আজকের আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান বইয়ের তৃতীয় অধ্যায় “পদার্থ : গঠন ও ধর্ম” এর “তরল ও বায়ুর চাপ” থেকে সহজ ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তর শেয়ার করবো। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণির ইউনিট টেস্ট থেকে বার্ষিক পরীক্ষা এর জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি চাকরি বা বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পরীক্ষাতেও কাজে লাগবে। এই অধ্যায় থেকে স্কুল পরীক্ষা থেকে শুরু করে চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই প্রশ্ন আসে, তাই এই প্রশ্নোত্তরগুলো সবাইকে সাহায্য করবে। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে, যাতে সবাই বুঝতে পারেন। পড়ার শেষে এই অধ্যায়ের মুখ্য বিষয়গুলো আপনার আয়ত্তে চলে আসবে এবং যেকোনো পরীক্ষায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লিখতে পারবেন।

জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর
প্রবাহী (Fluid) কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
প্রবাহী (Fluid) – যেসব পদার্থ প্রবাহিত হতে পারে, তাদের প্রবাহী বলে।
প্রবাহীর উদাহরণ – যে-কোনো তরল ও গ্যাসীয় পদার্থ হল প্রবাহী, কারণ – এরা প্রবাহিত হতে পারে।
চাপ কাকে বলে? চাপ কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?
চাপ (Pressure) – কোনো তলের প্রতি একক ক্ষেত্রফলে লম্বভাবে প্রযুক্ত বলকে, ওই তলের ওপর প্রযুক্ত চাপ বলা হয়। তলের ক্ষেত্রফল A ও ওই তলে লম্বভাবে প্রযুক্ত বল F এবং তলের উপর প্রতিটি বিন্দুতে চাপ সমান হলে,
বা, \(P=\frac FA\)
কোনো তলে প্রযুক্ত চাপ, প্রদত্ত বল এবং তলের ক্ষেত্রফলের ওপর নির্ভর করে। প্রদত্ত বল বেশি হলে চাপ বেশি হয়। যেমন – ছুঁচের অগ্রভাগের ক্ষেত্রফল খুব কম বলে তা বেশি চাপ প্রয়োগ করে ও সহজেই চামড়ায় ঢুকে যায়। কিন্তু পেনসিলের অগ্রভাগের ক্ষেত্রফল ছুঁচের তুলনায় বেশি বলে তা কম চাপ প্রয়োগ করে ও চামড়ায় সহজে প্রবেশ করতে পারে না।
তরলের চাপ কাকে বলে? তরলের ঘাত বলতে কী বোঝায়?
তরলের চাপ (Pressure of liquid) – তরলের মধ্যে কোনো বিন্দুতে একক ক্ষেত্রফল কল্পনা করলে ওই ক্ষেত্রের ওপর তরল লম্বভাবে যে বল প্রয়োগ করে, তাকেই ওই বিন্দুতে তরলের চাপ বলে। ধরা যাক, প্রদত্ত চিত্রে তরলের মধ্যে P একটি বিন্দু নিয়ে এর চারদিকে একক ক্ষেত্রফল কল্পনা করা হল। ওই ক্ষেত্রের ওপর তরল যদি F বল প্রয়োগ করে তবে প্রদত্ত চাপ, \(P=\frac FA=F\) [∵ A = 1]

তরলের ঘাত (Thrust) – কোনো তরলসংলগ্ন তলের ওপর তরলের দ্বারা লম্বভাবে প্রযুক্ত মোট বলকেই বলা হয় ওই তলে প্রযুক্ত ঘাত। অনুভূমিক তলে রাখা বস্তুর ক্ষেত্রে ওজনই হল, বস্তুটি যে অনুভূমিক তলে রাখা হয়েছে তার ওপর ওই বস্তু দ্বারা প্রযুক্ত ঘাতের পরিমাপ।
চাপ ও ঘাতের মধ্যে সম্পর্ক কী?
চাপ ও ঘাতের সম্পর্ক –
সংজ্ঞানুসারে,
বা,
বা, ঘাত (F) = চাপ (P) × ক্ষেত্রফল (A)।
ক্ষেত্রফলের মান ধ্রুবক হলে ঘাত চাপের সমানুপাতিক।
অর্থাৎ, F ∝ P যখন A ধ্রুবক।
CGS, SI এবং FPS পদ্ধতিতে চাপ ও ঘাতের এককগুলি কী কী?
রাশির নাম | চাপ | ঘাত |
CGS পদ্ধতিতে একক | ডাইন/সেমি2 (dyn/cm2) | ডাইন (dyn) |
SI -তে একক | নিউটন/মি2 (N/m2) বা পাস্কাল (Pa) | নিউটন (N) |
FPS পদ্ধতিতে একক | পাউন্ডাল/ফুট2 (poundal/ft2) | পাউন্ডাল (poundal) |
চাপের CGS ও SI এককের মধ্যে সম্পর্ক কী?
চাপের CGS একক = ডাইন/সেমি2
চাপের SI একক = নিউটন/মিটার2 = পাস্কাল
∴ 1 পাস্কাল = 1 নিউটন/মিটার2
বা, 1 পাস্কাল = \(\frac{10^5}{10^4}\) ডাইন/সেমি2 [∵ 1 নিউটন = 105 ডাইন এবং 1 মিটার = 100 সেমি]
∴ 1 পাস্কাল = 10 ডাইন/সেমি2 – এটিই চাপের CGS ও SI এককের মধ্যে সম্পর্ক।
তলের প্রত্যেক বিন্দুতে চাপ সমান না হলে নির্দিষ্ট কোনো বিন্দুতে চাপ প্রকাশের সূত্র কী? এছাড়া, ব্যাবহারিক প্রয়োজনে চাপের কোন কোন বৃহৎ একক ব্যবহৃত হয়, এবং তাদের মান কী?
তলের প্রত্যেক বিন্দুতে চাপ সমান না হলে কোনো বিন্দুতে চাপ (P) -কে লেখা যায় \(P=\frac{\Delta F}{\Delta A}\) যেখানে, \(\Delta A\) হল ওই বিন্দুকে ঘিরে কল্পিত ক্ষেত্রফল এবং \(\Delta F\) হল ওই তলে প্রযুক্ত বল।
চাপের ব্যাবহারিক একক – ব্যাবহারিক প্রয়োজনে অনেক সময় চাপের বৃহৎ একক হিসেবে কিলোপাস্কাল (kPa) ও মেগাপাস্কাল (MPa) ব্যবহার করা হয়। এই এককগুলি প্রকৃতপক্ষে পাস্কালের গুণিতক। যেমন – 1 kPa = 1000 Pa এবং 1 MPa = 106 Pa।
চাপের মাত্রীয় সংকেত প্রতিষ্ঠা করো।
চাপের মাত্রীয় সংকেত –
\(\left[P\right]=\left[\frac FA\right]\\\)বা, \(\left[P\right]=\left[\frac{MLT^{-2}}{L^2}\right]\)
বা, \(\left[P\right]=\left[ML^{-1}T^{-2}\right]\)
তরলের মধ্যে কোনো বিন্দুতে চাপের রাশিমালা নির্ণয় করো।
প্রবাহী পদার্থের মধ্যে কোনো বিন্দুতে ক্রিয়াশীল চাপকে প্রবাহী পদার্থের উদ্স্থৈতিক চাপ বলে।

মনে করি, একটি পাত্রে ρ ঘনত্বের একটি তরল আছে। তরলের h গভীরতায় S একটি বিন্দু নেওয়া হল। S বিন্দুকে কেন্দ্র করে একটি ক্ষেত্রফল A কল্পনা করা হল। A ক্ষেত্রকে ভূমি ধরে তরলের উপরিতল পর্যন্ত একটি খাড়া স্তম্ভ কল্পনা করা হল যার দৈর্ঘ্য h। এই তরলস্তম্ভের ওজনই হল A তলের ওপর প্রযুক্ত বল।
∴ A তলে প্রযুক্ত বল = h উচ্চতাবিশিষ্ট তরলস্তম্ভের ওজন
বা, A তলে প্রযুক্ত বল = তরলস্তম্ভের ভর × অভিকর্ষজ ত্বরণ
বা, A তলে প্রযুক্ত বল = তরলস্তম্ভের আয়তন × তরলের ঘনত্ব × অভিকর্ষজ ত্বরণ
বা, A তলে প্রযুক্ত বল = Ah × ρ × g [∵ ভর = আয়তন × ঘনত্ব]
∴ A তলে প্রযুক্ত চাপ
বা, \(P=\frac{Ah\times\rho\times g}A\)
বা, \(P=Ah\times\rho\times g\)
∴ তরলের চাপ = গভীরতা ঘনত্ব × অভিকর্ষজ ত্বরণ।
যেহেতু, তরলের উপরিস্থ বায়ুমণ্ডল তরলের উপর চাপ প্রদান করে, তাই তরলের মধ্যে h গভীরতায় মোট চাপ = বায়ুমণ্ডলীয় চাপ (P0) + তরলস্তম্ভের দেওয়া চাপ = P0 + hρg।
তরলের চাপের বৈশিষ্ট্যগুলি বিবৃত করো।
তরলের চাপের বৈশিষ্ট্য (Properties of liquid Pressure) –
- অভ্যন্তরে থাকা যে-কোনো বিন্দুতে তরল ঊর্ধ্বচাপ, নিম্নচাপ ও পার্শ্বচাপ দেয়।
- স্থির তরলের মধ্যে যে-কোনো গভীরতায় অবস্থিত কোনো বিন্দুতে চাপ সবদিকে সমান হয়।
- স্থির তরলের মধ্যে যে-কোনো বিন্দুতে ওই তরলের ওপর দেওয়া চাপ – বিন্দুটির গভীরতা (h), তরলের ঘনত্ব (ρ) এবং সংশ্লিষ্ট স্থানের অভিকর্ষজ ত্বরণের (g) মানের ওপর নির্ভর করে।
- তরলের মধ্যে একই অনুভূমিক রেখায় বা তলে সব বিন্দুতে চাপ সমান হয়।
- আবদ্ধ পাত্রে স্থির তরলে প্রযুক্ত চাপ তরলের মধ্যে চতুর্দিকে সমানভাবে সঞ্চালিত হয় এবং ওই চাপ তরলসংলগ্ন পাত্রের দেয়ালে লম্বভাবে ক্রিয়া করে।
তরলের চাপের বৈশিষ্ট্যগুলি উপযুক্ত পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করো।
অথবা, একটি পরীক্ষার সাহায্যে দেখাও – তরলের মধ্যে কোনো বিন্দুতে তরল সবদিকে সমান চাপ প্রয়োগ করে।
তরলের চাপের বৈশিষ্ট্যগুলির পরীক্ষা –
প্রয়োজনীয় উপকরণ –
- কাচের ফানেল,
- রবারের পর্দা,
- রবারের নল,
- কাচনল,
- সামান্য রঙিন জল,
- জলপূর্ণ বড়ো পাত্র।

পরীক্ষা পদ্ধতি –
- একটি কাচের ফানেল নিয়ে তার চওড়া মুখটি পাতলা রবারের পর্দা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হল।
- এবার ফানেলের সরু মুখটি একটি রবারের নলের সঙ্গে লাগানো হল এবং রবারের নলের শেষপ্রান্ত কাচনলটির সঙ্গে লাগানো হল।
- কাচনলের গায়ে একটি স্কেল লাগানো থাকে এবং কাচনলের মধ্যে একফোঁটা রঙিন জল ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, যা সূচকের কাজ করে।
- এবার ফানেলটি জলপূর্ণ পাত্রের মধ্যে বিভিন্ন গভীরতায় নিয়ে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হল।
পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্ত –
- ফানেলটিকে জলপূর্ণ পাত্রের মধ্যে ধীরে ধীরে নীচে নামালে রঙিন সূচকটি ক্রমশ ডানদিকে সরে যায়। অর্থাৎ, বোঝা যায় গভীরতা বাড়লে তরলের চাপ বাড়ে।
- জলপূর্ণ পাত্রের একটি নির্দিষ্ট গভীরতায় ফানেলটি রেখে তার মুখ উপরে, নীচে, পাশে অর্থাৎ, যে-কোনো দিকে ঘোরালে দেখা যায় সূচকটি স্থির আছে। অর্থাৎ, তরলের মধ্যস্থিত কোনো বিন্দুতে চাপ সবদিকে সমান।
- ফানেলটিকে তরলের একই গভীরতায় একই অনুভূমিক তলের বিভিন্ন অবস্থানে নিয়ে গেলেও সূচকটির অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয় না। অর্থাৎ, একই অনুভূমিক তলের বিভিন্ন বিন্দুতে তরলের চাপ সমান।
∴ পরীক্ষাটি দ্বারা তরলের চাপের বৈশিষ্ট্যগুলি প্রমাণিত হয়।
চাপের ধারণা থেকে গাণিতিকভাবে দেখাও, স্থির তরলের মুক্ততল সর্বদা অনুভূমিক হয়।
ধরা যাক, স্থির তরলের মুক্ততল অনুভূমিক নয়। এক্ষেত্রে তরলের মুক্ততল প্রদত্ত ছবির মতো হলে তরলের মধ্যে একই অনুভূমিক রেখা xy -তে A ও B দুটি বিন্দু ধরা হল। A বিন্দুর গভীরতা = h1 এবং B বিন্দুর গভীরতা = h2।

∴ A বিন্দুতে ওই তরলের চাপ = h1ρg
এবং B বিন্দুতে ওই তরলের চাপ = h2ρg।
চাপের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী, তরলের মধ্যে একই অনুভূমিক রেখার উপরিস্থ সব বিন্দুতে চাপ সমান হয়। অর্থাৎ, A ও B বিন্দুতে চাপ সমান হবে।
∴ h1ρg = h2ρg
বা, h1 = h2
∴ স্থির তরলের মুক্ততল সর্বদা অনুভূমিক হবে।
তরলের চাপের পঞ্চম বৈশিষ্ট্য কে আবিষ্কার করেন এবং এটি কী নামে পরিচিত?
তরলের চাপের পঞ্চম বৈশিষ্ট্য আবিষ্কার করেন বিখ্যাত ফরাসি গণিতজ্ঞ ও দার্শনিক ব্লেইজ পাস্কাল। এটি চাপ সঞ্চালন সংক্রান্ত পাস্কালের সূত্র (Pascal’s law of transmission of pressure) নামেও পরিচিত।
উদ্স্থৈতিক কূট (Hydrostatic paradox) কী এবং এটি কীভাবে তরলের চাপের আচরণ ব্যাখ্যা করে?
উদ্স্থৈতিক কূট (Hydrostatic paradox) – কোনো পাত্রের তলদেশে তরল দ্বারা প্রযুক্ত ঘাত, পাত্রের আকার বা পাত্রের মধ্যে তরলের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে না। এটি শুধুমাত্র তরলের গভীরতা ও তলদেশের ক্ষেত্রফলের ওপর নির্ভর করে। এর অর্থ দাঁড়ায় যে, 1, 2, ও 3 নং পাত্রের তলদেশের ক্ষেত্রফল সমান ও তরলতলের উচ্চতা অভিন্ন হলে, প্রথম পাত্রে ভূমিতলে প্রযুক্ত ঘাত পাত্রে রাখা তরলের ওজনের সমান। কিন্তু দ্বিতীয় পাত্রে ঘাতের মান আবদ্ধ তরলের ওজন অপেক্ষা কম এবং তৃতীয় পাত্রে তা ওজন অপেক্ষা বেশি। এই আপাত অবিশ্বাস্য ঘটনাটিকে উদ্স্থৈতিক কূট বলা হয়।

উপাংশের ধারণা ব্যবহার করে দেখানো যায়, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে পাত্রের তলের দেওয়া প্রতিক্রিয়ার উল্লম্ব উপাংশ তরলের ওজনের একটি অংশকে প্রতিমিত করে এবং তৃতীয় ক্ষেত্রে, উপাংশটি তরলের কার্যকরী ওজন কিছু পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং, ঘটনাটি আপাতভাবে কূট (Paradox) মনে হলেও বাস্তবে তার যথাযথ ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
স্থির তরলে নিমজ্জিত কোনো তলের ওপর ক্রিয়াশীল পার্শ্বচাপ ও পার্শ্বঘাত বলতে কী বোঝায়?
পার্শ্বচাপ (Lateral pressure) ও পার্শ্বঘাত (Lateral thurst) – স্থির তরলে কোনো তলকে খাড়া বা আনতভাবে নিমজ্জিত করলে তলটির বিভিন্ন বিন্দুর গভীরতা বিভিন্ন হয়। ফলে, বিন্দুগুলির অবস্থানের ওপর নির্ভর করে চাপের মানও ভিন্ন হয়ে থাকে। ওই খাড়া তলের উপর তরলের দেওয়া কার্যকরী চাপ নির্ণয় করতে হলে ভিন্ন ভিন্ন বিন্দুতে ক্রিয়াশীল চাপের গড় বিবেচনা করতে হয়। এই গড় চাপের মানকেই সংশ্লিষ্ট তলের উপর তরলটির দেওয়া গড় চাপ বা গড় পার্শ্বচাপ বলা হয়।
পার্শ্বতলের উপর ক্রিয়াশীল এই পার্শ্বচাপকে তলের ক্ষেত্রফল দিয়ে গুণ করলে ওই তলের উপর কার্যকরী বল বা ঘাত পাওয়া যায়। একে পার্শ্বঘাত বলা হয়।
পার্শ্বচাপ ও পার্শ্বঘাতের রাশিমালা নির্ণয় করো।
ধরা যাক, একটি আয়তাকার ঘনক (দৈর্ঘ্য a ও প্রস্থ b) খাড়াভাবে ρ ঘনত্ববিশিষ্ট একটি পাত্রে রাখা তরলের মধ্যে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত আছে।

তরলের উপরিতল থেকে AB বাহুর গভীরতা h।
∴ একই অবস্থান সাপেক্ষে CD বাহুর গভীরতা (h + b)।
এখন AB ও CD বাহু দুটির উপর যে-কোনো বিন্দুতে তরল দ্বারা প্রযুক্ত চাপ যথাক্রমে hρg এবং (h + b)ρg।
∴ ABCD তলের উপর ক্রিয়াশীল গড় পার্শ্বচাপ
= \(\frac{h\rho g+\left(h+b\right)\rho g}2\)
= \(\left(h+\frac b2\right)\rho gg\)
∴ ABCD তলের উপর ক্রিয়াশীল পার্শ্বঘাত
= গড় পার্শ্বচাপ × ক্ষেত্রফল
= \(\left(h+\frac b2\right)\rho g\times ab\)
তরলের সমোচ্চশীলতা ধর্ম বলতে কী বোঝায়?
তরলের সমোচ্চশীলতা ধর্ম – বিভিন্ন আকারের এবং বিভিন্ন আয়তনের কয়েকটি সংযুক্ত পাত্রের কোনো একটিতে তরল ঢাললে সবকটি পাত্রেই একটি নির্দিষ্ট সময় পর তরলতল সমান উচ্চতায় আসে। এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে তরলের সমোচ্চশীলতা ধর্ম (সম উচ্চতায় আসতে চাওয়ার প্রবণতা) বলা হয়।
একটি সহজ পরীক্ষা ব্যবস্থার সাহায্যে কীভাবে এই ধর্মটি প্রদর্শন করা যায় তা ব্যাখ্যা করো।
নীচের পরীক্ষা ব্যবস্থাটির সাহায্যে তরলের সামাচ্চশীলভা ধর্ম সহজেই দেখানো সম্ভব –
উপকরণ –
- একটি বড়ো অনুভূমিক জলপূর্ণ পাত্র,
- বিভিন্ন আকার ও আয়তনের একাধিক পাত্র যেগুলি বড়ো পাত্রটির সঙ্গে একই তলে অবস্থিত এবং পরস্পর সংযুক্ত,
- একটি পার্শ্বনল।
পরীক্ষা পদ্ধতি – জলপূর্ণ অনুভূমিক পাত্রের সঙ্গে পার্শ্বনলটি যুক্ত করে তার সাহায্যে বড়ো পাত্রটিতে জল প্রবেশ করানো হল।
পর্যবেক্ষণ – জল বড়ো পাত্রটিতে প্রবেশ করা মাত্রই দেখা যায়, প্রতিটি পাত্রে জল প্রবেশ করেছে। বিভিন্ন পাত্রে জলের আয়তন বিভিন্ন হলেও দেখা যায়, প্রত্যেক পাত্রে জলতলের উচ্চতা সমান।

ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্ত – একই অনুভূমিক তলে অবস্থিত বিভিন্ন বিন্দুতে তরলের চাপ সমান। আবার, নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট তরল দ্বারা কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুতে দেওয়া চাপ কেবলমাত্র তার উচ্চতার ওপর নির্ভরশীল। এই দুই কারণে প্রত্যেক পাত্রে জলতলের উচ্চতা সমান হওয়ায় পাত্রগুলিতে জলের উপরিতল অনুভূমিক অর্থাৎ, একই উচ্চতায় থাকে। জল ছাড়া অন্য যে-কোনো তরল দিয়ে পরীক্ষা করেও একই সিদ্ধান্তে আসা যায়।
জলের সমোচ্চশীলতা ধর্মকে ব্যবহারিক জীবনে কীভাবে কাজে লাগানো হয়?
সামাচ্চশীলতা ধর্মের ব্যাবহারিক প্রয়োগ – জলের সমোচ্চশীলতা ধর্মকে কাজে লাগিয়ে শহরের অফিস, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, কারখানা ও বাসগৃহে জল সরবরাহ করা হয়। নদীতে বাঁধ দিয়ে জল ধরে রেখে সেই জল দিয়ে জমিতে জলসেচের ব্যবস্থা করা হয়, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থাও এই ধর্মের ওপর নির্ভরশীল।
জলের সমোচ্চশীলতা ধর্মের একটি প্রাকৃতিক দৃষ্টান্তের উদাহরণ দাও। এর কার্যনীতি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো। এর কোনো ব্যবহার আছে কি?
জলের সমোচ্চশীলতা ধর্মের একটি প্রাকৃতিক দৃষ্টান্ত হল আর্টেজীয় কূপ।
জলের সমোচ্চশীলতা ধর্মের কার্যনীতি – ভূপৃষ্ঠের নীচে শিলাস্তরে দু-ধরনের স্তর স্তর দেখতে পাওয়া যায় –
- বালি, কাঁকড় ও বেলেমাটি নির্মিত প্রবেশ্য এবং
- পাথর, শ্লেট, কাদামাটি ইত্যাদি নির্মিত অপ্রবেশ্য স্তর।
কোনো কোনো স্থানে দুটি অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের মাঝে প্রবেশ্য শিলাস্তর প্রায় অর্ধচন্দ্র বা U আকৃতির মতো বাঁকানো থাকে এবং তার দুই প্রান্ত ভূপৃষ্ঠের উপর উন্মুক্ত থাকে। বৃষ্টির জল ওই প্রবেশ্য স্তরের প্রান্ত দিয়ে ঢুকে প্রবেশ্য স্তরে জমা হয়। প্রবেশ্য স্তরের নীচে অপ্রবেশ্য স্তর থাকায় জল আর নীচে যেতে পারে না। উপরের অপ্রবেশ্য স্তরের মধ্য দিয়ে প্রবেশ্য শিলাস্তর পর্যন্ত একটি কূপ খনন করা হলে জলের সমোচ্চশীলতা ধর্মের জন্য জল ফোয়ারার মতো প্রবল বেগে উপরে উঠে আসে। একেই আর্টেজীয় কূপ বলে। ফ্রান্সের আঁতোয়া অঞ্চলে প্রথম এ ধরনের কূপের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল বলে এদের ‘আর্টেজীয় কূপ’ (Artesian well) বলা হয়।

জলের সমোচ্চশীলতা ধর্মের ব্যবহার – অস্ট্রেলিয়া ও সাহারা মরুভূমি অঞ্চলে জমিতে জলসেচের প্রয়োজনে এই ধরনের কূপ ব্যবহার করা হয়।
উষ্ণপ্রস্রবণ (Hot spring) কী এবং এটি কীভাবে গঠিত হয়? পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমে উষ্ণপ্রস্রবণের কিছু উদাহরণ কী কী?
কিছু কিছু আর্টেজীয় কূপ থেকে ভূগর্ভস্থ তাপশক্তির প্রভাবে উত্তপ্ত অতি উষ্ণ জল বা ক্ষেত্রবিশেষে গরম জলের বাষ্প নির্গত হতে দেখা যায়। এদের উষ্ণপ্রস্রবণ (Hot spring) বলে। উষ্ণপ্রস্রবণের জলে বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ মিশ্রিত থাকায় এই জলে স্নান স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী হয়। পশ্চিমবঙ্গের বক্রেশ্বর, সিকিম রাজ্যের ইয়ুমথাং উপত্যকা অঞ্চলে এ ধরনের উষ্ণপ্রস্রবণের অস্তিত্ব দেখা যায়।

শহরে জল সরবরাহ ব্যবস্থায় সমোচ্চশীলতা ধর্ম কীভাবে কাজ করে? ব্যাখ্যা করো।
শহরে জল সরবরাহ ব্যবস্থা – জলের সমোচ্চশীলতা ধর্মকে কাজে লাগিয়ে বড়ো বড়ো শহরে পৌর প্রতিষ্ঠান, বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করে থাকে। এর বিভিন্ন ধাপগুলি নিম্নরূপ –

- কাছাকাছি কোনো নদী বা জলাশয় থেকে প্রথমে একটি মোটা মুখ্য নলের সাহায্যে বড়ো চৌবাচ্চায় (Settling tank) জল তোলা হয়।
- সেখানে বালি, কাদা ইত্যাদি অদ্রাব্য বস্তু থিতিয়ে পড়লে যে পরিষ্কার জল পাওয়া যায় তা মিহি বালি, মোটা বালি, খোয়া প্রভৃতির মধ্যে চালনা করে পরিস্রুত (filter) করা হয়।
- এই পরিস্রুত জলকে অন্য বড়ো চৌবাচ্চায় নিয়ে সূর্যরশ্মি, বায়ু, ক্লোরিন ইত্যাদির প্রয়োগে জীবাণুমুক্ত ও পানের উপযোগী করা হয়।
- এরপর জীবাণুমুক্ত পরিস্রুত জল পাম্পের সাহায্যে একটি উঁচু জলাধারে তোলা হয়। শহরের সর্বোচ্চ যে স্থানে জল সরবরাহ করতে হয় তার থেকেও বেশি উচ্চতায় জলাধারটি বসানো থাকে। জলাধারের সঙ্গে যুক্ত মুখ্য নল এবং তা থেকে নির্গত বিভিন্ন শাখানলের মাধ্যমে এই জল শহরের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়।
- মূল নল থেকে শাখা নলগুলিকে বাড়ির কল এবং রাস্তার কলের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। কলের প্যাঁচ খুললে জল তার সমোচ্চশীলতা ধর্মের জন্য জলাধারের সমান উচ্চতায় পৌঁছাতে চায়। ফলে, জল তীব্রবেগে কলের খোলা মুখ থেকে বেরিয়ে আসে। গভীরতার ওপরে জলের চাপ নির্ভরশীল বলে, একতলায় যত জোরে জল পড়ে দোতলায় তার থেকে কম এবং তিনতলায় আরও কম জোরে জল পড়ে। পাইপ লাইনের দূরত্ব বেড়ে গেলে জলের চাপ কমে যাওয়ায় দূরবর্তী কলগুলি থেকে জল পড়ার বেগ কমে যায়। স্থির তরলের ক্ষেত্রে একই গভীরতায় তরলের চাপ সমান হলেও বার্নোলির নীতি অনুসারে, গতিশীল তরলের ক্ষেত্রে চাপ কমে যায়, ফলে জলের নির্গমন বেগও হ্রাস পায়।
জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে সমোচ্চশীলতা ধর্ম কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে? ব্যাখ্যা করো।
জলবিদ্যুৎ সৃষ্টি – বড়ো বড়ো নদীতে বাঁধ দিয়ে জল আটকানো হয় এবং উঁচু জলাধারে সঞ্চয় করা হয়। সেই জল ছেড়ে দিলে সমোচ্চশীলতা ধর্মের জন্য জলাধারের জলের উচ্চতায় আসতে চায় ও প্রবল বেগে নীচে পড়ে। জলের এই বেগকে কাজে লাগিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়।
এ ছাড়াও সমোচ্চশীলতা ধর্মের জন্যই হিমবাহ থেকে সৃষ্টি হওয়া নদী পাহাড় থেকে সমতল ভূমিতে নেমে আসে।
বায়ুমণ্ডলীয় চাপ কাকে বলে?
বায়ুমণ্ডলীয় চাপ (Atmospheric pressure) – কোনো নির্দিষ্ট স্থানে কোনো বিন্দুর চারদিকে একক ক্ষেত্রফলের উপর লম্বভাবে বায়ুমণ্ডল তার ওজনের জন্য যে পরিমাণ বল প্রয়োগ করে, তাকে ওই স্থানের বায়ুমণ্ডলীয় চাপ বলে।
বায়ুমণ্ডলীয় চাপ সৃষ্টি হয় কেন? এর মান ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতার সঙ্গে কীভাবে বদলায়?
বায়ুমণ্ডলীয় চাপ সৃষ্টির কারণ – যে বস্তুর ওজন আছে তারই চাপ দেওয়ার ক্ষমতা বর্তমান। ভূপৃষ্ঠকে ঘিরে যে বিশাল অদৃশ্য গ্যাসীয় আবরণ আছে, তাকে বায়ুমণ্ডল বলে। পৃথিবীর উপরে অবস্থিত এই বায়ুমণ্ডলকে অসংখ্য অনুভূমিক স্তরের সমষ্টি হিসেবে ভাবা যায়। এর একটি স্তর অন্য আর একটির উপরে থাকায় বায়ুমণ্ডলের কোনো বিশেষ স্তরকে তার উপরে অবস্থিত স্তরগুলির ওজনের জন্য চাপ সহ্য করতে হয়। এভাবেই বায়ুমণ্ডলীয় চাপ সৃষ্টি হয়ে থাকে।
উচ্চতার সঙ্গে বায়ুমণ্ডলীয় চাপের পরিবর্তন – ভূপৃষ্ঠে কোনো নির্দিষ্ট স্তর সংলগ্ন বায়ুস্তর ছাড়াও উপরে থাকা সমস্ত বায়ুস্তরগুলির সম্মিলিত ওজনের জন্য চাপ কার্যকরী হয় বলে ভূপৃষ্ঠের উপর বায়ুমণ্ডলের চাপ সবথেকে বেশি হয়। স্বাভাবিকভাবেই ভূত্বক সংলগ্ন অঞ্চলের বায়ুস্তরের ঘনত্বও সর্বাধিক হয়। ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উপরে ওঠা যায় বায়ুর ঘনত্বও ক্রমশ কমতে থাকে, বায়ুস্তরও তত পাতলা হয় এবং তার চাপ হ্রাস পায়।
প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপের সংজ্ঞা দাও। CGS পদ্ধতি ও SI -তে এর মান নির্ণয় করো।
প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ (Standard atmospheric pressure) – 45° অক্ষাংশে সমুদ্রপৃষ্ঠে 0°C উষ্ণতায় 76 সেমি উঁচু পারদস্তম্ভ যে চাপ প্রয়োগ করে, তাকে প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ বলা হয়।
CGS পদ্ধতিতে প্রমাণ চাপের রাশিমালা – CGS পদ্ধতিতে প্রমাণ চাপের মান 76 সেমি উঁচু পারদস্তম্ভের চাপের সমান।
∴ P = hρg
বা, P = 76 × 13.6 × 980 ডাইন/সেমি2
বা, P = 1.013 × 106 ডাইন/বর্গসেমি [পারদের ঘনত্ব (ρ) = 13.6 গ্রাম/সেমি3, অভিকর্ষজ ত্বরণ (g) = 980 সেমি/সে2]।
SI -তে প্রমাণ চাপের রাশিমালা –
প্রমাণ চাপ (P) = 0.76 × 13600 × 9.8 [h = 0.76 m, p = 13.6 × 103 kg/m3, g = 9.8 m/s2]
বা, প্রমাণ চাপ (P) = 1.013 × 105 N/m2
বা, প্রমাণ চাপ (P) = 1.013 Pa।
টরিসেলির পরীক্ষায় ব্যবহৃত কাচনলের ভিতর পারদস্তম্ভের উপরের ফাঁকা স্থানকে কী বলা হয়, এবং এটি সম্পূর্ণ শূন্যস্থান কি না?
টরিসেলির পরীক্ষা – ইতালীয় বিজ্ঞানী ইভানজেলিস্টা টরিসেলি সর্বপ্রথম বায়ুর চাপ পরিমাপের একটি অত্যন্ত সহজ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। প্রায় 1 মিটার লম্বা একমুখ খোলা একটি কাচনল বিশুদ্ধ ও শুষ্ক পারদ দিয়ে ভরতি করা হয়। নলের খোলামুখটি এবার আঙুল দিয়ে আটকে নলটিকে উলটিয়ে এর খোলামুখটি একটি পারদপূর্ণ পাত্রে ডুবিয়ে ধরে বুড়ো আঙুলটি সরিয়ে নেওয়া হয়।
দেখা যায় যে, নলের ভিতর পারদ কিছুটা নেমে এসে স্থির হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এই অবস্থায় পাত্রের পারদতল থেকে নলে আবদ্ধ পারদস্তম্ভের উচ্চতা হয়েছে প্রায় 76 সেমি।
পাত্রের উন্মুক্ত পারদ তলে বায়ু যে নিম্নমুখী চাপ দেয় তা পারদের মধ্য দিয়ে সঞ্চালিত হয়ে নলের মধ্যস্থিত পারদস্তম্ভের উপর ঊর্ধ্বাভিমুখে ক্রিয়া করে। বায়ুমণ্ডলের চাপ ও নলের মধ্যে দাঁড়ানো পারদস্তম্ভের চাপ সমান হলে পারদস্তম্ভ স্থির অবস্থায় আসে।

বিশেষ আলোচনা –
- কাচনলের ভিতর পারদস্তম্ভের উপরে যে ফাঁকা স্থান থাকে, তাকে টরিসেলির শূন্যস্থান (Torricellian vacuum) বলে। প্রকৃত অর্থে যদিও এই অংশটি শূন্য নয়। এর মধ্যে সামান্য পারদবাষ্প থাকে, যা ঘরের উষ্ণতায় সম্পৃক্ত।
- সরু বা মোটা যে-কোনো ব্যাসের কাচনল পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, প্রতিক্ষেত্রে পারদস্তম্ভের উচ্চতা একই হয়, কারণ – চাপের মান ক্ষেত্রফলের ওপর নির্ভর করে না। তবে নলটি খুব সরু হলে পৃষ্ঠটানের জন্য পারদস্তম্ভের উচ্চতার পরিবর্তন হতে পারে।
- নলকে আনত করলে নলের মধ্যে আরও পারদ প্রবেশ করে। নতিকোণের মান যথেষ্ট বৃদ্ধি করলে টরিসেলির শূন্যস্থানটি সম্পূর্ণই পারদ দ্বারা অধিকৃত হয়, যদিও পারদস্তম্ভের উল্লম্ব উচ্চতা একই (অর্থাৎ, 76 সেমি) থাকে।
ব্যারোমিটার বা চাপমান যন্ত্র বলতে কী বোঝায়? এর প্রকারভেদ লেখো?
ব্যারোমিটার (Barometer) – বায়ুমণ্ডলের চাপ যে যন্ত্রের সাহায্যে মাপা হয়, তাকে বলা হয় বায়ুচাপমাপক বা চাপমান যন্ত্র বা ব্যারোমিটার।
ব্যারোমিটার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, যেমন – ফর্টিন ব্যারোমিটার, অ্যানিরয়েড বা নিস্তরল ব্যারোমিটার ইত্যাদি। বায়ুচাপ মাপার কাজে মূলত ফর্টিন ব্যারোমিটারই বেশি ব্যবহৃত হয়।
ফর্টিন ব্যারোমিটারের গঠন ও কার্যপদ্ধতি চিত্রসহ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।
ফর্টিন ব্যারোমিটার (Fortin’s barometer) – টরিসেলির পরীক্ষার ওপর নির্ভর করেই ফর্টিন ব্যারোমিটার যন্ত্রটি নির্মাণ করা হয়। পারদস্তম্ভের উচ্চতা নির্ভুলভাবে মাপার জন্য এতে বিশেষ কয়েকটি ব্যবস্থা থাকে।
ফর্টিন ব্যারোমিটারের গঠন –

- প্রায় 1 মিটার লম্বা সমব্যাসযুক্ত একটি একমুখ বন্ধ কাচনলকে বিশুদ্ধ ও শুষ্ক পারদে পূর্ণ করে একটি পারদপূর্ণ পাত্রে নিমজ্জিত রাখা হয়।
- পারদপাত্রের উপরের অংশটি কাচ ও নীচের অংশটি পিতল দ্বারা নির্মিত হয়। বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করার জন্য কাচনলটিকে একটি পিতলের নলের মধ্যে বসানো থাকে।
- পিতলের নলের গায়ে একটি মূল স্কেল লাগানো থাকে, যার সঙ্গে সূক্ষ্ম পাঠগ্রহণের উদ্দেশ্যে একটি ভার্নিয়ার স্কেল যুক্ত থাকে।
- কাচনলের পারদস্তম্ভের উপরিতল দেখার জন্য পিতলের নলের উপরের দিকের কিছুটা অংশ কাটা থাকে।
- পারদপাত্রের তলদেশ স্যাময় চামড়া দিয়ে তৈরি হয়। চামড়ার থলির মধ্য দিয়ে বায়ু চলাচল করতে পারলেও পারদ পারে না। থলির নীচে একটি স্কু লাগানো থাকে।
- স্ক্রুটিকে ঘুরিয়ে চামড়ার থলির পারদতলকে উঠিয়ে নামিয়ে আইভরি পিনের সঙ্গে স্পর্শ করানো হয়। পিনের অগ্রভাগ স্কেলের শূন্য দাগের সঙ্গে একরেখায় থাকে। হাতলের সাহায্যে ভার্নিয়ার স্কেলটিকে মূল স্কেলের গা বরাবর ওঠানো-নামানো যায়। উষ্ণতা মাপার জন্য ব্যারোমিটারের সঙ্গে একটি থার্মোমিটার যুক্ত থাকে।
ফর্টিন ব্যারোমিটারের কার্যপদ্ধতি –
- ব্যারোমিটারটিকে একটি আংটা বা অন্য কোনো অবলম্বন থেকে খাড়াভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
- নীচের স্ক্রুটিকে এরপর ঘুরিয়ে পারদপাত্রের পারদতলকে আইভরি পিনের অগ্রভাগের সঙ্গে স্পর্শ করাতে হবে।
- এরপর হাতল ঘুরিয়ে ভার্নিয়ার স্কেলের নীচের প্রান্তটিকে নলের পারদস্তম্ভের উত্তল তলের সঙ্গে স্পর্শকীয়ভাবে রাখা হয়।
- মূল স্কেল ও ভার্নিয়ারের পাঠ নিয়ে পারদস্তম্ভের উচ্চতা নির্ণয় করে তা থেকে বায়ুমণ্ডলের চাপ মাপা হয়।
ব্যারোমিটারের সাহায্যে কীভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব হয়?
বায়ুচাপ মাপা ছাড়াও আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার কাজে ব্যারোমিটারের ব্যবহার দেখা যায়।
- ব্যারোমিটারের পাঠ হঠাৎ দ্রুত কমতে থাকলে বুঝতে হবে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে, উচ্চচাপযুক্ত অঞ্চল থেকে বায়ু প্রবল বেগে বওয়ার অর্থাৎ, ঝড় ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।
- বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়লে বায়ুর চাপ কমে যায়। তাই ব্যারোমিটারের পাঠ ধীরে ধীরে কমতে থাকার অর্থ বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বাড়ছে। ফলে, বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
- ব্যারোমিটারের পাঠ যদি ধীরে ধীরে বাড়ে তাহলে বুঝতে হবে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমছে। অর্থাৎ, আবহাওয়া শুষ্ক ও পরিষ্কার থাকার সম্ভাবনা বা রৌদ্রজ্জ্বল দিনের পূর্বাভাস পাওয়া যায়।
- পারদস্তম্ভের উচ্চতার হঠাৎ বৃদ্ধি নির্দেশ করে বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ অনেকখানি হ্রাস পেয়েছে অর্থাৎ, বায়ুচাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ থেকে অনুমান করা যায়, প্রবল বেগে শুকনো হাওয়া বইতে পারে।

উচ্চতা পরিমাপের কাজে ব্যারোমিটারকে কীভাবে ব্যবহার করা হয়?
উচ্চতা নির্ণয়ের কাজে ব্যারোমিটারের ব্যবহার – ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ হ্রাস পায়। সুতরাং, দুটি স্থানে বায়ুমণ্ডলীয় চাপের পাঠ নিয়ে এবং তা থেকে চাপের পার্থক্য নির্ণয় করে দুই স্থানে উচ্চতার পার্থক্য নির্ণয় করা সম্ভব।
ধরা যাক, সমুদ্রতলে ও কোনো উঁচু স্থানে (বহুতল বাড়ি বা পাহাড়ের শীর্ষে) ব্যারোমিটার পাঠ যথাক্রমে h1 ও h2 পারদস্তম্ভের চাপের সমান। ওই স্থানের উচ্চতা H, বায়ুর গড় ঘনত্ব d ও পারদের ঘনত্ব ρ হলে, H উচ্চতার বায়ুস্তম্ভের চাপ = (h1 – h2) উচ্চতার পারদস্তম্ভের চাপ বা Hdg = (h1 – h2)ρg
বা, \(H=\frac{\left(h_1-h_2\right)\rho}d\)
এই সম্পর্কটি ব্যবহার করে উচ্চতার মান সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব। নিস্তরল ব্যারোমিটার ব্যবহার করে এই পদ্ধতির সাহায্যে উড়োজাহাজের উচ্চতা মাপা হয়।
ব্যারোমিটারে পারদ ব্যবহারের সুবিধাগুলি লেখো।
ব্যারোমিটারে পারদ ব্যবহারের সুবিধা –
- পারদের আয়তন প্রসারণ অত্যন্ত নিয়মিত।
- চাপের সঙ্গে পারদ চকচকে ও অস্বচ্ছ হওয়ায় এর ঊর্ধ্বসীমা কাচের ভিতর দিয়ে স্পষ্ট দেখা যায়।
- বিশুদ্ধ পারদ কাচপাত্র ভেজায় না বা কাচনলে লেগে থাকে না, ফলে পাঠগ্রহণ সুবিধাজনক হয়।
- অন্যান্য তরলের তুলনায় পারদকে বিশুদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়।
- পারদ ব্যবহার করে 1 মিটার দৈর্ঘ্যের কাচনলের সাহায্যেই প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ নির্ণয় করা সম্ভব হয়।
- অন্যান্য সহজলভ্য তরলের তুলনায় পারদ কম উদবায়ী।
বায়ুমণ্ডলীয় চাপ পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন এককের মধ্যে ‘টর’ কী এবং এটি কত পাস্কালের সমান?
ডাইন/সেমি2 বা N/m2 ছাড়াও বায়ুমণ্ডলীয় চাপকে বিভিন্ন এককে প্রকাশ করা হয়। অনেক সময় শুধুমাত্র উচ্চতার সাহায্যে (যেমন – 76 সেমি পারদস্তম্ভ) বায়ুচাপকে নির্দেশ করা হয়। টরিসেলির নামাঙ্কিত ‘টর’ এককেও বায়ুচাপকে মাপা হয়। 1 টর = 1 mm পারদস্তম্ভের চাপ = 10-3 × 13600 × 9.8 Pa ≈ 133 Pa। আবহাওয়া বিজ্ঞানে বায়ুচাপ মাপার কাজে ‘বার’ ও ‘মিলিবার’ একক দুটি ব্যবহৃত হয়। 1 বার = 105 Pa, 1 মিলিবার = 102 Pa।
সাইফন ও সাইফন ক্রিয়া বলতে কী বোঝায়?
সাইফন – সাইফন হল একটি উলটানো U আকৃতির অসম দৈর্ঘ্যের বাহুবিশিষ্ট দুমুখ খোলা নল যার সাহায্যে কোনো পাত্রকে নাড়াচাড়া না করে ওই পাত্রে রাখা তরলকে অন্য পাত্রে স্থানান্তরিত করা যায়। কাচ, রবার বা পলিথিনের নলকে সাইফন হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
সাইফন ক্রিয়া – সাইফন নলটিকে কোনো তরল দিয়ে পূর্ণ করে তার ছোটো বাহুকে ওই একই তরল দ্বারা পূর্ণ খোলামুখ যুক্ত পাত্রে ডুবিয়ে রাখলে দেখা যায়, ওই পাত্র থেকে তরল নলটির মধ্য দিয়ে অবিরাম প্রবাহিত হয়ে বড়ো বাহুর মুখ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। পাত্রের তরলতল ছোটো বাহুর মুখের নীচে না নেমে আসা পর্যন্ত অবিরাম তরলপ্রবাহ চলে।
এভাবে নাড়াচাড়া না করে এক পাত্র থেকে অন্যত্র তরল স্থানান্তরের পদ্ধতিকেই বলা হয় সাইফন ক্রিয়া।
সাইফনের ক্রিয়া ব্যাখ্যা করো। এর প্রয়োগগুলি লেখো।
সাইফনের কার্যনীতি – ধরা যাক, B ও C বিন্দু দুটি সাইফনের দুটি বাহুর উপরের অংশে তরলের মধ্যে একই অনুভূমিক তলে অবস্থিত।

আরও ধরা যাক, h1 = পাত্রের তরল তল থেকে B বিন্দুর উচ্চতা। h2 = বড়ো বাহুর খোলামুখ D থেকে C বিন্দুর উচ্চতা। ρ = তরলের ঘনত্ব। P = বায়ুমণ্ডলীয় চাপ। B বিন্দুতে চাপ = (P – h1ρg) এবং C বিন্দুতে চাপ = (P – h2ρg)
যেহেতু, h2 > h1, তাই B বিন্দুতে চাপ > C বিন্দুতে চাপ।
অর্থাৎ, B থেকে C বিন্দুর দিকে তরল প্রবাহিত হবে। B বিন্দু থেকে তরল BC অভিমুখে প্রবাহিত হলে শূন্যস্থান পূরণের জন্য বায়ুমণ্ডলীয় চাপের ক্রিয়ায় তরল AB নল বরাবর উপরে উঠবে। এই প্রক্রিয়ায় সাইফনের মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট অভিমুখে, চাপের পার্থক্যের জন্য এই তরলের প্রবাহ অবিরাম চলতে থাকবে।
সাইফনের প্রয়োগ –
- শৌচাগারের স্বয়ংক্রিয় ফ্লাস (Automatic flush) সাইফনের নীতিতে কাজ করে।
- পেট্রোলের ট্যাংক থেকে পেট্রোল স্থানান্তকরণের সময় সাইফন ব্যবহার করা হয়।
- রাজমিস্ত্রিরা জল স্থানান্তরের কাজে পলিথিনের পাইপকে বাঁকিয়ে সাইফন হিসেবে ব্যবহার করেন।
সাইফন ক্রিয়ার শর্তগুলি লেখো।
সাইফন ক্রিয়ার শর্তগুলি হল –
- সাইফনকে প্রথমে তরলপূর্ণ করে নিতে হবে।
- ছোটো বাহুটি যতক্ষণ তরলে ডুবে থাকবে, ততক্ষণ সাইফন ক্রিয়া করবে।
- ছোটো বাহুতে তরলতলের উচ্চতা (h1), এই তরল দিয়ে তৈরি ব্যারোমিটারের তরলস্তম্ভের উচ্চতা অপেক্ষা কম হতে হবে। অর্থাৎ, তরলটি জল হলে h1 < 10 m এবং পারদ হলে h1 < 76 cm হতে হবে।
- বড়ো বাহুতে তরলস্তম্ভের উচ্চতা সবসময় ছোটো বাহুর তরলস্তম্ভের উচ্চতা অপেক্ষা বেশি হতে হবে। না হলে সাইফন ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে।
- বায়ুশূন্য স্থানে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ না থাকায় সাইফন কাজ করে না।
সাইফন ক্রিয়ার সাহায্যে কীভাবে প্রবাহীর স্থানান্তরণ করা হয়? কীভাবে সাইফন ক্রিয়ায় তরল প্রবাহের হার বৃদ্ধি করা যায়?
যে প্রবাহীকে সাইফনের সাহায্যে স্থানান্তরিত করতে হবে সেই প্রবাহী দ্বারা সাইফনের নলটি ভরতি করা হয়। এবার সাইফনের ছোটো বাহুকে সেই প্রবাহীপূর্ণ পাত্রে প্রবেশ করালে সাইফনের বড়ো বাহুর মুখ দিয়ে প্রবাহীটি অবিরামভাবে বেরিয়ে আসে। প্রবাহীপূর্ণ পাত্রের তরলতল ছোটো বাহুর মুখের নীচে নেমে না আসা পর্যন্ত এই প্রবাহ চলতে থাকে। এভাবে সাইফন ক্রিয়ার সাহায্যে প্রবাহীর স্থানান্তরণ করা হয়।
ধরা যাক, সাইফন ক্রিয়ায় তরল প্রবাহের হার B এবং C বিন্দুর মধ্যে চাপের পার্থক্য দ্বারা নির্ণীত হয়। এখন B ও C বিন্দুর মধ্যে চাপের পার্থক্য PB – PC = (P – ρgh1) – (P – ρgh2) = (h2 – h1)ρg। চাপের পার্থক্যের রাশিমালা থেকে বোঝা যায় (h2 – h1) -এর মান যত বেশি হয় অর্থাৎ, সাইফনের বড়ো বাহু ছোটো বাহু অপেক্ষা যত বেশি লম্বা হয় তরল প্রবাহের হার তত বাড়ে।
উদ্স্থৈতিক চাপের সাহায্য নিয়ে কী কী কাজ করা যেতে পারে?
উদ্স্থৈতিক চাপের সাহায্যে বিভিন্ন কাজ করা হয়। যেমন –
- সাইফন ক্রিয়ার সাহায্যে স্থির অবস্থায় থাকা একটা পাত্রের তরলকে অন্য একটি অপেক্ষাকৃত নিচু জায়গায় রাখা পাত্রে স্থানান্তর করা যায়।
- উদ্স্থৈতিক চাপের জন্য জলের সমোচ্চশীলতা ধর্ম দেখা যায়। জলের এই ধর্মকে কাজে লাগিয়ে শহরাঞ্চলে বিভিন্ন বাড়িতে জল সরবরাহ করা হয়।
- বায়ুমণ্ডলের উদ্স্থৈতিক চাপ 76 cm পারদস্তম্ভের চাপের সমান। এই ধর্মকে কাজে লাগিয়ে ব্যারোমিটার তৈরি করা হয় এবং তার সাহায্যে বিভিন্ন কাজ করা সম্ভব হয়।
- কাঠ, মোম ইত্যাদি পদার্থ জলে ভেসে থাকে উদ্স্থৈতিক চাপের জন্য।
- হাইড্রলিক লিভারে উদ্স্থৈতিক চাপকে ব্যবহার করে বড়ো বড়ো গাড়িকে উপরে তোলা সম্ভব হয়।
- U আকৃতির নলের সাহায্যে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব হয়।
- উদ্স্থৈতিক চাপের সাহায্যে তরল পদার্থের উপরিতল সমতল করা যায়।
- মানবদেহের রক্তের চাপ নির্ণয় করা যায়।
উদ্স্থৈতিক চাপকে কাজে লাগিয়ে প্রদত্ত কাজগুলি লেখো।
উদ্স্থৈতিক চাপকে কাজে লাগিয়ে প্রদত্ত কাজগুলিও করা যায় –
- হাইড্রলিক প্রেস – এক ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার ঘাত বৃদ্ধির নীতি প্রয়োগ করে আধুনিক হাইড্রলিক প্রেস নামক যন্ত্রটি আবিষ্কার করেন। এর সাহায্যে প্রচণ্ড ঘাতের উদ্ভব ঘটানো যায়।
- হাইড্রলিক লিফ্ট – কারখানায় বা মোটর গ্যারেজে মোটরগাড়ি অথবা কোনো ভারী বস্তুকে উপরে তোলার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।
- হাইড্রলিক ব্রেক – গাড়ি থামানোর জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।
বোধমূলক প্রশ্নোত্তর
সমতল রাস্তায় হাঁটলে পায়ে লাগে না, কিন্তু পাথুরে রাস্তায় হাঁটলে পায়ে লাগে কেন?
সমতল রাস্তায় হাঁটার সময় দেহের সমগ্র ওজন বিস্তৃত ক্ষেত্রফল জুড়ে কাজ করে বলে সৃষ্ট চাপের পরিমাণ কম হয়। তাই কোনো আঘাতের অনুভূতি বোধ হয় না।
পাথুরে রাস্তায় হাঁটতে গেলে পাথরখণ্ডের তীক্ষ্ণাগ্র প্রান্তযুক্ত অংশের উপর পা পড়লে দেহের ওজন অতি ক্ষুদ্র ক্ষেত্রফলে ক্রিয়াশীল হয়। এর ফলে বলের পরিমাণ এক থাকলেও, \(P=\frac FA\) সম্পর্ক অনুযায়ী পায়ের উপর কার্যকরী চাপের মান বহুগুণ বেড়ে যায়। একারণেই পাথুরে রাস্তায় হাঁটলে পায়ে লাগে।
ছুরির ধার তীক্ষ্ণ হলে জিনিস কাটা যায় কিন্তু ভোঁতা হলে কাটা যায় না কেন?
আমরা জানি,
∴ একই বল প্রয়োগের ক্ষেত্রে, চাপ ∝
অর্থাৎ, ক্ষেত্রফল যত কম হবে চাপ তত বেশি হবে। ছুরির ধার তীক্ষ্ণ হলে ক্ষেত্রফল কম হয় ও চাপ বেশি হয়। তাই সহজে জিনিস কাটা যায়। কিন্তু ছুরির ধার ভোঁতা হলে ক্ষেত্রফল বেশি হয় ও চাপ কম হয়। তাই সহজে জিনিস কাটা যায় না।
30 কিগ্রা ভরের একটি ছাত্র বালিতে পা দিলে তার পা 25 কিগ্রা ভরের একটি ছাত্রের চেয়ে বেশি ঢুকে যায়। এর কারণ কী?
দুটি বালকের পায়ের ক্ষেত্রফল প্রায় সমান এবং 25 কিগ্রা ভরের বালকের তুলনায় 30 কিগ্রা ভরের বালকের ওজন বেশি হওয়ায় পা ও বালির স্পর্শতলে দ্বিতীয় বালক বেশি বল প্রয়োগ করে। চাপ বেশি হওয়ার জন্য বালকের পা অন্যজনের তুলনায় বেশি ঢুকে যায়।
কোনো ব্যক্তির বালিতে শোয়ার বদলে দাঁড়ালে পা বালিতে বেশি বসে যায় কেন?
কোনো ব্যক্তি বালিতে শুয়ে থাকলে বালির সঙ্গে দেহের স্পর্শতলের ক্ষেত্রফল বেশি হয়। তাই বালিতে কম চাপ পড়ে। কিন্তু ব্যক্তিটি বালিতে শুয়ে থাকার বদলে দাঁড়িয়ে থাকলে বালির সঙ্গে দেহের স্পর্শতলের ক্ষেত্রফল কম হয়, তাই বালিতে অপেক্ষাকৃত বেশি চাপ পড়ে। ফলে ব্যক্তিটির বালিতে শোয়ার বদলে দাঁড়ালে পা বালিতে বেশি বসে যায়।
টিকটিকি খাড়া দেয়ালে কীভাবে চলাফেরা করে?
টিকটিকির পায়ের তলায় ছোটো ছোটো বায়ুপূর্ণ ছিদ্র থাকে। খাড়া দেয়ালে টিকটিকি যখন চলে তখন পায়ের চাপে ওই ছিদ্র দিয়ে বাতাস বের করে দেয়। তখন বাইরের বায়ুচাপে দেয়ালের সঙ্গে তার পা আটকে থাকে। ফলে, টিকটিকি দেয়াল বরাবর চলাচল করতে পারে।

সরু প্লাস্টিকের নলের সাহায্যে ডাবের জল বা ঠান্ডা পানীয় খাওয়ার সময় বায়ুচাপ আমাদের কীভাবে সাহায্য করে?
সরু প্লাস্টিকের নল (Straw) ব্যবহার করে ডাবের জল বা ঠান্ডা পানীয় পান করার সময় ছিদ্র দিয়ে নলের ভিতর থেকে বায়ু বের করে নেওয়া হয়। এর ফলে নলের অভ্যন্তরে যে কৃত্রিম শূন্যস্থান সৃষ্টি হয়, তা পূরণ করার জন্য পারিপার্শ্বিক বায়ু ডাবের জল বা ঠান্ডা পানীয়ের মুক্তপৃষ্ঠে চাপ প্রয়োগ করে ওই স্থানে প্রবেশ করতে চায়। ওই চাপের ক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট তরল নলের দৈর্ঘ্য বরাবর উপরে ওঠে এবং তা পান করা সম্ভব হয়।

জলের গভীরে উৎপন্ন বাতাসের বুদ্বুদ যত উপরে ওঠে তত আয়তনে বাড়ে কেন?
বায়ু বুদ্বুদের আয়তনের পরিবর্তন পারিপার্শ্বিক চাপ ও উষ্ণতা এই দুই রাশির মানের পরিবর্তনের ওপর নির্ভরশীল। জলের উপরিতল ও তলদেশের উষ্ণতা প্রায় সমান বলে বিবেচনা করা যায়।
জলের গভীরে থাকা বুদ্বুদের উপর কার্যকরী চাপ হল বায়ুমণ্ডলীয় চাপ ও জলস্তম্ভের দেওয়া চাপের যোগফল। বেশি গভীরতায় থাকা অবস্থায় এই চাপ বেশি থাকায় বুদ্বুদের আয়তন কম হয়। কিন্তু বুদ্বুদ উপরে উঠতে থাকলে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ অপরিবর্তিত থাকলেও গভীরতা ক্রমশ কমতে থাকায় মোট বা কার্যকরী চাপ আগের তুলনায় কম হয়। ফলে, বুদ্বুদের আয়তন বৃদ্ধি পায়।
প্রবাহী পদার্থের কোনো অংশে চাপ প্রযুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কি তা দূরের প্রবাহী বিন্দুগুলিতে সঞ্চালিত হয়?
প্রবাহী পদার্থের কোনো অংশে চাপ প্রযুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই চাপ দূরের প্রবাহী বিন্দুগুলিতে সঞ্চালিত হয় না। প্রযুক্ত চাপ, প্রবাহীর মধ্যে স্থিতিস্থাপক তরঙ্গের বেগে (শব্দের বেগে) সঞ্চালিত হয়। ওই বেগ প্রবাহীর ঘনত্ব ও স্থিতিস্থাপক ধর্মের ওপর নির্ভর করে। ফলে প্রবাহী দ্বারা প্রযুক্ত চাপ, দূরের প্রবাহী বিন্দুগুলিতে সঞ্চালিত হতে সময় লাগে।
কলের মুখ উঁচুতে থাকলে জল ধীরে ধীরে পড়ে কেন?
আমরা জানি, গভীরতা বাড়লে চাপ বাড়ে। বাড়ির জলের ট্যাংক ও জল সরবরাহের কলের উচ্চতার পার্থক্য যত বেশি হয়, ওই দুই অংশের কল থেকে নির্গত জলের চাপও তত বেশি হয়। তাই, কল খুললে জলের নির্গমনের বেগও বেড়ে যায়। এখন কলের মুখ উঁচুতে অর্থাৎ ট্যাংকের যত কাছে থাকে, কলের মুখ থেকে ট্যাংকের জলের উচ্চতার পার্থক্যও তত কম হয়। কল থেকে নির্গত জলের চাপও কমে যায়। ফলে, কল থেকে ধীরে জল পড়ে।
একটি লম্বা পাইপ দিয়ে কল থেকে একটি ড্রামে জল ভরতি করা হচ্ছে। ড্রামটি সম্পূর্ণ ভরতি হয়ে যাওয়ার পর কলের মুখ থেকে কোনো কারণে নলের মুখটি খুলে মাটিতে পড়ে গেল। নলের অপর প্রান্তটি ড্রামের তলদেশ অবধি ডুবে থাকলে সম্ভাব্য যে ঘটনা ঘটে তার বৈজ্ঞানিক কারণসম্মত ব্যাখ্যা দাও।
এক্ষেত্রে ড্রামের সমস্ত জল পাইপ দিয়ে বেরিয়ে যাবে। ড্রামের মধ্যে নিমজ্জিত পাইপের দৈর্ঘ্য ড্রামের মধ্যে থাকা জলের উপরিতল ও নলের অন্য প্রান্তের মধ্যে ব্যবধানের তুলনায় কম হয়। পাইপটি ইতিমধ্যেই জলপূর্ণ থাকায় সমগ্র ব্যবস্থাটি এক্ষেত্রে সাইফনের মতো আচরণ করবে। প্রধানত, স্থির তরলের মধ্যে চাপের পার্থক্য থাকার দরুনই জলপূর্ণ ড্রাম থেকে অবিরাম জল স্থানান্তরিত হয়ে দীর্ঘতর বাহুর খোলামুখ দিয়ে নির্গত হতে থাকবে এবং এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে ড্রামটি একসময় জলশূন্য হবে।
সাবমেরিনের বাইরের কাঠামো বা মূল অংশের গঠন যথেষ্ট দৃঢ় ও শক্তপোক্ত রাখা হয় কেন?
জলের অভ্যন্তরে চলার সময় সাবমেরিনের বাইরের দেয়ালে ওই তলের উপর বা সংলগ্ন থাকা জলস্তম্ভ বিপুল পরিমাণে নিম্নচাপ, ঊর্ধ্বচাপ বা পার্শ্বচাপ দেয়। এই উচ্চমানের চাপের ক্রিয়ায় সাবমেরিনের গঠন সাবমেরিন যাতে বিকৃত বা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে কারণেই তার বহিরাবরণ উচ্চ ভারবহন ক্ষমতাযুক্ত মোটা ধাতব পাত দিয়ে নির্মাণ করা হয়, যাতে গঠনটি যথেষ্ট দৃঢ় হয় ও শক্তপোক্ত থাকে।

সমুদ্রের তলদেশে ডুবুরিদের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত সাঁতারের পোশাক ব্যবহারের কারণ কী এবং এই পোশাক কীভাবে ডুবুরিদের সুরক্ষা প্রদান করে?
1 km গভীরতায় জলের চাপ বায়ুমণ্ডলীয় চাপের প্রায় 100 গুণ হয়। এই কারণে সমুদ্রের তলদেশে পাড়ি দেওয়া ডুবুরিদের বিশেষভাবে নির্মিত সাঁতারের পোশাক (Swim suit) ব্যবহার করতে হয়। এই পোশাকের মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থা থাকে, যা সমুদ্রের তলদেশে জলের বিপুল চাপ প্রতিমিত করে এবং ডুবুরির দেহকে ওই প্রচণ্ড চাপে চূর্ণবিচূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে সুরক্ষিত রাখে।
বাঁধের উপরের অংশের তুলনায় নীচের অংশ চওড়া করা হয় কেন?
বাঁধের তলদেশ চওড়া রাখার কারণ – তরলের দ্বারা প্রযুক্ত চাপ, তার গভীরতা বৃদ্ধির সঙ্গে বৃদ্ধি পায়। সুতরাং, বাঁধের তলদেশের বা নিম্নাংশের দেয়ালে জলের দেওয়া পার্শ্বচাপ উপরের অংশের (জলতলের কাছাকাছি থাকা অংশ) দেয়ালে প্রযুক্ত পার্শ্বচাপ অপেক্ষা কম হয়। এই কারণে বাঁধ নির্মাণ করার সময় তার উপরের দিক সরু রাখা হলেও জলতলের গভীরে থাকা অংশ যথেষ্ট চওড়া রাখতে হয়। তা নাহলে পার্শ্বচাপের ক্রিয়ায় বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। তিরচিহ্নের দৈর্ঘ্যবৃদ্ধি নির্দেশ করে প্রযুক্ত চাপ গভীরতার সঙ্গে বাড়ে।

পাহাড়ি অঞ্চলে রান্না করার সময় প্রেশার কুকার ব্যবহৃত হয়। – কারণ ব্যাখ্যা করো।
চাপ হ্রাসে তরলের স্ফুটনাঙ্ক হ্রাস পায়। পাহাড়ি অঞ্চলে বায়ুর চাপ কম থাকায় জলের স্ফুটনাঙ্ক কমে যায়। এক্ষেত্রে জল তাড়াতাড়ি ফোটে এবং ওই কম উষ্ণতায় মাছ-মাংস, চাল-ডাল বা অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য ভালোভাবে সেদ হয় না। এই কারণেই পাহাড়ি এলাকায় রান্নার সময় জ্বালানি খরচ ও সময় বাঁচাতে প্রেশার কুকার ব্যবহার করা হয়।

সমুদ্রপৃষ্ঠে বায়ুর চাপ সর্বাধিক হওয়ার কারণ কী? উচ্চতার সাথে বায়ুর চাপের পরিবর্তন কীভাবে ঘটে এবং এতে কী কী কারণ প্রভাব ফেলে?
সমুদ্রতলকে শূন্য উচ্চতা বিবেচনা করা হয় বলে সমুদ্রপৃষ্ঠে বায়ুর চাপ সর্বাধিক। এই চাপ প্রতি বর্গসেমিতে প্রায় 1 কিগ্রা-ভার। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহের গড় ক্ষেত্রফল প্রায় 1.5 বর্গমিটার। সুতরাং, পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির শরীরের উপর বায়ুর মোট ওজন গড়ে প্রায় 15000 কিগ্রা-ভার।
দেখা যায়, প্রতি কিলোমিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে বায়ুর চাপ প্রায় 6.5 সেমি কমে যায়। তবে সব ক্ষেত্রেই এই পরিবর্তন নিয়মানুগভাবে হয় না। তা ছাড়াও বায়ুতে জলীয় বাষ্পের তারতম্য, বায়ুর উষ্ণতার তারতম্য ও বায়ুপ্রবাহ ইত্যাদি কারণে নির্দিষ্ট স্থানে বায়ুর চাপের পরিবর্তন ঘটে থাকে। এই কারণেই বায়ুমণ্ডলীয় চাপের একটি প্রমাণ মান নির্দিষ্ট করা হয়।
বায়ুমণ্ডলের চাপ আছে অথচ সেই চাপ আমরা অনুভব করি না। – ব্যাখ্যা করো।
অথবা, ভূপৃষ্ঠে অবস্থানের সময় আমাদের শরীরের উপর বায়ুস্তম্ভ যে বিপুল চাপ দেয় তার মান প্রায় 250 kg-wt/cm2 যা প্রায় দুটি হস্তীশাবকের ওজনের জন্য প্রযুক্ত চাপের সমান। তা সত্ত্বেও এই বিপুল চাপ আমরা অনুভব করি না কেন?
এর কারণ, আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ চাপ। আমাদের দেহের অভ্যন্তরে প্রবহমান রক্ত, লসিকা ও অন্যান্য দেহরসের (body fluid) চাপ এবং রক্ত ও লসিকার মধ্যে দ্রবীভূত অক্সিজেনের (dissolved oxygen) দেওয়া চাপ – এই দুইয়ের সমষ্টি পারিপার্শ্বিক বায়ুমণ্ডলের দ্বারা প্রযুক্ত চাপ অপেক্ষা সামান্য বেশি হয়। ফলে, বায়ুমণ্ডলীয় চাপের মান বিপুল হলেও তা প্রশমিত অবস্থায় থাকে। তাই তার অস্তিত্ব আমরা অনুভব করতে পারি না।
একটি ছোটো মুখওয়ালা শিশির ভিতরের বায়ু মুখ দিয়ে টেনে নিলে শিশিটি মুখে আটকে যায় কেন?
শিশির ভিতরের বায়ু টেনে নিলে ভিতরের বায়ুচাপ কমে যায়, কিন্তু শিশির বাইরের বায়ুর চাপ তুলনামূলকভাবে যথেষ্ট বেশি থাকে। এর ফলে ভিতরে যে আংশিক শূন্যস্থান সৃষ্টি হয়, তা পূরণ করতে বাইরের বায়ু শিশির ভিতরে প্রবেশ করতে চায় এবং শিশিটির দেয়ালের গায়ে চাপ দেয়। এই বায়ুমণ্ডলীয় চাপের ক্রিয়ায় শিশিটি মুখে আটকে থাকে।
মানবদেহে রক্তচাপ মাথা অপেক্ষা পায়ে বেশি হয় কেন?
হৃৎপিণ্ড থেকে পায়ের পাতার দূরত্ব, হৃৎপিণ্ড থেকে মাথার দূরত্ব অপেক্ষা বেশি হয়। ফলে রক্তস্তম্ভের উচ্চতা মাথা অপেক্ষা পায়ের পাতার ক্ষেত্রে বেশি হয়। আমরা জানি, তরলস্তম্ভের উচ্চতা বাড়লে তরলের চাপ বাড়ে, তাই মানুষের দেহে রক্তচাপ মাথা অপেক্ষা পায়ে বেশি হয়।
একটি ফর্টিন ব্যারোমিটারের পারদনলের পারদের ওপর এক ফোঁটা জল প্রবেশ করালে ব্যারোমিটার পাঠের কী পরিবর্তন হবে?
ব্যারোমিটারের পারদনলে পারদের ওপর বায়ুচাপ কম থাকায় সেখানে এক ফোঁটা জল প্রবেশ করালে জল সঙ্গে সঙ্গে বাষ্পে পরিণত হবে। ওই জলীয়বাষ্পের চাপ পারদতলের ওপর ক্রিয়া করায় পারদ কিছুটা নীচে নেমে আসবে।
ব্যারোমিটার নলটি মোটা বা সরু হলে বায়ুমণ্ডলীয় চাপের কী পরিবর্তন হবে?
ব্যারোমিটার নলে পারদস্তম্ভের চাপ = পারদস্তম্ভের উচ্চতা × পারদের ঘনত্ব × অভিকর্ষজ ত্বরণ।
দেখা যাচ্ছে, পারদস্তম্ভের চাপের রাশিমালা বা বায়ুমণ্ডলীয় চাপের রাশিমালা নলটির প্রস্থচ্ছেদের ওপর নির্ভরশীল নয়। তাই, ব্যারোমিটারের নলটি মোটা বা সরু হলে উভয় ক্ষেত্রেই পারদস্তম্ভএকই উচ্চতা পর্যন্ত উঠবে ও তার ফলে, বায়ুমণ্ডলীয় চাপের কোনো পরিবর্তন হবে না।
ব্যারোমিটার নলের সঙ্গে একটি থার্মোমিটার লাগানো থাকে কেন?
ব্যারোমিটারের গায়ে লাগানো যে স্কেলটি থেকে ব্যারোমিটার পাঠের মান জানা যায়, সেটি সাধারণত পিতলের তৈরি হয়। তাপমাত্রার পরিবর্তনে পিতলের স্কেলটির দৈর্ঘ্য ও পারদের ঘনত্ব পরিবর্তিত হয়। সেই কারণে ব্যারোমিটার পাঠেরও পরিবর্তন হয়। সেজন্য ব্যারোমিটারের পাঠ নেওয়ার সময় তাপমাত্রার পাঠ নেওয়ার প্রয়োজন হয়। তাই, ব্যারোমিটারের সঙ্গে একটি থার্মোমিটার লাগানো থাকে।
একটি লিফ্টের মধ্যে একটি পারদ ব্যারোমিটার আছে।
(i) লিফ্টটি ত্বরণসহ (a < g) ওপর দিকে উঠতে শুরু করলে ব্যারোমিটারের পাঠের কী পরিবর্তন হবে?
(ii) লিফ্টটি A ত্বরণসহ (a < g) নীচে নামতে শুরু করলে ব্যারোমিটার পাঠের কী পরিবর্তন হবে?
প্রথমত,
ধরি, ব্যারোমিটারের ভর = m; লিফ্টে ভূমির প্রতিক্রিয়া = R লিফ্টটি এ ত্বরণসহ (a < g) উপরদিকে উঠতে শুরু। শুরু করলে
আমরা লিখতে পারি, R – mg = ma
∴ R = mg + ma
বা, R = m(g + a)
∴ লিফ্টটি উপরে ওঠার সময় কার্যকর অভিকর্ষজ ত্বরণের মান হয় g’ = (g + a)। ধরি, ব্যারোমিটারের প্রকৃত পাঠ = h এবং এ ত্বরণসহ ওপরে ওঠার সময় পাঠ = h’
যেহেতু বায়ুমণ্ডলের চাপ নির্দিষ্ট, তাই আমরা লিখতে পারি,
hag = h’dg’
বা, hg = h'(g + a)
বা, \(h’=\frac g{g+a}h\)
যেহেতু a < g
∴ h’ < h
সুতরাং, লিফ্টটি a ত্বরণসহ (a < g) ওপরদিকে উঠতে শুরু করলে ব্যারোমিটারের পাঠ পূর্বের তুলনায় হ্রাস পাবে অর্থাৎ কম হবে।
দ্বিতীয়ত,
একইভাবে, লিফ্টটি নীচে নামার সময় কার্যকর অভিকর্ষজ ত্বরণের মান g’ = (g – a)।
ধরি, ব্যারোমিটারের প্রকৃত পাঠ = h এবং a ত্বরণসহ নীচে নামার পর পাঠ = h’।
যেহেতু বায়ুমণ্ডলীয় চাপ নির্দিষ্ট, তাই আমরা লিখতে পারি,
hdg = h’dg’
বা, hg = h'(g – a)
বা, h'(g – a) = hg
বা, \(h’=\frac{hg}{g-a}\)
বা, \(h’=\frac g{g-a}h\)
যেহেতু a < g তাই, h’ > h
সুতরাং, লিফ্টটি a ত্বরণসহ নীচের দিকে (a < g) নামতে শুরু করলে ব্যারোমিটারের পাঠ পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পাবে।
সাইফনের ছোটো বাহুতে একটি ছিদ্র থাকলে কী হবে?
সাইফনের ছোটো বাহুর গায়ে ছিদ্র করা হলে ওই ছিদ্র দিয়ে বায়ু প্রবেশ করবে এবং বায়ু চাপ দিয়ে তরলস্তম্ভকে নামিয়ে দেবে। ফলে, আদৌ সাইফন ক্রিয়া ঘটবে না।
সাইফনের দীর্ঘতর বাহুর গায়ে ছিদ্র থাকলে কোন পরিস্থিতিতে এটি কাজ করবে এবং কোন পরিস্থিতিতে কাজ করবে না? ছিদ্রের অবস্থান কীভাবে তরল প্রবাহের উপর প্রভাব ফেলে?
দীর্ঘতর বাহুর গায়ে ছিদ্র করলে সাইফন কাজ করতেও পারে, আবার নাও পারে। যদি ছিদ্রের অবস্থান উঁচুতে রাখা পাত্রের তরলপৃষ্ঠের নীচে হয় তবে সাইফন ক্রিয়া অব্যাহত থাকবে, যদিও দুই বাহুর কার্যকর দৈর্ঘ্যের পার্থক্য এবং সেই কারণে চাপের পার্থক্য কমে যাওয়ায় তরল প্রবাহের হারও হ্রাস পাবে।
যদি ছিদ্রের অবস্থান উঁচুতে রাখা পাত্রের তরলপৃষ্ঠের অবস্থানের উপরে হয় তবে সাইফনের দীর্ঘতর বাহুর শীর্ষবিন্দুতে চাপ, ক্ষুদ্রতর বাহুর শীর্ষ বিন্দুতে চাপ অপেক্ষা কম হয়ে যাবে। এই অবস্থায় তরল প্রবাহের অভিমুখ বিপরীত হয়ে যাবে অর্থাৎ, সাইফন এক্ষেত্রে আদৌ কাজ করবে না।
সাইফনের দুটি বাতুর প্রস্থছেদের ক্ষেত্রফল সমান না হলেও সাইফন ক্রিয়া করবে কি?
সাইফন ক্রিয়া বায়ুমণ্ডলীয় চাপের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। চাপের মান একক ক্ষেত্রফলে লম্বভাবে প্রযুক্ত বলের ওপর নির্ভর করে, ক্ষেত্রফলের ওপরে নয়। তাই সাইফনের দুই বাহুর প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল সমান বা অসমান যাই হোক না কেন, সাইফন ক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
বায়ুমণ্ডলীয় চাপ পরিবর্তিত হলে সাইফনের মধ্যে দিয়ে তরলের প্রবাহের হার পরিবর্তিত হবে কি? ব্যাখ্যা করো।
সাইফনের মধ্যে দিয়ে তরলের প্রবাহ চলে (h2 – h1)ρg পরিমাণ চাপের পার্থক্যের জন্য।
যেখানে –
h1 = ছোটো বাহুতে তরলস্তম্ভের উচ্চতা।
h2 = বড়ো বাহুতে তরলস্তম্ভের উচ্চতা।
g = অভিকর্ষজ ত্বরণ
এবং ρ = ঘনত্ব
ওই পার্থক্যের মান বায়ুমণ্ডলীয় চাপের ওপর নির্ভর করে না। অর্থাৎ, সাইফনের মধ্যে দিয়ে তরলের প্রবাহের হার বায়ুমণ্ডলীয় চাপের ওপর নির্ভরশীল নয়। তাই বায়ুমণ্ডলীয় চাপ পরিবর্তিত হলে সাইফনের মধ্যে দিয়ে তরলের প্রবাহের হার পরিবর্তিত হবে না।
নদীর জল সাইফন ক্রিয়ায় ডাঙায় তোলা সম্ভব কি?
অথবা, ভাসমান নৌকার তলদেশের জমা জল সাইফন ক্রিয়ার সাহায্যে নদীতে ফেলা সম্ভব হবে কি?

নদীর জলের জলতল ডাঙা বা জলে ভাসমান নৌকার পৃষ্ঠতলের থেকে নীচে হওয়ায় সাইফনের বড়ো বাহুটি নদীর জলে নিমজ্জিত থাকে। ফলে, B বিন্দু থেকে জল C বিন্দুতে স্থানান্তরিত করতে হয়। কিন্তু নদীর জলে নিমজ্জিত বাহুর দৈর্ঘ্য বেশি হওয়ায় B বিন্দুতে চাপ (PB), C বিন্দুতে চাপ (PC) অপেক্ষা কম হয়ে যায়। সুতরাং, B থেকে C বিন্দুতে অর্থাৎ, নদী থেকে ডাঙায় বা ভাসমান নৌকায় সাইফন ক্রিয়ায় জল স্থানান্তরিত করা সম্ভব নয়।
চন্দ্রপৃষ্ঠে সাইফনের নীতি প্রযোজ্য হবে না কেন?
অথবা, শূন্যস্থানে সাইফন কাজ করে কি?
বায়ুমণ্ডলীয় চাপের ক্রিয়ায় সাইফনের ছোটো বাহুতে তরল ওঠে এবং দুই বাহুর মধ্যে সৃষ্ট চাপের পার্থক্যের কারণে, ছোটো বাহু থেকে বড়ো বাহু অভিমুখে তরল অবিরাম প্রবাহিত হয়।
চন্দ্রপৃষ্ঠে বায়ু না থাকায় ছোটো বাহুতে তরল আদৌ উঠবে না অর্থাৎ, নল দুটিকে তরল দ্বারা পূর্ণ করা আদৌ সম্ভব হবে না। তাই, চন্দ্রপৃষ্ঠে সাইফন কাজ করবে না।
চাঁদে ব্যারোমিটার কেন কার্যকর নয়? কীভাবে কৈশিক ক্রিয়া বায়ুশূন্য স্থানে ব্যারোমিটার বা সাইফনের কাজকে সম্ভব করতে পারে?
একই কারণে চাঁদে ব্যারোমিটারের কার্যকারিতা থাকে না। তবে ব্যবহৃত নল বা ‘U’ আকৃতির নল খুব সরু হলে তরলের কণাগুলির সংসক্তি বলের প্রভাবে কৈশিক ক্রিয়ায় (Capillary action) তরল নলে আরোহণ করতে পারে। সেক্ষেত্রে, বায়ুশূন্য স্থানেও ব্যারোমিটার বা সাইফন কাজ করতে পারে।
পার্থক্যধর্মী প্রশ্নোত্তর
চাপ (Pressure) ও ঘাত (Thrust) -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।
চাপ (Pressure) ও ঘাত (Thrust) -এর মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | চাপ (Pressure) | ঘাত (Thrust) |
সংজ্ঞা | কোনো তলের একক ক্ষেত্রফলে লম্বভাবে প্রযুক্ত বল হল চাপ। | কোনো তলের ওপর প্রযুক্ত মোট বল হল ঘাত। |
ক্ষেত্রফল নির্ভরতা | বস্তুর ওজন একই থাকলে ক্ষেত্রফলের পরিবর্তনের সঙ্গে চাপের মান পরিবর্তিত হয়। | বস্তুর ওজন অপরিবর্তিত থাকলে ঘাতের মান ক্ষেত্রফল নিরপেক্ষ হয়। |
একক | CGS পদ্ধতিতে চাপের একক ডাইন/সেমি2, SI -তে নিউটন/মি2। | CGS পদ্ধতিতে ঘাতের একক ডাইন, SI -তে নিউটন। |
মাত্রীয় সংকেত | চাপের মাত্রীয় সংকেত [ML-1T-2]। | ঘাতের মাত্রীয় সংকেত – [MLT-2]। |
গাণিতিক প্রশ্নাবলি
প্রয়োজনীয় সূত্রাবলি
নির্দিষ্ট উচ্চতায় বায়ুর চাপ (P) = hρg [যেখানে, h = উচ্চতা, ρ = তরলের ঘনত্ব, g = অভিকর্ষজ ত্বরণ, A = ক্ষেত্রফল]
ঘাত = চাপ × ক্ষেত্রফল = hρg × A
চোঙাকৃতি একটি বস্তুর ভর 70 kg এবং ভূমির ব্যাস 3 cm। বস্তুটি মাটিতে কতটা চাপ প্রয়োগ করতে পারবে?
বা,
বা,
বা, চাপ = \(\frac{\left(70\times1000\right)\times980}{\pi\times\left({\displaystyle\frac32}\right)^2}\) dyn/cm2
বা, চাপ = 97.09 × 105 dyn/cm2
∴ বস্তুটি মাটিতে 97.09 × 105 dyn/cm2 টা চাপ প্রয়োগ করতে পারবে।
ব্যারোমিটারে পারদস্তম্ভের উচ্চতা 750 mm হলে, বায়ুর চাপ নির্ণয় করো। [পারদের ঘনত্ব = 13.6 g/cc, অভিকর্ষজ ত্বরণ = 980 cm/s2]
ব্যারোমিটারে পারদস্তম্ভের উচ্চতা = 750 mm = 75 cm।
পারদের ঘনত্ব = 13.6 g/cc
অভিকর্ষজ ত্বরণ = 980 cm/s2
∴ বায়ুর চাপ = 750 mm পারদস্তম্ভের চাপ
= 75 cm পারদস্তম্ভের চাপ
= 75 × 13.6 × 980
= 9.996 × 105 dyn/cm2
ব্যারোমিটারে পারদস্তম্ভের উচ্চতা 750 mm হলে, বায়ুর চাপ 9.996 × 105 dyn/cm2।
বায়ুর চাপ 80 cm পারদস্তম্ভের চাপের সমান হলে CGS পদ্ধতিতে চাপের পরম এককে ওই চাপের মান কত? [পারদের ঘনত্ব = 13 g/cc এবং g = 1000 cm/s2]।
নির্ণেয় চাপ = hρg
বা, চাপ = 80 × 13 × 1000
বা, চাপ = 104 × 104 dyn/cm2
∴ CGS পদ্ধতিতে চাপের পরম এককে ওই চাপের মান 104 × 104 dyn/cm2।
10 m গভীর একটি পরিষ্কার হ্রদের জলের তলদেশে চাপের পরিমাণ কত? [বায়ুর চাপ = 76 cm পারদস্তম্ভের চাপ ও পারদের ঘনত্ব = 13.6 g/cm3।]
1 বায়ুমণ্ডলীয় চাপ = 76 cm পারদস্তম্ভের চাপ
= 76 × 13.6 × 980
10 m গভীরে হ্রদ্রের তলদেশে মোট চাপ = 10 m গভীরে জলের চাপ + বায়ুমণ্ডলের চাপ
= (10 × 100 × 1 × 980 + 76 × 13.6 × 980) dyn/cm2
= (980000 + 1012928) dyn/cm2
= 1992928 dyn/cm2
∴ 10 m গভীর একটি পরিষ্কার হ্রদের জলের তলদেশে চাপের পরিমাণ 1992928 dyn/cm2।
একটি হ্রদের কত গভীরে জলের মধ্যে চাপ বায়ুমণ্ডলীয় চাপের দ্বিগুণ হবে? [বায়ুমণ্ডলের চাপ 76 cm পারদস্তস্তের চাপ ও পারদের ঘনত্ব = 13.6 g/cm3]
বায়ুমণ্ডলীয় চাপ, P0 = 76 cm পারদস্তম্ভের চাপ
= 76 × 13.6 × 980 dyn/cm2
ধরি, হ্রদের h গভীরতায় চাপ, বায়ুমণ্ডলীয় চাপের দ্বিগুণ হবে।
∴ মোট চাপ P = P0 + hdg এবং
শর্তানুযায়ী, P = 2P0
∴ 2P0 = P0 + hdg
বা, 2P0 – P0 = hdg
বা, P0 = hdg
বা, h × 1 × 980 = 76 × 13.6 × 980
বা, h = \(\frac{76\times13.6}1\) cm
বা, h = 1033.6 cm
বা, h = 10.336 m
∴ একটি হ্রদের 10.336 m গভীরে জলের মধ্যে চাপ বায়ুমণ্ডলীয় চাপের দ্বিগুণ হবে।
যেদিন বায়ুমণ্ডলের চাপ 98.6 kPa সেদিন পারদ ব্যারোমিটারের উচ্চতা কত হবে?
98.6 kPa = 98.6 × 103 Pa
পারদের ঘনত্ব, (ρ) = 13.6 × 103 kg/m3
g = 9.8 m/s2
ধরি, নির্ণেয় উচ্চতা h
আমরা জানি, P = hρg,
hρg = 98.6 × 103
বা, h = \(\frac{9.8\times10^3}{\rho g}\)
বা, h = \(\frac{9.8\times10^3}{13.6\times10^3\times9.8}\)
বা, h = 0.739 m
বা, h = 73.9 cm
∴ পারদ ব্যারোমিটারের উচ্চতা 73.9 cm হবে।
কোনো স্থানে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ 76 cm পারদস্তন্তের চাপের সমান। পারদের পরিবর্তে জল ব্যবহার করলে জলস্তম্ভের উচ্চতা কত হবে? [দেওয়া আছে, পারদের ঘনত্ব (ρ) = 13.6 g/cm3]
কোনো স্থানের বায়ুমণ্ডলীয় চাপ, P = hdg = ধ্রুবক
∴ h1d1g = h2d2g [h1, ও h2 যথাক্রমে পারদ ও জলস্তম্ভের উচ্চতা, d1 ও d2 তাদের ঘনত্ব, g অভিকর্ষজ ত্বরণ]
∴ 76 × 13.6 = h2 × 1
বা, h2 = 1033.6 cm
বা, h2 = 10.336 m ≈ 10.34 m
∴ ওই স্থানে বায়ুমণ্ডলীয় চাপের ক্রিয়ায় জল সর্বোচ্চ 10.34 m উচ্চতা উঠবে।
একটি বহুতল বাড়ির একতলায় জলের চাপ 5 × 105 Pa। 8 m উঁচুতে তিনতলায় জলের চাপ কত? (g = 10 m/s2)।
বহুতল বাড়ির একতলায় জলের চাপ = 5 × 105 Pa
জলের ঘনত্ব (d) = 1000 kg/m3, g = 10 m/s2
তিনতলার উচ্চতা (h) = 8 m
∴ 8 m উঁচুতে, তিনতলায় জলের চাপ
= একতলায় জলের চাপ – 8 m উঁচু জলস্তম্ভের চাপ
= 5 × 105 – hdg
=5 × 105 – 8 × 1000 × 10
= 5 × 105 – 0.8 × 105
= (5 – 0.8) × 105
= 4.2 × 105 Pa
∴ 8 m উঁচুতে তিনতলায় জলের চাপ 4.2 × 105 Pa।
সমুদ্রপৃষ্ঠে এবং কোনো একটি পাহাড়ের শীর্ষে ব্যারোমিটারের পাঠ যথাক্রমে 0.76 m এবং 0.667 m। বায়ুর গড় ঘনত্ব = 1.24 kg/m3 এবং পারদের ঘনত্ব 13.6 × 103 kg/m3 হলে পাহাড়ের উচ্চতা কত?
ধরি, পাহাড়ের উচ্চতা = H meter
∴ H meter বায়ুস্তম্ভের চাপ = (0.76 – 0.667) m পারদস্তম্ভের চাপ
বা, H × 1.24 × g = 0.093 × 13.6 × 103 × g
বা, H = \(\frac{0.093\times13.6\times10^3}{1.24}\) m
বা, H = 1020 m
∴ পাহাড়ের উচ্চতা 1020 m
একটি খাড়া U নলের তলায় কিছু পারদ আছে। নলের এক বাহুতে জল ও অন্য বাহুতে স্পিরিট এমন পরিমাণে চালা হল যাতে দুই বাহুতে পারদতল একই অনুভূমিক তলে থাকে। জলস্তম্ভের উচ্চতা 10 cm এবং স্পিরিটস্তম্ভের উচ্চতা 12.5 cm হলে স্পিরিটের ঘনত্ব নির্ণয় করো।
যেহেতু, দুই বাহুতে পারদ একই অনুভূমিক তলে আছে, তাই 10 cm জলস্তম্ভের চাপ = 12.5 cm স্পিরিটস্তম্ভের চাপ [ρ → স্পিরিটের ঘনত্ব]

বা, 0.10 × 1000 × g = 0.125 × ρ × g
বা, ρ = \(\frac{1000\times0.10}{0.125}\)
বা, ρ = 800 kg/m3
∴ স্পিরিটের ঘনত্ব 800 kg/m3।
একটি চোঙের ব্যাস 14 cm ও উচ্চতা 40 cm। চোরটি পারদ দ্বারা পূর্ণ করলে চোঙের তলদেশে কত ঘাত পড়বে? [পারদের ঘনত্ব 13.6 g/cc]
চোঙের তলদেশে যে-কোনো বিন্দুতে চাপ (P) = hρg
= \(\frac{40}{100}\times13.6\times10^3\times9.8\) N/m2
= \(53312 \) N/m2
চোঙের তলদেশের ক্ষেত্রফল = πr2
∴ তলদেশে ঘাত = চাপ × ক্ষেত্রফল
= \(\frac{22}7\times\left(\frac7{100}\right)^2\) m2
= \(\frac{154}{10^4}\) m2
∴ তলদেশে ঘাত = চাপ × ক্ষেত্রফল
= \(53312\times\frac{154}{10^4}\) N
= \(821\) N (প্রায়)
∴ চোরটি পারদ দ্বারা পূর্ণ করলে চোঙের তলদেশে \(821\) N (প্রায়) ঘাত পড়বে।
একটি শঙ্কুর উচ্চতা 50 cm এবং ভূমির ক্ষেত্রফল 20 cm2। শঙ্কুটিকে জল ভরতি করে টেবিলে রাখা হল। টেবিলের ওপর শঙ্কুর জলের ঘাত কত?
নির্ণেয় ঘাত = জলস্তম্ভের চাপ × শঙ্কুর তলদেশের ক্ষেত্রফল
= (50 × 1 × 980) × 20 dyn
= 980000 dyn
= 9.8 N
∴ টেবিলের ওপর শঙ্কুর জলের ঘাত 9.8 N।
শঙ্কুর তলদেশে প্রযুক্ত ঘাত, শত্রুতে আবন্ধ জলের ওজন নির্ণয় করো।
লক্ষ করো শঙ্কুর তলদেশে প্রযুক্ত যাত, শত্রুতে আবন্ধ জলের ওজন
= \(\frac13\pi r^2h\times1\times g\)
= \(\frac13\times20\times50\times1\times980\)
= \(\frac{9.8}3\) N
অপেক্ষা কম। এটি উদ্স্থৈতিক কুটের একটি উদাহরণ।
একটি বেলনাকার পাত্রের বৃত্তীয় প্রস্থচ্ছেদের ব্যাস = 20 cm। তাতে 3.14 L পারদ রাখা আছে। পাত্রের তলদেশে প্রযুক্ত চাপ ও ঘাত নির্ণয় করো। [পারদের ঘনত্ব = 13.6 g/cc]
বেলনাকার পাত্রের বৃত্তীয় প্রস্থচ্ছেদের ব্যাস = 20 cm
বেলনাকার পাত্রের ব্যাসার্ধ \(\left(r\right)=\frac{20}3=10\) cm
বেলনাকার পাত্রের ভূমির ক্ষেত্রফল (A) = πr2
= \(\frac{22}7\times10\times10\) cm2
ধরি, বেলনাকার পাত্রের উচ্চতা = h
শর্তানুযায়ী, πr2h = 3.14 × 1000
বা, h = \(\frac{3.14\times1000\times7}{22\times10\times10}\)
বা, h = \(\frac{3.14\times10\times7}{22}\)
বা, h = 9.9909 cm
∴ পাত্রের তলদেশে প্রযুক্ত চাপ (P) = hρg
= 9.99 × 13.6 × 980
= 1.3314672 × 105 dyn/cm2
পাত্রের তলদেশে প্রযুক্ত ঘাত (F) = P × A
= \(1.33146\times10^5\times\frac{22}7\times10\times10\)
= 4.18 × 107 dyn
একটি আয়তাকার জলাধার 4 m লম্বা, 2 m চওড়া ও 3 m গভীর। জলাধার জলপূর্ণ হলে এর তলদেশে এবং পার্শ্বদেশে কত ঘাত পড়বে তা নির্ণয় করো।

আয়তাকার জলাধারটির দৈর্ঘ্য = 4 m, প্রস্থ 2 m, গভীরতা = 3 m
জলের ঘনত্ব (d) = 1000 kg/m3; g = 9.8 m/s2
∴ জলাধারটি পূর্ণ করলে এর তলদেশে ঘাত পড়বে
= P × A
= hdg × A
= 3 × 1000 × 9.8 × 4 × 2
= 235200 N
পার্শ্বদেশে অর্থাৎ, ABFE ও DCGH তলে ঘাত সমান।
∴ ABFE তলে ঘাত = DCGH তলে ঘাত
= \(\left(\frac{3\times10000\times9.8}2\right)\times\left(4\times3\right)\)
= 176400 N
= 1.764 × 105 N
পার্শ্বদেশে অর্থাৎ, BCGF ও ADHE তলে ঘাত সমান।
∴ BCGF তলে ঘাত = ADHE তলে ঘাত
= \(\left(\frac{3\times10000\times9.8}2\right)\times\left(2\times3\right)\)
= 88200 N
= 8.82 × 104 N
একটি গভীর জলাশয়ের 5 m নীচে কোনো এক বিন্দুতে জলের চাপ কত হবে? ওই বিন্দুকে ঘিরে 50 cm বাহুবিশিষ্ট একটি বর্গক্ষেত্র অঙ্কন করা হলে, ওই বর্গক্ষেত্রের তলে প্রযুক্ত ঘাত কত হবে?
সংশ্লিষ্ট বিন্দুর গভীরতা (h) = 5 m, জলের ঘনত্ব (ρ) = 1 g/cm3 = 1000 kg/m3, অভিকর্ষজ ত্বরণ (g) = 9.8 m/s2
ওই বিন্দুতে চাপ (P) = hρg
= (5 × 1000 × 9.8) N/m2
= 49 × 103 N/m2
বর্গাকার তলের ক্ষেত্রফল A = (50 × 50) cm2
= \(\left(\frac{50}{100}\times\frac{50}{100}\right)\) m2
= \(\frac14\) m2
ক্রিয়াশীল ঘাত F = PA
= \(\left(49\times10^3\times\frac14\right)\) N
= 12.25 × 103 N
∴ বর্গক্ষেত্রের তলে প্রযুক্ত ঘাত 12.25 × 103 N হবে।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নোত্তর
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো
একটি তরলপূর্ণ পাত্রের তলদেশে তরল দ্বারা প্রযুক্ত চাপ যে বিষয়ের ওপর নির্ভর করে না তা হল –
- অভিকর্ষজ ত্বরণ
- পাত্রে তরলস্তম্ভের উচ্চতা
- পাত্রের তলদেশের ক্ষেত্রফল
- তরলের ঘনত্ব
উত্তর – 3. পাত্রের তলদেশের ক্ষেত্রফল
নির্দিষ্ট পরিমাণ বলের ক্ষেত্রে চাপ হল –
- ক্ষেত্রফলের সঙ্গে সমানুপাতিক
- ক্ষেত্রফলের সঙ্গে ব্যস্তানুপাতিক
- বলের সঙ্গে ব্যস্তানুপাতিক
- ক্ষমতার সঙ্গে ব্যস্তানুপাতিক
উত্তর – 2. ক্ষেত্রফলের সঙ্গে ব্যস্তানুপাতিক
চাপের একক হল –
- নিউটন
- পারসেক
- পাস্কাল
- ডালটন
উত্তর – 3. পাস্কাল
প্রমাণ চাপের সংজ্ঞায় যে অক্ষাংশের উল্লেখ থাকে, তা হল –
- 30°
- 45°
- 60°
- 90°
উত্তর – 2. 45°
বলের ঘাতের একক যে প্রাকৃতিক রাশির এককের সঙ্গে অভিন্ন তা হল –
- শক্তি
- ভরবেগ
- ক্ষমতা
- বেগ
উত্তর – 2. ভরবেগ
প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপের মান হল –
- 1.01325 × 106 dyn/cm2
- 1.01325 × 105 dyn/cm2
- 1.01325 × 103 dyn/cm2
- 1.01325 × 104 dyn/cm2
উত্তর – 1. 1.01325 × 106 dyn/cm2
1 torr হল –
- 0.5 cm of Hg
- 1 mm of Hg
- 2 mm of Hg
- 1 cm of Hg
উত্তর – 4. 1 cm of Hg
প্রদত্ত কোনটি বায়ুমণ্ডলের চাপের একক নয়? –
- পাস্কাল
- নিউটন
- বার
- টর
উত্তর – 2. নিউটন
বল অপরিবর্তিত রেখে ক্ষেত্রফল 10% কমালে চাপ –
- 10% বাড়বে
- 11.1% বাড়বে
- 21% বাড়বে
- 20% বাড়বে
উত্তর – 2. 11.1% বাড়বে
h গভীরতায় d ঘনত্বের তরলের অভ্যন্তরে চাপ (P) –
- \(P=\frac h{dg}\)
- \(P=hdd\)
- \(P=\frac{hd}g\)
- \(P=hd\)
উত্তর – 2. \(P=hdd\)
নির্দিষ্ট গভীরতায় তরলের চাপ যার ওপর নির্ভর করে তা হল –
- ঘনত্ব
- বায়ুর চাপ
- বস্তুর আয়তন
- বস্তুর ভর
উত্তর – 1. ঘনত্ব
তরলের মধ্যস্থ কোনো বিন্দুতে ঊর্ধ্বমুখী চাপ, নিম্নমুখী চাপ অপেক্ষা –
- বেশি
- কম
- সমান
- বলা সম্ভব নয়
উত্তর – 3. সমান
গভীরতা বাড়লে তরলের চাপ –
- কমে
- বাড়ে
- একই থাকে
- কোনোটিই নয়
উত্তর – 2. বাড়ে
ভ্যাকুয়াম হ্যাঙ্গার বা সাকার খাড়া দেয়ালের গায়ে চেপে ধরলে আটকে যায়। এর কারণ –
- বায়ুর ঊর্ধ্বচাপ
- নিম্নচাপ
- পার্শ্বচাপ
- সবগুলিই
উত্তর – 1. বায়ুর ঊর্ধ্বচাপ
স্বাভাবিক বায়ুচাপে 1 m লম্বা একটি ব্যারোমিটার নলে টরিসেলির শূন্যস্থানের দৈর্ঘ্য কত? –
- 76 cm
- 24 cm
- 100 cm
- নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব না
উত্তর – 2. 24 cm
বায়ুচাপ কোথায় সবথেকে বেশি? –
- দার্জিলিং
- কলকাতা
- সমুদ্রপৃষ্ঠ
- কোনোটিই নয়
উত্তর – 3. সমুদ্রপৃষ্ঠ
টরিসেলির পরীক্ষার নলটাকে কাত করলে টরিসেলির শূন্যস্থানের আয়তন –
- একই থাকে
- কমে যায়
- বেড়ে যায়
- কোনোটিই নয়
উত্তর – 2. কমে যায়
একটি শঙ্কুর উচ্চতা 10 cm। ভূমির ক্ষেত্রফল 10 cm2। শঙ্কুটিতে জল ভরতি করে টেবিলে রাখা হল। টেবিলের উপর জলের ঘাত হল (g = 10 m/s2) –
- 0.5 N
- 1 N
- 1.5 N
- 2 N
উত্তর – 3. 1 N
একটি পাত্রে তরল আছে। পাত্রটি অবাধে পতনশীল হলে তরলের h গভীরতায় চাপ হবে –
- hdg
- 0
- \(\frac12\)
- \(\frac32\)hdg
উত্তর – 2. 0
দুটি পাতলা গোলাকার চাকতির ব্যাসার্ধ যথাক্রমে 3 cm এবং 4 cm। এদের একটি তরলের মধ্যে একই গভীরতায় রাখা হল। এদের উপর ঘাতের অনুপাত হল –
- 9 : 16
- 3 : 4
- 4 : 3
- \(\sqrt3\) : 3
উত্তর – 1. 9 : 16
তরলের অভ্যন্তরে একই গভীরতায় দুটি বৃত্তাকার চাকতি ভাসছে। চাকতি দুটির ব্যাসার্ধ যথাক্রমে 2 cm ও 3 cm। চাকতি দুটির উপর চাপ যথাক্রমে P1 ও P2 হলে P1 : P2 –
- 2 : 3
- 4 : 9
- 8 : 27
- 1 : 11
উত্তর – 1. 1 : 1
ব্যারোমিটারে পারদস্তম্ভের উচ্চতা ধীরে ধীরে কমলে ইঙ্গিত দেয় –
- ঝড় ওঠার সম্ভাবনা
- প্রবল ঝড় ও প্রবল বৃষ্টি একসঙ্গে হওয়ার সম্ভাবনা
- বৃষ্টির সম্ভাবনা
- বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই
উত্তর – 3. বৃষ্টির সম্ভাবনা
ব্যারোমিটারে তরল হিসেবে জল নিলে সেটির স্বাভাবিক পাঠ হবে –
- 76 cm
- 10.34 m
- 1 m
- 34.01 m
উত্তর – 34.01 m
ব্যারোমিটারে যে তরলটি ব্যবহার করলে নলের উচ্চতা সবচেয়ে কম হবে –
- জল
- গ্লিসারিন
- পারদ
- দুধ
উত্তর – 3. পারদ
বায়ুমণ্ডলীয় চাপ আছে বলেই যে যন্ত্রটি তৈরি করা সম্ভব হয়েছে –
- রেডিয়ো
- টিভি
- সাইফন
- পাম্প
উত্তর – 3. সাইফন
সাইফনের সাহায্যে জলকে স্থানান্তরিত করতে হলে ছোটো বাহুর সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য হবে –
- 10.36 ফুটের কম
- 10.36 মিটারের কম
- 76 সেমির কম
- 760 সেমির কম
উত্তর – 1. 10.36 মিটারের কম
সাইফনের ক্রিয়াশীলতা নির্ভর করে –
- চাপের পার্থক্য
- তরলের প্রকৃতি
- নলের প্রস্থচ্ছেদ
- উষ্ণতার ওপর
উত্তর – 1. চাপের পার্থক্য
নীচের চিত্রে জলের সাইফনিক ক্রিয়া দেখানো হয়েছে। চিত্রে A ও B বিন্দুর উচ্চতার পার্থক্য 10 cm হলে, B ও A বিন্দু দুটির মধ্যে চাপের পার্থক্য (PA – PB) -এর মান –

- 400 N/m2
- 3000 N/m2
- 1000 N/m2
- 0
উত্তর – 3. 1000 N/m2
সাইফনের দুটি বাহুর দৈর্ঘ্য –
- সর্বদাই সমান
- কখনোই সমান নয়
- কখনো সমান হতেও পারে
- নির্দিষ্ট নয়
উত্তর – 2. কখনোই সমান নয়
শূন্যস্থান পূরণ করো
ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উপরে ওঠা যায় বাতাসের চাপ তত ___।
উত্তর – ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উপরে ওঠা যায় বাতাসের চাপ তত কমে।
টরিসেলির শূন্যস্থানে সামান্য ___ থাকে।
উত্তর – টরিসেলির শূন্যস্থানে সামান্য পারদ বাষ্প থাকে।
তরলের যে-কোনো বিন্দুতে ঊর্ধ্বচাপ ও নিম্নচাপ ___।
উত্তর – তরলের যে-কোনো বিন্দুতে ঊর্ধ্বচাপ ও নিম্নচাপ সমান।
আবহাওয়াবিজ্ঞানে বায়ুচাপ ___ এককে মাপা হয়।
উত্তর – আবহাওয়াবিজ্ঞানে বায়ুচাপ বার/মিলিবার এককে মাপা হয়।
তরলের ___ ধর্মের ওপর নির্ভর করে শহরে জল সরবরাহ করা হয়।
উত্তর – তরলের সমোচ্চশীলতা ধর্মের ওপর নির্ভর করে শহরে জল সরবরাহ করা হয়।
তরলের মধ্যে একই অনুভূমিক তলের সব বিন্দুতে তরলের ___ সমান, এই কারণে তরলের উপরিতল সর্বদা, হয়।
উত্তর – তরলের মধ্যে একই অনুভূমিক তলের সব বিন্দুতে তরলের চাপ সমান, এই কারণে তরলের উপরিতল সর্বদা অনুভূমিক হয়।
1 Pa = ___ dyn/cm2।
উত্তর – 1 Pa = 10 dyn/cm2।
প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপের মান ___ সেমি পারদস্তম্ভের চাপের সমান।
উত্তর – প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপের মান 76 সেমি পারদস্তম্ভের চাপের সমান।
ব্যারোমিটারে ব্যবহৃত তরলের ___ যত কম হয় তরলস্তম্ভের ___ তত বাড়ে।
উত্তর – ব্যারোমিটারে ব্যবহৃত তরলের ঘনত্ব যত কম হয় তরলস্তম্ভের উচ্চতা তত বাড়ে।
বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে ব্যারোমিটারের পাঠ ___ পায়।
উত্তর – বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে ব্যারোমিটারের পাঠ হ্রাস পায়।
অ্যানিরয়েড ব্যারোমিটারে কোনো ___ থাকে না।
উত্তর – অ্যানিরয়েড ব্যারোমিটারে কোনো 76 থাকে না।
বিশ্বের দ্রুততম গাড়ি ‘Thurst supersonic car’, যেটি ___ নামে পরিচিত। এই গাড়িটির ওপর মোট ঘাত বল ___ KN।
উত্তর – বিশ্বের দ্রুততম গাড়ি ‘Thurst supersonic car’, যেটি ‘Thurst SSC‘ নামে পরিচিত। সেটি 16.5 মি লম্বা এবং 3.7 মি চওড়া এবং তার ওজন 10 টনের কাছাকাছি। এই গাড়িটির ওপর মোট ঘাত বল 223 KN।
বার্লিনের লুইফ ___ খ্রিস্টাব্দে সাইফনের মতো কফি প্রস্তুতকারক যন্ত্র তৈরি করেন।
উত্তর – বার্লিনের লুইফ 1830 খ্রিস্টাব্দে সাইফনের মতো কফি প্রস্তুতকারক যন্ত্র তৈরি করেন।
ঠিক বা ভুল নির্বাচন করো
একক আয়তনে প্রযুক্ত লম্ব বল বা ঘাতকেই চাপ বলে।
উত্তর – ভুল।
সঠিক উত্তর – একক ক্ষেত্রফলে প্রযুক্ত ঘাত।
এভারেস্ট শীর্ষে বায়ুচাপ সমুদ্রপৃষ্ঠে বায়ুচাপ অপেক্ষা কম।
উত্তর – ঠিক।
নিস্তরল ব্যারোমিটারকে উচ্চতামাপক যন্ত্র হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
উত্তর – ঠিক।
জল স্থানান্তরণের কাজে ব্যবহৃত সাইফনের ছোটো বাহুটির সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য হয় 76 সেমি।
উত্তর – ভুল।
সঠিক উত্তর – সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য 10.34 m
যে-কোনো তরলের ভেতরে একই অনুভূমিক রেখায় চাপ সর্বত্র সমান।
উত্তর – ঠিক।
আর্টেজীয় কূপের সাহায্যে মরুভূমিতে জলসেচ করা হয়।
উত্তর – ঠিক।
তরলের চাপ ঘনত্বের ওপর নির্ভরশীল।
উত্তর – ঠিক।
ব্যারোমিটারের পাঠ দ্রুত কমতে থাকলে বোঝা যায় যে, নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে।
উত্তর – ঠিক।
দু-একটি শব্দে উত্তর দাও
বায়ুমণ্ডলীয় চাপের একক বার বা মিলিবার কোন্ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়?
বায়ুমণ্ডলীয় চাপের একক বার বা মিলিবার আবহবিদ্যায় ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
ঘাত কী জাতীয় রাশি?
ঘাত হল ভেক্টর রাশি (ঘাতের মান ও অভিমুখ দুই-ই আছে)।
SI -তে ঘাতের একক কী?
SI -তে ঘাতের একক হল নিউটন।
তরলের সমোচ্চশীলতা ধর্মের কারণ কী?
তরলের সমোচ্চশীলতা ধর্মের কারণ হল তরলের মধ্যে একই অনুভূমিক রেখায় অবস্থিত সব বিন্দুতে তরলের চাপ সমান।
চাপের CGS একক কী?
চাপের CGS একক হল ডাইন/সেমি2।
চাপ স্কেলার রাশি না ভেক্টর রাশি?
চাপ স্কেলার রাশি।
প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ মাপার জন্য কত উষ্ণতা নেওয়া হয়?
প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ মাপার জন্য 0°C উষ্ণতা নেওয়া হয়।
একটি পাঁচতলা বাড়ির কোন্ তলায় কল থেকে সব থেকে ধীরে জল পড়ে?
একটি পাঁচতলা বাড়ির পঞ্চম তলায় কল থেকে সব থেকে ধীরে জল পড়ে।
কুয়োর মধ্যে জল কত মিটার নীচে নেমে গেলে জল আর পাম্পের সাহায্যে তোলা সম্ভব নয়?
10.36 মিটারের বেশি (বায়ুমণ্ডলীয় চাপ জলস্তম্ভকে 10.36 মিটারের বেশি উচ্চতায় তুলতে পারে না)।
তরল ও গ্যাসের মধ্যে প্রবাহের অভিমুখ কে নিয়ন্ত্রণ করে?
তরল ও গ্যাসের মধ্যে প্রবাহের অভিমুখ চাপের পার্থক্য নিয়ন্ত্রণ করে।
বায়ুর চাপের পরিবর্তনে গ্লিসারিন ও পারদের মধ্যে কোনটি বেশি সুবেদী?
বায়ুর চাপের পরিবর্তনে গ্লিসারিন ও পারদের মধ্যে গ্লিসারিন বেশি সুবেদী।
ব্যারোমিটারে পারদপাত্র হিসেবে ব্যবহৃত থলিটি কী দিয়ে তৈরি?
ব্যারোমিটারে পারদপাত্র হিসেবে ব্যবহৃত থলিটি হরিণের বা স্যাময় চামড়া দিয়ে তৈরি।
কোনো ব্যারোমিটারকে চাঁদে নিয়ে গেলে ব্যারোমিটার পাঠ কত হবে?
কোনো ব্যারোমিটারকে চাঁদে নিয়ে গেলে ব্যারোমিটার পাঠ শূন্য হবে।
বায়ুমণ্ডলীয় চাপ পরিবর্তিত হলে সাইফনের মধ্যে দিয়ে তরলপ্রবাহের হারের পরিবর্তন হবে কি?
বায়ুমণ্ডলীয় চাপ পরিবর্তিত হলে সাইফনের মধ্যে দিয়ে তরলপ্রবাহের হারের পরিবর্তন হবে না।
পেট্রোলপূর্ণ ট্যাংক থেকে পেট্রোল স্থানান্তরিত করার জন্য কোন্ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়?
পেট্রোলপূর্ণ ট্যাংক থেকে পেট্রোল স্থানান্তরিত করার জন্য সাইফন যন্ত্র ব্যবহার করা হয়।
চাপ ও ঘাতের মধ্যে সম্পর্ক কী?
চাপ ও ঘাতের মধ্যে সম্পর্কটি হল –
বল অপরিবর্তিত অবস্থায় তলের ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি পেলে চাপের কী পরিবর্তন ঘটবে?
বল অপরিবর্তিত অবস্থায় তলের ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি পেলে চাপের মান হ্রাস পাবে (∵ চাপ ∝ যখন বল অপরিবর্তিত)।
For High-Types
মরুভূমির মধ্যে অনুষ্ঠিত দৌড় প্রতিযোগিতায় কার জেতার সম্ভাবনা বেশি? ঘোড়া না উট?
ঘোড়ার গতিবেগ উটের তুলনায় অনেক বেশি হলেও মরুভূমিতে ঘোড়ার তুলনায় উট অনেক সহজে চলাচল করতে পারে। এর কারণ – ঘোড়ার তুলনায় উটের পায়ের পাতা অনেক বেশি প্রশস্ত অর্থাৎ, তার ক্ষেত্রফল বেশি। তাই নিজের ওজনের জন্য বালিতে সৃষ্ট চাপ ঘোড়া অপেক্ষা উটের ক্ষেত্রে কম হয়। তাই উট অনেক সহজে বালির মধ্য দিয়ে চলাচল করতে পারে।
অন্যদিকে, ঘোড়ার পায়ের পাতার ক্ষেত্রফল কম হওয়ায় নিজের ওজনের জন্য বালিতে চাপ বেশি হয়। ফলে, ঘোড়ার পা বালিতে ডুবে বা বসে যাওয়ার প্রবণতা দেখায়, যা চলাফেরায় অসুবিধা সৃষ্টি করে। তাই এক্ষেত্রে উটের জেতার সম্ভাবনা বেশি।
কোনো জায়গায় বড়ো ধরনের আগুন লাগলে সেখানে ঝড় বইতে শুরু করে কেন?
বড়ো ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট স্থানে বড়ো অঞ্চল অধিকার করে থাকা বায়ু তাপের প্রভাবে আয়তনে বাড়ে এবং হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। ফলে, ওই স্থানে সাময়িকভাবে আংশিক শূন্যতার সৃষ্টি হয়। ওই শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য সংলগ্ন স্থান থেকে অপেক্ষাকৃত শীতল ও ভারী বায়ু দ্রুতবেগে ওই স্থানে ছুটে আসে। এ কারণেই সংশ্লিষ্ট স্থানে ঝড় বইতে থাকে।
হাতি শুঁড় দিয়ে জল তুলে কীভাবে স্নান করে?
বায়ুচাপকে কাজে লাগিয়ে হাতি শুঁড় দিয়ে জল তুলে স্নান করে। এক্ষেত্রে হাতির শুঁড় ফাঁপা নলের মতো কাজ করে। জল তোলার সময় হাতি শুঁড়ের ভিতরের বায়ু ফুসফুসে টেনে নেয়। এর ফলে শুঁড়ের ভিতরে আংশিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়, যা পূরণ করতে বাইরের বায়ু জলে চাপ দেয়। এই চাপে জল শুঁড়ের ভিতরে প্রবেশ করে। এরপর হাতি শুঁড় উঁচু করে ফুসফুসে জমা বায়ু দিয়ে ওই জলে চাপ দেয় যার প্রভাবে জল বাইরে বেরিয়ে এসে হাতির শরীর ভিজিয়ে দেয়।

একটি বরফপূর্ণ আইসব্যাগকে মসৃণ মেঝের উপর চেপে ধরে এক মুখ ধরে হঠাৎ উপরের দিকে টান দিলে সেটি মেঝে থেকে উঠতে চায় না কেন?
আইসব্যাগের তলদেশ অপেক্ষাকৃত মসৃণ থাকে। মসৃণ মেঝের তলে সেটি চেপে ধরলে মেঝে ও ব্যাগের মধ্যবর্তী স্থানের বায়ু আংশিক অপসারিত হয়ে ওই স্থানে আংশিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়। এই অবস্থায় পারিপার্শ্বিক বায়ুর দেওয়া নিম্নচাপের ক্রিয়ায় ব্যাগটি মেঝেতে আটকে থাকে এবং ব্যাগটির মুখ ধরে টানলে সহজে উঠে আসে না।
স্থির তরলের মধ্যে যে-কোনো বিন্দুতে তরলের চাপ সবদিকে সমান। – গাণিতিকভাবে প্রমাণ করো।

ধরা যাক, স্থির তরলের অভ্যন্তরে অবস্থিত দুটি বিন্দু A ও B -কে অন্তর্ভুক্ত রেখে এবং AB রেখাকে অক্ষ কল্পনা করে একটি অনভূমিক তরল চোঙ কল্পনা করা হল। A ও B বিন্দুগামী চোঙের উল্লম্ব বৃত্তাকার তলদুটির ক্ষুদ্র ক্ষেত্রফল মনে করি ΔS। A ও B বিন্দুতে চাপ যথাক্রমে PA ও PB হলে তরল চোঙের উপর AB ও BA অভিমুখে পার্শ্বঘাত হয় যথাক্রমে PAΔS এবং PBΔS। চোঙের বক্রতলের উপর প্রযুক্ত এই পার্শ্বঘাত ওই তলের সঙ্গে লম্বভাবে ক্রিয়া করে। সুতরাং, AB বা BA অভিমুখে ওই ঘাতের উপাংশের মান হয় শূন্য।
∴ চোঙের ভিতরে থাকা তরলের সাম্যের শর্ত হল – PAΔS = PBΔS
বা, PA = PB
অর্থাৎ, স্থির তরলের মধ্যে একই অনুভূমিক তলের সর্বত্র চাপ সমান হয়।
গভীর সমুদ্রের মাছকে তুলে সমুদ্রপৃষ্ঠে আনা হলে তাদের দেহ ফেটে রক্ত বেরোতে দেখা যায় কেন?
গভীর সমুদ্রের মাছের দেহের অভ্যন্তরে প্রবহমান রক্তের চাপ অনেক বেশি থাকে, যা গভীরতা বেশি হওয়ার জন্য জলস্তম্ভ যে বাড়তি চাপ দেয় তাকে প্রশমিত করে। এজাতীয় মাছকে সমুদ্রের উপরিতলে আনা হলে তার দেহের উপর জলস্তম্ভের চাপ অনেকটা কম হয়। এই অবস্থায় শরীরের ভিতর থেকে রক্ত দ্রুত বাইরে বেরিয়ে এসে চাপের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এর ফলে মাছের দেহের রক্ত জালকগুলির উপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে, যা সহ্য করতে না পেরে সেগুলি ফেটে যায় এবং মাছের সমগ্র দেহ ফেটে রক্ত বের হতে থাকে।
উচ্চরক্তচাপের রোগীরা পাহাড়ি অঞ্চলে গেলে (যেখানে বায়ুচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে কম) কেন অনেক সময় তাদের মুখমণ্ডল, নাক ইত্যাদি ফেটে রক্ত বের হতে দেখা যায়?
একই কারণে উচ্চরক্তচাপের কোনো রোগী পাহাড়ি অঞ্চলে (যেখানে বায়ুচাপ স্বাভাবিক বায়ুচাপ অপেক্ষা যথেষ্ট কম) গেলে অনেক সময় তাঁদের মুখমণ্ডল, নাক ইত্যাদি ফেটে রক্ত বার হতে দেখা যায়।
একটি তেলভরতি ট্রাক a ত্বরণে চলতে শুরু করল। তেলের উপরিতল কি অনুভূমিক থাকবে?
তেলের উপরিতল অনুভূমিক থাকবে না। তেলের মধ্যে ΔA প্রস্থচ্ছেদ ও l দৈর্ঘ্যের একটি তরলচোঙ কল্পনা করা হল।

A ও B প্রান্ত যথাক্রমে h1 ও h2 গভীরতায় আছে। তরলের চোঙের উপর অনুভূমিক দিক থেকে ক্রিয়াশীল লব্ধি বল
= PAΔA – PBΔB
= (h1 – h2)ρgΔA
যেহেতু, বল = ভর × ত্বরণ
∴ (h1 – h2)ΔA = ΔΑlρ × a
বা, (h1 – h2) = \(\frac{la}g\)
∴ h1 > h2
∴ তরলতল প্রদর্শিত চিত্রের মতো দেখাবে।
একটি চোঙাকৃতি পাত্রকে তরল দ্বারা এমনভাবে পূর্ণ করা হল যেন চোঙের তলদেশে ঘাত এবং চোঙের গায়ে প্রযুক্ত ঘাত সমান হয়। প্রমাণ করো যে, পাত্রের তরলের উচ্চতা, পাত্রের ব্যাসার্ধের সমান হবে।
ধরি, চোঙের ব্যাসার্ধ, উচ্চতা = h
তরলের ঘনত্ব = d
∴ চোঙের আয়তন = πr2h
∴ চোঙের তরলের ওজন = πr2hdg
∴ চোঙের তরলের ঘাত = চোঙের তরলের ওজন = πr2hdg ___(1)
এখন চোঙের বক্রতলের ক্ষেত্রফল= 2πrh
চোঙের গায়ে অর্থাৎ, বক্রতলে গড় চাপ = \(\frac{hdg}2\)
চোঙের গায়ে মোট ঘাত = \(\frac{hdg}2\times2\pi rh\)
= πrh2dh ___(2)
শর্তানুযায়ী,
πr2hdg = πrh2dg
বা, r = h
সুতরাং, চোঙের ব্যাসার্ধ চোঙাকৃতি পাত্রের উচ্চতার সঙ্গে সমান হয়।
তরল ছাড়া কোনো ব্যারোমিটার আছে কি?
হ্যাঁ। একটি বায়ুশূন্য পাত্রের ঢাকনা পাতলা ঢেউখেলানো ধাতব পাত দিয়ে তৈরি করা হয়। বায়ুমণ্ডলের চাপ বাড়লে বা কমলে ধাতব আবরণটি নীচে নামে বা উপরে ওঠে। এই ধর্মকে কাজে লাগিয়ে বায়ুচাপ মাপার যে বিশেষ যন্ত্র নির্মাণ করা হয়, তাকে অ্যানিরয়েড বা নিস্তরল ব্যারোমিটার বলে।
উচ্চতা বাড়লে চাপ কমে – এই ধর্মকে কাজে লাগিয়ে নিস্তরল ব্যারোমিটারের সাহায্যে বিমানের উচ্চতা মাপা যায়। এভাবে ব্যবহার করলে তখন তাকে অল্টিমিটার (Altimeter) বা উচ্চতামাপক যন্ত্র বলে।
টরিসেলির পরীক্ষায় বা ব্যারোমিটার যন্ত্রের নলটি উল্লম্ব না থাকলে কি তা থেকে বায়ুচাপের সঠিক মান পাওয়া যাবে?
ব্যারোমিটার যন্ত্রের নলটি উল্লম্ব না থাকলেও বায়ুর চাপের সঠিক পরিমাপ করা যায়। ব্যারোমিটার যন্ত্রের নলটি উল্লম্ব না থেকে যদি কাত করা থাকে তাহলে নল বরাবর পারদস্তম্ভের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাবে অর্থাৎ, পারদস্তন্ত ক্রমশ বদ্ধপ্রান্তের দিকে অগ্রসর হবে।

ধরি, উল্লম্ব পারদস্তম্ভের উচ্চতা = h
তির্যক পারদস্তম্ভের দৈর্ঘ্য = h’
নলটি θ কোণে কাত করা
থাকলে,
\(\frac h{h’}=\cos\theta\) হয়
বা, h = h’cosθ
h’ ও θ -এর মান জানা থাকলে উপরের সমীকরণ থেকে নির্ণীত দৈর্ঘ্যের সাহায্যে বায়ুচাপের সঠিক মান পরিমাপ করা যাবে।
আজকের আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণির ভৌতবিজ্ঞান বইয়ের তৃতীয় অধ্যায় “পদার্থ : গঠন ও ধর্ম” এর “তরল ও বায়ুর চাপ” থেকে পরীক্ষায় আসা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা, এমনকি চাকরি বা যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও উপযোগী। কারণ, এই অধ্যায়ের প্রশ্ন প্রায়ই বিভিন্ন পরীক্ষায় কমন আসে।
আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। যদি কোনো প্রশ্ন, মতামত বা সাহায্যের প্রয়োজন হয়, নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন কিংবা টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন—আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি সর্বদা প্রস্তুত।
ধন্যবাদ সবাইকে।