জলসেচের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলি লেখো।

Rohit

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “জলসেচের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলি লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারত” -এর “ভারতের নদনদী ও হ্রদসমূহ” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

জলসেচের বিভিন্ন পদ্ধতি
জলসেচের বিভিন্ন পদ্ধতি

জলসেচের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলি লেখো।

অথবা, জলসংরক্ষণের যে-কোনো দুটি পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

জলসম্পদ সংরক্ষণের পদ্ধতিগুলি জলের অপচয় রোধ এবং জলের বিকল্প উৎসসমূহের ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তাই আগামী প্রজন্মের জন্য জলসম্পদকে সুরক্ষিত করতে সুসংহত জল ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা রূপায়ণ ও তার প্রয়োগ। জলসম্পদকে সংরক্ষণের জন্য যে সমস্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন, সেগুলি হল –

জলবিভাজিকা উন্নয়ন –

ভূমি ও জলসম্পদের বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদের কাম্য উৎপাদন ও সুষ্ঠু বণ্টন সম্পাদন করাই হল জল বিভাজিকার ব্যবস্থাপনা বা উন্নয়ন। জলবিভাজিকা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে –

  • স্থানীয় জলসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার।
  • জলসমৃদ্ধ অববাহিকায় নদীবাঁধের দ্বারা জলাধারের জলকে ধরে রাখার পর সেই জলকে সুরঙ্গের মাধ্যমে কংক্রিটের তৈরি নালা পথে ভূ-অভ্যন্তরস্থ পাইপের মাধ্যমে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা যায়। এইভাবে উদ্বৃত্ত জলকে জলাভাবযুক্ত স্থানে স্থানান্তরিত করলে জলের উপযোগিতা ও কার্যকারিতা উভয়ই বৃদ্ধি পায় এবং জলের সংরক্ষণ হয়।
জলবিভাজিকা উন্নয়ন
জলবিভাজিকা উন্নয়ন

বৃষ্টির জল সংরক্ষণ –

বৃষ্টির জলকে ধরে রেখে ব্যবহার করার সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করলে জলসম্পদকে রক্ষা করা সম্ভব।

  • বৃষ্টির জলকে সরাসরি ভূগর্ভে প্রবেশ করিয়ে ভূগর্ভস্থ জলসম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যায়।
  • বাড়ির ছাদে যে বৃষ্টির জল পড়ে তাকে পাইপের মাধ্যমে নামিয়ে কোনো জলাধারে সংরক্ষণ ও পরিশোধন করে গৃহের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়।
  • বড়ো ও ছোটো পুকুর তৈরি করে আশপাশের অঞ্চলের বৃষ্টির জলকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে নিয়ে এসে পুকুরে সংগ্রহ করা এবং স্থানীয় অঞ্চলে সেচের কাজে লাগানো যায়।
  • ভূগর্ভস্থ জলধারের মেঝে কংক্রিটের না বানিয়ে বৃষ্টির জমা জল দ্বারা ভৌমজলের ভান্ডারকেও পরিপূরণ করা যায়। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর প্রভৃতি স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত জেলাগুলিতে এই পদ্ধতিতে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
  • শহরাঞ্চলে রিচার্জ পিট, রিচার্জ ট্রেঞ্চ, রিচার্জ নলকূপ প্রভৃতি তৈরি করে এবং গ্রামাঞ্চলে কুয়ো খনন, ঝোপঝাড় দিয়ে বাঁধ তৈরি, চেক ড্যাম তৈরি, জলবিভাজিকা বরাবর বাঁধ তৈরি করে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করা হয়।
বৃষ্টির জল সংরক্ষণ শহরাঞ্চলে ও গ্রামাঞ্চলে
বৃষ্টির জল সংরক্ষণ শহরাঞ্চলে ও গ্রামাঞ্চলে

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

জলসেচের বিভিন্ন পদ্ধতি কী কী?

জলসেচের প্রধান পদ্ধতিগুলি হল –
1. সারফেস ইরিগেশন (Surface Irrigation) – জমিতে জল সরাসরি প্রবাহিত করা (যেমন – ফ্লাড ইরিগেশন, ফারো ইরিগেশন)।
2. স্প্রিংকলার পদ্ধতি (Sprinkler Irrigation) – জল বৃষ্টির মতো ফোঁটায় ফোঁটায় ছড়িয়ে দেওয়া।
3. ড্রিপ ইরিগেশন (Drip Irrigation) – গাছের গোড়ায় ফোঁটায় ফোঁটায় জল দেওয়া, যা জলের অপচয় কমায়।
4. সাবসারফেস ইরিগেশন (Subsurface Irrigation) – মাটির নিচে পাইপের মাধ্যমে জল সরবরাহ।

জলসংরক্ষণের দুটি পদ্ধতি উল্লেখ করো।

1. বৃষ্টির জল সংরক্ষণ (Rainwater Harvesting) – বাড়ির ছাদ বা খোলা জায়গায় বৃষ্টির জল সংগ্রহ করে ট্যাঙ্ক বা ভূগর্ভস্থ জলাধারে জমা করা।
2. চেক ড্যাম/জলাধার তৈরি (Check Dams) – ছোট বাঁধ নির্মাণ করে বৃষ্টির জল ধরে রেখে ভূগর্ভস্থ জলস্তর বাড়ানো।

জলবিভাজিকা উন্নয়ন কীভাবে জল সংরক্ষণে সাহায্য করে?

জলবিভাজিকা উন্নয়নের মাধ্যমে নদী বা জলাধারের জলকে কৃত্রিম নালা বা পাইপলাইনের মাধ্যমে জলাভাবযুক্ত এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়, যা জলের সুষম বণ্টন ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করে।

শহর ও গ্রামে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের পদ্ধতিগুলি কী কী?

1. শহরে – রিচার্জ পিট, রুফটপ রেইনওয়াটার হার্ভেস্টিং, পার্কে জলাধার তৈরি।
2. গ্রামে – কুয়ো খনন, চেক ড্যাম, পুকুর সংস্কার, কনট্যুর বাঁধ নির্মাণ।

ড্রিপ ইরিগেশন কেন কার্যকর?

এটি জলের অপচয় রোধ করে, শুধুমাত্র গাছের গোড়ায় জল দেয় এবং খরচ কমায়, তাই শুষ্ক অঞ্চলের জন্য আদর্শ।

ভূগর্ভস্থ জল সংরক্ষণের উপায় কী?

1. বৃষ্টির জলকে রিচার্জ পিট বা ট্রেঞ্চের মাধ্যমে মাটির নিচে পাঠানো।
2. অত্যধিক নলকূপ ব্যবহার কমিয়ে ভূগর্ভস্থ জলের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “জলসেচের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলি লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারত” -এর “ভারতের নদনদী ও হ্রদসমূহ” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব আলোচনা করো

ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব আলোচনা করো।

ভারতের কৃষির ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব লেখো

ভারতের কৃষির ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব লেখো।

ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব উদাহরণসহ আলোচনা করো।

ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব উদাহরণসহ আলোচনা করো।

About The Author

Rohit

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব আলোচনা করো।

ভারতের কৃষির ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব লেখো।

ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব উদাহরণসহ আলোচনা করো।

ভারতের মৃত্তিকার ওপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব আলোচনা করো।

ভারতের জলবায়ু অঞ্চলে ভাগ করে প্রত্যেকটির পরিচয় দাও।