নমস্কার! আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় – ভারতের মৃত্তিকা বিভাগ – থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো শুধুমাত্র মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্যই নয়, বরং বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
মাটি কাকে বলে?
সূক্ষ্ম শিলাচূর্ণের সঙ্গে বিভিন্ন জৈব পদার্থের সংমিশ্রণের ফলে ভূত্বকের সবচেয়ে ওপরে যে আবরণের সৃষ্টি হয়, তাকে সাধারণভাবে মাটি বা মৃত্তিকা বলা হয়। মাটির মধ্যে থাকা শিলাচূর্ণের খনিজ উপাদানের পরিমাণ, গঠন, সচ্ছিদ্রতা এবং জৈব পদার্থের পরিমাণের ওপর মাটির উর্বরতা নির্ভর করে।
যেমন – পলি মাটি, ল্যাটেরাইট মাটি প্রভৃতি।
ভূমিক্ষয় বা মৃত্তিকাক্ষয় সমস্যার সমাধানের পদ্ধতিগুলি সম্পর্কে লেখো।
যেসব পদ্ধতি গ্রহণ করলে ভূমিক্ষয় বা মৃত্তিকাক্ষয় সমস্যার সমাধান করা যায়, সেগুলি হল – 1. বেশি করে গাছ লাগানো বা বৃক্ষরোপণ, 2. বৈজ্ঞানিক প্রথায় চাষ, 3. ঝুমচাষ বা স্থান পরিবর্তনশীল কৃষিকাজ রোধ, 4. পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ, 5. পার্বত্য ও মালভূমি অঞ্চলে ভূমির ঢাল অনুসারে চাষ, 6. জায়গা উন্মুক্ত না রেখে সেখানে কৃষিকাজ বা যে-কোনো ধরনের বৃক্ষরোপণ, 7. শস্যাবর্তন পদ্ধতিতে চাষ ইত্যাদি।
ভারতের প্রধান প্রধান মাটির নাম করো।
ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে শিলার প্রকৃতি, উদ্ভিদ ও জলবায়ুর পার্থক্যের জন্য এখানে প্রধানত ছয় ধরনের মাটি দেখা যায় – 1. পলি মাটি, 2. কৃষ্ণমৃত্তিকা বা কালোমাটি, 3. লোহিত মৃত্তিকা বা লালমাটি, 4. ল্যাটেরাইট মাটি, 5. মরু অঞ্চলের মাটি, 6.পার্বত্য মাটি।
ভারতীয় কৃষিতে কোন্ কোন্ প্রকার মৃত্তিকা গুরুত্বপূর্ণ?
ভারতীয় কৃষিতে কোন্ কোন্ প্রকার মাটি গুরুত্বপূর্ণ?
আঞ্চলিক বিস্তৃতি এবং ফসল উৎপাদনের বিচারে ভারতের কৃষিতে তিন প্রকার মাটি গুরুত্বপূর্ণ। এগুলি হল – 1. পলি মাটি, 2. কৃষ্ণমৃত্তিকা বা কালোমাটি, 3. লোহিত মৃত্তিকা বা লালমাটি।
বুনন অনুসারে অনুসারে পলিমাটির শ্রেণিবিভাগ করো।
পলি, বালি ও কাদার অনুপাত বা মৃত্তিকার বুনন অনুসারে পলিমাটি তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত। যেমন – 1. বেলেমাটি (বালির ভাগ বেশি থাকে); 2. দোআঁশ মাটি (বালি, পলি ও কাদার অনুপাত প্রায় সমান থাকে) 3. এঁটেল মাটি (কাদার ভাগ বেশি থাকে)।
পলিমাটিতে কী কী ফসল উৎপন্ন হয়?
পলিমাটিতে ধান, গম, পাট, তুলো, আখ প্রভৃতি ফসল উৎপন্ন হয়।
পডসল মৃত্তিকা কাকে বলে?
সরলবর্গীয় অরণ্য অঞ্চলের জৈব পদার্থ বা হিউমাস সমৃদ্ধ ‘অম্লধর্মী’ মাটিকে পডসল মৃত্তিকা বলে। পশ্চিম হিমালয়ের হিমাচল ও জম্মু অঞ্চলের সরলবর্গীয় বনাঞ্চলে পডসল মৃত্তিকা দেখা যায়।
ভারতের কোন্ কোন্ অঞ্চলে কৃষ্ণ মৃত্তিকা দেখা যায়?
মহারাষ্ট্র মালভূমি, গুজরাটের ভারুচ, ভাদোদরা, সুরাট, মধ্যপ্রদেশের পশ্চিমাংশ এবং কর্ণাটকের উত্তরাংশে কৃষ্ণ মৃত্তিকা দেখা যায়।
লবণাক্ত মৃত্তিকা ভারতের কোন্ কোন্ অঞ্চলে দেখা যায়?
সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে, যেমন – সুন্দরবন এলাকায় লবণাক্ত মৃত্তিকা দেখা যায়। এছাড়া, রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারের মরুপ্রায় এলাকাতেও লবণাক্ত মৃত্তিকা দেখা যায়।
ভারতের কোন্ অঞ্চলে ল্যাটেরাইট মাটি দেখা যায়?
দাক্ষিণাত্যের পশ্চিমঘাট, নীলগিরি এবং কার্ডামম পার্বত্য অঞ্চলে, ওডিশার পাহাড়ি এলাকায় এবং ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে ল্যাটেরাইট মাটি দেখা যায়।
ভুর ও রেগুর কী?
ভুর: উচ্চ গঙ্গা সমভূমি অঞ্চলে, বিশেষত পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের উচ্চ দোয়াব অঞ্চলে, অত্যন্ত সূক্ষ্ম কণার মৃত্তিকা দ্বারা গঠিত তরঙ্গায়িত উচ্চভূমি দেখা যায়, একে ভুর বলে।
রেগুর: দাক্ষিণাত্যের উত্তর-পশ্চিম অংশে ব্যাসল্ট শিলাসৃষ্ট যে অত্যন্ত উর্বর কুষ্ণ মৃত্তিকা আছে, তাকে রেগুর বলে। তেলুগু শব্দ ‘রেগাডা’ থেকে এর নামের উৎপত্তি হয়েছে।
খাদার (khadar) কী?
উত্তর ভারতের গঙ্গা সমভূমি অঞ্চলে নদীর উভয় তীরের প্লাবনভূমিতে যে নতুন পলিগঠিত উর্বর মৃত্তিকা দেখা যায়, তাকে খাদার (Khadar) বলে।
ভূমিক্ষয় বা মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ কী?
প্রাকৃতিক কারণ: ঝড়, বৃষ্টিপাত, এবং নদী নালার মাধ্যমে মৃত্তিকার ক্ষয়।
মানুষসৃষ্ট কারণ: যথেচ্ছ বৃক্ষচ্ছেদন, অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ, এবং অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ।
পডসল মাটি ভারতের কোথায় দেখা যায়?
পশ্চিম হিমালয়, পশ্চিমঘাট, নীলগিরি, কার্ডামম প্রভৃতি পর্বতের উঁচু অংশে পডসল মাটি দেখা যায়।
ডেকান ট্র্যাপ অঞ্চলে কৃষ্ণ মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়েছে কেন?
দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিমাংশে লাভা দ্বারা গঠিত মালভূমিকে ডেকান ট্র্যাপ বলে। এই মাটি কালো রঙের ব্যাসল্ট শিলার আবহবিকার দ্বারা তৈরি হয় এবং এতে টাইটানিয়াম অক্সাইড থাকায় এর রং কালো হয়।
মৃত্তিকা ক্ষয় বলতে কী বোঝ?
প্রবাহিত জলধারা, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তি এবং মানুষের অনিয়ন্ত্রিত কার্যকলাপের ফলে মাটির উপরিস্তরের আলগা অংশ অপসারিত হওয়াকে মৃত্তিকা ক্ষয় বলে। মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলে মাটির উর্বরতাও হ্রাস পায়।
ভারতের কোথায় কোথায় মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রাধান্য বেশি?
উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, ছোটোনাগপুর মালভূমি, পূর্ব ও পশ্চিমঘাট পর্বত, রাজস্থানের মরুভূমি, পাঞ্জাব, গুজরাত এবং মধ্যপ্রদেশ অঞ্চলে মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রাধান্য দেখা যায়।
রেগুর মাটির রং কালো কেন?
লাভা থেকে উৎপন্ন কালো ব্যাসল্ট শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে রেগুর মাটি সৃষ্টি হয় বলে এই মাটির রং কালো। এই মাটিতে টাইটানিয়াম অক্সাইড থাকায় এর রং কালো হয়।
কৃষ্ণ মৃত্তিকার দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
কৃষ্ণ মৃত্তিকার দুটি বৈশিষ্ট্য – 1. কৃষ্ণ মৃত্তিকায় সূক্ষ্ম কণার পলি ও কাদার পরিমাণ বেশি থাকে, ফলে এর জলধারণক্ষমতা বেশি। 2. কৃষ্ণ মৃত্তিকায় নাইট্রোজেন ও জৈব পদার্থ কম থাকলেও, ক্যালশিয়াম, চুন, অ্যালুমিনিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম কার্বনেট প্রভৃতি খনিজ পদার্থ পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে, যা মাটিকে উর্বর করে তোলে।
কৃষ্ণ মৃত্তিকার জলধারণক্ষমতা বেশি কেন?
কৃষ্ণ মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা: মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা মূলত মৃত্তিকার গঠন এবং কণার আকারের ওপর নির্ভরশীল। যদি মৃত্তিকার গঠন সূক্ষ্ম হয়, অর্থাৎ মৃত্তিকার কণাগুলি খুব ছোট এবং ঘনভাবে সন্নিবিষ্ট হয়, তাহলে সেই মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে, যদি গঠন স্থূল হয়, অর্থাৎ মৃত্তিকা বড়ো বড়ো বালুকণার দ্বারা গঠিত হয়, তাহলে তা জল ধরে রাখতে পারে না এবং অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়। কৃষ্ণ মৃত্তিকায় সূক্ষ্ম পলি ও কাদা (মন্টমরিলোনাইট কাদা) কণার পরিমাণ বেশি থাকে, যার ফলে এর গঠন সূক্ষ্ম হয় এবং এটি অধিক পরিমাণে জল ধরে রাখতে সক্ষম হয়।
সিরোজেম কী?
সিরোজেম: সিরোজেম হল রাজস্থানের মরু অঞ্চল, গুজরাটের কচ্ছ ও কাথিয়াবাড় উপদ্বীপের উত্তরাংশে পাওয়া যায় এমন জৈব পদার্থহীন বা স্বল্প জৈব পদার্থযুক্ত বালিপূর্ণ ও লবণের আধিক্যযুক্ত মাটি। এই মাটির আরেক নাম মরু মাটি, এবং এটি প্রায়শই ‘সিরোজেম’ নামে পরিচিত।
সমোন্নতি রেখা চাষ কীভাবে মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ করে?
সমোন্নতি রেখা চাষ- পার্বত্য উপত্যকার ঢালু জমিতে একই উচ্চতা বা সমোন্নতি রেখা বরাবর ঢালের সঙ্গে আড়াআড়িভাবে যে চাষ করা হয়, তাকে সমোন্নতি রেখা চাষ বলে। এই ধরনের চাষে সমোন্নতি রেখা বরাবর দীর্ঘাকার উঁচু বাঁধ দেওয়া হয়। এর ফলে চালের দিকে জলের ভূপৃষ্ঠীয় প্রবাহ নিয়ন্ত্রিত হয় এবং তাই মাটির ওপরের স্তর অভিকর্ষের টানে নীচের দিকে গড়িয়ে যেতে পারে না। সুতরাং সমোন্নতি রেখা চাষ করলে জলের সঙ্গে বাহিত মাটি ধাপের বাঁধ বা আল দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ওখানেই থেকে যায়, অর্থাৎ মৃত্তিকাক্ষয় হতে পারে না।
মৃত্তিকা ক্ষয় প্রতিরোধের দুটি পদ্ধতি উল্লেখ করো।
মৃত্তিকাক্ষয় প্রতিরোধের দুটি পদ্ধতি: 1. বৃক্ষরোপণ : মৃত্তিকা সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হল ভূমিকে বৃক্ষ দ্বারা আবৃত রাখা এবং এজন্য বৃক্ষরোপণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। 2. ঢালু জমিতে দ্রুত জলপ্রবাহের জন্য মৃত্তিকা ক্ষয় বেশি হয়। কিন্তু সেই ঢালে ধাপ কেটে চাষাবাদ করলে ভূপৃষ্ঠীয় প্রবাহ হ্রাস পায় এবং তার ফলে মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ করা যায়।
পলিমাটি অত্যন্ত উর্বর হয় কেন?
পলিমাটিতে ফসফরাস ও পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে। এছাড়াও, এই মাটির মধ্যে পলি, কাদা ও বালির পরিমাণ প্রায় সমান থাকে, যার কারণে দোআঁশ মাটির মতো এর জলধারণ ক্ষমতা বেশি হয়। এই বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে পলিমাটি অত্যন্ত উর্বর।
ল্যাটেরাইট মাটির নামকরণ কীভাবে হল?
লাতিন শব্দ ‘ল্যাটার’ শব্দের অর্থ ‘ইট’, এই মাটির রং ইটের মতো বলে এই মাটিকে ল্যাটেরাইট মাটি বলে।
পলিমাটিতে কী ধরনের ফসলের চাষ হয়?
পলিমাটি অত্যন্ত উর্বর। তাই এই মাটিতে ধান, গম, পাট, আলু, আখ, ভুট্টা, তরমুজ, সবজি এবং তৈলবীজসহ নানা ধরনের ফসল চাষ করা হয়। পলিমাটি ফসল উৎপাদনের জন্য আদর্শ।
ঝুমচাষ কীভাবে মাটি ক্ষয় করে?
ঝুমচাষের সময় পার্বত্য অঞ্চলে জঙ্গল কেটে তা পুড়িয়ে ফেলা হয়। এতে মাটির উন্মুক্ত স্তর বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যায়, ফলে মাটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং তা দ্রুত অপসারিত হয়।
ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার রং লাল কেন?
বৃষ্টিবহুল অঞ্চলে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে ল্যাটেরাইট মাটির বিভিন্ন খনিজ উপাদান, যেমন – পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, এবং ম্যাগনেশিয়াম ধুয়ে মাটির গভীরে চলে যায়। মাটির উপরের স্তরে লোহার অক্সাইড ও অ্যালুমিনিয়ামের অক্সাইড থেকে যায়, যার কারণে ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার রং লাল হয়।
রেগুরমাটি বা কালোমাটি খুব উর্বর কেন?
অথবা, ভারতের কৃষ্ণ মৃত্তিকা উর্বর কেন?
রেগুরমাটিতে নাইট্রোজেন এবং ফসফেটের পরিমাণ কম থাকলেও এতে ক্যালশিয়াম, চুন, ম্যাগনেশিয়াম এবং পটাশিয়ামের মতো খনিজ পদার্থ রয়েছে। এছাড়াও এই মাটিতে পলি ও কাদার পরিমাণ বেশি হওয়ায় এর জলধারণ ক্ষমতা খুব বেশি, যা মাটিকে উর্বর করে তোলে।
পশুচারণ কীভাবে মাটি ক্ষয়কে ত্বরান্বিত করে?
পশুচারণের সময় পশুরা তৃণভূমি খায় এবং ছোট গাছ উপড়ে ফেলে, যার ফলে মাটির বাঁধন শিথিল হয়ে যায়। পশুর পায়ের খুরের চাপেও মাটির উপরিভাগে ক্ষয় সৃষ্টি হয়। ওই শিথিল মাটির ওপর বৃষ্টির জল পড়লে মাটি ক্ষয় তরান্বিত হয়।
কৃষ্ণ মৃত্তিকায় কী কী ফসল উৎপন্ন হয়?
কৃষ্ণ মৃত্তিকা খুব উর্বর। এই মাটিতে নানাধরনের ফসল উৎপাদিত হয় – কার্পাস বা তুলো, চিনাবাদাম, গম, পেঁয়াজ, তৈলবীজ, তামাক প্রভৃতি। সামান্য জলসেচের ব্যবস্থা করতে পারলে কৃষ্ণ মৃত্তিকায় কৃষি উৎপাদন বাড়ানো যায়।
লোহিত বা লালমাটিতে কী কী ফসল চাষ হয়?
লোহিত মাটি খুব উর্বর নয়। এই মাটিতে – ভুট্টা, সয়াবিন, চিনাবাদাম, কফি, মিলেট, আঙুর প্রভৃতি ফসল জন্মায়।
উপকূলীয় মাটির দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উপকূলীয় মাটির দুটি বৈশিষ্ট্য হল – 1. উপকূলীয় মাটি সমুদ্র তীরবর্তী স্থানে গঠিত হয়, তাই এই মাটির লবণতা বেশি থাকে। 2. এছাড়া, উপকূলীয় মাটিতে বালির পরিমাণ বেশি থাকে। তবে নদী অধ্যুষিত অঞ্চলে কাদার পরিমাণ তুলনামূলক বেশি হয়।
পার্বত্য মাটিতে কী কী ফসল ভালো জন্মায়?
পার্বত্য মাটিতে বিভিন্ন ধরনের বাগিচা ফসল ভালো জন্মায়। চা, কফি, মশলা, গম, বার্লি ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়। এছাড়াও, বিভিন্ন ধরনের ফলের বাগিচা যেমন – কমলালেবু, আপেল, চেরি ইত্যাদি ফলের চাষও হয়।
মরু মাটিতে কী কী ফসল ভালো জন্মায়?
মরু অঞ্চলের মাটিতে সাধারণত খুব কম চাষাবাদ হয়। তবে সেচের মাধ্যমে লবণ সহ্যকারী ফসল যেমন – তুলো, গম, বার্লি, ডাল, মিলেট ইত্যাদি ফসল চাষ করা যায়।
ভূপ্রকৃতি কীভাবে মৃত্তিকা ক্ষয়ে প্রভাব বিস্তার করে?
সমভূমির তুলনায় পার্বত্য অঞ্চল বা মালভূমিতে মাটির ক্ষয় বেশি হয়। ঢাল বেশি থাকায় মাটির স্তর পুরু হয় না এবং বৃষ্টিপাত বা অন্যান্য কারণে মাটি দ্রুত অপসারিত হয়। এজন্য পার্বত্য অঞ্চলে সমভূমির তুলনায় মাটির ক্ষয় বেশি ঘটে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি কীভাবে মাটি ক্ষয়ে প্রভাব বিস্তার করে।
যেখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি, সেখানে মাটির ক্ষয়ও বেশি হয়। মানুষ বাড়িঘর নির্মাণ, রাস্তাঘাট তৈরি, জলনিকাশি ব্যবস্থা প্রয়োগ এবং অতিরিক্ত কৃষিকাজের ফলে মাটির ক্ষয় বৃদ্ধি পায়।
প্রথাগত কৃষি কীভাবে মাটি ক্ষয় করে?
প্রথাগত কৃষি পদ্ধতিতে ফলন বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে জমির প্রকৃতি বা মাটির উপাদান বিচার না করে, রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রয়োগ করলে মাটি ক্ষয়ের মাত্রা বাড়তে থাকে। ট্রাক্টর, হারভেস্টর, ইত্যাদি অত্যধিক ব্যবহার করলে মাটি সহজে হালকা হয় ও মাটির ক্ষয়কে বাড়িয়ে তোলে।
ধাপচাষ কীভাবে মাটি ক্ষয় প্রতিরোধ করে?
পাহাড়ি বা ঢালু জমিতে ধাপ গঠন করে কৃষিকাজ করলে সেখানে প্রবহমান জলের গতি হ্রাস পায়। এধরনের ধাপচাষের দ্বারা মাটিক্ষয় অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
সমোন্নতি রেখা বরাবর চাষ বলতে কী বোঝ?
পার্বত্য অঞ্চলে সমান উচ্চতায় অবস্থিত বিন্দুগুলোকে যোগ করে যে রেখা গঠন করা হয়, তাকে সমোন্নতি রেখা বলা হয়। ওই রেখা বরাবর জমি সমতল করে শস্যক্ষেত্র তৈরি করা হয় এবং জলপ্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। এই পদ্ধতিতে চাষ করলে ভূমিক্ষয় হ্রাস পায়।
আজকের আর্টিকেলে, আমরা মাধ্যমিক মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায়ের “ভারতের মৃত্তিকা বিভাগ” বিষয়টির উপর সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলি কেবল মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্যই নয়, বরং বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই বিষয়টি প্রায়শই এসব পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত থাকে।
আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। যদি আপনাদের কোন প্রশ্ন বা অসুবিধা হয়, তাহলে আমাকে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন। আমি উত্তর দেওয়ার জন্য আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।