আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে দেখবো যে ইয়ারদাং ও বারখান কি? ইয়ারদাং ও বারখান-এর মধ্যে প্রভেদ কী? এই প্রশ্ন দশম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, ইয়ারদাং ও বারখান কি? ইয়ারদাং ও বারখান-এর মধ্যে প্রভেদ কী? প্রশ্নটি আপনি পরীক্ষার জন্য তৈরী করে গেলে আপনি লিখে আস্তে পারবেন।
ইয়ারদাং
মরুভূমির বুকে বায়ুপ্রবাহের অবিরাম ক্ষয়কাজের ফলে সৃষ্টি হয় নানা অদ্ভুত ভূমিরূপ। এর মধ্যে অন্যতম হল ইয়ারদাঙ, যা দেখতে অনেকটা মোরগের ঝুঁটির মতো।
ইয়ারদাঙ কীভাবে তৈরি হয়?
মরুভূমিতে যখন কঠিন ও কোমল শিলাস্তুপ বায়ুর গতিপথের সাথে লম্বভাবে সাজানো থাকে, তখন বায়ু অবঘর্ষের মাধ্যমে কোমল শিলাগুলো দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। ফলে সরু সুড়ঙ্গের মতো গঠন তৈরি হয়। অন্যদিকে, কঠিন শিলাগুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না, বরং খাড়া খাঁজকাটা উঁচুভূমিতে পরিণত হয়। এই উঁচুভূমিগুলোই ইয়ারদাঙ নামে পরিচিত।
ইয়ারদাঙের বৈশিষ্ট্য –
- সাধারণত ৫ থেকে ১৫ মিটার উঁচু এবং ৮ থেকে ৪০ মিটার প্রশস্ত হয়।
- মরুভূমির বালির রঙে, বাদামী বা লালচে রঙের হতে পারে।
- দেখতে অনেকটা মোরগের ঝুঁটির মতো।
- মরুভূমির বায়ুপ্রবাহের দিক অনুসারে সারিবদ্ধভাবে সাজানো থাকে।
কোথায় কোথায় ইয়ারদাঙ দেখা যায়?
- সৌদি আরবের মরু অঞ্চলে।
- গোবি মরুভূমি।
- চিলির আটাকামা মরুভূমি।
- ভারতের থর মরুভূমি।
বারখান
উষ্ণ মরুভূমিতে বায়ুপ্রবাহ বালিয়াড়িগুলিকে অর্ধচন্দ্রাকারে আকার দিয়ে বার্খান নামের ঢিল গঠন করে। “বার্খান” শব্দটির অর্থ তুর্কি ভাষায় “কিরঘিজ স্টেপস অঞ্চলের বালিয়াড়ি”। এই বালিয়াড়ি তৈরির জন্য বড় বাধার দরকার নেই, কিছু নুড়ি বা বাতাসের গতির তারতম্যেই বালি সঞ্চিত হয়ে এগুলি তৈরি হয়। বায়ু বালি এগিয়ে নিয়ে যায় ফলে বার্খানের সামনের দিক উত্তল ও পিছনের দিক অবতল হয়। একাধিক বার্খান একত্রে থাকলে তাকে বালিয়াড়ির শৃঙ্খল বা কলােনী বলে। সাধারণত ১০-৩০ মিটার উঁচু, ৫০-২০০ মিটার দীর্ঘ ও ৪০-৭০ মিটার চওড়া হয়, তবে আরও বড়ও হতে পারে। এগুলো মরুভূমিতে দিক নির্দেশক হিসেবে কাজ করে এবং বিশেষ বারখান এ থেকে লম্বা বালিয়াড়ি সৃষ্টি হতে পারে। সাহারা মরুভূমি এ ধরনের বার্খানের জন্য বিখ্যাত।
আরও পড়ুন – বারখান বালিয়াড়ির বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
ইয়ারদাং ও বারখান-এর মধ্যে প্রভেদ কী?
ইয়ারদাং ও বারখান-এর মধ্যে প্রধান প্রভেদগুলি হল —
বিষয় | ইয়ারদাং | বারখান |
প্রকৃতি | বায়ুর ক্ষয়জাত ভূমিরূপ হল ইয়ারদাং। | বায়ুর সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ হল বারখান। |
বায়ুর কার্যগত প্রক্রিয়া | বায়ুর অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় ইয়ারদাং গঠিত হয়। | বায়ুর সঞ্চয়-কার্যের প্রক্রিয়াগুলি বারখান গঠনে সাহায্য করে। |
আকৃতি | ইয়ারদাং বিচিত্র আকৃতির শৈলশিরার মতো দেখতে হয়। | আধখানা চাঁদ বা অর্ধচন্দ্রাকৃতি বালিয়াড়ি হল বারখান। |
উপাদান | কঠিন শিলা দিয়ে ইয়ারদাং গঠিত হয়। | বারখান গঠিত হয় বালির স্তূপ দিয়ে। |
উচ্চতা | ইয়ারদাং-এর উচ্চতা 6-15 মিটার পর্যন্ত হয়। | বারখান বালিয়াড়ির উচ্চতা 30 মিটার পর্যন্ত হয়। |
আরও পড়ুন – লোয়েস ভূমি বা লোয়েস সমভূমি কী?
এই আর্টিকেলে আমরা ইয়ারদাং ও বারখান কী এবং তাদের মধ্যে পার্থক্য কী তা আলোচনা করেছি। আমরা দেখেছি যে, ইয়ারদাং ও বারখান উভয়ই মরুভূমিতে বায়ু দ্বারা গঠিত ভূমিরূপ, তবে তাদের আকৃতি ও গঠনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে।
ইয়ারদাং হলো তীক্ষ্ণ, খাড়া দেওয়াল এবং মসৃণ, সমতল শীর্ষ বিশিষ্ট মোরগের ঝুঁটির আকৃতির ভূমিরূপ। এগুলি সাধারণত শক্ত ও কোমল শিলাস্তরের বিকল্প স্তর দ্বারা গঠিত হয়। বায়ু শক্ত শিলাস্তরগুলিকে ক্ষয় করতে পারে না, তাই সেগুলি খাড়া দেওয়াল তৈরি করে, যখন কোমল শিলাস্তরগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সমতল শীর্ষ তৈরি করে।
বারখান হলো অর্ধচন্দ্রাকার বা বাঁকানো আকৃতির বালির ঢিবি। এগুলি বায়ু দ্বারা বহন করা বালি দ্বারা গঠিত হয়। বায়ু যখন বালির ঢিবির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন এটি ঢিবির সামনের দিক থেকে বালি সরিয়ে ফেলে এবং ঢিবির পিছনে জমা করে। এটি ঢিবিকে অর্ধচন্দ্রাকার বা বাঁকানো আকৃতি দান করে।
এই পার্থক্যগুলি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এগুলি আপনাকে মরুভূমিতে ইয়ারদাং ও বারখান-এর মধ্যে পার্থক্য করতে সাহায্য করবে। আশা করি ইয়ারদাং ও বারখান কি? ইয়ারদাং ও বারখান-এর মধ্যে প্রভেদ কী? – আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য সহায়ক হয়েছে।