মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – পরিবেশের জন্য ভাবনা – ওজোন স্তর, গ্রিনহাউস এফেক্ট এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিং

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ‘ওজোন স্তর, গ্রিনহাউস এফেক্ট এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিং’ নিয়ে আলোচনা করব। এটি ‘পরিবেশের জন্য ভাবনা’ অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। মাধ্যমিক পরীক্ষায় এই অংশ থেকে প্রায় প্রতি বছর প্রশ্ন আসে। এছাড়া, চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্যও এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান - পরিবেশের জন্য ভাবনা - ওজোন স্তর, গ্রিনহাউস এফেক্ট এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিং
Contents Show

ওজোন স্তর, গ্রিনহাউস এফেক্ট এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিং –

ওজোন স্তর –

বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে 15-35 কিমি উচ্চতায় অবস্থিত তিনটি অক্সিজেন পরমাণু দ্বারা গঠিত ওজোন গ্যাসের যে ঘন স্তর থাকে, তাকে ওজোন স্তর বা ওজোনোস্ফিয়ার (Ozonosphere) বলে।

বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের অতিবেগুনি রশ্মির উপস্থিতিতে দুটি অনুক্রমিক আলোক-রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ওজোন গ্যাসের সৃষ্টি হয়।

প্রথমে দ্বিপরমাণুযুক্ত অক্সিজেন অণু অতিবেগুনি রশ্মির ফোটন কণার (UV-B ও UV-C) দ্বারা বিয়োজিত হয়ে অক্সিজেন পরমাণুতে পরিণত হয়।

O2UV-রশ্মির ফোটোন কণা2O

দ্বিতীয় ক্ষেত্রে এই অক্সিজেন পরমাণু অনুঘটকের উপস্থিতিতে অক্সিজেন অণুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ওজোন গ্যাসের অণু ও তাপ উৎপন্ন করে।

O+O2অনুঘটকO3+তাপ

প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণে ওজোন গহ্বর সৃষ্টি হয়ে থাকে। মনুষ্যসৃষ্ট কারণের মধ্যে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC) যৌগসমূহ, নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ (NO, NO2 ইত্যাদি), হ্যালোন যৌগসমূহ (যেমন – হ্যালোন 1211 ও হ্যালোন 1301) ওজোন স্তরের বিনাশ ঘটায়।

ওজোন স্তর ক্ষয়ে NO এবং NO2 (সংক্ষেপে NOx) -এর ভূমিকা –

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে নাইট্রোজেন অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে (জেটপ্লেন থেকে নির্গত) ওজোন স্তর ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ওজোন অণু NOx -এর সঙ্গে বিক্রিয়ায় O2 অণুতে পরিণত হয়।

NO+O3NO2+O2; O3UV-রশ্মিO2+O; NO2+ONO+O2

ওজোন স্তর ক্ষয়ে CFC যৌগসমূহের ভূমিকা –

অদাহ্য হওয়ায় CFC যৌগসমূহ দ্রাবকরূপে ব্যাপকভাবে রেফ্রিজারেটর বাতানুকুল যন্ত্র ও খাদ্য দ্রব্য সংরক্ষণের কাজে ব্যবহার করা হয়।

CFC সমূহ স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওজোন স্তর ধ্বংসে অনুঘটকরূপে কাজ করে। অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে CFC বিভাজিত হয়ে সক্রিয় ক্লোরিন পরমাণু সৃষ্টি করে যা O3 -এর সঙ্গে বিক্রিয়া করে অক্সিজেন ও ক্লোরিন মনোক্সাইড (ClO) উৎপন্ন করে। উৎপন্ন ClO পুনরায় ওজোনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে O2 অণু ও সক্রিয় ক্লোরিন পরমাণু উৎপন্ন করে, যা পুনরায় O3 -এর সঙ্গে বিক্রিয়া করে O2 অণু সৃষ্টি করে। এই প্রক্রিয়া চক্রাকারে চলতে থাকে ফলে ওজোন স্তর ক্রমশ পাতলা হয়। এভাবে একটি সক্রিয় Cl পরমাণু লক্ষাধিক ওজোন অণুর বিয়োজন ঘটাতে পারে।

CFCl3UV-রশ্মিCFCl2+Cl(সক্রিয়); CF2Cl2UV-রশ্মিCF2Cl+Cl(সক্রিয়); Cl(সক্রিয়)+O3ClO(সক্রিয়)+O2; ClO(সক্রিয়)+O3Cl(সক্রিয়)+2O2

গ্রিনহাউস এফেক্ট –

বায়ুমণ্ডলে মূলত CO2 -এর ঘনত্ব বৃদ্ধিজনিত কারণে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ঘটনাকে গ্রিনহাউস এফেক্ট বলে।

গ্রিনহাউস গ্যাস –

বায়ুমণ্ডলে যে সমস্ত গ্যাসের উপস্থিতির জন্য গ্রিনহাউস ক্রিয়া সংঘটিত হয় তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস বলে। যেমন – CO2, জলীয়বাষ্প, মিথেন, CFC ও NOx

গ্রিনহাউস গ্যাসের শতকরা পরিমাণের পাই চিত্র

অক্সিজেন (O2) ও নাইট্রোজেন (N2) এই গ্যাসদুটি ভূপৃষ্ঠ দ্বারা বিকিরিত দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অবলোহিত রশ্মি (IR) শোষণ করতে পারে না। সুতরাং, এই গ্যাস দুটি গ্রিনহাউস গ্যাস নয়।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং –

সারা পৃথিবী জুড়ে উষ্ণতার ক্রমবর্ধমান অবস্থাকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বলে।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং -এর ফলাফল –

  1. পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে মরু অঞ্চলে জমে থাকা বরফ আরও বেশি করে গলবে ফলে সমুদ্রের জলতলের উচ্চতা বেড়ে উপকূলবর্তী এলাকাগুলি জল মগ্ন হবে। ভারত, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ প্রভৃতি দেশের কিছু অংশ ডুবে যাবে।
  2. আবহাওয়ার অনেক পরিবর্তন ঘটবে। ফলে প্রবল বন্যা, খরা, ঝড়-ঝঞ্ঝা দেখা দেবে।
  3. বিভিন্ন ধরনের জীবাণুঘটিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেবে।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমানোর উপায় –

  1. জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন – কয়লা, পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতির ব্যবহার কমিয়ে অপ্রচলিত শক্তি যেমন – সৌরশক্তি, জোয়ার ভাটার শক্তি, বায়ুশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে; ফলে CO2 -এর উৎপাদন হ্রাস পাবে।
  2. গ্রিনহাউস প্রভাবকে হ্রাস করার জন্য বনভূমি মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তাই বনভূমি ধ্বংস না করে আরও নতুন বনভূমি সৃষ্টির জন্য পরিকল্পনা নিতে হবে।
  3. ক্লোরোফ্লুরো কার্বন বা CFC গ্যাসের উৎপাদন এবং ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
  4. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং মানুষকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্ব উন্নায়নের কুফল সম্বন্ধে সচেতন করতে হবে।

গ্রিনহাউস প্রভাবের রেখাচিত্র –

গ্রিনহাউস প্রভাবের রেখাচিত্র

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

সুগন্ধি স্প্রে, পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকারক কেন?

সুগন্ধি স্প্রে, পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকারক কারণ VOCs বায়ু ও জল দূষণ করে, ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং প্রাণীর জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে।

ওজোন স্তরকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে নাইট্রোজেনের কোন্ অক্সাইডটি?

ওজোন স্তরকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে নাইট্রোজেনের নাইট্রাস (N2O) অক্সাইডটি।

একটি হাইড্রোকার্বনের নাম লেখো, যেটি গ্রিনহাউস গ্যাস।

একটি হাইড্রোকার্বনের নাম হল মিথেন (CH4), যেটি গ্রিনহাউস গ্যাস।

বায়ুমণ্ডলের মোট ওজোন গ্যাসের কত শতাংশ স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে উপস্থিত?

বায়ুমণ্ডলের মোট ওজোন গ্যাসের 90 শতাংশ স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে উপস্থিত।

গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির প্রভাবে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের গড় উষ্ণতা কত থাকে?

গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির প্রভাবে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের গড় উষ্ণতা প্রায় 15 ডিগ্রি সেলসিয়াস (59 ডিগ্রি ফারেনহাইট) থাকে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ‘ওজোন স্তর, গ্রিনহাউস এফেক্ট এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিং’ নিয়ে আলোচনা করেছি, যা ‘পরিবেশের জন্য ভাবনা’ অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। মাধ্যমিক পরীক্ষায় এই অংশটি থেকে প্রায় প্রতি বছর প্রশ্ন আসে এবং চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্যও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই শিক্ষার্থী ও প্রার্থী সকলের জন্য এই আলোচনা বিশেষভাবে সহায়ক হবে বলে আমরা আশা করি। আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন—আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। পাশাপাশি, যাদের এই তথ্যগুলি প্রয়োজন মনে করছেন, তাদের সাথে এই পোস্টটি শেয়ার করুন। ধন্যবাদান্তে, Team SolutionWbbse

Please Share This Article

Related Posts

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরের অবস্থান এবং এর গুরুত্ব উল্লেখ করো।

বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরের অবস্থান এবং এর গুরুত্ব

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান - পরিবেশের জন্য ভাবনা - স্থিতিশীল উন্নয়নে শক্তি উৎসের ব্যবহার

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – পরিবেশের জন্য ভাবনা – স্থিতিশীল উন্নয়নে শক্তি উৎসের ব্যবহার

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান - পরিবেশের জন্য ভাবনা - বায়ুমণ্ডলের গঠন

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – পরিবেশের জন্য ভাবনা – বায়ুমণ্ডলের গঠন

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

ভারতকে মৃত্তিকা অঞ্চলে ভাগ করে প্রত্যেকটির পরিচয় দাও।

দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ও উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর পার্থক্য

বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরের অবস্থান এবং এর গুরুত্ব

মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা ও বঙ্গোপসাগরীয় শাখা কী? মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা ও বঙ্গোপসাগরীয় শাখার মধ্যে পার্থক্য

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – পরিবেশের জন্য ভাবনা – স্থিতিশীল উন্নয়নে শক্তি উৎসের ব্যবহার