এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

নবম শ্রেণী – ভৌতবিজ্ঞান – পদার্থ : গঠন ও ধর্ম – পৃষ্ঠটান – প্রশ্ন ও উত্তর

আজকের আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান বইয়ের তৃতীয় অধ্যায় “পদার্থ : গঠন ও ধর্ম” এর “পৃষ্ঠটান” থেকে সহজ ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তর শেয়ার করবো। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণির ইউনিট টেস্ট থেকে বার্ষিক পরীক্ষা এর জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি চাকরি বা বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পরীক্ষাতেও কাজে লাগবে। এই অধ্যায় থেকে স্কুল পরীক্ষা থেকে শুরু করে চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই প্রশ্ন আসে, তাই এই প্রশ্নোত্তরগুলো সবাইকে সাহায্য করবে। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে, যাতে সবাই বুঝতে পারেন। পড়ার শেষে এই অধ্যায়ের মুখ্য বিষয়গুলো আপনার আয়ত্তে চলে আসবে এবং যেকোনো পরীক্ষায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লিখতে পারবেন।

নবম শ্রেণী - ভৌতবিজ্ঞান - পদার্থ : গঠন ও ধর্ম - পৃষ্ঠটান - প্রশ্ন ও উত্তর

জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর

Contents Show

প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা থেকে দেখাও যে, তরলের উপরিতল সর্বদা সংকুচিত থাকতে চায়।

আমাদের সাধারণ অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, বৃষ্টির ফোঁটা বা অল্প পরিমাণ পারদ সবসময় গোলকের আকার ধারণ করে। এখন কোনো নির্দিষ্ট আয়তনের বিভিন্ন আকৃতিবিশিষ্ট বস্তুর মধ্যে গোলকের বাইরের তলের ক্ষেত্রফল সবচেয়ে কম। তাই বলা যায়, তরলকণার স্বাভাবিক প্রবণতা হল গোলকের আকার ধারণ করে ক্ষেত্রফল সর্বনিম্ন করা।

যখন মাকড়সা বা ছোটো জলের পোকা জলের ওপর দিয়ে হাঁটে তখন দেখা যায়, যেখানে মাকড়সা বা ছোটো পোকার পা পড়ছে সেখানে জলের পৃষ্ঠতল একটু অবনমিত হয়ে যায়। দেখলে মনে হয় যেন রবারের পাতের মতো জলতল টান টান অবস্থায় আছে।

প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা থেকে দেখাও যে, তরলের উপরিতল সর্বদা সংকুচিত থাকতে চায়।

আবার জলের ওপর সাবধানে একটি পরিষ্কার তেলবিহীন সুচ রাখলে দেখা যায়, সুচটি জলে ডুবে যায় না, ভেসে থাকে। যেখানে ভাসে সেখানে জলের পৃষ্ঠতল একটু অবনমিত হয়। টান করা রবারের পর্দার ওপর কিছু রাখলে যেমন একটু অবনমন হয়, এও সেরকম ঘটনা।

প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা থেকে দেখাও যে, তরলের উপরিতল সর্বদা সংকুচিত থাকতে চায়।

এইসব সাধারণ ঘটনা থেকে বলা যায় যে, তরলের মুক্তপৃষ্ঠ সর্বদা টানটান অবস্থায় আছে এবং ক্ষেত্রফল যথাসম্ভব কম করার চেষ্টা করছে। তরলপৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল সংকোচনের এই প্রবণতাকেই বলে তরলের পৃষ্ঠটান।

পৃষ্ঠটান কাকে বলে?

পৃষ্ঠটান (Surface tension) – কোনো তরলপৃষ্ঠের উপর একটি রেখা কল্পনা করলে, ওই রেখার প্রতি একক দৈর্ঘ্যে রেখার সঙ্গে অভিলম্বভাবে এবং পৃষ্ঠতলের স্পর্শকরূপে রেখার উভয় পার্শ্বে যে বল ক্রিয়া করে, তাকে ওই তরলের পৃষ্ঠটান বলে।

পৃষ্ঠটান কাকে বলে?

অঙ্কিত AB রেখার দৈর্ঘ্য। এবং রেখার যে-কোনো পার্শ্বে সমগ্র দৈর্ঘ্য জুড়ে ক্রিয়াশীল বল F হলে, পৃষ্ঠটান হবে- \(S=\frac Fl\)

পৃষ্ঠটানের একক ও মাত্রীয় সংকেত লেখো।

একক – CGS পদ্ধতিতে পৃষ্ঠটানের একক ডাইন/সেমি এবং SI -তে একক হবে নিউটন/মিটার।

মাত্রীয় সংকেত –

পৃষ্ঠটান (S)=বলদৈর্ঘ্য

∴ \(\left[S\right]=\left[\frac Fl\right]=\frac{\left[MLT^{-2}\right]}{\left[L\right]}=\left[MT^{-2}\right]\)

সংসক্তি ও আসঞ্জন বল বলতে কী বোঝায়?

সংসক্তি ও আসঞ্জন বল (Cohesive & Adhesive force) – একই পদার্থের অণুগুলির পারস্পরিক আকর্ষণকে বলা হয় সংসক্তি বল। বিভিন্ন পদার্থের অণুগুলির পারস্পরিক আকর্ষণকে বলা হয় আসঞ্জন বল। যেমন – একটি কাচের গ্লাসে জল রাখলে কাচের অণুগুলির মধ্যে ক্রিয়ারত বল এবং জলের অণুগুলির মধ্যে ক্রিয়ারত বল হল সংসক্তি বল। আবার, কাচ ও জল অণুগুলির মধ্যে ক্রিয়ারত বল হল আসঞ্জন বল।

আণবিক পাল্লা বলতে কী বোঝায়?

আণবিক পাল্লা (Molecular range) – একই তরল পদার্থ মধ্যস্থ দুটি অণুর মধ্যে ক্রিয়াশীল সংসক্তি বলের প্রভাব সর্বাধিক যে দূরত্ব পর্যন্ত অনুভূত বা কার্যকর হয়, সেই দূরত্বের সীমামানকে আণবিক পাল্লা বলে।

তত্ত্বগতভাবে সংসক্তি ও আসঞ্জন বলের প্রভাব অসীম দূরত্ব পর্যন্ত কার্যকর হলেও বাস্তবে দেখা যায়, একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব অবধি এই বল ক্রিয়াশীল হয়। ওই দূরত্বের পরে এই বলের প্রভাব নগণ্য হয়। তরল অণুর ক্ষেত্রে, সংসক্তি বলের আণবিক পাল্লার মান প্রায় 10-9 m ক্রমের হয়।

প্রভাব গোলক কাকে বলে? পৃষ্ঠসর বলতে কী বোঝায়?

প্রভাব গোলক (Sphere of influence) – পদার্থের কোনো বিশেষ অণুকে কেন্দ্র করে আণবিক পাল্লার সমান ব্যাসার্ধবিশিষ্ট একটি কাল্পনিক গোলকের মধ্যে অবস্থিত অণুগুলির ওপরই কেন্দ্রীয় অণুটির জন্য সংসক্তি বল কার্যকরী হয়ে থাকে। এই গোলকটিকে বলা হয় প্রভাব গোলক।

পৃষ্ঠসর (Surface film) – তরলের মুক্তপৃষ্ঠ থেকে তরলপৃষ্ঠের সমান্তরালভাবে এবং তরলের মুক্তপৃষ্ঠ থেকে আণবিক আকর্ষণ পাল্লার সমদূরত্বে তরলের ভিতর একটি তল (OP) কল্পনা করলে, মুক্তপৃষ্ঠ ও ওই কল্পিত তলের মধ্যে যে তরলের স্তর পাওয়া যায়, তাকে তরলের পৃষ্ঠসর বলে।

প্রভাব গোলক কাকে বলে? পৃষ্ঠসর বলতে কী বোঝায়?

চিত্রে MN হল তরলের মুক্তপৃষ্ঠ। MN থেকে R (আণবিক পাল্লার সমান) দূরত্বে MN -এর সমান্তরালে OP তল কল্পনা করলে, MN ও OP তল দুটির মধ্যে যে তরল স্তর থাকে, তাকে তরলের পৃষ্ঠসর বলে।

একটি সহজ পরীক্ষার দ্বারা ভাসনের মাধ্যমে পৃষ্ঠটান ব্যাখ্যা করো।

ভাসনের মাধ্যমে পৃষ্ঠটানের পরীক্ষা –

উপকরণ –

  • একটি বিকার,
  • কিছু পরিমাণ পরিষ্কার জল,
  • একটি পরিষ্কার দাড়ি কাটার ব্লেড।

পরীক্ষা –

  • একটি বিকারে কিছু পরিমাণ পরিষ্কার জল ঢালা হল।
  • সেই জলতলের উপর একটি পরিষ্কার দাড়ি কাটার ব্লেড খুব সাবধানে রাখা হল।
  • এখন কিছুক্ষণ অপেক্ষা করা হল।
একটি সহজ পরীক্ষার দ্বারা ভাসনের মাধ্যমে পৃষ্ঠটান ব্যাখ্যা করো।

পর্যবেক্ষণ – দেখা গেল, ব্লেডটি সেই মুহূর্তে ডুবছে না, জলের উপর ভেসে আছে।

সিদ্ধান্ত ও ব্যাখ্যা – জলের পৃষ্ঠটান আছে বলেই এরকম ঘটছে। যেখানে ব্লেডটি ভাসে, সেখানকার জলতল একটু অবনমিত হয়। তখন ব্লেড ও জলের বিভেদতলে পৃষ্ঠটান (T) স্পর্শক বরাবর ক্রিয়া করে। এই দুই পৃষ্ঠটানের লব্ধি ও ব্লেডের ওজন পরস্পর বিপরীতমুখী হওয়ায় একে অপরকে প্রতিমিত করে। তাই ব্লেডটি জলে ভাসে।

তরলপৃষ্ঠে পৃষ্ঠটান সৃষ্টি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।

কোনো অণু তরলের গভীরে অবস্থান করলে (যেমন – চিত্রে A) সেটি চারপাশে থাকা অন্যান্য অণু দ্বারা সমানভাবে আকৃষ্ট হয়, ফলে এর ওপর কোনো লব্ধি বল কাজ করে না। কিন্তু যেসব অণু তরলপৃষ্ঠ থেকে r0 দূরত্বের মধ্যে থাকে (যেমন – চিত্রে B ও C) তাদের প্রভাব গোলকের কিছু অংশ তরলের বাইরে পড়ে। এরূপ পরিস্থিতিতে ওই গোলকের উপরের অংশে যতগুলি অণু থাকে নীচের অংশে তার থেকে বেশি সংখ্যক অণু অবস্থান করে। ফলে এইসকল অণুগুলির ওপর একটি নিম্নমুখী লব্ধি বল ক্রিয়া করে, যার মান C অণুর ক্ষেত্রে কম ও B অণুর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ হয়। এর ফলেই তরলপৃষ্ঠে অবস্থিত অণুগুলি নীচের দিকে একটি টান অনুভব করে।

তরলের ভিতরে থাকা অণুকে তরলপৃষ্ঠে আনতে (অর্থাৎ, তরলপৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল বাড়াতে) এই নিম্নমুখী লব্ধি সংসক্তি বলের বিরুদ্ধে কার্য করতে হয়। এই কৃতকার্য তরলপৃষ্ঠে অবস্থিত অণুর

তরলপৃষ্ঠে পৃষ্ঠটান সৃষ্টি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।

স্থিতিশক্তি বৃদ্ধি করে। ফলে, তরলের মধ্যে অবস্থিত অণু অপেক্ষা তরলপৃষ্ঠে অবস্থিত অণুর স্থিতিশক্তি বেশি হয়। তরলের পৃষ্ঠতলে সঞ্চিত এই অতিরিক্ত স্থিতিশক্তিকে বলা হয় পৃষ্ঠশক্তি (Surface energy)। প্রমাণ করা যায় যে, অপরিবর্তিত উষ্ণতায় তরলের পৃষ্ঠটান তরলপৃষ্ঠের প্রতি একক ক্ষেত্রফলে পৃষ্ঠশক্তির সমান। সাম্যাবস্থায় কোনো সংস্থার স্থিতিশক্তি সর্বনিম্ন হয়। তাই, তরল পদার্থ তার পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফলকে সর্বনিম্ন রাখতে চায়। তরলপৃষ্ঠের এই সংকুচিত হওয়ার প্রবণতা থেকেই পৃষ্ঠটানের উৎপত্তি হয়ে থাকে।

পৃষ্ঠটান সৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা করো।

পৃষ্ঠটান সৃষ্টির কারণ – পৃষ্ঠটান একটি আণবিক ঘটনা (molecular phenomenon)। পদার্থের বিভিন্ন অণুগুলির মধ্যে ক্রিয়াশীল আন্তরাণবিক আকর্ষণ বলই পৃষ্ঠটানের উদ্ভব বা পৃষ্ঠটানজনিত বিভিন্ন ঘটনাগুলির জন্য দায়ী।

সংসক্তি বলের ক্রিয়া বজায় থাকার ফলে কোনো তরলের মুক্তপৃষ্ঠ (free surface) সর্বদা সংকুচিত হয়ে থাকতে চায়। অর্থাৎ, তার পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল কমাতে চায়। তাই, তরলের মুক্তপৃষ্ঠ টানটান অবস্থায় থাকে এবং টান দেওয়া পাতলা পর্দার তুল্য আচরণ করে। মুক্তপৃষ্ঠের উপর একটি রেখার অস্তিত্ব কল্পনা করা হলে, ওই রেখার দুপাশের তরলপৃষ্ঠই পরস্পর থেকে দূরে সরে যেতে চায়। ফলে, রেখার উপর দুদিক থেকেই টান পড়ে। এটিই হল পৃষ্ঠটান।

সুতরাং, বলা যায় সংসক্তি বলের ক্রিয়া এবং তার প্রভাবে প্রসারিত তরলপৃষ্ঠের সংকোচনশীল হয়ে থাকার প্রবণতাই পৃষ্ঠটান উদ্ভবের কারণ।

বিজ্ঞানী ল্যাপলাস কীভাবে আণবিক বলের সাহায্যে পৃষ্ঠটানের অস্তিত্বের তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা প্রস্তাব করেন?

বিজ্ঞানী ল্যাপলাস আণবিক বলের সাহায্যে পৃষ্ঠটানের অস্তিত্বের এই তাত্ত্বিক ব্যাখ্যার প্রস্তাবনা দেন।

তরলের পৃষ্ঠটান কোন্ কোন্ বিষয় দ্বারা কীভাবে প্রভাবিত হয়, তা সংক্ষেপে আলোচনা করো।

তরলের পৃষ্ঠটান নিন্মোক্ত বিষয়গুলি দ্বারা প্রভাবিত হায় থাকে –

  • উষ্ণতা – উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে তরলের অণুগুলির মধ্যে গড় দূরত্ব বাড়ে, ফলে সংসক্তি বল কমে। তাই উষ্ণতা বাড়লে পৃষ্ঠটানের মান হ্রাস পায়। তরল তামা ও তরল ক্যাডমিয়াম ছাড়া আর সমস্ত তরলের ক্ষেত্রেই এই সাধারণ নিয়ম প্রযোজ্য হয়ে থাকে।
  • দূষণ – তরলপৃষ্ঠ কোনো অপদ্রব্য (impurity) দ্বারা দূষিত হলে পৃষ্ঠটান হ্রাস পায়। যেমন – জলের উপর তেল, চর্বি ইত্যাদি ফেলা হলে পৃষ্ঠটান কমে।
  • দ্রবীভূত বস্তুর উপস্থিতি – তরলে কোনো পদার্থ দ্রবীভূত অবস্থায় থাকলে তরলের পৃষ্ঠটান প্রভাবিত হয়। সাধারণভাবে অজৈব দ্রাবের উপস্থিতিতে (যেমন – খাদ্যলবণ) পৃষ্ঠটান বাড়ে, কিন্তু জৈব পদার্থ (যেমন – সাবান) দ্রাব্য হলে পৃষ্ঠটান কমে।
  • তরল সংলগ্ন মাধ্যমের প্রকৃতি – তরলের পৃষ্ঠটান তার সংস্পর্শে থাকা মাধ্যমের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে।
  • তড়িদাহিতকরণ – তরলপৃষ্ঠ তড়িদ্‌গ্রস্ত হলে তার পৃষ্ঠটানের মান হ্রাস পায়।

S = S0​(1 − at) সম্পর্কটি থেকে তরলের সংকট উষ্ণতা tc নির্ণয় কর।

অল্প উষ্ণতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উষ্ণতার সঙ্গে পৃষ্ঠটানের পরিবর্তন প্রদত্ত গাণিতিক সম্পর্ক দ্বারা প্রকাশ করা যায় S = S0(1 − at) যেখানে, S0 ও S যথাক্রমে 0°C ও t°C উষ্ণতায় পৃষ্ঠটানের মান এবং ধ্রুবক a হল সংশ্লিষ্ট তরলের পৃষ্ঠটান পরিবর্তনের উষ্ণতা গুণাঙ্ক।

সংকট উষ্ণতা (Critical temperature) কাকে বলে?

যে-কোনো তরলের ক্ষেত্রেই উষ্ণতার একটি নির্দিষ্ট মানে পৃষ্ঠটান লোপ পেতে দেখা যায়। এই বিশেষ উষ্ণতাটিকে সংকট উষ্ণতা (Critical temperature) বলে।

বিশুদ্ধ জলের পৃষ্ঠটান 72 dyn/cm। খাদ্যলবণ ও সাবান যোগ করলে দ্রবণের পৃষ্ঠটান কী হয়?

সাধারণ উষ্ণতায় বিশুদ্ধ জলের পৃষ্ঠটান প্রায় 72 dyn/cm। কিন্তু ওই জলে খাদ্যলবণ ও সাবান দ্রবীভূত থাকলে সংশ্লিষ্ট দ্রবণের পৃষ্ঠটান যথাক্রমে 83 dyn/cm ও 30 dyn/cm হয়।

তরলের পৃষ্ঠটানের বৈশিষ্ট্যগুলো লেখো।

পৃষ্ঠটানের বৈশিষ্ট্যগুলি হল –

  • পৃষ্ঠটান একটি আণবিক ঘটনা। মুক্ত তরলপৃষ্ঠের সংকোচনশীলতা ধর্মের কারণেই এর উৎপত্তি হয়।
  • মাত্রাগতভাবে তরলের পৃষ্ঠটান একক দৈর্ঘ্যে ক্রিয়ারত বলের সমান।
  • পৃষ্ঠটানের অস্তিত্ব কেবলমাত্র তরলের মুক্তপৃষ্ঠেই সীমাবদ্ধ থাকে। তরলের অভ্যন্তরে এর কোনো প্রভাব নেই।
  • পৃষ্ঠটানের কারণে তরলের মুক্তপৃষ্ঠ টান করা স্থিতিস্থাপক পর্দার তুল্য আচরণ করে। স্থিতিস্থাপক পর্দার ক্ষেত্রে ক্ষেত্রফল বৃদ্ধিতে টান বাড়লেও পৃষ্ঠটানের মান তরলপৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল নিরপেক্ষ হয়।

জলের ওপর জলীয় বাষ্প থাকলে পৃষ্ঠটানের কীরূপ পরিবর্তন হয়?

শুকনো বায়ুর সংস্পর্শে থাকা বিশুদ্ধ জলের পৃষ্ঠটান যত হয়, একই উষ্ণতায় জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিতে ওই জলের পৃষ্ঠটান তার থেকে কম হয়। সুতরাং, জলের ওপর জলীয় বাষ্প থাকলে পৃষ্ঠটান হ্রাস পায়। যেমন – শুষ্ক বায়ুর সংস্পর্শে থাকা অবস্থায় ঘরের উষ্ণতায় জলের পৃষ্ঠটান হয় প্রায় 72 dyn/cm, কিন্তু শুষ্ক বায়ুর পরিবর্তে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিতে এই মান হয় প্রায় 70 dyn/cm।

কৈশিকতা কী? এর দুটি করে ব্যাবহারিক ও প্রাকৃতিক উদাহরণ দাও।

কৈশিকতা (Capillarity) – চুলের প্রস্থচ্ছেদের সঙ্গে তুলনীয় সরু রন্ধ্রবিশিষ্ট নলকে কৈশিক নল বলা হয়। কৈশিক নলে তরলের ওঠা বা নামা সংক্রান্ত ঘটনাকেই সাধারণভাবে কৈশিকতা বলে। কঠিনের সংস্পর্শে তরলপৃষ্ঠ বক্র হয়ে যাওয়ার ঘটনাও কৈশিকতারই বিশেষ ক্ষেত্র।

কৈশিকতার ব্যাবহারিক উদাহরণ –

  • কাচের কৈশিক নল জলে (বা কোনো তরল যা কাচকে ভেজায়) ডোবানো হলে নলের মধ্যে তরল ওঠে অর্থাৎ, নলের ভিতরের তরলতল বাইরের তরলপৃষ্ঠ অপেক্ষা কিছু ওপরে অবস্থান করে। নলের সংস্পর্শ স্থানে জল বা তরলতল অবতলাকৃতি হয়। অ্যালকোহল বা তুঁতের দ্রবণে ডোবানো কাচনলেও অনুরূপ ঘটনা ঘটে।
  • কাচের কৈশিক নল পারদে (অথবা যে তরল কাচকে ভেজায় না) ডোবালে নলের মধ্যে পারদ তলের অবনমন হয় এবং নলের মধ্যে পারদপৃষ্ঠ উত্তলাকার ধারণ করে। দুই ক্ষেত্রেই নলের প্রস্থচ্ছেদ যত সরু হয়, তরলের আরোহণ বা অবনমন তত বাড়ে।

কৈশিকতার প্রাকৃতিক উদাহরণ –

  • কৈশিকতার কারণে ব্লটিং কাগজ বা স্পঞ্জ জল শোষণ করে, পলতে তেল টানে।
  • মাটির সরু ছিদ্র দিয়ে নীচের ভিজে মাটি থেকে জল উপরে উঠে মাটিকে সরস রাখে, মূলরোম দ্বারা শোষিত জল কৈশিক ক্রিয়ার মাধ্যমেই গাছের দেহকান্ড হয়ে পাতায় পৌঁছোয়।

Capillarity শব্দটির উদ্ভব কীভাবে হয়েছে এবং এটি কোন ভাষা থেকে এসেছে?

ল্যাটিন ভাষায় Capillus শব্দটির অর্থ হল কেশ বা চুল। এর থেকেই Capillarity শব্দটির উদ্ভব।

কৈশিকতার কারণ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।

কৈশিকভার কারণ – তরল কঠিনের তলকে যেক্ষেত্রে ভিজিয়ে দেয় (যেমন – জল ও কাচ) তরলতল সেক্ষেত্রে বেঁকে যায় ও উপরে ওঠে। এক্ষেত্রে জল ও কাচ অণুর মধ্যে সক্রিয় আসঞ্জন বলের মান জল অণুগুলির মধ্যে ক্রিয়াশীল সংসক্তি বল অপেক্ষা বেশি হয়। তাই জল অণুগুলি কাচের তলে আটকে যায়। অর্থাৎ কাচপৃষ্ঠকে ভেজাতে সক্ষম হয়।

তরল কঠিনকে ভেজাতে সক্ষম না হলে (যেমন – পারদ ও কাচ) তরলতল অবনমিত হয়। এক্ষেত্রে পারদ ও কাচ অণুর মধ্যে আসঞ্জন বলের তুলনায় পারদ অণুগুলির সংসক্তি বলের মান অপেক্ষাকৃত বেশি হওয়ায় পারদপৃষ্ঠ গুটিয়ে থাকে। তাই পারদ কাচের তলে আটকে থাকতে ব্যর্থ হয় এবং কাচপৃষ্ঠকে ভেজাতে পারে না।

বোধমূলক প্রশ্নোত্তর

জলের উপর এক ফোঁটা তেল ফেললে তা জলের উপর ছড়িয়ে পড়ে। – পৃষ্ঠটানের ধারণা ব্যবহার করে প্রদত্ত ঘটনাটির ব্যাখ্যা দাও।

জলের উপরে যে অংশে তেল ঢালা হয়, সেই অংশে জলের পৃষ্ঠটান কমে যায়, কারণ – তেল ও জল অণুগুলির মধ্যে সক্রিয় আসঞ্জন বল, তেল অণুগুলির মধ্যে ক্রিয়াশীল সংসক্তি বল অপেক্ষা বেশি হয়। সংলগ্ন অঞ্চলে থাকা জলের পৃষ্ঠটান অপেক্ষাকৃত বেশি হওয়ায় তেলের ওই স্তরটির ওপর সবদিকে একটি বহির্মুখী টান ক্রিয়া করে। এই কারণে তেল সহজেই জলের উপর ছড়িয়ে পড়তে পারে।

জলের উপর এক ফোঁটা তেল ফেললে তা জলের উপর ছড়িয়ে পড়ে। - পৃষ্ঠটানের ধারণা ব্যবহার করে প্রদত্ত ঘটনাটির ব্যাখ্যা দাও।

এক টুকরো কর্পূর জলে ফেললে তা এলোমেলোভাবে অবিরাম নড়াচড়া করতে থাকে। – পৃষ্ঠটানের ধারণা ব্যবহার করে প্রদত্ত ঘটনাটির ব্যাখ্যা দাও।

কর্পূর জলে দ্রাব্য এবং জৈব যৌগ হওয়ায় উৎপন্ন দ্রবণের পৃষ্ঠটান জল অপেক্ষা কম হয়। কর্পূরখণ্ডটি অসম আকৃতির হলে তার ছুঁচোলো অংশ অপেক্ষাকৃত দ্রুত হারে জলে দ্রবীভূত হয়। ফলে, এই স্থানে পৃষ্ঠটান অন্যান্য স্থানের চেয়ে বেশি কমে যায়। পৃষ্ঠটানের এই পার্থক্যের কারণে প্রতি মুহূর্তে টুকরোটির ওপর একটি অপ্রতিমিত বল কাজ করে এবং টুকরোটি ওই বলের অভিমুখে সরে যায়। এই ঘটনা টুকরোটির বিভিন্ন অংশে ঘটতে থাকায় অসম বলের অভিমুখও সময়ের সঙ্গে পালটায়। ফলে, টুকরোটি এলোমেলোভাবে নড়াচড়া করতে থাকে।

দাড়ি কামানোর বা ছবি আঁকার ব্রাশ বা তুলির আঁশগুলি জলে নিমজ্জিত অবস্থায় ফাঁক হয়ে থাকে, কিন্তু জল থেকে তোলা মাত্র আঁশগুলি জড়িয়ে যায়। – পৃষ্ঠটানের ধারণা ব্যবহার করে প্রদত্ত ঘটনাটির ব্যাখ্যা দাও।

ব্রাশ বা তুলি জলে ডোবালে সেই অবস্থায় তুলির আঁশগুলি ফাঁক ফাঁক হয়ে থাকে, কারণ – জলের ভিতরে পৃষ্ঠটানের কোনো অস্তিত্ব নেই। জলের বাইরে সেটি বের করে আনা হলে আঁশগুলির উপর জলের একটি পাতলা সর বা আস্তরণ তৈরি হয়। পৃষ্ঠটানের কারণে এই আস্তরণ তার ক্ষেত্রফল ন্যূনতম করতে চায় ও সংকুচিত হয় এবং আঁশগুলিকে টেনে একত্রিত করতে চেষ্টা করে, ফলে তারা জড়িয়ে যায়।

দাড়ি কামানোর বা ছবি আঁকার ব্রাশ বা তুলির আঁশগুলি জলে নিমজ্জিত অবস্থায় ফাঁক হয়ে থাকে, কিন্তু জল থেকে তোলা মাত্র আঁশগুলি জড়িয়ে যায়। - পৃষ্ঠটানের ধারণা ব্যবহার করে প্রদত্ত ঘটনাটির ব্যাখ্যা দাও।

বিশুদ্ধ জল অপেক্ষা সাবানজল জামাকাপড় বেশি পরিষ্কার করে। – পৃষ্ঠটানের ধারণা ব্যবহার করে প্রদত্ত ঘটনাটির ব্যাখ্যা দাও।

সাবান জলের পৃষ্ঠটান কম হওয়ায় এর সংকুচিত হওয়ার প্রবণতাও কম। এই কারণে বিশুদ্ধ জল অপেক্ষা সাবান বা ডিটারজেন্ট মিশ্রিত জল জামাকাপড়ের সুক্ষ্ম ছিদ্র বা রন্ধ্রগুলির মধ্যে সহজেই প্রবেশ করতে সক্ষম হয় এবং জামাকাপড় ভালো পরিষ্কার হয়।

ছাতা, বর্ষাতি, ত্রিপল ইত্যাদির মধ্য দিয়ে বৃষ্টির জল প্রবেশ করতে পারে না। – পৃষ্ঠটানের ধারণা ব্যবহার করে প্রদত্ত ঘটনাটির ব্যাখ্যা দাও।

ছাতা, বর্ষাতি, ত্রিপল ইত্যাদি কাপড়ে সুক্ষ্ম ছিদ্র থাকে, যার মধ্য দিয়ে বায়ু চলাচল করতে পারলেও জল প্রবেশ করতে পারে না। পৃষ্ঠটানের জন্য জল ছোটো ছোটো গোলকবিন্দুর আকৃতি পায় এবং কাপড়ের পৃষ্ঠতল থেকে গড়িয়ে পড়ে যায়। বৃষ্টির সময় ছাতা বা বর্ষাতির কাপড়ের ভিতরদিকে স্পর্শ করলে পৃষ্ঠটান হ্রাস পায় এবং ওই জায়গা দিয়ে জল ভিতরে প্রবেশ করে।

একটি সরু সুচ বিশুদ্ধ জলের উপর সাবধানে রাখলে ভেসে থাকে, কিন্তু সাবানজলের উপরে রাখা হলে ডুবে যায়। – পৃষ্ঠটানের ধারণা ব্যবহার করে প্রদত্ত ঘটনাটির ব্যাখ্যা দাও।

ধাতব সুচ জলের উপর সতর্কতার সঙ্গে আলতো করে ফেলে রাখলে তা জলতলের উপর ভেসে থাকে। পৃষ্ঠটানের কারণে ঘটনাটি ঘটে। সুচ যেখানে জলতল স্পর্শ করে, সেখানে জলতল সামান্য অবনমিত হয়। পৃষ্ঠটান এই অবনমিত তরলপৃষ্ঠের স্পর্শক বরাবর ক্রিয়া করে। চিত্র থেকে স্পস্ট হয় যে পৃষ্ঠটানজনিত বলের উল্লম্ব উপাংশগুলি সুচের ওজনকে (W) প্রতিমিত করে। ফলে সুচ জলে ভাসে। সাবানজলের পৃষ্ঠটান (30 dyn/cm) বিশুদ্ধ জলের পৃষ্ঠটান (72 dyn/cm) অপেক্ষা অনেক কম। তাই T -এর উল্লম্ব উপাংশগুলি ওজনকে প্রতিমিত করতে ব্যর্থ হয়। তাই, সুচ সাবান জলে ডুবে যায়।

একটি সরু সুচ বিশুদ্ধ জলের উপর সাবধানে রাখলে ভেসে থাকে, কিন্তু সাবানজলের উপরে রাখা হলে ডুবে যায়। - পৃষ্ঠটানের ধারণা ব্যবহার করে প্রদত্ত ঘটনাটির ব্যাখ্যা দাও।

ক্ষুদ্র তরলবিন্দু আকৃতিতে গোলাকার হলেও বৃহৎ তরলকণা আকৃতিতে বর্তুলাকার বা চ্যাপটা হয়ে থাকে। – পৃষ্ঠটানের দ্বারা ঘটনাটির ব্যাখ্যা দাও।

তরলবিন্দুর আকৃতি নির্ধারণ করে দুটি বলের যৌথ ক্রিয়া –

  • অভিকর্ষ বল ও
  • পৃষ্ঠটানজনিত বল।

অভিকর্ষ বল তরলবিন্দুর গঠনকে স্ফীত বা চ্যাপটা করতে চেষ্টা করে, যাতে তার ভারকেন্দ্র যথাসম্ভব নীচে অবস্থান করে এবং স্থিতিশক্তির মান ন্যূনতম হয়। অন্যদিকে পৃষ্ঠটান সর্বদা বিন্দুটিকে গোলকের চেহারা দিতে চায় যাতে পৃষ্ঠশক্তির মান সর্বনিম্ন হয়। ক্ষুদ্র কণার ক্ষেত্রে অভিকর্ষ বলের মান উপেক্ষণীয় হয়। তাই তা গোলাকার হয়ে থাকে। কিন্তু বৃহৎ কণার ক্ষেত্রে অভিকর্ষ বল অর্থাৎ, তরলবিন্দুর ওজন নগণ্য হয় না। তাই বড়ো বা ভারী তরলবিন্দু (যেমন – পারদ) বর্তুলাকার হয়।

বাহ্যিক বলের অধীনে থাকা কোনো তরলের ফোঁটা সর্বদা গোলকাকৃতি হয়। – পৃষ্ঠটানের দ্বারা ঘটনাটির ব্যাখ্যা দাও।

কোনো তরলের মুক্তপৃষ্ঠ সংসক্তি বলের ক্রিয়ায় সর্বদা সংকুচিত থাকতে চায়, অর্থাৎ, তরলের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল সর্বনিম্ন হয়। এছাড়া আমরা জানি, নির্দিষ্ট আয়তনের ভিন্ন আকৃতির বস্তুর মধ্যে গোলকের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল সবচেয়ে কম হয়, তাই বাহ্যিক বলের অধীনে থাকা তরলের ফোঁটা সাধারণত গোলাকাকৃতি হয়।

ঠান্ডা ঝোলের স্বাদের চেয়ে গরম কোলের স্বাদ বেশি ভালো লাগে। – পৃষ্ঠটানের দ্বারা ঘটনাটির ব্যাখ্যা দাও।

তরলের উষ্ণতা বৃদ্ধিতে পৃষ্ঠটান হ্রাস পায়। তাই ঠান্ডা ঝোল অপেক্ষা গরম ঝোলের পৃষ্ঠটানের মান কম হয় ও তা জিভের বেশি অংশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং জিভের স্বাদকোরকগুলির অপেক্ষাকৃত গভীরে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়। তাই গরম স্যুপ বেশি সুস্বাদু লাগে। এ ছাড়াও ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতিতে ঠান্ডা স্যুপ বিস্বাদ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা গরম স্যুপের ক্ষেত্রে ঘটে না।

শোভিং বা দাড়ি কাটার আগে মুখে সাবানের ফেনা ঘযা হয়। – পৃষ্ঠটানের দ্বারা ঘটনাটির ব্যাখ্যা দাও।

জৈব দ্রাবকের উপস্থিতিতে তরলের পৃষ্ঠটান কমে যায়। ফলে সাধারণ জলের তুলনায় সাবানমিশ্রিত জলের পৃষ্ঠটান হ্রাস পায়। তাই সাবানমিশ্রিত জল বা ফোম ব্যবহার করলে তা মুখমণ্ডলের বিস্তৃত অংশে ছড়ায় ও লোমকূপের গভীরে প্রবেশ করে। এর দরুন দাড়ি নরম থাকে এবং তা কাটা সুবিধাজনক হয়।

মাঝসমুদ্রে ঝড় উঠলে জাহাজের নাবিকরা সমুদ্রের ওপর তেল ছড়িয়ে দেয়। – পৃষ্ঠটানের দ্বারা ঘটনাটির ব্যাখ্যা দাও।

ঝড়ের সময় অশান্ত সমুদ্রবক্ষে সৃষ্টি হওয়া ঢেউয়ের আঘাতে জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বা ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ঢেউগুলিকে প্রশমিত করার উদ্দেশ্যে নাবিকরা সমুদ্রে তেল ছড়িয়ে দেন।

তৈলান্ত জলের পৃষ্ঠটান বিশুদ্ধ জলের পৃষ্ঠটানের তুলনায় কম। তাই ছড়িয়ে দেওয়া তেল বায়ুপ্রবাহের দ্বারা গতিশীল হয়ে দ্রুত সামনের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে, ঢেউয়ের সামনের দিকে পৃষ্ঠটান কম এবং পিছনের অংশে বিশুদ্ধ জল থাকায় পৃষ্ঠটান বেশি হয়। বর্ধিত পৃষ্ঠটান ঢেউকে খুব বেশি উঁচু হতে বাধা দেয় এবং জলের গতিবেগ হ্রাস ঘটায়। ফলে সমুদ্র শান্ত হয় এবং জাহাজ সুরক্ষিত থাকে।

জলের বুদ্বুদের থেকে সাবানের বুদ্বুদ অনেক বড়ো আকারের হয়। – পৃষ্ঠটানের দ্বারা ঘটনাটির ব্যাখ্যা দাও।

যে-কোনো বক্রতল পৃষ্ঠটানের জন্য নিজের ক্ষেত্রফল কমিয়ে সমতল করতে চায়। তাই গোলকাকার বুদ্বুদের ভিতরের চাপ বাইরের চাপ অপেক্ষা বেশি। ভেতরের এই অতিরিক্ত চাপের জন্য বুদ্বুদ ফুলে ওঠার চেষ্টা করে এবং পৃষ্ঠটান এই প্রচেষ্টাকে বাধা দেয়। অতিরিক্ত চাপ ও পৃষ্ঠটান পরস্পরকে প্রতিমিত করলে সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে বুদ্বুদ একটি স্থায়ী আকার লাভ করে। স্থির উষ্ণতায় বুদ্বুদের আকার বৃদ্ধিতে তরলের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল বাড়ে, তাই পৃষ্ঠশক্তিও বৃদ্ধি পেতে চায়। সাবান জলের পৃষ্ঠটান যথেষ্ট কম হওয়ায় ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি পেলেও পৃষ্ঠশক্তি (পৃষ্ঠটান × ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি) খুব বেশি পরিমাণে বাড়ে না। তাই, আকৃতি যথেষ্ট বৃহৎ হলেও এই বুদ্বুদের সাম্য সহজে বিঘ্নিত হয় না। ফলে সুস্থিতি ও আকার দুই-ই বজায় থাকে। অন্যদিকে পৃষ্ঠটান উচ্চমানের বলে জল বুদ্বুদের ক্ষেত্রে ক্ষেত্রফল অল্প বাড়লেও পৃষ্ঠশক্তি বহুল পরিমাণে বাড়ে। ফলে, জল বুদ্বুদের সাম্য দ্রুত বিনষ্ট হয় এবং তা সহজেই ফেটে যায়।

জলের বুদ্বুদের থেকে সাবানের বুদ্বুদ অনেক বড়ো আকারের হয়। - পৃষ্ঠটানের দ্বারা ঘটনাটির ব্যাখ্যা দাও।

একটি মশা উড়তে উড়তে জলের মধ্যে ডুবে গেল। সেখান থেকে বেরোনোর পর যতক্ষণ না মশাটির শরীর পুনরায় শুকনো হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সে উড়তে পারে না। – পৃষ্ঠটানের দ্বারা ঘটনাটির ব্যাখ্যা দাও।

জলে ডুবিয়ে মশাকে বাইরে আনা হলে তার ডানায় একটি পাতলা জলস্তর লেগে থাকে। ডানার ভিতরের অংশে তৈরি হওয়া জলের সর বা আস্তরণ পৃষ্ঠটান প্রয়োগ করে ডানা দুটিকে আটকে রাখে। তাই মশা চেষ্টা করেও উড়তে পারে না। কিছু সময় পর ডানায় লেগে থাকা জল বাষ্পায়িত হলে পৃষ্ঠটানের ক্রিয়া বিলুপ্ত হয় এবং মশা ডানা নেড়ে উড়ে যেতে সক্ষম হয়।

অ্যান্টিসেপটিক লোশন ও ঝালাইয়ের সময় ব্যবহৃত গলিত টিনের ক্ষেত্রে পৃষ্ঠটান কম থাকা কীভাবে উপকারে আসে?

অ্যান্টিসেপটিক লোশনের পৃষ্ঠটান কম থাকায় সেটি লাগানোর সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষতস্থানের বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ক্ষত সহজে সারে। ঝালাইয়ের সময় ব্যবহৃত গলিত টিনের সঙ্গে ধাতুমল মিশ্রিত করা হয়। এতে মিশ্রণের পৃষ্ঠটান কমে এবং গলিত টিন সহজে ছড়াতে পারে। ফলে ঝালাই করা সহজ হয়।

ফাউন্টেন পেনের নিব চেরা রাখা হয় কেন?

ফাউন্টেন পেনের নিবের চেরা অংশে থাকা ফাঁক কৈশিক নলের তুল্য আচরণ করে। ফলে, প্রয়োজন হলে ওই অংশের মধ্য দিয়ে কালি অভিকর্ষের বিরুদ্ধেও নিবের মধ্যবর্তী অংশ থেকে সামনে অর্থাৎ, মুখের দিকে চলে আসতে সক্ষম হয়। এর ফলে লেখার কাজও সহজ হয়ে থাকে।

ফাউন্টেন পেনের নিব চেরা রাখা হয় কেন?

হ্যারিকেন বা কেরোসিন কুপির তেল সলতের গা বেয়ে উপরদিকে ওঠে কেন?

হ্যারিকেনের সলতের গায়ে অসংখ্য সরু রন্ধ্র থাকে। এই সরু রন্ধ্রগুলি কৈশিক নলের মতো আচরণ করে। সলতে ও তার তেলের স্পর্শবিন্দুতে সলতের কাপড়ের অণু ও তেলের অণুর মধ্যে সক্রিয় আসঞ্জন বলের মান তেলের অণুগুলির মধ্যে ক্রিয়াশীল সংসক্তি বল অপেক্ষা বেশি হওয়ায় ওই অংশে তেলের ওপর লব্ধি ঊর্ধ্বমুখী বল কাজ করে। এই বলের ক্রিয়ায় সলতের আঁশগুলির মধ্যে থাকা সরু রন্ধ্র বরাবর তেল উপরে উঠে আসে।

একটি কাচের নলকে গরম করলে ওর গোলাকার হয়ে যায় কেন?

প্রকৃতিগতভাবে কাচ তরল কেলাস (Liquid crystal) জাতীয় পদার্থ হওয়ায় কাচের নলকে গরম করলে, তা সহজেই গলে তরল হয়। পৃষ্ঠটানের দরুন তরলটি মুক্তপৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল হ্রাস করতে চায়। যেহেতু কোনো নির্দিষ্ট আয়তনের বিভিন্ন ঘনবস্তুর মধ্যে গোলকের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল সর্বনিম্ন হয়, ফলে তরলটি গোলকের আকার ধারণ করে। এই কারণে কাচের নলের যে প্রান্ত গরম করা হয়, সেই প্রান্তটি গলে গিয়ে গোলকাকৃতি ধারণ করে।

জুরিনের সূত্র কী এবং এটি কৈশিক নলে তরলের আরোহণ বা অবনমনের সাথে কীভাবে সম্পর্কিত?

কৈশিক নলে তরলের আরোহণ বা অবনমন (h) নলের প্রস্থচ্ছেদের ব্যাসার্ধের (r) ব্যস্তানুপাতিক হয়, অর্থাৎ \(h\propto\frac1r\), যখন অন্যান্য শর্তাবলি অপরিবর্তিত থাকে। ফলাফলটি জুরিনের সূত্র নামে পরিচিত।

তরলের অভ্যন্তরে পৃষ্ঠটান ক্রিয়া করে কি?

তরলের অভ্যন্তরে পৃষ্ঠটান ক্রিয়া করে না। কারণ – পৃষ্ঠটান হল তরলের পৃষ্ঠতলের ধর্ম। তাই, তরলের পৃষ্ঠটান কেবলমাত্র তরলের মুক্তপৃষ্ঠেই ক্রিয়া করে। তরলের অভ্যন্তরে এর কোনো অস্তিত্ব নেই।

সাধারণ লবণগোলা জল, সাবানগোলা জল ও বিশুদ্ধ জলের পৃষ্ঠটানের মানের ক্রমানুসারে সাজাও। এই ক্রম থেকে তুমি কী সাধারণ সিদ্ধান্তে উপনীত হবে?

সাধারণ লবণগোলা জল, বিশুদ্ধ জল ও সাবানগোলা জলের পৃষ্ঠটান যথাক্রমে 83 dyn/cm, 72 dyn/cm ও 30 dyn/cm। অর্থাৎ, পৃষ্ঠটানের মানের ঊর্ধ্বক্রমানুসারে সাজালে পাই – সাধারণ লবণ গোলা জল > বিশুদ্ধ জল > সাবানগোলা জল। এই ক্রম থেকে সিদ্ধান্ত করা যায়, অজৈব দ্রাবের উপস্থিতিতে (যেমন – সাধারণ লবণ) পৃষ্ঠটান বাড়ে ও জৈব দ্রাবের উপস্থিতিতে (যেমন – সাবান) পৃষ্ঠটান কমে।

একটি ধাতব তারের বলয়কে সাবান গোলা জলে সাবধানে ডুবিয়ে একটি পাতলা সাবানের সর বা ঝিল্লি তৈরি করা হল। একটি সরু সুতোর টুকরো সন্তর্পণে ওই সাবানের সরের উপর রাখা হল। নিম্নোক্ত ক্ষেত্রগুলিতে কী কী ঘটবে তা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো –
1. সাবানের সরটি একটি অর্ধ পিনের সাহায্যে আলতো করে ফুটো করে দেওয়া হল।
2. সুতোটিকে একটি ফাঁসের আকারে সরটির উপর রেখে সাবধানে পিনের সাহায্যে ফাঁসের ভিতরে অবস্থিত সরটি ফুটো করা হল।

প্রথমটি, সাবানের ঝিল্লি বা সরটির উপরে সুতোটিকে আলতো করে রাখা হলে পৃষ্ঠটানের জন্য সুতোটি সাবানের মধ্যে সামান্য অবনমিত হয়ে থাকবে। এই অবস্থায় সুতোর সমগ্র দৈর্ঘ্য জুড়ে প্রত্যেক বিন্দুতে পৃষ্ঠটানজনিত সমান ও বিপরীতমুখী বল সাবান সরটির সঙ্গে স্পর্শকীয়ভাবে ক্রিয়া করে। ফলে, সুতোর উপর ক্রিয়াশীল লব্ধি বল শূন্য হয়। এই অবস্থায় সুতোটি এলোমেলোভাবে আলগা অবস্থায় ঝিল্লির উপর অবস্থান করে।

আলপিনের সাহায্যে সুতোর যে-কোনো পাশে সাবানঝিল্লির অংশটি ফুটো করে দেওয়া হলে সেই অর্ধের পৃষ্ঠটানজনিত বলের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়, কিন্তু অন্যপাশের সাবানঝিল্লির অবশিষ্ট অংশ সুতোর প্রত্যেক বিন্দুতে লম্ব অভিমুখে টান প্রয়োগ করে। সুতরাং, এই অবস্থায় সুতোটির উপর একটি অশূন্য লব্ধি বল কাজ করে, যার ক্রিয়ায় সুতোটি টানটান হয়ে থাকে।

দ্বিতীয়টি, সুতোটিকে ফাঁসের আকারে সরটির উপর সাবধানে রাখা হলে ফাঁস ও সুতোর বাকি দৈর্ঘ্যের প্রত্যেক বিন্দুতে সাবানঝিল্লির তলের সঙ্গে স্পর্শকীয়ভাবে সুতোর দৈর্ঘ্যের দিকে পৃষ্ঠটানের জন্য সমান ও বিপরীতমুখী বলের ক্রিয়া বজায় থাকে। প্রত্যেক বিন্দুতে সক্রিয় এই সমান ও বিপরীতমুখী বল পরস্পরকে প্রতিমিত করে। তাই সুতোটি সম্পূর্ণ আলগা অবস্থায় এলোমেলোভাবে অবস্থান করে। এই অবস্থায় পিনের সাহায্যে ফাঁসের ভিতরে থাকা সাবান ঝিল্লির স্তরটিকে ফুটো করা হলে সুতোটি মুহূর্তের মধ্যে টানটান হয়ে যায় ও ফাঁসটি বৃত্তের আকার লাভ করে।

একটি ধাতব তারের বলয়কে সাবান গোলা জলে সাবধানে ডুবিয়ে একটি পাতলা সাবানের সর বা ঝিল্লি তৈরি করা হল। একটি সরু সুতোর টুকরো সন্তর্পণে ওই সাবানের সরের উপর রাখা হল। নিম্নোক্ত ক্ষেত্রগুলিতে কী কী ঘটবে তা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা

ফাঁসের বাইরে থাকা সাবানঝিল্লির অবিকৃত অংশটি পৃষ্ঠটানের ক্রিয়ায় তার ক্ষেত্রফল ন্যূনতম রাখতে অর্থাৎ, সংকুচিত হতে চায়। যেহেতু, বলয়ের ক্ষেত্রফল নির্দিষ্ট, তাই এর ফলে ফাঁসের ভিতরে থাকা অংশটির ক্ষেত্রফল সর্বোচ্চ হওয়ার উপক্রম করে। যেহেতু, নির্দিষ্ট পরিসীমাবিশিষ্ট যে-কোনো সামতলিক ক্ষেত্রের মধ্যে বৃত্তের ক্ষেত্রফল সর্বাধিক হয়, তাই ফাঁসটি বৃত্তের আকার ধারণ করে।

গাণিতিক প্রশ্নাবলি

প্রয়োজনীয় সূত্রাবলি

পৃষ্ঠটান (T)=প্রযুক্ত বল (F)দৈর্ঘ্য (l)

পৃষ্ঠশক্তি = পৃষ্ঠটান।

কৃতকার্য = ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি × পৃষ্ঠটান।

জলপৃষ্ঠের উপর থেকে 0.1 m লম্বা একটি তারকে টেনে তুলতে তারের ওজন ছাড়াও সর্বোচ্চ 1.45 × 10-2 N বল প্রয়োগ করতে হয়। জলের পৃষ্ঠটান নির্ণয় করো।

প্রযুক্ত অতিরিক্ত বল F, তারের দৈর্ঘ্য l ও জলের পৃষ্ঠটান T হলে, T = \(\frac F{2l}\) [যেহেতু তারের ওপর লেগে থাকা জলস্তরের দুটি পৃষ্ঠ বর্তমান।]

বা, T = \(\frac{1.45\times10^{-2}}{0.1\times2}\)

বা, T = 7.25 × 10-2 N/m।

∴ জলের পৃষ্ঠটান 7.25 × 10-2 N/m।

15 m ব্যাসার্ধবিশিষ্ট একটি বিকারে জল ঢালা হল। জলের মুক্তপৃষ্ঠে বিকারের একটি ব্যাস কল্পনা করলে ব্যাসের একদিকের পৃষ্ঠ অন্যদিকের পৃষ্ঠকে কত বল দিয়ে টানবে? দেওয়া আছে, জলের পৃষ্ঠটান = 0.075 N/m।

জলের মুক্তপৃষ্ঠে কল্পিত ওই ব্যাসের দৈর্ঘ্য

= 2r

= (2 × 15) cm

= 30 cm

= 0.3 m

পৃষ্ঠটান (T) = একক দৈর্ঘ্যে বল = \(\frac Fl\)

∴ F = T × l

বা, F = (0.075 × 0.3) N

বা, F = 2.25 × 10-2 N

∴ ব্যাসের একদিকের পৃষ্ঠ অন্যদিকের পৃষ্ঠকে 2.25 × 10-2 N বল দিয়ে টানবে।

L বাহুবিশিষ্ট একটি বর্গাকার ফ্রেমকে সাবান জলে ডুবিয়ে তুলে আনলে দেখা যায় যে ফ্রেমটিতে একটি সাবানের সর আটকে আছে। সাবান জলের পৃষ্ঠটান T হলে, ফ্রেমটির ওপর প্রযুক্ত বল কত হবে?

পৃষ্ঠটানের কারণে ফ্রেমের ওপর প্রযুক্ত বল (F) = 2 × বর্গাকার ফ্রেমের × পরিসীমা পৃষ্ঠটান

∴ F = 2 × 4 L × T

বা, F = 8 TL [সাবানের সরের দুটি পৃষ্ঠ থাকায় 2 দিয়ে গুণ করা হল]

ফ্রেমটির ওপর প্রযুক্ত বল 8 TLহবে।

জলের পৃষ্ঠটান 72 dyn/cm। SI এককে পৃষ্ঠটান ও পৃষ্ঠশক্তির মান কত হবে?

জলের পৃষ্ঠটান (T) = 72 dyn/cm

= \(\frac{72}{10^5\times{\displaystyle\frac1{100}}}\) m

= 72 × 10-3 N/m

পৃষ্ঠশক্তি = পৃষ্ঠটানের সাংখ্যমান = 72 × 10-3 J/m2

∴ পৃষ্ঠটান ও পৃষ্ঠশক্তির মান 72 × 10-3 J/m2

বায়ুর মধ্যে একটি সাবানের বুদ্বুদের ব্যাসার্ধ 1 cm থেকে ধীরে ধীরে বাড়িয়ে 2 cm করতে কী পরিমাণ কাজ করতে হবে? সাবান জলের পৃষ্ঠটান = 0.036 N⋅m-1

বুদ্বুদের একটি তলের ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি

= 4π × [(0.02)2 – (0.01)2] m2

কৃতকার্য = ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি × পৃষ্ঠটান

= 2 × 4π × [(0.02)2 – (0.01)2] × 0.036 [বায়ু বুদ্‌দুদের দুটি তল থাকায় 2 দিয়ে গুণ করা হয়েছে।

= 2.7 × 10-4 J

∴ 2.7 × 10-4 J পরিমাণ কাজ করতে হবে।

4 cm ব্যাসার্ধের একটি সাবানে বুদ্বুদ তৈরি করতে কী পরিমাণ কাজ করতে হয়? সাবান জলের পৃষ্ঠটান = 70 dyn/cm।

কৃতকার্য = 2 × 4πr2 × T

= 8 πr2Τ

= \(8\times\frac{22}7\times\left(4\right)^2\times70\)

= 28160 dyn

∴ একটি সাবানে বুদ্বুদ তৈরি করতে 28160 dyn পরিমাণ কাজ করতে হয়।

নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নোত্তর

সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো

ছোটো ছোটো তরলবিন্দুর গোলকাকার ধারণ করার কারণ হল –

  1. মহাকর্ষীয় বল
  2. জলের চাপ
  3. পৃষ্ঠটান বল
  4. অভিকর্ষীয় বল

উত্তর – 3. পৃষ্ঠটান বল

দুটি কাচের প্লেটের মধ্যে সামান্য জল থাকলে তাদের টেনে সহজে পৃথক করা যায় না। এর কারণ –

  1. সান্দ্রতা
  2. বায়ুমণ্ডলীয় চাপ
  3. পৃষ্ঠটান
  4. ঘর্ষণ

উত্তর – 3. পৃষ্ঠটান

বৃষ্টির ফোঁটা গোলাকার হয় যে ধর্মের জন্য তা হল –

  1. পৃষ্ঠটান
  2. সান্দ্রতা
  3. প্লবতা
  4. স্থিতিস্থাপকতা

উত্তর – 1. পৃষ্ঠটান

বাতাসে ভাসমান সাবানের বুদ্বুদ সর্বদাই গোলাকার হয় যে কারণে, তা হল তরলের –

  1. প্লবতা
  2. চাপ
  3. পৃষ্ঠটান
  4. সান্দ্রতা

উত্তর – 3. পৃষ্ঠটান

পারদের উপরিতল উত্তল হয় যে ধর্মের জন্য –

  1. সান্দ্রতা
  2. পৃষ্ঠটান
  3. স্থিতিস্থাপকতা
  4. আপেক্ষিক গুরুত্ব

উত্তর – 2. পৃষ্ঠটান

পৃষ্ঠটান হল –

  1. আণবিক ঘটনা
  2. বিভেদতলীয় ঘটনা
  3. একক দৈর্ঘ্যে বল
  4. সবগুলিই সত্য

উত্তর – 4. সবগুলিই সত্য

তরলের পৃষ্ঠটান নির্ভর করে –

  1. ভর
  2. আয়তন
  3. উষ্ণতা
  4. ঘনত্ব -এর ওপর

উত্তর – 3. উষ্ণতা

পৃষ্ঠটানের একক কোন্ ভৌতরাশির এককের সঙ্গে অভিন্ন? –

  1. ইয়ং গুণাঙ্ক
  2. চাপ
  3. স্প্রিং -এর বলধ্রুবক
  4. কার্য

উত্তর – 3. স্প্রিং -এর বলধ্রুবক

কোনটি পৃষ্ঠটানের একক নয়? –

  1. N⋅m-1
  2. N⋅m-2
  3. J⋅m-2
  4. dyn⋅cm-1

উত্তর – 2. N⋅m-2

সংকট উষ্ণতায় তরলের পৃষ্ঠটান –

  1. শূন্য হয়
  2. সর্বোচ্চ হয়
  3. 100 dyn/cm
  4. 200 dyn/cm

উত্তর – 1. শূন্য হয়

জলের যে ধর্মের জন্য একটি ছোটো পোকা জলের উপরিতলে হেঁটে বেড়াতে পারে তা হল –

  1. জলের ঘনত্ব
  2. জলের সান্দ্রতা
  3. জলের তাপপরিবাহিতা
  4. জলের পৃষ্ঠটান

উত্তর – 4. জলের পৃষ্ঠটান

কাচের বিকারে পারদ রাখলে কাচ অণু ও পারদের মধ্যে ক্রিয়ারত বল হল –

  1. আকর্ষণ বল
  2. বিকর্ষণ বল
  3. আসঞ্জন বল
  4. সংসক্তি বল

উত্তর – 3. আসঞ্জন বল

সরু ব্যাসযুক্ত নলে তরলের উপরে ওঠার প্রবণতাকে বলা হয় –

  1. পৃষ্ঠটান
  2. সান্দ্রতা
  3. কৈশিক ক্রিয়া
  4. স্থিতিস্থাপকতা

উত্তর – 3. কৈশিক ক্রিয়া

জলে সাবান যোগ করলে জলের –

  1. পৃষ্ঠটান বাড়ে
  2. পৃষ্ঠটান কমে
  3. পৃষ্ঠটান একই থাকে
  4. ঘনত্ব বাড়ে

উত্তর – 2. পৃষ্ঠটান কমে

তাপমাত্রা বাড়লে তরলের পৃষ্ঠটান –

  1. বৃদ্ধি পায়
  2. অপরিবর্তিত থাকে
  3. হ্রাস পায়
  4. প্রথমে বৃদ্ধি পায় ও পরে হ্রাস পায়

উত্তর – 3. হ্রাস পায়

কোনটি কৈশিকতার দৃষ্টান্ত নয়? –

  1. কঠিনতলের সংস্পর্শে তরলপৃষ্ঠ বক্র হয়ে যাওয়া
  2. স্পঞ্জের জল শোষণ ক্ষমতা
  3. মাটির কলসির পৃষ্ঠদেশ ভিজে যাওয়া
  4. জলে তেলের ছড়িয়ে পড়া

উত্তর – 4. জলে তেলের ছড়িয়ে পড়া

জলের উপর জলীয় বাষ্পের পরিবর্তে শুষ্ক বায়ু থাকলে জলের পৃষ্ঠটান –

  1. হ্রাস পায়
  2. বৃদ্ধি পায়
  3. অপরিবর্তিত থাকে
  4. জলের অণুর গঠনের ওপর নির্ভরশীল

উত্তর – 2. বৃদ্ধি পায়

শূন্যস্থান পূরণ করো

একই আয়তনের বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে ___ -এর পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল সবচেয়ে কম।

উত্তর – একই আয়তনের বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে গোলক -এর পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল সবচেয়ে কম।

পৃষ্ঠটান হল একপ্রকার ___।

উত্তর – পৃষ্ঠটান হল একপ্রকার বল

শুষ্ক বায়ুর সংস্পর্শে জলের পৃষ্ঠটান, আর্দ্র বায়ুর সাপেক্ষে জলের পৃষ্ঠটান অপেক্ষা ___।

উত্তর – শুষ্ক বায়ুর সংস্পর্শে জলের পৃষ্ঠটান, আর্দ্র বায়ুর সাপেক্ষে জলের পৃষ্ঠটান অপেক্ষা বেশি

তরলের মুক্তপৃষ্ঠ ___ করা ___ -র মতো আচরণ করে।

উত্তর – তরলের মুক্তপৃষ্ঠ টান করা পর্দা -র মতো আচরণ করে।

কৈশিক নলের মধ্যে পারদতলের প্রকৃতি ___ হয়। 

উত্তর – কৈশিক নলের মধ্যে পারদতলের প্রকৃতি উত্তল হয়।

জলে সাবান দিয়ে প্রাপ্ত দ্রবণের পৃষ্ঠটান বিশুদ্ধ জলের চেয়ে ___ হয়।

উত্তর – জলে সাবান দিয়ে প্রাপ্ত দ্রবণের পৃষ্ঠটান বিশুদ্ধ জলের চেয়ে কম হয়।

তরলের পৃষ্ঠটান ___ যন্ত্রের সাহায্যে মাপা যায়।

তরলের পৃষ্ঠটান গেনিওমিটার যন্ত্রের সাহায্যে মাপা যায়।

উত্তর – তরলের পৃষ্ঠটান গেনিওমিটার যন্ত্রের সাহায্যে মাপা যায়।

ঠিক বা ভুল নির্বাচন করো

পৃষ্ঠটান তরলের সর্বত্র ক্রিয়া করে।

উত্তর – ভুল।

সঠিক উত্তর – উপরিতলে।

পৃষ্ঠটানের আণবিক তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন জুরিন।

উত্তর – ভুল।

সঠিক উত্তর – ল্যাপলাস।

তরলপৃষ্ঠের উপর কল্পিত সরলরেখার কেবল এক পার্শ্বে পৃষ্ঠটান ক্রিয়া করে।

উত্তর – ভুল।

সঠিক উত্তর – দৈর্ঘ্যের অভিলম্ব দিকে।

পৃষ্ঠটান ও পৃষ্ঠশক্তি উভয়েই মাত্রাগত দিক থেকে এক।

উত্তর – ঠিক।

তড়িদাহিত করলে তরলের পৃষ্ঠটান হ্রাস পায়।

উত্তর – ঠিক।

ব্যাপন ধর্মের জন্য ব্লটিং পেপার কালি শোষণ করে।

উত্তর – ভুল।

সঠিক উত্তর – কৈশিকতা।

উষ্ণতা বৃদ্ধিতে তরল ক্যাডমিয়ামের পৃষ্ঠটান হ্রাস পায়।

উত্তর – ভুল।

সঠিক উত্তর – পৃষ্ঠটান বৃদ্ধি পায়।

দু-একটি শব্দে উত্তর দাও

পৃষ্ঠটানের মাত্রীয় সংকেত লেখো।

পৃষ্ঠটানের মাত্রীয় সংকেত [MT-2]।

বালতিতে রাখা জলের উপরিতল থেকে 10 cm গভীরে পৃষ্ঠটান কত হবে?

বালতিতে রাখা জলের উপরিতল থেকে 10 cm গভীরে পৃষ্ঠটান শূন্য হবে।

এমন কয়েকটি পদার্থের নাম করো, যা জলে দ্রবীভূত হয়ে পৃষ্ঠটান কমায়।

এমন কয়েকটি পদার্থের নাম সাবান, ডিটারজেন্ট, যা জলে দ্রবীভূত হয়ে পৃষ্ঠটান কমায়।

ময়লা জামাকাপড় পরিষ্কার রাখার ক্ষেত্রে কোনটি বেশি উপযোগী? – ঠান্ডা জল না সাবানমিশ্রিত গরম জল।

সাবানমিশ্রিত গরম জল।

উষ্ণতা বাড়লে পৃষ্ঠটান বাড়ে, এমন একটি পদার্থের উদাহরণ দাও।

উষ্ণতা বাড়লে পৃষ্ঠটান বাড়ে, এমন একটি পদার্থের উদাহরণ তামা হল।

জলে নুন যোগ করলে জলের পৃষ্ঠটান বাড়বে না কমবে?

জলে নুন যোগ করলে জলের পৃষ্ঠটান বাড়বে।

জলে অজৈব পদার্থ দ্রবীভূত হলে জলের পৃষ্ঠটানের কী পরিবর্তন হয়?

জলে অজৈব পদার্থ দ্রবীভূত হলে জলের পৃষ্ঠটান বাড়বে।

তরল পদার্থের ক্ষেত্রে আণবিক পাল্লার মানের ক্রম কত?

তরল পদার্থের ক্ষেত্রে আণবিক পাল্লার মানের ক্রম প্রায় 10-9 m।

কচুপাতার উপর ফেলা জলবিন্দুর আকৃতি কেমন?

কচুপাতার উপর ফেলা জলবিন্দুর আকৃতি গোলকাকার।

For High-Types

প্রমাণ করো, পৃষ্ঠশক্তি ও পৃষ্ঠটানের মাত্রীয় সংকেত একই।

পৃষ্ঠটান হল একক দৈর্ঘ্যে ক্রিয়াশীল বল।

অর্থাৎ, পৃষ্ঠটান (S)=বল (F)দৈর্ঘ্য

∴ পৃষ্ঠটানের মাত্রীয় সংকেত \(=\left[\frac Fl\right]=\left[\frac{MLT^{-2}}L\right]=\left[MT^{-2}\right]\)

অনুরূপে পৃষ্ঠশক্তি হল একক ক্ষেত্রফলে সঞ্চিত স্থিতিশক্তি।

সুতরাং, পৃষ্ঠশক্তি=স্থিতিশক্তিক্ষেত্রফল

∴ পৃষ্ঠশক্তির মাত্রীয় সংকেত \(=\left[\frac{ML^2T^{-2}}{L^2}\right]=\left[MT^{-2}\right]\)

∴ পৃষ্ঠশক্তি ও পৃষ্ঠটানের মাত্রীয় সংকেত একই।

কৃত্রিম উপগ্রহের মধ্যে বসে জলের মধ্যে কৈশিক নল ডোবালে জল কৈশিক নল বেয়ে উপরে উঠবে কি?

পৃষ্ঠটানের জন্যই কৈশিক নল বেয়ে জল উপরে ওঠে। পৃষ্ঠটানের জন্য ঊর্ধ্বমুখী বল ও জলস্তম্ভের ওজন পরস্পর সমান হলে সাম্যাবস্থা সৃষ্টি হয়। কৃত্রিম উপগ্রহে বস্তু আপাত ভারহীন অবস্থায় থাকে। এক্ষেত্রে, জলস্তম্ভের ওজন না থাকায় সমগ্র কৈশিক নলটি জল দ্বারা পূর্ণ হয়ে যাবে।

সিসার বুলেট তৈরি করার পদ্ধতিতে পৃষ্ঠটানের ধারণাকে কীভাবে কাজে লাগানো হয়?

বাহ্যিক বল, যেমন – অভিকর্ষের অনুপস্থিতিতে যে-কোনো তরলবিন্দু পৃষ্ঠটানের প্রভাবে গোলাকার হয়। এই ধর্মকে সিসার বুলেট প্রস্তুতির পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

গলিত সিসার পাতলা ধারা একটি সুউচ্চ স্তম্ভ থেকে খাড়া নীচে রাখা ঠান্ডা জলের আধারে ফেলা হয়। শীতল জলের সংস্পর্শে এসে ওই তরলের ধারা যথেষ্ট সংখ্যায় তরলবিন্দুতে ভেঙে যায়। সেগুলি ঠান্ডা হয় এবং জমে কঠিন গোলকবিন্দুতে পরিণত হয়। গলিত সিসার ধারার এই পতন আধারে থাকা জলের বাধায় ধীরে ধীরে থেমে যায় এবং ওই জল কঠিন সিসার গোলকবিন্দুগুলির গড়ন অবিকৃত রাখতে সাহায্য করে।

একটি চকের টুকরোকে জলে ডোবালে তা থেকে সবদিকে বুদ্বুদ বেরোতে থাকে কেন?

চকের টুকরোর পৃষ্ঠতলে প্রচুর সূক্ষ্ম বায়ুপূর্ণ রন্ধ্র বর্তমান। টুকরোটি জলে নিমজ্জিত হলে কৈশিকতার জন্য ওই সরু নালিপথগুলিতে জল প্রবেশ করে এবং উপরে ওঠে। এর ফলে, ছিদ্রগুলিতে থাকা বায়ু বহিষ্কৃত হয় এবং বুদ্বুদ আকারে চকের পৃষ্ঠতল থেকে বেরোতে থাকে।


আজকের আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণির ভৌতবিজ্ঞান বইয়ের তৃতীয় অধ্যায় “পদার্থ : গঠন ও ধর্ম” এর “পৃষ্ঠটান” থেকে পরীক্ষায় আসা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা, এমনকি চাকরি বা যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও উপযোগী। কারণ, এই অধ্যায়ের প্রশ্ন প্রায়ই বিভিন্ন পরীক্ষায় কমন আসে।

আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। যদি কোনো প্রশ্ন, মতামত বা সাহায্যের প্রয়োজন হয়, নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন কিংবা টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন—আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি সর্বদা প্রস্তুত।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Share via:

মন্তব্য করুন