আজকের আলোচনার বিষয়: মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান বইয়ের “পরিবেশ, তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ – পরিবেশদূষণ” অধ্যায় থেকে রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর। এই প্রশ্নোত্তরগুলি বিশেষভাবে দশম শ্রেণীর পরীক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে এবং মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান পাঠ্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বায়ুদূষণ দ্বারা ঘটিত ফুসফুসের নানা ধরনের রোগগুলি সম্বন্ধে লেখো ।
দূষিত বায়ু প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যার ফলে ফুসফুসে বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টি হয়। যেমন—[1] CO2, NOx প্রভৃতি বায়ুদূষক হাঁপানি, ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া, ক্যানসার প্রভৃতি রোগ সৃষ্টি করে। [2] বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে কর্মরত শ্রমিকদের নানা ধরনের ফুসফুসের রোগ দেখা দেয়। [3] কয়লাখনি থেকে নির্গত কার্বন কণা শ্রমিকদের ফুসফুসে একটি কালো রঙের আস্তরণ সৃষ্টি করে ব্ল্যাক লাং নামক রোগ সৃষ্টি করে। [4] অ্যাসবেস্টস এবং সিলিকন শিল্পকারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের ফুসফুসে অ্যাসবেস্টস এবং সিলিকন কণা বায়ুর মাধ্যমে প্রবেশ করে এবং যথাক্রমে অ্যাসবেস্টোসিস ও সিলিকোসিস রোগ সৃষ্টি করে। [5] অনেকক্ষেত্রে, বায়ুদূষণের ফলে শ্বাসনালী সরু হয়ে যায় এবং স্থায়ীভাবে শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি হয়, তাকে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ বা COPD বলে। অত্যধিক ধূমপানের ফলেও COPD হয়ে থাকে।
জলদূষণ কাকে বলে? জলদূষণের কারণগুলি লেখো ।
জলদূষণ
প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট কারণে জলের সঙ্গে বিভিন্ন প্রকার বর্জ্য, দূষিত ও বিষাক্ত পদার্থ ইত্যাদি মিশে যাওয়ার ফলে জল যদি নোংরা হয় এবং জলের ভৌত, রাসায়নিক ও জৈব বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটে এবং এর ফলস্বরূপ জলজ উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে তাকে জলদূষণ বলে।
জলদূষণের কারণ
নানা কারণে জল দূষিত হয়ে থাকে। নীচে কয়েকটি কারণ আলোচনা করা হল।
- কৃষিক্ষেত্রের বর্জ্য দ্বারা দূষণ: গ্রামাঞ্চলে চাষের জন্য ব্যবহৃত কীটনাশক, আগাছানাশক, রাসায়নিক সার ইত্যাদি প্রধানত বৃষ্টির জলের সঙ্গে ধুয়ে গিয়ে নিকটবর্তী নদীনালা বা পুকুরের জলে মেশে এবং জলকে দূষিত করে। কৃষিতে ব্যবহৃত নাইট্রেট, ফসফেটজাতীয় রাসায়নিক সার থেকে ইউট্রোফিকেশন এর মতো সমস্যার সৃষ্টি হয়।
- জীবাণু ও গৃহস্থালির প্রাত্যহিক আবর্জনা দ্বারা দূষণ: গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত জলে খাদ্যদ্রব্যের ফেলে দেওয়া অংশ, তরকারির পচা অংশ, মলমূত্র, সাবান, ডিটারজেন্ট ইত্যাদি মিশে থাকে। ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া ইত্যাদি মিশ্রিত এই নোংরা জল নর্দমা, পয়ঃপ্রণালী দিয়ে নদ-নদী, হ্রদ, খাল বা সমুদ্রের জলে পড়ে ও দূষণ ঘটায়।
- যথেচ্ছ ব্যবহারজনিত দূষণ: বিভিন্ন জলাশয়ের জল, মানুষের যথেচ্ছ ব্যবহার, যেমন—মলমূত্র ত্যাগ, স্নান, বাসনপত্র ধোয়া, গবাদিপশুর স্নান বা কাপড় কাচার ফলে দূষিত হয় এবং তাতে বিভিন্ন প্রকার জীবাণু জন্মায়।
- ভারী ধাতু দ্বারা দূষণ: ভৌমজলের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মাটির নীচে জলস্তর স্বাভাবিকের থেকে অনেক নীচে নেমে যায়, যার ফলে জলে আর্সেনিক ও ফ্লুরাইডের ঘনত্ব বেড়ে যায় এবং জলদূষণ ঘটায়।
জলদূষণের ফলাফল বা ক্ষতিকর প্রভাব সংক্ষেপে লেখো।
জলদূষণের ফলাফল বা ক্ষতিকর প্রভাব
পরিবেশে জল দূষিত হলে তার ক্ষতিকর প্রভাব সমগ্র জীবজগতের ওপর পড়ে। ক্ষতিকর প্রভাবগুলি নীচে আলোচনা করা হল।
- জীবাণুর প্রাদুর্ভাব ও রোগের সম্ভাবনা: জল দূষিত হলে তাতে বিভিন্ন প্রকার জীবাণুর প্রাদুর্ভাব ঘটে। এইসব জীবাণু থেকে বিভিন্ন ধরনের রোগ, যেমন—টাইফয়েড, কলেরা, জন্ডিস, হেপাটাইটিস (A, E), আমাশয়, আন্ত্রিক প্রভৃতি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
- ইউট্রোফিকেশন: কাপড় কাচার ডিটারজেন্টে ব্যবহৃত ফসফেটজাতীয় রাসায়নিক বিভিন্ন জলাশয়ে গিয়ে জমা হয় ও সেখানে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটায়। এই ঘটনাকে ‘ইউট্রোফিকেশন বলে। এর ফলে জলের গুণগতমান হ্রাস পায়। জল দুর্গন্ধযুক্ত, বিস্বাদ, পানের অযোগ্য হয়। এ ছাড়া শৈবাল নিঃসৃত টক্সিন অন্যান্য প্রাণীর মৃত্যু ঘটায়।
- ত্বকের রোগ সৃষ্টি : জলের মধ্যে পারদ, তামা, সালফার প্রভৃতি দ্রবীভূত অবস্থায় থাকলে ওই জল ব্যবহারে ত্বকের নানারকম অসুখ হবার সম্ভাবনা থাকে।
- মাটির উর্বরতা হ্রাস : দূষিত জল মাটিতে বসবাসকারী উপকারী ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য জীবাণুকে ধ্বংস করে মাটির উর্বরতা কমিয়ে দেয়।
- মাছের উৎপাদন হ্রাস: নদী, পুকুর বা সমুদ্রের জল দূষিত হলে মাছসহ বহু সামুদ্রিক প্রাণী মারা যায়।
মানবদেহে জলদূষণের প্রভাব সংক্ষেপে লেখো ।
মানবদেহে জলদূষণের প্রভাব
[1] দূষিত জল পান করা, দূষিত জলে রান্না করা, হাত-পা ধোয়া বা স্নান করার ফলে মানুষের অনেক ধরনের স্বাস্থ্যহানি ঘটে থাকে। জলবাহিত কিছু রোগের নাম নীচের সারণিতে উল্লেখ করা হল।
কারক জীবের নাম | রোগের নাম |
ভাইরাসঘটিত | ভাইরাল হেপাটাইটিস A ও E, পোলিও, শিশুদের ডায়ারিয়া ইত্যাদি। |
ব্যাকটেরিয়াঘটিত | টাইফয়েড, ব্যাসিলারি ডিসেন্ট্রি, কলেরা ইত্যাদি। |
প্রোটোজোয়াঘটিত | আমাশয়, জিয়ার্ডিয়াসিস ইত্যাদি। |
কৃমিজাতীয় | টিনিয়াসিস, অ্যাসক্যারিয়েসিস ইত্যাদি। |
[2] পারদ, লোহা, নিকেল, তামা, ক্লোরিন প্রভৃতি মিশ্রিত জল থেকে বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগ ও পেটের অসুখ হয়। [3] অধিক ফ্লুরিনযুক্ত জল থেকে অ্যালার্জি, বৃক্কের সমস্যা, প্যারালাইসিস, অস্থি বিকৃতি প্রভৃতি রোগ দেখা দেয়।
আরো পড়ুন, মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – পরিবেশ তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ – পরিবেশদূষন – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
মাটিদূষণ কাকে বলে? মাটিদূষণের তিনটি কারণ লেখো।
মাটিদূষণ
প্লাস্টিক, পলিথিন, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, আগাছানাশক, দৈনন্দিন আবর্জনা, ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া ইত্যাদি দূষক মাটিতে মিশে ভূপৃষ্ঠের ওপরে বিন্যস্ত মাটির স্তরের যে ভৌত, রাসায়ানিক ও জৈব বৈশিষ্ট্যের অবাঞ্ছিত ও ক্ষতিকর পরিবর্তন বা ক্ষয়সাধিত হয়, তাকে মাটিদূষণ বলে।
মাটিদূষণের কারণ
বিভিন্ন কারণে মাটিদূষণ ঘটে থাকে। এখানে মাটিদূষণের তিনটি কারণ আলোচনা করা হল।
- জীবাণু সংক্রমণ: পৌর বর্জ্যের সঠিক ট্রিটমেন্ট না হলে তা মাটিদূষণ ঘটায়। তা ছাড়াও হাসপাতালের পরিত্যক্ত বর্জ্য কৃষিক্ষেত্রের বর্জ্য, পশুপালনক্ষেত্রের বর্জ্যতে অবস্থিত জীবাণু সরাসরি অথবা মশা, মাছি, ইঁদুর বাহিত হয়ে মানবদেহে রোগ সৃষ্টি করে।
- রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রয়োগ: অত্যধিক ফলন পাওয়ার জন্য কৃষিজমিতে রাসায়নিক সার, কীটনাশক, আগাছানাশক ইত্যাদি প্রয়োগ করা হয়। এর ফলে মাটিতে বসবাসকারী বিভিন্ন উপকারী জীব, যেমন— কেঁচো ও নাইট্রোজেন সংশ্লেষকারী বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে মাটির স্বাভাবিক উর্বরশক্তি নষ্ট হয় এবং কীটনাশকগুলি মাটিতে জমে মাটির অম্লতা বৃদ্ধি পায় এবং মাটি ক্রমে বন্ধ্যা হয়ে যায়।
- অম্লত্ব ও লবণাক্ততা বৃদ্ধি : বিভিন্ন শিল্প থেকে নির্গত নানা রকম অম্লঘটিত বর্জ্য পদার্থ মাটিতে ফেলার ফলে মাটির অম্লতা বৃদ্ধি পায়, যার ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাস পায়। কৃষিক্ষেত্রে অতিরিক্ত হারে জলসেচের ফলে মাটিতে লবণাক্ততার সৃষ্টি হয় ও মাটির উর্বরতা হ্রাস পায়।
মাটিদূষণের ফলাফল বা ক্ষতিকর প্রভাবগুলি লেখো।
মাটিদূষণের ফলাফল বা মাটিদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব
মাটিদূষণের ফলে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ করা যায়। এগুলি নীচে আলোচনা করা হল।
- মানুষের ওপর প্রভাব: মানুষের ওপর মাটিদূষণের যেসব প্রভাব দেখা যায়, তা হল — [1] রোগজীবাণুর সংক্রমণ : মাটি দূষিত হলে মাটিতে বিভিন্ন ধরনের জীবাণুর প্রাদুর্ভাব বাড়ে। ওই জীবাণু খুব সহজে মানুষের দেহে প্রবেশ করার সুযোগ পায় এবং মানবদেহে বিভিন্ন রকম রোগ সৃষ্টি করে, যার ফলে মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। টিটেনাস রোগ সৃষ্টি করে ক্লসট্রিডিয়াম টিটানি। গ্যাস-গ্যাংগ্রিন রোগ সৃষ্টি করে ক্লসট্রিডিয়াম পারফ্রিনজেস, অ্যাসপারজিলোসিস রোগ সৃষ্টিকারী অ্যাসপারজিলাস প্রভৃতি অণুজীব। অ্যাসপারজিলাস-এর সংস্পর্শে কর্ণকুহর, শ্বাসনালী প্রভৃতি স্থানে সংক্রমণ ঘটে। [2] খাদ্য উৎপাদন হ্রাস : মাটি দূষিত হলে, মাটির স্বাভাবিক উর্বরতা শক্তি ব্যাহত হয়। ফলে খাদ্যশস্যের উৎপাদন কমে যায়। পরোক্ষভাবে মানুষের খাদ্যের চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ হয় না এবং মানুষ অপুষ্টিতে ভোগে অর্থাৎ, মৃত্তিকাদূষণ থেকে মানুষের মধ্যে অপুষ্টিজনিত ব্যাধির সৃষ্টি হয়।
- জৈববিবর্ধন: খাদ্যশৃঙ্খল বরাবর নীচ থেকে ক্রমশ উচ্চতর পুষ্টিতরে কোনো দূষকের ক্রমবর্ধমান সঞ্চয়ের ঘটনাকে জৈববিবর্ধন বলে। জৈববিবর্ধন দুটি ধাপে ঘটে থাকে। যেমন— [1] জৈবসঞ্চয়ন: ক্রমক্ষয়হীন দূষকগুলি বাস্তুতন্ত্রের প্রতিটি খাদ্যশৃঙ্খলে পুঞ্জীভূত হওয়ার ঘটনাকে জৈবসঞ্চয়ন বলে। দূষকগুলি সাধারণত প্রাণীর মেদকলা বা অ্যাডিপোজ কলায় সঞ্চিত হয়ে থাকে। [2] পুষ্টির স্তরে দূষকের ক্রমপ্রবাহ: খাদ্যশৃঙ্খলে প্রতিটি পুষ্টিস্তর খাদ্য-খাদক সম্পর্কযুক্ত হয়। ফলে জৈবসাঞ্চয়নে পুঞ্জীভূত দূষক ক্ৰমান্বয়ে উৎপাদক, প্রাথমিক খাদক, গৌণ খাদক, প্রগৌণ খাদক প্রভৃতি পথে জীবদেহে অধিক ঘনত্বে সঞ্চিত হয়। এর ফলে সর্বোচ্চ খাদকস্তরে দূষক ঘনত্ব সর্বাধিক হয় (নীচের চিত্র লক্ষ্যণীয়)। কীটনাশক DDT-এর পুষ্টিস্তরে ঘনত্ব বৃদ্ধি জৈববিবর্ধনের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
শব্দদূষণ কাকে বলে? শব্দদূষণের কারণগুলি লেখো।
শব্দদূষণ
উচ্চ প্রাবল্যের ও উচ্চ তীব্রতাবিশিষ্ট সহনসীমার ঊর্ধ্বের সুরবর্জিত কর্কশ শব্দ দ্বারা পরিবেশে এবং মানবদেহের ক্ষতিকর ও অবাঞ্ছনীয় পরিবর্তনকে শব্দদূষণ বলে।
শব্দদূষণের কারণ
শব্দদূষণ বিভিন্ন কারণে ঘটে। নীচে কয়েকটি কারণ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হল।
- যানবাহন: যানবাহন হল শব্দদূষণের অন্যতম কারণ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শহরাঞ্চলে যানবাহনের পরিমাণও ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলস্বরূপ শব্দদূষণও দিনের পর দিন ধরে বৃদ্ধি পেয়েছে। যেসব যানবাহন থেকে বেশি শব্দদূষণ ঘটে সেগুলি হল মোটর সাইকেল, মোটর গাড়ি, বাস, লরি, ট্রাম, টেম্পো ইত্যাদি। এরোপ্লেন, হেলিকপ্টার ইত্যাদি ওঠা ও নামার সময়ে ভীষণমাত্রায় শব্দদূষণের সৃষ্টি হয়। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ (CPCB বা Central Pollution Control Board)যানবাহনজনিত মাত্রা 70dB নির্ধারণ করলেও বহু শহরে শব্দের মাত্রা অনেক বেশি।
- শিল্প: কলকারখানার বিভিন্ন যন্ত্রের ঘর্ষণের ফলে সৃষ্ট শব্দ ভীষণভাবে শব্দদূষণের সৃষ্টি করে। কাঠের মিল, আসবাব নির্মাণ শিল্প, ধাতব পণ্য উৎপাদন শিল্প, জাহাজ ও বিমান নির্মাণ শিল্প, খাদ্য উৎপাদন শিল্প ইত্যাদিতে খুব বেশিমাত্রায় শব্দ উৎপন্ন হয় এবং শব্দদূষণ ঘটে। ভারতে শিল্পক্ষেত্রে ৪ ঘণ্টায় গড়ে 90 dB শব্দ সহনমাত্রা বলে নির্ধারিত।
- যন্ত্র : বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র, যেমন—ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, ওয়াশিং মেশিন, ডিজেল চালিত জেনারেটার প্রভৃতি থেকে উৎপন্ন বিকট আওয়াজ শব্দদূষণ সৃষ্টি করে। এ ছাড়া রেডিও, টিভি এবং লাউড স্পিকারের শব্দও বেশিরভাগক্ষেত্রে শব্দদূষণ ঘটায়।
- বাজি: বাজির তীব্র আওয়াজ ব্যাপক শব্দদূষণ সৃষ্টি করে। বাজির বা বিস্ফোরণের শব্দের প্রভাবে মানুষের অন্তঃকর্ণের ককলিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং স্থায়ীভাবে শ্রবণ ক্ষমতা নষ্ট হয়, একে অ্যাকাউস্টিক ট্রমা বলে।
মানুষের ও অন্যান্য প্রাণীর ওপর শব্দদূষণের প্রভাব লেখো ।
মানুষের ওপর শব্দদূষণের প্রভাব
- কানের ওপর প্রভাব: [1] দীর্ঘদিন ধরে সুউচ্চ শব্দ শুনতে থাকলে ধীরে ধীরে বধিরতা দেখা দেয়। এর মূল কারণ, শব্দদূষণের ফলে অন্তঃকর্ণের কর্টিযন্ত্রের কোশগুলি বিনষ্ট হওয়া। [2] যদি কোনো ব্যক্তি প্রায় 160 dB-এর শব্দ গ্রহণ করে, তাহলে তার কানের পর্দা ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে সে শ্রবণ ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে ফেলতে পারে।
- হূৎপিণ্ডের ওপর প্রভাব: [1] উচ্চমাত্রার শব্দ মানুষের হৃৎপিণ্ডের ওপর বিশেষ প্রভাব ফেলে। দীর্ঘক্ষণ উচ্চ প্রাবল্যের শব্দ শুনতে থাকলে ব্যক্তির হৃৎস্পন্দনের হার অনেক বেড়ে যায়। [2] 90 dB-এর ঊর্ধ্বে শব্দ হলে সিস্টোলিক রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় [3] 60 dB-এর ওপরে শব্দ শুনলে হৃৎপিণ্ডের পেশির মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন (MI) হওয়ার সম্ভাবনা তত বৃদ্ধি পায়। এই রোগে হৃদবাহ দিয়ে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে হৃদপেশির কার্যকারিতা বিনষ্ট হয়। [4] উচ্চমাত্রার শব্দ শুনলে অনেকক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
- অন্যান্য প্রভাব: [1] মানসিক অবসাদ দেখা দেয়। [2] মানুষের কর্মক্ষমতা কমে যায়। [3] ঘুম কমে যায়। [4] স্নায়ু উত্তেজিত হয়। [5] পেশির কার্যকারিতা নষ্ট হয় ।
অন্যান্য প্রাণীর ওপর প্রভাব
শব্দদূষণ অন্যান্য প্রাণীর ওপরও বিভিন্ন ধরনের বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে। এগুলি নীচে উল্লেখ করা হল।
- বধিরতা: 85 dB-এর ওপরে শব্দ হলে তা প্রাণীদের শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাস করে।
- প্রজননে বাধা: শব্দদূষণের ফলে বহু প্রাণী এবং পাখি প্রজননে অংশ নিতে পারে না। ফলে ওই প্রাণী ও পাখির নতুন অপত্য সৃষ্টিতে বাধা পায় ।
- ভ্রূণের বৃদ্ধি হ্রাস: ইঁদুরের ক্ষেত্রে দেখা গেছে উচ্চশব্দে ভ্রূণের বৃদ্ধি হ্রাস পায়।
পরিবেশ আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। এটি আমাদের উপকারের মাঝেও মানবজাতির সম্পর্কে অন্যদের প্রতি দায়িত্বের প্রমাণ করে। পরিবেশের সম্পদ এবং সম্পদ সংরক্ষণ একটি জরুরি কার্য। আমাদের উপযুক্ত পরিবেশ সম্পদ এবং সম্পদ সংরক্ষণের জন্য আমাদের পরিবেশ সংস্কৃতির মাঝে একটি সুমেক্ষা থাকতে হবে। এটি ধর্ম, শিক্ষা, প্রচলিত সংস্কৃতি এবং সরকারী নীতিমালা দ্বারা প্রচারিত হতে পারে। আমরা সম্পদগুলি ব্যবহার করতে পারি এবং পরিবেশের সাথে সম্পর্ক রাখতে পারি শুধুমাত্র সঠিক পরিবেশ সংরক্ষণের মাধ্যমে। একটি বিজ্ঞানগত, তত্ত্বাবধান এবং সংস্কৃতির সমন্বয় দ্বারা আমরা পরিবেশ সংরক্ষণ চালাতে পারি এবং আমাদের সমগ্র পৃথিবীর ভবিষ্যতের জন্য একটি টিকিট প্রদান করতে পারি।
আরও পড়ুন –
- মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদেহে সাড়া প্রদানের একটি প্রকার হিসেবে গমন – অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – উদ্ভিদের সাড়া প্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয় হরমোন – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – উদ্ভিদের সাড়া প্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয় – হরমোন – অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
এই ব্লগ পোস্টে, আমরা মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান বইয়ের “পরিবেশ, তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ – পরিবেশ দূষণ” অধ্যায় থেকে রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তরগুলি পর্যালোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলি দশম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের পাঠ্যক্রমের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।