এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের দ্বিতীয় পাঠের প্রথম অধ্যায়, ‘দাম’ -এর বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করবো। এখানে লেখকের পরিচিতি, গল্পের উৎস, গল্পের পাঠপ্রসঙ্গ, গল্পের সারসংক্ষেপ, গল্পের নামকরণ এবং এর প্রধান বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। এই আর্টিকেলটি আপনাদের ‘দাম’ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দেবে এবং গল্পটি ভালোভাবে বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। এছাড়া, নবম শ্রেণীর পরীক্ষায় এই অধ্যায় থেকে লেখক ও গল্পের সারসংক্ষেপ সম্পর্কিত প্রশ্ন আসতে পারে, তাই এই তথ্যগুলো জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

‘দাম’ গল্পের লেখক পরিচিতি
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় 1918 খ্রিস্টাব্দের 8 ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরের জন্ম ও প্রথম জীবন বালিয়াডিঙিতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আসল নাম তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয়। দিনাজপুর, ফরিদপুর, বরিশাল ও কলকাতায়। 1941 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে এমএ পাস করেন। বাংলা সাহিত্যে ছোটোগল্প বিষয়ে গবেষণামূলক কাজের জন্য তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 1960 খ্রিস্টাব্দে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি প্রথমে জলপাইগুড়ি কলেজ, সিটি কলেজ ও পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের সাহিত্যজীবন –
ছাত্রাবস্থায় কাব্যরচনার মাধ্যমে তাঁর সাহিত্যসাধনা শুরু হয়। পরে গল্প, উপন্যাস, নাটক প্রভৃতি রচনা করে তিনি সাহিত্যক্ষেত্রে প্রতিভার সাক্ষ্য রাখেন। সাহিত্যরচনায় তিনি সবচেয়ে বেশি প্রেরণা পেয়েছেন স্ত্রী আশা গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। 52 বছরের জীবনে তিনি 94টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। সমালোচক এবং সাহিত্যিক হিসেবেও তিনি খ্যাতিমান ছিলেন। চল্লিশের দশকের প্রথমার্ধে তাঁর তিন খণ্ডের উপন্যাস ‘উপনিবেশ’ সাহিত্যপাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তিনি ‘শনিবারের চিঠি’র নিয়মিত লেখক ছিলেন। ‘বসুমতী’ পত্রিকা তাঁকে সংবাদসাহিত্যের প্রথম পুরস্কার প্রদান করে। শেষজীবনে সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকায় তিনি ‘সুনন্দ’ ছদ্মনামে রচনা লিখতেন। কয়েকটি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যও তিনি রচনা করেছিলেন।
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের রচনাসম্ভার
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্মরণীয় উপন্যাস হল ‘উপনিবেশ’ (1944 খ্রিস্টাব্দ), ‘তিমির তীর্থ’ (1944 খ্রিস্টাব্দ), ‘মন্ত্রমুখর’ (1945 খ্রিস্টাব্দ), ‘স্বর্ণসীতা’ (1946 খ্রিস্টাব্দ), ‘সম্রাট ও শ্রেষ্ঠী’ (1363 বঙ্গাব্দ), ‘সূর্যসারথী’ (1948 খ্রিস্টাব্দ), ‘ট্রফি’ (1949 খ্রিস্টাব্দ), ‘বিদিশা’ (1949 খ্রিস্টাব্দ), ‘শিলালিপি’ (1949 খ্রিস্টাব্দ), ‘পদসঞ্চার’ (1949 খ্রিস্টাব্দ), ‘লালমাটি’ (1951 খ্রিস্টাব্দ), ‘নিশিযাপন’ (1960 খ্রিস্টাব্দ), ‘ভস্মপুতুল’ (1962 খ্রিস্টাব্দ), ‘অমাবস্যার গান’ (1965 খ্রিস্টাব্দ), ‘পাতাল কন্যা’ (1966 খ্রিস্টাব্দ), ‘কাচের দরজা’ (1970 খ্রিস্টাব্দ) ইত্যাদি। তাঁর ছোটোগল্প গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – ‘বীতংস’ (1945 খ্রিস্টাব্দ), ‘দুঃশাসন’ (1945 খ্রিস্টাব্দ), ‘ভাঙা বন্দর’ (1945 খ্রিস্টাব্দ), ‘জন্মান্তর’ (1946 খ্রিস্টাব্দ), ‘শ্বেতকমল’ (1961 খ্রিস্টাব্দ), ‘উর্বশী’ (1956 খ্রিস্টাব্দ), ‘ছুটির আকাশ’ (1956 খ্রিস্টাব্দ), ‘চারমূর্তি’ (1957 খ্রিস্টাব্দ), ‘শিলাবতী’ (1964 খ্রিস্টাব্দ), ‘টেনিদার গল্প’ (1968 খ্রিস্টাব্দ), ‘পটলডাঙার টেনিদা’ (1970 খ্রিস্টাব্দ), ‘টেনিদা দি গ্রেট’ (1971 খ্রিস্টাব্দ), ‘ঘূর্ণি’ (1971 খ্রিস্টাব্দ), ‘ঘণ্টাদার কাবুলকাকা’ (1972 খ্রিস্টাব্দ), ‘অব্যর্থ লক্ষ্যভেদ’ (1974 খ্রিস্টাব্দ), ‘টেনিদা ও ভূতুড়ে কামরা’ (1981 খ্রিস্টাব্দ), ‘ক্রিকেটার টেনিদা’ (1986 খ্রিস্টাব্দ) এবং ‘টেনিদার কাণ্ডকারখানা’ (1990 খ্রিস্টাব্দ) ইত্যাদি।
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের সাহিত্যিক প্রতিভা
তারাশঙ্করের উপন্যাসে যেমন রাঢ়ভূমি তেমনই নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাসে বরেন্দ্রভূমি প্রাধান্য বিস্তার করেছে। উত্তরবঙ্গের চা বাগান আর মধ্যবিত্ত অধ্যুষিত মফস্সল শহর বারবার তাঁর লেখায় এসেছে, আর এসেছে কলকাতার জটিল ও বিচিত্র নাগরিক জীবন। প্রেম-প্রকৃতির সঙ্গে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্পে মনস্তত্ত্বও সমানভাবে ক্রিয়াশীল থেকেছে।
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃত্যু
1970 খ্রিস্টাব্দের 6 নভেম্বর নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় পরলোকগমন করেন। তাঁর ইহলোক ত্যাগ বাংলা সাহিত্যের এক অপূরণীয় ক্ষতি।
‘দাম’ গল্পের উৎস
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বিরচিত ‘দাম’ ছোটোগল্পটি শারদীয়া ‘তরুণের স্বপ্ন’-তে 1365 বঙ্গাব্দে প্রথম প্রকাশিত হয়।
‘দাম’ গল্পের পাঠপ্রসঙ্গ
বিশ্বায়নের বিষ আকণ্ঠ পান করে বর্তমান বিশ্ব যখন বিসর্জন দিতে বসেছে তার পুরোনো আদর্শ ও মূল্যবোধগুলিকে, তখন নারায়ণ, গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দাম’ গল্পটি অবক্ষয়িত সমাজের কাছে এক বড়ো আশ্রয় হয়ে উঠেছে। পুরাকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থার অনিবার্য এবং প্রধান দুটি উপাদান ছাত্র এবং শিক্ষক। প্রাচীনকালের গুরু-শিষ্য সম্পর্ক সময়ের পালাবদলে আমূল বদলে গেছে। শিক্ষকের হাতে ছাত্রনিগ্রহ কিংবা ছাত্রের হাতে শিক্ষকের হেনস্তা সমসময়ে দৈনন্দিন সংবাদ-শিরোনামে পরিণত হয়েছে। অণু-পরিবারে বড়ো হয়ে ওঠা, কেরিয়ারের ইঁদুরদৌড়ে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া ছাত্রসমাজের কাছে শিক্ষকও পণ্যসম্পর্কের একটি নামমাত্র। শুধুমাত্র ছাত্রসমাজকে দোষ দিয়ে এই সমস্যা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া যাবে না। বড়ো হয়ে ওঠার মধ্যে যে শিক্ষার্থী দেখছে শিক্ষক মানে কখনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টাকা সরিয়ে চোর অথবা অন্য কোনো অপরাধে দেশদ্রোহী – সেই শিক্ষকদের সম্পর্কে চিরাচরিত আদর্শায়িত ধারণা পোষণ করা কোনো ছাত্রের পক্ষেই সম্ভব হয় না। পাশাপাশি ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের নিজস্ব আঙিনায় রাজনীতি, আইন ও গণমাধ্যমের নজরদারি সম্পর্কটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এই সামাজিক পরিস্থিতিতে নতুন করে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের মাধুর্য ছাত্র এবং শিক্ষক উভয়ের কাছে তুলে ধরতে ‘দাম’ গল্পটি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।
‘দাম’ গল্পের বিষয়সংক্ষেপ
স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক ছাত্রদের কাছে ছিলেন বিভীষিকার মতো। অঙ্কে আশ্চর্য পরিষ্কার ছিল তাঁর মাথা। যে অঙ্ক ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করেও মেলাতে পারত না ছাত্ররা, তা তিনি নিমেষে করে দিতেন আশ্চর্য দক্ষতায়। ছাত্ররা মাস্টারমশায়ের পারদর্শিতায় অভিভূত হয়ে যেত, রোমাঞ্চিত হয়ে দেখত তাঁর অঙ্ক কষার ধরন। তারা মনে করত মাস্টারমশায়ের মুখস্থ রয়েছে পৃথিবীর যাবতীয় অঙ্কের সমাধান।
স্কুলের মেধাবী ছাত্ররাও মাস্টারমশায়ের ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকত। অঙ্কে যারা ভালো নয়, তাদের পিঠে পড়ত মাস্টারমশায়ের প্রকাণ্ড হাতের প্রচণ্ড চড়। মার খেয়ে চোখে জল এলে পা ধরে ছুঁড়ে স্কুলের পুকুরে ফেলে দেওয়ার হুংকার ছাড়তেন তিনি। পুরুষ মানুষ হয়ে অঙ্ক না পারাটা তাঁর কাছে ছিল অকল্পনীয় ব্যাপার। তিনি বলতেন অঙ্ক না পারলে স্বর্গের দোরগোড়ায় পৌঁছোনো যায় না। তবে শাস্তি আর শাসনে মাস্টারমশাই ছাত্রদের মনে এমন অঙ্কভীতি তৈরি করে দিয়েছিলেন যে, কথক স্বর্গসুখ থেকেও দূরে থাকতে চাইত। ম্যাট্রিকুলেশনের পর আর অঙ্ক বিষয়টি রাখেননি কথক। কিন্তু এমএ পাস করার পরও স্বপ্ন দেখতেন মাস্টারমশায়ের ভয়ংকর শাসনের। ঘুমের মধ্যে ঘেমে যেতেন। জেগে উঠে তৃপ্তি পেতেন এই ভেবে যে; এখন আর তাকে অঙ্ক করতে হয় না, তিনি এখন একটি কলেজে বাংলা পড়ান।
একদিন একটি পত্রিকার আবদার মেটাতে কথক গল্প লিখলেন স্কুলের বিভীষিকা সেই মাস্টারমশাইকে নিয়েই। গল্পে কল্পনার রং মিশিয়ে উপদেশ দিয়ে সত্যতার অবমাননা করলেন কথক। সাহিত্যের প্রথিতযশা ব্যক্তিত্বরা পত্রিকাটিকে পাত্তা দেয়নি বলে কথক সাহস করে লিখে ফেলেছিলেন গল্পটি। গল্পটি লিখে নগদ দশ টাকা দক্ষিণা পেয়েছিলেন তিনি।
বহুদিন পর মাস্টারমশায়ের স্মৃতি যখন প্রায় মুছে গেছে কথকের মন থেকে, তখন বাংলাদেশের একটি কলেজে বক্তৃতা করতে গিয়ে হঠাৎই সাক্ষাৎ হয়েছে তাঁর সঙ্গে। কথক বিনা পয়সায় বেড়ানোর লোভে বক্তৃতা করতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশে। বক্তব্য হিসেবে তিনি নির্বাচন করেছিলেন এমন একটি বিষয়, যা দিয়ে ম্যানেজ করে দেওয়া যায় রবীন্দ্র-জন্মোৎসব থেকে বনমহোৎসবের মতো যে-কোনো ধরনের অনুষ্ঠান। সভায় জাঁকিয়ে বক্তৃতা দিয়ে প্রিন্সিপাল-সহ বহু মানুষের বাহবা কুড়িয়েছেন তিনি। কলেজের বাইরের মাঠে অপেক্ষমান এক বৃদ্ধের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে তাঁর গলার স্বর শুনে চমকে উঠেছেন কথক। স্মৃতির অন্ধকার থেকে একটা ভয় তার মনকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে। স্কুলজীবনের সেই মাস্টারমশাই তার বক্তব্য দেওয়ার খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন, শুনেছেন এবং প্রাক্তন ছাত্রের সঙ্গে দেখা করে তাকে স্নেহাশীর্বাদ জানিয়েছেন।
আবেগাপ্লুত মাস্টারমশাইকে দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেছে কথক। কথকের গ্লানি হয়েছে ‘সর্বার্থসাধক’ বক্তৃতার ‘ফাঁপা ফানুস’ দিয়ে মাস্টারমশায়ের মতো একজন বিচক্ষণ মানুষকে ভোলানো যাবে না ভেবে। অথচ মাস্টারমশাই কথককে নিয়ে গর্ববোধ করেছেন। কথকের লেখা, পত্রিকায় প্রকাশিত গল্পটি মাস্টারমশায়ের ছেলে তাঁকে এনে দিয়েছিল। তারপর থেকে যত্ন করে তিনি সেটা সংরক্ষণ করে রেখেছেন এবং অন্যদের দেখিয়েছেন ছাত্র তাঁকে অমর করে দিয়েছে এ বিশ্বাস থেকে। গল্পটি পড়ে সুকুমারকে একটি চিঠিও লিখেছিলেন তিনি। কিন্তু সময় ততক্ষণে এনে দিয়েছে এতখানি দূরত্ব যে, মাস্টারমশাই তাঁর প্রাক্তন ছাত্রকে আর সেটা পাঠাতে পারেননি। অনেক কথার স্রোতে ছাত্র এবং মাস্টারমশাই ভেসেছেন বেশ কিছু সময়। তারপর ভীষণ আবেগে মাস্টারমশায়ের চোখ জলে ভরে গেছে, আর অনুশোচনায় দগ্ধ হয়েছেন কথক। মাস্টারমশাইকে নিয়ে গল্প লিখে তিনি যে দশ টাকা পেয়েছিলেন, সেই লজ্জায় এবং অপরাধবোধে মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করেছে কথকের। বহুদিন পর মাস্টারমশায়ের সান্নিধ্য পেয়ে তাঁকে নতুন করে চিনেছেন কথক। মনে হয়েছে মাস্টারমশাই যেন স্নেহ-মমতা-ক্ষমার এক মহাসমুদ্র। কথক শেষপর্যন্ত অনুভব করেছেন যে, তার জীবন তথা ছাত্রের জীবনে মাস্টারমশায়ের দাম অমূল্য।
‘দাম’ গল্পের নামকরণ
সাহিত্যের ক্ষেত্রে নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামকরণ পাঠকের কাছে সাহিত্যকে ইঙ্গিতপূর্ণ করে তোলে। সাহিত্যের নামকরণ কখনও বিষয়, কখনও কোনো ঘটনা, কখনও চরিত্রকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। আবার কোথাও নামকরণে ব্যঞ্জনার আশ্রয় নেন লেখক। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দাম’ গল্পটিও ব্যঞ্জনাবাহী।
নামকরণের সার্থকতা
‘দাম’ গল্পে বর্ণিত হয়েছে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের অদ্ভুত আন্তরিকতার কথা। এককালে স্কুলজীবনে যে শিক্ষক ছাত্রদের কাছে বিভীষিকাস্বরূপ ছিলেন, বহুকাল পরে সেই শিক্ষকের স্নেহ-মমতা-ক্ষমার অপরিমেয় রসে দ্রবীভূত হয়ে গেছে ছাত্রের যাবতীয় অভিমান। মাস্টারমশাই তাঁর নাছোড়স্বভাবে যে-কোনো উপায়ে ছাত্রদের শেখাতে চাইতেন অঙ্ক। উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণের লক্ষ্যে ভয়ংকর শাস্তি ও শাসনে ছাত্রদের কাছে তিনি অঙ্ক বিষয়টিকেই করে তুলেছিলেন ভয়াবহ। কিন্তু অঙ্কের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেও উজ্জ্বল ভবিষ্যতে পৌঁছেছেন কথক। তিনি বর্তমানে একটি কলেজের বাংলার শিক্ষক। একটি পত্রিকায় মাস্টারমশাইকে নিয়ে যে গল্প লিখেছিলেন কথক, তাতে ছিল কল্পনার রং মেশানো এবং উপদেশ দেওয়ার ঔদ্ধত্য। মাস্টারমশায়ের ছাত্র হয়েও জীবনে প্রতিষ্ঠার পর বক্তব্য রাখার বিষয়ে কারসাজি করতেন কথক। সব জায়গাতেই বলা চলে এমন ‘সর্বার্থসাধক’ বক্তৃতা বানিয়ে রেখেছিলেন কথক, যা সারশূন্য ‘ফাঁপা ফানুস’ -এর মতো। পত্রিকার লেখা কিংবা বাংলাদেশের কলেজে দেওয়া বক্তৃতা – এসব মাস্টারমশাই জেনেছেন অথচ তাঁর ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে কথকের সব অপরাধ মাফ হয়ে গেছে। তাই কথক উপলব্ধি করেছেন মাস্টারমশায়ের স্নেহ-মমতা-ক্ষমা – এসব অমূল্য। মাস্টারমশাইকে নিয়ে লেখা গল্প তিনি দশ টাকায় বিক্রি করলেও শেষপর্যন্ত কথকের আত্মানুশোচনা আলোচ্য গল্পের নামকরণকে ব্যঞ্জনাবাহী এবং সার্থক করে তুলেছে।
এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের দ্বিতীয় পাঠের প্রথম অধ্যায়, ‘দাম’ -এর বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করবো। এখানে লেখকের পরিচিতি, গল্পের উৎস, গল্পের পাঠপ্রসঙ্গ, গল্পের সারসংক্ষেপ, গল্পের নামকরণ এবং এর প্রধান বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই আর্টিকেলটি আপনাদের ‘দাম’ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দিয়েছে এবং গল্পটি ভালোভাবে বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। এছাড়া, নবম শ্রেণীর পরীক্ষায় এই অধ্যায় থেকে লেখক পরিচিতি, গল্পের নামকরণ ও গল্পের সারসংক্ষেপ সম্পর্কিত প্রশ্ন আসতে পারে, তাই এই তথ্যগুলো জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মন্তব্য করুন