Madhyamik History Question Paper 2020 With Answer

Mrinmoy Rajmalla

আজকে আমরা এই আর্টিকেলে মাধ্যমিক পরীক্ষার পুরাতন বছরের প্রশ্ন ও তাদের উত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই আর্টিকেলের সাহায্যে শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক পরীক্ষায় আগের বছর কী প্রশ্ন এসেছিল তা সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পাবে। এই আর্টিকেলে আমরা Madhyamik History Question Paper 2020 With Answer নিয়ে আলোচনা করবো। মাধ্যমিক ২০২০ এর প্রশ্নগুলি শিক্ষার্থীদের পরের বছরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি তোমরা মাধ্যমিক ইতিহাস ইতিহাস পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে Madhyamik History Question Paper 2020 With Answer টি দেখে পরীক্ষা দিতে যাবে।

Table of Contents

Madhyamik-History-Question-Paper-2020-With-Answer

বিভাগ – ‘ক’

১। সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখ : ১×২০ = ২০

১.১ ‘বিশ্বপরিবেশ দিবস’ পালিত হয় –

(ক) ৮ই জানুয়ারি

(খ) ২৪শে ফেব্রুয়ারি

(গ) ৮ই মার্চ

(ঘ) ৫ই জুন

উত্তরঃ (ঘ) ৫ই জুন।

১.২ ভারতীয়রা আলুর ব্যবহার শিখেছিল যাদের কাছ থেকে –

(ক) পর্তুগিজ

(গ) মুঘল

(খ) ইংরেজ

(ঘ) ওলন্দাজ

উত্তরঃ (ক) পর্তুগিজ।

১.৩ প্রথম সরকারি শিক্ষা কমিশন (হান্টার কমিশন) গঠিত হয় –

(ক) ১৮৭২ খ্রিঃ

(খ) ১৮৭৮ খ্রিঃ

(গ) ১৮৮২ খ্রিঃ

(ঘ) ১৮৯০ খ্রিঃ

উত্তরঃ (গ) ১৮৮২ খ্রিঃ।

১.৪ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্মসমাজে যোগ দেন –

(ক) ১৮৩০ খ্রিঃ

(খ) ১৮৩৩ খ্রিঃ

(গ) ১৮৪৩ খ্রিঃ

(ঘ) ১৮৫০ খ্রিঃ

উত্তরঃ (গ) ১৮৪৩ খ্রিঃ।

১.৫ বাংলার নবজাগরণ ছিল –

(ক) ব্যক্তিকেন্দ্রিক

(খ) প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক

(গ) কলকাতাকেন্দ্রিক

(ঘ) গ্রামকেন্দ্রিক

উত্তরঃ (গ) কলকাতাকেন্দ্রিক।

১.৬ দ্বিতীয় অরণ্য আইনে (১৮৭৮) লাভবান হয়েছিল –

(ক) আদিবাসী সম্প্রদায়

(খ) ব্রিটিশ সরকার

(গ) ব্যবসায়ী শ্রেণি

(ঘ) ব্রিটিশ সরকার ও আদিবাসীশ্রেণি উভয়েই

উত্তরঃ (খ) ব্রিটিশ সরকার।

১.৭ ‘হুল’ কথাটির অর্থ হল –

(ক) ঈশ্বর

(খ) স্বাধীনতা

(গ) অস্ত্র

(ঘ) বিদ্রোহ

উত্তরঃ (ঘ) বিদ্রোহ।

১.৮ মহারানির ঘোষণাপত্রের (১৮৫৮) প্রধান উদ্দেশ্য ছিল –

(ক) ভারতবাসীর আনুগত্য অর্জন

(খ) ভারতে ব্রিটিশদের একচেটিয়া ব্যবসার অধিকার লাভ

(গ) ভারতীয় প্রজাদের স্বায়ত্ত্বশাসনের অধিকার প্রদান

(ঘ) মহাবিদ্রোহে (১৮৫৭) বন্দী ভারতীয়দের মুক্তিদান

উত্তরঃ (খ) ভারতে ব্রিটিশদের একচেটিয়া ব্যবসার অধিকার লাভ।

১.৯ ল্যান্ডহোল্ডার্স সোসাইটির সভাপতি ছিলেন –

(ক) রাজা রাধাকান্ত দেব

(খ) প্রসন্ন কুমার ঠাকুর

(গ) রাজা রামমোহন রায়

(ঘ) দ্বারকানাথ ঠাকুর

উত্তরঃ (ক) রাজা রাধাকান্ত দেব।

১.১০ হিন্দুমেলার সম্পাদক ছিলেন –

(ক) নবগোপাল মিত্র

(খ) গণেন্দ্রনাথ ঠাকুর

(গ) রাজনারায়ণ বসু

(ঘ) গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

উত্তরঃ (খ) গণেন্দ্রনাথ ঠাকুর।

১.১১ বাংলা ভাষায় প্রথম বই ছাপা হয় –

(ক) ১৫৫৬ খ্রিঃ

(খ) ১৭৭৮ খ্রিঃ

(গ) ১৭৮৫ খ্রিঃ

(ঘ) ১৮০০ খ্রিঃ

উত্তরঃ (খ) ১৭৭৮ খ্রিঃ।

১.১২ বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট – এর প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন

(ক) অরবিন্দ ঘোষ

(খ) সতীশচন্দ্র বসু

(গ) যোগেশচন্দ্র ঘোষ

(ঘ) প্রমথনাথ বসু

উত্তরঃ (ঘ) প্রমথনাথ বসু।

১.১৩ ‘দেশপ্রাণ’ নামে পরিচিত ছিলেন –

(ক) সতীশচন্দ্র সামস্ত

(খ) অশ্বিনীকুমার দত্ত

(গ) বীরেন্দ্রনাথ শাসমল

(ঘ) যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত

উত্তরঃ (গ) বীরেন্দ্রনাথ শাসমল।

১.১৪ মোপলা বিদ্রোহ (১৯২১) হয়েছিল –

(ক) মালাবার উপকূলে

(খ) কোঙ্কন উপকূলে

(গ) গোদাবরী উপত্যকায়

(ঘ) তেলেঙ্গানা অঞ্চলে

উত্তরঃ (ক) মালাবার উপকূলে।

১.১৫ ‘মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা’ (১৯২৯) হয়েছিল –

(ক) জাতীয় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে

(খ) বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে

(গ) শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে

(ঘ) কৃষক নেতাদের বিরুদ্ধে

উত্তরঃ (গ) শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে।

১.১৬ ‘নারী সত্যাগ্রহ সমিতি’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল –

(ক) বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময়ে

(খ) অসহযোগ আন্দোলনের সময়ে

(গ) আইন অমান্য আন্দোলনের সময়ে

(ঘ) ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময়ে

উত্তরঃ (গ) আইন অমান্য আন্দোলনের সময়ে।

১.১৭ ‘মাস্টারদা’ নামে পরিচিত ছিলেন –

(ক) বেণীমাধব দাস

(খ) সূর্য সেন

(গ) কৃষ্ণকুমার মিত্র

(ঘ) হেমচন্দ্র ঘোষ

উত্তরঃ (খ) সূর্য সেন।

১.১৮ মাদ্রাজে ‘আত্মসম্মান আন্দোলন’ শুরু করেন –

(ক) রামস্বামী নাইকার

(খ) নারায়ণ গুরু

(গ) ভীমরাও আম্বেদকর

(ঘ) গান্ধিজি

উত্তরঃ (ক) রামস্বামী নাইকার।

১.১৯ স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভারতের সবচেয়ে বড় দেশীয় রাজ্য ছিল –

(ক) কাশ্মীর

(খ) জুনাগড়

(গ) হায়দ্রাবাদ

(ঘ) জয়পুর

উত্তরঃ (গ) হায়দ্রাবাদ।

১.২০ পুনর্গঠিত কেরল রাজ্যটি অবস্থিত ছিল –

(ক) গোদাবরী উপত্যকায়

(খ) দক্ষিণ উড়িষ্যায়

(গ) কাথিয়াবাড় উপদ্বীপে

(ঘ) মালাবার উপকূলে

উত্তরঃ (ঘ) মালাবার উপকূলে।

বিভাগ – ‘খ’

২। নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (প্রতিটি উপবিভাগ থেকে অন্ততঃ ১টি করে মোট ১৬টি প্রশ্নের উত্তর দাও) : ১×১৬=১৬

উপবিভাগ : ২.১

২.১ একটি বাক্যে উত্তর দাও : ১×৪=৪

(২.১.১) বিপিনচন্দ্র পালের আত্মজীবনী গ্রন্থের নাম কী?

উত্তরঃ সত্তর বৎসর।

(২.১.২) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভারতীয় উপাচার্য কে ছিলেন?

উত্তরঃ গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।

(২.১.৩) কত খ্রিষ্টাব্দে ‘নীল কমিশন’ গঠিত হয়?

উত্তরঃ ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে।

(২.১.৪) ‘বর্ণপরিচয়’ কে রচনা করেন?

উত্তরঃ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

উপবিভাগ : ২.২

২.২ ঠিক বা ভুল নির্ণয় কর : ১×৪=৪

(২.২.১) ‘নদীয়া কাহিনী’ গ্রন্থটি ‘শহরের ইতিহাস’ – এর অন্তর্গত।

উত্তরঃ ভুল, এটি স্থানীয় বা আঞ্চলিক ইতিহাসের অন্তর্গত।

(২.২.২) বাবা রামচন্দ্র ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের নেতা।

উত্তরঃ ভুল, তিনি ছিলেন কৃষক বিদ্রোহের নেতা।

(২.২.৩) ফরোয়ার্ড ব্লক প্রতিষ্ঠা করেন সুভাষচন্দ্র বসু।

উত্তরঃ ঠিক।

(২.২.৪) লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রতিষ্ঠা করেন বাসন্তী দেবী।

উত্তরঃ ভুল, এটি প্রতিষ্ঠা করেন সরলাদেবী চৌধুরানী।

উপবিভাগ : ২.৩

২.৩ স্তম্ভের সঙ্গে ‘খ’ স্তম্ভ মেলাও : ১×৪=৪

‘ক’ স্তম্ভ‘খ’ স্তম্ভ
(২.৩.১) টমাস ব্যাবিংটন মেকলে(১) ল্যান্ডহোল্ডার্স সোসাইটি
(২.৩.২) কেশবচন্দ্র সেন(২) বর্তমান ভারত
(২.৩.৩) রাজা রাধাকান্ত দেব(৩) পাশ্চাত্য শিক্ষা
(২.৩.৪) স্বামী বিবেকানন্দ(৪) নববিধান

উত্তরঃ

‘ক’ স্তম্ভ‘খ’ স্তম্ভ
(২.৩.১) টমাস ব্যাবিংটন মেকলে(৩) পাশ্চাত্য শিক্ষা
(২.৩.২) কেশবচন্দ্র সেন(৪) নববিধান
(২.৩.৩) রাজা রাধাকান্ত দেব(১) ল্যান্ডহোল্ডার্স সোসাইটি
(২.৩.৪) স্বামী বিবেকানন্দ(২) বর্তমান ভারত

উপবিভাগ : ২.৪

২.৪ প্রদত্ত ভারতবর্ষের রেখা মানচিত্রে নিম্নলিখিত স্থানগুলি চিহ্নিত কর ও নামাঙ্কিত করো : ১×৪=৪

(২.৪.১) বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের কেন্দ্র বারাসাত।

(২.৪.২) নীলবিদ্রোহের অন্যতম কেন্দ্র – যশোহর-নদিয়া।

(২.৪.৩) মহাবিদ্রোহের (১৮৫৭) অন্যতম কেন্দ্র মিরাট।

(২.৪.৪) পুনর্গঠিত রাজ্য (১৯৬০) – মহারাষ্ট্র।

প্রদত্ত ভারতবর্ষের রেখা মানচিত্রে নিম্নলিখিত স্থানগুলি চিহ্নিত কর ও নামাঙ্কিত করো

অথবা

(কেবলমাত্র দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীদের জন্য)

২.৪ শূন্যস্থান পূরণ কর : ১×৪=৪

(২.৪.১) সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের একজন নেতা ছিলেন__।

উত্তরঃ সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের একজন নেতা ছিলেন ভবানী পাঠক

(২.৪.২) নীলবিদ্রোহের একটি কেন্দ্র ছিল__।

উত্তরঃ নীলবিদ্রোহের একটি কেন্দ্র ছিল নদীয়া

(২.৪.৩) মহাবিদ্রোহের (১৮৫৭ খ্রিঃ) সময়ে ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন__।

উত্তরঃ মহাবিদ্রোহের (১৮৫৭ খ্রিঃ) সময়ে ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন লর্ড ক্যানিং

(২.৪.৪ ) হায়দ্রাবাদ রাজ্যটি স্বাধীন ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়__খ্রিষ্টাব্দে।

উত্তরঃ হায়দ্রাবাদ রাজ্যটি স্বাধীন ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে।

উপবিভাগ : ২.৫

নিম্নলিখিত বিবৃতিগুলির সঙ্গে সঠিক ব্যাখ্যাটি নির্বাচন কর: ১×৪=৪

(২.৫.১) বিবৃতি: হ্যালহেড তাঁর বাংলা ব্যাকরণ গ্রন্থ লেখেন এদেশীয় ইংরেজ কর্মচারীদের বাংলা ভাষা শেখানোর জন্য।

ব্যাখ্যা ১: কারণ, এ দেশের ইংরেজ কর্মচারীরা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অনুরাগী ছিলেন।

ব্যাখ্যা ২: কারণ, বাংলা ভাষা না জানলে ইংরেজ কর্মচারীদের পদোন্নতি হতো না।

ব্যাখ্যা ৩: কারণ, এ দেশে বাণিজ্য ও প্রশাসন চালাবার জন্য ইংরেজ কর্মচারীদের বাংলা ভাষা আয়ত্ত করা প্রয়োজন ছিল।

উত্তর: ব্যাখ্যা ৩ – কারণ, এ দেশে বাণিজ্য ও প্রশাসন চালাবার জন্য ইংরেজ কর্মচারীদের বাংলা ভাষা আয়ত্ত করা প্রয়োজন ছিল।

(২.৫.২) বিবৃতি: বারদৌলি সত্যাগ্রহ অনুষ্ঠিত হয় ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে।

ব্যাখ্যা ১: এই আন্দোলন ছিল ভূ-স্বামী ধনী কৃষকদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে ভূমিহীন দরিদ্র কৃষি-শ্রমিকদের আন্দোলন।

ব্যাখ্যা ২: এই আন্দোলন ছিল, ভূমি রাজস্ব বৃদ্ধির প্রতিবাদে সরকারের বিরুদ্ধে ভূ-স্বামী ধনী কৃষকশ্রেণির আন্দোলন।

ব্যাখ্যা ৩: এই আন্দোলন ছিল, ভূমি রাজস্ব বৃদ্ধির প্রতিবাদে ভূ-স্বামী ধনী কৃষকশ্রেণি এবং ভূমিহীন দরিদ্র কৃষকশ্রেণির মিলিত আন্দোলন।

উত্তর: ব্যাখ্যা ৩ – এই আন্দোলন ছিল, ভূমি রাজস্ব বৃদ্ধির প্রতিবাদে ভূ-স্বামী ধনী কৃষকশ্রেণি এবং ভূমিহীন দরিদ্র কৃষকশ্রেণির মিলিত আন্দোলন।

(২.৫.৩) বিবৃতি: ভারতছাড়ো আন্দোলনের (১৯৪২) সময়ে ভোগেশ্বরী ফুকোননী পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন।

ব্যাখ্যা ১: ভোগেশ্বরী ফুকোননী পুলিশের সঙ্গে সশস্ত্র সংগ্রামে মারা যান।

ব্যাখ্যা ২: পলাতক বিপ্লবী ভোগেশ্বরী ফুকোননী আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানালে পুলিশ তাঁকে গুলি করে।

ব্যাখ্যা ৩: ভোগেশ্বরী ফুকোননী অসমের নওগাঁ জেলার পুলিশ থানায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের চেষ্টা করলে পুলিশের গুলিতে মারা যান।

উত্তর: ব্যাখ্যা ৩ – ভোগেশ্বরী ফুকোননী অসমের নওগাঁ জেলার পুলিশ থানায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের চেষ্টা করলে পুলিশের গুলিতে মারা যান।

(২.৫.৪) বিবৃতি: সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার (১৯৩২) মাধ্যমে অনুন্নত শ্রেণির পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হলে গান্ধিজি তার প্রতিবাদে আমরণ অনশন শুরু করেন।

ব্যাখ্যা ১: গান্ধিজি ছিলেন অনুন্নত শ্রেণির নির্বাচনী অধিকারের বিরোধী।

ব্যাখ্যা ২: হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ তৈরির প্রতিবাদে গান্ধিজি অনশন করেন।

ব্যাখ্যা ৩: জাতীয় কংগ্রেসের নির্দেশে গান্ধিজি প্রতিবাদী অনশন করেছিলেন।

উত্তর: ব্যাখ্যা ২ – হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ তৈরির প্রতিবাদে গান্ধিজি অনশন করেন।”

৩। দু’টি অথবা তিনটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (যে কোনো ১১টি) : ২×১১=২২

৩.১ আধুনিক ভারতের ইতিহাস চর্চার উপাদান রূপে ‘সরকারি নথিপত্রে’র সীমাবদ্ধতা কী?

উত্তরঃ

আধুনিক ভারতের ইতিহাস চর্চার উপাদানরূপে সরকারি নথিপত্রের সীমাবদ্ধতাগুলি হল –

  • এই নথিপত্রগুলি পুলিশ বা গোয়েন্দা বা সরকারি আধিকারিকদের দ্বারা রচিত হত বলে এই ধরনের লেখাগুলি সরকারি নীতির প্রতি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমর্থন জানাত।
  • এই ধরনের নথিপত্রে সাধারণ মানুষ বা বিদ্রোহী জনগণের মনোভাব অনেকক্ষেত্রেই উপেক্ষিত হয়েছে।

৩.২ আত্মজীবনী এবং স্মৃতিকথা বলতে কী বোঝায়?

উত্তরঃ

নিজের জীবন ও সেই সংক্রান্ত ঘটনাবলি যখন কোনো ব্যক্তি নিজে লিপিবদ্ধ করেন, তখন সেই লিপিবদ্ধ কাহিনিকে আত্মজীবনী বলা হয়। আবার যখন কোনো ব্যক্তি অতীতে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা দীর্ঘদিন পর স্মৃতি থেকে মনে করে লিপিবদ্ধ করেন, তখন তা হয়ে ওঠে স্মৃতিকথা। এখানে উল্লেখ্য যে, সব আত্মজীবনীই স্মৃতিকথা; কিন্তু সব স্মৃতিকথাই আত্মজীবনী নয়।

৩.৩ এ দেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে খ্রিষ্টান মিশনারীদের প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তরঃ

ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারীদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল – ১. এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে ভারতীয় সমাজ-সংস্কৃতির অগ্রগতি ঘটানো। ২. এদেশে পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটানো। ৩. সর্বোপরি ভারতীয়দের মধ্যে খ্রিস্টান ধর্মের প্রসার ঘটানো।

৩.৪ ‘নববিধান’ কী?

উত্তরঃ

‘নববিধান’ কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল ‘নতুন বিধান’ বা ‘নতুন নিয়ম রীতি’। নববিধান হল ব্রাহ্মনেতা কেশবচন্দ্র সেন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্মসমাজের একটি শাখা। কেশবচন্দ্র সেন ও শিবনাথ শাস্ত্রীর মধ্যে বিরোধ শুরু হলে শিবনাথ শাস্ত্রী তাঁর অনুগত তরুণদের নিয়ে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন এবং কেশবচন্দ্র ১৮৮০ সালে তাঁর অনুগামীদের নিয়ে নববিধান প্রতিষ্ঠা করেন।

৩.৫ চুয়াড় বিদ্রোহের (১৭৯৮-১৭৯৯) গুরুত্ব কী ছিল?

উত্তরঃ

চুয়াড় বিদ্রোহের গুরুত্ব হল –

  • এই বিদ্রোহের পর চুয়াড়দের ওপর পুলিশি দমন-পীড়ন বৃদ্ধি পায়।
  • চুয়াড়দের কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখার উদ্দেশ্যে তাদের জন্য দুর্গম অঞ্চল নিয়ে জঙ্গলমহল জেলা গঠন করা হয়।
  • এই বিদ্রোহ পরবর্তীকালে ব্রিটিশবিরোধী পথ দেখায়।
  • বিদ্রোহে ইংরেজদের বিরুদ্ধে চুয়াড় কৃষক ও জমিদাররা ঐক্যবদ্ধ হয়।

৩.৬ ফরাজি আন্দোলন কী নিছক ধর্মীয় আন্দোলন ছিল?

উত্তরঃ

ফরাজি আন্দোলন শুধুই ধর্মীয় ছিল কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে। অনেকে মনে করেন যে, এটি নিছকই হিন্দুবিরোধী এবং ধর্মীয় আন্দোলন ছিল। নরহরি কবিরাজ, অভিজিৎ দত্ত প্রমুখ ধর্মীয় আন্দোলনের পাশাপাশি ফরাজি আন্দোলনে কৃষকশ্রেণির ব্যাপক অংশগ্রহণ, তীব্র ব্রিটিশ-বিরোধিতা প্রভৃতিও লক্ষ্য করেছেন।

৩.৭ ‘ল্যান্ডহোল্ডার্স সোসাইটি’ কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তরঃ

ল্যান্ডহোল্ডার্স সোসাইটি প্রতিষ্ঠার (১৮৩৮ খ্রি.) প্রধান উদ্দেশ্য হল –

১. চিরস্থায়ী ভূমিব্যবস্থার মধ্যে জমিদারদের নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করা। ২. খাজনা-মুক্ত ভূমিব্যবস্থা প্রণয়নের সরকারি উদ্যোগ প্রতিহত করা। ৩. ভারতীয়দের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী জাতীয় চেতনার বিকাশ ঘটানো।

৩.৮ উনিশ শতকে জাতীয়তাবাদের উন্মেষে ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসটির কীরূপ অবদান ছিল?

উত্তরঃ

উনিশ শতকে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উন্মেষে বঙ্কিমচন্দ্রের ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। এই উপন্যাসটি যুবসমাজকে শেখায় যে, জন্মভূমি স্বদেশ হল মা। মায়ের মুক্তির উদ্দেশ্যে সন্তানের চূড়ান্ত আত্মত্যাগের প্রয়োজন। দেশসেবায় আনন্দমঠের সন্তানদলের আত্মত্যাগ বিপ্লবীদের অনুপ্রাণিত করে।

৩.৯ বাংলার সাংস্কৃতিক জীবনে ছাপাখানার বিকাশের প্রভাব কতটা?

উত্তরঃ

বাংলার সাংস্কৃতিক জীবনে ছাপাখানার বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। যেমন –

  • বাংলায় গণশিক্ষার প্রসার শুরু হয়।
  • উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সস্তায় বইপত্র শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছোতে থাকে।
  • সাধারণ মানুষ সুলভে বইপত্র থেকে বিভিন্ন জ্ঞান আহরণের সুযোগ পায়।
  • বইয়ের ব্যবসার নতুন বাজার গড়ে ওঠে।

৩.১০ ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ ছিল কেন?

উত্তরঃ

ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ ছিল। কারণ, ভারতের চিরাচরিত শিক্ষায় যা কিছু সদর্থক ছিল, ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা তা ধ্বংস করে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাকাঠামোয় ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে অবহেলা করা হয়। ইংরেজি ভাষার বাহন এই শিক্ষা ভারতে গণশিক্ষার প্রসারে ব্যর্থ হয়। এই শিক্ষার মাধ্যমে ইংরেজদের গোলাম করণিক তৈরি এবং খ্রিস্টান ধর্মের প্রসার ঘটানো সম্ভব হয়।

৩.১১ মোপলা বিদ্রোহের (১৯২১) কারণ কী?

উত্তরঃ

১৮৩৬ সাল থেকে ১৮৫৮ সালের মধ্যে কেরলের মালাবার অঞ্চলে দরিদ্র কৃষিজীবী সম্প্রদায় মোপলারা বারবার বিদ্রোহ করে। ইংরেজদের বলপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া বিপুল রাজস্বের বোঝা, স্থানীয় জমিদারের তীব্র শোষণ ও অত্যাচার এবং ঋণের জালে জর্জরিত করা ছিল মোপলাদের বারংবার বিদ্রোহের কারণ।

৩.১২ কী উদ্দেশ্যে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তরঃ

কংগ্রেসের অভ্যন্তরে কংগ্রেস সমাজতান্ত্রিক দল (১৯৩৪ খ্রি.) প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হল –

  • কংগ্রেসে সমাজতান্ত্রিক আদর্শগুলি গ্রহণ করার জন্য বর্ষীয়ান নেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা।
  • দরিদ্র দেশবাসীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতার দাবিতে কাজ করা।
  • পুঁজিপতি, জমিদার ও দেশীয় রাজাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া।
  • ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার লক্ষ্যে কাজ করা।

৩.১৩ ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই অক্টোবর বাংলার নারী সমাজ কেন অরন্ধন পালন করে?

উত্তরঃ

স্বদেশি আন্দোলনের সূচনালগ্নে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ অক্টোবর রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর আহ্বানে বাংলার নারী সমাজের অরন্ধন পালন করার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল –

  • বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা।
  • হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে বাঙালি ঐক্যের স্বরূপ তুলে ধরা।
  • নারীদের অংশগ্রহণে স্বদেশি আন্দোলনকে শক্তিশালী করা।

৩.১৪ ননীবালা দেবী স্মরণীয় কেন?

উত্তরঃ

ননীবালা দেবী ছিলেন এক দুঃসাহসী বিপ্লবী। তিনি নিজের বাড়িতে বিপ্লবীদের গোপনে আশ্রয় দিয়ে গ্রেপ্তার হন। তাকে মাটির নিচে জানালাহীন কক্ষে আটক রাখা হয়। প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি অবস্থায় তিনি পুলিশ সুপার গোল্ডিকে কষিয়ে চড় মারেন। তিনি ছিলেন বাংলার প্রথম নারী রাজবন্দি।

৩.১৫ সর্দার প্যাটেলকে ‘ভারতের লৌহমানব’ বলা হয় কেন?

উত্তরঃ

ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার প্যাটেলকে ভারতের লৌহমানব বলা হয়। কারণ, তিনি ছিলেন সর্বদা নীতি ও আদর্শে অটল। তিনি অনমনীয় দৃঢ়তার সঙ্গে স্বাধীন ভারতে অধিকাংশ দেশীয় রাজ্যের ভারতভুক্তি ঘটান।

৩.১৬ কী পরিস্থিতিতে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (১৯৫৩) গঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ

স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের রাজ্য পুনর্গঠনের ভিত্তি নির্ধারণে ব্যাপক সমস্যা দেখা দেয়। এই সময় কংগ্রেস ভাষাভিত্তিক পুনর্গঠনের বিরোধিতা করলে সারা দেশে বিক্ষোভ শুরু হয়। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে তেলুগু গান্ধিবাদী নেতা পত্তি শ্রীরামুলু পৃথক অন্ধ্রপ্রদেশ গঠনের দাবিতে অনশন করে মৃত্যুবরণ করলে তেলুগুভাষী জেলাগুলিতে দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠিত হয়।

বিভাগ – ‘ঘ’

৪। সাত বা আটটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও। প্রতিটি উপবিভাগ থেকে অন্তত ১টি করে মোট ৬টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। ৪×৬=২৪

উপবিভাগ : ঘ.১

৪.১ ‘উডের নির্দেশনামা’ (১৮৫৪) কে এদেশের শিক্ষা বিস্তারের ‘মহাসনদ’ বলা হয় কেন?

উত্তরঃ

ভূমিকা – লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের আমল পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের পাঠক্রম ও গঠনরীতিতে কোনো সামঞ্জস্য ছিল না। এই পরিস্থিতিতে বোর্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতি চার্লস উড ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষা-বিষয়ক একটি নির্দেশনামা প্রকাশ করেন। এটি উডের ডেসপ্যাচ বা উডের নির্দেশনামা নামে পরিচিত।

(i) সুপারিশ – উডের ডেসপ্যাচ – এ যেসব সুপারিশ করা হয় সেগুলি হল –

সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থাকে ৫টি শ্রেণিতে বিভাজন দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও প্রাথমিক স্কুল, মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা একটি পৃথক শিক্ষাদপ্তর গঠন উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ কর্তা হিসেবে ‘ডিরেক্টর অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন’ পদ সৃষ্টি শিক্ষক-শিক্ষণ ব্যবস্থা চালু সাধারণ শিক্ষায় মাতৃভাষার ব্যবহার উচ্চশিক্ষায় ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব বৃদ্ধি, স্ত্রীশিক্ষার প্রসার প্রভৃতি।

(ii) মহাসনদ –

উডের নির্দেশনামা বা ডেসপ্যাচের ওপর ভিত্তি করে ভারতে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এই জন্য এই নির্দেশনামাকে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ‘ম্যাগনা কার্টা’ বা ‘মহাসনদ’ বলা হয়।

উপসংহার – আধুনিক শিক্ষার বিকাশের ক্ষেত্রে উডের নির্দেশনামা ছিল একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এটি ভারতের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির পাঠক্রম ও পঠনরীতির মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে সক্ষম হয়েছিল।

৪.২ শ্রীরামকৃষ্ণের ‘সর্বধর্ম সমন্বয়’ এর আদর্শ ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ

উনিশ শতকে যখন বাংলায় হিন্দুধর্ম নানা কুসংস্কার ও গোঁড়ামির বেড়াজালে আবদ্ধ, তখন আধ্যাত্মিক পুরুষ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব (১৮৩৬-৮৬ খ্রি.) সর্বধর্মসমন্বয় অর্থাৎ বিভিন্ন ধর্মের সম্প্রীতির আদর্শ প্রচার করে হিন্দু সম্প্রদায়কে নতুন আশার আলো দেখান।

  • যত মত, তত পথ: শ্রীরামকৃষ্ণের ধর্মীয় আদর্শের মূল কথা ছিল ‘সর্বধর্ম সমন্বয়’। তিনি সকল ধর্মের সুসম্পর্কের বা সর্বধর্মসমন্বয়ের আদর্শ প্রচার করে বলেন যে, সাধনার সব পথই সত্য ও সঠিক, অর্থাৎ “যত মত, তত পথ”। তিনি বলতেন যে বৈষ্ণব, শাক্ত, হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান প্রভৃতি সব ধর্মের সাধনার মধ্য দিয়েই ঈশ্বরলাভ করা যায়।
  • নিষ্কাম কর্মের আদর্শ: শ্রীরামকৃষ্ণ সাধনার জন্য সংসার ত্যাগের বদলে সংসারের আসক্তিকে জয় করার পরামর্শ দিয়েছেন। কর্মত্যাগের বদলে তিনি বলেছেন নিষ্কাম কর্মের কথা।
  • আন্তরিকতার আদর্শ: শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন যে, ঈশ্বরলাভের জন্য শাস্ত্রীয় বিধি, জপতপ, মন্ত্রতন্ত্র, যাগযজ্ঞ কিংবা কৃচ্ছ্রসাধনা-কোনোটারই প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র আন্তরিকতাকে সম্বল করেই যে – কোনো মানুষ স্বাধীনভাবে সত্যকে উপলব্ধি করতে পারে।
  • শিবজ্ঞানে জীবসেবা: শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন যে, জীবের কল্যাণসাধনই হল যথার্থ ধর্ম। তাই জীবের প্রতি দয়া নয়, তিনি ‘শিবজ্ঞানে জীবসেবা’র কথা বলেছেন।
  • চৈতন্যের পথে যাত্রা: মানুষের মহত্ত্বে বিশ্বাসী শ্রীরামকৃষ্ণ মনে করতেন যে, প্রত্যেক মানুষই হল অনন্ত শক্তির আধার এবং ‘চৈতন্যে’র পথে অগ্রসর হওয়াই হল মানুষের ধর্ম।
  • নারীমুক্তি: শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে নারী হল সাক্ষাৎ জগন্মাতার প্রতিমূর্তি। ভারতীয় নবজাগরণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য নারীমুক্তির আদর্শকে তিনি পূর্ণতার পথে এগিয়ে দেন। নারী জাতির দুর্দশামোচন ও সেকাজে নারীরই নেতৃত্বকে স্বীকৃতি জানিয়ে নারীর মহিমাকে তিনি আরও উঁচুতে তুলে ধরেন।

উপসংহার: শ্রীরামকৃষ্ণের ধর্মীয় আদর্শের মূল কথা ছিল ‘সর্বধর্মসমন্বয়’। তাই সকল ধর্মের সুসম্পর্কের বা সর্বধর্মসমন্বয়ের আদর্শ প্রচার করে তিনি বলতেন যে, “সব মতকে এক-একটি পথ বলে জানবে। আমার ঠিক পথ, আর সকলের মিথ্যা-এরূপ বোধ না হয়। বিদ্বেষভাব না হয়।

৪.৩ মহাবিদ্রোহের (১৮৫৭) প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের মনোভাব কীরূপ ছিল?

উত্তরঃ

ভূমিকা – উনিশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলাদেশে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার ঘটে এবং এই শিক্ষা গ্রহণ করে একদল শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান ঘটে। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের প্রতি এই শ্রেণির মনোভাব সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল –

(i) ব্রিটিশ শাসনের ওপর আস্থা – শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্তদের একটি বড়ো অংশ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসনের ওপর অগাধ আস্থা রাখত। তারা ব্রিটিশ শাসনকে ভারতের পক্ষে কল্যাণকর বলে মনে করত এবং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহেরও বিরোধী ছিল।

(ii) সিপাহিদের সাফল্যে অবিশ্বাস – বিদ্রোহের মাধ্যমে ইংরেজদের বিতাড়নের পর কেউ ভারতে জাতীয় রাষ্ট্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে কি না এই বিষয়ে শিক্ষিত বাঙালি সমাজ সন্দিহান ছিল। তাই তারা ১৮৫৭ – এর বিদ্রোহকে সমর্থন করেনি।

(iii) খ্যাতনামা বাঙালিদের অভিমত – (a) হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকায় বিদ্রোহীদের নৃশংস, বর্বর এবং নরহত্যাকারী দস্যু বলে অভিহিত করেন। (b) রাজনারায়ণ বসু ১৮৫৭ – এর বিদ্রোহকে ‘নৈরাজ্যবাদী’ এবং নানা সাহেব, আজিমউল্লার মতো বিদ্রোহী নেতাদের ‘অন্যায়কারী দানব’ বলে অভিহিত করেন। ও সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন যে, এই বিদ্রোহে জনগণের সমর্থন ছিল না।

(iv) বাংলায় বিদ্রোহের দুর্বলতা – ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে অত্যন্ত তীব্র হলেও শিক্ষিত
বাঙালি সমাজের সমর্থনের অভাবে এই বিদ্রোহ বাংলায় খুব একটা শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেনি।

(v) পরিণাম – শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালিরা প্রথমদিকে বিদ্রোহকে সমর্থন না করলেও বিদ্রোহ দমনে সরকার যে নিষ্ঠুর দমননীতির আশ্রয় নেয় তা শিক্ষিতদের চোখ খুলে দেয়। তারা উপলব্ধি করে যে বিদিশ শাসন কখনও ভারতীয়দের কল্যাণ করবে না। এই চেতনা পরবর্তীকালে জাতীয়তাবাদকে শক্তিশালী করে।

উপসংহার – সব শিক্ষিত বাঙালিই মহাবিদ্রোহের বিরুদ্ধে ছিল এবং ইংরেজদের সমর্থন বা সহযোগিতা করেছিল-এ কথা বলা ভুল হবে। এই যুগে বিদ্যাসাগরের মতো কিছু ব্যতিক্রমী চরিত্র অবশ্যই ছিল।

৪.৪ ভারত সভার প্রতিষ্ঠা ও বিকাশে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়র ভূমিকা বিশ্লেষণ কর।

উত্তরঃ

সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, আনন্দমোহন বসু, শিবনাথ শাস্ত্রী, দ্বারকানাথ গাঙ্গুলি প্রমুখের উদ্যোগে ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতসভা বা ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর নানা কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতসভার প্রাণপুরুষ হয়ে ওঠেন।

  • দেশব্যাপী প্রচার – ভারতসভাকে একটি সর্বভারতীয় সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ করেন এবং সভা-সমাবেশের মাধ্যমে জনমত গঠনের উদ্যোগ নেন।
  • বিভিন্ন শাখা স্থাপন – সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সক্রিয় উদ্যোগ ও প্রচারের ফলে লখনউ, মিরাট, লাহোর, সিন্ধু প্রভৃতি অঞ্চলে শীঘ্রই ভারতসভার বেশ কিছু শাখা স্থাপিত হয়।
  • আন্দোলনে নেতৃত্বদান – সুরেন্দ্রনাথ ব্রিটিশবিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে ভারতসভাকে জনপ্রিয় করে তোলেন।
  • সর্বভারতীয় জাতীয় সম্মেলন – সুরেন্দ্রনাথের সক্রিয় উদ্যোগে কলকাতায় ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে সর্বভারতীয় জাতীয় সম্মেলন বা অল ইন্ডিয়া ন্যাশনাল কনফারেন্স নামে মহাসভা অনুষ্ঠিত হয়।
  • কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় প্রেরণা – সর্বভারতীয় জাতীয় সম্মেলনের প্রেরণায় অ্যালান অক্টেভিয়ান হিউম ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন।
  • কংগ্রেসকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ভূমিকা – ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশনে সুরেন্দ্রনাথ তাঁর অনুগামীদের নিয়ে অধিবেশনে যোগ দেন। এর ফলে কংগ্রেস অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

উপসংহার – জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পূর্বে সুরেন্দ্রনাথই প্রথম ভারতবাসীকে রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ করার কাজে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। পরে কংগ্রেস গড়ে উঠলে তিনি সদলবলে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে ভারতীয়দের রাজনৈতিক ভিত্তি সুদৃঢ় করেন। তাঁকে ‘রাষ্ট্রগুরু’ সম্মানে ভূষিত করা হয়।

উপবিভাগ : ঘ.২

৪.৫ বারদৌলি সত্যাগ্রহের প্রতি জাতীয় কংগ্রেসের কীরুপ মনোভাব ছিল?

উত্তরঃ

ভূমিকা – ব্রিটিশ সরকার বোম্বাই প্রেসিডেন্সিতে ভূমিরাজস্বের হার ৩০% বাড়িয়ে দিলে কৃষকদের দুর্দশা বাড়ে। তারা সরকারের কাছে আবেদন করে রাজস্বের হার কমাতে ব্যর্থ হলে আন্দোলনের পথে পা বাড়ায়।

(i) কংগ্রেসকে প্রস্তাব – গুজরাটের সক্রিয় নেতা নরহরি পারিখ, রবি শঙ্কর ব্যাস, মোহনলাল পান্ডে প্রমুখ গ্রামের ক্ষুব্ধ কৃষকদের সঙ্গে আন্দোলনের পন্থা নিয়ে আলোচনা করেন এবং তাতে কংগ্রেসের নেতৃত্ব গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন।

(ii) প্যাটেলের সঙ্গে আলোচনা – গান্ধিবাদী কংগ্রেস নেতা ও স্বাধীনতা সংগ্রামী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ইতিপূর্বে গুজরাটের খেদা সত্যাগ্রহে নেতৃত্ব দিয়ে খ্যাতিলাভ করেন। গুজরাটের নেতৃবৃন্দ প্যাটেলের সঙ্গে দেখা করে তাদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

(iii) প্যাটেলের পরামর্শ – প্যাটেল কৃষকদের বলেন যে, তিনি ঐক্যবদ্ধ কৃষকদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে রাজি আছেন। কিন্তু খাজনা প্রদান বন্ধ করলে কৃষকদের জেল, জমি থেকে উৎখাত প্রভৃতি ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা জানান যে, তারা যে – কোনো ঘটনার মুখোমুখি হতে প্রস্তুত।

(iv) গান্ধিজির সম্মতি – এরপর প্যাটেল বারদৌলির আন্দোলনকারীদের মনোভাবটি গান্ধিজিকে জানান। গান্ধিজি প্যাটেলের উদ্যোগে সম্মতি জানান। তবে গান্ধিজি জানান যে, তিনি নিজে বা কংগ্রেস প্রত্যক্ষভাবে বারদৌলির এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হবে না।

উপসংহার – প্যাটেলের নেতৃত্বে বারদৌলি সত্যাগ্রহ তীব্র আকার ধারণা করে। এতে নেতৃত্ব দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নেতা হিসেবে প্যাটেলের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

৪.৬ বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময়ে শ্রমিক শ্রেণির ভূমিকা কীরূপ ছিল?

উত্তরঃ

ভূমিকা – ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলন শুরু হলে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের শ্রমিকরাও এই আন্দোলনে শামিল হয়। তবে এই সময় বাংলায় শ্রমিক আন্দোলনের সর্বাধিক প্রসার ঘটে।

(i) মিছিল ও জমায়েত – লর্ড কার্জন ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ৬ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করলে বাংলার বিভিন্ন কলকারখানার শ্রমিক ও মজুররা প্রতিবাদ মিছিল ও জমায়েতে যোগ দেয়।

(ii) বয়কট – বাংলার বিভিন্ন জেলার শ্রমিক ও মজুররা বিলাতি পণ্য বয়কট করে আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলে। ময়মনসিংহের মুচিরা বিদেশি জুতা সারাতে, বরিশালের উড়িয়া রাঁধুনিরা রান্নায় বিদেশি দ্রব্য ব্যবহার করতে, কালীঘাটের ধোপারা বিলাতি কাপড় কাচতে আপত্তি জানায়।

(iii) রেল ধর্মঘট – বাংলার বিভিন্ন স্থানে রেল শ্রমিকরা ধর্মঘট করে। ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কর্মচারীরা ব্যাপক ধর্মঘট শুরু করে এবং রেলওয়ে মেন্স ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করে। জামালপুর, খড়গপুর, আসানসোল প্রভৃতি স্থানের রেল- ওয়ার্কশপ – এর কর্মচারীরাও ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করে।

(iv) চটকলে ধর্মঘট – কলকাতার সন্নিহিত বাউড়িয়া জুটমিল, বজবজে ক্লাইভ জুটমিল প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের চটকল শ্রমিকরাও ধর্মঘট করে।

(v) অন্যান্য ধর্মঘট – এ ছাড়া কলকাতার ট্রাম কোম্পানি, ছাপাখানা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা ধর্মঘট করে। বরিশাল সেটেলমেন্ট, হাওড়ার বার্ন কোম্পানি প্রভৃতির শ্রমিকরাও ধর্মঘট করে।

(vi) কুলি ও মেথরদের ধর্মঘট – কলকাতা পুরসভার ২ হাজার কুলি এবং মেথরও ধর্মঘটে শামিল হয়। এই ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকদের সমর্থনে কলকাতায় মিছিল বের হয়।

(vii) আন্দোলনের অবসান – আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর ব্যাপক পুলিশি নির্যাতন শুরু হলে বাংলার শ্রমিক আন্দোলন দিশাহারা হয়ে পড়ে। তা ছাড়া ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে গণ আন্দোলন ক্রমে দুর্বল হতে শুরু করলে শ্রমিক আন্দোলনও গতি হারিয়ে ফেলে।

উপসংহার – বাংলার বঙ্গভঙ্গবিরোধী স্বদেশি আন্দোলনে শ্রমিকরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। শ্রমিক আন্দোলনের ব্যাপকতায় সরকার চিন্তিত হয়ে পড়ে। অবশ্য ব্রিটিশ সরকারের কঠোর দমননীতি এবং ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে সরকার কর্তৃক বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণার ফলে বাংলার শ্রমিক আন্দোলন তার গতি হারায়।

উপবিভাগ : ঘ.৩

৪.৭ জুনাগড় রাজ্যটি কী ভাবে ভারতভুক্ত হয়?

উত্তরঃ

ভূমিকা – ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর ভারতীয় ভূখণ্ডের অধিকাংশ দেশীয় রাজ্য ভারতে যোগদান করলেও কয়েকটি রাজ্য ভারতে যোগ দিতে অস্বীকার করে। এগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল কাথিয়াবাড় উপদ্বীপে অবস্থিত জুনাগড়।

(i) সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি – দেশীয় রাজ্য জুনাগড়ের জনসংখ্যার অন্তত ৮০ শতাংশই ছিল হিন্দু। কিন্তু সেখানকার মুসলিম নবাব জুনাগড়কে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করেন। জুনাগড়ের দেওয়ান শাহনওয়াজ ভুট্টো-ও ছিলেন মুসলিম লিগের উগ্র সমর্থক।

(ii) প্রজাবিদ্রোহ – জুনাগড়ের নবাব রাজ্যটিকে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করতে চাইলে সেখানকার অ-মুসলিম প্রজাদের মধ্যে প্রবল গণবিক্ষোভ ও ব্যাপক বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে।

(iii) সেনা অভিযান – জুনাগড়ে তীব্র প্রজাবিদ্রোহের ফলে সেখানকার নবাব পাকিস্তানে পালিয়ে যান। এই পরিস্থিতিতে ভারতের সেনাবাহিনী জুনাগড়ে প্রবেশ করে।

(iv) গণভোট – জুনাগড়ের বাসিন্দারা ভারত, না পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দিতে আগ্রহী তা জানার জন্য সেখানে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে গণভোট নেওয়া হয়। গণভোটে সেখানকার মানুষ ভারতে যোগদানের পক্ষে মত দেয়।

(v) ভারতে যোগদান – গণভোটের পর জুনাগড় ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে (জানুয়ারি) ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।

উপসংহার – জুনাগড়ের ভারতে অন্তর্ভুক্তির ফলে দেশীয় রাজ্য দখলে এনে পাকিস্তানের শক্তিবৃদ্ধির প্রয়াস ধাক্কা খায়। এতে ভারতের সুবিধা হয়।

৪.৮ উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে ভারত সরকার কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করে?

উত্তরঃ

ভূমিকা – ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের পর পশ্চিম পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তান (পূর্ববঙ্গ) থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ উদ্‌দ্বাস্তু হয়ে পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম-সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আশ্রয় নেয়। স্বাধীন ভারত সরকারকে বাধ্য হয়ে উদ্‌দ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে নানা উদ্যোগ নিতে হয়।

(i) উদ্‌দ্বাস্তুদের আশ্রয় দান – ভারতে আগত নিঃস্ব, রিক্ত উদ্বাস্তুরা অনেকেই প্রথমে বিভিন্ন রেলস্টেশন, ফুটপাত, পরিত্যক্ত ঘরবাড়িতে বা খোলা আকাশের নীচে আশ্রয় নেয়। সরকার বিভিন্ন স্থানে উদ্বাস্তু শিবির প্রতিষ্ঠা করে আপাতত সেখানে উদ্বাস্তুদের বসবাসের ব্যবস্থা করে।

(ii) ত্রাণশিবিরের ব্যবস্থা – শিবিরগুলিতে বসবাসের সময় সরকার উদ্বাস্তুদের খাদ্য, পোশাক-পরিচ্ছদ, পানীয় জল, আলো, কিছু নগদ অর্থ, ওষুধপত্র প্রভৃতি সরবরাহ করে। উদ্বাস্তু পরিবারগুলির বালক-বালিকাদের শিক্ষাদানেরও ব্যবস্থা করা হয়।

(iii) পুনর্বাসনের ব্যবস্থা – শিবির থেকে উদ্‌দ্বাস্তু পরিবারগুলিকে বিভিন্ন স্থানে পুনর্বাসন দেওয়া হয়। সেময় উদ্বাস্তুদের বাড়ি তৈরি, জীবিকানির্বাহ প্রভৃতির জন্য আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হয়।

(iv) পাঞ্জাবে গৃহীত ত্রাণব্যবস্থা – পাঞ্জাবে আশ্রয়গ্রহণকারী উদ্বাস্তুদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার পর্যাপ্ত ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেয়। বিভিন্ন স্থানে নতুন নতুন উপনগরী গড়ে তুলে সেখানে তাদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়।

(v) পশ্চিমবঙ্গে গৃহীত ত্রাণব্যবস্থা – পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয়গ্রহণকারী উদ্বাস্তুরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণ ও পুনর্বাসনের সহযোগিতা পায়নি বলে অনেকে সমালোচনা করেন। তা ছাড়া বহু বাঙালি উদ্‌দ্বাস্তুকে মধপ্রদেশ-উড়িষ্যা সংলগ্ন দণ্ডকারণ্য, আন্দামান প্রভৃতি দূরবর্তী স্থানে পুনর্বাসনে পাঠালে তারা বাংলার পরিবেশ ও সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

উপসংহার – ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং পাঞ্জাব প্রদেশে সবচেয়ে বেশি উদ্বাস্তু আশ্রয় নেয়। অভিযোগ ওঠে যে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু পাঞ্জাবের উদ্বাস্তুদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের বিষয়ে যতটা যত্নবান ছিলেন, ততটা যত্নবান বাঙালি উদ্‌দ্বাস্তুদের বিষয়ে ছিলেন না।

বিভাগ – ‘ঙ’

৫। পনেরো বা ষোলটি বাক্যে যে কোন একটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ৮×১=৮

৫.১ উনিশ শতকের প্রথমার্ধে সতীদাহ প্রথা বিরোধী প্রচেষ্টাগুলির পরিচয় দাও। রামমোহন রায় কী ভাবে সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলনকে সাফল্যমন্ডিত করেন?

উত্তরঃ

ভূমিকা – খ্রিস্টপূর্ব যুগ থেকেই ভারতীয় হিন্দুসমাজে সতীদাহ-প্রথার প্রচলন ছিল বলে জানা যায়। খ্রিস্টপূর্ব ৩২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণকালে পাঞ্জাবে এই প্রথার প্রচলন ছিল। গুপ্তযুগের সাহিত্য, ‘রাজতরঙ্গিনী’, মঙ্গলকাব্য প্রভৃতিতেও এই প্রথার উল্লেখ আছে। বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন দিক থেকে সতীদাহপ্রথার বিরুদ্ধে উদ্যোগ নেওয়া হয়। মুঘল যুগে হুমায়ুন, আকবর, ঔরঙ্গজেব প্রমুখ মুঘল সম্রাট এই প্রথা বন্ধের চেষ্টা করেন।

উনিশ শতকের প্রথমার্ধে সতীদাহপ্রথা-বিরোধী প্রচেষ্টা

উনিশ শতকের প্রথমার্ধ থেকে সতীদাহপ্রথা-বিরোধী প্রচেষ্টার কিছু কিছু উদ্যোগ দেখা যায় –

(i) কেরির অভিজ্ঞতা – ইংল্যান্ড থেকে ভারতে আগত ব্যাপটিস্ট মিশনারি উইলিয়াম কেরি ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে একটি হিন্দু নারীর সতীদাহ বা সহমরণের জ্বলন্ত দৃশ্য দেখে কম্পিত হয়ে ওঠেন। তিনি স্থির করেন যে, এই প্রথা বন্ধের লক্ষ্যে তিনি প্রয়াস চালিয়ে যাবেন।

(ii) আর্জি – উইলিয়াম কেরি ও তাঁর দুই সহযোগী মার্শম্যান ও উইলিয়াম ওয়ার্ড ব্রিটিশ প্রশাসনের উপরের স্তরে ঘুরে ঘুরে সতীদাহপ্রথা বন্ধের বিষয়ে আর্জি জানাতে থাকেন। তারা সতীদাহপ্রথার নিষ্ঠুরতা সবিস্তারে লিখে এই প্রথা বন্ধের অনুরোধ করে গভর্নর জেনারেল লর্ড ওয়েলেসলির কাছে আর্জি জানান। কিন্তু তাঁদের উদ্যোগ সফল হয়নি।

(iii) সরকারি নির্দেশিকা – সতীদাহপ্রথা জোর করে বন্ধ করার জন্য সরকার ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে পুলিশদের নির্দেশ দেয়। ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে একটি নির্দেশে বলা হয় যে, পুলিশকে নির্দেশে বলা হয় যে, পুলিশকে যেন সতীদাহের খবর দেওয়া হয়।

(iv) পুস্তিকা প্রকাশ – সতীদাহপ্রীর বিরোধিতা করে কেরি ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে একটি বই প্রকাশ করেন। কিন্তু এই উদ্যোগ সত্ত্বেও বাংলায় সতীদাহপ্রথার প্রকোপ বেড়ে চলে।

রামমোহন রায়ের উদ্যোগে সতীদাহপ্রথা-বিরোধী আন্দোলন

উনিশ শতকে সতীদাহপ্রথার বিরুদ্ধে সবচেয়ে জোরালো ও সাফল্যমণ্ডিত আন্দোলন গড়ে তোলেন রাজা রামমোহন রায়।

(i) সূত্রপাত – রামমোহন রায় ১৮২১ খ্রিস্টাব্দে সতীদাহপ্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। শ্মশানে ঘুরে ঘুরে তিনি মৃতের বাড়ির লোকজনকে এই কুপ্রথার বিরুদ্ধে বোঝানোর চেষ্টা চালিয়ে যান। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্মসমাজের সদস্যরাও এ কাজে তাঁকে সহায়তা করেন।

(ii) পুস্তিকা প্রকাশ – রামমোহন সতীদাহপ্রথার বিরুদ্ধে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ‘সহমরণ বিষয় প্রবর্তক ও নিবর্তকের সম্বাদ’ নামে প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। তিনি ১৮২১ খ্রিস্টাব্দে সতীদাহ- প্রথার বিরুদ্ধে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। তিনি হিন্দুশাস্ত্র থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করেন যে, শাস্ত্রে কোথাও সতীদাহের কথা নেই।

(iii) আবেদন – রামমোহন ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে সতীদাহপ্রথার অবসানের দাবি করে ভারতের বড়োলার্ট লর্ড বেন্টিঙ্ককে আবেদন করেন। কিন্তু চার্লস মেটকাফ তখন বেন্টিঙ্ককে বোঝান যে, সতীদাহপ্রথা বন্ধ করলে ভারতীয়রা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে পারে।

(iv) আইন পাস – লর্ড বেন্টিঙ্ক ভারতীয়দের বিদ্রোহের ভয় থেকে বিধবাদের দুর্বিষহ জীবন নিয়ে বেশি ভাবিত ছিলেন। তাই তিনি রামমোহনের আবেদনে সাড়া দিয়ে ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ ডিসেম্বর সতীদাহপ্রথা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আইন জারি করেন এবং সতীদাহের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির ব্যবস্থা করেন।

উপসংহার – সতীদাহপ্রথা নিষিদ্ধ আইন বাংলা ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বোম্বাই ও মাদ্রাজ সেদেশেও প্রসারিত হয়। কিন্তু এই আইনের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার হিন্দু সরকারকে জানায় যে, সরকার তাদের ধর্মীয় প্রথায় হস্তক্ষেপ করেছে। কিন্তু লন্ডনের প্রিভি কাউন্সিল আইনটিকে বহাল রাখে।

৫.২ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাচিন্তা ও শান্তিনিকেতন ভাবনার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তরঃ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে তাঁর শিক্ষাচিন্তার বিষয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা চালান। তাঁর শিক্ষাভাবনায় মানুষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। তিনি শিক্ষাভাবনার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলির ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

(i) মানুষের দুর্দশা দূর করা – দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর পুত্র রবীন্দ্রনাথকে জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব দিলে রবীন্দ্রনাথ সর্বপ্রথম গ্রামের সাধারণ মানুষের দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা স্বচক্ষে দেখার সুযোগ পান। তিনি উপলব্ধি করেন, গ্রামই হল ভারতের প্রাণ, গ্রামের উন্নতি না হলে দেশের উন্নতি হবে না। এজন্য তিনি গ্রাম সংগঠনের মাধ্যমে পল্লিমঙ্গল সাধনের উদ্যোগ নেন।

(ii) কৃষির উন্নতি – রবীন্দ্রনাথ উপলব্ধি করেন, গ্রামের মানুষের কৃষিভিত্তিক জীবন-জীবিকার উন্নতি না হলে তাদের প্রকৃত উন্নতি হবে না। এজন্য গ্রামের কৃষিবিদ্যার উন্নয়নের উদ্দেশ্যে তিনি ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বন্ধুপুত্র সন্তোষচন্দ্র মজুমদারকে আমেরিকায় পাঠান। পরে জামাতা নরেনদনায় প্রাজ্ঞালিকেও তিনি ১৯০৭ খ্রিস্টাকে বিদেশে কৃষিবিদ্যা পড়ার জন্য পাঠান। রথীন্দ্রনাথ, তাঁর বন্ধু ও নগেন্দ্রনাথ ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে স্বদেশে ফিরে রবীন্দ্রনাথের তত্ত্বাবধানে বৈজ্ঞানিক প্রথায় চাষবাস এবং বীজ, সার, সেচ প্রভৃতির ব্যবহার শুরু করেন।

(iii) কুটিরশিল্পের বিকাশ – রবীন্দ্রনাথ গ্রামের মানুষের মধ্যে কুটিরশিল্পের প্রসারের বিষয়েও চিন্তাভাবনা করেন। তিনি একজন তাঁতিকে শান্তিনিকেতনে নিয়ে গিয়ে সেখানকার দরিদ্র মানুষকে তাঁতের কাজ শিখতে উৎসাহিত করেন। এ ছাড়া মৃৎশিল্প-সহ বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্পের প্রসার ঘটানোর বিষয়েও তিনি চিন্তাভাবনা করেন।

(iv) শিক্ষার প্রসার – গ্রামের মানুষের অজ্ঞতা দূর করার উদ্দেশ্যে তাদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটানো অত্যন্ত জরুরি বলে রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন। তাঁর মতে, গ্রামের মানুষের সেবা করতে হলে তাদের সম্পর্কে আগে শিক্ষালাভ করতে হবে। গ্রামের মানুষের মধ্যেও শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে।

(v) সম্প্রীতির প্রসার – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমাজের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির প্রয়োজনের ওপর গুরুত্ব দেন। সম্ভাব্য সংঘাতের অনুমান করেও তিনি হিন্দু-মুসলমান-ব্রাহ্মণ- চণ্ডালের বিভেদ দূর করে কর্মক্ষেত্রে প্রাণচঞ্চলতা নিয়ে আসার কথা বলেন। তিনি বলেন, “সাহাদের হাত থেকে শেখদের বাঁচাতে হবে।” এই সাহা ও শেখ কোনো বিশেষ সম্প্রদায় ছিল না। তারা হল আসলে ‘আমলা’ ও ‘চাষা’।

বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাচিন্তা

প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে মানুষের জীবন ও অস্তিত্ব ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত – এ কথা রবীন্দ্রনাথ মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছিলেন। তাই তাঁর শিক্ষাভাবনায় প্রকৃতি ও পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়েছিল। বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তাঁর শিক্ষা ভাবনার এই বৈশিষ্ট্যটি বিশেষভাবে প্রভাব বিন্ধুর করেছিল।

(i) বিশ্ববিদ্যার সাধনা – রবীন্দ্রনাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ববিদ্যা সাধনার ক্ষেত্র হিসেবে দেখেছেন। তাঁর মতে, “বিশ্ববিদ্যালয় একটি বিশেষ সাধনার ক্ষেত্র। সাধারণভাবে বলা চলে সে সাধনা বিদ্যার সাধনা।’ তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ্য উদ্দেশ্য হল বিদ্যা উদ্ভাবন, গৌণ উদ্দেশ্য হল বিদ্যা দান।

(ii) শিক্ষার অবারিত দ্বার – রবীন্দ্রনাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার সকলের জন্য উন্মুক্ত করার পক্ষপাতী ছিলেন। দেশবিদেশের সকল পণ্ডিত ও শিক্ষার্থীরা যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যা সাধনার সুযোগ পায়, রবীন্দ্রনাথ তা নিশ্চিন্ত করতে চেয়েছিলেন।

(iii) পাঠক্রমের বৈচিত্র্য – রবীন্দ্রনাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমে বৈচিত্র্য আনার পক্ষপাতী ছিলেন। এজন্য বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দি ভবন, চিনা ভবন, কৃষি অর্থনৈতিক গবেষণাকেন্দ্র, পিল্লি শিক্ষাভবন প্রভৃতির প্রতিষ্ঠা হয়। রবীন্দ্রনাথের আমন্ত্রণে দেশবিদেশের বহু খ্যাতনামা পণ্ডিত এখানে শিক্ষকতা করতে আসেন।

(iv) মানবসত্তার বিকাশ – রবীন্দ্রনাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার ক্ষেত্রে মানুষের মানবসত্তার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটিয়ে তাকে সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণকামী সদস্য হিসেবে গড়ে তোলার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “মানুষের অভ্যন্তরের মানুষটিকে পরিচর্যা করে খাঁটি মানুষ বানানোর প্রচেষ্টাই শিক্ষা।

উপসংহার – রবীন্দ্রনাথ নিজে এমন এক বিশ্ববিদ্যালয় ভাবনা পোষণ করতেন যেখানে মুক্তচিন্তা, সত্যানুসন্ধান, স্বাধীনতা প্রভৃতির দ্বারা মানুষ রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠবে। তাঁর এই ভাবনা বাস্তবায়িত হয়ে উঠেছিল তাঁর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে।

৫.৩ বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তরঃ

ভূমিকা – ঔপনিবেশিক শাসনকালে বাংলার হিন্দু জনগোষ্ঠীর একটি বড়ো অংশই ছিল নিম্নবর্ণের দলিত হিন্দু। এই সময় বাংলার দলিত হিন্দুদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ভুক্ত। ১৮৭২ থেকে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সারা বাংলাজুড়ে নমঃশূদ্র আন্দোলন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

(i) আন্দোলনের কারণ – ঔপনিবেশিক শাসনকালে বিভিন্ন কারণে বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে

  • সামাজিক অমর্যাদা – উচ্চবর্ণের হিন্দুরা নমঃশূদ্রদের অস্পৃশ্য বলে মনে করত এবং তাদের ঘৃণার চোখে দেখত।
  • সীমাহীন দারিদ্র্য – দারিদ্র্য ছিল নমঃশূদ্রদের নিত্যসঙ্গী। কৃষিকাজ ছিল তাদের প্রধান পেশা। এ ছাড়া তারা মাছ ধরা, তাঁত বোনা, অন্যের বাড়ি ও জমিতে দিনমজুরের কাজ করা প্রভৃতি অত্যন্ত কম আয়ের পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিল।
  • অর্থনৈতিক শোষণ – দরিদ্র নমঃশূদ্রদের ওপর জমিদার ও সরকারের তীব্র শোষণ চলত।
  • সার্বিক দুর্দশা – অশিক্ষা, অচিকিৎসা, সামাজিক অমর্যাদা নমঃশূদ্রদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছিল।

(ii) আন্দোলনের পথে যাত্রা – নমঃশূদ্র সম্প্রদায় নিজেদের আর্থসামাজিক দুরবস্থা দূর করার উদ্দেশ্যে সামাজিক আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনে বিভিন্ন সময় নেতৃত্ব দেন হরিচাঁদ ঠাকুর, গুরুচাঁদ ঠাকুর, রাজেন্দ্রনাথ মণ্ডল, মুকুন্দবিহারী মল্লিক, বিরাটচন্দ্র মন্ডল, যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল, প্রমথরঞ্জন ঠাকুর প্রমুখ নমঃশূদ্র নেতা।

(iii) আন্দোলনের সূচনা – ফরিদপুর-বাখরগঞ্জ অঞ্চলে ১৮৭২- ৭৩ খ্রিস্টাব্দে একটি শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নমঃশূদ্র আন্দোলনের সূচনা হয়। এখানে এক বিশিষ্ট নমঃশূদ্র নেতার মায়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে উচ্চবর্ণের লোকজন আসতে অস্বীকার করে। এরপর নমঃশূদ্ররা উচ্চবর্ণের সঙ্গে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। তারা উঁচু জাতের কৃষিকাজ, ঘর ছাওয়া বা অন্যান্য কাজ করতে অস্বীকার করে।

(iv) মতুয়া ধর্মের প্রসার – নমঃশূদ্র নেতা শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর তাঁর অনুগামীদের মধ্যে ‘মতুয়া’ নামে এক ধর্মীয় ভাবধারার প্রচার করে নমঃশূদ্রদের ধর্মীয় আদর্শে ঐক্যবদ্ধ করেন। মতুয়া ধর্মকে কেন্দ্র করে নমঃশূদ্র আন্দোলন সক্রিয় হয়ে ওঠে। হরিচাঁদের পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুর নমঃশূদ্রদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পরামর্শ দেন।

(v) চেতনার জাগরণ – হরিচাঁদ ঠাকুর ও তাঁর পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুর উপলব্ধি করেন যে, নমঃশূদ্রদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তাদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার খুবই জরুরি। তাই তাঁরা আন্দোলনের বার্তা গ্রামগঞ্জের নমঃশূদ্রদের মধ্যে প্রচার করেন। তাঁরা সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নমঃশূদ্রের যাত্রাগান, পালাগান, সাপ্তাহিক ‘মুষ্ঠি’ সংগ্রহ প্রভৃতি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করেন। এর ফলে নমঃশূদ্রদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।

(vi) নমঃশূদ্র সংগঠন – নমঃশূদ্র সংগঠনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘নমঃশূদ্র ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’, ‘উন্নয়নী সভা’ (১৯০২ খ্রি.), ‘বেঙ্গল নমঃশূদ্র অ্যাসোসিয়েশন’ (১৯১২ খ্রি.), ‘নিখিলবঙ্গ নমঃশূদ্র সমিতি (১৯২৬ খ্রি.), ‘বেঙ্গল ডিপ্রেস্ড ক্লাসেস অ্যাসোসিয়েশন’ বা ‘বঙ্গীয় দলিত শ্রেণি সমিতি’ (১৯২৬ খ্রি.) প্রভৃতি। এসব সংগঠনের উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে নমঃশূদ্রদের সম্মেলনের আয়োজন হয়।

(vii) রাজনৈতিক দাবি – নমঃশূদ্ররা ক্রমে রাজনৈতিকভাবেও বিভিন্ন দাবিদাওয়া জানাতে থাকে।

  • ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের বঙ্গভঙ্গকে তারা সমর্থন করে।
  • তারা নিজেদের সাম্প্রদায়িক প্রতিনিধিত্বের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানায়।
  • লন্ডনে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে (১৯৩০-৩২ খ্রি.) আইনসভায় বেশিসংখ্যক দলিত প্রতিনিধি গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
  • আম্বেদকরের পৃথক নির্বাচনের দাবি এবং সরকারের ‘সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা’ নীতিকে তারা সমর্থন করে।

উপসংহার – নমঃশূদ্রদের দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে বাংলার দলিতরা বেশ কিছু রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার লাভ করতে সক্ষম হয়। তবে দেশভাগের সময় নমঃশূদ্র নেতা যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল নমঃশূদ্রদের পাকিস্তানে থেকে যাওয়ার আবেদন জানালেও শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুরের উত্তরসূরি প্রমথরঞ্জন ঠাকুরের নেতৃত্বে নমঃশূদ্রদের একটি বড়ো অংশ মাতৃভূমি ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় আশ্রয় গ্রহণ করে। এরপর নমঃশূদ্ররা পূর্ব পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের শিকার হলে এবং পশ্চিমবঙ্গে নিঃস্ব-রিক্ত উদ্বাস্তু জীবনের সম্মুখীন হলে তাদের আন্দোলনে ভাটা পড়ে।

(কেবলমাত্র বহিরাগত পরীক্ষার্থীদের জন্য)

বিভাগ – ‘চ’

৬। ৬.১ একটি পূর্ণ বাক্যে উত্তর দাও (যে কোনো ৪টি) : ১×৪=৪

৬.১.১ ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?

উত্তরঃ ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন – দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ।

৬.১.২ ‘নীলদর্পণ’ নাটকটি ইংরাজিতে কে অনুবাদ করেন?

উত্তরঃ নীলদর্পণ’ নাটকটি ইংরাজিতে অনুবাদ করেন – মাইকেল মধুসূদন দত্ত।

৬.১.৩ এশিয়াটিক সোসাইটি কোন বছর প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তরঃ শিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয় – ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে।

৬.১.৪ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য কে ছিলেন?

উত্তরঃ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ছিলেন – রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

৬.১.৫ দীপালি সংঘ কে প্রতিষ্ঠা করেন?

উত্তরঃ দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন – লীলা নাগ।

৬.১.৬ পুনা চুক্তি (১৯৩২) কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল?

উত্তরঃ পুনা চুক্তি (১৯৩২) স্বাক্ষরিত হয়েছিল – মহাত্মা গান্ধী ও বাবাসাহেব আম্বেদকর।

৬.২ দুটি বা তিনটি বাক্যে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (যে কোনো তিনটি) : ২×৩=৬

৬.২.১ মেকলে মিনিট’ কী?

উত্তরঃ

জনশিক্ষা কমিটির সভাপতি টমাস ব্যাবিংটন মেকলে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের দাবি জানিয়ে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে ২ ফেব্রুয়ারি বড়োলাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের কাছে একটি প্রস্তাব রাখেন, যা ‘মেকলে মিনিট’ নামে পরিচিত। এই প্রস্তাবে মেকলে বলেন যে, প্রাচ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা খুবই পশ্চাৎপদ। এজন্য এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তিত হওয়া উচিত।

৬.২.২ তিতুমির স্মরণীয় কেন?

উত্তরঃ

তিতুমির ছিলেন বাংলার ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রধান নেতা। তিনি দরিদ্র ও নির্যাতিত মুসলিমদের নিয়ে অত্যাচারী জমিদার, মহাজন ও নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন এবং বারাসাত বসিরহাটের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘোষণা করেন। শেষপর্যন্ত ব্রিটিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিনি নিহত হন।

৬.২.৩ পঞ্চানন কর্মকার কে ছিলেন?

উত্তরঃ

বাংলার ছাপাখানার বিকাশে পঞ্চানন কর্মকারের ভূমিকা ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তিনি ছিলেন বাংলা ভাষার ছাপাখানার হরফ নির্মাণের অন্যতম রূপকার। তিনি বাংলা ছাপাখানায় সচল ধাতু হরফের প্রচলন করেছিলেন।

৬.২.৪ ‘ভারতমাতা’ চিত্রটির গুরুত্ব কী?

উত্তরঃ

১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্বদেশি আন্দোলনের সময় হিন্দুদের ধনসম্পদের দেবী লক্ষ্মীর অনুকরণে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা ‘ভারতমাতা’ চিত্রটি শিক্ষিত ও প্রগতিশীল ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।

৬.২.৫ নেহরু-লিয়াকত চুক্তি (১৯৫০) কেন স্বাক্ষরিত হয়?

উত্তরঃ

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন, উভয় দেশের উদ্বাস্তুদের তাদের মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে দেওয়া, ফিরে যাওয়া উদ্বাস্তুদের পৈতৃক সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়া, অপহৃতা উদ্বাস্তু নারীদের ফিরিয়ে দেওয়া, সংখ্যালঘুদের অধিকার সুনিশ্চিত করা প্রভৃতি উদ্দেশ্যে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নেহরু-লিয়াকৎ‍ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer