এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “কৃষি বনসৃজন ও সামাজিক বনসৃজন বলতে কী বোঝো? ভারতে কৃষি বনসৃজন ও সামাজিক বনসৃজনের পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

কৃষি বনসৃজন ও সামাজিক বনসৃজন বলতে কী বোঝো?
কৃষি বনসৃজন –
উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ফোলে ও বার্নাড -এর মতে, কৃষক তার কৃষিজমি বা পতিত জমিতে ফসল উৎপাদনের সঙ্গে কাঠ, ভেষজ ওষুধ, ফলমূল ইত্যাদি উৎপাদনের জন্য গাছ ও লতাগুল্ম রোপণ করে যে বনভূমি গড়ে তোলে, তাকে কৃষি বনসৃজন বলে।
সামাজিক বনসৃজন –
কৃষি ও সামাজিক পদ্ধতিতে গাছের চারা রোপণ করে নতুন বনভূমি সৃষ্টি করা হয়, তাকে সামাজিক বনসৃজন বলে। এর ফলে স্থানীয় বন সম্পদের জোগান বজায় রাখা যায় এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে।
ভারতে কৃষি বনসৃজন ও সামাজিক বনসৃজনের পার্থক্য লেখো।
ভারতে কৃষি বনসৃজন ও সামাজিক বনসৃজনের মধ্যে পার্থক্য –
বিষয় | কৃষি বনসৃজন | সামাজিক বনসৃজন |
সংজ্ঞা | কৃষি বা পতিত জমিতে ফসল উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে কাঠ ও ফলমূল প্রভৃতি আহরণের জন্য গাছপালা লাগিয়ে যে অরণ্য সৃষ্টি করা হয়, তাকে কৃষি বনসৃজন বলে। | নির্দিষ্ট অরণ্য সীমার বাইরে, অর্থাৎ অব্যবহারযোগ্য জমি বা পতিত জমি, নদনদীর তীরে বা রাস্তার দু-দিকের খালি জমিতে যে অরণ্য সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় তাকে সামাজিক বনসৃজন বলে। |
উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য | চাষির নিজস্ব উন্নতি, অব্যবহারযোগ্য জমিকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করাই কৃষি বনসৃজনের উদ্দেশ্য। এই কারণে কৃষি বনসৃজনে কৃষি বনায়নের সঙ্গে সঙ্গে পশুচারণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। | মৃত্তিকার ক্ষয়রোধ, সমাজের অগ্রগতি, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, বন্যা প্রতিরোধ বজায় রাখাই সামাজিক বনসৃজনের লক্ষ্য। |
জমির পরিমাণ | ভারতে প্রায় 8 কোটি 20 লক্ষ হেক্টর জমিতে কৃষি বনসৃজনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। | ভারতে প্রায় 4 কোটি 50 লক্ষ হেক্টর জমিতে সামাজিক বনসৃজনের সুযোগ আছে। |
বৃক্ষরোপণের স্থান | চাষিদের নিজস্ব অনাবাদি বা কর্ষণ অনুপযুক্ত জমিতে কৃষি বনসৃজন করা হয়। | পতিত ও অব্যবহৃত জমি অথবা সড়কপথ, রেললাইন, খাল ও পুকুর ডোবার ধারে ধারে সামাজিক বনসৃজন করা হয়। |
বৃক্ষের নাম | মহুয়া, ইউক্যালিপটাস, করনজ এবং কোথাও কোথাও সেগুন গাছও লাগানো হয়। | ছায়াপ্রদায়ী বড়ো বড়ো গাছ অথবা দৃষ্টিনন্দন সুন্দর সুন্দর বৃক্ষরোপণ করা হয়। |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
কৃষি বনসৃজন বলতে কী বোঝায়?
কৃষি বনসৃজন হলো কৃষিজমি বা পতিত জমিতে ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি কাঠ, ফলমূল, ভেষজ ওষুধ ইত্যাদি উৎপাদনের জন্য গাছপালা রোপণ করে বনভূমি সৃষ্টি করা। এটি কৃষকদের আর্থিক ও পরিবেশগত সুবিধা প্রদান করে।
সামাজিক বনসৃজন কী?
সামাজিক বনসৃজন হলো সমাজের অংশগ্রহণে অব্যবহৃত বা পতিত জমি, রাস্তার ধার, নদীতীর প্রভৃতি স্থানে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে নতুন বনভূমি সৃষ্টি করা। এর মূল লক্ষ্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, মৃত্তিকা ক্ষয়রোধ ও স্থানীয় সম্পদের সংরক্ষণ।
ভারতে কৃষি বনসৃজনের জন্য কত জমি নির্ধারিত আছে?
ভারতে প্রায় 8 কোটি 20 লক্ষ হেক্টর জমি কৃষি বনসৃজনের জন্য নির্ধারিত।
সামাজিক বনসৃজনের জন্য ভারতে কত জমি উপযুক্ত?
ভারতে প্রায় 8 কোটি 50 লক্ষ হেক্টর জমি সামাজিক বনসৃজনের জন্য উপযুক্ত।
কৃষি বনসৃজনে কোন ধরনের গাছ লাগানো হয়?
সাধারণত মহুয়া, ইউক্যালিপটাস, করনজ, সেগুন ইত্যাদি অর্থকরী গাছ লাগানো হয়।
সামাজিক বনসৃজনে কোন ধরনের গাছ রোপণ করা হয়?
সাধারণত ছায়াদানকারী, দৃষ্টিনন্দন ও পরিবেশবান্ধব গাছ (যেমন – নিম, বট, অশ্বথ, আমলকী ইত্যাদি) লাগানো হয়।
সামাজিক বনসৃজনের প্রধান সুবিধা কী?
1. মাটির ক্ষয়রোধ।
2. বন্যা নিয়ন্ত্রণ।
3. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ।
4. গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
কৃষি বনসৃজনের প্রধান সুবিধা কী?
1. কৃষকের অতিরিক্ত আয়।
2. জমির উর্বরতা বৃদ্ধি।
3. জ্বালানি কাঠ ও পশুখাদ্যের জোগান।
সামাজিক বনসৃজনে স্থানীয় জনগণের ভূমিকা কী?
স্থানীয় মানুষ সরাসরি বৃক্ষরোপণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও বন ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণ করে, যা টেকসই উন্নয়নে সাহায্য করে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “কৃষি বনসৃজন ও সামাজিক বনসৃজন বলতে কী বোঝো? ভারতে কৃষি বনসৃজন ও সামাজিক বনসৃজনের পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন