নিরুদ্দেশ (১৯৩৯) প্রেমেন্দ্র মিত্রের একটি বিখ্যাত গল্প। এটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গল্প হিসেবে বিবেচিত হয়। গল্পটিতে একজন মধ্যবিত্ত যুবকের জীবনের এক অসঙ্গতিপূর্ণ ও হতাশাজনক অধ্যায় তুলে ধরা হয়েছে।
গল্পের প্রধান চরিত্র অমল। সে একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। সে লেখাপড়া করে চাকরি পায়। কিন্তু চাকরিতে তার মন বসে না। সে নিয়মিত ছুটি নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। সে তার জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পায় না।
একদিন অমল তার বন্ধু সৌমেশের সাথে দেখা করে। সৌমেশও একজন মধ্যবিত্ত যুবক। সেও জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পায় না। তারা দুজনে একসাথে ঘুরে বেড়াতে শুরু করে। তারা বিভিন্ন জায়গায় যায়, বিভিন্ন মানুষের সাথে দেখা করে। কিন্তু তারাও জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পায় না।
অবশেষে অমল সিদ্ধান্ত নেয় যে সে তার জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে না পেলে সে নিরুদ্দেশ হয়ে যাবে। সে তার সবকিছু ছেড়ে চলে যায়। সে কোথাও যায় না, কী করে তাও সে জানে না। সে শুধু নিরুদ্দেশ হয়ে চলে যায়।
গল্পটিতে মধ্যবিত্ত জীবনের অসঙ্গতি ও হতাশার চিত্র ফুটে উঠেছে। গল্পটি পড়লে পাঠকের মনে জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন জাগে।
নিরুদ্দেশ গল্পের নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো।
প্রেমেন্দ্র মিত্রের নিরুদ্দেশ গল্পে বিষয়ভিত্তিক নামকরণের রীতিকে গ্রহণ করা হলেও তা শেষপর্যন্ত ব্যঞ্জনাধর্মী হয়ে উঠেছে। গল্পের প্রথম অংশে কথক কাগজে প্রকাশিত নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন প্রসঙ্গে নির্দিষ্ট ঘটনা উল্লেখ করে বোঝাতে চান যে, নিরুদ্দেশ আসলে ঘটে অভিমানের কারণে। অভিমান মিটলেই নিরুদ্দিষ্ট ঘরে ফিরে আসে। কিন্তু এই গল্পে সোমেশের সংসারের প্রতি আকর্ষণ ছিল না। তার জীবন দিয়ে সে নিরুদ্দিষ্টের ট্র্যাজেডি বুঝতে পেরেছে, যদিও সেই কাহিনি সে কোনো এক শোভনের বলে আপাতভাবে বিবৃত করেছে। জন্ম থেকে নির্লিপ্ত শোভন নিরুদ্দিষ্ট হওয়ার পরে কাগজে নানাভাবে অসংখ্য বিজ্ঞাপন বেরোয়। দু-বছর চলার পরে বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে যায়। তখনই কৌতূহলী শোভন বাড়ি ফেরে। কিন্তু ট্র্যাজেডি হল তখন কেউ তাকে চিনতে পারে না। শোভনের ট্র্যাজেডি ঘনীভূত হয়, যখন নায়েবমশাই শোভনকে টাকা দিয়ে বলেন যে মৃত্যুপথযাত্রী মায়ের কাছে শোভনকেই শোভনের ভূমিকায় অভিনয় করতে হবে। মিথ্যা এভাবে সত্যের জায়গা দখল করে নেয়। প্রকৃত শোভন চিরকালের জন্য বর্তমানে থেকেও নিরুদ্দিষ্ট হয়ে যায় পরিজনদের কাছে। নিরুদ্দিষ্টের এই ট্র্যাজিক পরিণতিতে গল্পের নামকরণ ‘নিরুদ্দেশ’ অত্যন্ত সার্থক হয়ে উঠেছে।
নিরুদ্দেশ গল্প অবলম্বনে শোভন চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।
প্রেমেন্দ্র মিত্রের নিরুদ্দেশ গল্পে কথকের বন্ধু সোমেশ যে নিরুদ্দেশ – বিষয়ক উপকাহিনিটি বলেছে তারই প্রধান চরিত্র শোভন।
পরিচয় – শোভন ছিল এক প্রাচীন জমিদার বংশের একমাত্র উত্তরাধিকারী এবং সে জমিদারি অনেক দুর্দিনের ভিতরেও নিজেকে রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছে। শোভন ছিল ষোলো-সতেরো বছর বয়সের একটি ছেলে, দোহারা গড়ন। নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল যে, ডান কানের কাছে একটি জড়ুল আছে।
নিরুদ্দেশের কারণ – সোমেশের কথা থেকে জানা যায় যে, কোনো অভিমান নয়, শোভন বাড়ি ছেড়েছিল সংসারের প্রতি তার আকর্ষণ না থাকার কারণে। পৃথিবীতে এক ধরনের মানুষ আছে যারা কোনো কিছুতেই বাঁধা পড়ে না। শোভন ছিল সেরকম মানুষ ।
শোভনের ট্র্যাজেডি – দু-বছর পরে বাড়ি ফিরে এসে শোভন এক অদ্ভুত পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। বাড়ির পুরোনো নায়েবমশাই কিংবা খাজাঞ্চিমশাই কেউই তাকে চিনতে পারেননি। তাকে বারবাড়িতে থাকতে বলা হয়। শোভনকে শুনতে হয় তার নিজেরই মৃত্যুসংবাদ।এমনকি বৃদ্ধ বাবাও তাকে চিনতে পারেন না। আর সব থেকে ট্র্যাজিক মুহূর্তটি আসে যখন শোভনের হাতে কিছু টাকা দিয়ে নায়েবমশাই বলেন যে তাকে মা-এর সামনে শোভনের ভূমিকায় অভিনয় করতে হবে। এভাবে তাকে একটা মিথ্যা কাহিনির নায়ক করে তোলা হয়। শোভন এবং সোমেশ – গল্পের সমাপ্তি এই ইঙ্গিত দিয়ে যায় যে, সোমেশই শোভন। কারণ, সোমেশেরও কানের কাছে জড়ুল ছিল, আর ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে সোমেশ জানিয়েছে — সেই জন্যেই গল্প বানানো সহজ হলো।
আরও পড়ুন,
নবম শ্রেণি – বাংলা – নিরুদ্দেশ – বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর
নবম শ্রেণি – বাংলা – নিরুদ্দেশ – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর
নবম শ্রেণি – বাংলা – নিরুদ্দেশ – সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তরগুলি উপন্যাসের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান যাচাই করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। এই প্রশ্নোত্তরগুলির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু, চরিত্র, ভাষা, বিষয়বস্তু এবং লেখকের শিল্পদক্ষতা সম্পর্কে জানতে পারে।