মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – অভিব্যাক্তি ও অভিযোজন – বেঁচে থাকার কৌশল-অভিযোজন – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

জীববিজ্ঞানের চতুর্থ অধ্যায় হলো অভিব্যক্তি ও অভিযোজন। এই অধ্যায়ে জীবের বংশগতির মাধ্যমে গুণাবলী উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হওয়া, পরিবেশের সাথে জীবের অভিযোজন এবং বিবর্তনের ধারণা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

Table of Contents

অভিব্যাক্তি ও অভিযোজন – বেঁচে থাকার কৌশল-অভিযোজন

অভিব্যক্তির সঙ্গে অভিযোজনের সম্পর্ক কী? শুষ্ক পরিবেশের জন্য ক্যাকটাস জাতীয় উদ্ভিদের পাতার মধ্যে কী ধরনের অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য দেখা যায়?

অভিব্যক্তির সঙ্গে অভিযোজনের সম্পর্কটি মাধ্যমিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এটি আমাদের ভাষায় প্রকাশ করে এবং আমাদের ভাবনাগুলি অন্যদের সামনে বোঝাতে সাহায্য করে।

অভিব্যক্তির সঙ্গে অভিযোজনের সম্পর্ক

অভিব্যক্তি ও অভিযোজন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। এ বিষয়ে নীচে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল।

  • অভিযোজন-অভিব্যক্তি সংঘটনের একটি পদ্ধতি বিশেষ জীব পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনমতো দৈহিক ও শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটিয়ে নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখে। যেসব জীব একাজে সাফল্য অর্জন করতে পারে তারাই বাঁচার অধিকার পায়। বাকিরা অবলুপ্ত হয়। অভিযোজিত বৈশিষ্ট্য বংশপরম্পরায় সঞ্চারিত হওয়ায় নতুন প্রজাতির আবির্ভাব ঘটে অর্থাৎ জৈব অভিব্যক্তি ঘটে। সুতরাং, দেখা যাচ্ছে, অভিযোজন ও অভিব্যক্তি পরস্পর ঘনিষ্ট সম্পর্কযুক্ত। প্রকৃতপক্ষে অভিযোজন হল অভিব্যক্তি ঘটবার বিভিন্ন পদ্ধতিগুলির মধ্যে অন্যতম একটি পদ্ধতি।
  • অভিব্যক্তি—একটি বৃহত্তর ধারণা অভিব্যক্তি বা বিবর্তন একটি জটিল, দীর্ঘ পদ্ধতি। বহু লক্ষ বছর ধরে বিবর্তন ঘটে চলেছে, তার বিভিন্ন সময়কালে পরিবেশ ও প্রয়োজন অনুযায়ী জীবের দেহে নানা অভিযোজন দেখা যায়। অর্থাৎ, অভিব্যক্তি হল অভিযোজনের তুলনায় একটি বৃহত্তর ধারণা।

ক্যাকটাসের পাতার অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য

শুষ্ক বা জলহীন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য বা অভিযোজিত হওয়ার কারণে ক্যাকটাসের পাতার মধ্যে বেশকিছু পরিবর্তন লক্ষিত হয়। এই পরিবর্তনগুলি হল — 1. এক্ষেত্রে পাতার আকৃতি ছোটো হয় ও পাতার সংখ্যা হ্রাস পায়। 2. এইজাতীয় উদ্ভিদে বাষ্পমোচনের হার হ্রাস করার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাতা কাঁটায় রূপান্তরিত হয়। এই অভিযোজন ক্যাকটাসের আত্মরক্ষাতেও সাহায্য করে।

ক্যাকটাসের পাতার অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য

সুন্দরী উদ্ভিদের অভিযোজন সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

সুন্দরী গাছের অভিযোজন একটি মাধ্যম যা প্রাকৃতিক পরিবেশে সুন্দর ও শান্তিময় ভাবনা সৃষ্টি করে। এটি আমাদের সাপেক্ষে প্রাকৃতিক উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে আনন্দ ও আর্থিক সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ।

সুন্দরী গাছের অভিযোজন

সুন্দরী উদ্ভিদ লবণাক্ত মৃত্তিকাযুক্ত অঞ্চলে জন্মায়। সমুদ্রতীরবর্তী এই মৃত্তিকা খনিজ লবণ সমৃদ্ধ হয়, ফলে পর্যাপ্ত জল থাকলেও তা উদ্ভিদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। বাতাবকাশহীন হওয়ায় এই মাটিতে অক্সিজেন সরবরাহও খুব কম। এইপ্রকার মাটিকে বলে শারীরবৃত্তীয় শুষ্ক মৃত্তিকা। এই মাটিতে বাসরত উদ্ভিদের জল ও অক্সিজেন সংগ্রহ ও তা রক্ষার জন্য বিশেষ শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন দেখা যায়। সুন্দরী গাছের ক্ষেত্রে যে অভিযোজন ঘটেছে, তা নীচে বর্ণনা করা হল।

  • মূলের অভিযোজন 1. সুন্দরী গাছের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অভিযোজন হল শ্বাসমূল। মূল মাটির গভীরে প্রবেশ করতে পারে না, প্রধান মূলতন্ত্রের অনুভূমিক অংশ থেকে শাখাপ্রশাখা নির্গত হয়ে অভিকর্যের বিপরীতে বৃদ্ধি পেয়ে বায়ু থেকে অক্সিজেন গ্রহণের উদ্দেশ্যে মাটির ওপরে উঠে আসে। এদেরকেই শ্বাসমূল বলে। শ্বাসমূলে উপস্থিত লেন্টিসেলের মাধ্যমে ব্যাপন ক্রিয়ায় এই শ্বাসমূল বায়ু থেকে সরাসরি অক্সিজেন গ্রহণ করে ও মূলতন্ত্রে সরবরাহ করে। 2. এ ছাড়া কাণ্ডের গোড়ার চারপাশ থেকে চ্যাপটা তক্তার মতো কতকগুলি মূলজ অংশ বের হয়ে সমকোণে মাটিতে আবদ্ধ থাকে। এদের অধিমূল বা রুট বাট্রেস বলে। এরা গাছকে মাটির ওপর খাড়া থাকতে সাহায্য করে।
  • কাণ্ডের অভিযোজন 1. কাণ্ড কিউটিক্ল ও মোমজাতীয় পদার্থ দ্বারা আবৃত থাকে। এর ফলে কাণ্ড থেকে জল নির্গমনের হার কম হয়। 2. সংগৃহীত জল যাতে সহজে দেহের বিভিন্ন অংশে পরিবাহিত হতে পারে তাই কাণ্ডের সংবহন কলা সুগঠিত হয়।
  • পাতার অভিযোজন 1.পাতায় পত্ররন্ধ্রের সংখ্যা কম এবং তা পাতার অধস্ত্বকের ভিতরের দিকে অবস্থিত (নিমজ্জিত পত্ররন্ধ্র)। পাতায় পত্ররন্ধ্রের সংখ্যা কম হওয়ার জন্য, বাষ্পমোচনের হার কম হয়। 2. পাতার ফলকে মোমের প্রলেপ থাকে (জাঙ্গল বৈশিষ্ট্য)। ফলে বাষ্পমোচনের হার হ্রাস পায়।
সুন্দরী উদ্ভিদের অভিযোজন সংক্ষেপে বর্ণনা করো ।

বিশেষ আলোচনা সুন্দরী যথেষ্ট জলযুক্ত স্থানে জন্মালেও এই জল শারীরবৃত্তীয়ভাবে অব্যবহার্য। তাই সুন্দরী গাছের জলাভাব একটি বিশেষ সমস্যা। এই কারণে তার মধ্যে বেশকিছু জাঙ্গল অভিযোজন বর্তমান।

পায়রার দেহে বায়ু থলির গুরুত্ব কী? জলে ভারসাম্য রক্ষার জন্য রুই মাছের পটকার ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।

পায়রার বায়ুথলি হল একটি উপাদান যা পায়রার উপর চলে এবং শিথিল করে প্রসারিত হয়, তার ফলে স্বাস্থ্যকর ও শান্তিময় অভিজ্ঞতা প্রদান করে। এটি পায়রার সুস্থতা ও স্থায়িত্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

পায়রার বায়ুথলির গুরুত্ব

পায়রা প্রাথমিকভাবে একটি খেচর প্রাণী। বায়ুথলি হল বায়ুতে ওড়ার জন্য পায়রার অঙ্গসংস্থানিক অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য। এগুলি ক্লোমশাখা থেকে উৎপন্ন পাতলা পর্দাবৃত 9টি বায়ুপূর্ণ প্রকোষ্ঠ বিশেষ, যা পেশি ও রক্তজালকবিহীন হয়। ওড়ার জন্য পায়রার অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন হয়। এই অতিরিক্ত শক্তি তথা প্রশ্বাসকার্যের জন্য প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত অক্সিজেন বায়ুথলি সরবরাহ করে। বায়ুর নীচের স্তরে ঊর্ধ্বস্তর অপেক্ষা বেশি অক্সিজেন উপস্থিত থাকে। ওড়ার আগে পায়রা বায়ুথলিতে বাতাস পূর্ণ করে নেয় ফলে এই বায়ুতে অক্সিজেনের পরিমাণ বায়ুর উচ্চস্তর অপেক্ষা বেশি থাকে। এ ছাড়া থলিগুলি বায়ুপূর্ণ হলে দেহ সামগ্রিকভাবে হালকা হয় ও বাতাসে ভাসতে সুবিধা হয়।

পায়রার বায়ুথলি

রুই মাছের পটকার ভূমিকা

রুইমাছের ক্ষেত্রে জলে গভীরতা পরিবর্তন করায় পটকা এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে। উদরগহ্বরের শীর্ষভাগে, বৃক্ক ও পৌষ্টিকনালীর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত এই অঙ্গে দুটি প্রকোষ্ঠ থাকে। অগ্র প্রকোষ্ঠের প্রাচীরে রক্তজালকযুক্ত গ্রন্থি (রেড গ্ল্যান্ড) থাকে যা থেকে গ্যাস নির্গত হয় এবং সেই প্রকোষ্ঠে জমা হয়ে পটকাকে ফুলিয়ে তার আয়তন বৃদ্ধি ঘটায়। এর ফলে মাছের দেহের আপেক্ষিক গুরুত্ব হ্রাস পায় ও মাছ জলে ভেসে ওঠে। এরপর পশ্চাৎ প্রকোষ্ঠে পেশির সংকোচনে গ্যাস রক্তজালক রিটি মিরাবিলিতে প্রবেশ করে যা গ্যাস শোষণ করে। এর ফলে পটকার আয়তন হ্রাস পায় এবং মাছের দেহের আপেক্ষিক গুরুত্ব বাড়ে। ফলস্বরূপ মাছের দেহ ভারী হয় ও তা জলে ডুবে যায়।

মৌনৃত্যের মাধ্যমে মৌমাছির বার্তা আদানপ্রদান কীভাবে ঘটে, তা চিত্রসহ বর্ণনা করো।

মৌনৃত্যের মাধ্যমে মৌমাছির বার্তা শান্তিময় এবং আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করে। এটি মৌমাছির প্রকৃতির পরিবর্তনে মহান ও প্রাকৃতিক একটি মাধ্যম।

মৌমাছিদের বার্তা আদানপ্রদান

মৌচাকে দুই প্রকার কর্মী মৌমাছি থাকে, যথা স্কাউট বা খাদ্য সন্ধানী কর্মী মৌমাছি এবং ফোরেজার বা খাদ্য সংগ্রাহক কর্মী মৌমাছি। স্কাউটরা খাদ্যের সন্ধান করে এবং খাদ্যের সন্ধান পেলে এরা মৌচাকে ফিরে এসে চাকের সামনে বিশেষ নাচের ভঙ্গিতে দেহ সঞ্চালন দ্বারা অপর মৌমাছিদের খাদ্যের উৎস সম্পর্কে বার্তা বা সংকেত প্রদান করে। একে মৌনৃত্য বলে। প্রধানত দুই প্রকার মৌনৃত্য দেখা যায়, রাউন্ড ডান্স বা বৃত্তাকার নৃত্য এবং ওয়াগ্ল ডান্স বা ওয়াগ্ল নৃত্য। এই নৃত্যের মাধ্যমে তিন প্রকার বার্তা দেওয়া হয়, মৌচাক থেকে খাদ্যের দূরত্ব, খাদ্যের উৎসের দিক ও খাদ্যের ঘ্রাণ। নীচে দুই প্রকার মৌনৃত্য সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।

  • ওয়াগ্ল নৃত্য – খাদ্যের উৎস 50-75m-এর থেকে দূরবর্তী হলে সন্ধানী কর্মী বা স্কাউট মৌমাছিরা ওয়াগ্ল নৃত্যে অংশ নেয়। এরা চাকের নিকটবর্তী অংশে উল্লম্ব তলে নাচে, যার বার্তা বা সংকেত থেকে অন্যান্য মৌমাছিরা অনুভূমিক তলে খাবারের উৎসের অবস্থান নির্ণয় করতে পারে। এই নৃত্য ইংরাজি ‘৪’ সংখ্যার আকৃতিবিশিষ্ট হয়। অর্থাৎ, একবার ডানদিকে ও একবার বাঁদিকে লুপ তৈরি করে, এবং নৃত্যের সময় লুপের মধ্যের সরলরৈখিক অংশে সন্ধানী মৌমাছির উদর অংশ ওপর নীচে আন্দোলিত (waggle) হয়। ইংরাজি ওয়াগ্ল শব্দের অর্থ অন্দোলন বা কম্পন। তাই এই নৃত্যকে ওয়াগ্ল নৃত্য বলে। এই ওয়াগ্ল বা কম্পনের মাত্রা থেকে খাদ্যের অবস্থানের দূরত্ব সম্পর্কে জানা যায় এবং সূর্যের সাপেক্ষে নাচের কৌণিক অভিমুখ থেকে খাদ্যের উৎসের দিক নির্ধারণ করা যায়। ঊর্ধ্বমুখী নাচ থেকে বোঝা যায় যে খাবারের উৎসের অবস্থান সূর্যের অভিমুখে। নিম্নমুখী নাচের অর্থ হল যে খাবারের অবস্থান সূর্যের বিপরীত দিকে। ডানদিকে 30° কোণে নাচের অর্থ হল যে চাকের ডান দিকে 30° কোণে খাবারের উৎস অবস্থিত।
মৌনৃত্যের মাধ্যমে মৌমাছির বার্তা আদানপ্রদান কীভাবে ঘটে, তা চিত্রসহ বর্ণনা করো।
  • বৃত্তাকার নাচ / চক্রাকার নৃত্য খাদ্যের সন্ধান 50-75m এর মধ্যে হলে শ্রমিক সন্ধানী মৌমাছিরা বৃত্তাকার নাচের মাধ্যমে অন্যদের বোঝায় যে খাদ্যের সন্ধান পাওয়া গেছে। সন্ধানীদের পিছনে সংগ্রাহকরাও খাদ্য উৎসের দিকে ধাবিত হয় এবং যাত্রাপথে তারাও একই নৃত্য শুরু করে।

আচরণ বিবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কেন? শিম্পাঞ্জিদের আচরণগত যে-কোনো তিনটি বৈশিষ্ট্য লেখো যা অভিযোজনে সহায়তা করে।

বিবর্তনের ক্ষেত্রে আচরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা পরিবর্তন সৃষ্টি করে এবং পরিবর্তিত বাস্তবতা পরিচালনা করে। এটি নতুন সংকল্পের প্রতীক হিসাবে প্রকাশ পাওয়া যায়।

বিবর্তনের ক্ষেত্রে আচরণের গুরুত্ব

পরিবেশের কোনো ইঙ্গিতের প্রভাবে যেমন গন্ধ, শব্দ বা দৃষ্টি নির্ভর কোনো সংকেত দ্বারা উদ্দীপিত হয়ে অথবা অন্য কোনো জীবের কার্যাবলির দ্বারা উদ্‌বুদ্ধ হয়ে জীব স্নায়ুতন্ত্রের নিয়ন্ত্রাণাধীনে বিভিন্ন ধরনের আচরণ সম্পন্ন করে। এই আচরণ জীবকে পৃথিবীতে টিকে থাকতে এবং প্রজননে তথা নিজ প্রজাতি সংখ্যা বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। এই আচরণের ফল সুদুরপ্রসারী এবং কালক্রমে তা অভিব্যক্তি ঘটাতে সাহায্য করে। এই কারণে বিবর্তনের ক্ষেত্রে আচরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

শিম্পাঞ্জির অভিযোজনে সহায়ক আচরণগত বৈশিষ্ট্য

অভিযোজনে সহায়ক শিম্পাঞ্জির আচরণগত বৈশিষ্ট্য হল — 1. শিম্পাঞ্জিরা প্রথমে কোনো একটি গাছের ডাল ভেঙে নেয়। তারপর ওই ডালের পাতাগুলি ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে, ডালটিকে উইটিপির মধ্যে প্রবেশ করিয়ে গর্তের সৃষ্টি করে। এরপর তারা আর একটি সরু ডাল ভেঙে পাতা ছাড়িয়ে ওই ডাল সৃষ্ট গর্তে প্রবেশ করায়। উইপোকা ওই প্রবেশ স্থান থেকে বাইরে বের হতে থাকলে শিম্পাঞ্জিরা ওই উইপোকাকে খাদ্য হিসেবে খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করে। 2. শিম্পাঞ্জিরা কোনো পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত হলে, বিভিন্ন ধরনের ভেষজ উদ্ভিদের পাতা খেতে থাকে। এর ফলে তারা পরজীবীর আক্রমণ থেকে অব্যহতি পায়। অর্থাৎ পরজীবীঘটিত রোগ থেকে মুক্ত হতে পারে। দেখা গেছে অ্যাসপিলিয়া রুডিসসহ আরও 19টি ভেষজ গাছের পাতা শিম্পাঞ্জিরা ঔষধি হিসেবে গ্রহণ করে। 3. শিম্পাঞ্জিরা অনেক সময় মানুষের মতো কাঠের টুকরোকে হাতুড়ি এবং পাথরের পাটাতনকে নেহাই-এর মতো ব্যবহার করে বাদামের খোলা ভাঙে। খোলা অপসারিত হলে বাদাম বাইরে বেরিয়ে আসে এবং শিম্পাঞ্জিরা ওই বাদাম সহজে খেতে পারে।

শিম্পাঞ্জির অভিযোজনে সহায়ক আচরণগত বৈশিষ্ট্য

উটের শারীরবৃত্তীয় অভিযোজনগুলি উল্লেখ করো।

উটের শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন হল উটের শারীরিক চলন যা বৃত্তীয় আকৃতির মধ্যে ঘটে এবং তার বৈশিষ্ট্যগুলি প্রকাশ করে। এটি উটের সংকটময় পথপ্রদর্শক এবং সামরিক কার্যকলাপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

উটের শারীরবৃত্তীয় অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য

মরু অভিযোজনের একটি আদর্শ উদাহরণ হল উট। এর দেহের অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নে আলোচিত হল।

  • উটের অতিরিক্ত জলক্ষয় সহনের অভিযোজন জলক্ষয় সহনের জন্য উটের অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্যগুলি হল — 1. উটের দেহে যে চর্বিসমৃদ্ধ কুঁজ থাকে তাতে সঞ্চিত ফ্যাটের জারণে জল ও শক্তি উৎপাদিত হয়, যা তারা ব্যবহার করে। 2. গাঢ় মূত্র ত্যাগের মাধ্যমে উট দেহ থেকে জলের নির্গমন কমায়। 3. উট প্রায় 36L অবধি জল পান করতে পারে এবং তা পাকস্থলীতে জলধারণকারী কোশে সঞ্চয় করতে পারে। 4. নিশ্বাসের মাধ্যমে উট যে জলীয় বাষ্প ত্যাগ করে তা নাসাপথে বিন্যস্ত মিউকাস স্তর দ্বারা পুনঃশোষিত হয়ে দেহে ফিরে আসে। 5. উটের দেহের তাপমাত্রা বাহ্যিক তাপমাত্রার সাথে পরিবর্তিত হয় ও তা ঘামক্ষরণ রোধ করে। 49°C উন্নতাতেও উটের ঘাম নিঃসরণ হয় না।
  • উটের লোহিত রক্তকণিকার (RBC) আকৃতিতে অভিযোজন 1. উটের RBC-এর আকৃতি ক্ষুদ্র ও ডিম্বাকার হয় এবং এর জন্য এগুলি জলহীন অবস্থায়ও খুব সরু রক্তবাহের মধ্যে দিয়ে যেতে পারে। 2. অনেকদিন জল না খেয়ে হঠাৎ অনেক জল পান করলেও উটের RBC বিদীর্ণ হয় না। কারণ এদের RBC প্রাথমিক আকারের তুলনায় প্রায় 240% বৃদ্ধি পেতে সক্ষম। অর্থাৎ, এদের RBC আকস্মিক অভিস্রবণীয় চাপ সহ্য করতে পারে।

আচরণ কাকে বলে? সুন্দরীর মূল ও ক্যাকটাসের পাতার অভিযোজন সংক্ষেপে আলোচনা করো।

সুন্দরীর মূল ও ক্যাকটাসের পাতার অভিযোজন মধুর রঙ এবং সুন্দর আকৃতি সৃষ্টি করে, এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বাগানের অতীতে মধুর সম্পর্ক প্রকাশ করে। এটি পরিবেশ সংরক্ষণে এবং প্রাকৃতিক আকর্ষণ সৃষ্টি করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আচরণ

পরিবেশের কোনো ইঙ্গিত বা উদ্দীপকের প্রভাবে বা অন্য কোনো জীবের ক্রিয়ার ফলে কোনো একটি জীব স্নায়ুতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণাধীন যে ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকে আচরণ বলে।

সুন্দরীর মূল ও ক্যাকটাসের পাতার অভিযোজন

সুন্দরীর মূল ও ক্যাকটাসের পাতার অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্যগুলি নীচে আলোচনা করা হল।

  • সুন্দরীর মূলের অভিযোজন  1. সুন্দরী গাছের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অভিযোজন হল শ্বাসমূল। মূল মাটির গভীরে প্রবেশ করতে পারে না, প্রধান মূলতন্ত্রের অনুভূমিক অংশ থেকে শাখাপ্রশাখা নির্গত হয়ে অভিকর্যের বিপরীতে বৃদ্ধি পেয়ে বায়ু থেকে অক্সিজেন গ্রহণের উদ্দেশ্যে মাটির ওপরে উঠে আসে। এদেরকেই শ্বাসমূল বলে। শ্বাসমূলে উপস্থিত লেন্টিসেলের মাধ্যমে ব্যাপন ক্রিয়ায় এই শ্বাসমূল বায়ু থেকে সরাসরি অক্সিজেন গ্রহণ করে ও মূলতন্ত্রে সরবরাহ করে। 2. এ ছাড়া কাণ্ডের গোড়ার চারপাশ থেকে চ্যাপটা তক্তার মতো কতকগুলি মূলজ অংশ বের হয়ে সমকোণে মাটিতে আবদ্ধ থাকে। এদের অধিমূল বা রুট বাট্রেস বলে। এরা গাছকে মাটির ওপর খাড়া থাকতে সাহায্য করে।
  • ক্যাকটাসের পাতার অভিযোজন- শুষ্ক বা জলহীন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য বা অভিযোজিত হওয়ার কারণে ক্যাকটাসের পাতার মধ্যে বেশকিছু পরিবর্তন লক্ষিত হয়। এই পরিবর্তনগুলি হল — 1. এক্ষেত্রে পাতার আকৃতি ছোটো হয় ও পাতার সংখ্যা হ্রাস পায়। 2. এইজাতীয় উদ্ভিদে বাষ্পমোচনের হার হ্রাস করার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাতা কাঁটায় রূপান্তরিত হয়। এই অভিযোজন ক্যাকটাসের আত্মরক্ষাতেও সাহায্য করে।

অভিযোজন একটি জটিল প্রক্রিয়া যা জীবের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের এই অধ্যায়টি শিক্ষার্থীদের অভিব্যাক্তি ও অভিযোজনের ধারণাগুলি বুঝতে সাহায্য করে, যা তাদের সামাজিক ও মানসিক সমস্যাগুলি সমাধান করতে এবং পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা বিকাশ করতে সাহায্য করে।

Share via:

মন্তব্য করুন