এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

মাধ্যমিক ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ারভাটা – ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন উত্তর

আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায়ের বারিমণ্ডলের জোয়ারভাটা বিভাগের কিছু ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষা ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই প্রশ্নগুলো প্রায়ই এই ধরনের পরীক্ষায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

মাধ্যমিক ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ারভাটা - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন উত্তর

জোয়ারভাটা সৃষ্টি হয় কীভাবে?

জোয়ারভাটার ধারণা: সাগর-মহাসাগরের জলরাশি নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট সময় অন্তর এক জায়গায় ফুলে ওঠে এবং অন্য জায়গায় নেমে যায়। জলরাশির এই স্ফীতিকে বলা হয় জোয়ার এবং অবনমনকে বলা হয় ভাটা।

জোয়ারভাটার কারণ: প্রধানত দুটি কারণে জোয়ারভাটা সৃষ্টি হয়:

  • চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ
  • পৃথিবীর আবর্তনজনিত কেন্দ্রাতিগ বল। সূর্যের তুলনায় চাঁদ পৃথিবীর অনেক কাছে থাকায় জোয়ারভাটা সৃষ্টির ক্ষেত্রে চাঁদের আকর্ষণই মুখ্য কারণ।
পৃথিবীর আবর্তন এবং পৃথিবীর ওপর চাঁদের আকর্ষণের জন্য সৃষ্ট জোয়ারভাটা।


পৃথিবীর আবর্তন এবং পৃথিবীর ওপর চাঁদের আকর্ষণের জন্য সৃষ্ট জোয়ারভাটা: পৃথিবী আবর্তনের সময় যে জায়গা চাঁদের সামনে আসে, সেই জায়গার জল চাঁদের আকর্ষণে ফুলে ওঠে, অর্থাৎ সেখানে তখন হয় জোয়ার। একই সময়ে চাঁদের আকর্ষণস্থলের বিপরীত দিকে বা প্রতিপাদ স্থানের জলরাশি পৃথিবীর আবর্তনজনিত কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবে কিছুটা স্ফীত হয়। সুতরাং, সেখানেও জোয়ার (গৌণ জোয়ার) সৃষ্টি হয়। যে দুটি স্থানে জোয়ার হয়, ঠিক তার সমকোণে অবস্থিত স্থান দুটির জলরাশি সরে যায় বলে ওখানে তখন ভাটা হয়।

জোয়ারভাটার প্রভাব বা ফলাফল লেখো।

অথবা, মানবজীবনে জোয়ারভাটার প্রভাব কী কী?
অথবা, জোয়ারভাটার সুবিধা ও অসুবিধাগুলি উল্লেখ করো।

মানবজীবনে জোয়ারভাটার উল্লেখযোগ্য প্রভাবগুলি নীচে আলোচনা করা হল —

জোয়ারভাটার সুপ্রভাব বা সুবিধা –

  • জোয়ারের সময় বড়ো বড়ো জাহাজ নদীতে আসতে পারে এবং ভাটার টানে সাগরে ফিরে যেতে পারে।
  • ভাটার টানে নদীর পলি ও আবর্জনা সমুদ্রে গিয়ে পড়ে, ফলে নদীখাত গভীর থাকে।
  • জোয়ারভাটার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
  • জোয়ারের সময় অনেক সামুদ্রিক মাছ নদীতে চলে আসে।
  • জোয়ারের লোনা জলে বন্দর ও নদী বরফমুক্ত থাকে।

জোয়ারভাটার কুপ্রভাব বা অসুবিধা

  • জোয়ারের মাধ্যমে নদীর মিষ্টি জল লোনা হয়ে যায় যা কৃষি, শিল্প, এবং পানীয় কাজে ব্যবহার করা যায় না।
  • প্রবল জোয়ারে নদী উপকূলে চাষাবাদ ও ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়।
  • নদীর জোয়ারের সময় জলবাহিত যানবাহনের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
  • জোয়ারের জলের মাধ্যমে পলি পড়ে নদীগর্ভ অগভীর হয়ে যায়।

জোয়ারভাটার মধ্যে সময়ের ব্যবধান কত থাকে?

অথবা কোনো স্থানে প্রতিদিন একই সময়ে জোয়ারভাটা হয় না কেন?
অথবা, যে-কোনো স্থানে মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ারের মধ্যে সময়ের ব্যবধান 12 ঘণ্টা 26 মিনিট হয় কেন?
অথবা, দিনে দুবার জোয়ারভাটা হয় কেন?
অথবা, দুটি মুখ্য জোয়ারের মধ্যে সময়ের ব্যবধান 24 ঘণ্টার বেশি হয় কেন?
অথবা, কোনো একটি স্থানে দুটি মুখ্য জোয়ারের মধ্যে সময়ের ব্যবধান কেন 24 ঘণ্টা 52 মিনিট হয়?

জোয়ারভাটার মধ্যে সময়ের ব্যবধান: পৃথিবীর চারদিকে একবার ঘুরে আসতে চাঁদের সময় লাগে প্রায় 27 দিন। পৃথিবী যখন 24 ঘণ্টায় একবার নিজের মেরুদণ্ডের চারদিকে আবর্তন করে তখন চাঁদ নিজের অক্ষের 1/27 অংশ বা 13° (প্রায়) পথ এগিয়ে যায়। এই 13° পথ অতিক্রম করতে পৃথিবীর আরও 52 মিনিট সময় লাগে। সুতরাং পৃথিবীর যে-কোনো স্থান 24 ঘণ্টা 52 মিনিট পর পর একবার করে চাঁদের সামনে আসে। তাই প্রতিটি মুখ্য বা গৌণ জোয়ার 24 ঘণ্টা 52 মিনিট পরে অনুষ্ঠিত হয় এবং একটি নির্দিষ্ট স্থানে একদিন যে সময়ে মুখ্য জোয়ার হয় সেইদিন তার 12 ঘণ্টা 26 মিনিট পরে সেখানে গৌণ জোয়ার অনুষ্ঠিত হয়।

জোয়ারের সময়ের পার্থক্য

তেজ বা ভরা কোটালকে কেন সর্বোচ্চ জোয়ার বলা হয়?

অমাবস্যা ও পূর্ণিমার দিনে তেজ বা ভরা কোটাল হয়। অমাবস্যার দিনে পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে চাঁদ থাকে। পূর্ণিমার দিনে চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে পৃথিবী থাকে। এর ফলে, অন্য যে-কোনো দিনের তুলনায় ওই দু’দিন চাঁদ ও সূর্যের সম্মিলিত আকর্ষণে জোয়ারের জল অনেক বেশি ফুলে ওঠে, অর্থাৎ ওই দু’দিন জলস্ফীতি সর্বাধিক হয়। তাই তেজ বা ভরা কোটালকে সর্বোচ্চ জোয়ার বলা হয়।

বানডাকা বা বান বলতে কী বোঝ? কী কী অবস্থায় নদীতে বান খুব প্রবল হয়?

অথবা, টীকা লেখো – বানডাকা

জোয়ারের সময় সমুদ্র স্ফীত হয় বলে সমুদ্রের জল মোহনা দিয়ে দ্রুত নদীতে প্রবেশ করে, ফলে নদীর জলও তখন বেড়ে যায়। এইভাবে জোয়ারের জল নদীতে ঢোকার সময় মাঝে মাঝে অত্যধিক উঁচু (৫-৭ মিটার) হয়ে প্রবল বেগে নদীতে জলোচ্ছ্বাস ঘটায়। একেই বলা হয় বান বা বানডাকা।

বানডাকা
প্রবল বনের অনুকূল অবস্থা –

কতকগুলি বিশেষ অবস্থায় নদীতে বান খুব প্রবল হয়, যেমন –

  1. তেজ কোটালের সময়,
  2. নদীর মোহনায় চড়া থাকলে,
  3. জোয়ারের জল প্রবেশ করার সময় নদীর স্রোতে বা অন্যভাবে বাধা পেলে,
  4. নদীর মুখ ফানেল আকৃতির হলে এবং
  5. নদী জলপূর্ণ থাকলে।

মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ার কাকে বলে?


অথবা, মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ার কীভাবে ঘটে ব্যাখ্যা করো।

মুখ্য জোয়ার: ভূপৃষ্ঠে জোয়ারভাটা সৃষ্টির কারণ হিসেবে চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ এবং পৃথিবীর আবর্তনজনিত কেন্দ্রাতিগ বলের কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে প্রধানত চাঁদের আকর্ষণেই পৃথিবীতে জোয়ারভাটা হয়। তাই আবর্তন করতে করতে পৃথিবীর যে জায়গা যখন চাঁদের সামনে আসে, সেই জায়গার জল চাঁদের আকর্ষণে খুব বেশি ফুলে ওঠে, অর্থাৎ সেখানে তখন হয় জোয়ার। এইভাবে ভূপৃষ্ঠের কোনো জায়গায় চাঁদের সরাসরি আকর্ষণের ফলে যে জোয়ার হয়, তাকে মুখ্য জোয়ার বলা হয়।

গৌণ জোয়ার: মুখ্য জোয়ারের সময় চাঁদের আকর্ষণস্থলের বিপরীত দিকে বা প্রতিপাদ স্থানে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির তুলনায় কেন্দ্রাতিগ বল অনেক বেশি প্রবল থাকে। ফলে ওই স্থানের জলরাশিও ফুলে ওঠে, অর্থাৎ জোয়ারের সৃষ্টি হয়। একে বলা হয় গৌণ জোয়ার। অবশ্য অনেকে বলেন যে, গৌণ জোয়ার প্রকৃতপক্ষে, ভূপৃষ্ঠে চাঁদের আকর্ষণস্থলের বিপরীত প্রান্তে জলভাগ ও স্থলভাগের সরণের পার্থক্যের জন্য হয়।

ভরা কোটাল ও মরা কোটাল কী?

অমাবস্যা ও পূর্ণিমার দিনে পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্যের মধ্যবিন্দু একই সরলরেখায় অবস্থান করে বলে চাঁদ ও সূর্য উভয়ের সম্মিলিত প্রভাবে পৃথিবীর মহাসাগরের জল অনেক বেশি ফুলে ওঠে। একে তেজ কোটাল বা ভরা কোটাল বলা হয়।

মরা কোটাল: শুক্ল ও কৃণপক্ষের সপ্তমী/অষ্টমী তিথিতে চাঁদ ও সূর্য পরস্পর সমকোণে থেকে পৃথিবীকে আকর্ষণ করে, অর্থাৎ চাঁদ ও সূর্য পরস্পরের আকর্ষণের বিরোধিতা করে। তাই এই দু’দিন মহাসাগরের জলস্ফীতি কিছুটা কম হয়। এই দু’দিনের জোয়ারকে বলা হয় মরা কোটাল।

পূর্ণিমার তুলনায় অমাবস্যার জোয়ার প্রবল হয় কেন?

পূর্ণিমা তিথিতে পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে থাকে। এই অবস্থায় পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের ঠিক সামনে আসে সেখানে চাঁদের মুখ্য জোয়ার ও সূর্যের গৌণ জোয়ার হয়। একে পূর্ণিমা তিথির ভরা জোয়ার বলে।
অন্যদিকে অমাবস্যা তিথিতে চাঁদ ও সূর্য পৃথিবীর একই দিকে ও একই সরলরেখায় অবস্থান করে। তাই চাঁদ ও সূর্যের মিলিত টানে পৃথিবীর জলরাশি বেশি আকর্ষিত হয়। তাই পূর্ণিমার তুলনায় অমাবস্যার জোয়ার বেশি প্রবল।

ভরা জোয়ারের তুলনায় মরা জোয়ারে জলস্ফীতি অপেক্ষাকৃত কম হয় কেন?

অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে চাঁদ ও সূর্যের সম্মিলিত আকর্ষণে ভরা জোয়ার হয় বলে সমুদ্রের জলস্ফীতি প্রবল হয়। কিন্তু শুক্ল ও কৃণপক্ষের সপ্তমী তিথিতে চাঁদ ও সূর্য পরস্পরের সমকোণে থেকে পৃথিবীকে আকর্ষণ করে (অর্থাৎ সূর্যের আকর্ষণ, চাঁদের আকর্ষণের বিরোধিতা করে বা কার্যহীন বলের সৃষ্টি হয়) বলে সমুদ্রের জলস্ফীতি অপেক্ষাকৃত কম হয়। এজন্য এই দু’দিন মরা জোয়ার হয়। অর্থাৎ মরা জোয়ারের জলস্ফীতি ভরা জোয়ারের তুলনায় অনেক কম হয়।

গঙ্গা নদীতে বান ডাকে কেন?

জোয়ারের সময় স্ফীত সমুদ্রের জল মোহনা দিয়ে প্রবল বেগে ফুলে ফেঁপে প্রায় ৫-৭ মিটার উঁচু হয়ে সশব্দে নদীতে প্রবেশ করে বলে, সেই ধ্বনি বা আওয়াজকে বলা হয় বান ডাকা। বর্ষাকালে গঙ্গা নদীতে প্রায়ই বান ডাকার ঘটনা ঘটে। এর কারণ –

  1. গঙ্গা নদীর মোহনা ফানেল আকৃতির (অর্থাৎ, নদী মোহনা বেশ প্রশস্ত কিন্তু নদীখাত অপেক্ষাকৃত সংকীর্ণ),
  2. নদীর মোহনায় অনেক চড়া আছে,
  3. বর্ষাকালে নদীতে প্রচুর জল থাকে এবং
  4. বঙ্গোপসাগরের জল গঙ্গা নদীতে প্রবেশ করার সময় তা নদীর স্রোতে বাধাপ্রাপ্ত হয়।

জোয়ারভাটা নদীর নাব্যতাকে কীভাবে প্রভাবিত করে?

জোয়ারের সময় সমুদ্রের জল নদীর মধ্য দিয়ে উৎসের দিকে প্রবেশ করার সময় নদীখাতে সঞ্চিত পলি অপসারণ করে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি করে।জোয়ারের ফলে নদীতে জলের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর ফলে বড় বড় জাহাজ মালপত্র নিয়ে নদী-বন্দরে প্রবেশ করতে পারে। আবার ভাটার সময় জাহাজগুলি নদী-বন্দর থেকে সমুদ্রে ফিরে যেতে পারে। ভাটার টানে নদীর পলি ও আবর্জনা সমুদ্রে গিয়ে পড়ে, ফলে নদীখাত গভীর হয়।

আরও পড়ুন – মাধ্যমিক ভূগোল – ভারতের মৃত্তিকা – দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায়ের বারিমণ্ডলের জোয়ারভাটা বিভাগের কিছু ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষা ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই প্রশ্নগুলো প্রায়ই এই ধরনের পরীক্ষায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। যদি আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকে, তাহলে টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Share via:

মন্তব্য করুন