নমস্কার বন্ধুরা! আজকের আর্টিকেলে আমরা হিমালয় পর্বতমালা গঠনকারী প্রধান পর্বতশ্রেণিগুলি সম্পর্কে জানবো। এই বিষয়টি দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” অধ্যায়ের “ভারতের ভূপ্রকৃতি” বিভাগের একটি অংশ।
আপনার পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সুবিধার্থে, এই আর্টিকেলে আমরা হিমালয়ের প্রধান পর্বতমালাগুলির একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরবো।
হিমালয়ের সমান্তরাল পর্বতশ্রেণি –
পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতমালা হিমালয়ে প্রস্থ বরাবর উত্তর-দক্ষিণে চারটি সমান্তরাল পর্বতশ্রেণি রয়েছে। এগুলি হল —
- টেথিস হিমালয় বা ট্রান্স হিমালয়,
- হিমাদ্রি বা উচ্চ হিমালয়,
- হিমাচল বা মধ্য হিমালয় বা অবহিমালয় এবং
- শিবালিক বা বহিঃহিমালয়।
টেথিস হিমালয় –
- হিমালয়ের সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত টেথিস হিমালয় পর্বতশ্রেণিটি ধীরে ধীরে তিব্বত মালভূমিতে গিয়ে মিশেছে।
- আজ থেকে প্রায় 7 কোটি বছর আগে প্রথম বারের প্রবল ভূ-আলোড়নের সময় টেথিস হিমালয়ের সৃষ্টি হয়।
- এই পর্বতশ্রেণিটি প্রায় 40 কিমি চওড়া ও এর গড় উচ্চতা প্রায় 3000-4300 মিটার।
- জাস্কর-দেওসাই পর্বত এই হিমালয়ের প্রধান অংশ। জাস্কর-এর উচ্চতম শৃঙ্গ হল লিওপারগেল (7420 মি)।
- ভারতীয় অংশে টেথিস পর্বত প্রায় ক্ষয়ে গিয়ে বিশালাকৃতির মালভূমিতে পরিণত হয়েছে।
- এই পর্বতশ্রেণির দৈর্ঘ্য প্রায় 1000 কিমি।
- এই পর্বতশ্রেণির অধিকাংশই তিব্বতে অবস্থিত এবং ভারতে জম্মু-কাশ্মীর প্রদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
হিমাদ্রি বা উচ্চ হিমালয়
- প্রায় 7 কোটি বছর আগে ‘টেথিস হিমালয়’ সৃষ্টির সময় হিমাদ্রি’রও উত্থান ঘটেছিল।
- হিমালয় পর্বতের এই অংশটি বছরের অধিকাংশ সময়ই বরফে ঢেকে থাকায় একে হিমাদ্রি বা হিমগিরি বলা হয়।
- টেথিস হিমালয়ের দক্ষিণে গড়ে 6000 মিটার উঁচু ও প্রায় 50 কিমি প্রশস্ত যে সর্বোচ্চ পর্বতশ্রেণিটি দেখা যায় তার নাম হিমাদ্রি বা উচ্চ হিমালয়।
- হিমালয়ের বিখ্যাত শৃঙ্গগুলি এখানেই অবস্থিত, যেমন — এভারেস্ট (পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ, উচ্চতা (8848 মি), কাঞ্চনজঙ্ঘা (8598 মি), ধবলগিরি (8172 মি), নাঙ্গা (8126 মি), অন্নপূর্ণা (8078 মি), নন্দাদেবী (7816 মি) প্রভৃতি। এই পর্বতশ্রেণি অতি প্রাচীন রূপান্তরিত ও পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত।
হিমাচল বা মধ্য হিমালয় –
- প্রায় 2 কোটি বছর আগে পরবর্তী প্রবল ভূ-আলোড়নের সময় হিমাদ্রির দক্ষিণে হিমাচল পর্বতশ্রেণির সৃষ্টি হয়।
- দক্ষিণে শিবালিক পাহাড় ও উত্তরে হিমাদ্রি হিমালয়ের মধ্যে হিমাচল হিমালয় প্রসারিত হয়েছে। এই পর্বতশ্রেণি 1500 থেকে 4500 মিটার উঁচু ও 60-80 কিমি প্রশস্ত।
- পিরপাঞ্জাল, ধওলাধর, নাগটিব্বা প্রভৃতি পর্বতশ্রেণি এখানে দেখা যায়।
- এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গগুলি হল কেদারনাথ (7188 মি), চৌখাম্বা-বদরীনাথ (7138 মি), ত্রিশুল (7120 মি) প্রভৃতি।
- এই অংশে অনেক উপত্যকা দেখা যায়, যেমন — কুলু, কাংড়া প্রভৃতি। 6. হিমাচলের নদী উপত্যকাগুলি খুব গভীর ও গিরিখাত বিশিষ্ট।
শিবালিক বা বহিঃহিমালয়
- প্রায় 70 লক্ষ বছর আগে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে শেষ প্রবল ভূ-আলোড়নের সময় শিবালিক পর্বতশ্রেণির সৃষ্টি হয়।
- শিবালিক পর্বতশ্রেণি গড়ে 600 থেকে 1500 মিটার উঁচু এবং 10 থেকে 50 কিমি চওড়া।
- মুসৌরি, জম্মু, ডাফলা, মিরি, আবোর প্রভৃতি পাহাড় এখানে অবস্থিত।
- এই পর্বতশ্রেণি বিভিন্ন উপত্যকা (বা, দুন) ও গিরিখাত দ্বারা মধ্য হিমালয় থেকে বিচ্ছিন্ন।
আজকের আলোচনায়, আমরা হিমালয় পর্বতমালার গঠনকারী প্রধান পর্বতশ্রেণীগুলি সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এই বিশাল পর্বতমালা শুধুমাত্র তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই বিখ্যাত নয়, বরং এটি ভারতের জলবায়ু, জীববৈচিত্র্য এবং সংস্কৃতিকেও প্রভাবিত করে।
দশম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ”-এর “ভারতের ভূপ্রকৃতি” বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। পর্বতশ্রেণীগুলির বিস্তারিত বিবরণ মনে রাখা আপনার পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সহায়ক হবে।