আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার পঞ্চম পাঠের প্রথম অংশ, ‘অভিষেক,’ থেকে কিছু ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

“কনক-আসন ত্যজি, বীরেন্দ্রকেশরী/ইন্দ্রজিৎ,” – ইন্দ্রজিৎ কোথায় ছিলেন? তিনি কেন কনক আসন ত্যাগ করলেন?
ইন্দ্রজিতের অবস্থান — ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে উল্লেখিত, লঙ্কার প্রমোদ উদ্যানে বিলাসব্যসনে মত্ত ছিলেন ইন্দ্রজিৎ।
কনক-আসন ত্যাগের কারণ — লঙ্কার প্রমোদ উদ্যানে প্রমীলার সঙ্গে বিলাসব্যসনে মত্ত ছিলেন ইন্দ্রজিৎ। ঠিক তখনই হঠাৎ ধাত্রী প্রভাষার ছদ্মবেশে লক্ষ্মী সেখানে উপস্থিত হন। বীরচূড়ামণি বীরবাহু যুদ্ধে নিহত হয়েছেন — এই সংবাদ দিতে ছদ্মবেশী লক্ষ্মী প্রমোদকাননে আসেন। এমন সময়ে লক্ষ্মীর হঠাৎ উপস্থিতি ইন্দ্রজিৎকে অপ্রস্তুত করে তোলে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ধাত্রীর চরণে প্রণাম জানানোর উদ্দেশ্যে সোনার আসন ত্যাগ করেন।
“কহ দাসে লঙ্কার কুশল।” – বক্তা কে? বক্তার এমন জিজ্ঞাসার কারণ কী?
বক্তা — ‘অভিষেক’ কাব্যাংশ থেকে গৃহীত আলোচ্য অংশটির বক্তা ইন্দ্রজিৎ।
আলোচ্য উক্তির কারণ — ইন্দ্রজিৎ যখন প্রমোদকাননে অবসর কাটাচ্ছিলেন, তখন হঠাৎই তাঁর সামনে ছদ্মবেশী লক্ষ্মী উপস্থিত হন। সেই সময়ে ধাত্রীর আগমন ইন্দ্রজিতের কাছে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল। এই অপ্রত্যাশিত আগমনের কারণেই ইন্দ্রজিতের মনে আশঙ্কা জন্ম নেয় যে, স্বর্ণলঙ্কায় কোনো বিপদ হয়তো ঘটেছে। কারণ, কোনো বিপদ না ঘটলে ধাত্রীমাতার এই আচমকা আগমন ঘটত না। কৌতূহলী ও উদ্বিগ্ন ইন্দ্রজিৎ তাই ধাত্রীর চরণে প্রণাম জানিয়ে লঙ্কার কুশল জিজ্ঞাসা করেন।
“হায়! পুত্র, কি আর কহিব/কনক-লঙ্কার দশা!” – বক্তা কে? বক্তার এই আক্ষেপের কারণ কী?
বক্তা – উল্লিখিত অংশের বক্তা ইন্দ্রজিতের ধাত্রীমাতা প্রভাষার ছদ্মবেশে আসা দেবী লক্ষ্মী।
বক্তার আক্ষেপের কারণ – প্রভাষার ছদ্মবেশে এসে দেবী লক্ষ্মী শুনিয়েছিলেন স্বর্ণলঙ্কার করুণ পরিণতির কথা। রামচন্দ্রের সঙ্গে তীব্র যুদ্ধে মারা গেছেন মেঘনাদের ছোট ভাই বীরবাহু। পুত্রশোকে আকুল হয়ে রাজা রাবণ স্বয়ং যুদ্ধযাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। লঙ্কার এমনই দুর্ভাগ্য যে, স্বয়ং রাজাকে যুদ্ধযাত্রা করতে হচ্ছে। লঙ্কার এই দুরবস্থায় দেবী লক্ষ্মী বিচলিত। তাই তাঁর কণ্ঠস্বরে আক্ষেপের সুর ফুটে উঠেছে।
“জিজ্ঞাসিলা মহাবাহু বিস্ময় মানিয়া;” – কাকে ‘মহাবাহু’ বলা হয়েছে? তার বিস্ময়ের কারণ কী?
‘মহাবাহু’-র পরিচয় – আলোচ্য অংশে রাবণপুত্র ইন্দ্রজিৎকে ‘মহাবাহু’ বলা হয়েছে।
বিস্ময়ের কারণ – প্রমোদকাননে এসে দেবী লক্ষ্মী ইন্দ্রজিৎকে বীরবাহুর মৃত্যসংবাদ জানান। কিন্তু ইন্দ্রজিতের কাছে রামের হাতে বীরবাহুর এই মৃত্যুর ঘটনা ছিল চূড়ান্ত অবিশ্বাস্য, কারণ এর আগেই রাত্রিকালীন যুদ্ধে ইন্দ্রজিৎ রামচন্দ্রকে বধ করেছেন। তাই রামচন্দ্রের দ্বারা বীরবাহুর নিহত হওয়ার সংবাদ তাঁর কাছে অপ্রত্যাশিত এবং অবিশ্বাস্য। সেকারণেই লক্ষ্মীর কথা তাঁর ‘অদ্ভুত’ লেগেছে এবং তিনি বিস্মিত হয়েছেন।
“এ অদ্ভুত বারতা, জননী/কোথায় পাইলে তুমি, শীঘ্র কহ দাসে।” – কোন্ বার্তার কথা বলা হয়েছে? বক্তার কাছে সেই বার্তা অদ্ভুত মনে হয়েছে কেন?
বক্তা – ‘অভিষেক’ কাব্যাংশ থেকে গৃহীত আলোচ্য অংশে বীরচূড়ামণি বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদের কথা বলা হয়েছে।
বার্তা কেন অদ্ভুত – ইতিপূর্বে ইন্দ্রজিৎ রাত্রিকালীন যুদ্ধে রামচন্দ্রকে হত্যা করেছেন। শত্রুশিবিরে প্রচণ্ড শরনিক্ষেপ করে তিনি রামচন্দ্রকে টুকরো টুকরো করেছিলেন। অথচ তারপর, ধাত্রীরূপী লক্ষ্মী সেই রামচন্দ্রের হাতে বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ শুনিয়েছেন ইন্দ্রজিতকে। মৃত রামচন্দ্রের পক্ষে পুনর্জীবিত হয়ে বীরবাহুকে হত্যা করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এই কারণেই বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ ইন্দ্রজিতের কাছে ‘অদ্ভুত’ মনে হয়েছে।
“ছিঁড়িলা কুসুমদাম রোষে মহাবলী” – ‘মহাবলী’ কে? এই রোষ -এর প্রকাশ কীভাবে ঘটেছিল লেখো।
মহাবলীর পরিচয় – এখানে ‘মহাবলী’ বলতে রাক্ষসরাজ ইন্দ্রজিৎকে বোঝানো হয়েছে, যিনি রাবণের পুত্র এবং রাক্ষসকুলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা।
মহাবলীর রোষের প্রকাশ – রামচন্দ্র পুনর্জীবন লাভ করে ইন্দ্রজিতের ভাই বীরবাহুকে বধ করেছেন, ফলে পিতা রাবণের এরূপ শোকাকুল অবস্থার সময় তিনি প্রমোদবিলাসে মত্ত-এই কথা মনে করে মেঘনাদ নিজেকে ধিক্কার দিয়েছেন। হাতের ফুলরাশি ছিঁড়ে ফেলেছেন, সোনার বালা দূরে ফেলে দিয়েছেন, পায়ের কাছে পড়ে রয়েছে কুণ্ডল। এভাবে ক্রোধের মধ্য দিয়ে ইন্দ্রজিৎ রাক্ষসকুলের অপবাদ দূর করার জন্য শপথ গ্রহণ করেন।
“‘ধিক্ মোরে’, কহিলা গম্ভীরে/কুমার,” – ‘কুমার’ কে? তাঁর এই আত্মধিক্কারের কারণ কী?
‘কুমার’-এর পরিচয় — আলোচ্য পঙ্ক্তিতে ‘কুমার’ বলতে ইন্দ্রজিৎকে বোঝানো হয়েছে।
“কুমার’-এর আত্মধিক্কারের কারণ — বীরশ্রেষ্ঠ ইন্দ্রজিৎ লঙ্কার প্রমোদকাননে বিলাসব্যসনে মত্ত ছিলেন। এই সুযোগে রামচন্দ্র বীরবাহুকে যুদ্ধক্ষেত্রে হত্যা করেন। শত্রুসৈন্য যখন লঙ্কাকে ঘিরে ফেলেছে, তখন তিনি বিলাসিতায় সময় কাটাচ্ছিলেন — এই চিন্তা থেকেই ইন্দ্রজিৎ নিজেকে ধিক্কার দিয়েছেন। তীব্র অনুশোচনার কারণে লঙ্কার এই দুর্দশার জন্য নিজেকে দায়ী করে ইন্দ্রজিৎ আত্মধিক্কার করেন।
“ঘুচাব ও অপবাদ, বধি রিপুকুলে।” — কোন্ অপবাদের কথা এখানে বলা হয়েছে? সেই অপবাদ ঘোচাতে বক্তা কীরূপ প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?
অপবাদের পরিচয় – শত্রুদল লঙ্কাপুরীকে ঘিরে ফেলেছে, অথচ ইন্দ্রজিৎ প্রমোদ উদ্যানে সুখবিলাসে মত্ত। নিজের এই আচরণকেই তিনি লঙ্কার রাজবংশের জন্য অপবাদ মনে করেছেন।
অপবাদ ঘোচাতে বক্তার প্রস্তুতি – বীরশ্রেষ্ঠ ইন্দ্রজিৎ লঙ্কার প্রমোদকাননে বিলাসে মত্ত ছিলেন। এই সুযোগে রামচন্দ্র বীরবাহুকে হত্যা করেন। বীর হয়েও যুদ্ধক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকার কারণে ইন্দ্রজিতের বীরত্বে অপবাদের দাগ লাগে। এই অপবাদ দূর করার জন্য এবং প্রতিশোধ নিতে ইন্দ্রজিৎ যুদ্ধসাজে সজ্জিত হয়েছেন। মেঘবর্ণ রথ, যার চাকায় বিদ্যুতের ছটা; ইন্দ্রধনুর মতো স্বর্ণপ্রভ রাক্ষস পতাকা এবং অশ্ববাহিনী নিয়ে ইন্দ্রজিৎ যুদ্ধযাত্রার প্রস্তুতি নিয়েছেন।
“সাজিলা রথীন্দ্রর্ষভ বীর-আভরণে,” – ‘রথীন্দ্রর্ষভ’ কথাটির অর্থ কী? এই সেজে ওঠার বর্ণনা দাও।
‘রথীন্দ্রর্শভ’ কথাটির অর্থ – ‘রথীন্দ্রর্শভ’ শব্দটিকে ভেঙে পাওয়া যায়, রথীন্দ্র ঋষভের মতো। এক কথায়, যার অর্থ বীরশ্রেষ্ঠ।
ইন্দ্রজিতের যুদ্ধসাজের বর্ণনা – ইন্দ্রজিতের যুদ্ধসজ্জার প্রস্তুতিকে কবি তুলনা করেছেন দেবসেনাপতি কার্তিকের তারকাসুর বধকালের কিংবা বৃহন্নলারূপী অর্জুনের গোধন উদ্ধারের জন্য কৌরবদের বিরুদ্ধে প্রস্তুতির সঙ্গে। ইন্দ্রজিতের রথ ছিল মেঘবর্ণ, চক্রে ছিল বিজলির ঝলক, ধ্বজ ছিল ইন্দ্রধনুর মতো, আর অশ্বেরা ছিল অত্যন্ত দ্রুতগতি। সেই রথের গতিশীলতা ছিল যেন মৈনাক পর্বতের মতো। ইন্দ্রজিতের ধনুকের টংকারে সারা পৃথিবী কেঁপে উঠেছিল।
“কহিলা কাঁদিয়া ধনি” – ‘ধনি’ কে? সে কেঁদে কী বলেছিল?
‘ধনী’-র পরিচয় – উল্লিখিত অংশে ‘ধনি’ বলতে ইন্দ্রজিতের স্ত্রী প্রমীলাকে বোঝানো হয়েছে।
‘ধনী‘-র বক্তব্য – যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত স্বামী ইন্দ্রজিতের কাছে প্রমীলা জানতে চেয়েছিল, তাকে ফেলে রেখে ইন্দ্রজিৎ কোথায় চলেছেন। ইন্দ্রজিতের বিরহে তার পক্ষে বাঁচা সম্ভব নয়, তাও প্রমীলা জানায়। হাতির উপমা ব্যবহার করে প্রমীলা বলে, গভীর অরণ্যে কোনো লতা যদি হাতির পা-কে বেষ্টন করে, তবে হাতি তার প্রতি মনোযোগী না হলেও সেই লতাকে ফেলে দেয় না। তাহলে কীভাবে দাসী প্রমীলাকে ইন্দ্রজিৎ ত্যাগ করে যাচ্ছেন—এই প্রশ্নই প্রমীলা ইন্দ্রজিৎকে করে।
“কেমনে ধরিবে প্রাণ তোমার বিরহে/এ অভাগী?” – বক্তা কে? কোন্ প্রসঙ্গে বক্তা এ কথা বলেছেন?
বক্তা – ‘অভিষেক’ পদ্যাংশ থেকে গৃহীত এই উদ্ধৃতিটির বক্তা হলেন ইন্দ্রজিতের পত্নী প্রমীলা।
প্রসঙ্গ – বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদে ইন্দ্রজিৎ ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। প্রতিশোধ নিতে তিনি যুদ্ধযাত্রার জন্য প্রস্তুত হন। এই সময় প্রমীলা তাঁর পথ রোধ করে দাঁড়ান। স্বামীকে ছেড়ে লঙ্কার এই দুর্দশার দিনে তাঁর পক্ষে একা বেঁচে থাকা সম্ভব নয় – এই প্রসঙ্গেই প্রমীলা সেই কথা জানিয়ে দেন।
“হাসি উত্তরিলা/মেঘনাদ,” – মেঘনাদ কী উত্তর দিয়েছিলেন? তাঁর হাসির কারণ কী?
মেঘনাদের উত্তর – বীরবাহুর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে ইন্দ্রজিৎ যখন যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন, প্রমীলা তাঁকে যুদ্ধে যেতে নিষেধ করেন। কারণ, যুদ্ধক্ষেত্রে গেলে তাঁর ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম। এর উত্তরে ইন্দ্রজিৎ বলেন, প্রমীলার ভালোবাসার দৃঢ় বন্ধন, যেটাতে তিনি তাঁকে আবদ্ধ করেছেন, তা কেউ খুলতে পারবে না। প্রমীলার আশীর্বাদেই তিনি যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে অক্ষত শরীরে ফিরে আসবেন।
মেঘনাদের হাসির কারণ – ইন্দ্রজিৎ হাসির মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন যে প্রমীলার আশঙ্কা অমূলক। তিনি ত্রিভুবনজয়ী বীর, তাই সামান্য মানব রামচন্দ্রের সঙ্গে যুদ্ধ করা তাঁর জন্য মোটেই কঠিন কিছু নয়।
“বিদায় এবে দেহ, বিধুমুখী।” – ‘বিধুমুখী’ কে? তার কাছে কেন বিদায় চাওয়া হয়েছে?
‘বিধুমুখী’-র পরিচয় – চাঁদের মতো সুন্দরী স্ত্রীকে ইন্দ্রজিৎ ‘বিধুমুখী’ বলে সম্বোধন করেছেন।
বিদায় চাওয়ার কারণ – ছোটো ভাই বীরবাহু রামচন্দ্রের হাতে যুদ্ধে নিহত হয়েছে এবং তার শোকে পিতা রাবণ যুদ্ধসজ্জা করছেন। এ কথা শুনে ইন্দ্রজিৎ যুদ্ধযাত্রার উদ্যোগ নেন। এই সময় প্রমীলা তাঁকে যুদ্ধে যেতে বাধা দিলে ইন্দ্রজিৎ তাঁকে বলেন যে রামচন্দ্রকে বধ করে তিনি লঙ্কায় দ্রুত ফিরে আসবেন। এর জন্যই তিনি প্রমীলার কাছে বিদায়ের অনুমতি প্রার্থনা করেন।
“কাঁপিলা লঙ্কা, কাঁপিলা জলধি!” – এই পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট আলোচনা করো।
উদ্ধৃত উক্তির প্রেক্ষাপট – অনুজ বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ শুনে মেঘনাদ যুদ্ধযাত্রার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। তাঁর রথের চলা যেন সোনার পাখা বিস্তার করা মৈনাক পর্বতের মতো, আকাশকে উজ্জ্বল করে বায়ুপথে প্রবল শব্দে চলতে থাকে। ধনুকের ছিলায় টান দিতেই টংকারধ্বনি ওঠে, যা অনেকটা মেঘের মধ্যে পক্ষীরাজ গরুড়ের চিৎকারের মতো আওয়াজ করে। সেই ধনুকের টংকারে লঙ্কা ও সমুদ্র কেঁপে ওঠে।
“সাজিছে রাবণ রাজা,” – রাবণের এই যুদ্ধসজ্জার বর্ণনা দাও।
রাবণের যুদ্ধসজ্জা – পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ পেয়ে শোক কাটিয়ে রাবণ যুদ্ধসজ্জার প্রস্তুতি এবং প্রতিশোধের প্রতিজ্ঞা নেন। যুদ্ধের সূচনা বোঝাতে বাজনা বেজে ওঠে। সেই সঙ্গে হাতিরা গর্জন করে, অশ্বেরা হ্রেষাধ্বনি করে, পদাতিক, রথী ইত্যাদি রাবণের সেনাবাহিনীও যুদ্ধের উত্তেজনায় হুংকারধ্বনি করে। রেশমবস্ত্রের রাজপতাকা আকাশে উড়তে থাকে, তার সঙ্গে দীপ্তি ছড়ায় স্বর্ণবর্মের আভা। সব মিলিয়ে রাবণের যুদ্ধসজ্জার কারণে চারিদিকে এক বীরভাবের পরিবেশ তৈরি হয়।
“নাদিলা কর্বূরদল হেরি বীরবরে/মহাগর্বে।” – কাদের ‘কর্বূরদল’ বলা হয়েছে? বীরবরকে দেখে তাদের গর্বের কারণ কী?
‘কর্বূরদল’-এর পরিচয় – লঙ্কার রাক্ষসবাহিনীকে ‘কর্বূরদল’ বলা হয়েছে।
কর্বূরদলের গর্বের কারণ – পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে লঙ্কেশ্বর রাবণ যুদ্ধের সাজে সেজেছেন। তাঁর সৈন্যবাহিনীও যুদ্ধের উন্মাদনায় মেতে উঠেছে। সেই সময় সহোদর বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ শুনে ইন্দ্রজিৎ সেখানে আসেন। ইন্দ্রজিৎকে দেখে সৈন্যরা উল্লসিত হয়। কারণ ইন্দ্রজিতের রণকৌশল এবং বীরত্ব সম্পর্কে তারা অবহিত। স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্রকে তিনি পরাজিত করেছেন। লঙ্কার শ্রেষ্ঠতম যোদ্ধা তিনি। তাই তাঁকে পেয়ে রাক্ষসবাহিনী ভরসা পেয়েছে এবং উৎসাহ ও গর্ববোধ করেছে।
“এ মায়া, পিতঃ, বুঝিতে না পারি!” – বক্তা কে? কোন্ মায়া সে বুঝতে পারছে না?
বক্তা – আলোচ্য উদ্ধৃতিটির বক্তা হলেন রাবণপুত্র ইন্দ্রজিৎ।
‘মায়া’-র স্বরূপ – রামচন্দ্রের হাতে বীরবাহুর মৃত্যু – এই সংবাদ ইন্দ্রজিতের কাছে ছিল অবিশ্বাস্য। কারণ এর আগেই রাত্রিকালীন যুদ্ধে তিনি রামচন্দ্রকে বধ করেছিলেন। মৃত্যুর পরে রামচন্দ্রের এই পুনর্জীবন ইন্দ্রজিতের কাছে ছিল স্বাভাবিক বুদ্ধির অতীত। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, দৈব সাহায্য ছাড়া এই অসম্ভব ঘটনা সম্ভব নয়। এর মধ্যে সম্ভবত রামচন্দ্রের প্রতি মায়াদেবীর যে আশীর্বাদ রয়েছে, সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
“এ কাল সমরে,/নাহি চাহে প্রাণ মম পাঠাইতে তোমা/বারম্বার।” – ‘কাল সমরে’ বলতে বক্তা কী বুঝিয়েছেন? সেখানে ইন্দ্রজিৎকে পাঠাতে বক্তা দ্বিধাগ্রস্ত কেন?
‘কাল সমরে’-র অর্থ – কাল সমরে বলতে ভয়ংকর প্রাণঘাতী যুদ্ধকে বোঝানো হয়েছে, যে যুদ্ধে ইন্দ্রজিতের প্রতিপক্ষ হলেন রামচন্দ্র।
বক্তার দ্বিধার কারণ – বীরবাহুর মৃত্যুর পরে ইন্দ্রজিৎই ছিলেন ‘রাক্ষস-কুল-ভরসা’। তাঁকে বাদ দিলে লঙ্কা একেবারেই বীরশূন্য। তা ছাড়া বিধিও রাবণের প্রতি বিরূপ। তা না হলে মৃত্যুর পরেও রামচন্দ্র। পুনর্জীবন লাভ করতে পারেন না। তাই লঙ্কেশ্বর রাবণ চারদিকের এই প্রতিকূলতার মধ্যে তাঁর একমাত্র জীবিত পুত্র ইন্দ্রজিৎকে যুদ্ধে পাঠাতে দ্বিধাবোধ করছিলেন।
“হায়, বিধি বাম মম প্রতি।” – বক্তা কে? তিনি এমন কথা বলেছেন কেন?
বক্তার পরিচয় – আলোচ্য উদ্ধৃতাংশটির বক্তা লঙ্কারাজ রাবণ।
আলোচ্য বক্তব্যের কারণ – ভাই বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদে বিচলিত ইন্দ্রজিৎ রাবণের কাছে আসেন এবং রামচন্দ্রকে ‘সমূলে নির্মূল’ করার জন্য অনুমতি চান। পুত্রশোকে কাতর রাবণ নতুন করে পুত্রশোকের সামনে দাঁড়াতে চান না বলেই এ বিষয়ে নিজের অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। – “এ কাল সমরে,/নাহি চাহে প্রাণ মম পাঠাইতে তোমা/বারম্বার।” ইন্দ্রজিতের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত রামচন্দ্রের পুনর্জীবন লাভ তাঁকে হতাশ করে। সব কিছুর মধ্যে তিনি নিয়তির বিরূপতাকেই লক্ষ করেন।
“এ কলঙ্ক, পিতঃ, ঘুষিবে জগতে।” – বক্তার এই মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
লঙ্কার রাজপ্রাসাদে রামচন্দ্রের আক্রমণ এবং বীরবাহুর মৃত্যু ইত্যাদি ঘটনায় রাক্ষস রাজবংশের মর্যাদার হানি হয়েছে বলে ইন্দ্রজিৎ মনে করেন। তিনি নিজেই রামচন্দ্রের সঙ্গে যুদ্ধে সেনাপতির দায়িত্ব নিতে চান। আগে দুইবার রামচন্দ্রকে পরাজিত করেছিলেন, এবার তৃতীয়বারের মতো পরাজিত করার জন্য তিনি রাবণের অনুমতি চান। নিয়তির বিরূপতার কথা উল্লেখ করে রাবণ কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হলে ইন্দ্রজিৎ বলেন, তিনি জীবিত থাকতে পিতা রাবণ যদি যুদ্ধে যান, তবে তা লঙ্কার জন্য এক কলঙ্ক হয়ে দাঁড়াবে এবং পৃথিবীতে তা প্রচারিত হবে।
“হাসিবে মেঘবাহন।” — মেঘবাহন কে? সে হাসবে কেন?
মেঘবাহনের পরিচয় – ‘মেঘবাহন’ হলেন দেবরাজ ইন্দ্র।
মেঘবাহনের হাসির কারণ – ইন্দ্রজিৎ একবার যুদ্ধে ইন্দ্রকে পরাজিত করেছিলেন। সেই ইন্দ্রজিৎ বেঁচে থাকতে বীরবাহুর হত্যার প্রতিশোধ নিতে রাবণ যদি যুদ্ধে যান, তবে তা ইন্দ্রজিতের ভীরুতাকেই প্রতিষ্ঠিত করবে। রাবণ একের পর এক প্রিয়জনকে হারানোর কারণে ভীত হয়ে ইন্দ্রজিৎকে যুদ্ধে আর পাঠাতে চান না। অন্যদিকে, ইন্দ্রজিৎ মনে করেন যে তিনি থাকা সত্ত্বেও পিতা রাবণ যুদ্ধে গেলে তাঁর কাপুরুষতাই প্রতিষ্ঠা পাবে। আর সেই কারণেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইন্দ্র ব্যঙ্গের হাসি হাসবে।
“দেখিব এবার বীর বাঁচে কি ঔষধে!” – ‘এবার’ শব্দটি ব্যবহারের তাৎপর্য কী? বক্তার এমন আত্মবিশ্বাসের কারণই বা কী?
‘এবার’ শব্দ ব্যবহারের তাৎপর্য – ইতিপূর্বে ইন্দ্রজিৎ দু-বার রামচন্দ্রকে যুদ্ধে হারিয়েছেন। ‘এবার’ বলতে তৃতীয়বারের যুদ্ধের অর্থাৎ বীরবাহুর মৃত্যুর প্রতিশোধ গ্রহণের যুদ্ধের কথা বলেছেন।
বক্তার আত্মবিশ্বাসের কারণ – দ্বিতীয়বার যুদ্ধে ইন্দ্রজিৎ মেঘের আড়াল থেকে যুদ্ধ করে রামচন্দ্রকে বধ করেন। কিন্তু মায়াবলে রামচন্দ্র মৃত্যুর পরও বেঁচে উঠেছেন। ইন্দ্রজিৎ এ কথা জানেন তবুও তৃতীয়বারেও তিনি রামচন্দ্রকে বধ করবেন বলে বদ্ধপরিকর। তবুও রাবণ তাঁকে যুদ্ধে পাঠাতে দ্বিধা করেছেন। পুত্রশোকে কাতর পিতার দুর্বল মনে সাহসের সঞ্চার করতেই ইন্দ্রজিৎ নিজের আত্মবিশ্বাসকে তুলে ধরেছেন।
“তায় আমি জাগানু অকালে/ভয়ে;” – কে, কাকে জাগিয়েছিলেন? তাঁকে কেন জাগিয়ে তোলা হয়েছিল?
কর্তা ও কর্ম – লঙ্কার রাজা রাবণ তাঁর মধ্যম ভ্রাতা কুম্ভকর্ণকে জাগিয়েছিলেন।
জাগিয়ে তোলার কারণ – ব্রহ্মার বর অনুযায়ী কুম্ভকর্ণ ছয় মাস ঘুমাতেন এবং একদিনের জন্য জাগতেন। জাগার দিন তিনি প্রচুর পরিমাণে খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করতেন। কুম্ভকর্ণ ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী। মেঘনাদবধ কাব্য-এ তাঁকে ‘শূলিশম্ভুনিভ’ বলা হয়েছে। রামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রয়োজনের কারণে রাবণ অনুচর পাঠিয়ে কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙান। প্রবল প্রতিপক্ষকে ভয় পাওয়ার কারণেই কুম্ভকর্ণকে জাগানোর প্রয়োজন হয়েছিল।
“আগে পূজ ইষ্টদেবে,” – ‘ইষ্টদেব’ কে? তাঁকে পুজো করার কথা বলা হয়েছে কেন?
ইষ্টদেবের পরিচয় – ইন্দ্রজিতের ইষ্টদেব হলেন বিভাবসু বা অগ্নিদেব।
ইষ্টদেবকে পুজো করার কারণ – ইন্দ্রজিৎ ব্রহ্মার কাছ থেকে বর পেয়েছিলেন যে, অগ্নির উপাসনা সমাপ্ত করে যুদ্ধযাত্রা করলে তিনি অজেয় থাকবেন। তাই রাবণ মনে করেন ইষ্টদেবকে সন্তুষ্ট করতে পারলে যুদ্ধে জয়লাভ করা সম্ভব হবে। ভ্রাতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে ইন্দ্রজিৎ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। মেঘনাদ যখন যুদ্ধে যাবেনই, তখন ইষ্টদেবের পুজো করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। রাবণ বিশ্বাস করেন, এর ফলে ইন্দ্রজিতের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকবে না।
“এতেক কহিয়া রাজা, যথাবিধি লয়ে/গঙ্গোদক, অভিষেক করিলা কুমারে।” – রাজা ও ‘কুমার’ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে? রাজা অভিষেকের আগে কুমারকে কী আদেশ দিয়েছিলেন?
রাজা ও কুমারের পরিচয় – উল্লিখিত অংশে ‘রাজা’ বলতে লঙ্কাধিপতি রাবণ এবং ‘কুমার’ বলতে রাবণপুত্র ইন্দ্রজিৎকে বোঝানো হয়েছে।
অভিষেকের আগে কুমারকে দেওয়া আদেশ – রাবণ গঙ্গাজলের সাহায্যে ইন্দ্রজিতের অভিষেকের আগে তাকে সেনাপতি পদে বরণের ঘোষণা করেন। তবে সেই সঙ্গে তিনি নির্দেশ দেন যে, যুদ্ধযাত্রার আগে ইন্দ্রজিৎ যেন ইষ্টদেবতা অগ্নির পূজা করেন এবং নিকুম্ভিলা যজ্ঞ সম্পন্ন করেন। এর পর প্রভাতে সূর্যোদয়ের সময় ইন্দ্রজিৎ যেন যুদ্ধযাত্রা করেন। পুত্র ইন্দ্রজিৎকে অভিষেকের আগে রাবণ এই আদেশই দিয়েছিলেন।
আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার পঞ্চম পাঠের প্রথম অংশ ‘অভিষেক’ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মাধ্যমিক পরীক্ষায় এ ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই আসে। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা সমস্যা থাকে, তাহলে নির্দ্বিধায় টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। এছাড়াও, নিচের শেয়ার বাটনটি ব্যবহার করে আপনার প্রিয়জনদের সাথে এই পোস্টটি শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন