মাধ্যমিক ভূগোল – বারিমন্ডল – সমুদ্রস্রোত – দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

Rahul

আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায়ের বারিমণ্ডলের সমুদ্রস্রোত বিভাগের কিছু দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা কম্পিটিটিভ পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

মাধ্যমিক ভূগোল বিষয়ের দ্বিতীয় অধ্যায় হলো বারিমন্ডল, ছাত্র/ছাত্রীরা যারা মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছ তাদের জন্য নিচে এই অধ্যায় সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া হলো। প্রতিটি প্রশ্নের মান 5.

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - সমুদ্রস্রোত - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণ আলোচনা করো।

একস্থান থেকে অন্যস্থানে মহাসাগর ও সাগরের পানির নির্দিষ্ট ও নিয়মিত প্রবাহকে মহাসাগরীয় স্রোত বা সমুদ্রস্রোত (Ocean Current) বলে। বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রের উপরিভাগের পানির সঙ্গে ঘর্ষণ তৈরি করে এবং ঘর্ষণের জন্য পানিতে ঘূর্ণন তৈরি করে এবং সমুদ্র স্রোতের সৃষ্টি হয়।

সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণ

প্রধানত ছয়টি কারণে সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি হয় —

বায়ুপ্রবাহ – নিয়ত বায়ুপ্রবাহগুলি সমুদ্রের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় সমুদ্রের ওপরের জলরাশিকে নিজের প্রবাহের দিকে চালিত করে। এইভাবে বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি করে। যেমন — যেসব স্থানে আয়ন বায়ু প্রবাহিত হয়, সেখানে পূর্ব থেকে পশ্চিমদিকে সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয়। আবার যেসব স্থানে পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয়, সেখানে সমুদ্রস্রোত পশ্চিমদিক থেকে পূর্বদিকে অগ্রসর হয়।

সমুদ্রস্রোত সৃষ্টিতে নিয়ত বায়ু প্রভাব

সমুদ্রজলে উষ্ণতার তারতম্য – নিরক্ষীয় ও ক্রান্তীয় অঞ্চলে বেশি উষ্ণতার জন্য সমুদ্রজল বেশি উষ্ণ হয় এবং বাষ্পায়ন বেশি হয়। এ ছাড়া, এই উষ্ণ জল হালকা বলে সমুদ্রের ওপরের অংশ দিয়ে পৃষ্ঠস্রোত বা বহিঃস্রোতরূপে শীতল মেরু অঞ্চলের দিকে বয়ে যায়। জলের এই শূন্যতা পূরণের জন্য তখন মেরু অঞ্চলের শীতল ও ভারী জল সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে নিরক্ষীয় ও ক্রান্তীয় অঞ্চলের দিকে অন্তঃস্রোতরূপে বয়ে যায়। এভাবে সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয়।

সমুদ্রজলে লবণতার তারতম্য – সমুদ্রজলে লবণতার পরিমাণ কোথাও বেশি, কোথাও কম। কম লবণাক্ত জল হালকা বলে সমুদ্রের ওপরের অংশ দিয়ে পৃষ্ঠস্রোত বা বহিঃস্রোতরূপে বেশি লবণাক্ত ভারী জলের দিকে বয়ে যায়। জলের এই শূন্যতা পূরণের জন্য তখন বেশি লবণাক্ত ভারী জল সমুদ্রের নিম্নাংশ দিয়ে অন্তঃস্রোতরূপে ওই কম লবণাক্ত হালকা জলের দিকে বয়ে যায়। এইভাবে সমুদ্রস্রোতের উৎপত্তি হয়।

পৃথিবীর আবর্তন গতি – পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য সমুদ্রস্রোত সোজাপথে প্রবাহিত হতে পারে না। ফেরেলের সূত্রানুসারে, উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে যায়। এভাবে নতুন সমুদ্রস্রোতের উৎপত্তি হয়। উদাহরণ — উপসাগরীয় স্রোত আবর্তন গতির প্রভাবে ডানদিকে বেঁকে উত্তর আটলান্টিক স্রোতের উৎপত্তি ঘটায়।

মহাদেশসমূহের অবস্থান ও আকৃতি – প্রবহমান সমুদ্রস্রোত মহাদেশের যে প্রান্তে বা দ্বীপপুঞ্জে বাধা পায়, সেখানকার গঠন বা আকৃতি অনুসারে সমুদ্রস্রোতের গতিপথ পরিবর্তিত হয় বা বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়। এভাবেও নতুন নতুন সমুদ্রস্রোতের উৎপত্তি ঘটে। উদাহরণ — আটলান্টিক মহাসাগরে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত ব্রাজিলের কেপ ডি সাও রোক-এ বাধা পেয়ে ব্রাজিল স্রোত নামে একটি নতুন স্রোতের উৎপত্তি ঘটায়।

বরফের গলন – সমুদ্রে বরফ যেখানে গলে যায়, সেখানে জলরাশির পরিমাণ কিছুটা বৃদ্ধি পায় এবং ওই জলরাশি স্বল্প জলরাশি সমন্বিত অঞ্চলের দিকে ধাবিত হয়, ফলে সমুদ্রস্রোতের উৎপত্তি ঘটে।

সমুদ্রস্রোতের প্রভাব আলোচনা করো

সমুদ্রস্রোতের প্রভাব – মানবজীবনের ওপর সমুদ্রস্রোতের নিম্নলিখিত প্রভাবগুলি লক্ষ করা যায় —

  1. বরফমুক্ত বন্দর – উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের প্রভাবে সংশ্লিষ্ট উপকূলের বন্দরগুলি শীতকালেও বরফমুক্ত থাকে। যেমন — উষ্ণ উত্তর আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের অধিকাংশ বন্দর বরফমুক্ত থাকায় সারাবছরই ব্যবহার করা যায়।
  2. নৌ-চলাচলের সুবিধা – উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের জন্য জাহাজ চলাচল সহজতর হয়। এর ফলে জ্বালানির সাশ্রয় হয়। আটলান্টিক মহাসাগরের অনুকূল উয় স্রোতকে অনুসরণ করে পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক জাহাজ যাতায়াত করে।
  3. জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ – কোনো অঞ্চলের পাশ দিয়ে উয় সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হলে জলবায়ু উয় হয়। আবার বিপরীতভাবে, শীতল স্রোত প্রবাহিত হলে জলবায়ুও শীতল হয়। যেমন — শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলে বায়ুর উয়তা কমে ও উষ্ণ কুরোশিয়ো স্রোতের প্রভাবে জাপানের পশ্চিম উপকূলে বায়ুর উষ্ণতা বাড়ে।
  4. বৃষ্টিপাত ও তুষারপাত সৃষ্টি – উষ্ণ স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ুতে জলীয়বাষ্প থাকে বলে ওই বায়ু স্থলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলে বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু শীতল স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু শুষ্ক বলে বৃষ্টিপাত হয় না, তবে মাঝে মাঝে তুষারপাত হয়। আফ্রিকার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে নামিবিয়া উপকূলে এই কারণে মরুভূমির সৃষ্টি হয়েছে।
  5. দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সৃষ্টি – সাধারণত যেসব অঞ্চলে উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলন ঘটে, সেখানে উয়তার পার্থক্যের জন্য ঘন কুয়াশা এবং প্রবল ঝড়ঝঞ্ঝা হয়। ফলে জাহাজ বা বিমান চলাচলে অসুবিধা সৃষ্টি হয়। যেমন — নিউফাউন্ডল্যান্ড-সংলগ্ন সমুদ্র।
  6. মৎস্যক্ষেত্র সৃষ্টি – উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে মাছের খাদ্য প্ল্যাঙ্কটন প্রচুর পরিমাণে জন্মায়, এর ফলে মৎস্যক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। যেমন — নিউফাউন্ডল্যান্ড বা জাপানের উপকূল থেকে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়।
  7. মগ্নচড়ার সৃষ্টি – শীতল স্রোতের সঙ্গে ভেসে আসা হিমশৈল উষ্ণ স্রোতের সংস্পর্শে এলে গলে যায়। ফলে পর মধ্যে থাকা পাথর, নুড়ি, বালি প্রভৃতি হিমশৈলের সমুদ্রবক্ষে দীর্ঘকাল ধরে জমতে জমতে উঁচু হয়ে মগ্নচড়ার সৃষ্টি করে। যেমন — নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলের অদূরে গ্র্যান্ড ব্যাংক নামক মগ্নচড়ার সৃষ্টি হয়েছে।
  8. হিমশৈলজনিত বিপদ – শীতল সমুদ্রস্রোতের সঙ্গে যেসব বড়ো বড়ো হিমশৈল ভেসে আসে, সেগুলি জাহাজ চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে। এই হিমশৈলের জন্যই বিখ্যাত জাহাজ টাইটানিক ডুবে গিয়ে প্রচুর প্রাণহানি ঘটেছিল।

আরও পড়ুন – মাধ্যমিক ভূগোল – বারিমন্ডল – পার্থক্য ধর্মী প্রশ্ন উত্তর

আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায়ের বারিমণ্ডলের সমুদ্রস্রোত বিভাগের কিছু দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা কম্পিটিটিভ পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আমাকে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। এছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

রাশিবিজ্ঞান-গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান-কষে দেখি 26.4-মাধ্যমিক গণিত

মাধ্যমিক গণিত – রাশিবিজ্ঞান: গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান – কষে দেখি 26.4

রাশিবিজ্ঞান-গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান-কষে দেখি 26.3-মাধ্যমিক গণিত

মাধ্যমিক গণিত – রাশিবিজ্ঞান: গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান – কষে দেখি 26.3

রাশিবিজ্ঞান-গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান - কষে দেখি 26.2-মাধ্যমিক গণিত

মাধ্যমিক গণিত – রাশিবিজ্ঞান: গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান – কষে দেখি 26.2

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik Bengali Suggestion 2026

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – প্রবন্ধ রচনা

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – প্রতিবেদন

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – সংলাপ

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – চলিত গদ্যে বঙ্গানুবাদ