ভারত একটি বৈচিত্র্যময় দেশ। এর ভৌগোলিক পরিবেশ, প্রাকৃতিক সম্পদ, জনসংখ্যা, শ্রমশক্তি, অর্থনৈতিক নীতি ইত্যাদির ভিত্তিতে ভারতের অর্থনৈতিক বিভাগগুলিকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। এই শ্রেণীবিভাগগুলিকে ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ভূগোল পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
![মাধ্যমিক ভূগোল - ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ - ভারতের শিল্প - সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর 1 মাধ্যমিক-ভূগোল-–-ভারতের-অর্থনৈতিক-পরিবেশ-–-ভারতের-শিল্প](http://solutionwbbse.com/wp-content/uploads/2023/12/মাধ্যমিক-ভূগোল-–-ভারতের-অর্থনৈতিক-পরিবেশ-–-ভারতের-শিল্প.webp)
মাধ্যমিক ভূগোল অধ্যয়নে ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ এবং ভারতের শিল্প অংশগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ নিয়ে অধ্যয়নের মাধ্যমে ছাত্রদের কর্মসূচি ও উন্নয়নের দিক নির্দেশ করা হয়। এই বিষয়টি নিয়ে অধ্যয়নে ভারতের অর্থনৈতিক স্থিতি, উন্নয়নের ইতিহাস, সমস্যা ও সমাধান ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ একটি ব্যপক বিষয় যা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রগতিশীলতা সম্পর্কে কথা বলে। ভারত একটি বৃহত্তর দেশ যেখানে বিভিন্ন উদ্যোগ এবং কারখানা অবস্থিত।
ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশে বাজার এবং বাণিজ্য প্রণালী একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভারত প্রধানতঃ কৃষি ও কৃষিজ পণ্য উৎপাদনে জনপ্রিয় দেশ, তবে শিল্প ও পারমাণবিক ঊর্জা উৎপাদন ও প্রবাহও গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম।
ভারতের শিল্প অংশটি অধ্যয়নে কাজের উন্নয়ন এবং উন্নয়নের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নির্দেশ করা হয়। এই বিষয়টি নিয়ে অধ্যয়নে ভারতের প্রধান শিল্প খাতের পরিচিতি এবং তার উন্নয়নের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নগুলি পরীক্ষার প্রশ্ন নমুনার মাধ্যমে উত্তর দেওয়া হয়। এই প্রশ্নগুলি সাধারণত এক থেকে তিন লাইন পর্যন্ত হয় এবং সাধারণত একটি বা একাধিক প্রশ্নের সমন্বয়ে থাকে।
শিল্পের সংজ্ঞা দাও।
অথবা, শিল্প কাকে বলে?
শিল্প হল সম্পদ রূপান্তরের প্রক্রিয়া। বনজ, খনিজ এবং কৃষিজ সম্পদকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে শিল্পকেন্দ্র বা কারখানায় যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যে পরিণত করা হয়, তাকে বলা হয় শিল্প। যেমন কৃষিজ সম্পদ কার্পাস থেকে বস্ত্রশিল্প এবং খনিজ সম্পদ আকরিক লোহা থেকে লোহা ও ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠে।
মৌলিক শিল্প কাকে বলে?
যে সকল শিল্পের ওপর অন্যান্য শিল্পের বিকাশ নির্ভর করে বা যে সকল শিল্পের উৎপাদিত দ্রব্য অন্যান্য শিল্পের কাঁচামালরূপে ব্যবহৃত হয়, তাকে মৌলিক শিল্প (basic industry) বলে। যেমন লোহা ও ইস্পাত শিল্পে উৎপাদিত যন্ত্রপাতি ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য শিল্পে ব্যবহৃত হয়।
অনুসারী শিল্প কাকে বলে?
যখন কোনো শিল্পে উৎপাদিত দ্রব্যসমূহকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে পরস্পর নির্ভরশীল অনেক শিল্প গড়ে ওঠে, তখন প্রথমটিকে কেন্দ্রীয় শিল্প এবং শিল্পগুলিকে অনুসারী শিল্প বলে। উদাহরণ — হলদিয়ার পেট্রোরসায়ন শিল্প হল কেন্দ্রীয় শিল্প, আর এই শিল্পে উৎপাদিত দ্রব্যাদিকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে যেসব শিল্প গড়ে উঠছে তাকে অনুসারী শিল্প বলে।
অবিশুদ্ধ কাঁচামাল কী?
যেসব কাঁচামাল শিল্পজাত দ্রব্যে পরিণত করলে তার ওজন কমে যায়, সেইসব কাঁচামালকে অশুদ্ধ বা অবিশুদ্ধ কাঁচামাল বলে। আকরিক লোহা, আকরিক তামা, আখ প্রভৃতি হল অবিশুদ্ধ কাঁচামাল। যেমন— এক টন কাঁচা লোহা প্রস্তুত করতে 1.7 টন আকরিক লোহা, 1.30 টন কয়লা, 0.50 টন চুনাপাথর ও ডলোমাইট ও অন্যান্য দ্রব্য মিলিয়ে মোট 5 টন কাঁচামালের প্রয়োজন হয়।
বিশুদ্ধ কাঁচামাল কী?
যেসব কাঁচামাল শিল্পজাত দ্রব্যে পরিণত করলেও তার ওজন কমে না, সেইসব কাঁচামালকে বিশুদ্ধ কাঁচামাল বলে। পাট, তুলো, রেয়ন এই জাতীয় কাঁচামাল। যেমন — এক মেট্রিক টন তুলো থেকে এক মেট্রিক টন সুতো এবং ওই একই পরিমাণ সুতো থেকে 1 মেট্রিক টন ওজনের বস্ত্র উৎপাদন করা যায়।
লোহা ও ইস্পাত শিল্পে কী কী কাঁচামাল লাগে?
লোহা ও ইস্পাত শিল্পের প্রধান কাঁচামালগুলি হল — আকরিক লোহা, স্ট্র্যাপ লোহা, স্পঞ্জ লোহা, কয়লা, অক্সিজেন এবং চুনাপাথর। এ ছাড়া, ডলোমাইট, ম্যাঙ্গানিজ, ক্রোমিয়াম, নিকেল, টাংস্টেন, ভ্যানাডিয়াম প্রভৃতিও কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই শিল্পটিতে প্রচুর পরিমাণে জলেরও প্রয়োজন হয়।
ভারতের 2টি বৃহদায়তন লোহা ও ইস্পাত কারখানার নাম লেখো।
ভারতের 2টি বৃহদায়তন লোহা ও ইস্পাত কারখানা হল — 1. ছত্তিশগড়ের ভিলাই স্টিল প্লান্ট এবং 2. ঝাড়খণ্ডের বোকারো স্টিল প্লান্ট।
লোহা ও ইস্পাত শিল্পে ম্যাঙ্গানিজ প্রয়োজন হয় কেন?
উন্নতমানের ইস্পাত বা ফেরো-ম্যাঙ্গানিজ উৎপাদনের জন্য লোহা ও ইস্পাত শিল্পে ব্যাপকভাবে ম্যাঙ্গানিজ ব্যবহার করা হয়। বিশুদ্ধ লোহা ও ম্যাঙ্গানিজের মিশ্রণে উৎপন্ন ইস্পাত অত্যন্ত দৃঢ় এবং ক্ষয়রোধী ও মরিচা প্রতিরোধী। ফলে এই ইস্পাত উত্তাপ ও আঘাত সহ্য করতে পারে এবং এতে মরিচা ধরে না।
ভারতের দুটি রেলইঞ্জিন ও একটি মোটরগাড়ি নির্মাণকেন্দ্রের নাম করো |
ভারতের দুটি রেলইঞ্জিন নির্মাণকেন্দ্র হল — 1. পশ্চিমবঙ্গের চিত্তরঞ্জন এবং 2. উত্তরপ্রদেশের বারাণসী এবং একটি মোটরগাড়ি নির্মাণকেন্দ্র হল — হরিয়ানার গুরগাঁও।
পেট্রোরসায়ন শিল্পের প্রধান উৎপাদিত দ্রব্যগুলি কী কী?
পেট্রোরসায়ন শিল্পে কৃত্রিম তন্তু (পলিয়েস্টার/নাইলন প্রভৃতি), প্লাস্টিক, কৃত্রিম রবার, আঠা, রং, কীটনাশক, সুগন্ধি দ্রব্য প্রভৃতি উৎপন্ন হয়।
পূর্ব ও পশ্চিম ভারতের একটি করে পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্রের নাম লেখো।
পূর্ব ভারতের একটি পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্র হল পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া (হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস্ লিমিটেড) এবং পশ্চিম ভারতের একটি পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্র হল গুজরাতের ভাদোদরা (ইন্ডিয়ান পেট্রোকেমিক্যালস্ কর্পোরেশন লিমিটেড)।
হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প কী?
যেসব ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে অন্যান্য শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয় এবং বিভিন্ন বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক্স ভোগ্যপণ্য প্রস্তুত করা হয়, তাকে হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প বলে। ক্যামেরা, রেডিয়ো, টেলিভিশন, টাইপরাইটার, ঘড়ি, বৈদ্যুতিক পাখা প্রভৃতি এই শিল্পে উৎপাদিত দ্রব্য।
উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের একটি করে পেট্রোরাসায়নিক শিরকেন্দ্রের নাম লেখো।
উত্তর ভারতের পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্র হল হরিয়ানার পানিপথ (পানিপথ পেট্রোকেমিক্যাল প্লান্ট) এবং দক্ষিণ ভারতের পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্র হল কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালোর (ম্যাঙ্গালোর রিফাইনারি অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যালস্ লিমিটেড)।
উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের একটি করে মোটরগাড়ি নির্মাণ কেন্দ্রের নাম লেখো।
উত্তর ভারতের একটি মোটরগাড়ি নির্মাণকেন্দ্র হল হরিয়ানার গুরগাঁও (মারুতি সুজুকি ইন্ডিয়া লিমিটেড) এবং দক্ষিণ ভারতের একটি মোটরগাড়ি নির্মাণকেন্দ্র হল তামিলনাড়ুর চেন্নাই (ফোর্ড ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড)।
পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকালে ভারতের কোন্ কোন্ স্থানে লোহা ও ইস্পাত কারখানা গড়ে উঠেছে?
পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকালে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর, ওডিশার রৌরকেলা, ছত্তিশগড়ের ভিলাই, ঝাড়খণ্ডের বোকারো, অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম, কর্ণাটকের বিজয়নগর এবং তামিলনাড়ুর সালেমে লোহা ও ইস্পাত কারখানা গড়ে উঠেছে।
ভারতের চারটি প্রধান লোহা ও ইস্পাত উৎপাদন কেন্দ্ৰেৱ নাম লেখো।
ভারতের চারটি প্রধান লোহা ও ইস্পাত উৎপাদন কেন্দ্রের নাম 1. ছত্তিশগড়ের ভিলাই 2. ঝাড়খণ্ডের বোকারো, 3. পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর এবং 4. ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর।
লোহা ও ইস্পাত শিল্প গঠনের জন্য কী কী খনিজের প্রয়োজন?
লোহা ও ইস্পাত শিল্প গঠনের জন্য যেসব খনিজের প্রয়োজন হয় সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল — 1. আকরিক লোহা, 2. কয়লা, 3. চুনাপাথর, 4. ডলোমাইট, 5. ম্যাঙ্গানিজ, 6. নিকেল, 7. টাংস্টেন এবং ৪. ক্রোমিয়াম প্রভৃতি।
ভারতের 3টি রেলইঞ্জিন ও 3টি পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্রের নাম লেখো।
রেলইঞ্জিন শিল্পকেন্দ্র – 1. চিত্তরঞ্জন (পশ্চিমবঙ্গ), 2. বারাণসী (উত্তরপ্রদেশ) এবং 3. জামশেদপুর (ঝাড়খণ্ড)।
পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্র – 1. ভাদোদরা (গুজরাত), 2. ম্যাঙ্গালোর (কর্ণাটক), 3. হলদিয়া (পশ্চিমবঙ্গ)।
পেট্রোরসায়ন শিল্পগুচ্ছ সম্পর্কে টীকা লেখো।
পেট্রোলিয়াম বা অশোধিত খনিজ তেল। শোধন করার সময় প্রাপ্ত বিভিন্ন উপজাত দ্রব্য যেমন — প্রোপেন, বুটেন, ইথেন, মিথেন, বেনজল, বিউটাডিন, ইথানল, প্রোপিলিন প্রভৃতিকে কাজে লাগিয়ে যখন বিভিন্ন ধরনের শিল্প একসঙ্গে গড়ে ওঠে, তখন তাকে বলে পেট্রোরসায়ন শিল্পগুচ্ছ। এই শিল্পগুলি পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল।
পেট্রোরসায়ন শিল্পকে আধুনিক শিল্পদানব বলা হয় কেন?
পেট্রোরসায়ন শিল্পের শিল্পজাত দ্রব্যকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের অনুসারী ও সাহায্যকারী শিল্প বিকাশলাভ করে এবং আধুনিক শিল্পব্যবস্থায় এই শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম বলে একে আধুনিক শিল্পদানব বলা হয়।
TISCO সম্পর্কে টীকা লেখো।
TISCO-র পুরোকথাটি হল Tata Iron and Steel Company। জামশেদজি টাটার পরিকল্পনায় ঝাড়খণ্ডের সিংভূম জেলায় সুবর্ণরেখা ও খরকাই নদীর মিলনস্থলে 1907 সালে এই কারাখানাটি স্থাপিত হয়। এটি বেসরকারি উদ্যোগে গঠিত বৃহত্তম লোহা ও ইস্পাত কারখানা।
কার্পাসবয়ন শিল্পকে শিকড় আলগা শিল্প বলে কেন?
কার্পাসবয়ন শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হল কার্পাস বা তুলো। এটি একটি বিশুদ্ধ কাঁচামাল অর্থাৎ সমপরিমাণ (1 টন) তুলো থেকে সমপরিমাণ (1 টন) সুতো বা বস্ত্র উৎপাদিত হয়। ফলে এই শিল্প কাঁচামাল উৎসের কাছে বা বাজারের কাছে বা এদের মধ্যবর্তী যে-কোনো স্থানেই গড়ে উঠতে পারে। অর্থাৎ কোনো নির্দিষ্ট স্থানে গড়ে ওঠার প্রবণতা লক্ষ করা যায় না। তাই কার্পাসবয়ন শিল্পকে শিকড় আলগা শিল্প বলে।
লোহা ও ইস্পাত শিল্পকে সব শিল্পের মেরুদণ্ড বলে কেন?
লোহা ও ইস্পাত শিল্পের ওপর অন্যান্য শিল্পের বিকাশ নির্ভর করে। লোহা ও ইস্পাত শিল্পের উৎপাদিত দ্রব্য দিয়ে কৃষিভিত্তিক, ধাতব শিল্প, যন্ত্রপাতি, রাস্তাঘাট, সেতু নির্মাণ সব ধরনের শিল্পকাজই করা যায়। তাই এই শিল্পকে সব শিল্পের মেরুদণ্ড বলে।
একটি কয়লাকেন্দ্রিক এবং একটি বন্দরভিত্তিক লোহা ও ইস্পাত কারখানার নাম করো।
কয়লাকেন্দ্রিক একটি লোহা ও ইস্পাত কারখানা হল ইন্ডিয়ান আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানির বার্নপুর-কুলটি স্টিল প্লান্ট এবং বন্দরভিত্তিক একটি লোহা ও ইস্পাত কারখানা হল রাষ্ট্রীয় ইস্পাত নিগম লিমিটেডের বিশাখাপত্তনম স্টিল প্লান্ট।
তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প সম্পর্কে কী জানো?
যে শিল্প ডিজিটাল ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে তথ্য আদানপ্রদান করে, তাকে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প বলে। এই শিল্প সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে ও বিভিন্ন শিল্পে তথ্যের আদানপ্রদান করে। কম্পিউটারের হার্ডওয়ার, সফটওয়ার, ইন্টারনেট, টেলিকম সরঞ্জাম, ই-কমার্স প্রভৃতি বিষয়গুলি এই শিল্পের সাথে যুক্ত।
ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প বলতে কী বোঝ?
যে শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে বিভিন্ন প্রকার ধাতু বিশেষত লোহা ও ইস্পাত ব্যবহৃত হয় এবং নানা ধরনের যন্ত্রপাতি তৈরি করা হয়, তাকে ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প বলে। যেমন — যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ নির্মাণ শিল্প, মোটরগাড়ি নির্মাণ শিল্প প্রভৃতি। ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প দুই প্রকার। যথা — 1. ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প ও 2. হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প।
সংকর ইস্পাত শিল্প সম্পর্কে টীকা লেখো।
যে ইস্পাত শিল্পে এক বা একাধিক লৌহ-সংকর ধাতু ব্যবহার করে নির্দিষ্ট ধরনের ধাতব ও বৈদ্যুতিক গুণাবলিসম্পন্ন ইস্পাত উৎপাদন করা হয়, তাকে সংকর ইস্পাত শিল্প (alloy steel industry) বলে। ভারতে মোট 3টি বৃহদায়তন সংকর ইস্পাত কারখানা আছে। এগুলি হল — 1. কর্ণটিকের বিশ্বেশ্বরায়া আয়রন অ্যান্ড স্টিল প্লান্ট, 2. দুর্গাপুরের অ্যালয় স্টিল প্লান্ট ও 3. তামিলনাড়ুর সালেম স্টিল প্লান্ট।
ভারতের একটি সরকারি এবং একটি বেসরকারি লোহা ও ইস্পাত শিল্পকেন্দ্রের নাম লেখো।
ভারতের একটি সরকারি লোহা ও ইস্পাত শিল্পকেন্দ্রের নাম হল – SAIL-এর অধীনস্থ ভিলাই স্টিল প্লান্ট (ভদ্রাবতী) এবং বেসরকারি লোহা ও ইস্পাত শিল্পকেন্দ্রের নাম হল — টাটা আয়রন অ্যান্ড স্টিল কর্পোরেশন (জামশেদপুর)।
পশ্চিমবঙ্গের দুটি কার্পাসবয়ন শিল্পকেন্দ্রের নাম লেখো।
পশ্চিমবঙ্গের দুটি কার্পাসবয়ন শিল্পকেন্দ্রের নাম হল — 1. শ্রীরামপুর ও 2. হাওড়া।
ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প সম্পর্কে টীকা লেখো |
যে ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে বৃহদায়তন শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বড়ো ও ভারী যন্ত্রপাতি, ভারী বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, কৃষি ও খনিতে প্রয়োজনীয় বড়ো যন্ত্রপাতি, বিভিন্ন প্রকার যানবাহন ইত্যাদি প্রস্তুত করা হয়, তাকে ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প বলে। উদাহরণ —. পশ্চিমবঙ্গের চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস।
ভারতে পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্রগুলির বেশিরভাগ বন্দরের কাছে গড়ে উঠেছে কেন?
ভারত পেট্রোলিয়াম বা খনিজ তেল উত্তোলনে স্বয়ম্ভর নয়। প্রতি বছর দেশের মোট চাহিদার প্রায় 83% বিভিন্ন দেশ থেকে জলপথে বন্দরের মাধ্যমে আমদানি করা হয়। যেহেতু দেশের অভ্যন্তরে শিল্পকেন্দ্র গড়ে উঠলে আমদানিকৃত দ্রব্য বন্দর থেকে দেশের অভ্যন্তরে পাঠানোর জন্য পরিবহণ ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। তাই দেশের বেশিরভাগ খনিজ তেল শোধনাগার ও পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্রগুলি বন্দরের কাছে গড়ে উঠেছে।
তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের কয়েকটি সমস্যা বলো|
1. আন্তর্জাতিক স্তরে চাহিদার হ্রাসবৃদ্ধি এই শিল্পে সমস্যার সৃষ্টি করে। 2. ভারতের সর্বত্র এই শিল্পের বিকাশ সঠিকভাবে হয়নি। 3. অনেকক্ষেত্রে বিদেশি মেধার তুলনায় দেশীয় মেধার গুণগত মান কম হয়।
ভারতের দুটি কৃষিভিত্তিক এবং দুটি খনিভিত্তিক শিল্পের নাম করো।
ভারতের দুটি কৃষিভিত্তিক শিল্প হল — 1.চিনি শিল্প, 2. কার্পাসবয়ন শিল্প এবং দুটি খনিভিত্তিক শিল্প হল — 1. লোহা ও ইস্পাত শিল্প, 2. সিমেন্ট শিল্প।
SAIL কী?
SAIL (Steel Authority of India Limited) হল একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, যা ভারতে সরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা লোহা ও ইস্পাত কারখানাগুলি পরিচালনা করে। SAIL – এর অন্তর্ভুক্ত 8টি বৃহদায়তন কারখানা আছে যার মধ্যে 1টি সংকর ইস্পাত কারখানা, 4টি লোহা ও ইস্পাত কারখানা এবং 1টি লৌহ-সংকর কারখানা।
শিল্পাঞ্চল কাকে বলে?
যে ভৌগোলিক এলাকায় শিল্পের একদেশিকতার কারণে বিভিন্ন সহযোগী ও অনুসারী শিল্পের বিকাশ ঘটে, তাকে শিল্পাঞ্চল বলে। উদাহরণ — পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর-আসানসোল শিল্পাঞ্চল।
পেট্রোরসায়ন শিল্পকে কেন সূর্যোদয়ের শিল্প বলে?
বৈচিত্র্য, পরিমাণ ও ব্যাবহারিক দিক থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পেট্রোরসায়ন শিল্পের গুরুত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের শিল্প বিকাশ লাভ করেছে। তাই পেট্রোরসায়ন শিল্পকে সূর্যোদয়ের শিল্প বলা হয়।
মিনি স্টিল প্লান্ট সম্বন্ধে ধারণা দাও ৷
যে সকল লোহা ও ইস্পাত কারখানার বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা 10 লক্ষ টনের কম এবং বৈদ্যুতিক চুল্লি (electric arc furnace) – র সাহায্যে স্পঞ্জ আয়রন ও স্ক্র্যাপ আয়রন থেকে ইস্পাত উৎপাদন করা হয়, তাদের মিনি স্টিল প্লান্ট বলা হয়। বর্তমানে ভারতে প্রায় 650টি মিনি স্টিল প্লান্ট রয়েছে। ভারতের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মিনি স্টিল প্লান্ট হল —
1. পশ্চিমবঙ্গের ন্যাশনাল আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি,
2. অন্ধ্রপ্রদেশের অন্ধ্র স্টিল কর্পোরেশন লিমিটেড,
3. মহারাষ্ট্রের মুকুন্দ লিমিটেড প্রভৃতি।
মাধ্যমিক ভূগোল বিষয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ এবং ভারতের শিল্প দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ বিশ্লেষণ করে পরীক্ষার্থীরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে সচেতন হতে পারেন। ভারতের শিল্প বিষয়টি পরীক্ষার দিকে থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ পরীক্ষার্থীরা দেশের আর্থিক অবনতির সাথে এই খাতে যোগ দিতে পারেন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন সাধারণত পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয় যাতে পরীক্ষার্থীদের সময় বেশি না লাগে। এই প্রশ্নগুলি মূলত সমস্যা বা সমস্যার সমাধান নিয়ে হয় এবং সাধারণত সংক্ষিপ্ত উত্তরের মাধ্যমে উত্তর দেওয়া হয়। এই প্রশ্নগুলি পরীক্ষার্থীদের জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা যাচাই করে।
এই নিবন্ধে আমরা ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তাই শিক্ষার্থীদের এই বিষয়টি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা উচিত।
মন্তব্য করুন