মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

Rahul

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের তৃতীয় অধ্যায় “বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ” অধ্যায়ের ‘কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ‘ বিভাগের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
Contents Show

থ্যালাসেমিয়া কী? এর প্রকারভেদগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

থ্যালাসেমিয়া –

জিনগত ত্রুটির কারণে সৃষ্ট যে বংশগত রোগে হিমোগ্লোবিনের গ্লোবিন অংশে কোনো একটি পেপটাইড শৃঙ্খল সংশ্লেষিত হয় না অথবা স্বাভাবিক মাত্রার তুলনায় কম সংশ্লেষিত হয়, সেই বংশগত রোগকেই থ্যালাসেমিয়া বলে। এই রোগ হলে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ হ্রাস পায়, লোহিত রক্তকণিকা ক্ষুদ্র হয় এবং স্বল্পদিন বাঁচে। ফলস্বরূপ অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতার লক্ষণ প্রকাশ পায়।

থ্যালাসেমিয়ার প্রকারভেদ –

থ্যালাসেমিয়া প্রধানত দুই প্রকারের হয়। যথা – α থ্যালাসেমিয়া ও β থ্যালাসেমিয়া। আবার রোগের তীব্রতা অনুযায়ী দু-প্রকারের থ্যালাসেমিয়া দেখা যায়। যথা – থ্যালাসেমিয়া মেজর ও থ্যালাসেমিয়া মাইনর। α ও β উভয় থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রেই, থ্যালাসেমিয়া রোগটি মেজর ও মাইনর রূপে প্রকাশ পায়।

আলফা (α) থ্যালাসেমিয়া –

হিমোগ্লোবিনের আলফা পেপটাইড শৃঙ্খলের সংশ্লেষণ হ্রাস পেলে বা বন্ধ হলে, তাকে আলফা থ্যালাসেমিয়া বলা হয়। মানুষের 16 নং ক্রোমোজোম জোড়ার প্রতিটিতে দুটি করে মোট চারটি α শৃঙ্খল উৎপাদনকারী অ্যালিল থাকে। এর মধ্যে দুটি অ্যালিলের মিউটেশন হলে α থ্যালাসেমিয়া মাইনর ও চারটিতেই মিউটেশন ঘটলে α থ্যালাসেমিয়া মেজর দেখা যায়।

বিটা (β) থ্যালাসেমিয়া –

হিমোগ্লোবিনের বিটা পেপটাইড শৃঙ্খলের উৎপাদন বন্ধ হলে বা হ্রাস পেলে, তাকে বিটা থ্যালাসেমিয়া বলে। বিটা থ্যালাসেমিয়ার আবিষ্কর্তা আমেরিকান চিকিৎসক থমাস বেনটন কুলি (Thomas Benton Cooley, 1925) -র নামানুসারে একে কুলির অ্যানিমিয়া (Cooley’s anaemia) বলে। এটিও মেজর এবং মাইনর দুই প্রকার হয়। 11 নং ক্রোমোজোম জোড়ায় অবস্থিত β শৃঙ্খল সংশ্লেষকারী দুটি অ্যালিলের মিউটেশন ঘটলে β থ্যালাসেমিয়া মেজর ও একটির মিউটেশন ঘটলে β থ্যালাসেমিয়া মাইনর ঘটে।

থ্যালাসেমিয়া রোগের উপসর্গগুলি উল্লেখ করো। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত কোনো শিশুর দেহে কী কী লক্ষণ প্রকাশিত হয়? থ্যালাসেমিয়া রোগের কারণ সংক্ষেপে লেখো।

থ্যালাসেমিয়া রোগের উপসর্গ –

অ্যানিমিয়া সৃষ্টি –

হিমোগ্লোবিন উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার ফলে তীব্র অ্যানিমিয়া সৃষ্টি হয়। অক্সিজেন পরিবহণ ব্যাহত হয়।

লৌহ সঞ্চয় –

রোগীর দেহে বারবার রক্ত সঞ্চারণের প্রয়োজন হয় বলে দেহের বিভিন্ন অংশে লৌহ সঞ্চিত হয়, যার ফলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, যেমন – হৃৎপিণ্ড, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি, যকৃৎ, প্লিহা প্রভৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

হাড়ের গঠন বিকৃতি –

অস্থিমজ্জা অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায় বলে হাড়ের গঠন-বিকৃতি ঘটে এবং রোগীর মুখ ও মাথার খুলির হাড়ের গঠন অস্বাভাবিক হয়।

যকৃৎ ও প্লিহার বৃদ্ধি –

যকৃৎ ও প্লিহার বৃদ্ধি ঘটে। এদের যথাক্রমে হেপাটোমেগালি ও স্পিনোমেগালি বলা হয়।

অন্যান্য –

এ ছাড়া, এই রোগে বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং জনডিস, ক্লান্তি প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়। থ্যালাসেমিয়ার প্রকারভেদ অনুসারে মানুষের দেহে রোগের তীব্রতা ও লক্ষণগুলি আলাদা হয়।

থ্যালাসেমিয়ার কারণ –

এই রোগে হিমোগ্লোবিনের গ্লোবিউলার বা গ্লোবিন প্রোটিনের উৎপাদন ব্যাহত হয়। হিমোগ্লোবিনের গ্লোবিন পেপটাইড আলফা (α) ও বিটা (β) দুটি শৃঙ্খল দ্বারা গঠিত। আলফা শৃঙ্খলের দুই জোড়া জিন (HBA1 ও HBA2) মানুষের 16 নং ক্রোমোজোমে (অটোজোমে) এবং বিটা শৃঙ্খলের এক জোড়া জিন (HBB) মানুষের 11 নং ক্রোমোজোম (অটোজোমে) থাকে। জিনের পরিব্যক্তির (মিউটেশনের) ফলে আলফা ও বিটা গ্লোবিন প্রোটিন সঠিক বা উপযুক্ত অনুপাতে সংশ্লেষিত হয় না। এর ফলে হিমোগ্লোবিন গঠিত হয় না। এই কারণেই থ্যালাসেমিয়া রোগ দেখা দেয়।

বিটা ও আলফা থ্যালাসেমিয়ার জিনের অবস্থান
বিটা ও আলফা থ্যালাসেমিয়ার জিনের অবস্থান

হিমোফিলিয়া কী? হিমোফিলিয়ার প্রকারভেদগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

হিমোফিলিয়া –

মানুষের X ক্রোমোজোম সংযোজিত প্রচ্ছন্ন জিনঘটিত যে বংশগত রোগের ফলে দেহের আঘাতপ্রাপ্ত স্থান বা ক্ষতস্থান থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকে ও তা সহজেই তঞ্চিত হয় না, বরং অবিরাম ক্ষরণ হতে থাকে, সেই রোগকে হিমোফিলিয়া বলে।

হিমোফিলিয়ার প্রকারভেদ –

হিমোফিলিয়া প্রধানত তিন প্রকারের। যথা –

  1. হিমোফিলিয়া A বা ক্লাসিক হিমোফিলিয়া।
  2. হিমোফিলিয়া B বা ক্রিস্টমাস রোগ বা রয়‍্যাল হিমোফিলিয়া।
  3. হিমোফিলিয়া C।

হিমোফিলিয়া A বা ক্লাসিক হিমোফিলিয়া –

এইজাতীয় হিমোফিলিয়া রক্তের প্লাজমায় অবস্থিত রক্ততঞ্চনে সাহায্যকারী ফ্যাক্টর VIII বা অ্যান্টিহিমোফিলিক ফ্যাক্টর -এর অভাবের কারণে ঘটে। এইজাতীয় হিমোফিলিয়া মারাত্মক প্রকৃতির। আমাদের দেশের 80% হিমোফিলিয়াই এই ধরনের।

হিমোফিলিয়া B বা ক্রিস্টমাস রোগ –

এইজাতীয় হিমোফিলিয়া রক্তের প্লাজমায় অবস্থিত প্লাজমা থ্রম্বোপ্লাস্টিন কমপোনেন্ট (PTC) বা ফ্যাক্টর IX -এর অভাবের কারণে ঘটে। এটি অতটা মারাত্মক নয়। আমাদের দেশে 20% হিমোফিলিয়া এইজাতীয়। এটি ক্রিস্টমাস রোগ নামেও পরিচিত।

হিমোফিলিয়া C –

এটি অটোজোমাল জিনঘটিত অসম্পূর্ণভাবে প্রচ্ছন্ন একটি রোগ। এই রোগটি সাধারণত রক্ততঞ্চনকারী ফ্যাক্টর XI বা প্লাজমা থ্রম্বোপ্লাস্টিন অ্যান্টিসিডেন্ট বা PTA -এর অভাবজনিত কারণে ঘটে থাকে।

হিমোফিলিয়ার কারণ লেখো। হিমোফিলিয়ার লক্ষণগুলি কী কী?

হিমোফিলিয়ার কারণ –

ক্লাসিক হিমোফিলিয়া বা হিমোফিলিয়া A -এর কারণ –

আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের প্লাজমায় তঞ্চন ফ্যাক্টর VIII বা অ্যান্টিহিমোফিলিক ফ্যাক্টরের অনুপস্থিতি বা অভাব।

হিমোফিলিয়া B বা ক্রিস্টমাস রোগের কারণ –

আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে প্লাজমা থ্রম্বোপ্লাস্টিন কমপোনেন্ট (PTC) বা ফ্যাক্টর IX -এর অনুপস্থিতি বা অভাব।

হিমোফিলিয়া C রোগের কারণ –

রক্ততঞ্চনকারী ফ্যাক্টর XI বা প্লাজমা থ্রম্বোপ্লাস্টিন অ্যান্টিসিডেন্ট (PTA) -এর অভাবে এই রোগ হয়।

হিমোফিলিয়ার লক্ষণ –

এই রোগের লক্ষণগুলি, রোগের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে। তীব্রতা অনুযায়ী রোগটি তিন প্রকার। মৃদু হিমোফিলিয়া, মধ্যম হিমোফিলিয়া ও তীব্র হিমোফিলিয়া। বিভিন্ন তীব্রতায় এর লক্ষণগুলি নিম্নরূপ।

মৃদু হিমোফিলিয়ার লক্ষণ –

মৃদু হিমোফিলিয়ার ক্ষেত্রে বহুদিন পর্যন্ত আক্রান্তের মধ্যে এর লক্ষণ বোঝা যায় না। তবে বয়স বাড়লে রক্ততঞ্চনে সমস্যা দেখা যায়। বিশেষত শল্যচিকিৎসার সময়ে দীর্ঘক্ষণ রক্তক্ষরণের সমস্যা দেখা যায়।

মধ্যম হিমোফিলিয়ার লক্ষণ –

এই রোগের ক্ষেত্রে জন্ম থেকেই ক্ষতস্থান থেকে’রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া এই রোগে বিভিন্ন অস্থিসন্ধিতে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ দেখা যায়। এর ফলে অস্থিসন্ধিতে শক্তভাব, ফুলে যাওয়া প্রভৃতি সমস্যা দেখা যায়।

তীব্র হিমোফিলিয়ার লক্ষণ –

এই রোগের ক্ষেত্রে দেহ থেকে স্বতঃস্ফূর্ত অস্থিসন্ধিতে রক্তক্ষরণ, ঘনঘন রক্তক্ষরণ ও অস্থিসন্ধির বিকৃতি (হিমারথ্রোসিস) লক্ষ করা যায়। এ ছাড়া এই রোগে নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হয় ও করোটির মধ্যেও রক্তক্ষরণ হয়, ফলে প্যারালাইসিস এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

হিমোফিলিয়া
হিমোফিলিয়া

একজন স্বাভাবিক হিমোফিলিয়া বাহক স্ত্রীলোকের সঙ্গে একজন স্বাভাবিক পুরুষের বিবাহ হলে তাদের পুত্র-কন্যাদের হিমোফিলিয়া হওয়ার সম্ভাবনা কত তা চেকার বোর্ডের সাহায্যে দেখাও।

অনুরূপ প্রশ্ন, হিমোফিলিয়ার সাপেক্ষে ইংল্যান্ডের রানি ভিক্টোরিয়া বাহিক ও তাঁর স্বামী অ্যালবার্ট স্বাভাবিক ছিলেন। তাদের সন্তাদের মধ্যে হিমোফিলিয়া হওয়ার সম্ভাবনা কত শতাংশ ছিল তা চেকার বোর্ডের সাহায্যে দেখাও।

পুত্র-কন্যাদের হিমোফিলিয়া হওয়ার সম্ভাবনা –

একজন স্বাভাবিক হিমোফিলিয়া বাহক স্ত্রীলোকের সঙ্গে একটি স্বাভাবিক পুরুষের বিবাহ হলে তাদের পুত্র-কন্যাদের হিমোফিলিয়া হওয়ার সম্ভাবনা কত তা চেকার বোর্ডের সাহায্যে নীচে দেখানো হল।

পুত্র-কন্যাদের হিমোফিলিয়া হওয়ার সম্ভাবনার চেকার বোর্ড
পুত্র-কন্যাদের হিমোফিলিয়া হওয়ার সম্ভাবনার চেকার বোর্ড

অর্থাৎ, সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে 25% হিমোফিলিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পুত্রদের মধ্যে সেই সম্ভাবনা 50%। কন্যাদের হিমোফিলিয়া হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

একজন হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত পুরুষের সাথে একজন স্বাভাবিক নারীর বিবাহ হলে, সন্তানদের মধ্যে কত শতাংশের হিমোফিলিয়া হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তা চেকার বোর্ডের সাহায্যে দেখাও।

অনুরূপ প্রশ্ন, একজন বর্ণান্ধ পুরুষ ও স্বাভাবিক মহিলার বিবাহে সৃষ্ট সন্তানদের বর্ণান্ধ হওয়ার সম্ভাবনা চেকার বোর্ডের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো।

একজন হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত পুরুষের সাথে একজন স্বাভাবিক নারীর বিবাহ হলে, সন্তানদের মধ্যে যত শতাংশের হিমোফিলিয়া হওয়ার সম্ভাবনা আছে তা নীচে চেকার বোর্ডের সাহায্যে দেখানো হল –

সন্তানদের বর্ণান্ধ হওয়ার সম্ভাবনার চেকার বোর্ড
সন্তানদের বর্ণান্ধ হওয়ার সম্ভাবনার চেকার বোর্ড

অর্থাৎ সন্তান সন্ততিদের মধ্যে হিমোফিলিয়া হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও কন্যারা সবাই বাহক হবে। কিন্তু পুত্ররা স্বাভাবিক হবে।

দ্বিতীয় প্রশ্নটির ক্ষেত্রে একজন স্বাভাবিক মহিলার জিনোটাইপ হবেস্বাভাবিক মহিলার জিনোটাইপ- ও বর্ণান্ধ পুরুষের জিনোটাইপ হবে বর্ণান্ধ পুরুষের জিনোটাইপ হবে বাকি ক্রসটি প্রদত্ত ক্রসের অনুরূপ হবে।

বর্ণান্ধতার প্রকারভেদ ও কারণ লেখো।

বর্ণান্ধতার প্রকারভেদ –

বর্ণান্ধতার প্রকারগুলি নিম্নরূপ –

প্রোটানোপিয়া বা লাল বর্ণান্ধতা –

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি লাল বর্ণ শনাক্ত করতে পারেন না। তাঁরা লাল বর্ণকে কালো বা গাঢ় বাদামি দেখেন, কমলা-হলদে-সবুজকে বিভিন্ন গাঢ়ত্বের হলদে এবং বেগুনি বর্ণকে নীল দেখেন।

ডিউটেরানোপিয়া বা সবুজ বর্ণান্ধতা –

ডিউটেরানোপরা সবুজ বর্ণ শনাক্ত করতে পারেন না। তবে এঁরা লাল, কমলা ও হলদে বর্ণকে সঠিকভাবে চিনতে না পারলেও প্রোটানোপদের মতো অস্পষ্ট বা আবছা দেখেন না।

ট্রাইটানোপিয়া বা নীল বর্ণান্ধতা –

এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি নীল বর্ণ শনাক্ত করতে পারেন না।

বর্ণান্ধতার কারণ –

মানুষের চোখে বর্ণ চেনার জন্য দায়ী কোশ হল কোন (cone) কোশ। এগুলি সাধারণত তিন প্রকারের হয়, যথা – লাল সংবেদী কোন কোশ, সবুজ সংবেদী কোন কোশ ও নীল সংবেদী কোন কোশ। এই কোশগুলি যথাক্রমে লাল, সবুজ ও নীল বর্ণ শনাক্ত করতে সাহায্য করে। এই কোশগুলিতে লাল, সবুজ ও নীল বর্ণ সংবেদী ফোটোপসিন রঙ্গক থাকে। এই রঙ্গকগুলির মধ্যে লাল ও সবুজ বর্ণ সংবেদী ফোটোপসিনের সংশ্লেষ X ক্রোমোজোমস্থিত জিন দ্বারা এবং নীল বর্ণ সংবেদী ফোটোপসিনের সংশ্লেষ অটোজোমস্থিত জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই জিনগুলিতে মিউটেশন ঘটলে ফোটোপসিন সংশ্লেষিত হয় না, ফলে সংশ্লিষ্ট বর্ণের সাপেক্ষে বর্ণান্ধতা দেখা দেয়।

স্বাভাবিক অবস্থা ও তিন প্রকার বর্ণান্ধতা
স্বাভাবিক অবস্থা ও তিন প্রকার বর্ণান্ধতা

একজন বর্ণান্ধ মহিলা একজন স্বাভাবিক পুরুষকে বিবাহ করলে তাঁদের সন্তান-সন্ততির ফিনোটাইপ ও জিনোটাইপ কী হবে?

সন্তান-সন্ততির ফিনোটাইপ ও জিনোটাইপ –

একজন বর্ণান্ধ মহিলা একজন স্বাভাবিক পুরুষকে বিবাহ করলে তাঁদের সন্তান-সন্ততির ফিনোটাইপ ও জিনোটাইপ নীচের ক্রসের সাহায্যে দেখানো হল।

সন্তান-সন্ততির ফিনোটাইপ ও জিনোটাইপ
সন্তান-সন্ততির ফিনোটাইপ ও জিনোটাইপ

উক্ত ক্রসটি চেকার বোর্ডের সাহায্যে প্রস্তুত করা হলে পাই –

F₁ জনুর চেকার বোর্ড
F₁ জনুর চেকার বোর্ড

যেহেতু মা বর্ণান্ধ তাই ক্রিসক্রস উত্তরাধিকার সূত্র অনুযায়ী সমস্ত পুত্র বর্ণান্ধতার শিকার হবে এবং সমস্ত কন্যা স্বাভাবিক হলেও বাহক হবে। এক্ষেত্রে ওই দম্পতির পুত্ররা বর্ণান্ধ ও কন্যারা বাহক হবে।

অনেক সময় দেখা যায় যে, বাবা ও মা উভয়ই স্বাভাবিক। কিন্তু তাদের এক ছেলে বর্ণান্ধ হয়েছে। এটি কীভাবে সম্ভব হয় তা একটি চেকার বোর্ডের মাধ্যমে ব্যাখা করো।

অনুরূপ প্রশ্ন, একজন বর্ণান্ধতার বাহক মহিলা ও স্বাভাবিক পুরুষের বিবাহে অপত্যের মধ্যে বর্ণান্ধতার সম্ভাবনা কীরূপ তা দেখাও।

বর্ণান্ধ পুত্র পিতার থেকে Y ক্রোমোজোম ও মাতার থেকে একটি X ক্রোমোজোম পেয়েছে। অর্থাৎ, বর্ণান্ধ পুত্র তার X ক্রোমোজোমে বর্ণান্ধতার জন্য দায়ী প্রচ্ছন্ন জিনটি বহন করছে যা ক্রিসক্রস উত্তরাধিকারের মাধ্যমে সে তার মা -এর থেকে পেয়েছে। অথচ মা স্বাভাবিক, অর্থাৎ তার অপর X ক্রোমোজোমে প্রকট জিনটি রয়েছে। যেহেতু, পুত্রের ক্ষেত্রে মাতা থেকে প্রাপ্ত X ক্রোমোজোমটিতে বর্ণান্ধতার প্রচ্ছন্ন জিন বর্তমান তাই সে বর্ণান্ধ হয়েছে। বর্ণান্ধতার জন্য দায়ী প্রচ্ছন্ন জিনকে c ও প্রকট জিনকে c+ দ্বারা নির্দেশিত করলে, বাবা ও মা -এর জিনোটাইপ হবে যথাক্রমে Xc+Y ও Xc+Xc। এখানে চেকার বোর্ডের সাহায্যে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হল।

বর্ণান্ধতার বাহক মহিলা ও স্বাভাবিক পুরুষের বিবাহে অপত্যের মধ্যে বর্ণান্ধতা
বর্ণান্ধতার বাহক মহিলা ও স্বাভাবিক পুরুষের বিবাহে অপত্যের মধ্যে বর্ণান্ধতা

একটি ক্রস দ্বারা দেখাও যে, X ক্রোমোজোম বাহিত রোগগুলির দ্বারা পুরুষরা অধিক আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

পুরুষদের ক্ষেত্রে X ক্রোমোজোম একটি থাকে বলে X ক্রোমোজোম বাহিত জিনগুলির পরিপূরণ (complementation) হয় না। অর্থাৎ, X ক্রোমোজোমে কোনো রোগের জন্য দায়ী জিন থাকলে তা রোগকে প্রকাশিত করে দেয়। যেমন – হিমোফিলিয়া বা বর্ণান্ধতা রোগগ্রস্ত কোনো মহিলার সঙ্গে একজন স্বাভাবিক পুরুষের বিবাহ হলে সমস্ত পুত্রসন্তানই হিমোফিলিক বা বর্ণান্ধ হয়।

সন্তান-সন্ততির ফিনোটাইপ ও জিনোটাইপ
সন্তান-সন্ততির ফিনোটাইপ ও জিনোটাইপ

এক্ষেত্রে পুত্র বর্ণান্ধ জিনযুক্ত X ক্রোমোজোমটি মা -এর থেকে সবসময়ই পাবে ও তা পরিপূরণের অভাবে (অর্থাৎ অন্য X ক্রোমোজোমের অবর্তমানে) প্রকাশিত হয়ে থাকে। কিন্তু কন্যার ক্ষেত্রে মার থেকে প্রাপ্ত বর্ণান্ধ জিনযুক্ত X ক্রোমোজোমটির বাবার থেকে প্রাপ্ত স্বাভাবিক জিন দ্বারা পরিপূরণ ঘটে। তাই কন্যারা বাহক হলেও বর্ণান্ধ রোগের প্রকাশ এক্ষেত্রে ঘটে না।

একজন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত পুরুষ (α -থ্যালাসেমিয়া মাইনর) একজন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত স্ত্রীকে (α -থ্যালাসেমিয়া মাইনর) বিবাহ করলে তাদের সন্তান- সন্ততিদের মধ্যে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা কীরূপ তা ছকের সাহায্য দেখাও। থ্যালাসেমিয়ার মোকাবিলায় জেনেটিক কাউন্সেলিং -এর ভূমিকা লেখো।

অনুরূপ প্রশ্ন, থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে জেনেটিক কাউন্সেলিং -এর সময় কী পরামর্শ দেওয়া হয়?

α -থ্যালাসেমিয়া মাইনর আক্রান্ত পুরুষ ও স্ত্রীর বিবাহের ফলে, উৎপন্ন সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া হওয়ার প্রবণতা কীরূপ তা নীচে চেকার বোর্ডের সাহায্যে দেখানো হল –

থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে জেনেটিক কাউন্সেলিং -এর সময় কী পরামর্শ দেওয়া হয়
থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে জেনেটিক কাউন্সেলিং -এর সময় কী পরামর্শ দেওয়া হয়

থ্যালাসেমিয়া ও জেনেটিক কাউন্সেলিং –

  1. বাবা ও মা উভয়েই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে অপত্যে থ্যালাসেমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। জেনেটিক কাউন্সিলার সেক্ষেত্রে ভ্রুনের থ্যালাসেমিয়া রোগটি সৃষ্টি হয়েছে কি না তা নির্ধারণ করেন এবং প্রয়োজনে ভ্রুণ বিনষ্ট করে নতুন গর্ভাধানের ব্যাপারে পরামর্শ দেন।
  2. প্রথমে পরামর্শ গ্রহণকারী ব্যক্তির বিভিন্ন বংশগত রোগের পারিবারিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করা হয়।
  3. এরপর ওই ব্যক্তির কলাকোশ বা রক্ত সংগ্রহ করে, জিনগত পরীক্ষা করে সেই ব্যক্তি রোগের বাহক কিনা নির্ণয় করা হয়।
  4. বিবাহ পূর্বে দুইজন পার্টনারই বাহক নির্ণীত হলে তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যে থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হতে পারে তা ব্যাখ্যা করা হয়। সম্ভব হলে এই বিবাহ এড়িয়ে যাওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়।
  5. যে-কোনো একজন থ্যালাসেমিয়া বাহক হলে শিশু রোগটির বাহক হতে পারে সেই সম্বন্ধে বাবা-মাকে সচেতন করা হয়। জেনেটিক কাউন্সিলার জন্মের পর শিশুটির জিনগত অবস্থাও নির্ধারণ করানোর পরামর্শ দান করেন। এর ফলে ভবিষ্যতে শিশুটির পরিবার পরিকল্পনায় তা সাহায্য করে।
  6. থ্যালাসেমিয়ার বাহক মাতা গর্ভাবস্থায় অনেক সময় অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতায় ভোগেন। জেনেটিক কাউন্সিলার সে বিষয়টি তাঁর পরিবারের কাছে তুলে ধরেন।

সঞ্চারণ পদ্ধতি ও রোগের প্রকৃতি অনুযায়ী হিমোফিলিয়া ও থ্যালাসেমিয়া রোগের দুটি পার্থক্য লেখো।

অথবা, হিমোফিলিয়া ও থ্যালাসেমিয়া রোগের পার্থক্যগুলি লেখো।

হিমোফিলিয়া ও থ্যালাসেমিয়া রোগের পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়থ্যালাসেমিয়াহিমোফিলিয়া
কারণ বা সঞ্চারণ পদ্ধতিমানুষের 16 নং ক্রোমোজোমে অবস্থিত গ্লোবিন প্রোটিনের α শৃঙ্খল এবং 11 নং ক্রোমোজোমে অবস্থিত প্রোটিনের β শৃঙ্খলের অস্বাভাবিকতার কারণে এই রোগ হয়।রক্তের প্লাজমায় তঞ্চন ফ্যাক্টর VIII বা AHF -এর অভাবে হিমোফিলিয়া A এবং তঞ্চন ফ্যাক্টর IX বা PTC -এর অভাবে হিমোফিলিয়া B রোগ হয়।
রোগের প্রকৃতিহিমোগ্লোবিন উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় তীব্র অ্যানিমিয়া সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া যকৃৎ ও প্লিহার বৃদ্ধি ঘটে।রক্ততঞ্চন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এ ছাড়া অস্থিসন্ধিতে শক্তভাব, ফুলে যাওয়া প্রভৃতি সমস্যা দেখা যায়।
ক্রোমোজোমের প্রকৃতিঅটোজোম বাহিত রোগ।X -ক্রোমোজোম বা সেক্স ক্রোমোজোম বাহিত রোগ।
উপসর্গসঠিকভাবে হিমোগ্লোবিন শৃঙ্খল তৈরি না হওয়ায়, হিমোগ্লোবিনের গঠনগত ত্রুটি অ্যানিমিয়ার জন্ম দেয়। এর ফলে রোগীর মৃত্যুও ঘটতে পারে।রক্ততঞ্চন ব্যাহত হয়, ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রোগীর মৃত্যু ঘটার সম্ভাবনা থাকে।

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের তৃতীয় অধ্যায় “বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ” অধ্যায়ের ‘কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ‘ বিভাগের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন যার এটি প্রয়োজন হবে তার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ-কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ-মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

দেশীর রাজ্য দফতর কেন গঠিত হয়েছিল? দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির দলিল বলতে কী বোঝায়?

দেশীর রাজ্য দফতর কেন গঠিত হয়েছিল?

ভারতের জনজীবনে নদনদীর প্রভাব আলোচনা করো।

ভারতের জনজীবনে নদনদীর প্রভাব আলোচনা করো।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

দেশীর রাজ্য দফতর কেন গঠিত হয়েছিল?

ভারতের জনজীবনে নদনদীর প্রভাব আলোচনা করো।

উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের নদনদীর পার্থক্য লেখো।