আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের তৃতীয় অধ্যায় “বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ” অধ্যায়ের ‘বংশগতি‘ বিভাগের উপ-অধ্যায় ‘বংশগতি ও প্রকরণ, বংশগতি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ শব্দের ব্যাখ্যা‘ -এর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

বংশগতি কাকে বলে বুঝিয়ে দাও।
যে প্রক্রিয়ায় পিতামাতার চারিত্রিক গুণাবলি বংশপরম্পরায় সন্তানসন্ততির দেহে সঞ্চারিত হয়, তাকে বংশগতি বলে। বংশগতির মাধ্যমে কোনো জীব তার মতোই জীব সৃষ্টি করে। যেমন – আম গাছ থেকে আম গাছ, ছাগল থেকে ছাগল, মানুষ থেকে মানুষ জন্মায়।
হ্যাপ্লয়েড ও ডিপ্লয়েড সেট কাকে বলে?
হ্যাপ্লয়েড সেট –
জননকোশের জেনেটিক বস্তুতে ওই জীবের সমস্ত অ্যালিল একক মাত্রায় থাকলে তাকে হ্যাপ্লয়েড সেট বলে। হ্যাপ্লয়েড সেটে অটোজোমাল অ্যালিল এবং X বা Y ক্রোমোজোমের অ্যালিল একক মাত্রায় থাকে।
ডিপ্লেয়েড সেট –
দেহকোশের জেনেটিক বস্তুতে দুটি হোমোলোগাস ক্রোমোজোমের দ্বিগুণ মাত্রায় সমস্ত অ্যালিল থাকে। একে ডিপ্লয়েড সেট বলে। ডিপ্লয়েড সেটে অটোজোমাল অ্যালিল দ্বিগুণ মাত্রায় থাকে, সঙ্গে দ্বিগুণ মাত্রায় X ক্রোমোজোমীয় অ্যালিল অথবা X ও Y ক্রোমোজোমীয় অ্যালিল উভয়েই একক মাত্রায় থাকে।
জিনোম কাকে বলে?
ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোমসম্পন্ন (2n) জীবের প্রতিটি হ্যাপ্লয়েড (n) ক্রোমোজোম সেটে বিন্যস্ত জিনগুলিকে একত্রে জিনোম বলে। অর্থাৎ, জননকোশের বা গ্যামেটের হ্যাপ্লয়েড ক্রোমোজোমের সমস্ত জিনকে একত্রে জিনোম বলে। এগুলি গ্যামেটের মাধ্যমে জনিতৃ জীব থেকে অপত্যের দেহে সঞ্চারিত হয়।
পরিব্যক্তি বা মিউটেশন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
পরিব্যক্তি বা মিউটেশন –
ক্রোমোজোম বা জিনের সংখ্যা ও গঠনের পরিবর্তনের ফলে জীবের চরিত্রের পরিবর্তনকে পরিব্যক্তি বা মিউটেশন বলে।
পরিব্যক্তি বা মিউটেশনের উদাহরণ –
থ্যালাসেমিয়া, বর্ণান্ধতা, হিমোফিলিয়া প্রভৃতি রোগ পরিব্যক্তির ফলে সৃষ্টি হয়।
মানুষের কয়েকটি প্রকট ও প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
মানুষের কয়েকটি প্রকট ও প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য হল –
প্রকট বৈশিষ্ট্য | প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য |
বাদামি চোখ | নীল চোখ |
গাঢ় কালো চুল | হালকা কালো চুল |
কোঁকড়ানো চুল | সোজা চুল |

কোনো জীবের বৈশিষ্ট্য বা প্রলক্ষণ বলতে কী বোঝ?
কোনো জীবের বাহ্যিক বিশেষত্ব বা গুণকে বলে বৈশিষ্ট্য বা প্রলক্ষণ। প্রতিটি বৈশিষ্ট্য একটি অ্যালিল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন – মটর গাছের লম্বা হওয়াটি একটি বৈশিষ্ট্য। একইভাবে মটরের বীজপত্রের সবুজ বর্ণ, ফুলের বেগুনি বর্ণ প্রভৃতি হল পৃথক পৃথক বৈশিষ্ট্য।
কোনো জীবের চরিত্র বলতে কী বোঝ?
কোনো জীবের চরিত্র বলতে বোঝায় জিন নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যকে। যেমন – মটর গাছের উচ্চতা হল একটি চরিত্র। এই চরিত্রের অন্তর্গত দুটি বৈশিষ্ট্য হল লম্বা ও বেঁটে। একইভাবে বীজপত্রের রং চরিত্রটির অন্তর্গত দুটি বিপরীত বৈশিষ্ট্য হল হলদে ও সবুজ।
অ্যালিল বা অ্যালিলোমর্ফ কী?
সমসংস্থ ক্রোমোজোমের একই লোকাসে অবস্থিত কোনো নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী একটি জিনের ভিন্ন ভিন্ন রূপকে অ্যালিল বা অ্যালিলোমর্ফ বলা হয়। এককথায়, অ্যালিল হল একই জিনের ভিন্ন ভিন্ন রূপ। যেমন – লম্বা ও খর্বাকার; সাদা ও কালো ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য নির্ধারক জিন জোড়ার একটি জিন অপরটির অ্যালিল।

মনোহাইব্রিড ক্রস বা একসংকর জনন কাকে বলে?
কোনো প্রজাতির একটি চরিত্রের অন্তর্গত একজোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দুটি জীবের মধ্যে জনন সম্পাদিত হলে, তাকে মনোহাইব্রিড ক্রস বা একসংকর জনন বলে। যেমন – মটর গাছের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ লম্বা ও বিশুদ্ধ বেঁটে এই দুই বিপরীতধর্মী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ঘটা সংকরায়ণ হল একসংকর জননের উদাহরণ।
ডাইহাইব্রিড ক্রস বা দ্বিসংকর জনন কাকে বলে?
কোনো প্রজাতির দুই জোড়া বিপরীতধর্মী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দুটি জীবের মধ্যে জনন সম্পাদিত হলে, তাকে ডাইহাইব্রিড ক্রস বা দ্বিসংকর জনন বলে। যেমন – হলদে বীজপত্র এবং গোলাকার বীজসম্পন্ন মটর গাছের সঙ্গে সবুজ বীজপত্র এবং কুঞ্চিত বীজসম্পন্ন মটর গাছের সংকরায়ণ হল দ্বিসংকর জননের উদাহরণ।

হোমোজাইগাস জীব কাকে বলে?
কোনো জীবের দুটি সমসংস্থ ক্রোমোজোমে একটি নির্দিষ্ট চরিত্রের জন্য দায়ী অ্যালিল দুটি একইরকম হলে, ওই নির্দিষ্ট চরিত্রের সাপেক্ষে সেই জীবকে হোমোজাইগাস জীব বা সমসংকর জীব বলে। যেমন – বিশুদ্ধ লম্বা (TT) বা বিশুদ্ধ বেঁটে (tt) বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী অ্যালিল দুটি একই প্রকৃতির। তাই বিশুদ্ধ লম্বা বা বিশুদ্ধ বেঁটে বৈশিষ্ট্যযুক্ত জীব হল হোমোজাইগাস।
হেটেরোজাইগাস জীব কাকে বলে?
কোনো জীবের দুটি সমসংস্থ ক্রোমোজোমে অবস্থিত একটি নির্দিষ্ট চরিত্রের অ্যালিল দুটি ভিন্ন প্রকৃতির হলে, ওই নির্দিষ্ট চরিত্রের সাপেক্ষে সেই জীবকে হেটেরোজাইগাস জীব বা বিষমসংকর জীব বলে। যেমন – সংকর লম্বা (Tt) মটর উদ্ভিদ হেটেরোজাইগাস প্রকৃতির। কারণ, এক্ষেত্রে একই লোকাসে দুটি ভিন্ন অ্যালিল থাকে।
সংকরায়ণ কাকে বলে?
কোনো চরিত্রের সাপেক্ষে বিপরীত বৈশিষ্ট্যযুক্ত একই প্রজাতির দুটি জীবের মধ্যে যৌন জননকে সংকরায়ণ বলে। যেমন – বিশুদ্ধ লম্বা ও বিশুদ্ধ বেঁটে মটর গাছের মিলনে সংকর লম্বা মটর গাছ সৃষ্টি করার পদ্ধতি।
বিশুদ্ধ জীব বলতে কী বোঝ?
কোনো জীব যদি বংশানুক্রমে কোনো বৈশিষ্ট্য হুবহু একইরকমভাবে বজায় রাখে, তখন সেই বৈশিষ্ট্যের জন্য জীবটিকে বিশুদ্ধ বা খাঁটি জীব বলা হয়। যেমন – একসংকর জনন পরীক্ষায় জনিতৃ জনুর লম্বা (TT) ও বেঁটে (tt) মটর গাছ বিশুদ্ধ উদ্ভিদ।
সংকর জীব বলতে কী বোঝ?
দুটি বিশুদ্ধ বিপরীত বৈশিষ্ট্যযুক্ত জীবের যৌন জনন বা পরনিষেকের ফলে উৎপন্ন জীবটিকে সংকর জীব বলা হয়। যেমন – বিশুদ্ধ বেগুনি ফুলযুক্ত (VV) ও বিশুদ্ধ সাদা ফুলযুক্ত (vv) মটর গাছের সংকরায়ণের ফলে সৃষ্ট বেগুনি ফুলযুক্ত মটর গাছ হল সংকর উদ্ভিদ।
জনিতৃ জনু বলতে কী বোঝ?
সংকরায়ণ পরীক্ষায় শুরুতে যে দুটি জীব নিয়ে প্রজনন করানো হয়, তাদের জনিতৃ জনু বা P জনু (P = parental) বলা হয়। যেমন – একটি একসংকর জনন পরীক্ষায় জনিতৃ জনু হল বিশুদ্ধ বেগুনি ফুলবিশিষ্ট মটর গাছ (VV) ও বিশুদ্ধ সাদা ফুলবিশিষ্ট মটর গাছ (vv)।
প্রথম অপত্য জনু বলতে কী বোঝ?
সংকরায়ণ পরীক্ষায় জনিতৃ জনু থেকে উৎপন্ন নতুন জীবগুলিকে প্রথম অপত্য জনু বা F1 জনু (F1 = first filial) বলা হয়। যেমন – বিশুদ্ধ বেগুনি ফুলবিশিষ্ট (VV) ও বিশুদ্ধ সাদা ফুলবিশিষ্ট (vv) জনিতৃ জনু থেকে উৎপন্ন সংকর বেগুনি ফুলবিশিষ্ট (Vv) সমস্ত মটর গাছই হল প্রথম অপত্য জনু।
দ্বিতীয় অপত্য জনু কাকে বলে?
সংকরায়ণ পরীক্ষায় প্রথম অপত্য জনুর প্রজনন (স্বপরাগযোগ বা ইতর পরাগযোগ বা নিষেক) -এর ফলে সৃষ্ট নতুন জীবগুলিকে দ্বিতীয় অপত্য জনু বা F2 জনু (F2 = second filial) বলে। উদাহরণ – বিশুদ্ধ বেগুনি (VV) ফুলযুক্ত এবং বিশুদ্ধ সাদা (vv) ফুলযুক্ত জনিতৃ জনুর সংকরায়ণের ফলে প্রাপ্ত F1 জনুর সংকর বেগুনি ফুলযুক্ত (Vv) মটর গাছগুলির স্বপরাগযোগ ঘটানো হয়। এর ফলে উৎপন্ন বেগুনি এবং সাদা ফুলযুক্ত গাছগুলিই হল F2 জনু।
প্রকট বৈশিষ্ট্য বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও।
প্রকট বৈশিষ্ট্য –
একই চরিত্রের অন্তর্গত দুটি বিশুদ্ধ বিপরীত বৈশিষ্ট্যের জীবের মিলন ঘটালে প্রথম অপত্য বংশে (F1 জনুতে) যে বৈশিষ্ট্যটি প্রকাশ পায়, তাকে প্রকট বৈশিষ্ট্য বলে।
প্রকট বৈশিষ্ট্যের উদাহরণ –
বিশুদ্ধ বেগুনি ও বিশুদ্ধ সাদা ফুলযুক্ত মটর গাছের পরনিষেক ঘটালে F1 জনুতে সৃষ্ট সকল গাছ বেগুনি ফুলবিশিষ্ট হয়, অর্থাৎ বেগুনি ফুল হওয়ার বৈশিষ্ট্যটি হল প্রকট বৈশিষ্ট্য।
প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও।
প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য –
একই চরিত্রের অন্তর্গত দুটি বিশুদ্ধ বিপরীত বৈশিষ্ট্যের জীবের মিলন ঘটালে প্রথম অপত্য বংশে (F1 জনুতে) যে বৈশিষ্ট্যটি প্রকাশিত না হয়ে সুপ্ত থাকে ও পরে দ্বিতীয় অপত্য বংশে (F2 জনুতে) প্রকাশ পায়, তাকে প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য বলে।
প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যের উদাহরণ –
বিশুদ্ধ বেগুনি ও বিশুদ্ধ সাদা ফুলযুক্ত মটর গাছের ফুলের ইতর পরাগযোগ ঘটালে প্রথম অপত্য জনু বা F1 জনুতে সাদা ফুলযুক্ত উদ্ভিদ পাওয়া যায় না। দ্বিতীয় অপত্য জনু বা F2 জনুতে যদিও তা আবার প্রকাশ পায়। এই সাদা ফুল বৈশিষ্ট্যটি হল প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য।
ফিনোটাইপ কী? উদাহরণ দাও।
ফিনোটাইপ –
কোনো জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বাহ্যিক প্রকাশকে ফিনোটাইপ বলে
ফিনোটাইপের উদাহরণ –
মটর গাছের দৈর্ঘ্য চরিত্রটির বাহ্যিক প্রকাশ বা ফিনোটাইপ হল লম্বা ও বেঁটে।
জিনোটাইপ কী? উদাহরণ দাও।
জিনোটাইপ –
কোনো জীবের একটি চরিত্রের জিনগত গঠনকে অ্যালিল সমন্বয় দ্বারা প্রকাশ করলে, তাকে জিনোটাইপ বলে।
জিনোটাইপের উদাহরণ –
মটর গাছের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ লম্বা গাছের জিনগত গঠন বা জিনোটাইপ হল TT এবং বিশুদ্ধ খর্ব গাছের জিনোটাইপ হল tt।
ফিনোটাইপ ও জিনোটাইপের মধ্যে সম্পর্ক কী?
জীবের জিন নিয়ন্ত্রিত কোনো চরিত্রের বাহ্যিক প্রকাশিত বৈশিষ্ট্য হল ফিনোটাইপ। জিনের অ্যালিলের দ্বারা এই বাহ্যিক প্রকাশ নিয়ন্ত্রিত হয়। যে অ্যালিল সমন্বয় এই ফিনোটাইপ বা বাহ্যিক প্রকাশ নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে জিনোটাইপ বলে।
একজন বিশুদ্ধ রোলিং জিভযুক্ত পুরুষ ও স্বাভাবিক জিভযুক্ত মহিলার বিবাহে অপত্যদের জিভের প্রকৃতি কী হবে?
রোলিং জিভ একটি প্রকট অটোজোমাল অ্যালিল (R) পক্ষান্তরে স্বাভাবিক জিভ একটি প্রচ্ছন্ন অটোজোমাল অ্যালিল (r)। সুতরাং, প্রশ্নানুযায়ী ক্রসটি হবে নিম্নরূপ।

অর্থাৎ, সমস্ত পুত্র ও কন্যাসন্তান হেটেরোজাইগাস রোলিং জিভযুক্ত হবে।
রোলার জিভযুক্ত জীবের সংখ্যা স্বাভাবিক জিভযুক্ত মানুষের চেয়ে বেশি কেন?
রোলার জিভ সৃষ্টিকারী প্রকরণটির জন্য দায়ী অ্যালিলটি স্বাভাবিক (বা নন্-রোলার) জিভ সৃষ্টিকারী প্রকরণের জন্য দায়ী অ্যালিলের ওপর প্রকট। তাই হোমোজাইগাস ও হেটেরোজাইগাস উভয় অবস্থায় রোলার জিভের অ্যালিলটি প্রকাশিত হবে। আবার স্বাভাবিক জিভের প্রচ্ছন্ন অ্যালিলটি কেবলমাত্র হোমোজাইগাস অবস্থাতেই প্রকাশিত হয় বলে রোলার জিভযুক্ত মানুষের সংখ্যা বেশি হয়।
হোমোজাইগাস অবস্থা ও হেটেরোজাইগাস অবস্থার পার্থক্য লেখো।
হোমোজাইগাস ও হেটেরোজাইগাস অবস্থার মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | হোমোজাইগাস অবস্থা | হেটেরোজাইগাস অবস্থা |
নির্দিষ্ট লোকাসে থাকা জিনের প্রকৃতি | উভয়েই প্রকট অথবা উভয়েই প্রচ্ছন্ন। | দুটি অ্যালিলের একটি প্রকট ও অপরটি প্রচ্ছন্ন প্রকৃতির। |
ফিনোটাইপ শনাক্তকরণ যোগ্যতা | কেবলমাত্র প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে শনাক্তকরণযোগ্য। | কখনোই শনাক্তকরণযোগ্য নয়। |
উৎপন্ন গ্যামেটের প্রকারভেদ | কেবলমাত্র একপ্রকার। | একাধিক প্রকারের। |
বিশুদ্ধ জীব ও সংকর জীবের পার্থক্য লেখো।
বিশুদ্ধ জীব ও সংকর জীবের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | বিশুদ্ধ জীব | সংকর জীব |
সংজ্ঞা | কোনো জীব যদি বংশানুক্রমে কোনো বৈশিষ্ট্য হুবহু একইরকম বজায় রাখে, তখন সেই বৈশিষ্ট্যের জন্য জীবটিকে বিশুদ্ধ বা খাঁটি জীব বলে। | দুটি বিশুদ্ধ বিপরীত বৈশিষ্ট্যযুক্ত জীবের যৌন জনন বা পরনিষেকের ফলে উৎপন্ন জীবটিকে সংকর জীব বলে। |
জিনের প্রকৃতি | একজোড়া সমসংস্থ ক্রোমোজোমে কোনো জিনের লোকাসে একইপ্রকার দুটি অ্যালিল থাকে। | একজোড়া সমসংস্থ ক্রোমোজোমে কোনো জিনের লোকাসে থাকা দুটি অ্যালিল বিপরীতধর্মী হয়। |
প্রকাশ | বিশুদ্ধ জীবে চারিত্রিক (প্রকট বা প্রচ্ছন্ন) বৈশিষ্ট্যটি ফিনোটাইপে সর্বদা প্রকাশিত হয়। | সংকর জীবে প্রকট বৈশিষ্ট্যটিই ফিনোটাইপে প্রকাশিত হয়, প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যটি প্রকাশিত হয় না। |
গ্যামেট উৎপাদন | বিশুদ্ধ জীবে একরকমের গ্যামেট (যেমন – T অথবা t প্রকৃতির) উৎপন্ন হয়। | সংকর জীবে একটি চরিত্রের জন্য দুই রকমের গ্যামেট (যেমন – T এবং t প্রকৃতির) উৎপন্ন হয়। |
প্রকট বৈশিষ্ট্য ও প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
প্রকট ও প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | প্রকট বৈশিষ্ট্য | প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য |
F1 জনুতে প্রকাশ | প্রকাশিত হয়। | সুপ্ত থাকে। |
জিনগত প্রকাশ | হোমোজাইগাস ও হেটেরোজাইগাস উভয় অবস্থাতেই প্রকাশিত হয়। | কেবলমাত্র হোমোজাইগাস অবস্থায় প্রকাশিত হয়। |
বিশুদ্ধ-সংকর শনাক্তকরণ | বিশুদ্ধ কিংবা সংকর কিনা, তা শনাক্তকরণ সম্ভব নয়। | প্রকাশিত হলে তা সর্বদাই বিশুদ্ধ, অর্থাৎ শনাক্তকরণযোগ্য। |
জিনোটাইপ ও ফিনোটাইপের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
জিনোটাইপ ও ফিনোটাইপের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | জিনোটাইপ | ফিনোটাইপ |
প্রকৃতি | জীবের জিনগত অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য। | জীবের বাহ্যিক প্রকাশিত বৈশিষ্ট্য। |
নির্ণয়ের পদ্ধতি | সংকরায়ণ পরীক্ষা দ্বারা নির্ণয় করা যায়। | খালি চোখে দেখে নির্ণয় করা যায়। |
পারস্পরিক সম্পর্ক | জিনোটাইপ এক হলে ফিনোটাইপও একই হতে বাধ্য। | ফিনোটাইপ এক হলে জিনোটাইপ এক নাও হতে পারে। |
বিশুদ্ধ ও সংকর বৈশিষ্ট্যের পৃথককরণ | জিনোটাইপ দেখে উভয় বৈশিষ্ট্যের মধ্যে বিভেদ করা যায়। | ফিনোটাইপ দেখে উভয় বৈশিষ্ট্যের মধ্যে বিভেদ করা যায় না। |
আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের তৃতীয় অধ্যায় “বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ” অধ্যায়ের ‘বংশগতি‘ বিভাগের উপ-অধ্যায় ‘বংশগতি ও প্রকরণ, বংশগতি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ শব্দের ব্যাখ্যা‘ -এর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন যার এটি প্রয়োজন হবে তার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন