এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বায়ুর ক্ষয়কাজের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “বায়ুর ক্ষয়কাজের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের প্রথম অধ্যায় “বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তার দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ – বায়ুর বিভিন্ন কাজ ও তাদের দ্বারা সংশ্লিষ্ট ভূমিরূপ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বায়ুর ক্ষয়কাজের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি আলোচনা করো।
বায়ুর ক্ষয়কাজের ফলে গঠিত ভূমিরূপ –
অপসারণ গর্ত বা ধান্দ –
বায়ু কোনো স্থান থেকে প্রচুর অসংবদ্ধ বালুকণা অন্যত্র স্থানান্তর করলে এক নীচু গর্তের সৃষ্টি হয়, যা ধান্দ বা অপসারণ গর্ত নামে পরিচিত। এরা সাধারণত দুটি বালিয়াড়ির চাপে তৈরি হয়। এর ক্ষেত্রফল প্রায় 19,500 বর্গকিমি।
উদাহরণ – আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে মন্টানা থেকে টেক্সাস পর্যন্ত অঞ্চলে কয়েকশো ফুট গভীর ও কয়েক মাইল ব্যাসার্ধযুক্ত প্রচুর অপসারণ গর্ত দেখা যায়।
গৌর –
মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহকালে ভূপৃষ্ঠ থেকে 2 মিটারের মধ্যে অধিক পরিমাণে বালুকণা থাকায় এই অঞ্চলে অধিক ক্ষয় হয়। নিম্নাংশে অধিক পরিমাণে ক্ষয়ের ফলে মরু অঞ্চলে মাঝে মাঝে ব্যাঙের ছাতার মতো ওপরের অংশ প্রশস্ত ও সরু নিম্নাংশবিশিষ্ট যে পাথরের অবশিষ্টাংশ দেখা যায় তাকে গৌর বলে।
উদাহরণ – সাহারা মরুভূমিতে এই প্রকার ভূমিরূপ দেখা যায়। এগুলি ব্যাঙের ছাতার মতো দেখতে হয় বলে এদের মাশরুম রক বলে। একাধিক গৌরকে গারা বলা হয়।

সৃষ্টি – বায়ুতে সূক্ষ্ম শিলার টুকরো, কোয়ার্টজাইটের দানা বেশি পরিমাণে থাকলে এর নিম্নাংশ বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
বৈশিষ্ট্য – অনেক সময় গৌরের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে এক ধরনের রঙের প্রলেপ সৃষ্টি হয়। একে বলে ডেজার্ট ভার্নিস।
উদাহরণ – সাহারা মরুভূমিতে দেখা যায়।
ইনসেলবার্জ –
অনেক সময় মরুভূমি অঞ্চলের স্থানে স্থানে দন্ডায়মান উচ্চ পাহাড়গুলি বায়ুর অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে অনুচ্চ ক্ষয়ীভূত টিলার ন্যায় আকার ধারণ করে। এদের ঢাল কম বেশি হয় অথচ এদের উচ্চতা খুব কম ও গোলাকার দেখতে হয় এদের বলে ইনসেলবার্জ।
সৃষ্টি –
- দীর্ঘদিন ক্ষয়কার্যের ফলে কোমল শিলা অপসারিত হলে তার মাঝে কঠিন শিলায় অঞ্চল অসমান গম্বুজাকারে বিরাজ করে।
- পেডিমেন্টেশন ও অপসারণ প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়।
বৈশিষ্ট্য –
- মরুভূমির শুষ্ক অঞ্চলে গড়ে ওঠে।
- এটি গম্বুজাকার হয়।
- উচ্চতা 30-300 মিটার
- অবশিষ্ট পাহাড় রূপে পরিচিত।
- সমপ্রায় ভূমির মোনাডনকের সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে।
উদাহরণ – কালাহারি মরুভূমিতে দেখা যায়।

ইয়ার্দাং –
মরু অঞ্চলে কঠিন ও কোমল শিলা পাশাপাশি উল্লম্বভাবে অবস্থান করলে বৈষম্যমূলক ক্ষয়ের ফলে কঠিন শিলায় প্রাচীর ও কোমল শিলায় খাত সৃষ্টি হয়, একে ইয়ার্দাং বলে।
সৃষ্টি – বায়ুর অপসারণ ও অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়।
বৈশিষ্ট্য –
- উচ্চতা 6-15 মিটার।
- বিস্তার 10-14 মিটার।
- একে Cocks Comb বলে।
- এটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে পরিবেশের তীক্ষ্ণ আকার ধারণ করলে একে নিডিলস বলে।
উদাহরণ – সাহারা গোবি ও সোনেরান মরুভূমিতে দেখা যায়।

ভেন্টিফ্যাক্ট –
মরুভূমি অঞ্চলে বায়ুবাহিত বালির সঙ্গে সংঘর্ষে যখন প্রস্তর খণ্ডগুলির সামনের দিক ছুঁচালো ও মসৃণ হয়ে যায় তখন তাকে বলে ভেন্টিফ্যাক্ট।
উদাহরণ – দক্ষিণ আফ্রিকার কালাহারি মরুভূমিতে ভেন্টিফ্যাক্ট দেখা যায়।
ড্রেইকান্টার –
মরুভূমি অঞ্চলে বায়ুবাহিত বালির সঙ্গে প্রস্তরখণ্ডগুলির অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় প্রস্তরখণ্ডের দুই বা তিনদিক তলযুক্ত হয়ে পড়লে ড্রেইকান্টারের সৃষ্টি হয়।
উদাহরণ – সাহারা মরুভূমিতে ড্রেইকান্টার দেখা যায়।
জুগ্যান –
মরু অঞ্চলে কঠিন ও কোমল শিলা অনুভূমিকভাবে অবস্থান করলে কঠিন শিলার দারণ ও ফাটল বরাবর বায়ু ক্ষয় করে নরম শিলা ক্ষয় করতে থাকে। ফলে কঠিন শিলায় চ্যাপটা মাথাবিশিষ্ট জুগ্যানের সৃষ্টি করে।
বৈশিষ্ট্য –
- 1-30 মিনিট পর্যন্ত হয়।
- সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উচ্চতা হ্রাস পায়।
- দুই উচ্চভূমির মধ্যবর্তী সুড়ঙ্গ ক্রমশ বিস্তার লাভ করে।
- এদের নীচের দিক সরু ও ওপরে দিক মোটা হয়।
উদাহরণ – কালাহারি মরুভূমিতে দেখা যায়।

ওয়েসিস বা মরুদ্যান –
প্রবল বায়ু প্রবাহের ফলে বহুদিন ধরে মরুভূমির কোনো কোনো স্থানের বালি অপসারিত হয়ে নীচু হতে হতে নীচু অংশের গভীরতা যখন ভূগর্ভের জলস্তর পর্যন্ত পৌঁছে যায় তখন সেখানে ভৌমজল বাইরে বেরিয়ে আসে এবং সেখানকার বালি সিক্ত হয়ে গাছপালা জন্মায়। একে মরুদ্যান বলে।
উদাহরণ – সাহারার কাতারার মরুদ্যান।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
বায়ুর ক্ষয়কাজ কী?
বায়ুর ক্ষয়কাজ হল বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের শিলা ও মাটি ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়া। বায়ু বালি ও অন্যান্য কণাকে বহন করে নিয়ে গিয়ে ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটায়।
ধান্দ বা অপসারণ গর্ত কী?
বায়ু কোনো স্থান থেকে প্রচুর বালুকণা অপসারণ করলে সেখানে নীচু গর্তের সৃষ্টি হয়, যা ধান্দ বা অপসারণ গর্ত নামে পরিচিত। এটি সাধারণত দুটি বালিয়াড়ির চাপে তৈরি হয়। উদাহরণ – আমেরিকার মন্টানা থেকে টেক্সাস পর্যন্ত অঞ্চলে এই গর্তগুলি দেখা যায়।
গৌর কী?
গৌর হল মরু অঞ্চলে বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট একটি ভূমিরূপ। এটি ব্যাঙের ছাতার মতো দেখতে হয়, যার ওপরের অংশ প্রশস্ত এবং নীচের অংশ সরু। উদাহরণ – সাহারা মরুভূমিতে গৌর দেখা যায়।
ইনসেলবার্জ কী?
ইনসেলবার্জ হল মরুভূমি অঞ্চলে বায়ুর অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সৃষ্ট অনুচ্চ টিলা। এটি গম্বুজাকার এবং উচ্চতা 30-300 মিটার পর্যন্ত হতে পারে। উদাহরণ – কালাহারি মরুভূমিতে ইনসেলবার্জ দেখা যায়।
ইয়ার্দাং কী?
ইয়ার্দাং হল মরু অঞ্চলে কঠিন ও কোমল শিলার বৈষম্যমূলক ক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট প্রাচীর ও খাত। এটি সাধারণত 6-15 মিটার উচ্চতা এবং 10-14 মিটার বিস্তার বিশিষ্ট হয়। উদাহরণ – সাহারা ও গোবি মরুভূমিতে ইয়ার্দাং দেখা যায়।
ভেন্টিফ্যাক্ট কী?
ভেন্টিফ্যাক্ট হল মরুভূমি অঞ্চলে বায়ুবাহিত বালির সঙ্গে সংঘর্ষে প্রস্তর খণ্ডগুলির সামনের দিক ছুঁচালো ও মসৃণ হয়ে যাওয়ার ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ। উদাহরণ – দক্ষিণ আফ্রিকার কালাহারি মরুভূমিতে ভেন্টিফ্যাক্ট দেখা যায়।
ড্রেইকান্টার কী?
ড্রেইকান্টার হল মরুভূমি অঞ্চলে বায়ুবাহিত বালির সঙ্গে প্রস্তরখণ্ডগুলির অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট ভূমিরূপ, যেখানে প্রস্তরখণ্ডের দুই বা তিনদিক তলযুক্ত হয়ে পড়ে। উদাহরণ – সাহারা মরুভূমিতে ড্রেইকান্টার দেখা যায়।
জুগ্যান কী?
জুগ্যান হল মরু অঞ্চলে কঠিন ও কোমল শিলার অনুভূমিক ক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ। এটি সাধারণত 1-30 মিনিট উচ্চতা বিশিষ্ট এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উচ্চতা হ্রাস পায়। উদাহরণ – কালাহারি মরুভূমিতে জুগ্যান দেখা যায়।
ওয়েসিস বা মরুদ্যান কী?
ওয়েসিস বা মরুদ্যান হল মরুভূমির এমন স্থান যেখানে ভূগর্ভের জলস্তর বাইরে বেরিয়ে এসে গাছপালা জন্মায়। এটি বায়ুর অপসারণ প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট হয়। উদাহরণ – সাহারার কাতারার মরুদ্যান।
বায়ুর ক্ষয়কাজের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলির বৈশিষ্ট্য কী?
বায়ুর ক্ষয়কাজের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলির বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
1. ধান্দ – নীচু গর্ত, দুটি বালিয়াড়ির চাপে সৃষ্টি।
2. গৌর – ব্যাঙের ছাতার মতো আকৃতি, ডেজার্ট ভার্নিসের প্রলেপ।
3. ইনসেলবার্জ – গম্বুজাকার, উচ্চতা 30-300 মিটার।
4. ইয়ার্দাং – প্রাচীর ও খাত, উচ্চতা 6-15 মিটার।
5. ভেন্টিফ্যাক্ট – ছুঁচালো ও মসৃণ প্রস্তর খণ্ড।
6. ড্রেইকান্টার – দুই বা তিনদিক তলযুক্ত প্রস্তরখণ্ড।
7. জুগ্যান – চ্যাপটা মাথাবিশিষ্ট, উচ্চতা হ্রাস পায়।
8. ওয়েসিস – ভৌমজলের উপস্থিতি, গাছপালা জন্মায়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বায়ুর ক্ষয়কাজের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বায়ুর ক্ষয়কাজের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের প্রথম অধ্যায় “বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তার দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ – বায়ুর বিভিন্ন কাজ ও তাদের দ্বারা সংশ্লিষ্ট ভূমিরূপ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।