আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” অধ্যায়ের ‘প্রাণীদেহে সাড়া প্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন‘ বিভাগের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

এন্ডোক্রিনোলজি বলতে কী বোঝ? এন্ডোক্রিন তন্ত্র বা অন্তঃক্ষরা তন্ত্র কাকে বলে?
এন্ডোক্রিনোলজি – অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি, নিঃসৃত হরমোন ও তাদের কার্যপদ্ধতি জীববিদ্যার যে শাখায় আলোচিত হয় তাকে এন্ডোক্রিনোলজি বলে।
এন্ডোক্রিন তন্ত্র বা অন্তঃক্ষরা তন্ত্র – অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি ও তা থেকে নিঃসৃত হরমোন নিয়ে গঠিত যে তন্ত্র জীবদেহের রাসায়নিক সমন্বয়সাধন করে, তাকে এন্ডোক্রিন তন্ত্র বা অন্তঃক্ষরা তন্ত্র বলে।
অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির বৈশিষ্ট্য লেখো।
অথবা, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি কীভাবে তুমি চিনবে?

1. মানুষ ও অন্যান্য উন্নত প্রাণীদেহে অবস্থিত অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি নালীবিহীন অর্থাৎ ক্ষরণ পদার্থ নির্গমনের জন্য কোনো নালী থাকে না।
2. অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে বিভিন্ন ধরনের জৈবরাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয়, যেগুলিকে সাধারণভাবে হরমোন বলে।
3. অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি রক্তজালক-সমৃদ্ধ হয়। কারণ, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোন, সংলগ্ন রক্তজালকের রক্তে মুক্ত হয় ও রক্তের রক্তরসের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে কার্যকরী অঙ্গে পৌঁছোয়।
হরমোন উৎপাদক গ্রন্থিকে অনাল গ্রন্থি বলে কেন?
হরমোন উৎপাদক গ্রন্থির নিজস্ব কোনো নালী থাকে না। এরা ক্ষরিত পদার্থকে (হরমোনকে) সরাসরি গ্রন্থির ভিতরের কলারসে বা রক্তপ্রবাহে মুক্ত করে। তাই হরমোন উৎপাদক গ্রন্থিকে অনাল গ্রন্থি বলে।
মানুষের শরীরে অবস্থিত অনাল গ্রন্থিগুলির নাম লেখো।
মানুষের প্রধান অনাল গ্রন্থিগুলি হল —
1. পিটুইটারি।
2. পিনিয়াল বডি।
3. থাইরয়েড।
4. প্যারাথাইরয়েড।
5. থাইমাস।
6. অগ্ন্যাশয়।
7. অ্যাড্রেনাল।
8. শুক্রাশয়।
9. ডিম্বাশয়।
হরমোনকে রাসায়নিক সমন্বয়ক বা রাসায়নিক দূত বলে কেন?
1. হরমোন রক্ত বা লসিকা দ্বারা উৎপত্তিস্থল থেকে কার্যস্থলে পৌঁছোয় ও কাজ করে থাকে। অনেকসময় একই কাজের বিপরীত দিক দুটি হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে (যেমন – ইনসুলিন ও গ্লুকাগন যথাক্রমে রক্তে শর্করা হ্রাস করে ও বৃদ্ধি করে)। এইভাবে দেহের নানা কাজ করা ও তাদের সমন্বয় করার কারণে হরমোনকে সমন্বায়ক বলে।
2. হরমোন মূলত প্রোটিন, স্টেরয়েড, গ্লাইকোপ্রোটিন, অর্থাৎ জৈব রাসায়নিক প্রকৃতির। এই কারণে সামগ্রিকভাবে হরমোনকে রাসায়নিক সমন্বায়ক বা সমন্বয়সাধক বলা হয়।
প্রাণী হরমোনের চারটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য লেখো।
প্রাণী হরমোনের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
1. এগুলি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বা অন্তঃক্ষরা কোশসমষ্টি থেকে ক্ষরিত হয়।
2. এগুলি সাধারণত প্রোটিন, পেপটাইড, গ্লাইকোপ্রোটিন বা স্টেরয়েডধর্মী।
3. এই হরমোন উৎপত্তিস্থল থেকে রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে পরিবাহিত হয় ও লক্ষ্য অঙ্গ বা কার্যকরী অঙ্গে পৌঁছোয়।
4. প্রাণীদেহে হরমোন উৎপত্তিস্থল থেকে রাসায়নিক বার্তা লক্ষ্য অঙ্গে নিয়ে যায়, তাই একে রাসায়নিক বার্তাবাহক বলে।
ট্রপিক হরমোন কাকে বলে?
যেসব হরমোন কোনো একটি অনাল গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হয়ে অপর অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বা দেহের অপর কোনো কোশের ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের ট্রপিক হরমোন বলে। যেমন — ACTH হরমোন অগ্র পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়ে অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির কর্টেক্স অংশকে উদ্দীপিত করে অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
স্থানীয় হরমোন বা লোকাল হরমোন কাকে বলে?
যেসব হরমোন কেবল উৎপত্তিস্থল বা তার কাছাকাছি অঞ্চলের কোশ বা কলাগুচ্ছের ওপর কাজ করে তাদের স্থানীয় হরমোন বলে। যেমন – সিক্রেটিন, গ্যাস্ট্রিন হরমোনগুলি পাকস্থলীতে উৎপন্ন হয়ে সেখানেই কাজ করে।
হাইপোথ্যালামাস গ্রন্থিকে ‘প্রভূগ্রন্থির প্রভু’ বা ‘সুপ্রিম কমান্ডার’ বলা হয় কেন?
হাইপোথ্যালামাসে উৎপন্ন নিউরোহরমোনগুলি অগ্র পিটুইটারিতে এসে তার অন্তঃক্ষরা কোশের ক্ষরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। উল্লেখ্য যে পিটুইটারি গ্রন্থিকে প্রভুগ্রন্থি বলা হয়। প্রভুগ্রন্থির ওপরে হাইপোথ্যালামাস ক্রিয়াশীল হয় বলে একে ‘প্রভুগ্রন্থির প্রভু’ বলা হয়ে থাকে।
হাইপোথ্যালামাস নিঃসৃত দুটি হরমোনের নাম ও কাজ লেখো, যারা অগ্র পিটুইটারির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
কর্টিকোট্রপিন রিলিজিং হরমোন ও থাইরোট্রপিন রিলিজিং হরমোন হল হাইপোথ্যালামাস নিঃসৃত দুটি হরমোন যা অগ্র পিটুইটারির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
কর্টিকোট্রপিন রিলিজিং হরমোন (CRH) অগ্র পিটুইটারি থেকে ACTH হরমোন ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। থাইরোট্রপিন রিলিজিং হরমোন (TRH) অগ্র পিটুইটারি থেকে TSH হরমোন ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
হাইপোথ্যালামাস নিঃসৃত দুটি হরমোনের নাম উল্লেখ করো যারা পশ্চাৎ পিটুইটারিতে জমা হয় ও নিঃসৃত হয়। হরমোন দুটির কাজ লেখো।
হরমোনের নাম – ADH ও অক্সিটোসিন হরমোন দুটি হাইপোথ্যালামাস থেকে ক্ষরিত হয় এবং পশ্চাৎ পিটুইটারিতে জমা হয় ও নিঃসৃত হয়।
হরমোনের কাজ –
1. ADH হরমোনটি নেফ্রনের দূরবর্তী সংবর্ত নালিকায় জলের পুনঃবিশোষণে সাহায্য করে।
2. অক্সিটোসিন হরমোনটি জরায়ুর অনৈচ্ছিক পেশির সংকোচন ঘটিয়ে প্রসবে সাহায্য করে।
নিউরোহরমোন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
নিউরোহরমোন – মানব মস্তিষ্কে অবস্থিত হাইপোথ্যালামাস অংশের নিউরোসিক্রেটরি কোশ (নিউরোন) থেকে সংশ্লেষিত ও ক্ষরিত উপাদানকে নিউরোহরমোন বলে।
উদাহরণ – ADH, GHRH ইত্যাদি।
পিটুইটারিকে প্রভুগ্রন্থি বলা হয় কেন?
পটুইটারি গ্রন্থি থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোনগুলি একদিকে যেমন দেহের সামগ্রিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে অন্যদিকে অন্যান্য অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির ক্ষরণ ও কার্যকারিতাকেও সমানভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। এই কারণে পিটুইটারি গ্রন্থিকে প্রভুগ্রন্থি বা মাস্টার গ্ল্যান্ড বলে। পিটুইটারি নিঃসৃত ACTH, TSH, GTH যথাক্রমে অ্যাড্রেনাল, থাইরয়েড এবং গোনাডের (শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয়) ক্ষরণ ও কার্যকারিতাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
পিটুইটারি গ্রন্থির অগ্রভাগ থেকে নিঃসৃত হরমোনগুলির নাম লেখো।
পিটুইটারি গ্রন্থির অগ্রভাগ থেকে নিঃসৃত হরমোনগুলির নাম হল –
1. অ্যাড্রেনোকর্টিকোট্রপিক হরমোন বা ACTH।
2. সোমাটোট্রপিক হরমোন বা STH।
3. থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন বা TSH।
4. প্রোল্যাকটিন।
5. গোনাডোট্রপিক হরমোন বা GTH।
গোনাডোট্রপিক হরমোন আবার তিন প্রকার –
1. ইনটারস্টিশিয়াল সেল স্টিমুলেটিং হরমোন বা ICSH।
2. ফলিক্স স্টিমুলেটিং হরমোন বা FSH।
3. লিউটিনাইজিং হরমোন বা LH।
অগ্র ও পশ্চাৎ পিটুইটারি থেকে নিঃসৃত হরমোন ও তাদের কার্যস্থল লেখো।
অগ্র পিটুইটারি থেকে নিঃসৃত হরমোেন –
1. ACTH – অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির ওপর ক্রিয়া করে।
2. TSH – থাইরয়েড গ্রন্থির ওপর ক্রিয়া করে।
3. GTH – জননগ্রন্থির ওপর ক্রিয়া করে।
4. LTH – স্তনগ্রন্থির ওপর ক্রিয়া করে।
5. GH – অস্থি, তরুণাস্থি ও পেশির ওপর ক্রিয়া করে।
পশ্চাৎ পিটুইটারি থেকে নিঃসৃত হরমোন –
1. ADH – বৃক্কের ওপর ক্রিয়া করে।
2. অক্সিটোসিন – জরায়ুর ওপর ক্রিয়া করে।
মানবদেহে জননগ্রন্থি থেকে হরমোন ক্ষরণে GTH -এর দুটি ভূমিকা লেখো।
মানবদেহে জননগ্রন্থি থেকে হরমোন ক্ষরণে GTH -এর ভূমিকাগুলি হল –
1. FSH বা ফলিক্স স্টিমুলেটিং হরমোন মহিলাদের ডিম্বাশয় থেকে ইস্ট্রোজেন হরমোন ক্ষরণে সাহায্য করে।
2. লিউটিনাইজিং হরমোন বা LH মহিলাদের পীতগ্রন্থি থেকে প্রোজেস্টেরন হরমোন এবং পুরুষদের শুক্রাশয় থেকে টেস্টোস্টেরন হরমোন ক্ষরণে উদ্দীপিত করে।
ADH -এর সম্পূর্ণ নাম, উৎস এবং কাজ উল্লেখ করো।
সম্পূর্ণ নাম – ADH -এর সম্পূর্ণ নাম অ্যান্টি-ডাইইউরেটিক হরমোন।
উৎস – পশ্চাৎ পিটুইটারি।
কাজ – বৃক্কের নেফ্রনের বৃক্কীয় নালিকার দূরবর্তী সংবর্ত নালিকা অংশে জলের পুনঃশোষণ বাড়িয়ে মূত্রে জলের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
একটি অ্যামিনোধর্মী ও আয়োডিনযুক্ত হরমোনের নাম এবং এর কাজ উল্লেখ করো।
হরমোনের নাম – একটি অ্যামিনোধর্মী ও আয়োডিনযুক্ত হরমোন হল থাইরক্সিন।
হরমোনের কাজ – থাইরক্সিন হরমোন BMR ও অন্যান্য বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
থাইরয়েড গ্রন্থির অবস্থান ও এর থেকে নিঃসৃত একটি হরমোনের নাম লেখো।
অবস্থান – থাইরয়েড গ্রন্থি গলদেশে ল্যারিংক্সের নীচে ট্র্যাকিয়ার দু-পাশে একটি করে মোট দুটি খণ্ডরূপে অবস্থান করে। এই খণ্ডক দুটি ইস্থমাস নামক যোজক দ্বারা যুক্ত থাকে।
নিঃসৃত হরমোন – এই গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত একটি হরমোনের নাম হল থাইরক্সিন।
কোন্ হরমোনকে কী কারণে ক্যালোরিজেনিক হরমোন বলে?
থাইরয়েড গ্রন্থিতে অবস্থিত ফলিক্সের কোশসমূহ থেকে নিঃসৃত থাইরক্সিন বা টেট্রাআয়োডোথাইরোনিন (T4) ও ট্রাই-আয়োডোথাইরোনিন (T3) নামক হরমোনগুলিকে ক্যালোরিজেনিক হরমোন বলে। কারণ কলাকোশে এই হরমোন দুটি BMR এবং কার্বোহাইড্রেটের জারণ ও শক্তির দ্রুত মুক্তি ঘটায়।
মানবদেহে রক্ত সংবহনতন্ত্র ও মৌল বিপাকীয় হার -এর ওপর থাইরক্সিন হরমোন কী প্রভাব ফেলে?
1. থাইরক্সিনের অভাবে রক্তচাপ, হৃৎস্পন্দন হার বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়াও এটি RBC -কে পরিণত হতে সাহায্য করে।
2. এর প্রভাবে দেহের বিপাক হার, বৃদ্ধিও নিয়ন্ত্রিত হয়, যার ফলে BMR স্বাভাবিক থাকে।
অগ্ন্যাশয়কে মিশ্র গ্রন্থি বলা হয় কেন?
অগ্ন্যাশয় অন্তঃক্ষরা ও বহিঃক্ষরা উভয় প্রকার কোশসমষ্টি নিয়ে গঠিত বলে একে মিশ্র গ্রন্থি বলে। অগ্ন্যাশয়ের অন্তঃক্ষরা অংশ থেকে বিভিন্ন হরমোন (যেমন — ইনসুলিন, গ্লুকাগন প্রভৃতি) এবং অগ্ন্যাশয়ের বহিঃক্ষরা অংশ থেকে বিভিন্ন উৎসেচক (যেমন — ট্রিপসিন, অ্যামাইলেজ, মলটেজ, লাইপেজ ইত্যাদি) নিঃসৃত হয়।
ফ্যাট বিপাকে ইনসুলিনের ভূমিকা কী?
ইনসুলিন মেদকলায় গ্লুকোজ থেকে ফ্যাট প্রস্তুতিতে সাহায্য করে। আবার, ইনসুলিন লাইপেজ ইৎসেচককে অবদমিত করে ফ্যাটের জারণে বাধা দেয়, ফলে লিপিডের আর্দ্রবিশ্লেষণ হ্রাস পায় ও ফ্যাটের সঞ্চয় বৃদ্ধি পায়।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী দুটি হরমোন কী কী? এদের উৎস লেখো।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন – রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী দুটি হরমোন হল ইনসুলিন ও গ্লুকাগন।
ইনসুলিন ও গ্লুকাগনের উৎস –
1. অগ্ন্যাশয়ের আইলেটস্ অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্স -এর বিটা কোশ ইনসুলিন হরমোনের উৎস।
2. অগ্ন্যাশয়ের আইলেটস্ অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্স -এর আলফা কোশ হল গ্লুকাগন হরমোনের উৎস।
ইনসুলিন কোথা থেকে ক্ষরিত হয়? এর একটি কাজ উল্লেখ করো।
ক্ষরণ স্থান – ইনসুলিন অগ্ন্যাশয় গ্রন্থির আইলেটস্ অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্স -এর বিটা (β) কোশ থেকে ক্ষরিত হয়।
কাজ – কলাকোশে গ্লুকোজ বিশোষণের হার বৃদ্ধির মাধ্যমে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক রাখা ইনসুলিনের প্রধান কাজ।
অ্যান্টিকিটোজেনিক হরমোন কোনটি? কেন এরকম নাম তা ব্যাখ্যা করো।
অ্যান্টিকিটোজেনিক হরমোন – ইনসুলিন হরমোনকে অ্যান্টিকিটোজেনিক হরমোন বলে।
ব্যাখ্যা – ইনসুলিন ফ্যাটের জারণে বাধা সৃষ্টি করে দেহে কিটোন বডি (অ্যাসিটোন, অ্যাসিটিক অ্যাসিড) তৈরি হ্রাস করে কিটোসিস রোগ সৃষ্টি প্রতিরোধ করে। এই কারণে ইনসুলিনকে অ্যান্টিকিটোজেনিক হরমোন বলে।
‘ইনসুলিন ও গ্লুকাগন পরস্পর বিপরীত কাজ করে’ – যুক্তি দাও।
অথবা, গ্লুকাগনকে ইনসুলিনের বিপরীত হরমোন বলে কেন?
অথবা, ‘গ্লুকাগন ও ইনসুলিন পরস্পরের পরিপূরক’ — কেন বলা হয়?
অথবা, হরমোনের অ্যান্টাগনিস্টিক প্রভাব উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।
একই কাজের ধনাত্মক ও ঋণাত্মক দিক দুটি হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হলে তাকে অ্যান্টাগনিস্টিক প্রভাব বলে। গ্লুকাগন ও ইনসুলিন পরস্পর বিপরীত কাজ করে থাকে। যেমন – রক্তে শর্করা মাত্রা বৃদ্ধি পেলে ইনসুলিন তার ব্যবহার বাড়িয়ে কোশে গ্লুকোজ মাত্রা হ্রাস করে। পক্ষান্তরে, রক্তে শর্করা মাত্রা হ্রাস পেলে, গ্লুকাগন হরমোন গ্লাইকোজেন ভেঙ্গে গ্লুকোজ মুক্তিতে সাহায্য করে।
কোন্ হরমোনকে কী কারণে ‘হাইপারগ্লাইসেমিক হরমোন’ বলা হয়?
গ্লুকাগন নামক একপ্রকার পলিপেপটাইড হরমোনকে হাইপার-গ্লাইসেমিক হরমোন বলা হয়। কারণ, এই হরমোনটি প্রধানত যকৃৎ কোশে সঞ্চিত গ্লাইকোজেনকে গ্লুকোজে ভেঙে দেয় তথা গ্লাইকোজেনোলাইসিস প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে, তার ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
হাইপোগ্লাইসেমিয়া এবং হাইপারগ্লাইসেমিয়া কাকে বলে?
হাইপোগ্লাইসেমিয়া – রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক (80-120mg শর্করা প্রতি 100ml রক্ত) -এর চেয়ে অনেক কমে গেলে সেই অবস্থাকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলে। এক্ষেত্রে 100ml রক্তে শর্করার মাত্রা 70mg -এর কম হয়।
হাইপারগ্লাইসেমিয়া – স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতি 100 ml রক্তে শর্করার পরিমাণ 80mg-120mg। কোনো কারণে রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়ে গেলে সেই অবস্থাকে হাইপারগ্লাইসেমিয়া বলে। এক্ষেত্রে প্রতি 100 ml রক্তে শর্করার মাত্রা 200 mg -এর বেশি হলে তবে সেই অবস্থাকে হাইপারগ্লাইসেমিয়া বলে।
অ্যাড্রেনালিন ও নর-অ্যাড্রেনালিনের দুটি বিপরীত ক্রিয়া উল্লেখ করো। অ্যাড্রেনালিন ও নর-অ্যাড্রেনালিনের দুটি একই প্রকার কার্য উল্লেখ করো।
বিপরীত ক্রিয়া –
1. অ্যাড্রেনালিন হরমোন হৃৎপিণ্ড থেকে রক্তনির্গমন মাত্রা বা হার্দ-উৎপাদ বৃদ্ধি করে, পক্ষান্তরে নর-অ্যাড্রেনালিন হরমোনটি হার্দ-উৎপাদ হ্রাস করে।
2. অ্যাড্রেনালিন হরমোন ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ হ্রাস করে। পক্ষান্তরে, নর-অ্যাড্রেনালিন ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ বৃদ্ধি করে।
একই প্রকার কার্য –
1. উভয় হরমোনই সিস্টোলিক রক্তচাপ বৃদ্ধি করে।
2. হৃৎপিণ্ড সংকোচনের বল উভয় হরমোনই বৃদ্ধি করে।
নর-অ্যাড্রেনালিন -এর কাজ লেখো।
নর-অ্যাড্রেনালিন -এর কাজগুলি হল –
1. হৃৎস্পন্দন হার সামান্য বৃদ্ধি করা।
2. রক্তচাপ বাড়ানো।
3. রক্তে শর্করা ও মুক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডের নিঃসরণ বৃদ্ধি করা।
4. দেহের রক্তবাহের পেশির সঞ্চালন বৃদ্ধিতে সাহায্য করা।
অ্যাড্রেনালিন হরমোনকে ‘আপদকালীন বা জরুরিকালীন হরমোন’ (emergency hormone) বলে কেন?
বিশ্রামকালে বা স্বাভাবিক অবস্থায় এই হরমোন কম ক্ষরিত হয়। তবে উত্তেজনা, আবেগ, ভয়, রাগ, দুশ্চিন্তা প্রভৃতি জরুরি অবস্থার সৃষ্টি হলে, অ্যাড্রেনালিন হরমোনের ক্ষরণ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। অ্যাড্রেনালিন হরমোনটি বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় ও বিপাকীয় কাজ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জরুরিকালীন বা সংকটকালীন অবস্থার দ্রুত মোকাবিলা করে। এইজন্য অ্যাড্রেনালিন হরমোনকে জরুরিকালীন হরমোন বলে। জরুরিকালীন পরিস্থিতিতে অ্যাড্রেনালিন দ্রুত ক্রিয়াশীল। তবে এর প্রভাব ক্ষণস্থায়ী। জরুরিকালীন পরিস্থিতি দূর হলে, হরমোনটির ক্ষরণ কমে যায়।
X—-CRH—-Y—-ACTH—-Z; এখানে X, Y, Z অংশগুলি চিহ্নিত করো (CRH = কর্টিকোট্রফিন রিলিজিং হরমোন)।
CRH = কর্টিকোট্রপিন রিলিজিং হরমোন, ACTH = অ্যাড্রেনোকর্টিকোট্রপিক হরমোন, এখানে X -এর অর্থ হাইপোথ্যালামাস, Y -এর অর্থ পিটুইটারি গ্রন্থি এবং Z -এর অর্থ অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি।
ডিম্বাশয় বা ওভারিকে মিশ্র গ্রন্থি বলে কেন?
ডিম্বাশয় বা ওভারিকে মিশ্রগ্রন্থি বলে কারণ এই গ্রন্থি থেকে অ্যাসিড ফসফাটেজ নামক উৎসেচক (বহিঃক্ষরা ক্রিয়া) এবং ইস্ট্রোজেন নামক হরমোন (অন্তঃক্ষরা ক্রিয়া) নিঃসৃত হয়। তাই একে মিশ্র গ্রন্থি বলে।
ইস্ট্রোজেন কোন্ কোন্ স্থান থেকে নিঃসৃত হয়?
ডিম্বাশয়ের পরিণত ডিম্বথলি বা গ্রাফিয়ান ফলিক্স, অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির কর্টেক্স অঞ্চল ও অমরা (placenta) থেকে ইস্ট্রোজেন নামক স্ত্রী-হরমোনটি নিঃসৃত হয়।
অ্যান্ড্রোজেন কী?
স্টেরয়েড-জাতীয় যে হরমোন পুরুষদেহে বৃদ্ধি ও জননগত বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে তাদের অ্যান্ড্রোজেন বলে। যেমন — শুক্রাশয় নির্গত টেস্টোস্টেরন, অ্যাড্রেনাল কর্টেক্স ক্ষরিত অ্যান্ড্রোজেন।
টেস্টোস্টেরনকে অ্যান্ড্রোজেন বলা হয় কেন?
টেস্টোস্টেরন নামক যৌন স্টেরয়েড হরমোন পুরুষদেহে বিশেষত বয়ঃসন্ধিকালে বিভিন্ন গৌণ যৌন লক্ষণের বহিঃপ্রকাশ নিয়ন্ত্রণ করে, শুক্রাণু উৎপাদন প্রক্রিয়া (স্পার্মাটোজেনেসিস) ত্বরান্বিত করে ও পুরুষদের স্বাভাবিক যৌন আচরণ (male libido) নিয়ন্ত্রণ করে, তাই একে অ্যান্ড্রোজেন (গ্রিক শব্দ andro যার অর্থ masculine অর্থাৎ পুরুষোচিত) হিসেবে গণ্য করা হয়।
নিম্নলিখিত ক্রিয়াগুলির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হরমোনগুলির নাম তালিকাভুক্ত করো।
(i) রক্ত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, (ii) থাইরয়েড গ্রন্থির, হরমোন ক্ষরণে উদ্দীপনা প্রদান, (iii) স্ত্রীদেহে করপাস লিউটিয়ামের বৃদ্ধি ঘটানো ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের ক্ষরণের উদ্দীপনা প্রদান, (iv) উদ্বেগজনিত কারণে রক্তচাপ বৃদ্ধি।
1. ইনসুলিন ও গ্লুকাগন।
2. TSH বা থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন।
3. LH বা লিউটিনাইজিং হরমোন।
4. অ্যাড্রেনালিন।
বামনত্ব রোগের কারণ ও উপসর্গগুলি লেখো।
কারণ – অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে সোমাটোট্রপিক হরমোন (STH) বা গ্রোথ হরমোন (GH) -এর কম ক্ষরণের ফলে বামনত্ব বা ডোয়ার্ফিজম রোগ হয়।
উপসর্গ –
1. দেহের হাড় ও পেশির স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
2. পরিণত অবস্থায় দেহের উচ্চতা মাত্র 3 foot মতো হয়।
3. দেহের যৌনবিকাশ ব্যাহত হয়।
থাইরয়েড গ্রন্থির স্বল্পক্ষরণে ও অধিক ক্ষরণে কী রোগ হয়?
স্বল্প ক্ষরণ – থাইরয়েড গ্রন্থির স্বল্প ক্ষরণে শিশুদের ক্রেটিনিজম ও প্রাপ্তবয়স্কদের মিক্সিডিমা ও সাধারণ গলগন্ড রোগ হয়।
অধিক ক্ষরণ – থাইরয়েড গ্রন্থির অধিক ক্ষরণে এক্সপফথ্যালমিক গয়টার রোগ হয়।
অ্যাক্রোমেগ্যালি কী?
পরিণত বয়সে পিটুইটারি থেকে STH -এর অধিক ক্ষরণের ফলে মানুষের কপাল, নাক, চিবুক, নীচের চোয়াল, আঙুল ইত্যাদির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে। এইসব লক্ষণযুক্ত রোগকে অ্যাক্রোমেগ্যালি বলে।
গলগণ্ড কী? এটি কয় প্রকার?
গলগণ্ড – থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটলে সেই অবস্থাকে গলগণ্ড বলে। সাধারণত এই ধরনের স্ফীতি ব্যথা-বেদনাহীন হয়। থাইরক্সিনের কম ক্ষরণ এবং অধিক ক্ষরণ-উভয়ের ফলেই গলগণ্ড হতে পারে।
গলগণ্ডের প্রকারভেদ – গলগণ্ড সাধারণত দুই প্রকার –
1. সাধারণ গলগণ্ড বা সিম্পল গয়টার।
2. বহিঃচক্ষু গলগণ্ড বা এক্সফথ্যালমিক গয়টার।
সাধারণ গলগণ্ডের কারণগুলি লেখো।
সাধারণ গলগণ্ডের কারণগুলি হল –
1. থাইরক্সিন হরমোনের কম ক্ষরণের ফলে মানবদেহে এই রোগ হয়। থাইরক্সিনের মৌলিক উপাদান হল আয়োডিন। মানবদেহে আয়োডিনের অভাবে এই গলগণ্ড হয়। আয়োডিনের অভাবে থাইরয়েড গ্রন্থির কোশগুলি প্রয়োজন মতো থাইরক্সিন সংশ্লেষ করতে পারে না। থাইরক্সিন সংশ্লেষের নিষ্ফল প্রচেষ্টায় কোশগুলি আকার-আয়তনে বৃদ্ধি পায়। তার ফলেই এই গ্রন্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে।
2. জিনগত ত্রুটির ফলে T3 ও T4 ক্ষরণ কম হলে সাধারণ গলগণ্ড হতে পারে।
সাধারণ গলগণ্ডের উপসর্গগুলি লেখো।
সাধারণ গলগণ্ডের উপসর্গ বা লক্ষণগুলি হল –
1. থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে ফলে গ্রীবা অঞ্চল স্ফীত হয়ে যায়।
2. খাদ্য গলাধঃকরণে অসুবিধা হয়।
3. থাইরয়েড গ্রন্থি বড়ো হয়ে যাওয়ায় এই গ্রন্থির চাপে শ্বাসকার্যে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়।
বহিঃচক্ষু গলগণ্ড রোগের কারণগুলি লেখো।
বহিঃচক্ষু গলগণ্ডের প্রধান কারণ হল থাইরক্সিনের অধিক ক্ষরণ। এক্ষেত্রে TSH -এর নিয়ন্ত্রণাধীনে থাইরয়েড গ্রন্থির কোশগুলি আকার-আয়তনে বৃদ্ধি-প্রাপ্ত হয়। ফলে কোশগুলি থেকে থাইরক্সিন সংশ্লেষ ও ক্ষরণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
এক্সফথ্যালমিক গয়টার বা বহিঃচক্ষু গলগণ্ডের রোগলক্ষণ লেখো।
বহিঃচক্ষু গলগণ্ডের (হাইপারথাইরয়েডিজম) প্রধান বৈশিষ্ট্য হল – চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসা। মূলত অক্ষিগোলকের পিছনে কলা আয়তন বৃদ্ধি পেয়ে এটি সৃষ্টি হয় এভাবে কোনো অঙ্গের বেরিয়ে আসাকে বলে প্রটোসিস (proptosis)। এটি গ্রেভ রোগের অন্যতম প্রধান লক্ষণ।
খাদ্যলবণ আয়োডিনযুক্ত হওয়া উচিত কেন?
দেহে থাইরক্সিন হরমোন সংশ্লেষে আয়োডিন প্রয়োজনীয়। দেহে আয়োডিনের অভাবে থাইরক্সিন হরমোনের উৎপাদন ও ক্ষরণ ব্যাহত হয়। এই হরমোনের অভাবে গলগণ্ড হয়। এই রোগ প্রতিরোধের জন্য আয়োডিনযুক্ত খাদ্যলবণ গ্রহণ করা উচিত।
পাহাড়ি অঞ্চলের লোকদের গয়টার বা গলগণ্ড বেশি হয় কেন?
পাহাড়ি অঞ্চলের মাটিতে আয়োডিন লবণ কম থাকে। ফলে ওই মাটিতে উৎপন্ন ফসলে আয়োডিন ঘাটতি দেখা দেয়। থাইরক্সিন সংশ্লেষে আয়োডিন প্রয়োজনীয় উপাদান হওয়ায় থাইরক্সিন সংশ্লেষ ব্যাহত হয় ও থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে বা গলগণ্ড দেখা দেয়। তাই পাহাড়ি অঞ্চলে লোকেদের গলগণ্ড বেশি হয়।
ডায়াবেটিস মেলিটাস বা মধুমেহ কী?
অথবা, ডায়াবেটিস মেলিটাসের কারণ কী?
ইনসুলিন হরমোনের অধঃক্ষরণের ফলে বা কার্যকারিতা হ্রাসজনিত কারণে কলাকোশে গ্লুকোজের শোষণ ও জারণ হ্রাস পায়। এর কারণে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বৃদ্ধি পেলে দেহে যে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়, তাকে ডায়াবেটিস মেলিটাস বলে।
টাইপ II ডায়াবেটিস কেন হয়?
অধিকাংশ মধুমেহ রোগে অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন উৎপন্ন হলেও তা নানা কারণে কোশে ব্যবহৃত হতে পারে না। এই রোগ সাধারণত 45 বছর বা তার অধিক বয়সে দেখা যায়। এই প্রকার ডায়াবেটিসকে টাইপ II ডায়াবেটিস বলে।
ডায়াবেটিস মেলিটাস রোগীকে ইনসুলিন ইনজেকশনের পরামর্শ দেওয়া হয় কেন?
মধুমেহ বা ডায়াবেটিস মেলিটাস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ইনসুলিনের ক্ষরণ কম হওয়ায় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাই কৃত্রিম ইনসুলিন ইনজেকশন দিলে তা সরাসরি রক্তে মেশে। ফলে গ্লুকোজ -এর বিপাক ঘটে গ্লাইকোজেনরূপে তা ব্যবহৃত হয়ে যায় ও দেহকে সুস্থ রাখে। এটি মৌখিকভাবে ট্যাবলেটরূপে গ্রহণ করলে প্রোটিওলাইটিক উৎসেচকের প্রভাবে পাচিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ইনসুলিন ইনজেকশনের দ্বারা গ্রহণ করা হয়।
গ্লাইকোসুরিয়া কী?
মানুষের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বৃদ্ধি পেয়ে, প্রতি 100 ml রক্তে 180 mg -এর বেশি হলে মূত্রের মাধ্যমে অধিকমাত্রায় গ্লুকোজ দেহের বাইরে নির্গত হয়। একে গ্লাইকোসুরিয়া বলে।
ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস বা বহুমূত্র কী?
হাইপোথ্যালামাসের সংক্রমণ বা আঘাত বা অন্য কোনো কারণে তা থেকে ADH বা ভ্যাসোপ্রেসিন হরমোন কম ক্ষরিত হলে যে রোগ হয় তাকে ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস বা বহুমূত্র বলে। এই রোগে বৃক্কীয় নালিকা থেকে জলের পুনঃশোষণ হ্রাস পায়, ফলে লঘু মূত্র বের হয়। ফলে বারবার মূত্র বের হয় ও দেহে জলাভাব দেখা যায়।
প্যানহাইপোপিটুইটারিজম কী?
পিটুইটারি থেকে সমস্ত হরমোনের ক্ষরণ হ্রাস পাওয়ার ঘটনাকে প্যানহাইপোপিটুইটারিজম বলে। এর অন্যতম কারণ হল হাইপোথ্যালামাস হরমোনগুলির কম ক্ষরণ।
পিটুইটারি হরমোনের ব্যাবহারিক প্রয়োগ লেখো।
মাছের পিটুইটারি গ্রন্থির নির্যাস (GH-পূর্ণ) সংগ্রহ করে তা পরিণত পুরুষ ও স্ত্রী কার্প মাছে (রুই বা কাতলা) প্রয়োগ করা হয়। ফলে তারা যৌন জনন করে ও ডিম পাড়ে। একে হাইপোফাইজেশন বা প্রণোদিত প্রজনন বলে।
প্রাণী হরমোনের দুটি ব্যাবহারিক প্রয়োগ সম্পর্কে লেখো।
প্রাণী হরমোনের দুটি ব্যাবহারিক প্রয়োগ হল –
1. পিটুইটারি নির্যাস প্রয়োগ করে মাছের প্রণোদিত প্রজনন ঘটানো হয়।
2. বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময়ে যেমন – হাঁপানির সময়ে শ্বাসকষ্টের দ্রুত ও অস্থায়ী উপশমে অ্যাড্রেনালিন, মধুমেহ নিরাময়ে কৃত্রিম ইনসুলিন, বন্ধ্যাত্ব নিবারণে হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন (HCG) ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।
শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয়ের থেকে হরমোন ক্ষরণ অন্য কোন্ হরমোনের ওপর নির্ভর করে?
শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয় নিঃসৃত যৌন হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন –
যৌন হরমোন | প্রভাবক হরমোন (পিটুইটারিজাত) |
ইস্ট্রোজেন (ডিম্বাশয়) | FSH বা ফলিক্স স্টিমুলেটিং হরমোন |
প্রোজেস্টেরন (ডিম্বাশয়) | LH বা লিউটিনাইজিং হরমোন |
টেস্টোস্টেরন (শুক্রাশয়) | ICSH বা ইনটারস্টিশিয়াল সেল স্টিমুলেটিং হরমোন |
হরমোন ও উৎসেচকের দুটি পার্থক্য কী?
হরমোন ও উৎসেচকের দুটি পার্থক্য হল –
বিষয় | হরমোন | উৎসেচক |
উৎস বা ক্ষরণ স্থল | হরমোন অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বা কোশপুঞ্জ থেকে ক্ষরিত হয়। | উৎসেচক বহিঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। |
পরিণতি | হরমোন ক্রিয়ার পর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। | উৎসেচক ক্রিয়ার পর অপরিবর্তিত থাকে। |
অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি ও বহিঃক্ষরা গ্রন্থির মধ্যে পার্থক্য লেখো।
অন্তঃক্ষরা বা অনাল গ্রন্থি ও বহিঃক্ষরা বা সনাল গ্রন্থির পার্থক্য হল –
বিষয় | অন্তঃক্ষরা বা অনাল গ্রন্থি | বহিঃক্ষরা বা সনাল গ্রন্থি |
নালীর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি | অনুপস্থিত। | উপস্থিত। |
কাজের স্থান | সাধারণত উৎসস্থল থেকে বাহিত হয়ে দূরবর্তী কোনো স্থানে কার্যকর হয়। এর কাজের পরিধি ব্যাপক। তবে কখনো কখনো উৎপত্তিস্থলেও কার্যকারী হয়। | ক্ষরণনালী দ্বারা বাহিত হয়ে গ্রন্থির বাইরে বেরিয়ে আসে এবং উৎপত্তিস্থলেই কার্যকারী হয়। এরা দেহের সীমিত স্থানে কাজ করে থাকে। |
নিঃসরণ বস্তু | হরমোন। | উৎসেচক, ঘর্ম, সিবাম, লালারস ইত্যাদি। |
নিঃসরণ বস্তুর নির্গমন প্রক্রিয়া | ব্যাপন প্রক্রিয়ায় সরাসরি রক্তে মেশে। | নির্গম নালীপথে সরাসরি ক্রিয়াস্থলে পৌঁছোয়। |
উদ্ভিদ হরমোন ও প্রাণী হরমোনের পার্থক্য লেখো।
উত্তর উদ্ভিদ হরমোন ও প্রাণী হরমোনের পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | উদ্ভিদ হরমোন | প্রাণী হরমোন |
উৎস | মূল ও বিটপের অগ্রস্থ ভাজক কলা, বীজপত্র ইত্যাদি। | অনাল গ্রন্থিসমূহ। |
পরিবহণ কৌশল | কোশান্তর ব্যাপন, ফ্লোয়েম কলার মাধ্যমে পরিবহণ। | রক্ত ও লসিকা তন্ত্র মাধ্যমে পরিবহণ। |
ক্রিয়াস্থলগত প্রকৃতি | সাধারণত স্থানীয় হরমোন প্রকৃতির। | স্থানীয় ও দূরবর্তী উভয়স্থলেই সক্রিয়। |
রাসায়নিক প্রকৃতি | নাইট্রোজেনঘটিত বা নাইট্রোজেনবিহীন জৈব যৌগ। | প্রোটিন, বহুশর্করা বা স্টেরয়েডধর্মী। |
তুলনা করো – থাইরক্সিন, ইনসুলিন ও অ্যাড্রেনালিন।
থাইরক্সিন, ইনসুলিন ও অ্যাড্রেনালিন -এর তুলনা নীচে দেওয়া হল –
বিষয় | থাইরক্সিন | ইনসুলিন | অ্যাড্রেনালিন |
উৎস | থাইরয়েড গ্রন্থি। | অগ্ন্যাশয় গ্রন্থির আইলেটস্ অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্স বিটা কোশ। | অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির মেডালা। |
বিপাকে ভূমিকা | সার্বিক বিপাক। | কার্বোহাইড্রেট বিপাক। | কার্বোহাইড্রেট বিপাক। |
গ্লুকোজের পরিমাণ | রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ায়। | রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমায়। | রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ায়। |
আপৎকালীন ভূমিকা | নেই। | নেই। | আছে। |
পার্থক্য দেখাও – থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন (TSH) ও থাইরক্সিন।
থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন ও থাইরক্সিন -এর পার্থক্যগুলি হল —
বিষয় | থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন | থাইরক্সিন |
ক্ষরণস্থল | পিটুইটারির অগ্রখণ্ডক। | থাইরয়েড গ্রন্থি। |
রাসায়নিক প্রকৃতি | গ্লাইকোপ্রোটিন। | আয়োডিনযুক্ত। |
কাজ | থাইরয়েডের স্বাভাবিক সক্রিয়তা রক্ষা করে। | দেহের বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে, মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটায়। |
টেস্টোস্টেরন ও প্রোজেস্টেরনের পার্থক্য লেখো।
টেস্টোস্টেরন ও প্রোজেস্টেরন -এর পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | টেস্টোস্টেরন | প্রোজেস্টেরন |
ক্ষরণস্থল | শুক্রাশয়ের লেডিগ -এর আন্তরকোশ। | ডিম্বাশয়ের করপাস লিউটিয়াম বা পীতগ্রন্থি। |
কাজ | পুং যৌনাঙ্গ গঠন ও পুরুষসুলভ গৌণযৌন বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ। | গর্ভাবস্থায় জরায়ুর বৃদ্ধি, অমরার গঠন ও প্রসবে সহায়তা করে। |
প্রধান কাজ | শুক্রাণু উৎপাদনে সহায়তা করে। | গর্ভাবস্থায় ডিম্বাণু উৎপাদন বন্ধ করে। |
আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” অধ্যায়ের ‘প্রাণীদেহে সাড়া প্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন‘ বিভাগের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন যার এটি প্রয়োজন হবে তার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন