হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের বর্ণনা দাও

Sourav Das

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের বর্ণনা। দশম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য এই প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মাধ্যমিক ভূগোলের প্রথম অধ্যায় বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ অংশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই আর্টিকেলটি পড়লে এবং এতে উল্লেখিত তথ্যগুলি ভালোভাবে আত্মস্থ করলে, পরীক্ষার সময় আপনি সহজেই হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের বর্ণনা লিখে আসতে পারবেন।

হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের বর্ণনা দাও

হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ – হিমবাহের ক্ষয়কার্য শুধুমাত্র উঁচু পর্বতের ওপরই সীমাবদ্ধ থাকে এবং এই ক্ষয়কার্যের ফলে উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন প্রকার ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, যেমন —

করি বা সার্ক –

হিমবাহের অবঘর্ষ ও উৎপাটন প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট একটি বিখ্যাত ভূমিরূপ হল করি বা সার্ক। স্কটল্যান্ডে একে বলে করি, আর ফ্রান্সে একে বলা হয় সার্ক। এই ভূমিরূপটি গ্রিক অ্যাম্পিথিয়েটার বা বড়ো চামচের আকৃতির মতো হয়। একটি করির তিনটি মূল অংশ আছে— পিছনদিকে খাড়া দেওয়াল, মধ্যভাগে অর্ধবৃত্তাকার গর্ত, এবং নিম্নদিকে উটের কুজের মতো অংশ।

হিমবাহ-গলা জল করিতে জমে হ্রদ সৃষ্টি হলে তাকে বলা হয় করি হ্রদ, উদাহরণ – হিমালয়, আল্পস প্রভৃতি হিমবাহ অধ্যুষিত পার্বত্য অঞ্চলে এই প্রকার ভূমিরূপ দেখা যায়।

হিমবাহের ক্ষয়জাত ভূমিরূপ

এরিটি –

একই পর্বতশৃঙ্গের দুই পাশে দুটি করির সৃষ্টি হলে এবং তাদের আয়তন বাড়তে থাকলে মধ্যবর্তী সংকীর্ণ ও খাড়া শিরা তৈরি হয়, যা এরিটি নামে পরিচিত। হিমালয় এবং কারাকোরাম পর্বতে বহু এরিটি পাওয়া যায়। একাধিক করির মাঝে সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গকে পিরামিড শৃঙ্গ বলা হয়, যেমন আল্পসের ম্যাটারহর্ন।

U-আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণি –

পার্বত্য অঞ্চলে সার্ক বা করির নীচের দিকে হিমবাহ ক্রমশ যে প্রশস্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়, সেখানে হিমবাহের পার্শ্বক্ষয় ও নিম্নক্ষয় প্রায় সমানভাবে হয় বলে সেই উপত্যকাটির আকৃতি ইংরেজি ‘U’ অক্ষরের মতো হয়। একে তাই U-আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণি বলা হয়।

ঝুলন্ত উপত্যকা –

অনেক সময় পার্বত্য অঞ্চলে সৃষ্ট অপেক্ষাকৃত বেশি শক্তিসম্পন্ন ও গভীর প্রধান হিমবাহ উপত্যকায় দুই পাশ থেকে অনেক কম শক্তিসম্পন্ন অগভীর ছোটো ছোটো হিমবাহ এসে মেশে। মনে হয় যেন উপ-হিমবাহ উপত্যকা প্রধান হিমবাহ উপত্যকার ওপর ঝুলন্ত অবস্থায় আছে। এইভাবে ঝুলে থাকা উপ-হিমবাহ-উপত্যকাকে বলা হয় ঝুলন্ত উপত্যকা। এই উপত্যকা বরাবর নদী প্রবাহিত হলে সেখানে জলপ্রপ্রাতের সৃষ্টি হয়।

উদাহরণ – হিমালয় পর্বতের বদ্রীনাথের নিকট কুবের পর্বতশৃঙ্গের কাছে এরূপ ঝুলন্ত উপত্যকা দেখা যায়।

ফিয়র্ড –

সমুদ্র উপকূল-সংলগ্ন অঞ্চলে হিমবাহ উপত্যকা ক্রমশ ক্ষয়কার্যের ফলে গভীর হতে হতে যদি উপকূলে নিমজ্জিত হয় তাহলে ওই উপত্যকার বিস্তীর্ণ অংশ জলমগ্ন হয়ে যে হ্রদের সৃষ্টি হয় তার নাম ফিয়র্ড। এই ধরনের হ্রদ নরওয়ে ও ফিনল্যান্ডে দেখতে পাওয়া যায়।

রসে মতানে –

হিমবাহের গতিপথে শিলাখণ্ড ঢিপির আকারে উঁচু হয়ে থাকলে, ক্ষয়কার্যের ফলে হিমবাহের প্রবাহের দিকে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় শিলাখণ্ডটি মসৃণ এবং বিপরীত দিকে উৎপাটন প্রক্রিয়ায় এবড়োখেবড়ো বা অসমতল হয়। এই ধরনের ঢিপির নাম রসে মতানে।

রসে মতানে

ক্র্যাগ অ্যান্ড টেল –

হিমবাহের গতিপথে কঠিন ও কোমল শিলা পরপর থাকলে অনেক সময় কঠিন শিলা কোমল শিলাকে হিমবাহের ক্ষয়কার্য থেকে কিছুটা রক্ষা করে। কোমল শিলা গঠিত অংশ তখন কঠিন শিলার পিছনে লেজের মতো বিস্তৃত থাকে, একে বলা হয় ক্র্যাগ অ্যান্ড টেল।

ক্র্যাগ অ্যান্ড টেল

হোয়েল ব্যাক –

হিমবাহের ক্ষয়ের ফলে হিমবাহের গতিপথে অবস্থিত কোনো সমসত্ত্ব শিলার দুই দিক মসৃণ হয়ে যে দুই দিক খাড়া ঢালবিশিষ্ট ঢিপির সৃষ্টি হয়, তাকে বলা হয় হোয়েল ব্যাক বা তিমি-পৃষ্ঠ ভূভাগ।

কর্তিত স্পার –

পার্বত্য উপত্যকা দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় হিমবাহ উপত্যকার দুই পাশের পর্বত শৃঙ্গের পাদদেশীয় বা প্রসারিত অংশগুলিকে ক্ষয় করে এগিয়ে যেতে থাকে। এর ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত ও প্রসারিত পার্বত্য অংশগুলি ত্রিভুজাকৃতির যে শৈলশিরার সৃষ্টি করে, সেগুলিকে বলে কর্তিত স্পার।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

করি বা সার্ক কী?

হিমবাহের অবঘর্ষ ও উৎপাটন প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট গ্রিক অ্যাম্পিথিয়েটারের মতো ভূমিরূপকে স্কটল্যান্ডে করি এবং ফ্রান্সে সার্ক বলা হয়।

এরিটি কীভাবে তৈরি হয়?

একই পর্বতশৃঙ্গের দুই পাশে দুটি করির আয়তন বাড়তে থাকলে মধ্যবর্তী সংকীর্ণ ও খাড়া শিরা তৈরি হয়, যা এরিটি নামে পরিচিত।

U-আকৃতির উপত্যকা কী?

হিমবাহের পার্শ্বক্ষয় ও নিম্নক্ষয় সমানভাবে হওয়ায় সৃষ্ট প্রশস্ত উপত্যকা U-আকৃতির হয়।

ফিয়র্ড কোথায় পাওয়া যায়?

ফিয়র্ড মূলত নরওয়ে ও ফিনল্যান্ডের সমুদ্র উপকূল সংলগ্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়।

কর্তিত স্পার কীভাবে সৃষ্টি হয়?

হিমবাহ উপত্যকার দুই পাশের প্রসারিত অংশগুলির ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ত্রিভুজাকৃতির শৈলশিরা তৈরি হয়, যাকে কর্তিত স্পার বলা হয়।

আরও পড়ুন – জলবায়ুর পরিবর্তন কীভাবে লোহাচড়া, ঘোড়ামারা বা নিউমুর দ্বীপকে প্রভাবিত করছে?

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

“হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের বর্ণনা দাও” তে 2 টি মতামত

  1. অঙ্কুশ এভাটার
    অঙ্কুশ

    দারুণ

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer