মাধ্যমিক ভূগোল – ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ – ভারতের মৃত্তিকা – দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় ‘ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ’ এর ‘ভারতের মৃত্তিকা’ বিভাগের কিছু দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মাধ্যমিক ভূগোল - ভারতের মৃত্তিকা - দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি

ভারতে মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলাফল আলোচনা করো।

ভারতে মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলাফল –

মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলে বিভিন্ন পরিবেশগত পরিবর্তন দেখা যায়:

  1. ভৌমজলের উচ্চতা হ্রাস ও মাটির আর্দ্রতা হ্রাস: মাটি ক্ষয়ের পরিমাণ বাড়লে ভৌমজলের উচ্চতার পরিবর্তন ঘটে। মাটির মধ্যে অসংখ্য ছিদ্র থাকে। ওই ছিদ্র দিয়ে জল চুঁইয়ে মাটির নীচে জমা হয়ে ভৌমজলের স্তর বৃদ্ধি করে। কিন্তু ভূমিক্ষয় বাড়লে মাটির ওপরের স্তর অপসারিত হওয়ার ফলে মৃত্তিকার অপেক্ষাকৃত কঠিন স্তর বাইরে উন্মুক্ত হয় যার মধ্য দিয়ে বৃষ্টির জল চুঁইয়ে মাটির ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না বা কম পরিমাণে প্রবেশ করে। ফলে ভৌমজলের সঞ্চয় হ্রাস পায়। জলস্তরের উচ্চতা আরও কমে যায়।
  2. উর্বর মৃত্তিকার উপরিস্তরের অপসারণ: মাটির ক্ষয়ের ফলে মাটির মধ্যে থাকা উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় খনিজ মৌল অপসারিত হয়। তাই ভূমির উর্বরতা কমে যায় ও ফসল উৎপাদন হ্রাস পায়।
  3. খাল ও নদীতে পলিসঞ্চয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি: ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি পেলে শিথিল মাটির কণা বাড়তি জল, নদীস্রোত, বায়ুপ্রবাহ দ্বারা বাহিত হয়ে নদী, খাল, বিল, জলাশয়, পুকুরে জমা হয়। ফলে পলিসঞ্চিত হয়ে জলাশয়ের গভীরতা হ্রাস পায়, যা বন্যা সৃষ্টি করে।
  4. মরু অঞ্চলের প্রসারণ: বায়ু মরুভূমির মাটিকে এক জায়গা থেকে উড়িয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে যায়। এজন্য একদিকে যেমন মাটি ক্ষয় বাড়ে, মাটির উর্বরতা কমে যায়। তেমনি একইসঙ্গে যেখানে গিয়ে ওই বালি সঞ্চিত হয় সেখানে মরুভূমির সম্প্রসারণ ঘটে। এভাবেই রাজস্থানের মরুভূমির আয়তন বাড়ছে।
  5. বন্যা ও খরার প্রবণতা বৃদ্ধি: নদীগর্ভে ক্ষয়ীভূত মাটি সঞ্চিত হয়ে নদীর নাব্যতা বা গভীরতা কমে যায়। বর্ষাকালে নদীতে জল বাড়লে নদীর জলধারণক্ষমতা কমে গিয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে মাটির অম্লত্ব বা ক্ষারত্ব বাড়লে বা মরু অঞ্চলে বালি উড়ে গিয়ে অন্য জায়গায় পড়লে সেখানে খরার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
  6. ভূমিধস বৃদ্ধি: পাহাড়ি অঞ্চলে অতিরিক্ত বৃক্ষচ্ছেদের ফলে বা অবৈজ্ঞানিক নির্মাণের ফলে মাটি উন্মুক্ত ও আলগা হয়ে যায়। ফলে মাটি পাহাড়ে আটকে না থেকে ঢাল বেয়ে ধসের আকারে নেমে আসে।
  7. অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক উন্নতিতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি: ভূমিক্ষয়ের ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয় ফলে কৃষিজীবী মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধসের কারণে পাহাড়ি অঞ্চলে বাড়িঘর, মানুষের জীবন মুহূর্তে নষ্ট হয়ে যায়। মরুভূমির প্রসারণ ও অন্যান্য কারণে আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নতির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়।

মৃত্তিকা ক্ষয়ের কয়েকটি মনুষ্যসৃষ্ট কারণ লেখো।

মৃত্তিকা ক্ষয়ের মনুষ্যসৃষ্ট কারণ –

মৃত্তিকা ক্ষয় প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট উভয় কারণেই হয়ে থাকে। এর মধ্যে মনুষ্যসৃষ্ট কারণগুলি হল:

  1. জনসংখ্যার চাপ: যেখানে মানুষের বসবাস বেশি সেখানে মাটি ক্ষয় বেশি হয়। বাড়িঘর নির্মাণ, রাস্তাঘাট তৈরি, জল সরবরাহ, জলনিকাশি ব্যবস্থা, কৃষিকাজ বেশিমাত্রায় করার জন্য মৃত্তিকার ব্যাপক ক্ষয় হয়। সুতরাং জনসংখ্যার চাপ যত বাড়বে ভূমিক্ষয় ততই বাড়বে।
  2. অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ: পাহাড়ি অঞ্চলে বা চারণ ভূমিভাগে অনিয়ন্ত্রিতভাবে পশুচারণ করলে গবাদি পশু মাটি, ঘাস, ছোটো ছোটো গাছ উপড়ে খেয়ে ফেলে। এতে ভূমির আবরণ আলগা হয়ে যায়। এ ছাড়া পশুর পায়ের খুরের আঘাতে নরম মাটি ক্ষয়ে যায়। বৃষ্টি হলে ওইসব মাটি ধুয়ে অন্যত্র অপসারিত হয়।
  3. অবৈজ্ঞানিক খনন: খনি অঞ্চলে খনিজদ্রব্য অবৈজ্ঞানিকভাবে সংগ্রহ করলে দ্রুত মাটি ক্ষয় হতে পারে। আবার অনেক সময় খনিজদ্রব্য সংগ্রহ করার পর ওই খনিটি ঠিকমতো ভরাট করা না হলেও ভূমিক্ষয় বাড়ে।
  4. বৃক্ষচ্ছেদন: গাছের শিকড় মাটির কণাগুলিকে দৃঢ় সংঘবদ্ধভাবে ধরে রাখে। অতিরিক্ত গাছ কেটে ফেলার জন্য মাটির দানাগুলি আলগা হয়ে যায়। ফলে একটু বৃষ্টি হলে বা জোরে বায়ু প্রবাহিত হলে মাটি দ্রুত ক্ষয়ে যায়।
  5. প্রথাগত কৃষি: প্রথাগত কৃষি পদ্ধতিতে জমির প্রকৃতি বা মাটির উপাদান বিচার না করে অতিরিক্ত পরিমাণে সার, কীটনাশক প্রয়োগ করলে মাটি ক্ষয়ের মাত্রা বাড়তে থাকে। ট্রাক্টর, হারভেস্টর, ইত্যাদির অত্যধিক ব্যবহার মাটিকে সহজে আলগা করে দেয় যা মাটি ক্ষয়কে ত্বরান্বিত করে।
  6. ভূমিধস: নবীন পার্বত্যভূমিতে অবৈজ্ঞানিক চাষাবাদ, বৃক্ষচ্ছেদন, যেখানে সেখানে বাড়িঘর নির্মাণ, নদীর ধারে রাস্তা নির্মাণ এবং অন্যান্য নানা কারণে ভূমিধস বাড়ে। ভূমিধস প্রকৃতপক্ষে ভূমির ক্ষয়কে দ্রুততর করে।

ভারতের প্রধান প্রধান মৃত্তিকার বণ্টন ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।

ভারতের প্রধান মৃত্তিকাগুলির মধ্যে পলিমাটি, কৃষ্ণ মৃত্তিকা বা কালোমাটি, লোহিত মৃত্তিকা, ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা, মরু মৃত্তিকা ও পার্বত্য মৃত্তিকা উল্লেখযোগ্য।

মৃত্তিকাভৌগোলিক বণ্টনপ্রধান বৈশিষ্ট্য
পলিমাটি / নদী উপত্যকার পলিমাটিসিন্ধু, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, প্রভৃতি নদনদীর বিস্তীর্ণ উপত্যকা ও বদ্বীপ অঞ্চল।প্লাবনের ফলে নদীবাহিত বালি, পলি ও কাদা নদী উপত্যকায় সঞ্চিত হয়ে পলিমাটির সৃষ্টি হয়। পলির উপস্থিতির কারণে এই মাটি খুবই উর্বর হয়, যদিও পলিমাটিতে নাইট্রোজেন ও জৈব পদার্থের ঘাটতি দেখা যায়। পলিমাটি পটাশ ও চুনজাতীয় পদার্থে সমৃদ্ধ। এই মাটি ধান, গম, জোয়ার, বাজরা, ডাল, তৈলবীজ, তুলো, ইক্ষু, পাট ও সবজি উৎপাদনের উপযোগী।
উপকূলের পলিমাটিভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলে পাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনসহ বিভিন্ন বদ্বীপ ও নীচু উপকূল অঞ্চল।প্রধানত সামুদ্রিক পলি সঞ্চিত হয়ে এই মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়। বালি ও লবণের প্রভাবে উর্বরাশক্তি মাঝারি ধরনের। এই মাটিতে নারকেল ও সুপারি গাছ ভালো জন্মায়। নীচু ও বদ্বীপ অঞ্চলের লবণাক্ত পলিমাটিতে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ জন্মায়।
কৃষ্ণ মৃত্তিকা বা কালোমাটিদাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিমাংশের ডেকান ট্র্যাপ অঞ্চল, বিশেষত মহারাষ্ট্র মালভূমি, গুজরাতের ভারুচ, ভাদোদরা ও সুরাত, পশ্চিম মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তর কর্ণাটক।লাভা থেকে সৃষ্ট ব্যাসল্ট শিলা ক্ষয় হয়ে এই মাটি উৎপন্ন হয়েছে। এই মাটির রং কালো। কৃষ্ণ মৃত্তিকার জলধারণক্ষমতা খুব বেশি। এই মৃত্তিকা কার্পাস চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী হওয়ায়, কৃষ্ণ মৃত্তিকাকে কৃষ্ণ-কার্পাস মৃত্তিকাও বলা হয়। প্রকৃতিতে উর্বর এই মৃত্তিকায় তুলো ছাড়াও খাদ্যশস্য, তেলবীজ, টকযুক্ত ফল, সবজি ইত্যাদির চাষ খুব ভালো হয়।
লোহিত মৃত্তিকা বা লালমাটিদাক্ষিণাত্য মালভূমির অন্তর্গত তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র রাজ্যের মালভূমি অঞ্চল, ঝাড়খণ্ডের ছোটোনাগপুর মালভূমি, উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চল ও মেঘালয় মালভূমি।প্রাচীন গ্র্যানাইট, নিস প্রভৃতি আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে এই মাটি উৎপন্ন হয়। এই মাটিতে লৌহকণার ভাগ বেশি থাকে বলে এর রং লাল হয়। এই প্রকার মাটির জল ধরে রাখার ক্ষমতা কম। লোহিত মৃত্তিকা পটাশ ও ফসফেট খনিজে সমৃদ্ধ। এই মাটিতে রাগি, ধান, তামাক, চিনাবাদাম, আলু ও সবজির চাষ ভালো হয়।
ল্যাটেরাইট মৃত্তিকাপশ্চিমঘাট, নীলগিরি, কার্ডামম প্রভৃতি পার্বত্য অঞ্চল, ওডিশার পাহাড়ি অঞ্চল এবং ঝাড়খণ্ডের ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চল।অ্যালুমিনিয়াম ও লোহার সোদক দিয়ে গঠিত এই মৃত্তিকার রং লাল। এই মাটি ইটের মতো শক্ত ও কাঁকর পূর্ণ হয়। ল্যাটেরাইট মৃত্তিকায় নাইট্রোজেন, ফসফোরিক অম্ল, পটাশ, চুন ও ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি দেখা যায়। সাধারণভাবে অনুর্বর এই মাটিতে জলসেচ করা গেলে ধান, রাগি, ইক্ষু প্রভৃতি ফসলের চাষ করা সম্ভব।
মরু অঞ্চলের মৃত্তিকারাজস্থানের মরু অঞ্চল এবং গুজরাতের কচ্ছ ও কাথিয়াবাড় উপদ্বীপের উত্তরাংশ।জৈব পদার্থহীন ও দ্রবীভূত লবণে পূর্ণ এই মাটিতে বালির পরিমাণ খুব বেশি থাকে। এই প্রকার মাটি ফসফেটসমৃদ্ধ কিন্তু নাইট্রোজেনের অভাব দেখা যায়। জলসেচ করা সম্ভব হলে মরু অঞ্চলের মৃত্তিকায় জোয়ার, বাজরা, গম, তুলো প্রভৃতি ফসল চাষ করা যায়।
পার্বত্য মৃত্তিকাপশ্চিম ও পূর্ব হিমালয়, পশ্চিমঘাট ও পূর্বঘাট পর্বতমালা, কার্ডামম পাহাড়।ভূমির ঢাল বেশি বলে পার্বত্য অঞ্চলে মৃত্তিকার ভর অগভীর। পার্বত্য মৃত্তিকায় পটাশ, ফসফরাস ও চুনের ঘাটতি থাকলেও জৈব পদার্থে এই মৃত্তিকা অত্যন্ত সমৃদ্ধ। পর্বতের উঁচু অংশে অম্লধর্মী পডসল এবং সামান্য নিচু অংশে বাদামি চেস্টনাট মৃত্তিকা পাওয়া যায়। পার্বত্য মৃত্তিকা রবার, চা, কফি, মশলা, ফল প্রভৃতি উৎপাদনে অত্যন্ত উপযোগী।

ভূমিক্ষয়ের কারণগুলি আলোচনা করো।

ভূমিক্ষয়ের কারণ –

বিভিন্ন কারণে ভূমিক্ষয় বা মৃত্তিকা ক্ষয় হয়। যেমন:

ভূমিক্ষয়ের কারণগুলি আলোচনা করো।

প্রাকৃতিক কারণ

  1. ভূপ্রকৃতি: সমভূমির তুলনায় পার্বত্য বা মালভূমি অঞ্চলে ভূমিক্ষয় বেশি হয়। ভূমির ঢাল বেশি থাকায় মাটির স্তর কম গভীর হয় এবং শিথিল উপরিভাগ বৃষ্টিপাতের জলপ্রবাহের সাথে দ্রুত অপসারিত হয়।
  2. ঝড়: ঝড়ের ফলে গাছ মাটি থেকে উপড়ে পড়লে মাটির বাঁধন আলগা হয়ে যায়। এর ফলে মৃত্তিকাক্ষয় বেশি হয়।
  3. বৃষ্টিপাতের প্রকৃতি: বৃষ্টিপাত খুব বেশি ও তার স্থায়িত্ব বেশি হলে মৃত্তিকা ক্ষয় বেশি হয়। বৃষ্টিপাতের স্থায়িত্ব ও পরিমাণ কম হলে মৃত্তিকা ক্ষয় কম হয়।
  4. বায়ুপ্রবাহ: উদ্ভিদহীন মরু অঞ্চলে তীব্র বায়ুপ্রবাহের জন্য মৃত্তিকার উপরিস্তর ক্ষয়ীভূত হয়। এর ফলে বিশাল এলাকা জুড়ে মৃত্তিকা ক্ষয় হয়।
  5. প্রবহমান জলধারা: পার্বত্য অঞ্চলে ক্ষণিক বৃষ্টিপাতের প্রভাবে সৃষ্ট জলপ্রবাহের দ্বারা বিপুল পরিমাণে মৃত্তিকা ক্ষয় হয়। স্তর ক্ষয়, নালী ক্ষয়, প্রণালী ক্ষয় জলপ্রবাহ দ্বারা ক্ষয়ের বিভিন্ন রূপ।

মানুষের ক্রিয়াকলাপজনিত কারণ

  1. যথেচ্ছভাবে গাছ কাটা: নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে মৃত্তিকার বাঁধন আলগা হয়ে মৃত্তিকা ক্ষয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
  2. অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ: অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ (যেমন-ঝুমচাষ) করার ফলে মৃত্তিকার উপরিস্তরের ক্ষয়ের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
  3. অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ: অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণের ফলে ভূত্বকে সৃষ্ট উদ্ভিদ ও তৃণের আচ্ছাদন নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে মৃত্তিকার উপরিস্তর আলগা হয়ে মৃত্তিকার ক্ষয় হয়।
  4. জনসংখ্যার চাপ: যেসব অঞ্চলে জনবসতি বেশি বা জনসংখ্যার বৃদ্ধির ফলে মাটি ক্ষয় বাড়ে। ঘরবাড়ি নির্মাণ, রাস্তাঘাট নির্মাণ, জলনিকাশী ব্যবস্থা, কৃষিকাজ ইত্যাদির পরিমাণ বাড়ার জন্য মাটি ক্ষয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
  5. অবৈজ্ঞানিক খনন: খনি অঞ্চলে অবৈজ্ঞানিকভাবে খনিজ দ্রব্য সংগ্রহ করা হয়। ফলে খনিজ দ্রব্য সংগ্রহ করার পর খনিটি ঠিকমতো ভরাট না করলে মাটি ক্ষয় বৃদ্ধি পায়।
  6. প্রথাগত কৃষি: প্রথাগত কৃষিপদ্ধতিতে জমির প্রকৃতি বিচার না করে ফলন বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে অত্যধিক পরিমাণে রাসায়নিক সার, কীটনাশক ব্যবহার করলে মাটি ক্ষয় বাড়ে। অতিরিক্ত ট্র্যাক্টর, হারভেস্টরের ব্যবহারও মাটির কণাগুলিকে আলগা করে দেয় যা মাটির ক্ষয়কে তরান্বিত করে।
  7. ভূমিধস: বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি পার্বত্য অঞ্চলে অবৈজ্ঞানিকভাবে বিভিন্ন নির্মাণকার্য, বৃক্ষচ্ছেদন ইত্যাদিও ভূমিধসের প্রবণতা বাড়ায়। ভূমিধসের ফলে নুড়ি, পাথর, মাটির ভর পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নীচে নেমে আসে, ফলে মাটির ক্ষয় হয়।

মৃত্তিকা ক্ষয় কীভাবে প্রতিরোধ করে তাকে সংরক্ষণ করা যাবে? অথবা, ভারতে মৃত্তিকা ক্ষয় প্রতিরোধের উপায় ব্যাখ্যা করো।

মৃত্তিকা ক্ষয় প্রতিরোধ

মাটির ক্ষয় রোধ করা এবং উর্বরতাশক্তি ফিরিয়ে আনার জন্য মাটি সংরক্ষণ করা একান্ত প্রয়োজন। মৃত্তিকা সংরক্ষণের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হল:

  1. বৃক্ষরোপণ: উদ্ভিদের শিকড় একদিকে যেমন মাটিকে ধরে রাখে তেমনি সে মাটির ওপর বৃষ্টিকে সরাসরি পড়তে দেয় না। বৃষ্টির জল গাছের ওপর পড়ে তারপর মাটিতে যায়। এতে মাটি ক্ষয় কম হয়। তাই ফাঁকা জায়গায় স্থানীয় জলবায়ু অনুযায়ী মৃত্তিকা ক্ষয় রোধে গাছপালা লাগানো উচিত।
  2. সমোন্নতি রেখা বরাবর চাষ: পার্বত্য অঞ্চলে উঁচু, নীচু এলাকায় সমান উচ্চতাযুক্ত বিন্দুগুলিকে যোগ করে যে রেখা পাওয়া যায় তাকে সমোন্নতি রেখা বলে। ওই রেখা বরাবর শস্যক্ষেত্র তৈরি করে কৃষিকাজ করা হয়। এতে জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় ফলে মাটির ক্ষয় কমে।
  3. ধাপচাষ: পাহাড়ি বা চালু জমিতে ঢাল অনুযায়ী সিঁড়ি বা ধাপ গঠন করলে ঢালের কৌণিক মান হ্রাস পায়। ধাপ তৈরি করলে সেখানে জলের প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই ধাপচাষ পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিক্ষয়কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
  4. গালিচাষ: যেখানে ভূমিভাগ নরম মাটি দিয়ে গঠিত সেখানে খুব বৃষ্টি হলে গালি ক্ষয় হয়। এই ধরনের ক্ষয় রোধ করার জন্য নালী ক্ষয় অঞ্চলে খাতের মধ্যে চারাগাছ বা দ্রুত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এমন গাছ বা ঘাস রোপণ করা হয়। এর ফলে মাটি ক্ষয় কমে।
  5. ঝুমচাষ রোধ: ঝুমচাষের ক্ষেত্রে কয়েক বছর অন্তর কৃষিজমি পরিবর্তন করা হয়। অর্থাৎ একটি জমিতে কয়েক বছর চাষ করার পর জমির উর্বরতা কমে গেলে কৃষকরা অন্য জমিতে কৃষিকাজ শুরু করেন। একে স্থানান্তর কৃষিও বলে। এই কৃষিকাজ পরিবেশে ভূমির অবনমনে সর্বাধিক ভূমিকা নেয়। তাই ঝুমচাষ বন্ধ করলে মাটিক্ষয় অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
  6. ফালিচাষ: পাহাড়ি অঞ্চলে ছোটো ছোটো অংশে পাহাড়ের চালু জমিতে আড়াআড়িভাবে ফিতাকৃতি জমি তৈরি করে ক্ষয় প্রতিরোধী শস্য চাষ করার পদ্ধতিকেই ফালিচাষ বলে। শিম, ডাল, সয়াবিন, ভুট্টা প্রভৃতি শস্য চাষ করা হয়। এতে ভূমিক্ষয় রোধ হয় ও মাটির জলধারণক্ষমতা বাড়ে।

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায়, ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারতের মৃত্তিকা বিভাগের কিছু দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাকে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Share via:

মন্তব্য করুন