আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার সপ্তম পাঠের দ্বিতীয় বিভাগ ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ নিয়ে কিছু বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তর আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পরীক্ষায় এগুলোর প্রায়ই উপস্থিতি দেখা যায়। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য খুবই উপকারী হবে।

আমি এখন হাজার হাতে পায়ে/এগিয়ে আসি, উঠে দাঁড়াই – হাজার হাতে পায়ে এগিয়ে আসার তাৎপর্য কী? এখানে কবির যে মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে, তা আলোচনা করো।
হাজার হাতে-পায়ে এগিয়ে আসার তাৎপর্য – অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতায় কবি জয় গোস্বামী অস্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সংগীতের ক্ষমতার কথা বলেছেন। রাষ্ট্র হোক কিংবা কোনো সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী শক্তি—মানুষের বিক্ষোভে, প্রতিবাদে গানই হয়ে উঠেছে তার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। কবির কথায়, গান শুধু আনন্দের উৎস নয়, লড়াই-সংগ্রামেও গান হয়ে উঠতে পারে ‘বর্ম’। এই ‘গানের বর্ম’ পরে কবি বন্দুকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন। বুলেটকে প্রতিহত করেছেন। আর সেই সংগ্রামে কবি দেখেছেন যে তিনি একা নন, অসংখ্য মানুষ একই পথের পথিক। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম কিংবা পৃথিবীর বিভিন্ন গণ-আন্দোলনের ইতিহাস প্রমাণ করে যে, যুগে যুগে মানুষের প্রতিবাদের অস্ত্র হয়েছে গান। সকলের মিলিত কণ্ঠে প্রতিবাদের গান হয়ে উঠেছে অস্ত্রের থেকেও শক্তিশালী। গানের এই শক্তি এবং শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের একত্রিত করার ক্ষমতার কথাই কবি বলেছেন।
কবির মনোভাব – কবি জয় গোস্বামীর কাছে গান হল বেঁচে থাকার অন্তহীন লড়াইয়ের অবলম্বন। ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় কবি উদ্যত বন্দুকের সামনে গানকে বর্ম এবং প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছেন। গানই হয়ে উঠেছে মানুষে-মানুষে বেঁধে বেঁধে থাকার অন্যতম ভিত্তি। শিল্প-সাহিত্যকে অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে এখানে এক প্রতিরোধ হিসেবে দেখতে চেয়েছেন কবি।
আমার শুধু একটা কোকিল/গান বাঁধবে সহস্র উপায়ে – শুধু একটা কোকিল আসলে কী? এই গান বাঁধার প্রয়োজনীয়তা কী?
শুধু একটা কোকিল-এর স্বরূপ – জয় গোস্বামী তাঁর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় পৃথিবী জুড়ে চলতে থাকা হিংসা ও হানাহানির প্রতিবাদ করেছেন। মাথার ওপরে ‘শকুন’ এবং ‘চিল’ অর্থাৎ যুদ্ধবাজ শক্তিকে দেখেও ভরসা রেখেছেন নিজের শুভবোধে, যা সামাজিক বিশৃঙ্খলা, ধ্বংস এবং হত্যার উন্মাদনাকে রোধ করতে পারে। এই শুভবোধ এবং সৃজনশীল সত্তাকেই কবি ‘শুধু একটা কোকিল’ বলে অভিহিত করেছেন।
গান বাঁধার প্রয়োজনীয়তা – ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কবি সৃষ্টিকেই প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হিসেবে দেখেছেন। সৃজনশীল সত্তার আনন্দময় প্রকাশ হল সংগীত। এই সংগীত তার অপূর্ব আবেশের মাধ্যমে মানুষকে পৃথিবীর যাবতীয় জ্বালা, যন্ত্রণা ভুলিয়ে দেয়, সভ্যতার ওপরে নেমে আসা অস্ত্রের অভিশাপকে ম্লান করে। যারা পৃথিবীকে ধ্বংস করতে চায়, তাদের আগ্রাসী হিংসার ওপরে শান্তির প্রলেপ দেয় সংগীত। তাই, কবি গানকে ব্যবহার করেছেন অস্ত্রের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে। ‘গানের বর্ম’ পরে কবি সহজেই বুলেট প্রতিহত করতে পারেন। এই গানই তাঁকে হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে যুক্ত করে, এগিয়ে যাওয়ার শক্তি জোগায়, এবং যাবতীয় রক্তাক্ততাকে ভুলে যেতে সাহায্য করে। এই কারণেই সহস্র উপায়ে গান বাঁধা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।
তোমায় নিয়ে বেড়াবে গান/নদীতে, দেশগাঁয়ে – কবির এই মন্তব্যে গানের যে স্বভাবধর্মের প্রকাশ ঘটেছে তা আলোচনা করো।
- শুরুর কথা – গানের হাত ধরে জয় গোস্বামী যখন-তখন যেখানে-সেখানে অতিসহজেই চলে যেতে পারেন। ধ্রুপদী সংগীতের প্রতি নিজের আকর্ষণের কথা বারবার স্বীকার করেছেন কবি (গোঁসাইবাগান, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৮)।
- আনন্দের প্রকাশ – ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় গানকে শুধু আনন্দ বা সুন্দরের প্রকাশ বলেই ভাবেননি কবি। তাঁর মতে, গান হয়ে উঠতে পারে প্রতিবাদের ভাষা।
- শক্তি ও সাহস সংগ্রহ – অস্ত্রের সঙ্গে লড়াইয়ে, মানুষকে সংঘবদ্ধ করতে এই গান থেকেই কবি সংগ্রহ করেছেন শক্তি এবং সাহস।
- প্রতিবাদের বিকল্প ভাষা – দেশে দেশে, যুগে যুগে বাস্তবিকই গান হয়েছে প্রতিবাদের বিকল্প ভাষা। গানের ইতিহাসে ‘প্রতিবাদের গান’ নামে একটি আলাদা ধারাই তৈরি হয়ে গেছে। পৃথিবীজুড়ে যে-কোনো যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে, অথবা, প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াইয়ে গান জুগিয়েছে অসীম শক্তি, জোট বাঁধার সাহস, মনের জোর।
- বৈচিত্র্যময়তা – গানের শক্তিকে আবিষ্কার করাই শুধু নয়, তার মধ্যে প্রবল বৈচিত্র্যও কবি খুঁজে পেয়েছেন। গান তাই কখনও কবির কাছে হয়েছে ঋষিবালক, যার ‘মাথায় গোঁজা ময়ূরপালক’; গান তখন সহজ, নিবিড়, ধ্যানমগ্ন।
- পৃথিবীর সঙ্গে পরিচিতি – আবার এই গানের হাত ধরেই আমরা পৃথিবীর সঙ্গে পরিচিত হই। গানে তখন হয়তো বাজে প্রান্তিক লোকজীবনের মেঠো সুর।
- শেষের কথা – গানের এই বিস্তারের কথাই প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে প্রকাশিত হয়েছে।
অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতার মূল বক্তব্য নিজের ভাষায় লেখো।
অথবা, অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতাটিতে কবির যুদ্ধবিরোধী মনোভাবের যে প্রকাশ ঘটেছে তা নিজের ভাষায় বিবৃত করো।
- শুরুর কথা – জয় গোস্বামী তাঁর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় অস্ত্রশক্তি ও পেশিশক্তির বিরুদ্ধে মানুষের সুস্থ রুচি ও নান্দনিকতার প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
- হাতিয়াররূপে গান – অস্ত্রের মোকাবিলায় মানুষ গানকে হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছে। গানকে অবলম্বন করে কবি সেই বিশাল শক্তির অধিকারী হয়েছেন, যা তাঁকে বুলেট প্রতিহত করার ক্ষমতা দিয়েছে।
- ঐক্যের বন্ধন – গান তাঁকে এক অভূতপূর্ব ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। এই ঐক্যের ফলে হাজার হাজার মানুষ তাঁর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, পায়ে পা মিলিয়ে এগিয়েছে। দৃঢ় মনোবলে কবি উচ্চারণ করেছেন, “অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো পায়ে।”
- প্রতীকরূপে গান – পৃথিবীর ইতিহাসে কখনও অস্ত্র চূড়ান্ত সমাধান দিতে পারেনি। বরং মানুষের শুভবুদ্ধি, ঐক্য, ও সৃজনশীলতাই জয়লাভ করেছে। এই কবিতায় গান সেই শুভবুদ্ধি ও সৃজনশীলতার প্রতীক। গানই কবিকে মানুষের সঙ্গে মিলিয়েছে, রক্তের দাগ মুছে দিয়ে তাঁকে সৌন্দর্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। গানের বিভিন্ন রূপ, বিভিন্ন বিষয়, এবং সুরের বৈচিত্র্য প্রকাশ পেয়েছে। কখনও সে স্নিগ্ধ ও নিষ্পাপ ঋষির মতো, আবার কখনও কোকিলের মোহময় সুরের মতো মধুর।
- অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান – যখন যুদ্ধবাজরা অস্ত্র হাতে মনুষ্যত্বের বিরোধিতা করে, তখন কবি গানের বর্ম পরে অস্ত্রকে প্রতিহত করেন সহজেই।
অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতাটিতে কবির রচনারীতির দক্ষতা আলোচনা করো।
- শুরুর কথা – জয় গোস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায়, গানকে আশ্রয় করে কবি প্রতিবাদের নিজস্ব ধরন খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আবার গানের মধ্যে কবির ব্যক্তিগত অনুভূতির আবেগময় প্রকাশ ঘটিয়ে এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য তৈরি করেছেন।
- স্তবক বিন্যাস – তিনটি স্তবকের প্রথমটিতে গানকে আশ্রয় করে কবির প্রতিবাদ, দ্বিতীয়টিতে কণ্ঠস্বর কিছুটা নরম করে গানের সঙ্গে কবির সংযোগ, এবং শেষ স্তবকটিতে নিজের অনুভবে গানের বিস্তারকে বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে।
- বিষয়ের পার্থক্য – বিষয়ের সূক্ষ্ম পার্থক্যে কণ্ঠস্বরের তীব্রতার তারতম্য ঘটিয়েছেন কবি।
- পঙক্তিসজ্জা – লক্ষ করার বিষয় যে, ১৮ পঙক্তির কবিতাটি তিনটি স্তবকে বিন্যস্ত হলেও পঙক্তিসজ্জা সমান নয়। প্রথম স্তবকে ৫টি পঙক্তি, দ্বিতীয় স্তবকে ৬টি পঙক্তি, এবং তৃতীয় স্তবকে ৭টি পঙক্তি স্থান পেয়েছে।
- মিল – কবিতায় অন্ত্যমিল থাকলেও তার রীতি একরকম নয়। অন্ত্যমিল নেই এমন পঙক্তিও শেষ স্তবকে রয়েছে।
- শেষের কথা – গানের মধ্যে যেমন তৈরি হয় এক স্বচ্ছন্দ গতি, এই কবিতাও তেমনই সাবলীলভাবে এগিয়ে চলেছে। অত্যন্ত সহজ ভাষায় বিষয়ের বিস্তার ঘটিয়েছেন কবি – “গান তো জানি একটা দুটো/ আঁকড়ে ধরে সে খড়কুটো/ রক্ত মুছি শুধু গানের গায়ে।” সহজ ভাষায় এই কবিতায় গভীরতাকে ছুঁয়ে গেছেন কবি।
গানের বর্ম আজ পরেছি গায়ে – গানের বর্ম পরার প্রয়োজনীয়তা কী তা অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতাটি অবলম্বনে আলোচনা করো।
অথবা, গান কীভাবে অস্ত্রের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে তা অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতা অবলম্বনে লেখো।
অথবা, অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো গানের দুটি পায়ে – অস্ত্রের বিরুদ্ধে গানকে কবি কীভাবে প্রতিষ্ঠা করছেন?
- শুরুর কথা – ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সৃষ্টিকেই প্রতিরোধের একমাত্র উপায় করে তুলতে চেয়েছেন কবি জয় গোস্বামী।
- প্রতিবাদের হাতিয়ার – সংগীতের সুরেই মিলে যায় সহস্র কণ্ঠ। কখনও তা হৃদয়কে শুদ্ধ করার উপায়, কখনও-বা প্রতিবাদের হাতিয়ার। প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াইয়ে গানই মানুষকে জোগায় অসীম মনোবল, জোট বাঁধার সাহস।
- অস্ত্রের বিরোধিতা – অস্ত্রের বিরুদ্ধে এই গানকে আঁকড়ে ধরেই কবি অনায়াসে হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়াতে পারেন। গানই সেই আশ্রয়, যা হিংসার অবসান ঘটাতে পারে। অজস্র হিংসার বিপরীতে একটি গানই হতে পারে কবির বা সৃজনশীল মানুষের নিজস্ব জবাব। গান কবির কাছে বর্ম, যা পরে বিরুদ্ধ শক্তির আক্রমণ প্রতিহত করার শক্তি অর্জন করেন কবি।
- নান্দনিক প্রতিরোধ – রক্তাক্ততার পথ ধরে অশুভ, অকল্যাণকারী শক্তিকে প্রতিরোধ নয়; পরিবর্তে কবি তৈরি করতে চেয়েছেন এক নান্দনিক প্রতিরোধ।
- আত্মশক্তির জাগরণ – হিংসা ও হানাহানির এই পৃথিবীতে গানের অসীম শক্তিই মানুষকে একত্রিত করে, আত্মশক্তিতে জাগিয়ে তোলে। এই শক্তিই কবিকে অনুপ্রাণিত করেছে গানের সামনে নতজানু হতে।
- ইতিকথা – তাই কবি গানের বর্ম পরেই প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে চেয়েছেন।
অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতার নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
সাহিত্যে নামকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এই নামকরণ নানান দিক থেকে হতে পারে, কখনও বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক, কখনও প্রতীকী বা চরিত্রধর্মী, কখনও-বা তা ব্যঞ্জনাধর্মী। আমাদের বিচার্য বিষয় জয় গোস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটির নামকরণ কতদূর সার্থক তা দেখা।
অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতার শিরোনামটি ব্যঞ্জনাধর্মী। কেননা, ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র’ এই স্বাভাবিক স্লোগানকে কবি বদলে দিয়ে এক বিশেষ বার্তা দিতে চেয়েছেন। কবিতার বিষয়বস্তু অবশ্যই যুদ্ধবিরোধী, কিন্তু এই বিরোধিতার কৌশল আলাদা। কবিতার শুরুতেই কবি বলেছেন, অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো পায়ে। অস্ত্র ফেলার মধ্য দিয়ে আর পাঁচজন শান্তিকামী মানুষের মতোই কবি শান্তির জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন। পায়ের কাছে অস্ত্র রাখার আহ্বান যুদ্ধবাজদের আত্মসমর্পণের দিকটিকেই বড় করে তোলে। গানকে বর্ম হিসেবে ব্যবহার করে কবি সমস্ত অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চান। তাই অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান গাইতে গাইতে কবি হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়াতে পারেন। অর্থাৎ গানের শান্তি দিয়ে তিনি অনায়াসে যুদ্ধ আর ধ্বংসকে রুখে দিতে পারেন। সমাজে যখন লোভী চিল-শকুন রূপ যুদ্ধবাজদের আনাগোনা, কবির সম্বল তখন শুধু একটা কোকিল যা আসলে মানুষের সৃজনশীল সত্তা। এই কোকিলই কবিকে হাজার উপায়ে গান বেঁধে দেবে। গানই ঋষিবালকের মতো পবিত্রতার প্রতীক হয়ে কবিকে তথা সমাজকে মনুষ্যত্বের পথ দেখাবে। তাই হিংসার বিরুদ্ধে হিংসা বা অস্ত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র নয়—যাবতীয় অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে গানকে বর্ম করে কবি সত্যে ও শান্তিতে পৌঁছতে চান। এই মূলভাবকে সামনে রেখে দেওয়া কবিতাটির নাম গভীর ব্যঞ্জনার ইঙ্গিত দেয়। তাই কবিতাটির নামকরণ সম্পূর্ণরূপে সংগত এবং যথাযথ।
অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কীভাবে কবি জয় গোস্বামীকে উত্তরণের পথ দেখিয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট কবিতা অবলম্বনে লেখো।
- শুরুর কথা – যুদ্ধ মানে শত্রু-শত্রু খেলা, যুদ্ধ মানে আমার প্রতি তোমার অবহেলা। এ হলো আধুনিক সভ্য পৃথিবীর বিবেকের কণ্ঠস্বর। যুদ্ধ মানবতার শত্রু। যুদ্ধই মানুষের ঐক্যবদ্ধ জীবনকে বিচ্ছিন্ন করে এবং হিংসার বিষে বিষাক্ত করে তোলে সমাজসভ্যতাকে। এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর পথে হেঁটে কবি জয় গোস্বামী পৃথিবীকে হিংসামুক্ত করতে চেয়েছেন।
- অস্ত্রের বিরোধিতা – অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতায় কবি জয় গোস্বামী গানকে যুদ্ধবিরোধিতার এক নতুন উপায় হিসেবে তুলে ধরেছেন। সভ্যতার ইতিহাসে মানুষ একসময় অস্ত্র দিয়েই অস্ত্রকে প্রতিরোধের পথ বেছে নিয়েছিল। কিন্তু এই পথও রক্তাক্ত ও হিংস্রতায় পূর্ণ। অন্যদিকে, যুদ্ধের বিরুদ্ধে গান শান্তির বার্তা নিয়ে আসে। জয় গোস্বামী তাই গানের বর্ম পরে অস্ত্রবিরোধী হতে চান।
- সৃজনশীলতার জাগরণ – সৃজনশীলতাকে অবলম্বন করে মানবতাকে সুরক্ষিত করতে পারে গান। প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে শুভবুদ্ধি ও সৃজনশীলতা জাগলে, এই যুদ্ধের রক্তে ভেজা পৃথিবী আবার শান্ত ও সুন্দর হয়ে উঠবে। আমাদের রক্তভেজা সমাজে যদি গান এসে ঋষিবালক হয়ে দাঁড়ায়, তবে পৃথিবীর সব যুদ্ধবাজরা স্তব্ধ হয়ে যাবে।
- ইতিকথা – এভাবেই কবি গানকে হাতিয়ার করে উত্তরণের পথে এগিয়ে যেতে চেয়েছেন।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলা সপ্তম পাঠের দ্বিতীয় বিভাগ “অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান” নিয়ে কিছু বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্নের আলোচনা করেছি, যা মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রশ্নগুলো পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়ক হতে পারে। আশা করছি, এই আর্টিকেলটি আপনারা উপকারী হিসেবে পেয়েছেন। যদি কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকে, তাহলে আমাকে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। এছাড়া, পোস্টটি আপনার পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ!
মন্তব্য করুন