বড়শি ইত্যাদির সাহায্যে মাছ ধরে সংসার চালানোর কথা বলেছে।

শুনুন মহাশয়, এরকম বলবেন না। এখানে কী না বলার কথা বলা হয়েছে?

এখানে ধীবরটি রাজার শ্যালককে ধীবরের জীবিকা নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রুপ না করার কথা বলেছে।

ধীবর চরিত্রটি জীবিকা বিষয়ে কী বলেছে?

ধীবরের মতে, যে বৃত্তি নিয়ে মানুষ জন্মেছে তা নিন্দনীয় হলেও তা পরিত্যাগ করা উচিত নয়।

ধীবর আংটিটি কীভাবে পেয়েছিল?

ধীবর একটা রুইমাছ টুকরো করে কাটতে গিয়ে মাছের পেটের মধ্যে মণিমুক্তায় ঝলমলে আংটিটা দেখতে পেয়েছিল।

এ অবশ্যই গোসাপ খাওয়া জেলে হবে। শ্যালক এ সন্দেহ। করেছিল কেন?

ধীবরের গা থেকে কাঁচা মাংসের গন্ধ আসছিল বলে রাজার শ্যালক এরকম সন্দেহ করেছিলেন।

হাতবাঁধা অবস্থায় এক পুরুষকে সঙ্গে নিয়ে দুই রক্ষীর প্রবেশ। — পুরুষ – টির হাত বাঁধা কেন?

পুরুষ – টির কাছে রাজা দুষ্মন্ডের আংটি পাওয়া গেলে তাকে চোর সন্দেহে হাত বেঁধে নিয়ে আসা হয়।

আপনারা শান্ত হন। বক্তা কাদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে?

ধীবর-বৃত্তান্ত নাট্যাংশ থেকে নেওয়া আলোচ্য উক্তিটির বক্তা এবং এই নাট্যাংশের প্রধান চরিত্র ধীবর দুই নগররক্ষীকে শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।

তবে কি তোকে সদ ব্রাহ্মণ বিবেচনা করে রাজা এটা দান করেছেন? — কোন্ রাজার কথা এখানে বলা হয়েছে?

ধীবর-বৃত্তান্ত নাট্যাংশে প্রথম রক্ষীর এই সংলাপে রাজা বলতে রাজা দুষ্মন্তের কথা বলা হয়েছে।

আপনারা অনুগ্রহ করে শুনুন। – কোন্ কথা বক্তা শোনাতে চেয়েছে?

ধীবর বৃত্তান্ত নাট্যাংশে আলোচ্য উক্তিটির বক্তা ধীবর নগররক্ষীদের কাছে নিজের পরিচয় এবং কীভাবে সে রাজার আংটিটি পেয়েছে সে- কথা শোনাতে চেয়েছে।

ব্যাটা বাটপাড়, আমরা কি তোর জাতির কথা জিজ্ঞাসা করেছি। — বক্তা আসলে কোন্ কথা জিজ্ঞাসা করেছিল?

উদ্ধৃতাংশের বক্তা দ্বিতীয় রক্ষী আসলে জানতে চেয়েছিল রাজার নাম খোদাই করা মণিখচিত আংটিটি ধীবর কোথায় পেয়েছে।

তা আপনি যা আদেশ করেন। — কোন আদেশের কথা এখানে বলা হয়েছে?

ধীবরকে বাধা না দিয়ে যেন আগাগোড়া সব কথা বলতে দেওয়া হয়- এই আদেশের কথাই এখানে বলা হয়েছে।

জানুক, এর গা থেকে কাঁচা মাংসের গন্ধ আসছে। — এখান থেকে বক্তা কোন সিদ্ধান্ত পৌঁছেছিলেন?

ধীবরের গা থেকে কাঁচা মাংসের গন্ধ আসায় বক্তা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন যে, সে নিশ্চয়ই গোসাপ খাওয়া জেলে।

ধীবরের কথামতো বেদজ্ঞ ব্রাক্ষ্মণ কখন নির্দয় হয়ে থাকেন?

ধীবরের কথামতো বেদজ্ঞ ব্রাক্ষ্মণ যজ্ঞীয় পশুবধের সময় নির্দয় হয়ে থাকেন।

আমার হাত দুটো (এখনই) নিশপিশ করছে। — বক্তার হাত দুটো কীসের জন্য নিশপিশ করছে? 

হত্যার আগে ধীবরের গলায় পরানোর জন্য ফুলের মালা গাঁথতে প্রথম রক্ষীর হাত দুটো নিশপিশ করছিল।

রাজার শ্যালক রাজার কাছ থেকে ফিরে এসে কী বলেছিলেন?

ধীবরের কথা সত্য প্রমাণিত হওয়ায় রাজার কাছ থেকে ফিরে এসে রাজশ্যালক ধীবরকে ছেড়ে দিতে বলেছিলেন।

প্রভু, আজ আমার সংসার চলবে কীভাবে? — ধীবরের এই সমস্যা কীভাবে মিটেছিল?

মহারাজা খুশি হয়ে আংটির সমপরিমাণ অর্থ ধীবরকে দেওয়ায় ধীবরের সংসার চালানোর সমস্যা মিটে যায়।

আংটিটি দেখে রাজার প্রতিক্রিয়া কী হয়েছিল?

আংটিটি দেখে কোনো প্রিয়জনের কথা মনে পড়ায় স্বভাবে গম্ভীর প্রকৃতির হলেও মুহূর্তের জন্য রাজা বিহ্বলভাবে তাকিয়ে ছিলেন।

এ কি যা তা অনুগ্রহ — অনুগ্রহের তুলনা হিসেবে সূচক কী বলেছিল?

রাজার ধীবরের প্রতি অনুগ্রহকে সূচক শূল থেকে নামিয়ে একেবারে হাতির পিঠে চাপিয়ে দেওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছিল।

জেলে তার পারিতোষিকের অর্ধেক অর্থ কী করতে চেয়েছিল?

রক্ষীরা ধীবরকে মারার আগে যে ফুলের মালা তার গলায় পরাতে চেয়েছিল, রাজার দেওয়া পারিতোষিকের অর্ধেক অর্থ সেই ফুলের দাম হিসেবে ধীবর দিতে চেয়েছিল।

প্রভু, অনুগৃহীত হলাম। — কীভাবে বক্তা অনুগৃহীত হয়েছিল?

মহারাজ আংটি ফিরে পেয়ে তার মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ ধীবরকে দেওয়ায় সে অনুগৃহীত হয়েছিল।

মহারাজ এ সংবাদ শুনে খুব খুশি হবেন। — কোন্ সংবাদ শুনে মহারাজের খুশি হওয়ার কথা বলা হয়েছে?

ধীবরের কাছ থেকে মহারাজের আংটি উদ্ধার করার কথা শুনে মহারাজা দুষ্মন্ত খুশি হবেন বলে রক্ষীরা এই মন্তব্য করেছে।

আপনি প্রবেশ করুন। — কোথায় প্রবেশের কথা এখানে বলা হয়েছে?

আলোচ্য উদ্ধৃতাংশে রাজশ্যালককে মহারাজা দুষ্মন্তের প্রাসাদে প্রবেশ করার কথা বলা হয়েছে।

নবম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত “ধীবর বৃত্তান্ত” নাট্যাংশটি মহাকবি কালিদাসের রচিত “অভিজ্ঞান শকুন্তলম্” নাটকের অন্তর্গত ষষ্ঠ অংক। এই নাট্যাংশে কলিঙ্গ দেশের এক ধীবরের সাথে শকুন্তলার দেখা ও তার মাধ্যমে রাজা দুষ্মন্তের সাথে শকুন্তলার পুনর্মিলনের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।

“ধীবর বৃত্তান্ত” নাট্যাংশটি একটি রোমান্টিক নাট্যাংশ। এই নাট্যাংশে প্রেম, বিরহ, মিলন, প্রকৃতি, সৌন্দর্য, নৈসর্গিক দৃশ্যাবলি ইত্যাদির সুন্দর বর্ণনা রয়েছে। নাট্যাংশের ভাষা ও সংলাপ অত্যন্ত মনোজ্ঞ।

নাট্যাংশটি থেকে আমরা অনেক শিক্ষা লাভ করতে পারি। যেমন, সত্যবাদিতা, বিনয়, সৌজন্য, পরোপকার, দেশপ্রেম ইত্যাদি। এছাড়াও, নাট্যাংশটি থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, প্রেমই জীবনের একমাত্র সার্থকতা।

“ধীবর বৃত্তান্ত” নাট্যাংশটি একটি শ্রেষ্ঠ বাংলা সাহিত্যকর্ম। এটি পাঠকদের মনে এক চিরস্থায়ী ছাপ ফেলে যায়।

Share via:

মন্তব্য করুন