গ্যাসীয় পদার্থ কাকে বলে? গ্যাসীয় পদার্থের বৈশিষ্ট্য

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে দেখবো গ্যাসীয় পদার্থ কাকে বলে? গ্যাসীয় পদার্থের বৈশিষ্ট্য কি?

সাধারণ তাপমাত্রায় বাতাসের মতো বায়বীয় অবস্থায় থাকা পদার্থকেই গ্যাস বলে। হাইড্রোজেন (H2), নাইট্রোজেন (N2), অক্সিজেন (O2), কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) ইত্যাদি গ্যাসের উদাহরণ। গ্যাস প্রসারণশীল, অর্থাৎ যে পাত্রে রাখা হয় সেই পাত্রের পুরো জায়গা দখল করে নেয়। এরা সহজে মিশ্রিত হয় এবং চাপ প্রয়োগ করে। চাপ বাড়িয়ে এবং তাপমাত্রা কমিয়ে গ্যাসকে তরল বা কঠিন অবস্থায় রূপান্তরিত করা যায়। আবার, চাপ কমিয়ে এবং তাপমাত্রা বাড়িয়ে তরল বা কঠিন পদার্থকে গ্যাসে রূপান্তরিত করা যায়।

গ্যাসীয় পদার্থ কাকে বলে?

সাধারণ তাপমাত্রায় বাতাসের মতো বায়বীয় অবস্থায় থাকা পদার্থকেই গ্যাস বলে। এরা অত্যন্ত প্রসারণশীল, সহজে মিশ্রণযোগ্য এবং চাপ প্রয়োগ করতে পারে। গ্যাস পদার্থ আমাদের চারপাশে বিদ্যমান।

যেমন – বায়ু, হাইড্রোজেন, ওজন, মিথেন, নাইট্রোজেন ইত্যাদি।

গ্যাসীয় পদার্থের বৈশিষ্ট্য

যদিও বিভিন্ন গ্যাসের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে, তবুও সকল গ্যাসের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

গ্যাসের ঘনত্ব কম এবং সংকোচনশীলতা বেশি

  • গ্যাসের ঘনত্ব তরল বা কঠিন পদার্থের তুলনায় অনেক কম।
  • অল্প চাপ প্রয়োগ করেই গ্যাসকে অনেক সংকুচিত করা যায়।
  • উদাহরণস্বরূপ, একটি বেলুনে বাতাস ভরে ফুলে তোলা যায়, কারণ বাতাস সহজেই সংকুচিত হয়।

গ্যাসের সম্প্রসারণশীলতা বেশি

  • গ্যাস যেকোনো পাত্রে রাখলে দ্রুত পুরো পাত্রে ছড়িয়ে পড়ে।
  • উদাহরণস্বরূপ, ঘরে সুগন্ধি ছড়িয়ে দিলে দ্রুত ঘরটি সুগন্ধে ভরে যায়।

গ্যাসের ব্যাপনশীলতা অত্যধিক

  • দুটি বা ততোধিক গ্যাস পরস্পরের মধ্যে দ্রুত মিশে সমসত্ত্ব মিশ্রণ তৈরি করে।
  • উদাহরণস্বরূপ, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন গ্যাস মিশে পানি তৈরি করে।

গ্যাসের সমান চাপ প্রয়োগ করে

  • গ্যাস যে পাত্রে রাখা হয় তার দেয়ালে সকল দিক থেকে সমানভাবে চাপ প্রয়োগ করে।
  • এই চাপকে গ্যাসের চাপ বলে।

গ্যাসের আপেক্ষিক আয়তন বেশি

  • কঠিন ও তরল পদার্থের তুলনায় গ্যাসের আপেক্ষিক আয়তন অনেক বেশি।
  • এর কারণ হলো গ্যাসের অণুগুলোর মধ্যে আন্তঃআণবিক স্থান অনেক বেশি এবং তাদের মধ্যে আন্তঃআণবিক বল নেই বললেই চলে।

উদাহরণ:

  • বেলুনে বাতাস ভরে ফুলে তোলা।
  • ঘরে সুগন্ধি ছড়িয়ে দিলে দ্রুত ঘরটি সুগন্ধে ভরে যায়।
  • গাড়ির টায়ারে বাতাস ভরা।
  • রান্নার চুলার আগুন জ্বলার সময় অক্সিজেন গ্যাসের ব্যবহার।

বিভিন্ন গ্যাস এবং তাদের ব্যবহার

হাইড্রোজেন (H2)

  • জ্বালানি কোষে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • সার উৎপাদনে অ্যামোনিয়া তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • পেট্রোলিয়াম শোধনাগারে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

নাইট্রোজেন (N2)

  • বায়ুমণ্ডলের প্রধান উপাদান (78%)।
  • খাদ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়।
  • ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশে জারণ রোধ করতে ব্যবহৃত হয়।
  • তরল নাইট্রোজেন ক্রায়োজেনিক্স-এ ব্যবহৃত হয়।

অক্সিজেন (O2)

  • শ্বসন এবং জ্বলনের জন্য প্রয়োজনীয়।
  • চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়, যেমন অক্সিজেন থেরাপি।
  • ধাতু ঢালাই এবং কাটার কাজে ব্যবহৃত হয়।

কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2)

  • উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয়।
  • পানীয় তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, যেমন সোডা ও বিয়ার।
  • অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রে ব্যবহৃত হয়।

প্রোপেন (C3H8)

  • রান্নার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • গাড়ির জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় (LPG)।
  • হিটিং এবং স্পেস হিটিং-এ ব্যবহৃত হয়।

মিথেন (CH4)

  • প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান।
  • বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • রাসায়নিক শিল্পে জ্বালানি ও কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

হিলিয়াম (He)

  • বেলুন ভরার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • এমআরআই স্ক্যানারে ব্যবহৃত হয়।
  • ডাইভিং-এ ব্যবহৃত শ্বাস-প্রশ্বাসের মিশ্রণে ব্যবহৃত হয়।

নিওন (Ne)

  • বিজ্ঞাপনী চিহ্ন উজ্জ্বল করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • উচ্চ-ভোল্টেজ ইলেকট্রনিক যন্ত্রে ব্যবহৃত হয়।
  • লেজারে ব্যবহৃত হয়।

এছাড়াও আরও অনেক গ্যাস রয়েছে যাদের বিভিন্ন ব্যবহার রয়েছে:

  • ক্লোরিন (Cl2): জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • অ্যামোনিয়া (NH3): সার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
  • কার্বন মনোক্সাইড (CO): বিভিন্ন শিল্পে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • সালফার ডাই অক্সাইড (SO2): কাগজ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
  • আর্গন (Ar): ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশে জারণ রোধ করতে ব্যবহৃত হয়।
  • ক্রিপ্টন (Kr): উচ্চ-ভোল্টেজ ইলেকট্রনিক যন্ত্রে ব্যবহৃত হয়।
  • জেনন (Xe): হেডল্যাম্পে ব্যবহৃত হয়।

এই তালিকা সম্পূর্ণ নয়, আরও অনেক গ্যাস এবং তাদের ব্যবহার রয়েছে।

আরও পড়ুন – কম্পোস্টিং বা জৈব সার পদ্ধতি কিভাবে কার্যকর করা হয়?

আজকের আর্টিকেলে আমরা গ্যাসীয় পদার্থ সম্পর্কে জানলাম। গ্যাসীয় পদার্থ হলো এমন পদার্থ যার নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন নেই। এরা সহজেই তাদের ধারকের আকার ধারণ করে। আজকের আর্টিকেলে আমরা গ্যাসীয় পদার্থ সম্পর্কে জানলাম। গ্যাসীয় পদার্থ হলো এমন পদার্থ যার নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন নেই। এরা সহজেই তাদের ধারকের আকার ধারণ করে।

Rate this post


Join WhatsApp Channel For Free Study Meterial Join Now
Join Telegram Channel Free Study Meterial Join Now

মন্তব্য করুন