এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

নবম শ্রেণী – ভৌতবিজ্ঞান – বল ও গতি – বিভিন্ন ধরণের বল – প্রশ্ন ও উত্তর

আজকের আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায় “বল ও গতি” এর “বিভিন্ন ধরণের বল” থেকে সহজ ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তর শেয়ার করবো। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণির ইউনিট টেস্ট থেকে বার্ষিক পরীক্ষা এর জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি চাকরি বা বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পরীক্ষাতেও কাজে লাগবে। এই অধ্যায় থেকে স্কুল পরীক্ষা থেকে শুরু করে চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই প্রশ্ন আসে, তাই এই প্রশ্নোত্তরগুলো সবাইকে সাহায্য করবে। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে, যাতে সবাই বুঝতে পারেন। পড়ার শেষে এই অধ্যায়ের মুখ্য বিষয়গুলো আপনার আয়ত্তে চলে আসবে এবং যেকোনো পরীক্ষায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লিখতে পারবেন।

নবম শ্রেণী - ভৌতবিজ্ঞান - বল ও গতি - বিভিন্ন ধরণের বল - প্রশ্ন ও উত্তর

জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর

Contents Show

বলের বিভিন্ন প্রকারভেদগুলি কী কী? প্রতিটির উদাহরণসহ আলোচনা করো।

বলের ক্রিয়া পদ্ধতি (mode of action) এবং তার বৈশিষ্ট্যর ওপর নির্ভর করে বলকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা –

  1. স্পর্শ বল (Contact force) এবং
  2. স্পর্শহীন বল (Non-contact force) বা ক্ষেত্রজনিত বল (Field force)।

স্পর্শ বল (Contact force) – প্রত্যক্ষ সংযোগে থাকা দুই বা ততোধিক বস্তুসমূহের মধ্যে ক্রিয়ারত বলকে স্পর্শ বল বলা হয়।

সংজ্ঞা থেকেই স্পষ্ট যে, এই জাতীয় বলের ক্রিয়া উপলব্ধি করা যায় তখনই যদি যে বস্তু বল প্রয়োগ করে এবং যার উপর তা প্রযুক্ত হয় তাদের পৃষ্ঠতল পরস্পরকে স্পর্শ করে থাকে।

স্পর্শ বলের উদাহরণ – পেশি বল (mascular force), যান্ত্রিক বল (mechanical force), সংঘর্ষজনিত বল (collision force), ঘর্ষণ বল (frictional force), ঘাত, টান, ধাক্কা ইত্যাদি।

স্পর্শহীন বল (Non-contact force) – প্রত্যক্ষ সংযোগে না থাকা দুটি বা তার বেশি বস্তুসমূহের মধ্যে ক্রিয়াশীল বলকে স্পর্শহীন বা ক্ষেত্রজনিত বল বলা হয়। এজাতীয় বলগুলির প্রভাব ‘দূর থেকে ক্রিয়াশীল’ (Action at distance) হয়ে থাকে। নির্দিষ্ট কিছু ভৌতরাশি, যেমন – ভর, তড়িদাধান, চৌম্বক মেরুর মেরুশক্তি ইত্যাদি তাদের সংলগ্ন অঞ্চলে নিজ নিজ প্রভাব সৃষ্টি করতে চাওয়ার ফলাফল হিসেবেই এই বিশেষ ধরনের বলগুলির উদ্ভব ঘটে।

স্পর্শহীন বলের উদাহরণ – মহাকর্ষীয় বল, তড়িৎ বল, চৌম্বক বল ইত্যাদি।

পেশি স্পর্শবলের উদাহরণসহ সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

পেশি বল (Mascular force) – জীবদেহের বিভিন্ন পেশিতে এজাতীয় বল উৎপন্ন হয়। প্রাণীদেহে খাদ্য থেকে সংগৃহীত শক্তি বিভিন্ন জৈবনিক প্রক্রিয়ার দ্বারা উৎপন্ন হয়ে জীবকে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক কার্যকলাপের সামর্থ্য জোগায়।

পেশি বলের উদাহরণ – ভারী ওজন তোলা, রিকশা টানা, রোলারকে ধাক্কা দেওয়া বা টানা, দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে যেমন – জমি চাষ করতে গোরু বা ষাঁড়, জিনিসপত্র বা গাড়িবাহক হিসেবে ঘোড়া বা উট, ভারী কাঠের গুঁড়ি সরাতে হাতির শারীরিক বলের সাহায্য গ্রহণ ইত্যাদি।

যান্ত্রিক স্পর্শবলের উদাহরণসহ সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

যান্ত্রিক বল (Mechanical force) – কোনো বস্তুকে যন্ত্রের সাহায্যে গতিশীল করা হলে যন্ত্র দ্বারা সংশ্লিষ্ট বস্তুটিতে প্রযুক্ত বলকে যান্ত্রিক বল বলা হয়। মনে রাখা প্রয়োজন যে, যন্ত্র এক্ষেত্রে নিজে থেকে বল উৎপাদন করতে পারে না। অন্য কোনো শক্তি উৎসের সাহায্যে শক্তি সরবরাহ করে তাকে বল প্রয়োগে সহায়তা করা হয় মাত্র।

যান্ত্রিক বলের উদাহরণ – বাষ্প ইঞ্জিন, শস্য পেষাই, গম ভাঙানো ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত উইন্ড টারবাইন যন্ত্রে, প্রবহমান জলের শক্তিকে ব্যবহার করে চালানো বিদ্যুৎ উৎপাদক জেনারেটর যন্ত্রে সৃষ্ট বল কাজে লাগানো হয়।

সংঘাত স্পর্শবলের উদাহরণসহ সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

সংঘাত বল (Collision force) – একটি স্থির ও একটি গতিশীল অথবা দুই বা ততোধিক গতিশীল বস্তুর মধ্যে সংঘটিত যে আন্তঃক্রিয়ার (interaction) ফলে সংশ্লিষ্ট এক বা একাধিক বস্তুর ভরবেগের নির্দিষ্ট পরিমাণ পরিবর্তন ঘটে, তাকে সংঘাত বা সংঘর্ষ বলে। সংঘাত কালে বা সংঘর্ষের সময় ক্রিয়াশীল বলকে সংঘাত বল বলে।

সংঘাত বলের উদাহরণ – দুটি গতিশীল বল, বাস ও মোটরগাড়ি, ব্যাট ও বলের মধ্যে সংযোগে ক্রিয়াশীল বল।

ঘর্ষণ স্পর্শবলের উদাহরণসহ সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

ঘর্ষণ বল (Friction force) – সংস্পর্শে থাকা দুটি তলের একটিকে অন্যটির সাপেক্ষে গতিশীল করা হলে বা করার চেষ্টা করা হলে, ওই দুই তলের স্পর্শ অঞ্চল বরাবর গতি বা গতি উৎপাদনের চেষ্টার বিপরীতে যে বাধাদানকারী বল ক্রিয়া করে, তাকে ঘর্ষণ বল বলে।

ঘর্ষণ বলের উদাহরণ – রাস্তার ওপর দিয়ে চলা বাইসাইকেলের গতি, খেলার মাঠে ঘাসের উপর দিয়ে গতিশীল বলের থেমে যাওয়া, দেশলাই কাঠি জ্বালানো ইত্যদি ঘর্ষণের ক্রিয়ার দৃষ্টান্ত।

স্পর্শহীন বা ক্ষেত্রজনিত তড়িৎ বল -এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

তড়িৎ বল (Electrical force) – একটি আহিত বা তড়িদ্‌গ্রস্ত বস্তু দ্বারা অপর একটি অনাহিত বা বিপরীত তড়িদ্‌গ্রস্ত বস্তুর মধ্যে ক্রিয়াশীল আকর্ষণী বা বিকর্ষণী বলকে তড়িৎ বল বলা হয়।

তড়িৎ বলের উদাহরণ – শ্যাম্পু করা চুলে আঁচড়ানো চিরুনি দ্বারা ছোটো কাগজের টুকরোদের আকর্ষণ, বজ্রপাতের কারণে বাড়ি-ঘর, উঁচু গাছ, প্রাণীদেহ ইত্যাদি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঘটনা, সমজাতীয় আধানে আহিত দুটি বস্তুর পারস্পরিক বিকর্ষণ।

চিরুনিতে উৎপন্ন স্থির তড়িৎ-বল

স্পর্শহীন বা ক্ষেত্রজনিত মহাকর্ষ বল -এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

মহাকর্ষ বল (Gravitational force) – মহাবিশ্বের যে-কোনো দুটি বস্তু পরস্পরকে তাদের কেন্দ্র সংযোজী রেখা বরাবর যে বিশেষ ধরনের বল দিয়ে আকর্ষণ করে, তাকে মহাকর্ষ বল বলে। এই বলের মান বস্তু দুটির ভরের গুণফলের সমানুপাতিক এবং তাদের অন্তর্বর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক।

বস্তু দুটির মধ্যে একটি পৃথিবী হলে তাদের মধ্যে ক্রিয়ারত মহাকর্ষকে বলা হয় অভিকর্ষ বা ওজন।

মহাকর্ষ বলের উদাহরণ – সূর্যের চারপাশে নির্দিষ্ট কক্ষপথে পৃথিবীর আবর্তন, জোয়ারভাটা ইত্যাদি মহাকর্ষের এবং বৃন্তচ্যুত ফলের মাটিতে পড়া, পাহাড় থেকে নদীর সমুদ্র অভিমুখে গতি ইত্যাদি অভিকর্ষের উদাহরণ।

স্পর্শহীন বা ক্ষেত্রজনিত চৌম্বক বল -এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

চৌম্বক বল (Magnetic Force) – চৌম্বক পদার্থ (যেমন – লোহা, কোবাল্ট, নিকেল ইত্যাদি) এবং চুম্বকের মধ্যে অথবা দুটি চুম্বকের মধ্যে সক্রিয় বলকে চৌম্বক বল বলা হয়।

চৌম্বক বলের উদাহরণ – পেরেক বা লৌহচূর্ণের চুম্বকের গায়ে আটকে যাওয়া, চুম্বকের বিপরীত মেরুর মধ্যে আকর্ষণ বা সমজাতীয় মেরুর মধ্যে বিকর্ষণ এ জাতীয় বলের উদাহরণ।

স্পর্শ বল কাকে বলে?

যে-কোনো দুটি বস্তু কঠিন, তরল বা গ্যাস স্পর্শ করে থাকলে বস্তু দুটির মধ্যে নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুসারে, ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। একেই স্পর্শ বল বলে। এই বলের প্রকৃতি তড়িৎচুম্বকীয়। স্পর্শতলের লম্ব দিকে এই বলের উপাংশকে লম্ব প্রতিক্রিয়া ও তলের সমান্তরাল উপাংশকে ঘর্ষণ বলে। কঠিন ও তরলের স্পর্শতলের আরও কয়েকটি স্পর্শ বল সৃষ্টি হয়, যেমন – প্লবতা, সান্দ্রতা ইত্যাদি।

টান -এর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার উদাহরণসহ সংক্ষিপ্ত পরিচয় লেখো।

মহাকর্ষ বল ছাড়াও বলবিজ্ঞানের আলোচনায় বিভিন্ন ধরনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বলের ধারণা বিবেচনা করার প্রয়োজন হয়। এগুলি হল –

টান (Pull or Tension) – দুটি বস্তুর পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বল কোনো জড় মাধ্যমের সাহায্যে প্রযুক্ত হয়ে বস্তু দুটিকে পরস্পরের কাছাকাছি আনতে চায় বা তাদের দূরে সরে যেতে বাধা দেয়, তাকে টান বলে। টান নমনীয় বস্তু, যেমন – দড়ি বা সুতো ইত্যাদির মাধ্যমে প্রযুক্ত হতে পারে।

টান -এর উদাহরণ – হুকে বাঁধা দড়ির সাহায্যে একটি বস্তুকে ঝোলানো হল। এক্ষেত্রে বস্তুর ওজনের দরুন দড়ির

টান -এর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার উদাহরণসহ সংক্ষিপ্ত পরিচয় লেখো।

মাধ্যমে একটি নিম্নমুখী বল হুকের উপরে ক্রিয়া করে, হুকও দড়ি দ্বারা সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া বল বস্তুর ওপর প্রয়োগ করে। এখানে ক্রিয়ার ফলে হুক বস্তুর দিকে এবং প্রতিক্রিয়ার ফলে বস্তু হুকের দিকে আকৃষ্ট হয়। এই অবস্থায় দড়ির দৈর্ঘ্য বরাবর টান (T) ক্রিয়া করছে বলা হয়।

টান -এর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার উদাহরণসহ সংক্ষিপ্ত পরিচয় লেখো।

কপিকলের মাধ্যমে সুতো বা দড়ির সাহায্যে দুটি বস্তু ঝুলিয়ে দিলে দড়ির দুই দিকের অংশে টান ক্রিয়া করে। অপ্রসার্য দড়ি ও উপেক্ষণীয় ভরের বস্তুর ক্ষেত্রে যথাক্রমে স্থিতিস্থাপক বল ও ঘর্ষণের অনুপস্থিতিতে টান সর্বত্র সমান হয়।

একইভাবে ইঞ্জিন ট্রেনের বগির উপর সংযোগকারী লোহার শিকলের মাধ্যমে টান প্রয়োগ করে।

প্রযুক্ত বলের ক্রিয়ায় সংযোজী মাধ্যম অর্থাৎ দড়ি, শিকল ইত্যাদি স্থির থাকলে তার দৈর্ঘ্য বরাবর সর্বত্র টান সমান থাকে ও তা প্রযুক্ত বলের সমান হয়। অপ্রতিমিত বল কাজ করলে দড়ি বা শিকলের দৈর্ঘ্য বরাবর লব্ধি বলের প্রয়োগবিন্দুর সরণের বিপরীত টান ক্রমশ কমতে থাকে।

ধাক্কা -র ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার উদাহরণসহ সংক্ষিপ্ত পরিচয় লেখো।

ধাক্কা (Push) – দুটি বস্তুর পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বল বস্তু দুটিকে পরস্পর থেকে দূরে সরাতে চায় অথবা কাছে আসতে বাধা দেয়, তাকে ধাক্কা বলে। ধাক্কা যদি একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রফল জুড়ে ক্রিয়াশীল হয়, তবে তাকে ঘাত (Thurst) বলা হয়। ধাক্কা শুধুমাত্র দৃঢ় বস্তুর মাধ্যমেই প্রযুক্ত হতে পারে, নমনীয় বস্তুর মাধ্যমে নয়।

ধাক্কা -র উদাহরণ – বালক দ্বারা দেয়ালে প্রযুক্ত বল এবং দেয়াল কর্তৃক বালকটির উপর প্রযুক্ত প্রতিক্রিয়া; ক্রিকেট খেলায় ব্যাট ও বলের সংঘাতের সময় প্রযুক্ত ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বল।

ধাক্কা -র ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার উদাহরণসহ সংক্ষিপ্ত পরিচয় লেখো।

আকর্ষণ-বিকর্ষণ -এর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার উদাহরণসহ সংক্ষিপ্ত পরিচয় লেখো।

আকর্ষণ-বিকর্ষণ (Attraction-Repulsion) – দূর থেকে অর্থাৎ, সংস্পর্শ ছাড়াই দুটি বস্তুর মধ্যে সংঘটিত আন্তঃক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বল বস্তু দুটিকে পরস্পরের কাছে আনতে চায়, তাকে আকর্ষণ (Attraction) এবং ওই বল যদি দুটি বস্তুকে পরস্পর থেকে দূরে সরাতে চায়, তবে তাকে বিকর্ষণ (Repulsion) বলে।

বস্তু দুটির মধ্যে কোনো জড় মাধ্যম না থাকলেও এই বল ক্রিয়া করতে পারে। বলের মান মাধ্যমের প্রকৃতি নিরপেক্ষ (যেমন – মহাকর্ষ বল) বা মাধ্যমের প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল (যেমন – তড়িৎ ও চুম্বকীয় বল) দুই-ই হতে পারে।

লম্ব প্রতিক্রিয়া -র ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার উদাহরণসহ সংক্ষিপ্ত পরিচয় লেখো।

লম্ব প্রতিক্রিয়া (Normal reaction) – সংস্পর্শে থাকা দুটি বস্তুর তলে একটি বস্তু লম্বভাবে বল প্রয়োগ করলে অন্য বস্তুর তল প্রথম বস্তুটির একই রেখা বরাবর বিপরীত অভিমুখে যে প্রতিক্রিয়া দেয়, তাকেই লম্ব প্রতিক্রিয়া বলা হয়।

লম্ব প্রতিক্রিয়ার উদাহরণ – টেবিলের উপর একটি বই রাখলে টেবিলের অনুভূমিক তলে বইটি উল্লম্বরেখায় নীচের দিকে তার ওজনের সমান বল প্রয়োগ করে। এই বলের প্রতিক্রিয়া হিসেবে টেবিল একটি সমান মানের বল খাড়া উল্লম্বদিকে প্রয়োগ করে। এই বলটিই লম্ব প্রতিক্রিয়া (N)।

বইটি অনুভূমিক তলের পরিবর্তে একটি নততলের উপর রাখলে তলটির উপর বইটির সমগ্র ওজন W -এর বদলে তার একটি উপাংশ W cosθ ক্রিয়াশীল হয়। সুতরাং, নততলের লম্ব অভিমুখে প্রযুক্ত প্রতিক্রিয়া অর্থাৎ, লম্ব প্রতিক্রিয়া W cosθ যা ওজন অপেক্ষা কম হয়।

লম্ব প্রতিক্রিয়া -র ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার উদাহরণসহ সংক্ষিপ্ত পরিচয় লেখো।

স্প্রিং বল -এর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার উদাহরণসহ সংক্ষিপ্ত পরিচয় লেখো।

স্প্রিং বল (Spring force) – যে-কোনো স্প্রিংকে সংকুচিত বা প্রসারিত করলে স্প্রিং -এর মধ্যে একটি প্রত্যানয়ক বল (Re-storing force) সৃষ্টি হয়। একে স্প্রিং বল বলা হয়। এই বলের মান স্প্রিং -এর দৈর্ঘ্য সংকোচন বা প্রসারণের সমানুপাতিক হয়। F বলের ক্রিয়ায় স্প্রিং – এর দৈর্ঘ্য পরিবর্তন x হলে স্প্রিং যে সমান ও বিপরীতমুখী বল প্রয়োগ করে তার মান Fe ∝ x বা, Fe = – F = – kx হয়। ঋণাত্মক চিহ্ন নির্দেশ করে প্রতিক্রিয়া F -এর অভিমুখ সরণের বিপরীত হয়। k -কে বলা হয় স্প্রিং ধ্রুবক (Spring constant)। দড়ির টানের ক্ষেত্রেও দড়িটি নমনীয় হলে লেখা যায় T = – kx। এক্ষেত্রে ধ্রুবক k -এর মান দড়ির উপাদানের স্থিতিস্থাপকতার ওপর নির্ভর করে।

উৎপত্তি ও প্রকৃতিগতভাবে মহাবিশ্বে বলের ক্রিয়াকে কত ভাগে ভাগ করা হয়?

মহাকর্ষ ছাড়া বলবিজ্ঞানের আলোচনায় ব্যবহৃত অন্যান্য বলগুলি তড়িৎচুম্বকীয় বল থেকেই সৃষ্টি হয়। আণবিক বা পারমাণবিক স্তরে গিয়ে এই সমস্ত বলগুলির সৃষ্টির উৎস ও কারণ ব্যাখ্যা করা জটিল হয়। এই কারণে বিস্তৃত বস্তুর ক্ষেত্রে স্থূলভাবে (empirically) এ জাতীয় বলগুলির ধর্ম জেনে নিয়ে তাদের পৃথক পৃথক বল হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

উৎপত্তি ও প্রকৃতিগতভাবে মহাবিশ্বে যতরকম বলের ক্রিয়া দেখা যায় তাদের চারটি মূল শ্রেণিতে ভাগ করা হয় –

  1. মহাকর্ষ বল (Gravitational force),
  2. তড়িৎচুম্বকীয় বল (Electromagnetic force),
  3. শক্তিশালী নিউক্লিয় বল (Strong nuclear force),
  4. দুর্বল নিউক্লিয় বল (Weak nuclear force)।

এদের সাধারণভাবে মৌলিক বল (Fundamental force) বলা হয়।

একটি তারের একপ্রান্ত দৃঢ় অবলম্বনে আটকে অপর প্রান্তে ওজন ঝোলালে তারের টানের উৎপত্তি হয় কীভাবে?

দৃঢ় অবলম্বনে তারের একপ্রান্ত আটকে অন্যপ্রান্ত থেকে ওজন ঝোলালে ওই ওজন বলের প্রতিক্রিয়া হিসেবে তারটিতে টানের উদ্ভব ঘটে। ওজনের মান তারের অসহভার (তারটি সর্বোচ্চ যে ভার বহনে সক্ষম) অপেক্ষা কম হলে ওজনের প্রভাব প্রতিমিত করে বস্তুটিকে সাম্যে রাখার উদ্দেশ্যে তারটির মধ্যে, তার স্থিতিস্থাপকতা ধর্মের প্রকাশ হিসেবে একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়া বল সৃষ্টি হয়। এই বলই তারের সমগ্র দৈর্ঘ্য জুড়ে বিভিন্ন অংশে টান হিসেবে কাজ করে। তারটির নিজস্ব ওজন নগণ্য হলে সর্বত্র টানের মান সমান থাকে।

একটি তার বা সুতোর বিভিন্ন অংশে মধ্যবর্তী বল হিসেবে টান কীভাবে কাজ করে চিত্রসহ ব্যাখ্যা করো।

একটি তার বা সুতোর বিভিন্ন অংশে মধ্যবর্তী বল হিসেবে টান কীভাবে কাজ করে চিত্রসহ ব্যাখ্যা করো।

ধরি, AB একটি তার বা সুতো। এর মধ্যবর্তী C বিন্দু থেকে W ওজনের একটি বস্তু ঝোলানো হল। এর ফলে প্রতিক্রিয়া বল হিসেবে বল তারের CA ও CB অংশে ক্রিয়াশীল হবে। অর্থাৎ, C বিন্দুতে T, T, W তিনটি বল এমনভাবে ক্রিয়াশীল হবে যাতে লব্ধি বল শূন্য হয়। এক্ষেত্রে T হল তারের টান। যদি C বিন্দুটি AB -এর ঠিক মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত না হয়, তবে CA ও CB অংশে সুতোর টান সমান হবে না।

একটি তার বা সুতোর বিভিন্ন অংশে মধ্যবর্তী বল হিসেবে টান কীভাবে কাজ করে চিত্রসহ ব্যাখ্যা করো।

ধরি, CA অংশে টান T1 ও CB অংশে টান T2। এক্ষেত্রেও C বিন্দুতে T1, T2, W তিনটি বল এমনভাবে ক্রিয়াশীল হবে যাতে লব্ধি বল শূন্য হয়। এক্ষেত্রে T1 ও T2 হল যথাক্রমে CA ও CB অংশে তারের টান। এই টানের সঙ্গে সুতোটি অনুভূমিকের সঙ্গে যে কোণ উৎপন্ন করে তার একটি সম্পর্ক রয়েছে। যেমন – প্রথম ছবিতে ∠A ও ∠B সমান, তাই টান সমান কিন্তু দ্বিতীয় ছবিতে ∠A = θ1, এবং ∠B = θ2 এবং θ1 > θ2। এক্ষেত্রে দেখা যায় T2 > T1। অর্থাৎ, অনুভূমিক দিকের সঙ্গে সুতোর যে অংশ দ্বারা উৎপন্ন কোণের মান কম সেই অংশে টান বেশি হয়।

ঘাত বল কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

ঘাত বল (Impulsive force) – অতি বৃহৎ মানের কোনো বল কোনো বস্তুর উপর যদি এত অল্প সময়ের জন্য ক্রিয়াশীল হয় যে বলের ক্রিয়াকালীন সময়ে বস্তুর সরণ উপেক্ষণীয় হয়ে থাকে তবে ওই বলকে ঘাত বল বা আবেগী বল বলে।

ঘাত বলের উদাহরণ – ব্যাট ও বলের সংঘাত, ক্যারাম বোর্ডে স্ট্রাইকার ও খুঁটির মধ্যে সংঘাত, তারের বাদ্যযন্ত্রে তারের উপর সৃষ্ট জোরালো আঘাত।

বলের ঘাত বলতে কী বোঝায়? দেখাও যে, বলের ঘাত মানগতভাবে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের সমান।

বলের ঘাত (Impulse of force) – কোনো বস্তু বা বস্তুকণার উপর ক্রিয়াশীল স্থির মানের বল এবং ওই বলের ক্রিয়াকালীন সময়ের গুণফলকে বলা হয় বলের ঘাত।

ঘাতের রাশিমালা – প্রযুক্ত বলের মান F এবং তার ক্রিয়াকালীন সময়। হলে বলের ঘাত,

J = F⋅t = ma⋅t

বা, J = \(m\frac{\left(v-u\right)}t\cdot t \)

বা, J = mv – mu

∴ বলের ঘাত = অন্তিম ভরবেগ (p2) – প্রাথমিক ভরবেগ (p1)

∴ বলের ঘাত = ভরবেগের পরিবর্তন।

বোধমূলক প্রশ্নোত্তর

একটি ভারী ব্লক সুতো দিয়ে ঝোলানো আছে এবং এর নীচে একই প্রকারের একটি সুতো বাঁধা আছে। নীচে সুতোর টান ধীরে ধীরে বাড়ালে উপরের সুতো ছিঁড়ে যাবে – কেন?

প্রথম ক্ষেত্রে (যখন নীচের সুতোয় টান প্রযুক্ত হয়নি) উপরের অর্ধের সুতোর টান (T1) ভারী ব্লকের ওজনকে (W) প্রতিমিত করে দেয় বলে ঝুলন্ত অবস্থায় ব্লকটি সাম্যে থাকে। সুতরাং, এই অবস্থায় W = T1 হয়।

একটি ভারী ব্লক সুতো দিয়ে ঝোলানো আছে এবং এর নীচে একই প্রকারের একটি সুতো বাঁধা আছে। নীচে সুতোর টান ধীরে ধীরে বাড়ালে উপরের সুতো ছিঁড়ে যাবে – কেন?

নীচের অর্ধে থাকা সুতোর টান (T2) ধীরে ধীরে বাড়ানো হলে T2 -এর একটি ঊর্ধ্বসীমা বা নির্দিষ্ট মান পর্যন্ত উপরের অর্ধের সুতোর টানও পরিবর্তিত হয়ে (W + T2) -এর সমান হয়, ফলে ব্লকটি তার সাম্য বজায় রাখতে পারে। T2 -এর মান ওই ঊর্ধ্বসীমা অতিক্রম করলে (W + T2) -এর সমষ্টি উপরের সুতোর অসহভার (সর্বোচ্চ যে ভার সুতো সহ্য করতে সক্ষম) অপেক্ষা বেশি হয়ে যায়। টান বৃদ্ধির জন্য নীচের অর্ধের সুতোয় খাড়া নীচের দিকে প্রযুক্ত অপ্রতিমিত বল ব্লকটিকে নীচের দিকে গতিশীল করে। তাই উপরের সুতো ছিঁড়ে যায়।

কীভাবে একটি সুতোর মুক্তপ্রান্তে প্রযুক্ত নিম্নাভিমুখী বল টান সৃষ্টি করে, এবং টান বৃদ্ধি পেলেও ওই সুতোটি ছিঁড়ে না এমন পরিস্থিতি কিভাবে ঘটে?

নীচের সুতোর মুক্তপ্রান্তে প্রযুক্ত নিম্নাভিমুখী বল সুতোটিতে টান (T2) সৃষ্টি করে। T2 -এর মান যতক্ষণ সুতোর অসহ ভার অপেক্ষা কম থাকে ততক্ষণ টান বৃদ্ধি পেলেও ওই সুতোটি ছেঁড়ে না।

একটি সুতো ছাদ থেকে ঝুলছে। সুতোর নীচে একটি বস্তু বাধা আছে এবং তার নীচে একই প্রকারের অপর একটি সুতো বাধা আছে। সুতোটির শেষপ্রান্ত ধরে হঠাৎ জোরে টানলে কী হবে?

শেষপ্রান্ত ধরে হঠাৎ জোরে টানলে প্রযুক্ত বল নীচের সুতোর স্থিতিজাড্য বিঘ্নিত করে ফলে এই সুতোটি ছিঁড়ে যায়। হঠাৎ টানার ফলে ব্লকের স্থিতিজাড্য বিনষ্ট হওয়ার সুযোগ পায় না। এক্ষেত্রে তাই উপরের সুতোর ওপর শুধু বস্তুর ওজন ক্রিয়া করে। একারণে উপরের সুতো ছেঁড়ে না।

বৃষ্টিভেজা রাস্তায় ছোটো ছোটো পা ফেলতে হয় কেন?

হাঁটার সময় কোনো ব্যক্তি রাস্তার উপর পা দিয়ে তির্যকভাবে বল প্রয়োগ করেন। তৃতীয় গতিসূত্র মেনে মাটি ব্যক্তিকে সমমানের বল বিপরীত অভিমুখে প্রতিক্রিয়া হিসেবে ফিরিয়ে দেয়। এই প্রতিক্রিয়ার উল্লম্ব উপাংশ ব্যক্তির ওজনকে প্রতিমিত করে এবং অনুভূমিক উপাংশ ব্যক্তির গতি উৎপাদনের প্রবণতার বিপরীতে ক্রিয়াশীল ঘর্ষণ বল অপেক্ষা বেশি হলে ব্যক্তি সম্মুখ গতি লাভ করেন।

বৃষ্টিভেজা রাস্তায় ছোটো ছোটো পা ফেলতে হয় কেন?

অমসৃণ মেঝে বা বৃষ্টিভেজা রাস্তায় ঘর্ষণ বলের মান অত্যন্ত কম হয়। তাই বৃষ্টিভেজা রাস্তায় বড়ো বড়ো পা ফেললে রাস্তার প্রতিক্রিয়া বলের অনুভূমিক উপাংশ (H1) ঘর্ষণ বল (F) অপেক্ষা অনেক বেশি হয়।

বৃষ্টিভেজা রাস্তায় ছোটো ছোটো পা ফেলতে হয় কেন?

ফলে অনুভূমিক উপাংশের মান একটি স্বল্পসীমা লঙ্ঘন করে গেলেই অপ্রতিমিত বলের ক্রিয়ায় ব্যক্তির সামনের দিকে পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তাই অনুভূমিক উপাংশ যেন কখনোই ঘর্ষণ বল অপেক্ষা খুব বেশি না হয়ে পড়ে তা নিশ্চিত করার জন্যই বৃষ্টিভেজা রাস্তায় ছোটো ছোটো পদক্ষেপে বা পা টিপে হাঁটতে হয়। বৃষ্টিভেজা রাস্তায় ছোটো ছোটো পা ফেললে রাস্তায় প্রতিক্রিয়ার অনুভূমিক উপাংশ (H2) ঘর্ষণ বল (F) অপেক্ষা খুব বেশি না হওয়ায় অপেক্ষাকৃত সহজে ভেজা রাস্তার উপর দিয়ে হাঁটা সম্ভব হয়।

কোন্ ক্ষেত্রে দড়ির টান বেশি হবে?
(a) দুজন দড়ির দুপ্রান্ত ধরে F বলে টানছে।
(b) দড়ির একপ্রান্ত কোনো দৃঢ় অবলম্বনের সঙ্গে বেঁধে অন্য প্রান্তটি 2F বলে টানা হচ্ছে।

প্রথম ক্ষেত্রে

যখন দুটি দল দড়ির দুপ্রান্ত ধরে F বলে বিপরীত দিকে টানে তখন দড়ির টান F।

দ্বিতীয় ক্ষেত্রে

যখন দড়ির একপ্রান্ত একটি দৃঢ় অবলম্বনের সঙ্গে বেঁধে দড়ি টানাটানি খেলা অপর প্রান্ত ধরে 2F বলে টানা হয় তখন দড়ির টান 2F অর্থাৎ, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে দড়ির টান বেশি হবে।

M ভরের একটি বস্তুকে তারের সাহায্যে স্থির গতিবেগে নীচের দিকে নামনো হচ্ছে। তারের টান কত হবে? ধরে নাও, তারটি ভারহীন ও অপ্রসার্য।

তারটি ভারহীন ও অপ্রসার্য হওয়ায় ওর দৈর্ঘ্যের যে-কোনো অংশে টান (T) সমান হয়। M ভরের বস্তু যেহেতু স্থির গতিবেগে নীচে নামে ওর নিম্নাভিমুখী ত্বরণ শূন্য। তাই তারের টান এক্ষেত্রে বস্তুর ওজনের সমান ও বিপরীত।

∴ তারের টান T = Mg, g হল অভিকর্ষজ ত্বরণ।

রোলারকে ঠেলা অপেক্ষা টানা সহজ – ব্যাখ্যা করো।

রোলারকে ঠেলা অপেক্ষা টানা সহজ - ব্যাখ্যা করো।

রোলার ঠেলা অপেক্ষা টানা সুবিধাজনক। রোলারকে যখন ঠেলা হয় তখন বল P আনতভাবে নীচের দিকে ক্রিয়া করে। প্রযুক্ত বলের উপাংশ Px রোলারকে সামনের দিকে চালনা করে ও Py উপাংশ নীচের দিকে ক্রিয়া করার ফলে রোলারের ওজন কার্যত বৃদ্ধি পায়। তাই রোলারকে ঠেলতে অনেক বেশি বল লাগে।

রোলারকে ঠেলা অপেক্ষা টানা সহজ - ব্যাখ্যা করো।

আবার রোলার যখন টানা হয় তখন প্রযুক্ত বল P উপরের দিকে ক্রিয়া করে। এক্ষেত্রে P -এর অনুভূমিক উপাংশ Px রোলারকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আর উল্লম্ব উপাংশ Py রোলারের ওজনের বিপরীত দিকে ক্রিয়া করার ফলে রোলারের ওজন হ্রাস পায়। তাই রোলার টানা সহজ হয়।

পার্থক্যধর্মী প্রশ্নোত্তর

ধাক্কা (Push) ও টান (Pull) বলের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

ধাক্কা (Push) ও টান (Pull) বলের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়ধাক্কা (Push)টান (Pull)
সংজ্ঞাদুটি বস্তুর পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বল বস্তুদুটিকে পরস্পর থেকে দূরে সরাতে চায় অথবা বস্তুদুটিকে পরস্পরের কাছে আসতে বাধা দেয়, তাকে ধাক্কা বলে।দুটি বস্তুর পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বল কোনো জড় মাধ্যমের সাহায্যে প্রযুক্ত হয়ে বস্তুদুটিকে পরস্পরের কাছে আনতে চায় বা পরস্পরের থেকে দূরে সরে যেতে বাধা দেয়, তাকে টান বলে।
বস্তুর প্রকৃতিধাক্কা নমনীয় বস্তুর মাধ্যমে প্রযুক্ত হয় না। কেবলমাত্র দৃঢ় বস্তুর মাধ্যমে প্রযুক্ত হয়।টান নমনীয় (যেমন – দড়ি, সুতো) বস্তু বা কঠিন দৃঢ় বস্তুর মাধ্যমেও প্রযুক্ত হয়।
বস্তুদুটির মধ্যবর্তী দূরত্বধাক্কার ফলে দুটি বস্তু পরস্পরের থেকে দূরে সরে যেতে চায়।টানের প্রভাবে দুটি বস্তু একে অপরের কাছাকাছি আসতে চায়।
সংস্পর্শের প্রকারভেদবস্তু দুটি পরস্পরের সংস্পর্শে এলে তবে ধাক্কার উদ্ভব ঘটে।বস্তু দুটি অন্য কোনো বস্তুর মাধ্যমে পরস্পরের সংস্পর্শে এলে টানের উৎপত্তি ঘটে।
ক্রিয়াক্ষেত্রধাক্কা, দুটি বস্তুর নির্দিষ্ট ক্ষেত্রফল জুড়ে ক্রিয়া করে।টান, বস্তু মাধ্যমের (যেমন – দড়ি, শিকল) দৈর্ঘ্য বরাবর ক্রিয়া করে।

ঘাত বল ও বলের ঘাতের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

ঘাত বল ও বলের ঘাতের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –

পার্থক্যের বিষয়ঘাত বল (Impulsive force)বলের ঘাত (Impulse of force)
সংজ্ঞাকোনো বস্তুর উপর বৃহৎ মানের বল খুব অল্প সময়ের জন্য ক্রিয়া করলে, সেই বলকে ঘাত বল বলে।কোনো বস্তুর উপর কোনো বল কিছু সময়ব্যাপী ক্রিয়া করলে, ওই বলের মান ও বলের ক্রিয়াকালের গুণফলকে বলের ঘাত বলে।
প্রভাবঘাত বলের প্রভাবে কোনো বস্তুর মধ্যে অল্প সময়ে বৃহৎ ত্বরণের সৃষ্টি হয়।বলের ঘাতের প্রভাবে কোনো বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তন হয়।
কারণ ও ফলঘাত বলকে কারণ বলা যায়।বলের ঘাত হল ঘাত বলের ফল।
পরিমাপঘাত বলকে P = ma অর্থাৎ ভর ও ত্বরণের গুণফল দ্বারা পরিমাপ করা হয়।বলের ঘাতকে P⋅t দ্বারা অর্থাৎ ভরবেগের পরিবর্তন দ্বারা পরিমাপ করা হয়।
একক ও মাত্রীয় সংকেতঘাত বলের SI একক newton (N) এবং মাত্রীয় সংকেত [MLT-2]।বলের ঘাতের SI একক kg⋅m⋅s-1 বলের ঘাতের মাত্রীয় সংকেত [MLT-1]।

গাণিতিক প্রশ্নাবলি

প্রয়োজনীয় সূত্রাবলি

বলের ঘাত = প্রযুক্ত বল × বলের ক্রিয়াকালীন সময় = ভরবেগের পরিবর্তন।

a ত্বরণ নিয়ে গতিশীল একটি লিফ্টে বস্তুর প্রকৃত ওজন = mg, আপাত ওজন = R হলে, R = mg – ma

একটি বস্তুর ওপর বাইরে থেকে 6 N বল প্রযুক্ত হওয়ায় ভরবেগ 10 kg-m/s থেকে বৃদ্ধি পেয়ে 40 kg-m/s হল। প্রযুক্ত বলের ঘাত কত? কত সময় ধরে বস্তুটির ওপর বল ক্রিয়াশীল ছিল?

বস্তুটির ভরবেগের পরিবর্তন = 40 – 10 = 30 kg-m/s।

আমরা জানি, বলের ঘাত = ভরবেগের পরিবর্তন

∴ বলের ঘাত = 30 kg·m·s-1

আবার, বলের ঘাত = প্রযুক্ত বল × সময় (t)

∴ 30 = 6 × t

বা, t = 5 s

সুতরাং, বস্তুটির ওপর 5 s ধরে বল প্রযুক্ত হয়েছিল।

49 kg ভরের একটি বস্তুর ওপর একটি ঊর্ধ্বমুখী বল ক্রিয়া করায় বস্তুটি 7.8 m/s2 ত্বরণসহ নীচে নামে। kg-f এককে বলটির মান নির্ণয় করো।

49 kg ভরের একটি বস্তুর ওপর একটি ঊর্ধ্বমুখী বল ক্রিয়া করায় বস্তুটি 7.8 m/s2 ত্বরণসহ নীচে নামে। kg-f এককে বলটির মান নির্ণয় করো।

বস্তুর ওপর ক্রিয়াশীল ঊর্ধ্বমুখী বল R < mg হলে,

নিম্নাভিমুখে ক্রিয়াশীল লব্ধি বল = mg – R (mg = বস্তুর ওজন)

শর্তানুসারে,

mg – R = ma (a = বস্তুর ত্বরণ)

বা, R = m(g – a)

বা, R = 49(9.8 – 7.8)

বা, R = 98 N

বা, R = \(\frac{98}{9.8}\)

বা, R =10 kg-f

∴ ঊর্ধ্বমুখী বলের মান হল 10 kg-wt।

50 kg ভরের একজন লোক একটি লিফ্টে অবস্থিত একটি ওজন মাপার যন্ত্রের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। লিফ্টটি সমত্বরণে চলতে শুরু করায় ওজন মাপার যন্ত্রে লোকটির ওজন 45 kg-wt দেখায়। লিফ্টটির ত্বরণ নির্ণয় করো ও গতির অভিমুখ লেখো।

লোকটির প্রকৃত ওজন (mg) = 50 × 9.8 N

এবং আপাত ওজন (R) = 45 × 9.8 N

ধরা যাক, লিফ্টটি a ত্বরণ নিয়ে চলছে। যেহেতু, ব্যক্তির ওজনের আপাত হ্রাস ঘটেছে, সুতরাং লিফ্টটি সমত্বরণে নীচে নামছে।

এক্ষেত্রে, R = mg – ma

বা, \(a=\frac{mg-R}m\)

বা, \(a=\frac{50\times9.8-45\times9.8}{50}\)

বা, \(a=\frac{5\times9.8}{50}=0.98\)

∴ লিফ্টটি 0.98 m/s2 সমত্বরণ নিয়ে নীচে নামছে।


আজকের আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণির ভৌতবিজ্ঞান বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায় “বল ও গতি” এর “বিভিন্ন ধরণের বল” থেকে পরীক্ষায় আসা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা, এমনকি চাকরি বা যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও উপযোগী। কারণ, এই অধ্যায়ের প্রশ্ন প্রায়ই বিভিন্ন পরীক্ষায় কমন আসে।

আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। যদি কোনো প্রশ্ন, মতামত বা সাহায্যের প্রয়োজন হয়, নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন কিংবা টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন—আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি সর্বদা প্রস্তুত।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Share via:

মন্তব্য করুন