মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – পরিবেশের জন্য ভাবনা – স্থিতিশীল উন্নয়নে শক্তি উৎসের ব্যবহার

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ‘স্থিতিশীল উন্নয়নে শক্তি উৎসের ব্যবহার’ নিয়ে আলোচনা করব। এটি ‘পরিবেশের জন্য ভাবনা’ অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। মাধ্যমিক পরীক্ষায় এই অংশ থেকে প্রায় প্রতি বছর প্রশ্ন আসে। এছাড়া, চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্যও এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান - পরিবেশের জন্য ভাবনা - স্থিতিশীল উন্নয়নে শক্তি উৎসের ব্যবহার
Contents Show

স্থিতিশীল উন্নয়নে শক্তি উৎসের ব্যবহার –

শক্তি সম্পদের শ্রেণিবিভাগ –

শক্তি সম্পদের শ্রেণিবিভাগ

জ্বালানির তাপনমূল্য –

কোনো জ্বালানির একক ভর বা আয়তনের সম্পূর্ণ দহনে যে পরিমাণ তাপ শক্তি উৎপন্ন হয় তাকে ওই জ্বালানির তাপনমূল্য বলে। এর একক ক্যালোরি/গ্রাম বা কিলোক্যালোরি/ঘনমিটার বা কিলোজুল/কেজি।

জীবাশ্ম জ্বালানির সংরক্ষণ –

নিম্নলিখিত উপায়ে আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির সংরক্ষণ করতে পারি। যেমন-

  1. অপচয় রোধের মাধ্যমে – প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহার না করা, উত্তোলন প্রক্রিয়ায় এবং ব্যবহার প্রক্রিয়ায় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা।
  2. বিকল্প শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি – পরিবেশ বান্ধব বিকল্প শক্তি উৎসের ব্যবহার বৃদ্ধি করা ও নতুন উৎসের অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়া, বিভিন্ন অপ্রচলিত ও অপুনর্ভব শক্তি উৎসগুলির, যেমন – সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, ভূতাপীয় শক্তি, জোয়ার-ভাটার শক্তি ইত্যাদির ব্যবহার বৃদ্ধি করা।

স্থিতিশীল উন্নয়নের ধারণা –

স্থিতিশীল উন্নয়ন হল সেই উন্নয়ন বা পরিকল্পনা যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিজস্ব চাহিদা পূরণ করার ক্ষমতাকে ব্যাহত না করে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা পূরণ করতে পারে।

স্থিতিশীল উন্নয়নের প্রধান তিনটি লক্ষ্য হল –

  1. পুনর্নবীকরণযোগ্য সম্পদের সুস্থায়ী ব্যবহার – পুনর্নবীকরণযোগ্য সম্পদগুলি এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে যাতে তাদের ব্যবহারের হার নবীকরণের হারকে কোনোভাবেই অতিক্রম না করে।
  2. সুস্থায়ী অর্থনীতি – প্রাকৃতিক সম্পদ দ্রুত নিঃশেষিত হলে অর্থনীতিতে তার বিরূপ প্রভাব পড়ে। সুতরাং দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে প্রত্যেক দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহারে ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন।
  3. সুস্থায়ী সমাজ – স্থিতিশীল উন্নয়নের একটি অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হল সুস্থায়ী সমাজ গঠন করা যা প্রকৃতির স্বার্থে কাজ করে সমাজের অস্তিত্বকে দীর্ঘস্থায়ী করবে।

সৌরশক্তির ব্যবহার –

  1. সৌর কোশ থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ রান্নার কাজে, ছোটো পাম্প চালাতে, টেলিফোন চালাতে, রাস্তার আলো জ্বালাতে, সিগনালিং ব্যবস্থায় ব্যবহার করা হয়।
  2. সৌর চুল্লিতে সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে রান্না করা হয়।
  3. সৌর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে শীতপ্রধান দেশে ঘর গরম রাখা হয়।
  4. সৌর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সোলার হিটার ব্যবহার করা হয় যা ঘর গরম রাখতে, জল গরম করতে ব্যবহার করা হয়।

বায়ুশক্তির ব্যবহার –

  1. বায়ু শক্তিকে কাজে লাগিয়ে উইন্ড মিলে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
  2. বায়ুশক্তির সাহায্যে উৎপাদিত বিদ্যুৎ গম পেশাই করতে, জলসেচ ও জল তোলার কাজে ব্যবহার করা হয়।

জোয়ার-ভাটার শক্তির ব্যবহার –

নদী মোহানা বা খাঁড়ি অঞ্চলে জোয়ার-ভাটার শক্তির সাহায্যে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। সেই বিদ্যৎ বিভিন্নভাবে কাজে লাগানো হয়।

ভূতাপীয় শক্তির ব্যবহার –

পৃথিবীর অভ্যন্তরে শিলা অত্যন্ত তাপে গলিত অবস্থায় থাকে। শিলার তেজস্ক্রিয় বিকিরণের থেকে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়, সেই তাপ নানারূপে ভূতাপীয় শক্তিরূপে পাওয়া যায়। এই ভূতাপীয় শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয় এবং বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়।

বায়োমাস বা জীবভর শক্তির ব্যবহার –

উদ্ভিজ্জ জীবভরকে সরাসরি জ্বালিয়ে অথবা কাঠকয়লায় পরিণত করার পর তা জ্বালিয়ে আমরা তাপশক্তি পেয়ে থাকে। এই তাপশক্তির সাহায্যে বাষ্প তৈরি করে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন করা হয়।

বায়োগ্যাসের ব্যবহার –

বায়োগ্যাস রান্নার কাজে গ্যাসীয় জ্বালানিরূপে সরাসরি ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া বায়োগ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা গৃহস্থলির বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে।

গ্যাসোহোল –

বর্তমানে পেট্রোল বা গ্যাসোলিনের সঙ্গে 10% ইথানল মিশিয়ে গ্যাসোহোল উৎপাদন করা হয়েছে যা গাড়িতে জ্বালানিরূপে ব্যবহার করা হয়।

কয়লাখনির মিথেন (Coal Bed Methane, CBM) –

কয়লা খনিতে কয়লার কঠিন স্তরে মিথেন (CH4) গ্যাস অধিশোষিত অবস্থায় থাকে। যাকে কয়লা খনির মিথেন বা কোলবেড মিথেন (CBM) বলে। কোলবেড মিথেনের মধ্যে খুব অল্প পরিমাণে প্রোপেন বা বিউটেন এবং কার্বনডাই অক্সাইড গ্যাস থাকে। ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জ্বালানির গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে বর্তমানে কোলবেড মিথেনকে ব্যবহার করা হচ্ছে।

গ্যাসোহোল দ্বারা চালিত গাড়ি

মিথেন হাইড্রেট –

সমুদ্রের তলদেশে পৃথিবীপৃষ্ঠের পলিস্তরের নীচে বৃহৎ বরফের গোঁজের মতো চাঁই আকারে মিথেন হাইড্রেটের খনি অবস্থান করে। এই চাঁই উত্তোলন করা হলে তা থেকে মিথেন গ্যাস নির্গত হয়।

সচরাচর ব্যবহৃত জীবাশ্ম জ্বালানিগুলির তাপনমূল্যের সংক্ষিপ্ত তালিকা

জীবাশ্ম জ্বালানিতাপন মূল্য
অ্যানথ্রাসাইট কয়লা32500-34000 kJ/kg
বিটুমিনাস কয়লা17000-23250 kJ/kg
কাঠকয়লা29600 kJ/kg
কোক কয়লা28000-31000 kJ/kg
ডিজেল44800 kJ/kg
পেট্রোল48000 kJ/kg
কেরোসিন46200 kJ/kg
LPG50000 kJ/kg
প্রাকৃতিক গ্যাস39820 kJ/kg

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

বায়োডিজেল কী থেকে প্রস্তুত হয়? এবং এর ব্যবহার লেখো।

বায়োডিজেল উদ্ভিদের দেহজাত অবশেষ, প্রাণীর চর্বি, শ্যাওলা, কিছু বিশেষ প্রজাতির গাছ, জ্যাট্রোফা ও মহুয়ার বীজ ইত্যাদি থেকে প্রস্তুত হয়।
ব্যবহার – জেনারেটর চালাতে, ট্রেন চালাতে, বাস, ট্রাক ইত্যাদি যানবাহন চালাতে ব্যবহার করা হয়।

পেট্রোপ্ল্যান্ট (Petroplants) কাকে বলে?

যেসব উদ্ভিদ নিঃসৃত রস থেকে প্রাপ্ত তরল হাইড্রোকার্বন পেট্রোলিয়ামজাত জ্বালানির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে এদের পেট্রোপ্ল্যান্ট (Petroplants) বলে। যেমন – ইউফোরবিয়েসি, অ্যাসক্লেপিয়াসি।

জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যতীত অপর একটি অনবীকরণযোগ্য শক্তি উৎসের নাম লেখো।

জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যতীত অপর একটি অনবীকরণযোগ্য শক্তি উৎসের নাম হল পারমাণবিক শক্তি।

ভারতে বায়োডিজেল প্রস্তুত করা হয় এমন একটি উদ্ভিদের নাম লেখো।

ভারতে বায়োডিজেল প্রস্তুত করা হয় এমন একটি উদ্ভিদের নাম হল জ্যাট্রোফা (Jatropha)।

বায়ুকলের সাহায্যে তড়িৎশক্তি উৎপাদন করতে হলে বায়ুর ন্যূনতম গতিবেগ কত হওয়া প্রয়োজন?

বায়ুকলের সাহায্যে তড়িৎশক্তি উৎপাদন করতে হলে বায়ুর ন্যূনতম গতিবেগ প্রতি ঘন্টায় প্রায় 14 মাইল (প্রায় 22.5 কিলোমিটার) হওয়া প্রয়োজন।

সৌর-কোশ ব্যবহৃত হয় এমন কয়েকটি যন্ত্রের নাম লেখো।

সৌর-কোশ ব্যবহৃত হয় এমন কয়েকটি যন্ত্রের নাম হল সৌর ঘড়ি, সৌর আলো, সৌর ক্যালকুলেটর, সৌর প্যানেল প্রভৃতি।

কার্বনবিহীন একটি জ্বালানির নাম লেখো।

কার্বনবিহীন একটি জ্বালানির নাম হল হাইড্রোজেন গ্যাস।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ‘স্থিতিশীল উন্নয়নে শক্তি উৎসের ব্যবহার’ নিয়ে আলোচনা করেছি, যা ‘পরিবেশের জন্য ভাবনা’ অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। মাধ্যমিক পরীক্ষায় এই অংশটি থেকে প্রায় প্রতি বছর প্রশ্ন আসে এবং চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্যও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই শিক্ষার্থী ও প্রার্থী সকলের জন্য এই আলোচনা বিশেষভাবে সহায়ক হবে বলে আমরা আশা করি। আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন—আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। পাশাপাশি, যাদের এই তথ্যগুলি প্রয়োজন মনে করছেন, তাদের সাথে এই পোস্টটি শেয়ার করুন। ধন্যবাদান্তে, Team SolutionWbbse

Please Share This Article

Related Posts

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরের অবস্থান এবং এর গুরুত্ব উল্লেখ করো।

বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরের অবস্থান এবং এর গুরুত্ব

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান - পরিবেশের জন্য ভাবনা - ওজোন স্তর, গ্রিনহাউস এফেক্ট এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিং

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – পরিবেশের জন্য ভাবনা – ওজোন স্তর, গ্রিনহাউস এফেক্ট এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিং

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান - পরিবেশের জন্য ভাবনা - বায়ুমণ্ডলের গঠন

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – পরিবেশের জন্য ভাবনা – বায়ুমণ্ডলের গঠন

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

ভারতকে মৃত্তিকা অঞ্চলে ভাগ করে প্রত্যেকটির পরিচয় দাও।

দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ও উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর পার্থক্য

বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরের অবস্থান এবং এর গুরুত্ব

মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা ও বঙ্গোপসাগরীয় শাখা কী? মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা ও বঙ্গোপসাগরীয় শাখার মধ্যে পার্থক্য

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – পরিবেশের জন্য ভাবনা – স্থিতিশীল উন্নয়নে শক্তি উৎসের ব্যবহার