দশম শ্রেণি – বাংলা – অভিষেক – বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

Gopi

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা এই কবিতাটি রাবণের পুত্র ইন্দ্রজিতের অভিষেক অনুষ্ঠানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রচিত। কবিতাটিতে ইন্দ্রজিতের দেশপ্রেম, কর্তব্যবোধ, বীরত্ব এবং তেজস্বীতার পরিচয় পাওয়া যায়।

Table of Contents

দশম শ্রেণি – বাংলা – অভিষেক – বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

কি হেতু, মাতঃ, গতি তব আজি/এ ভবনে? – কে, কাকে উদ্দেশ্য করে কখন মন্তব্যটি করেছিলেন? এর কোন্ উত্তর তিনি পেয়েছিলেন?

বক্তা এবং উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – মেঘনাদবধ কাব্য-র প্রথম সর্গ থেকে সংকলিত ‘অভিষেক’ শীর্ষক কবিতায় রাবণপুত্র ইন্দ্রজিৎ প্রভাষা রাক্ষসীর ছদ্মবেশে আসা দেবী লক্ষ্মীকে উদ্দেশ্য করে মন্তব্যটি করেছেন।

মন্তব্যকাল – বীরবাহু লঙ্কার প্রমোদ উদ্যানে যখন অবসর কাটাচ্ছিলেন সেই সময় রামচন্দ্র বীরবাহুকে হত্যা করেন। এই দুঃসংবাদ ইন্দ্রজিতের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই প্রভাষার ছদ্মবেশে ইন্দ্রজিতের কাছে আসেন দেবী লক্ষ্মী। এই সময়েই প্রমোদ উদ্যানে ধাত্রীমাতার আসার কারণ জানতে চেয়েছিলেন ইন্দ্রজিৎ।

প্রত্যুত্তর – দেবী লক্ষ্মী ইন্দ্রজিৎকে লঙ্কার বর্তমান অবস্থার কথা জানান। ইন্দ্রজিতের অনুপস্থিতিতে লঙ্কার উপর ঘনিয়ে এসেছে ঘোর বিপদ। রামচন্দ্রের সাথে ভয়ংকর যুদ্ধে নিহত হয়েছেন ইন্দ্রজিতের অনুজ বীরবাহু। রাক্ষসরাজ রাবণ প্রিয় পুত্রের মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত। পুত্রের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে তিনি স্বয়ং যুদ্ধযাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ কথা শুনে বিস্মিত ইন্দ্রজিৎ জানতে চান রামচন্দ্র কীভাবে পুনর্জীবিত হয়ে উঠলেন। ‘মায়াবী মানব’ রামের ছলনার কথা বলে লক্ষ্মী তাঁকে শীঘ্রই যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে অনুরোধ করেন।

এ অদ্ভুত বারতা, জননি/কোথায় পাইলে তুমি, – কোন্ বার্তাকে কেন অদ্ভুত বলা হয়েছে? এই বার্তার পিছনে উদ্দেশ্য কী ছিল?

বার্তা – মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে প্রভাষা রাক্ষসীর ছদ্মবেশ ধারণ করে দেবী লক্ষ্মী প্রমোদকাননে এসে ইন্দ্রজিতকে রামচন্দ্রের দ্বারা বীরবাহুর নিহত হওয়ার সংবাদ জানান। এই দুঃসংবাদকেই ইন্দ্রজিৎ ‘অদ্ভুত’ বলে অভিহিত করেছেন।

  • অদ্ভুত বলার কারণ – ইন্দ্রজিতের কাছে রামচন্দ্রের হাতে বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ ছিল এক বিস্ময়কর ঘটনা। কারণ, এর আগে দু-বার রামচন্দ্র তাঁর কাছে পরাজিত হয়েছেন। কিছুক্ষণ আগেই রাত্রিকালীন যুদ্ধে তিনি রামচন্দ্রকে বধ করেছেন। তির ছুঁড়ে রামচন্দ্রকে হত্যার পরেও কীভাবে সেই রামচন্দ্রই বেঁচে উঠে বীরবাহুকে হত্যা করেছিলেন, তা ইন্দ্রজিতের কাছে খুবই বিস্ময়ের মনে হয়েছে। তাই এই ঘটনাকে তিনি ‘অদ্ভুত’ বলেছেন।

বার্তার পিছনে উদ্দেশ্য – লঙ্কার চরমতম দুর্দশার সময়ে লঙ্কার রাজলক্ষী ইন্দ্রজিৎকে লঙ্কায় ফেরত নিয়ে আসতে চান। নিয়তির বিধান কার্যকর করার জন্যই তাঁর এই উদ্যোগ। এই উদ্দেশ্য নিয়েই ধাত্রী প্রভাষার ছদ্মবেশে লক্ষ্মী প্রমোদ-উদ্যানে মেঘনাদের কাছে যান এবং তাঁকে বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ দেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল লঙ্কার দুর্দশা এবং ছোটো ভাই বীরবাহুর শোকে ইন্দ্রজিৎকে অস্থির করে তাঁকে লঙ্কায় আসতে বাধ্য করা।

ছিঁড়িলা কুসুমদাম রোষে মহাবলী – ‘মহাবলী’ কাকে বলা হয়েছে? তিনি কী কারণে রুষ্ট হয়েছিলেন? রোষে তিনি কী কী করলেন?

মহাবলী’র পরিচয় – মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ কাব্যাংশের প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে ‘মহাবলী’ বলতে রাবণপুত্র ইন্দ্রজিৎকে বোঝানো হয়েছে।

মহাবলীর রোষের কারণ – প্রভাষা রাক্ষসীর ছদ্মবেশ ধারণ করে এসে দেবী লক্ষ্মী ইন্দ্রজিৎকে তাঁর ভাই বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ জানিয়েছিলেন। একইসঙ্গে বলেছিলেন যে, লঙ্কার এই বিপদের সময় শোকগ্রস্ত রাজা রাবণ সৈন্য-সহ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রমোদকাননে বিলাসমত্ত ইন্দ্রজিতের পক্ষে এ কথা সহ্য করা সম্ভব ছিল না। নিজের বংশের এই দুর্দশা তাঁকে যতটা ক্ষুব্ধ করেছিল তার থেকে বেশি ক্ষোভ হয়েছিল তাঁর নিজের প্রতি। লঙ্কার বিপদের দিনে নিজের দায়িত্ব পালন না করতে পারাই ইন্দ্রজিতকে ক্ষুব্ধ ও রুষ্ট করে তোলে।

রুষ্ট ইন্দ্রজিতের আচরণ – নিজের ঔদাসীন্যে ক্রুদ্ধ হয়ে মেঘনাদ তাঁর ফুলের মালা ছিঁড়ে ফেলেন। হাতে থাকা সোনার বালা দূরে ছুঁড়ে দেন। তাঁর কুণ্ডল পায়ের কাছে পড়ে থাকে। নিজেকে ধিক্কার দিয়ে ইন্দ্রজিৎ বলেন যে, শত্রুসৈন্য যখন স্বর্ণলঙ্কা ঘিরে রেখেছে তখন তিনি রমণীসান্নিধ্যে রয়েছেন-এ দৃশ্য তাঁর মতো বীরকে মানায় না। তিনি রাবণের পুত্র। তাই শীঘ্র রথ আনার নির্দেশ দিয়ে ইন্দ্রজিৎ বলেন- ঘুচাব এ অপবাদ বধি রিপুকুলে। অর্থাৎ শত্রুকে বধ করেই ইন্দ্রজিৎ লঙ্কার তথা তাঁর নিজের কলঙ্ক দূর করার কথা বলেন।

এই কি সাজে আমারে, দশাননাত্মজ/আমি ইন্দ্রজিৎ? – কোন্ প্রসঙ্গে বক্তা কথাটি বলেছেন? উদ্ধৃত কথায় বক্তার চারিত্রিক কোন্ গুণের পরিচয় পাওয়া যায়?

প্রসঙ্গ – লঙ্কার প্রমোদ কাননে আগতা দেবী লক্ষ্মীর থেকে ইন্দ্রজিৎ জানতে পারেন যে রামচন্দ্রের সঙ্গে যুদ্ধে তাঁর ভাই বীরবাহুর মৃত্যু হয়েছে এবং শোকার্ত পিতা রাবণ যুদ্ধযাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রমোদ-উদ্যানে বিলাসমত্ত ইন্দ্রজিতের মনে এই ঘটনা গভীর ক্ষোভ ও অনুশোচনা তৈরি করে। যখন শত্রুসৈন্য লঙ্কাপুরীকে ঘিরে ফেলেছে সেই সময়ে তিনি বিলাসে সময় কাটাচ্ছেন-এটাই ছিল ইন্দ্রজিতের অনুশোচনার কারণ। রাজা রাবণের পুত্র হিসেবে তাঁকে যে এটা মানায় না তা ইন্দ্রজিৎ উপলব্ধি করেছিলেন।

বক্তার চারিত্রিক গুণাবলি – ইন্দ্রজিতের উপলব্ধি এবং আচরণের মধ্য দিয়ে তাঁর আদর্শবোধ এবং দায়বদ্ধতারই প্রকাশ ঘটে। নিজের কৃতকর্মের জন্য নিজেকে ধিক্কার জানাতে ইন্দ্রজিৎ দ্বিধা করেননি। আত্মসমালোচনার মধ্য দিয়ে ইন্দ্রজিৎ চরিত্রটিই মহান হয়ে উঠেছে। শত্রুসৈন্যদের বধ করে সমস্ত ‘অপবাদ’ দূর করতে চেয়েছেন ইন্দ্রজিৎ। বীরধর্মের পথে তাঁর এই যাত্রা। নিজেকে ‘দশাননাত্মজ’ অর্থাৎ রাবণের পুত্র বলার মধ্যে দিয়ে পিতার প্রতি এবং নিজের রাজবংশের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধারও প্রকাশ ঘটেছে।

ঘুচাব এ অপবাদ, বধি রিপুকুলে। – এখানে কোন্ অপবাদের কথা বলা হয়েছে? এই অপবাদ ঘোচানোর জন্য বক্তা কী প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?

উল্লিখিত অপবাদ – মেঘনাদবধ কাব্য-র প্রথম সর্গ ‘অভিষেক’-এ ইন্দ্রজিৎ যখন প্রমোদকাননে বিলাসে মত্ত তখনই লক্ষ্মী সেখানে আসেন এবং তাঁকে বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ দেন। ইন্দ্রজিতের মনে হয়, রাক্ষসবংশের গৌরবকে বিনষ্ট করে রামচন্দ্রের সৈন্যরা যখন লঙ্কাকে ঘিরে রয়েছে, তখন তাঁর এই বিলাসে সময় কাটানোর ঘটনা ধিক্কারজনক। উপরন্তু, তিনি লক্ষ্মীর মুখ থেকে এ-ও জানতে পারেন যে, তিনি প্রমোদকাননে মত্ত থাকায় তাঁর পিতা নিজে যুদ্ধের সাজে সাজছেন। তাঁর মতো উপযুক্ত এবং বীর পুত্র বেঁচে থাকতেও রাজা রাবণকেই যদি যুদ্ধযাত্রা করতে হয়, তবে তা খুবই অপমানের। রাবণের পুত্র হিসেবে তাঁর নিজের এই আচরণ ইন্দ্রজিৎ মেনে নিতে পারেননি। একে তিনি লঙ্কার রাজবংশের ‘অপবাদ’ বলে চিহ্নিত করেছেন।

অপবাদ ঘোচাতে বক্তার প্রস্তুতি – শত্রুসৈন্যদের বধ করে ইন্দ্রজিৎ এই অপবাদ দূর করতে উদ্যোগী হন। বীরের সাজে তিনি সেজে ওঠেন। মেঘবর্ণ রথ, চক্রে বিজলির দীপ্তি, ইন্দ্রধনুর ন্যায় উজ্জ্বল রথের পতাকা, দ্রুতগতির অশ্ববাহিনী-এইসব নিয়েই সেজে উঠেছিলেন ইন্দ্রজিৎ। তীব্র রাগে যখন ধনুকে টংকার দিয়েছিলেন, মনে হয়েছিল যেন মেঘের মধ্যে গরুড় পাখি চিৎকার করে উঠছে। বীরভাবের এই আদর্শ তুলে ধরার মধ্যেই ইন্দ্রজিতের অপবাদ ঘোচানোর চেষ্টা লক্ষ করা যায়।

সাজিলা রথীন্দ্রর্ষভ বীর-আভরণে, – এই সজ্জার বর্ণনায় কবি যে দুটি পৌরাণিক প্রসঙ্গের উল্লেখ করেছেন সেগুলির বর্ণনা দাও।

  • প্রাককথন – মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ নামক কাব্যাংশে বীরবাহুর মৃত্যুর পরে লঙ্কার মর্যাদা পুনরুদ্ধারের জন্য ইন্দ্রজিৎ বীরের সাজে সেজে ওঠেন। ইন্দ্রজিতের যুদ্ধসজ্জার বর্ণনা দিতে গিয়ে দুটি পৌরাণিক প্রসঙ্গের উল্লেখ করেছেন কবি-
  • পৌরাণিক প্রসঙ্গ ১ – কার্তিকেয় কর্তৃক তারকাসুর বধের প্রসঙ্গ। তারকাসুরের অত্যাচারে বিপন্ন দেবতারা ব্রহ্মার শরণাপন্ন হলে ব্রহ্মা বিধান দেন যে, শিবের ঔরসজাত সন্তানই তারকাসুরকে বধ করতে পারবে। ছ-জন কৃত্তিকার গর্ভে শিবের ছয় সন্তানের জন্ম হলেও তাঁদের মিলিত করে এক পুত্র সৃজিত হয়, তাঁর নাম হয় কার্তিকেয়। দেবী বসুন্ধরা তাঁকে পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন এবং বয়ঃপ্রাপ্ত হলে তিনি দেবসেনাপতি পদে নিযুক্ত হন ও তারকাসুরকে নিহত করেন।
  • পৌরাণিক প্রসঙ্গ ২ – অর্জুনের গোধন উদ্ধারের প্রসঙ্গ। পাণ্ডবেরা যখন বিরাট রাজার গৃহে অজ্ঞাতবাসে ছিলেন, সেই সময় কৌরবরা বিরাটের গোধন হরণের জন্য তাঁর রাজ্য আক্রমণ করেন। বিরাট যুদ্ধে পরাজিত এবং বন্দি হলে বৃহন্নলারূপী অর্জুন গোধন রক্ষা করতে যান। কুরুসৈন্যের সংখ্যা দেখে ভীত উত্তর পালাতে চাইলে অর্জুন ছদ্মবেশ নেওয়ার সময়ে যে শমিবৃক্ষে অস্ত্রাদি লুকিয়ে রেখেছিলেন সেখানে তাকে নিয়ে যান এবং সেগুলি গ্রহণ করে ক্লীববেশ ত্যাগ করে বীরবেশে সজ্জিত হয়ে কৌরবদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে যান।

রামচন্দ্রের বিরুদ্ধে মেঘনাদের যুদ্ধযাত্রার প্রস্তুতি প্রসঙ্গে কবি এই দুটি প্রসঙ্গ এনেছেন।

তবে কেন তুমি, গুণনিধি,/ত্যজ কিঙ্করীরে আজি? – কে কখন কথাটি বলেছেন? তাঁকে কী সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছিল?

বক্তা এবং সময়কাল – ছদ্মবেশী লক্ষ্মীর কাছে বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ শুনে ইন্দ্রজিৎ ক্রোধে উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং যুদ্ধসাজে সজ্জিত হয়ে লঙ্কার রাজসভার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ইন্দ্রজিৎ যখন রথে আরোহণ করছেন তখনই সেখানে তাঁর স্ত্রী প্রমীলার আবির্ভাব ঘটে।তাঁকে ছেড়ে না যাওয়ার জন্য তিনি ইন্দ্রজিতকে অনুরোধ করেন। ইন্দ্রজিৎ-কে ছাড়া তাঁর পক্ষে বেঁচে থাকাই যে সম্ভব নয়, তাও বলেন। গভীর অরণ্যে হাতির পায়ে লতা জড়িয়ে গেলে তাতে হাতি মন না দিলেও লতাকে ত্যাগ করে না। তুচ্ছ হলেও হাতি তাকে পা থেকে সরিয়ে ফেলে না। তার পায়ে সেই লতার বন্ধন জড়িয়েই থাকে। অথচ ইন্দ্রজিৎ আপন স্ত্রীকে একা ফেলে রেখে যুদ্ধক্ষেত্রে চলেছেন। ইন্দ্রজিতের তাঁকে ছেড়ে যাওয়াকে অনুচিত কর্ম বলে বোঝাতে চেয়েছিলেন প্রমীলা।

প্রমীলাকে দেওয়া সান্ত্বনা – প্রমীলাকে সান্ত্বনা দিতে ইন্দ্রজিৎ বলেন যে, প্রমীলা তাঁকে প্রেমের যে দৃঢ় বন্ধনে বেঁধেছেন তা খোলার ক্ষমতা কারও নেই। একইসঙ্গে ইন্দ্রজিৎ এও বলেন যে প্রমীলার কল্যাণের কারণেই তিনি অতি সহজে রাঘবকে হত্যা করতে পারবেন যুদ্ধ শেষ হলেই তিনি শীঘ্র প্রমীলার কাছে ফিরে আসবেন। এই বলে ইন্দ্রজিৎ প্রমীলার কাছে বিদায় প্রার্থনা করেন।

বিদায় এবে দেহ, বিধুমুখী। – ‘বিধুমুখী’ কাকে বলা হয়েছে? তিনি বক্তাকে কী বলেছিলেন? প্রত্যুত্তরে বক্তা কী বলেছিলেন?

বিধুমুখীর পরিচয় – মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘অভিষেক’ কাব্যাংশের উল্লিখিত অংশে ‘বিধুমুখী’ বলতে ইন্দ্রজিতের পত্নী প্রমীলার কথা বলা হয়েছে।

বক্তব্য বিষয় – সহোদর বীরবাহুর হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য ইন্দ্রজিৎ রথারোহণ করছিলেন। সেই মুহূর্তে প্রমীলা তাঁর কাছে আসেন এবং ইন্দ্রজিতের হাত ধরে তাঁকে ফেলে রেখে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। ইন্দ্রজিৎকে ছাড়া তাঁর পক্ষে প্রাণ ধারণ করা যে সম্ভব নয় সে কথাও তিনি বলেন। দৃষ্টান্ত দিয়ে প্রমীলা বলেন যে, গভীর অরণ্যে লতা যদি হাতির পা-কে বেষ্টন করে তাহলে হাতি তার প্রতি মনোযোগ না দিলেও তাকে ফেলে দেয় না। ইন্দ্রজিৎ তাহলে তাঁকে কীভাবে ত্যাগ করে চলে যেতে পারেন এই প্রশ্ন তুলে প্রমীলা বিস্ময় প্রকাশ করেন।

বক্তার প্রত্যুত্তর – প্রমীলার কথা শুনে ইন্দ্রজিৎ হেসে উত্তর দেন যে প্রমীলা তাঁকে ভালোবাসার যে দৃঢ় বন্ধনে বেঁধেছেন তা ছিন্ন করা কারোর পক্ষেই সম্ভব নয়। এরপরে ইন্দ্রজিৎ প্রমীলাকে প্রতিশ্রুতি দেন যে রামচন্দ্রকে বধ করে তিনি অত্যন্ত দ্রুত ফিরে আসবেন। এই কথা বলে ইন্দ্রজিৎ প্রমীলার কাছে বিদায় প্রার্থনা করেন।

নমি পুত্র পিতার চরণে,/করজোড়ে কহিলা, – পুত্র কে? তিনি পিতার চরণে প্রণাম করে কী বলেছিলেন? পিতা কী প্রত্যুত্তর দিয়েছিলেন?

পুত্রের পরিচয় – ‘অভিষেক’ কাব্যাংশের প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে ‘পুত্র’ বলতে রাবণপুত্র ইন্দ্রজিৎকে বোঝানো হয়েছে।

পুত্রের বক্তব্য – প্রিয় ভাই বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ শুনে উত্তেজিত ইন্দ্রজিৎ প্রমোদকানন ত্যাগ করে পিতা রাবণের কাছে পৌঁছন। শোকগ্রস্ত রাবণ তখন যুদ্ধসজ্জার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পিতার চরণে প্রণাম করে ইন্দ্রজিৎ প্রথমেই মৃত রামচন্দ্রের পুনর্জীবনলাভের বিষয়টি জানতে চান। রামচন্দ্রের এই মায়া যে তাঁর পক্ষে বোঝা সম্ভব হয়নি তা-ও তিনি বলেন। তারপরেই তিনি রামচন্দ্রকে সমূলে নির্মূল করার জন্য পিতার অনুমতি প্রার্থনা করেন। তীব্র ক্রোধে বলেন যে শরানলে রামচন্দ্রকে ভস্ম করে বায়ু-অস্ত্রে তাঁকে উড়িয়ে দেবেন, অথবা বেঁধে এনে রাজপদে উপহার দেবেন। এইভাবে তীব্র প্রতিশোধস্পৃহা আর বীরের মতো মনোভাবের প্রতিফলন ঘটে ইন্দ্রজিতের উচ্চারণে।

পিতার প্রত্যুত্তর – ইন্দ্রজিতের শিরচুম্বন করে রাবণ তাঁকে ‘রাক্ষসকুল-শেখর’ এবং ‘রাক্ষসকুল-ভরসা’ বলে উল্লেখ করেন এবং তারপরে গভীর বিষাদের সঙ্গে জানান যে, সেই ভয়ংকর যুদ্ধে তাঁকে বারবার পাঠাতে রাবণের ভয় হয়। নিয়তি তাঁর প্রতি নিষ্ঠুর। তা না হলে মৃত রামচন্দ্রের পুনর্জীবনলাভ ঘটত না। শিলা জলে ভাসার মতোই এ অসম্ভব কাজ। এইভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রাবণের উচ্চারণে অসহায়তা এবং পিতার স্নেহকাতরতাই যেন লক্ষ করা যায়।

নমি পুত্র পিতার চরণে, করজোড় কহিলা; – পিতা ও পুত্রের পরিচয় দাও। পাঠ্যাংশ অবলম্বনে পিতা ও পুত্রের কথোপকথন নিজের ভাষায় লেখো।

পিতা ও পুত্রের পরিচয় – মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ কাব্যাংশের উল্লিখিত অংশে ‘পিতা’ হলেন রাবণ এবং ‘পুত্র’ হলেন তাঁর পুত্র ইন্দ্রজিৎ।

পিতা ও পুত্রের কথোপকথন

  • পুত্রের বক্তব্য – প্রিয় ভাই বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ শুনে উত্তেজিত ইন্দ্রজিৎ প্রমোদকানন ত্যাগ করে পিতা রাবণের কাছে পৌঁছন। শোকগ্রস্ত রাবণ তখন যুদ্ধসজ্জার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পিতার চরণে প্রণাম করে ইন্দ্রজিৎ প্রথমেই মৃত রামচন্দ্রের পুনর্জীবনলাভের বিষয়টি জানতে চান। রামচন্দ্রের এই মায়া যে তাঁর পক্ষে বোঝা সম্ভব হয়নি তা-ও তিনি বলেন। তারপরেই তিনি রামচন্দ্রকে সমূলে নির্মূল করার জন্য পিতার অনুমতি প্রার্থনা করেন। তীব্র ক্রোধে বলেন যে শরানলে রামচন্দ্রকে ভস্ম করে বায়ু-অস্ত্রে তাঁকে উড়িয়ে দেবেন, অথবা বেঁধে এনে রাজপদে উপহার দেবেন। এইভাবে তীব্র প্রতিশোধস্পৃহা আর বীরের মতো মনোভাবের প্রতিফলন ঘটে ইন্দ্রজিতের উচ্চারণে।
  • পিতার প্রত্যুত্তর – ইন্দ্রজিতের শিরচুম্বন করে রাবণ তাঁকে ‘রাক্ষসকুল-শেখর’ এবং ‘রাক্ষসকুল-ভরসা’ বলে উল্লেখ করেন এবং তারপরে গভীর বিষাদের সঙ্গে জানান যে, সেই ভয়ংকর যুদ্ধে তাঁকে বারবার পাঠাতে রাবণের ভয় হয়। নিয়তি তাঁর প্রতি নিষ্ঠুর। তা না হলে মৃত রামচন্দ্রের পুনর্জীবনলাভ ঘটত না। শিলা জলে ভাসার মতোই এ অসম্ভব কাজ। এইভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রাবণের উচ্চারণে অসহায়তা এবং পিতার স্নেহকাতরতাই যেন লক্ষ করা যায়।

আলিঙ্গি কুমারে, চুম্বি শিরঃ, মৃদুস্বরে/উত্তর করিলা তবে স্বর্ণ-লঙ্কাপতি; – কে কাকে আলিঙ্গন করেছে? আলিঙ্গন করে বক্তা যা বলেছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।

আলিঙ্গনরত ব্যক্তিদ্বয় – মাইকেল মধুসুদন দত্তের ‘অভিষেক’ কাব্যাংশের উল্লিখিত অংশে রাবণ ইন্দ্রজিৎকে আলিঙ্গন করেছেন।

বক্তব্য –

  • অনুমতি গ্রহণ – সহোদর বীরবাহুর মৃত্যুর পরে রামচন্দ্রের প্রতি প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য ইন্দ্রজিৎ এসেছিলেন পিতার অনুমতি নিতে। যুদ্ধ প্রস্তুতিতে ব্যস্ত রাবণ প্রিয় পুত্রকে আলিঙ্গন করেন।
  • পিতার দ্বিধা – রাবণ পুত্র ইন্দ্রজিৎকে ‘রাক্ষস-কুল-শেখর’‘রাক্ষস-কুল-ভরসা’ বলে উল্লেখ করে বলেন যে, সেই ভয়ংকর যুদ্ধে প্রিয় পুত্রকে পাঠাতে তাঁর প্রাণ চায় না। কারণ, নিয়তি তাঁর প্রতি বিরুপ, হায়, বিধি বাম মম প্রতি। এই বিরূপতার দৃষ্টান্ত হিসেবে রাবণ বলেন যে, শিলা যেমন জলে ভাসা অসম্ভব সেরকমই মরে গিয়ে পুনর্জীবন লাভের ঘটনাও একটি অসম্ভব বিষয়। এখানে রাবণ ইন্দ্রজিতের দ্বারা নিহত রামচন্দ্রের পুনর্জীবন লাভ করে বীরবাহুকে হত্যার ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। নিয়তির ভূমিকা ছাড়া যে এরকম অসম্ভব বিষয় হওয়া সম্ভব নয় এটাই রাবণের বলার উদ্দেশ্য ছিল। আর এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে প্রিয় পুত্রকে যুদ্ধে পাঠাতে রাবণের ইচ্ছা ছিল না। পুত্র-স্নেহে আকুল একজন পিতার মানসিকতাই এখানে রাবণের মন্তব্যে প্রকাশিত হয়েছে।

হায়, বিধি বাম মম প্রতি। – কখন বক্তা এ কথা বলেছেন? বক্তার এ কথা বলার কারণ কী?

মন্তব্যকাল – মাইকেল মধুসুদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্যর প্রথম সর্গ থেকে সংকলিত ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে রাক্ষসরাজ রাবণ আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন। বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ শুনে শোকে কাতর রাবণ রামচন্দ্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধপ্রস্তুতি নেন। সেজে ওঠে তাঁর চতুরঙ্গ বাহিনী। এই সময় সেখানে এসে উপস্থিত হন পুত্র ইন্দ্রজিৎ। রামচন্দ্রকে ‘সমূলে নির্মূল’ করার জন্য তিনি পিতা রাবণের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করেন – ঘোর শরানলে/করি ভস্ম, বায়ু-অস্ত্রে উড়াইব তারে;/নতুবা বাঁধিয়া আনি দিব রাজপদে। পুত্রকে আলিঙ্গন করে রাবণ জানান যে, সেই ‘কাল-সমরে’ ইন্দ্রজিৎকে পাঠাতে তাঁর মন সায় দেয় না। এই সময়েই রাক্ষসরাজ তাঁর প্রতি নিয়তির নিষ্ঠুরতার প্রসঙ্গে আলোচ্য উক্তিটি করেন।

বক্তার এ কথা বলার কারণ – নিয়তির নিষ্ঠুরতাকে রাবণ তাঁর জীবনে বারবার উপলব্ধি করেছেন। কুম্ভকর্ণের মৃত্যু ছিল একটি আঘাত। একইভাবে বীরবাহুর মৃত্যুতে রাবণের প্রতি নিয়তির বিরূপতা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মেঘনাদের হাতে যুদ্ধে নিহত হওয়ার পরেও যেভাবে রামচন্দ্র পুনর্জীবন লাভ করেছে ও বীরবাহুকে যুদ্ধে হত্যা করেছে তা রাবণকে বিস্মিত ও হতাশ করে তুলেছে। – কে কবে শুনেছে, পুত্র, ভাসে শিলা জলে/কে কবে শুনেছে, লোক মরি পুনঃ বাঁচে? একথা বলার সময়ে মহাবীর রাবণকে যথেষ্ট হতাশ মনে হয়েছে।

তারে ডরাও আপনি, – কে, কাকে ভয় পান? উদ্দিষ্ট ব্যক্তির ভয় পাওয়ার কারণ কী? বক্তা কীভাবে সেই ভয় দূর করতে সচেষ্ট হয়েছেন?

কর্তা ও কর্ম – মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ পদ্যাংশ থেকে গৃহীত আলোচ্য পঙ্ক্তিটিতে লঙ্কেশ্বর রাবণের রামচন্দ্রকে ভয় পাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ভয় পাওয়ার কারণ – রামচন্দ্র মায়াবী। দেবতারা তাঁকে নানাভাবে সাহায্য করে চলেছেন। তাই নিশা-রণে মারা গিয়েও রামচন্দ্র পুনরায় বেঁচে উঠেছেন। স্বয়ং বিধাতাই রাবণের প্রতি বিরূপ। রামচন্দ্র সামান্য মানুষ হলেও তাই তাকে তিনি ভয় পান। রাক্ষসকুলের ভরসা প্রিয়পুত্র ইন্দ্রজিৎকে তাই যুদ্ধে পাঠাতে তাঁর মন শঙ্কিত হয়ে থাকে –এ কাল সমরে,/নাহি চাহে প্রাণ মম পাঠাইতে তোমা/বারংবার।

ভয় দূর করার প্রয়াস – পিতা রাবণের মনে উদ্ভূত ভয় দূর করতে ইন্দ্রজিৎ সচেষ্ট হয়েছেন। প্রথমেই তিনি বলেছেন রামচন্দ্র রাবণের পক্ষে ভয় করার মতো কোনো মানুষ নন। তা ছাড়া বীরপুত্র থাকতে পিতার যুদ্ধযাত্রা করা উচিত নয়। তাতে ইন্দ্রজিতের কলঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে জগতে। ইতিমধ্যেই দু-বার ইন্দ্রজিৎ রামচন্দ্রকে পরাজিত করেছেন। ইন্দ্রজিৎ নিজের এই সাফল্যের কথা বলে পিতার মনে তৈরি হওয়া ভয় দূর করতে সচেষ্ট হয়েছেন। অর্থাৎ একদিকে রামচন্দ্র সম্পর্কে তাচ্ছিল্য অন্যদিকে তীব্র মানসিক জোর দিয়ে ইন্দ্রজিৎ রাবণের মনের যাবতীয় ভয় ও দ্বিধাকে দূর করতে চেয়েছেন।

আর একবার পিতঃ, দেহ আজ্ঞা মোরে; – বক্তা কার কাছে, কোন্ আজ্ঞা প্রার্থনা করেছেন? এমন প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বক্তার চরিত্রের কোন্ দিক ধরা পড়েছে লেখো।

কর্তা ও কর্ম – মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘অভিষেক’ কাব্যাংশের প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে ‘রাক্ষস-কুল-ভরসা’ ইন্দ্রজিৎ পিতা রাবণের কাছে যুদ্ধযাত্রার অনুমতি প্রার্থনা করেছেন।

বক্তার চরিত্র – অন্যায় যুদ্ধে মেঘনাদের অনুজ বীরবাহুর মৃত হয়েছে। রামচন্দ্র তাকে ছলনার মাধ্যমে হত্যা করেছে।

  • আত্মধিক্কার – ইন্দ্রজিৎ এই সময় প্রমোদকাননে ছিলেন। ধাত্ররূপী লক্ষ্মীর কাছে ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ শুনে প্রথমে তিনি নিজের প্রতি ঘৃণা ও ধিক্কার জানান। শত্রুশৈন্য যখন লঙ্কাপুরীকে বেষ্টন করেছে তখন তিনি আনন্দ-বিলাসে মত্ত-এ ঘটনা ইন্দ্রজিতের মধ্যে অনুশোচনা জাগায়।
  • বীরসত্তা – এরপরই তাঁর মধ্যে বীরসত্তা জেগে ওঠে। পিতা রাবণের কাছে এই বলে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন- সমূলে নির্মূল করিব পামরে আজি। এর জন্য ইন্দ্রজিৎ যুদ্ধযাত্রার প্রস্তুতিও নিয়েছেন। পিতার যাবতীয় ভয় ও শঙ্কা দূর করে তিনি বলেছেন – আর একবার পিতঃ, দেহ আজ্ঞা মোরে। পিতার কাছে আজ্ঞা চাওয়ার মধ্যে দিয়ে ইন্দ্রজিতের বীরভাঝে প্রকাশ লক্ষ করা যায়।
  • প্রতিশোধস্পৃহা – স্বদেশ ও স্বজনের গৌরব রক্ষায় তিনি শত্রুকে বধ করবেনই। এই ভাবনায় ইন্দ্রজিতের প্রতিশোধস্পৃহারই প্রকাশ ঘটেছে।
  • আত্মবিশ্বাস – নিজের যুদ্ধবিদ্যায় দক্ষতার ওপর ইন্দ্রজিতের অগাধ বিশ্বাস। সেই বিশ্বাসের প্রতিফলনই এখানে দেখতে পাওয়া যায়।

আর একবার পিতঃ, দেহ আজ্ঞা মোরে – কোন আদেশের কথা বলা হয়েছে? ‘আর একবার’ কথাটির তাৎপর্য কী? কোন্ আদেশ সে লাভ করেছিল?

যে আদেশ প্রত্যাশা করেছিল – পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুর পরে রাক্ষসরাজ রাবণ নিয়তির বিরূপতায় হতাশ হয়ে পড়েন। তখন ইন্দ্রজিৎ রাবণকে তুচ্ছ মানব রামচন্দ্রকে ভয় না পেতে বলেন। একই সঙ্গে নিজে লঙ্কার সেনাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করতে চান। ইন্দ্রজিতের কথায়, তিনি থাকতে রাবণ যদি যুদ্ধক্ষেত্রে যান তাহলে তা লঙ্কার কলঙ্ক বলে সমগ্র জগতে প্রচারিত হবে। তখনই ইন্দ্রজিৎ পিতার কাছে আরও একবার রামচন্দ্রকে পরাজিত করার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করেন।

আর একবার কথাটির তাৎপর্য – ‘আর একবার’ কথাটির দ্বারা ইন্দ্রজিৎ বোঝাতে চেয়েছেন যে এর আগেও তিনি রামচন্দ্রকে ভয়ংকর যুদ্ধে দু-বার পরাজিত করেছেন। একবার রাত্রিকালীন যুদ্ধে তিনি রাম- লক্ষণকে নাগপাশে বেঁধে ফেলেন (যদিও কাব্যাংশে শরবিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে), দ্বিতীয়বারে মেঘনাদ মেঘের আড়াল থেকে লড়াই করে রাম-লক্ষণকে এতটাই বিপর্যস্ত করেন যে মৃতের মতো পড়ে থেকে তাঁরা নিজেদের রক্ষা করেন।

লব্ধ আদেশ – রাবণ বলেছিলেন যে, যদি ইন্দ্রজিত যুদ্ধে যাবেন বলে একান্তই স্থির করেন, তাহলে আগে যেন তিনি ইষ্টদেবতা অগ্নিকে পুজো করে নিকুম্ভিলা যজ্ঞগৃহে যজ্ঞ সমাপ্ত করেন এবং পরদিন প্রভাতে যুদ্ধক্ষেত্রে যান।

অভিষেক করিলা কুমারে। – ‘কুমার’ কে? তাঁর অভিষেক কে করালেন? অভিষেকের কারণ কী?

কুমারের পরিচয় – ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে ‘কুমার’ বলতে রাবণপুত্র ইন্দ্রজিৎকে বোঝানো হয়েছে।

তাঁর অভিষেক করিয়েছিলেন পিতা রাবণ।

অভিষেকের কারণ – রামচন্দ্র অন্যায় যুদ্ধে বীরবাহুকে হত্যা করলে রাবণ যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। ছোটো ভাইয়ের মৃত্যসংবাদ ও পিতার যুদ্ধে যাত্রার প্রস্তুতির কথা জানতে পারেন ইন্দ্রজিৎ। তিনি তখনই যুদ্ধে যাবেন বলে প্রয়োজনীয় সাজসজ্জা করে নেন। এই উদ্দেশ্যসাধনে পিতার অনুমতি চাইতে ইন্দ্রজিৎ রাবণের রাজসভায় উপস্থিত হয়ে জানান – অনুমতি দেহ; সমূলে নির্মূল/করিব পামরে আজি। রাবণ বিধির বিরূপতার কথা বলেন এবং বারবার ইন্দ্রজিৎকে যুদ্ধে পাঠানোর বিষয়ে নিজের অনিচ্ছার কথা বলেন। কিন্তু ইন্দ্রজিৎ ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পুত্র থাকতে পিতা যুদ্ধযাত্রা করলে যে লঙ্কার কলঙ্কের শেষ থাকবে না সে কথাও রাবণকে ইন্দ্রজিৎ বোঝাতে চেষ্টা করেন। কুম্ভকর্ণের মৃত্যুর প্রসঙ্গ তুলে রাবণ নিজের দুর্ভাগ্যের কথা বলেন, কিন্তু তারপরেও ইন্দ্রজিতের ইচ্ছাকে তিনি মর্যাদা দেন। তিনি তাঁকে গঙ্গাজল দিয়ে নিয়মমতো অভিষেক করান এবং নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে যজ্ঞ করে পরদিন সকালে যুদ্ধযাত্রা করতে বলেন।

অভিষেক কবিতাটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের একটি অসাধারণ সৃষ্টি। এই কবিতাটি আমাদের দেশপ্রেম, কর্তব্যবোধ এবং বীরত্বের গুণাবলী সম্পর্কে শিক্ষা দেয়।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer