দেশভাগ (1947 খ্রিস্টাব্দ) জনিত উদ্বাস্তু সমস্যা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “দেশভাগ (1947 খ্রিস্টাব্দ) জনিত উদ্বাস্তু সমস্যা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “দেশভাগ (1947 খ্রিস্টাব্দ) জনিত উদ্বাস্তু সমস্যা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের অষ্টম অধ্যায় “উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964)“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

দেশভাগ (1947 খ্রিস্টাব্দ) জনিত উদ্বাস্তু সমস্যা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

দেশভাগ (1947 খ্রিস্টাব্দ) জনিত উদ্বাস্তু সমস্যা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও 1947 খ্রিস্টাব্দের দেশভাগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতার প্রথম পাঁচ বছরে উদ্বাস্তু সমস্যা তীব্র আকার নিয়েছিল। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু উত্তর ও পশ্চিম ভারতে মূলত পাঞ্জাবে আশ্রয় নিয়েছিল। অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তান (অধুনা বাংলাদেশ) থেকে আগত উদ্বাস্তু ও শরণার্থীরা জীবন ও জীবিকার স্বার্থে আশ্রয় নিয়েছিল মূলত এপার বাংলা অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায়।

নিরাপত্তাজনিত অভাব, ধর্ম ও সংস্কৃতিগত সাদৃশ্য এবং বাংলা ভাষায় স্বাচ্ছন্দের দরুন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তুকে আশ্রয় ও পুনর্বাসন দেওয়া ছিল খুবই কঠিন কাজ। বিপুল জনসংখ্যা, পরিকাঠামো জনিত সমস্যা, কিছুটা কেন্দ্রীয় স্তরের ঔদাসীন্য উদ্বাস্তু সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। বিপুল সংখ্যক শরণার্থী প্রাথমিক ভাবে আশ্রয় নিয়েছিল স্টেশনে, ফুটপাতে, খোলা আকাশের নীচে এবং বিভিন্ন উদ্বাস্তু ক্যাম্পে। পরে অবশ্য ছিন্নমূল এই সমস্ত মানুষজন নিজ উদ্যোগে কলোনী গড়ে তোলেন আবার কোথাও বা সরকারি সাহায্যে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়।

উদ্বাস্তু মানুষদের অসহায়তা, জীবনযন্ত্রণা, ভয়াবহ স্মৃতি এবং পূর্বতন গ্রাম বা শহরের মধুর স্মৃতি ধরা পড়েছে তাদের আত্মকথা, স্মৃতিকথা এবং সমসাময়িক সাহিত্যে। এই দেশভাগ, দাঙ্গা এবং অভিপ্রয়াণের জ্বলন্ত সাক্ষী ছিলেন যেসব নারীরা, তারাও তাদের ভয়াবহ স্মৃতি, যন্ত্রণা সর্বোপরি সংগ্রামকে কাগজে কলমে বা আলাপচারিতায় তুলে ধরেছেন।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

1947 সালের দেশভাগ কীভাবে উদ্বাস্তু সমস্যার সৃষ্টি করেছিল?

1947 সালে ব্রিটিশ ভারত বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হয়। ধর্মীয় ভিত্তিতে এই বিভাজনের ফলে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ জন্মভূমি ছেড়ে উদ্বাস্তু হিসেবে ভারতে বা পাকিস্তানে চলে আসতে বাধ্য হয়।

পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে আগত উদ্বাস্তুরা কোথায় বসতি স্থাপন করেছিল?

1. পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তুরা প্রধানত পাঞ্জাব, দিল্লি ও উত্তর ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে।
2. পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে আগত উদ্বাস্তুরা পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায় আশ্রয় নেয়।

পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনে কী কী সমস্যা হয়েছিল?

1. জায়গার অভাব – পশ্চিমবঙ্গ ও আশেপাশের রাজ্যগুলিতে জনঘনত্ব ইতিমধ্যেই বেশি ছিল।
2. অর্থনৈতিক সংকট – নতুন করে বাসস্থান ও চাকরির ব্যবস্থা করা কঠিন ছিল।
3. সরকারি সাহায্যের অভাব – কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের পর্যাপ্ত পরিকল্পনার অভাব ছিল।

উদ্বাস্তুরা কীভাবে বসবাস করতেন?

1. প্রথমে তারা রেলস্টেশন, ফুটপাত, উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নেয়।
2. পরে অনেকেই নিজেদের উদ্যোগে কলোনি গড়ে তোলে (যেমন: কলকাতার বেলঘড়িয়া, নৈহাটি ইত্যাদি)।
3. কিছু ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্যে পুনর্বাসন করা হয়।

দেশভাগের ফলে নারীদের কী পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল?

1. অনেক নারী ধর্ষণ, অপহরণ ও হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
2. অনেকে আত্মহত্যা করেছিলেন ধর্মীয় আক্রমণের ভয়ে।
3. পরবর্তীতে অনেকেই আত্মকথা বা স্মৃতিকথায় তাদের যন্ত্রণার কথা লিপিবদ্ধ করেছেন।

দেশভাগের স্মৃতি ও তার প্রভাব কোথায় পাওয়া যায়?

1. সাহিত্যে (সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “অর্ধেক জীবন”, জ্যোতির্ময়ী দেবীর “এপার ওপার” ইত্যাদি)।
2. সিনেমা ও ডকুমেন্টারিতে (মৃণাল সেনের “খণ্ডহার”, গরম হাওয়া ইত্যাদি)।
3. ব্যক্তিগত স্মৃতিকথা ও মৌখিক ইতিহাসে।

উদ্বাস্তু সমস্যার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কী ছিল?

1. পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের জনসংখ্যা ও রাজনীতিতে স্থায়ী প্রভাব।
2. সংস্কৃতি ও ভাষার পরিবর্তন (যেমন: কলকাতায় বাংলাদেশি সংস্কৃতির প্রভাব)।
3. সম্পত্তি ও নাগরিকত্ব সংক্রান্ত আইনি জটিলতা।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “দেশভাগ (1947 খ্রিস্টাব্দ) জনিত উদ্বাস্তু সমস্যা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “দেশভাগ (1947 খ্রিস্টাব্দ) জনিত উদ্বাস্তু সমস্যা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের অষ্টম অধ্যায় “উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964)” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির ব্যাপারে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির ব্যাপারে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।

কীভাবে কাশ্মীর সমস্যার সৃষ্টি হয় অথবা কাশ্মীর কিভাবে ভারতভুক্ত হয়

কাশ্মীর কিভাবে ভারতভুক্ত হয়?

নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি (1950 খ্রিস্টাব্দ) উদ্‌বাস্তু সমস্যার সমাধানে কতদূর ফলপ্রসূ হয়েছিল?

নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি (1950 খ্রিস্টাব্দ) উদ্‌বাস্তু সমস্যার সমাধানে কতদূর ফলদায়ক হয়েছিল?

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির ব্যাপারে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।

কাশ্মীর কিভাবে ভারতভুক্ত হয়?

নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি (1950 খ্রিস্টাব্দ) উদ্‌বাস্তু সমস্যার সমাধানে কতদূর ফলদায়ক হয়েছিল?

আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় কীভাবে দেশভাগের স্মৃতি বর্ণিত হয়েছে?

উদ্‌বাস্তু সমস্যার স্বরূপ নিয়ে ভারতের পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের মধ্যে একটি তুলনামূলক আলোচনা করো।