মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – পরিবেশ তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ – পরিবেশদূষন – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

Rahul

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান বিষয়টি পরিবেশ সম্পর্কিত মূল বিষয়গুলি সম্পর্কে বিবেচনা করে। পরিবেশ হলো আমাদের চারপাশের সমস্ত জীবজন্তু, পারিস্থিতিক উপাদান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জল, বায়ু, মাটি, আলো,শব্দ, জীবিত জীবনধারার সম্পর্কের একটি আমাদের সাথে সম্পর্কিত সম্পদ। এই বিষয়টি পড়ার মাধ্যমে আমরা জীবনের সুন্দর পরিবেশের সংরক্ষণ এবং পরিবেশদূষণের মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি নিয়ে চিন্তা করতে পারি।

Table of Contents

পরিবেশের সংরক্ষণ সম্পর্কে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান পঠনযন্ত্রে আমরা শিক্ষা পাই। এটি আমাদের উপাদানের উপযুক্ত ব্যবহার ও পরিবেশের সংরক্ষণ করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে পড়াশোনা করার মাধ্যমে আমাদেরকে সচেতন করে তুলে দেয়।

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান - পরিবেশ তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ - পরিবেশদূষন - রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

বায়ুদূষণ কাকে বলে? বায়ুদূষণের কারণগুলি লেখো।

বায়ুদূষণ হলো বায়ুতে অপসারণ হয়ে থাকা বিষাক্ত পদার্থসমূহের কারণে বায়ুমণ্ডলের গুণমান বা মানসম্পন্নতার ক্ষতি, যা মানব স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জীবনধারাকে প্রভাবিত করে।

বায়ুদূষণ

প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট কারণে, বায়ুমণ্ডলের কোনো গ্যাসীয় উপাদানের ঘনত্বের পরিবর্তনে বা অন্য কোনো ক্ষতিকর উপাদান মিশে জীবের ও পরিবেশের ক্ষতিসাধনের ফলে সৃষ্ট অবস্থাকে বায়ুদূষণ বলে।

বায়ুদূষণের কারণ

বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হল — 1. গ্রিনহাউস গ্যাস এবং 2. SPM বা সাসপেনডেড পারটিকুলেট ম্যাটার। নীচে এগুলির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হল।

  • গ্রিনহাউস গ্যাস বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2), মিথেন (CH4), ওজোন (O3), ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFCs), নাইট্রাস অক্সাইড (N2O) প্রভৃতি গ্যাস তাপ বিকিরণে বাধা দিয়ে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি করে। এদের গ্রিনহাউস গ্যাস বলে। নানা কারণে বায়ুমণ্ডলে এইসব গ্যাস বৃদ্ধি পায়। এগুলি হল — 1. কার্বন ডাইঅক্সাইড জীবাশ্ম জ্বালানি, কলকারখানার ধোঁয়া ও জৈববস্তুর দহনের ফলে বায়ুতে CO2-এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়। CO2সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী গ্রিনহাউস গ্যাস। 2. ক্লোরোফ্লুরোকার্বনসমূহ (CFCs) জেট ইঞ্জিন, রেফ্রিজারেশন শিল্প ও এয়ার কন্ডিশন শিল্পে, অ্যারোসল স্প্রে, ডিওডোরান্টে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন থাকে। এগুলি মুক্ত হলে বায়ুদূষণ ঘটে। 3. নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ – কৃষিকাজে ব্যবহৃত নাইট্রোজেনঘটিত সার ও শিল্পকারখানা থেকে নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ মুক্ত হয়ে বায়ুদূষণ ঘটায়।
  • SPM বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন ধরনের বস্তুকণা ভেসে বেড়ায়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – ধূলিকণা, পরাগরেণু, অণুজীব ধাতব কণা, ছাই, ধোঁয়া ইত্যাদি সূক্ষ্ম তরল বা কার্বন কণা যেগুলি বায়ুদূষণ ঘটায়, তাদের SPM বা সাসপেনডেড পারটিকুলেট ম্যাটার বলে। এই ভাসমান কণাগুলির ব্যাস 1 মাইক্রনের কম হলে, তাদের অ্যারোসল বলে।

SPM-এর সম্পূর্ণ নাম ও সংজ্ঞা লেখো। এর প্রকৃতি, উৎস ও ক্ষতিকর প্রভাব লেখো।

SPM (Suspended Particulate Matter) হলো বায়ু দূষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা বিভিন্ন অপসারণকারী কারখানা, যানবাহন এবং প্রতিষ্ঠানে উৎপন্ন হয় এবং মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক।

SPM

বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন ধরনের বস্তুকণা ভেসে বেড়ায়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – ধূলিকণা, পরাগরেণু, অণুজীব ধাতব কণা, ছাই, ধোঁয়া ইত্যাদি সূক্ষ্ম তরল বা কার্বন কণা যেগুলি বায়ুদূষণ ঘটায়, তাদের SPM বা সাসপেনডেড পারটিকুলেট ম্যাটার বলে। এই ভাসমান কণাগুলির ব্যাস 1 মাইক্রনের কম হলে, তাদের অ্যারোসল বলে।

প্রকৃতি

বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন কঠিন ও তরল পদার্থের কণিকাসমূহ ভাসমান অবস্থায় থাকে। এগুলির মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরনের অম্ল, ক্ষার, লবণকণা, ধূলিকণা, পরাগরেণু, অণুজীব, ধোঁয়া, ধাতব অক্সাইডের কণা, ধাতব লবণের কণা, ছাই, অ্যাসবেস্টস কণা ইত্যাদি।

উৎস

ভাসমান কণিকাগুলির উৎস হল যানবাহন, তৈল শোধনাগার, যানবাহন দূষণ, শিল্প-কলকারখানা, কৃষিক্ষেত্র প্রভৃতি। এই বস্তুকণাগুলি বাতাসে ভাসমান অবস্থায় থেকে বায়ুকে দূষিত করে।

ক্ষতিকর প্রভাব

বায়ুতে ভাসমান কণাগুলি মানবদেহের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। এগুলি ক্ষুদ্র বলে শ্বাসনালী পথে ফুসফুসে প্রবেশ করে হাঁপানি, যক্ষ্মা, ক্যানসার ও ফুসফুসের বিভিন্ন মারণরোগ সৃষ্টি করে।

পাঁচটি বায়ুদূষকের নাম, উৎস ও প্রভাব লেখো।

পাঁচটি বায়ুদূষকের নাম, উৎস ও প্রভাব

পাঁচটি বায়ুদূষকের নাম, উৎস ও প্রভাব পাঁচটি বায়ুদূষকের নাম, উৎস ও প্রভাব নীচে সারণির মাধ্যমে দেখানো হল।

বায়ুদূষকের নামউৎসপ্রভাব
1. সালফার ডাইঅক্সাইড (SO2)পেট্রোল, ডিজেল প্রভৃতির দহন, ধাতু নিষ্কাশনের জন্য আকরিকের গলন ইত্যাদি।মানবদেহে শ্বাসকষ্ট, কাশি, হাঁপানি সৃষ্টি করে। উদ্ভিদের ক্ষেত্রে ক্লোরোফিলের পরিমাণ হ্রাস করে।
2. কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2)জীবাশ্ম জ্বালানির দহন, কলকারখানার ধোঁয়া ইত্যাদি।মানবদেহে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।
3. কার্বন মনোক্সাইড (CO)কয়লা, যানবাহনের ধোঁয়া, শুকনো গাছপালা ও লতাপাতার দহন।শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, মস্তিষ্কের কাজে ব্যাঘাত ঘটে। রক্তের অক্সিজেন পরিবহণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
4. নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ (NOx)যানবাহনের ধোঁয়া, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপন্ন গ্যাস, খনিজ তেলের অসম্পূর্ণ দহন ইত্যাদি।কাশি হয়, চোখ জ্বালা করে, ফুসফুসের ক্ষতি হয়,গাছের পাতায় দাগ দেখা দেয়।
5. SPMমানুষের দৈনন্দিন কাজকর্ম, কলকারখানা, যানবাহন, রাস্তাঘাট ইত্যাদি।শ্বাসনালী পথে ফুসফুসে প্রবেশ করে কাশি, হাঁপানি | সৃষ্টি করে এবং অনেকক্ষেত্রে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়।

গ্রিনহাউস গ্যাস ও গ্রিনহাউস প্রভাব কাকে বলে? বিভিন্ন প্রকার গ্রিনহাউস গ্যাসের নাম ও প্রভাব লেখো।

গ্রিনহাউস গ্যাস হলো প্রধানত কার্বন ডাইঅক্সাইড ও মিথেন সম্মিশ্রিত বায়ু যা পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে এবং গ্রিনহাউস প্রভাব হলো এই বায়ু দ্বারা উৎপন্ন তাপগতির পরিবর্তন যা জীবজন্তু, মানব এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উপর প্রভাবিত করে।

গ্রিনহাউস গ্যাস ও গ্রিনহাউস প্রভাব

বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত যেসব গ্যাস তাপীয় বিকিরণে বাধা দান করে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি করে, তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস বলে। যেমন — CO2, H4, CFCs ইত্যাদি। যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার সাহায্যে বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত CO2, জলীয় বাষ্প ও অন্যান্য কয়েকটি গ্যাসীয় পদার্থ পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপকে মহাশূন্যে ফিরে যেতে না দিয়ে ভূপৃষ্ঠ ও তৎসংলগ্ন বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত রাখে, তাকে গ্রিনহাউস প্রভাব বলে।

গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিকারী গ্যাসসমূহের নাম ও তাদের প্রভাব

গ্যাসের নামপ্রভাব
1. কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2)এটি হল প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাস। গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিতে এই গ্যাসের ভূমিকা প্রায় 56 শতাংশ।
2. মিথেন (CH4)বিকিরিত তাপ ধারণ করার ক্ষমতা CO2-এর তুলনায় প্রায় 25 গুণ বেশি। গ্রিনহাউস প্রভাবে এর অবদান প্রায় 18 শতাংশ।
3. ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFCs)বিকিরিত তাপ ধারণ করার ক্ষমতা CO2-এর তুলনায় প্রায় 10,000-20,000 গুণ বেশি। গ্রিনহাউস প্রভাবে এর অবদান প্রায় 13 শতাংশ।
4. ওজোন (O3)গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিতে এর অবদান প্রায় 7 শতাংশ। তাপ ধারণ ক্ষমতা CO2-এর প্রায় 10 গুণ।
5. নাইট্রাস অক্সাইড (N2O)গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিতে এর অবদান প্রায় 6 শতাংশ। এর তাপ ধারণ ক্ষমতা CO2-এর প্রায় 275 গুণ।

পরিবেশে গ্রিনহাউস গ্যাস কমানোর যে-কোনো পাঁচটি উপায় সংক্ষেপে লেখো।

পরিবেশে গ্রিনহাউস গ্যাস কমানোর উপায় হলো বায়ু দূষণ কমানো, বায়ুমণ্ডলে বায়ুমিশ্রণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশবাদী প্রযুক্তি ব্যবহার করা, উদাহরণস্বরূপ বিদ্যুৎ ব্যবহারের সাথে এনার্জি সংযোজন, বৃষ্টির জল সংরক্ষণ, পরিস্কার বন্ধ নগর পরিকল্পনা ইত্যাদি।

পরিবেশে গ্রিনহাউস গ্যাস কমানোর উপায়

  1. জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস – কয়লা, পেট্রোল, ডিজেল প্রভৃতি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমালে পরিবেশে CO2-এর পরিমাণ হ্রাস পাবে।
  2. CFC উৎপন্নকারী বস্তুর ব্যবহার কমানো – রেফ্রিজারেশন শিল্প, অ্যারোসল স্প্রে, ডিওডোরান্ট উৎপাদনে CFC- এর ব্যবহার কমালে পরিবেশে CFCS- জনিত দূষণ হ্রাস পাবে।
  3. বৃক্ষরোপণ – বনাঞ্চল ধ্বংসের পরিবর্তে পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃক্ষরোপণের ব্যবস্থা করলে বায়ুমণ্ডল থেকে বেশ কিছু পরিমাণ CO2শোষিত হবে এবং এর ফলে CO2গ্যাসের বৃদ্ধি কিছুটা হ্রাস পাবে।
  4. অপ্রচলিত শক্তির অধিকতর ব্যবহার – অপ্রচলিত শক্তি, যেমন — সৌরশক্তি, ভূতাপীয় শক্তি, বায়ুশক্তি প্রভৃতির ব্যবহার বাড়াতে পারলে বায়ুমণ্ডলে CO2সংযোজনের পরিমাণ হ্রাস পাবে।
  5. আবর্জনার প্রক্রিয়াকরণ – উপযুক্ত প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে আবর্জনাকে মুক্ত অবস্থায় পচতে না দিলে মিথেনের উৎপাদন হ্রাস পাবে। এর ফলে গ্রিনহাউস প্রভাব কমবে।

অ্যাসিড বৃষ্টি বা অম্লবৃষ্টি কী? অম্লবৃষ্টির কারণ কী? ভারতের কোথায় কোথায় অম্লবৃষ্টি বেশি হয়?

অম্লবৃষ্টি হলো এক প্রকার আবহাওয়া যা মাটিতে আপতিত করে এবং সামান্য মাত্রায় অ্যাসিডিক ধাতু সম্পন্ন হয়, যা উষ্ণতা, জল, ওজন বা মানব বা প্রাণী জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

অ্যাসিড বৃষ্টি বা অম্লবৃষ্টি

বাতাসে ভাসমান সালফার ডাইঅক্সাইড (SO2), নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড (NO2) প্রভৃতি গ্যাস বৃষ্টির, শিশির অথবা তুষারের সঙ্গে মিশে বিক্রিয়া করে গৌণদূষক সালফিউরিক অ্যাসিড (H2SO4), নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3) প্রভৃতি তৈরি করে ভূপৃষ্ঠে নেমে এসে মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতিসাধন করলে, তাকে অ্যাসিড বৃষ্টি বা অম্লবৃষ্টি বলে। বৃষ্টির জলের স্বাভাবিক pH মাত্রা 5.6 (কার্বনিক অ্যাসিডের উপস্থিতির জন্য)। অ্যাসিড বৃষ্টির pH মাত্রা সাধারণত 5.0-এর নীচে হয়।

অ্যাসিড বৃষ্টির কারণ

মনুষ্যসৃষ্ট বায়ুদূষণ হল অ্যাসিড বৃষ্টির অন্যতম কারণ। শিল্পকারখানাগুলিতে বিভিন্ন জীবাশ্ম জ্বালানি দহনের ফলে প্রচুর মাত্রায় NO2 এবং SO2 গ্যাস নির্গত হয়। এই গ্যাসগুলি বাতাসের জলীয় বাষ্পের সঙ্গে বিক্রিয়া করে নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3) এবং সালফিউরিক অ্যাসিড (H2SO4) তৈরি করে এবং বৃষ্টির জলের সঙ্গে ভূপৃষ্ঠে এসে পড়ে। এইভাবেই মনুষ্যসৃষ্ট কারণে অ্যাসিড বৃষ্টি ঘটে।

অ্যাসিড বৃষ্টির ঘটনা

ভারতে মহারাষ্ট্রের চেম্বুর ও পুনে এবং কেরলের ত্রিবান্দ্রম-এ অ্যাসিড বৃষ্টির ঘটনা সবথেকে বেশি দেখা যায়।

পরিবেশের ওপর অ্যাসিড রেইন বা অম্লবৃষ্টির প্রভাব লেখো।

অম্লবৃষ্টির প্রভাবে মাটির অ্যাসিডিকতা বৃদ্ধি পায় এবং এটি বাণিজ্যিক ও ঘাসের উদ্ভিদ সম্প্রসারণের প্রভাব দেয়, যা উদ্ভিদের বৃদ্ধি এবং মানব স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে।

পরিবেশের ওপর অ্যাসিড রেইন বা অম্লবৃষ্টির প্রভাব

  1. প্রাণী ও উদ্ভিদের ওপর প্রভাব – অম্লবৃষ্টির ফলে বেশিরভাগ জলাশয়ের মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণীর মৃত্যু ঘটে। স্থলভাগের গাছপালা, কৃষিজ ফসল ধ্বংস হয়। অম্লবৃষ্টির কারণে জলাশয়ের pH এর মান যদি 4-এর কম হয়, তবে ওই জলাশয়ের অধিকাংশ সজীব উপাদানের মৃত্যু ঘটে।
  2. মাটির ওপর প্রভাব – অম্লবৃষ্টির প্রভাবে মাটির অম্লত্ব বৃদ্ধি পায়,যার ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাস পায় এবং শস্যের ফলন ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাটিতে বসবাসকারী বিভিন্ন প্রাণী ও সূক্ষ্ম জীবাণুরা মারা যায়।
  3. বনাঞ্চলের ওপর প্রভাব – অম্লবৃষ্টির ফলে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যায়। শস্যক্ষেত্রের উৎপাদনও ভীষণভাবে হ্রাস পায়।
  4. মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব – অম্লবৃষ্টির ফলে মানুষের ত্বক ও কোশের অস্বাভাবিক ক্ষতি হয়। অম্লবৃষ্টির জন্য অ্যালুমিনিয়াম এবং তামা নির্মিত জলের পাইপ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং পানীয় জলের সঙ্গে মেশে এবং ওই জল পান করে বহু মানুষ পেটের রোগে ভোগে।
  5. মার্বেলের কারুকার্যের ওপর প্রভাব – অম্লবৃষ্টির ফলে মার্বেলের বা চুনাপাথরের তৈরি বিভিন্ন কারুকার্য, স্থাপত্য নিদর্শনগুলি, যেমন — তাজমহল, কুতুবমিনার ইত্যাদি ভীষণভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। অম্লবৃষ্টির প্রভাবে পাথরের যে ক্ষয়ীভবন ঘটে, তাকে স্টোন ক্যানসার বলে।

বায়ুদূষণজনিত ফুসফুস ও ফুসফুস সংলগ্ন অংশের রোগের নাম, জীবাণুর নাম ও রোগের দুটি করে লক্ষণ লেখো।

বায়ুদূষণজনিত বিভিন্ন রোগের নাম, জীবাণুর নাম ও রোগের লক্ষণ

রোগের নামরোগের জীবাণুর নামরোগের লক্ষণ
1. যক্ষ্মা — বায়ুবাহিত, ব্যাকটেরিয়াঘটিত রোগমাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস(Mycobacterium tuberculosis)1. রোগীর জ্বর হয়, সারাক্ষণ কাশি হয়, কাশির সঙ্গে মাঝে মাঝে কফ বের হয়। অনেক সময় কফের সঙ্গে রক্তও বের হয়। 2. ধীরে ধীরে দেহের ওজন হ্রাস পায়।
2. ডিপথেরিয়া — বায়ুবাহিত, ব্যাকটেরিয়াঘটিত রোগকরিনিব্যাকটেরিয়াম ডিপথেরি (Corynebacterium diphtheriae)1. গলায় ব্যথা অনুভূত হয়। 2. রোগটি টনসিল সংলগ্ন অঞ্চল থেকে শ্বাসনালীর দিকে অগ্রসর হলে রোগীর প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হয় এবং সামান্য কাশিও হয়।
3. হুপিং কাশি বা পারটুসিস — বায়ুবাহিত, ব্যাকটেরিয়াঘটিত রোগবরডেটেল্লা পারটুসিস (Bordetella pertussis)1. রোগের তীব্র অবস্থায় প্রচণ্ড কাশি হয়। শ্বাস নিতে গেলে হুপ শব্দ শোনা যায়। 2. নাক দিয়ে টানা জল পড়তে থাকে।
4. নিউমোনিয়া —
বায়ুবাহিত, ব্যাকটেরিয়াঘটিত রোগ
স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমোনি (Streptococcus pneumoniae)1. আক্রান্ত ব্যক্তির কাশি, জ্বর ও সর্দি হয়। 2. রোগীর শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
5. ইনফ্লুয়েঞ্ঝা

বায়ুবাহিত, ভাইরাসঘটিত রোগ
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস1. আক্রান্ত ব্যক্তির বারে বারে হাঁচি ও কাশি হয়। 2. শ্বাসনালীর মধ্যস্থ আবরণী কলার কোশ ভাইরাস দ্বারা ভীষনভাবে আক্রান্ত হয়।

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানে পরিবেশ ও তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ, পরিবেশদূষণ এবং রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে চিন্তামুলক সংক্ষেপ করা যাচ্ছে। এই বিষয়গুলির মাধ্যমে আমরা পরিবেশ ও তার সম্পদের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারি, এটি সংরক্ষণ ও পরিবেশদূষণের মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি নিয়ে চিন্তা করতে পারি এবং মাধ্যমিক রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে বিষয়টি সম্পর্কে মতামত প্রদান করতে পারি।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer