নবম শ্রেণির বাংলা প্রবন্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা হল চিঠি। এই রচনাটি স্বামী বিবেকানন্দের লেখা। এই রচনায় স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর বন্ধু নিবেদিতাকে লিখিত একটি চিঠির মাধ্যমে তাঁর জীবনের নানা অভিজ্ঞতা ও ভাবনা তুলে ধরেছেন।
এই রচনায় স্বামী বিবেকানন্দের স্বদেশপ্রেম, মানবপ্রেম, ঈশ্বরপ্রেম, ধর্মের প্রকৃতি, শিক্ষার গুরুত্ব, নারীশিক্ষার গুরুত্ব প্রভৃতি বিষয়ে তাঁর চিন্তাভাবনা ফুটে উঠেছে।
একজন প্রকৃত সিংহীর প্রয়োজন। — কে কাকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলেছেন? বক্তা তাকে প্রকৃত সিংহী বলেছেন কেন?
বক্তা ও উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – চিঠি রচনার উল্লিখিত অংশে স্বামী বিবেকানন্দ মিস নোব্ল্কে প্রকৃত সিংহী বলেছেন।
প্রকৃত সিংহীর কারণ – বিবেকানন্দ মিস নোব্ল্কে এক ব্যতিক্রমী চরিত্র হিসেবে দেখেছেন। তাঁর মধ্যে রয়েছে নেতৃত্বদানের ক্ষমতা। নোব্লের শিক্ষা, ঐকান্তিকতা, পবিত্রতা, অসীম ভালোবাসা, দৃঢ়তা এবং তাঁর ধমনিতে প্রবাহিত রক্তের জন্য তাঁকেই সেই নারী হিসেবে বিবেকানন্দ ভেবেছেন, যাঁকে এদেশের প্রয়োজন। এইসব গুণের কারণেই তিনি সিংহীর সমকক্ষ হয়ে উঠেছেন।
কিন্তু বিঘ্নও আছে বহু। — কোন্ কোন্ বিঘ্নের কথা বলা হয়েছে লেখো।
বিঘ্নের আশঙ্কা – স্বামী বিবেকানন্দ মিস নোব্ল্কে যেসব বিঘ্নের কথা বলেছেন, তার মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ্য এদেশের মানুষের দুঃখ, কুসংস্কার, দাসত্ব। মানুষের দারিদ্র্য একটা প্রধান বাধা। জাতিভেদ ও অস্পৃশ্যতা তাদের আলাদা করে রেখেছে। ভয় অথবা ঘৃণা—যে কারণেই হোক, তারা শ্বেতাঙ্গদের এড়িয়ে চলে। এদের সঙ্গে নোব্ল্ মিলতে চাইলে শ্বেতাঙ্গরাও তাঁকে সন্দেহ করতে পারে। এ ছাড়া গ্রীষ্মপ্রধান জলবায়ু এবং শহরের বাইরে সুখস্বাচ্ছন্দ্যের অভাবও বাধা হয়ে উঠতে পারে।
এদেশে এলে তুমি নিজেকে অসংখ্য নরনারীতে পরিবেষ্টিত দেখতে পাবে। — তুমি কে? বক্তা এমন কথা বলেছেন কেন?
তুমি-র পরিচয় – স্বামী বিবেকানন্দ রচিত পাঠ্য চিঠি – তে তুমি বলতে মিস মার্গারেট নোব্ল্কে বোঝানো হয়েছে।
বক্তার এমন বক্তব্যের কারণ – স্বামী বিবেকানন্দ মি. স্টার্ডির চিঠি পেয়ে জেনেছেন যে, মিস নোব্ল্ ভারতে আসতে এবং সব কিছু নিজের চোখে দেখতে দৃঢ়সংকল্প ছিলেন। কিন্তু এদেশে এলে অভাবগ্রস্ত অর্ধনগ্ন দুঃখী মানুষগুলির মধ্যে মিস নোব্ল্কে কাজ করতে হবে। তার জন্য তিনি মানসিকভাবে যথেষ্ট প্রস্তুত কি না সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতেই এবং এদেশের সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত সম্পর্কে ধারণা দিতেই স্বামীজি এ কথা বলেছেন।
মরদ কি বাত হাতি কা দাঁত – বক্তার এই বক্তব্যের প্রাসঙ্গিকতা বিচার করো।
প্রাসঙ্গিকতা – স্বামী বিবেকানন্দের চিঠি রচনায় উল্লিখিত প্রবাদটির আক্ষরিক অর্থ হল মরদ অর্থাৎ পুরুষের কথা হাতির দাঁতের মতো। হাতির দাঁত যেমন একবার বেরোলে আর ঢোকে না। ঠিক সেরকমই মরদ অর্থাৎ পুরুষের কথা হাঁতির দাঁতের মতো। প্রকৃত পুরুষও একবার যে প্রতিজ্ঞা করেন তার নড়চড় হয় না। বিবেকানন্দ নোব্লের ভারতে আগমনের আগে এদেশে এলে তাঁকে কী কী প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হবে তা জানিয়ে দিয়েছেন। এবং তারপরে বলেছেন যে কাজের ক্ষেত্রে মাঝপথে যদি ব্যর্থতা আসে, বা কাজে বিরক্তি আসে— তবুও আমৃত্যু মিস নোব্ল্ বিবেকানন্দকে পাশে পাবেন। নিজের প্রতিজ্ঞার দৃঢ়তাকে বোঝাতে গিয়েই স্বামীজি আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
এই আমার প্রতিজ্ঞা। — কোন্ প্রতিজ্ঞার কথা এখানে বলা হয়েছে?
প্রতিজ্ঞা – মিস নোব্ল্ ভারতে আসার সিদ্ধান্ত নিলে সেই খবর পেয়ে তাঁকে এদেশে কাজের ক্ষেত্রে অসুবিধাগুলি স্বামী বিবেকানন্দ বুঝিয়ে দিয়েছেন এবং কাজে নামার আগে সেগুলি ভালো করে ভেবে নিতে বলেছেন। তারপরে জানিয়েছেন যে, মিস নোব্ল্ যদি কাজের পরে ব্যর্থ হন কিংবা কাজে তাঁর বিরক্তি আসে, তাহলেও বিবেকানন্দ তাঁর পাশেই আমৃত্যু থাকবেন। মিস নোব্ল্ কাজ সম্পূর্ণ না করলে কিংবা বেদান্ত ধর্ম ত্যাগ করলেও বিবেকানন্দ তাঁর পাশ থেকে সরে যাবেন না। তাঁর কথায় মরদ কি বাত হাতি কা দাঁত – এর মতোই এ তাঁর অনড় প্রতিজ্ঞা।
তাঁর সঙ্গে বনিয়ে চলা অসম্ভব। — কার সম্পর্কে কেন এ মন্তব্য করা হয়েছে?
উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – স্বামী বিবেকানন্দ মিস নোব্ল্কে উদ্দেশ্য করে মিস্ মুলার সম্পর্কে মন্তব্যটি করেছেন।
মন্তব্যের কারণ – মিস মুলার, বিবেকানন্দের মতে, তাঁর নিজের ভাবে চমৎকার মহিলা। কিন্তু ছেলেবেলা থেকেই নিজেকে নেত্রী ভাবা এবং নিজের ক্ষমতায় অতিরিক্ত বিশ্বাস তাঁকে বিচ্ছিন্ন করে তুলেছে। বিবেকানন্দের মনে হয়েছে যে মিস নোব্ল্ও অল্পদিনেই বুঝে নিতে পারবেন যে, মিস মুলারের সঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়।
তাঁর বর্তমান সংকল্প এই যে – তাঁর বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? তাঁর বর্তমান সংকল্প কী লেখো।
তাঁর পরিচয় – চিঠি রচনার উল্লিখিত অংশে তাঁর বলতে মিস মুলারের কথা বলা হয়েছে।
তাঁর বর্তমান সংকলাপ – মিস মুলার, যিনি নিজেকে আজন্ম নেত্রী বলে মনে করতেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, কলকাতায় একটি বাড়ি ভাড়া নেবেন। এই বাড়িটিতে তিনি, মিস নোব্ল্ আর ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে যেসব বন্ধুদের আসার সম্ভাবনা আছে তাঁরা থাকবেন বলে মিস মুলার ভেবেছিলেন। এই ভাবনাকেই মিস মুলারের বর্তমান সংকল্প বলা হয়েছে।
কিন্তু তাঁর মঠাধ্যক্ষাসুলভ সংকল্পটি দুটি কারণে কখনও সফল হবে না। – কোন্ প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে? মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
প্রসঙ্গ – মিস মুলার কলকাতায় একটি বাড়ি ভাড়া নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সে প্রসঙ্গেই লেখক স্বামী বিবেকানন্দের এই মন্তব্য।
মন্তব্যটি বিশ্লেষণ – মুলার চেয়েছেন মিস্ নোব্ল্ এবং তার নিজের জন্য, সেইসঙ্গে ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে যে বন্ধুদের ভারতে আসার সম্ভাবনা আছে তাদের জন্যও বাড়ি ভাড়া নিতে চেয়েছিলেন। আপাতভাবে এটি তাঁর সহৃদয়তার পরিচায়ক হলেও মুলারের রুক্ষ মেজাজ এবং অস্থিরচিত্ততা তাঁর এই সংকল্পকে সফল করতে দেবে না বলে লেখক মনে করেছেন।
এত ভালো, এত স্নেহময়ী তিনি। – কার সম্পর্কে এই উক্তি? লেখকের কী মানসিকতার পরিচিয় পাওয়া যায়?
উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – চিঠি রচনার উল্লিখিত অংশে মিসেস সেভিয়ার সম্পর্কে এই উক্তি।
লেখকের মানসিকতা – মিসেস সেভিয়ার এবং তাঁর স্বামী ক্যাপটেন সেভিয়ার সম্পর্কে লেখকের মনের গভীর শ্রদ্ধার প্রকাশ ঘটেছে এখানে। তাঁরা সেই বিরল ইংরেজ লেখকের মতে যাঁরা এদেশীয়দের ঘৃণা করেন না। এদেশের মানুষদের ওপর মুরুব্বিয়ানা করতে তাঁরা আসেননি। সেভিয়ারদের ওপরে বিবেকানন্দের এতটাই আস্থা ছিল যে, নোব্ল্ ভারতে আসার পরে তাঁরা তাঁর সহকর্মী হতে পারেন বলেও বিবেকানন্দ মন্তব্য করেন।
তাতে তোমার ও তাঁদের — উভয়েরই সুবিধা হবে। — কোন্ প্রসঙ্গে লেখক এ কথা বলেছেন উল্লেখ করো।
প্রসঙ্গ – চিঠি রচনায় যেসব ইউরোপীয় এদেশে সমাজসেবার কাজ করতে এসেছেন, বিবেকানন্দ তাঁদের মধ্যে সেভিয়ার দম্পতির বিশেষ প্রশংসা করেছেন। তাঁর মতে এঁরাই একমাত্র ইংরেজ যাঁরা এদেশীয়দের ঘৃণা করেননি কিংবা এদের ওপরে প্রভুত্ব দেখাতে চাননি। তবে এঁদের কোনো নির্দিষ্ট কার্যপ্রণালী নেই। তাই মিস্ নোব্ল্ এদেশে এলে এবং তাঁরা একত্রিত হলে দু-তরফেই কাজের সুবিধা হবে।
তাঁদের সঙ্গে এলে তোমার পথের একঘেয়েমি দূর হতে পারে। — যে পরিপ্রেক্ষিতে লেখকের এই মন্তব্য তা বিশ্লেষণ করো।
মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিত – মিস্ নোব্লের ভারতে আগমনের কিছু পূর্বেই পটভূমিতে বিবেকানন্দ জানতে পেরেছেন যে, তাঁর সেখানকার দুজন বন্ধু মিস ম্যাকলাউড এবং মিসেস বুলও আমেরিকা থেকে ইউরোপ হয়ে ভারতে আসছেন। এর মধ্যে মিস ম্যাকলাউড আবার নোব্লের পূর্বপরিচিতা। এই পরিপ্রেক্ষিতেই বিবেকানন্দ মনে করেছেন তাঁদের সঙ্গে এলে মিস নোব্লের দীর্ঘ যাত্রাপথের একঘেয়েমি দূর হতে পারে।
নবম শ্রেণির বাংলা প্রবন্ধ “চিঠি” স্বামী বিবেকানন্দের লেখা একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা। এই রচনায় তিনি ভারতীয় নারীদের প্রতি তাঁর আশাবাদ এবং বিশ্বাসের কথা ব্যক্ত করেছেন। তিনি মনে করেন, ভারতের নারীরা যদি শিক্ষা ও সংস্কৃতির আলোয় আলোকিত হয়, তাহলে তারাই দেশের অগ্রগতির মূল চাবিকাঠি হবে।