হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের বর্ণনা দাও।

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের বর্ণনা দাও।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের বর্ণনা দাও।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের প্রথম অধ্যায় “বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তার দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ – হিমবাহের বিভিন্ন কাজ ও তাদের দ্বারা সংশ্লিষ্ট ভূমিরূপ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের বর্ণনা দাও।
হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের বর্ণনা দাও।

হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের বর্ণনা দাও।

হিমবাহের ক্ষয়কার্য শুধুমাত্র উচ্চ পর্বতের ওপরই সীমাবদ্ধ থাকে এবং এই ক্ষয়কার্যের ফলে উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন প্রকার ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, নিম্নে তা আলোচনা করা হল –

সার্ক বা করি –

উচ্চ পার্বত্য এলাকায় হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে যে অবতল আকৃতির উপত্যকার সৃষ্টি হয় তা দেখতে অনেকটা আরামকেদারার মতো হয়। একে ফরাসি ভাষায় সার্ক এবং ইংরেজিতে করি বলে। বরফমুক্ত হলে এই ভূমিরূপ দৃশ্যমান হয়। এর তিনটি অংশ থাকে –

  • মস্তকের দিকে খাড়া প্রাচীর।
  • মধ্যভাগে খাত বা বেসিন।
  • প্রান্তদেশের চৌকাঠ বা করি ওষ্ঠ।

অ্যারেট –

পাশাপাশি প্রবাহিত দুটি হিমবাহের মধ্যে সংকীর্ণ ছুরির ফলার মতো তীক্ষ্ণ উচ্চভূমি বা বিভাজিকাকে অ্যারেট বা হিমশিরা বলে। এগুলি কখনো-কখনো করাতের দাঁতের মতো খাঁজকাটা হয়ে থাকে।

পিরামিড চূড়া –

একটি পর্বতের বিভিন্ন দিকে কয়েকটি হিমবাহ বা সার্ক সৃষ্টি হলে, পর্বতশীর্ষটি পিরামিডের মতো খাড়া ও তীক্ষ্ণ অংশে পরিণত হয়, একে পিরামিড চূড়া বলে।

উদাহরণ – হিমালয় পর্বতের নীলকণ্ঠ শৃঙ্গ, নেপালের মাকালু এরূপ একটি পিরামিড চূড়া।

করি অ্যারেট ও পিরামিড চূড়া
করি অ্যারেট ও পিরামিড চূড়া

কর্তিত শৈলশিরা –

হিমবাহ পার্বত্য উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় উপত্যকার উভয় পার্শ্বস্থ স্পার বা পর্বতের অভিক্ষিপ্তাংশ সমূহের সম্মুখভাগগুলিকে কেটে দ্রোণী বা উপত্যকাকে আরও চওড়া ও সোজা করে দেয়। এরূপ কর্তিত স্পারগুলিকে কর্তিত শৈলশিরা বলে। এটি দেখতে ত্রিভুজাকার। এরূপ উপত্যকার মধ্যদিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হওয়ার ফলে উপত্যকার মধ্যভাগ খুব প্রশস্ত ও গভীর হয় এবং এর পার্শ্বদেশ খুব খাড়া হয়ে ‘U’ আকৃতির উপত্যকায় পরিণত হয়।

কর্তিত শৈলশশিরার অভিক্ষিপ্তাংশ
কর্তিত শৈলশশিরার অভিক্ষিপ্তাংশ

হিমদ্রোণী বা আকৃতির উপত্যকা –

হিমবাহের ক্ষয়কার্যের মাধ্যমে অত্যন্ত প্রশস্ত মোটামুটি মসৃণ ও খাড়া ঢালের পার্শ্বদেশবিশিষ্ট ‘U’ আকৃতির হিমবাহ উপত্যকাকে ‘U’ আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণী বলে।

উদাহরণ – হিমালয়ের রূপকুণ্ড হিমদ্রোণী।

U -আকৃতির উপত্যকা
U -আকৃতির উপত্যকা

রসেমতানে –

হিমবাহের প্রবাহপথে অবস্থিত কঠিন শিলাগঠিত ঢিপির প্রতিবাত ঢাল ঘর্ষণের মাধ্যমে মসৃণ হয় এবং অনুবাত ঢাল উৎপাটনের মাধ্যমে এবড়োখেবড়ো, খাঁজকাটা ও অমসৃণ হয়। এই প্রকার ভূমিরূপকে রসেমতানে বলে।

উদাহরণ – কাশ্মীর উপত্যকার ঝিলাম নদীর উপনদী লিডার উপত্যকাতে রসেমতানে দেখতে পাওয়া যায়।

রসেমতানে
রসেমতানে

ক্র্যাগ ও টেল –

হিমবাহের প্রবাহপথে প্রথমে কঠিন শিলা ও পরে কোমল শিলা অবস্থান করলে কোমল শিলা সরাসরি ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে কঠিন শিলার পিছনে লেজের মতো অবস্থান করে। এই ধরনের কঠিন শিলাযুক্ত অংশকে ক্র্যাগ এবং পিছনের ঢালযুক্ত কোমল শিলাস্তরকে টেল বলে।

ক্র্যাগ ও টেল
ক্র্যাগ ও টেল

ফিয়র্ড –

ফিয়র্ড হল হিমবাহ কর্তিত উপত্যকা যা সমুদ্রের জল দ্বারা প্লাবিত হয়ে সমুদ্র তলে অবস্থান করে। এর প্রান্তভাগে চৌকাঠের মতো একটি অংশ উপস্থিত থাকে। ফিয়র্ড হল একটি দীর্ঘকায় অববাহিকা এবং এর ঊর্ধ্বাংশে বরফের গভীরতা বেশি থাকায় ক্ষয়ের পরিমাণও বেশি।

উদাহরণ – নরওয়ের সোজনে ফিয়র্ড পৃথিবীর গভীরতম ফিয়র্ড।

ফিয়র্ড

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

হিমবাহের ক্ষয়কার্য কী?

হিমবাহের ক্ষয়কার্য হল হিমবাহের চলাচলের সময় পার্শ্ববর্তী শিলাস্তর ও ভূমিরূপের উপর প্রভাব ফেলে ক্ষয় সৃষ্টি করা। এটি প্রধানত উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে ঘটে এবং বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ সৃষ্টি করে।

সার্ক বা করি কী?

সার্ক বা করি হল হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট একটি অবতল আকৃতির উপত্যকা, যা দেখতে আরামকেদারার মতো। এটি তিনটি অংশে বিভক্ত: মস্তকের দিকে খাড়া প্রাচীর, মধ্যভাগে খাত বা বেসিন, এবং প্রান্তদেশের চৌকাঠ বা করি ওষ্ঠ।

অ্যারেট কী?

অ্যারেট বা হিমশিরা হল পাশাপাশি প্রবাহিত দুটি হিমবাহের মধ্যে সংকীর্ণ ছুরির ফলার মতো তীক্ষ্ণ উচ্চভূমি বা বিভাজিকা। এগুলি কখনো-কখনো করাতের দাঁতের মতো খাঁজকাটা হয়ে থাকে।

পিরামিড চূড়া কী?

পিরামিড চূড়া হল একটি পর্বতের বিভিন্ন দিকে কয়েকটি হিমবাহ বা সার্ক সৃষ্টি হলে, পর্বতশীর্ষটি পিরামিডের মতো খাড়া ও তীক্ষ্ণ অংশে পরিণত হয়। উদাহরণস্বরূপ, হিমালয় পর্বতের নীলকণ্ঠ শৃঙ্গ।

কর্তিত শৈলশিরা কী?

কর্তিত শৈলশিরা হল হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ত্রিভুজাকার ভূমিরূপ, যা হিমবাহের প্রবাহপথে উপত্যকার উভয় পার্শ্বস্থ স্পার বা পর্বতের অভিক্ষিপ্তাংশগুলিকে কেটে ফেলে।

হিমদ্রোণী বা ‘U’ আকৃতির উপত্যকা কী?

হিমদ্রোণী বা ‘U’ আকৃতির উপত্যকা হল হিমবাহের ক্ষয়কার্যের মাধ্যমে সৃষ্ট অত্যন্ত প্রশস্ত, মোটামুটি মসৃণ ও খাড়া ঢালের পার্শ্বদেশবিশিষ্ট উপত্যকা। উদাহরণস্বরূপ, হিমালয়ের রূপকুণ্ড হিমদ্রোণী।

রসেমতানে কী?

রসেমতানে হল হিমবাহের প্রবাহপথে অবস্থিত কঠিন শিলাগঠিত ঢিপির প্রতিবাত ঢাল ঘর্ষণের মাধ্যমে মসৃণ হওয়া এবং অনুবাত ঢাল উৎপাটনের মাধ্যমে এবড়োখেবড়ো, খাঁজকাটা ও অমসৃণ হওয়া ভূমিরূপ। উদাহরণস্বরূপ, কাশ্মীর উপত্যকার ঝিলাম নদীর উপনদী লিডার উপত্যকাতে রসেমতানে দেখতে পাওয়া যায়।

ক্র্যাগ ও টেল কী?

ক্র্যাগ ও টেল হল হিমবাহের প্রবাহপথে অবস্থিত কঠিন শিলা ও কোমল শিলার সমন্বয়ে সৃষ্ট ভূমিরূপ। কঠিন শিলাযুক্ত অংশকে ক্র্যাগ এবং পিছনের ঢালযুক্ত কোমল শিলাস্তরকে টেল বলে।

ফিয়র্ড কী?

ফিয়র্ড হল হিমবাহ কর্তিত উপত্যকা যা সমুদ্রের জল দ্বারা প্লাবিত হয়ে সমুদ্র তলে অবস্থান করে। এর প্রান্তভাগে চৌকাঠের মতো একটি অংশ উপস্থিত থাকে। উদাহরণস্বরূপ, নরওয়ের সোজনে ফিয়র্ড পৃথিবীর গভীরতম ফিয়র্ড।

হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের উদাহরণ দাও।

হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে সার্ক বা করি, অ্যারেট, পিরামিড চূড়া, কর্তিত শৈলশিরা, হিমদ্রোণী, রসেমতানে, ক্র্যাগ ও টেল, এবং ফিয়র্ড।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের বর্ণনা দাও।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের বর্ণনা দাও।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের প্রথম অধ্যায় “বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তার দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ – হিমবাহের বিভিন্ন কাজ ও তাদের দ্বারা সংশ্লিষ্ট ভূমিরূপ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

রাশিবিজ্ঞান-গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান-কষে দেখি 26.4-মাধ্যমিক গণিত

মাধ্যমিক গণিত – রাশিবিজ্ঞান: গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান – কষে দেখি 26.4

রাশিবিজ্ঞান-গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান-কষে দেখি 26.3-মাধ্যমিক গণিত

মাধ্যমিক গণিত – রাশিবিজ্ঞান: গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান – কষে দেখি 26.3

রাশিবিজ্ঞান-গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান - কষে দেখি 26.2-মাধ্যমিক গণিত

মাধ্যমিক গণিত – রাশিবিজ্ঞান: গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান – কষে দেখি 26.2

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik Geography Suggestion 2026 – রচনাধর্মী প্রশ্ন (5 Marks)

Madhyamik Geography Suggestion 2026 – সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন (4 Marks)

Madhyamik Geography Suggestion 2026 – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (2 Marks)

Madhyamik History Suggestion 2026

Madhyamik History Suggestion 2026 – Map Pointing