কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রধান তিনটি পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রধান তিনটি পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রধান তিনটি পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের চতুর্থ অধ্যায় “বর্জ্য ব্যবস্থাপনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রধান তিনটি পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রধান তিনটি পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
Contents Show

কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রধান তিনটি পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা –

গৃহস্থালি, হোটেল, রেস্তোরাঁ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে কঠিন বর্জ্যকে নির্দিষ্ট স্থানে জমা করা হয়। সেখান থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে পরিবহণ করার পর নির্দিষ্ট বড়ো স্থানে একত্রিত করে বর্জ্যের নিষ্পত্তি ঘটানো হয়। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার তিনটি পর্যায়। যথা –

  1. পৃথককরণ।
  2. স্যানিটারি ল্যান্ডফিল।
  3. কম্পোস্টিং।

পৃথককরণ –

বর্জ্য পদার্থ নিষ্পত্তিকরণের পূর্বে চরিত্র অনুযায়ী বর্জ্যের পৃথককরণ করা হয়। প্রথমত, যে সমস্ত জৈব বর্জ্য ভঙ্গুর তাদের আলাদা করে কম্পোস্টিং -এর ব্যবস্থা করা হয়। দ্বিতীয়ত, জৈব অভঙ্গুর বর্জ্যগুলিকে আলাদা করা হয়। সেখান থেকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে বিভিন্ন বস্তুকে সংগ্রহ করা হয়। যেমন – যেগুলি পুনর্ব্যবহার আর হবে না তাদের open dumping জায়গায় স্থানান্তরিত করা হয়। যাদের Recycling করা যাবে। যেমন — কাচ, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, তামা প্রভৃতি তাদের শিল্প কারখানায় গলিয়ে নতুন সামগ্রী উৎপাদন করা হয়।

স্যানিটারি ল্যান্ডফিল –

পৃথকৃত জৈব বর্জ্যকে নির্দিষ্ট গভীরতার পুকুরে (বর্তমানে অভেদ্য আস্তরণে আবৃত করে) স্তরে স্তরে বিছিয়ে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে মাটির স্তর ও জৈব বর্জ্যের স্তর ক্রমান্বয়ে সজ্জিত থাকে। সব থেকে উপরে মাটির স্তরটি 1-1.4 মিটার পুরু করা হয়; যাতে ইঁদুর জাতীয় জীব ভিতরে না ঢুকতে পারে। ব্যাকটেরিয়া বর্জ্য পদার্থের পচন সৃষ্টি করে। পচনের ফলে মিথেন, অ্যামোনিয়া, কার্বন ডাইঅক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড (Landfill Gas) উৎপন্ন হয়, যাদের সংগ্রহ করে বিভিন্ন কাজে লাগানো হয়। ভারতের কয়েকটি স্থানে এই পদ্ধতি প্রচলিত আছে। বহির্বিশ্বে এই পদ্ধতি ব্যাপক ভাবে প্রয়োগ করা হয়।

কম্পোস্টিং –

জৈব বর্জ্য পদার্থ, মানুয় বা গবাদি পশুর মলকে ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা পচন ঘটিয়ে হিউমাসে বা জৈবসারে পরিণত করাকে কম্পোস্টিং (Composting) বলে। কম্পোস্টিং -এর সময় উপজাত বস্তু হিসেবে CO2 জল ও তাপ উৎপন্ন হয়। এই পদ্ধতিতে 60°C বা তার বেশি উষ্ণতা উৎপন্ন হওয়ায় মশা-মাছির ডিম বা লার্ভা নষ্ট হয়। আগাছা ও অন্যান্য ক্ষতিকারক জীবাণু ধ্বংস হয়। তবে কম্পোস্ট জীবাণু মুক্ত থাকে। এতে উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য নাইট্রেজেন, ফসফেট প্রভৃতি পুষ্টিকর উপাদান থাকে। আমাদের দেশে দুটি পদ্ধতিতে কম্পোস্টিং করা হয়। যথা –

কম্পোস্টিং (Composting)
কম্পোস্টিং (Composting)
  • বেঙ্গালুরু পদ্ধতি বা উত্তপ্ত সন্ধান প্রক্রিয়া – মাটিতে 15-30 ফুট লম্বা, 5-8 ফুট চওড়া এবং 2-3 ফুট গভীর ট্রেঞ্চ বা খাদ কাটা হয়। এতে প্রথমে জৈব জঞ্জাল ও তার ওপর মানুষ বা গবাদির পশুর মল ফেলা হয়। এইভাবে জৈব জঞ্জাল ও মলের বিভিন্ন স্তর মাটি থেকে এক ফুট উচ্চতা পর্যন্ত তৈরি করা হয়। অবায়বীয় ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা এই সমস্ত বর্জ্য পদার্থের সন্ধান প্রক্রিয়া ঘটে এবং সেখান থেকে 15-21 দিনের মধ্যে কম্পোস্ট সার তৈরি হয়ে যায়।
  • যান্ত্রিক কম্পোস্টিং – পৃথকৃত জৈব বর্জ্য পদার্থকে একটি যন্ত্রের সাহায্যে চূর্ণবিচূর্ণ করা হয়। তারপর এতে মানুষ বা গবাদি পশুর মল মেশানো হয়। এই মিশ্রিত পদার্থকে একটি ঘূর্ণায়মান যন্ত্রের ভিতরে রেখে বায়বীয় (aerobic) ব্যাকটেরিয়া মিশিয়ে দেওয়া হয়। 30-45 দিনের মধ্যে জৈব বর্জ্য কম্পোস্ট সারে পরিণত হয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কী?

গৃহস্থালি, বাণিজ্যিক ও শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে উৎপন্ন কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ, পরিবহন, প্রক্রিয়াকরণ ও নিষ্পত্তির সুসংগঠিত পদ্ধতিই হলো কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।

কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রধান তিনটি পদ্ধতি কী কী?

1. পৃথককরণ (বর্জ্যকে জৈব, অজৈব ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য অংশে ভাগ করা)
2. স্যানিটারি ল্যান্ডফিল (বর্জ্য স্তরীকরণ করে মাটির নিচে পুঁতে রাখা)
3. কম্পোস্টিং (জৈব বর্জ্যকে সারতে রূপান্তর করা)

বর্জ্য পৃথককরণ কেন গুরুত্বপূর্ণ?

বর্জ্য পৃথককরণের মাধ্যমে পুনর্ব্যবহার, কম্পোস্টিং ও ল্যান্ডফিলের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। এটি পরিবেশ দূষণ কমায় এবং সম্পদের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করে।

স্যানিটারি ল্যান্ডফিল কীভাবে কাজ করে?

1. বর্জ্যকে স্তরে স্তরে সাজিয়ে মাটির আস্তরণ দিয়ে ঢাকা হয়।
2. ব্যাকটেরিয়া বর্জ্য পচিয়ে ল্যান্ডফিল গ্যাস (মিথেন, CO₂) উৎপন্ন করে, যা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
3. এটি ভূগর্ভস্থ জল দূষণ রোধ করে।

কম্পোস্টিং -এর সুবিধা কী?

1. জৈব বর্জ্য থেকে জৈব সার তৈরি হয়, যা মাটির উর্বরতা বাড়ায়।
2. এটি বর্জ্যের পরিমাণ কমায় এবং ল্যান্ডফিলের চাপ হ্রাস করে।
3. মশা-মাছির ডিম ও ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।

ভারতে স্যানিটারি ল্যান্ডফিল কতটা প্রচলিত?

ভারতে কিছু শহরে (যেমন — দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই) স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ব্যবহার করা হয়, তবে অনেক স্থানে এখনও খোলা ডাম্পিং (Open Dumping) প্রচলিত, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জনসাধারণের ভূমিকা কী?

1. বর্জ্য উৎসেই পৃথক করা (জৈব, প্লাস্টিক, কাচ ইত্যাদি)।
2. পুনর্ব্যবহারযোগ্য বস্তু আলাদা করে ফেলা।
3. কম্পোস্টিং -কে উৎসাহিত করা।

ল্যান্ডফিল গ্যাস কীভাবে কাজে লাগে?

ল্যান্ডফিল গ্যাস (মিথেন, CO₂) সংগ্রহ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বা রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায়, যা জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প।

কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না করলে কী সমস্যা হতে পারে?

1. মাটি, জল ও বায়ু দূষণ।
2. রোগ-জীবাণুর বিস্তার (ডেঙ্গু, কলেরা ইত্যাদি)।
3. প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রধান তিনটি পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রধান তিনটি পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের চতুর্থ অধ্যায় “বর্জ্য ব্যবস্থাপনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো? সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসরের মধ্যে পার্থক্য

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ বলতে কী বোঝো

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ কী? জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহের মধ্যে পার্থক্য

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্র বলতে কী বোঝো

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্র কী? ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্রের পার্থক্য

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

কোনো প্রিজমের মধ্য দিয়ে আলোর প্রতিসরণের ক্ষেত্রে দেখাও যে চ্যুতিকোণ(δ) = i1+i2−A

তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

একটি গ্রামের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

অরণ্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

র‍্যাগিং ও ছাত্রসমাজ – প্রবন্ধ রচনা