এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “মরু অঞ্চলের সম্প্রসারণ রোধের জন্য থর ও সাহারা মরুভূমিতে কোন্ কোন্ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “মরু অঞ্চলের সম্প্রসারণ রোধের জন্য থর ও সাহারা মরুভূমিতে কোন্ কোন্ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের প্রথম অধ্যায় “বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তার দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ – বায়ুর বিভিন্ন কাজ ও তাদের দ্বারা সংশ্লিষ্ট ভূমিরূপ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

মরু অঞ্চলের সম্প্রসারণ রোধের জন্য থর ও সাহারা মরুভূমিতে কোন্ কোন্ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে?
অথবা, মরুভূমির প্রসার রোধ করতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?
মরু অঞ্চলের সম্প্রসারণ রোধে থর ও সাহারা মরুভূমিতে গৃহীত ব্যবস্থাসমূহ –
কুক ও ওয়ারেন (1973) -এর মতে, পৃথিবীর ভূমিভাগের প্রায় 36% স্থান (ভিন্ন মতে 40-41%) হল মরু, মরু প্রায় ও শুষ্ক সাভানা অঞ্চলের অন্তর্গত। এই মরুভূমির \( \frac13 \) থেকে \( \frac14 \) অংশ বালি দ্বারা আবৃত। পরিবেশের ওপর মানুষের যথেচ্ছ অত্যাচারের কারণে এর প্রতিনিয়ত সম্প্রসারণ হচ্ছে। বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে মরুভূমি গ্রাস করছে এবং এই মরুকরণ মানবসভ্যতার কাছে এক অশনি সংকেত। জীববৈচিত্র্য রক্ষা তথা নিজেদের তাগিদে এর সম্প্রসারণ বন্ধ করতে হবে। 1980 খ্রিস্টাব্দের পর থেকে মরু সম্প্রসারণ রোধে যে সকল পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে, সেগুলি হল –
- রাজস্থানের থর মরুভূমির চলমান বালিয়াড়ির তলদেশ থেকে 1 মিটার গভীরে প্রচুর আর্দ্রতা থাকে যা বনসৃজনের পক্ষে অনুকূল। Central Arid Zone Research Institute (CAZRI) -এর আবিষ্কৃত প্রযুক্তির মাধ্যমে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বনসৃজন করেছে।
- থর মরুভূমির ইন্দিরা গান্ধি খাল প্রকল্পের সেচ সেবিত এলাকায় বাবলাজাতীয় গাছ লাগিয়ে বালিয়াড়ির চলনকে অনেকটাই আয়ত্তে আনা গেছে।
- বিজ্ঞানভিত্তিক শুষ্ক কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন হয়েছে।
- পশুচারণকে এই সব অঞ্চলে ন্যূনতম করা হয়েছে।
- মরুভূমি সংলগ্ন অঞ্চলের মৃত্তিকার উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। যেমন –
- শস্যাবর্তন
- শস্য কেটে নেওয়ার পর মাটিতে 30-40 সেমি যে অংশ থাকে তা পরে পচে গিয়ে জৈব সারের জোগান দেয়, যাতে মৃত্তিকা ক্ষয় 50% কমে এবং কৃষি উৎপাদন 11% বৃদ্ধি পায়।
- দক্ষিণ-পশ্চিম মিশরে তোসকা (Toshka) প্রকল্পের সাহায্যে 955 মিলিয়ন হেক্টর জমিকে মরুভূমি থেকে উদ্ধার করে কৃষিক্ষেত্রে পরিণত করা হয়েছে।
- পশ্চিম সাহারায় পৃথিবীর বৃহত্তম পাম্পিং স্টেশন তৈরি হয়েছে। 14.5 মিলিয়ন কিউবিক মিটার জল প্রত্যহ নাসের হ্রদ থেকে নিয়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সেচ করে কৃষিক্ষেত্রে পরিণত করা হয়েছে।
- থর মরুভূমির প্রান্তদেশের বিভিন্ন অংশে এবং সাহারা মরুভূমির সম্পূর্ণ উত্তর ও দক্ষিণ অংশে গাছ লাগিয়ে সবুজায়ন (Green Wall) ঘটানো হয়েছে। এইভাবে –
- যেখানে বালির গভীরতা কম সেখানে মুনজা জাতীয় উদ্ভিদ রোপণ করা হয়েছে। যারা অল্প সময়ের মধ্যেই নিরবচ্ছিন্ন উদ্ভিদ প্রাচীর সৃষ্টি করেছে।
- এর বাইরের দিকে Juli Nora, Teco-mella, Lyme grass, Sea couch grass, Marram grass, Jatropha Acacia Tortilis, Jajoba, Marine eel grass, Pickle-weed এবং লবণপ্রিয় উদ্ভিদ, যেমন – Salicornia উদ্ভিদ লাগানো হয়েছে।
- বালিয়াড়ির পৃষ্ঠদেশে দাবার ছকের অনুকরণে ছোটো ছোটো এলাকায় নিবিড় পদ্ধতিতে জঙ্গল সৃষ্টি করা হয়েছে।
- উদ্ভিদ সমূহের দ্বারা আশ্রয় বলয় (Shelter Belt) এবং বায়ুভাঙন (Wind Break) নির্মাণের মাধ্যমে জলবায়ুর উন্নতি ঘটিয়ে বসতি ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ঘটানো হয়েছে।
- সাহারার দক্ষিণ অংশে, পশ্চিমে সেনেগাল থেকে পূর্বে জিবোটি (Djibouti) পর্যন্ত 11টি দেশের ওপর দিয়ে প্রায় 8000 কিমি লম্বা ও 15 কিমি চওড়া জায়গায় গাছ লাগানো হয়েছে।
- নাইজেরিয়াতে Arid Zone Afforestation Project (AZAP) মরুকরণ রোধ, বনসৃজন ও অন্যান্য কাজ করে চলেছে।
- রাজস্থানে থর মরুভূমিতে রাজস্থান খাল প্রকল্প মরুকরণ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- তৃণভূমির উন্নতি ঘটাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। যথা –
- লানা, খেজুর, বুডি বাবলার পরিমাণের বৃদ্ধি
- তেল উৎপাদনের জন্য সাইট্রাসাস, ল্যানাটাস কোলোসিনথেসিস এবং ঔষধ প্রস্তুতে আলএম, অর্নিবিয়া উৎপাদনে উৎসাহ প্রদান।
- ভূপৃষ্ঠস্থ জলের বিজ্ঞানসম্মত পরিচর্যা ও ব্যবহার –
- সমোন্নতি বরাবর নালা খনন-পশ্চিম রাজস্থানে 5-6 মিটার দূরত্বে ছোটো ছোটো নালা নির্মাণ করে মৃত্তিকা তৃণের গুণগত ও পরিমাণগত উন্নতি সম্ভব হয়েছে।
- চেকড্যাম তৈরি।
- নদী সংস্কার।
- পশুচারণ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটানো হয়েছে।
- পুনঃবনসৃজন প্রকল্প।
- Woodlot plantion প্রভৃতি পদ্ধতি গৃহীত হয়েছে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
মরুভূমির সম্প্রসারণ বা মরুকরণ কি?
মরুকরণ হল একটি প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে উর্বর জমি ধীরে ধীরে মরুভূমিতে পরিণত হয়। এর প্রধান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে অত্যধিক পশুচারণ, বন উজাড়, অপরিকল্পিত সেচ ব্যবস্থা, এবং জলবায়ু পরিবর্তন।
মরুকরণ রোধে থর মরুভূমিতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
থর মরুভূমিতে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলি নেওয়া হয়েছে –
1. বনসৃজন – Central Arid Zone Research Institute (CAZRI) -এর প্রযুক্তি ব্যবহার করে বনসৃজন করা হয়েছে।
2. ইন্দিরা গান্ধি খাল প্রকল্প – এই প্রকল্পের মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থা চালু করে বাবলা জাতীয় গাছ লাগানো হয়েছে, যা বালিয়াড়ির চলন রোধ করেছে।
3. শুষ্ক কৃষি ব্যবস্থা – বিজ্ঞানভিত্তিক শুষ্ক কৃষি পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।
4. পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ – পশুচারণের পরিমাণ কমিয়ে আনা হয়েছে।
5. মৃত্তিকা সংরক্ষণ – শস্যাবর্তন ও জৈব সারের ব্যবহার করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সাহারা মরুভূমিতে মরুকরণ রোধে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে?
সাহারা মরুভূমিতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া হয়েছে –
1. তোসকা প্রকল্প – দক্ষিণ-পশ্চিম মিশরে এই প্রকল্পের মাধ্যমে 955 মিলিয়ন হেক্টর জমিকে মরুভূমি থেকে উদ্ধার করে কৃষিজমিতে পরিণত করা হয়েছে।
2. পাম্পিং স্টেশন – পশ্চিম সাহারায় পৃথিবীর বৃহত্তম পাম্পিং স্টেশন তৈরি করে নাসের হ্রদ থেকে জল সরবরাহ করা হচ্ছে।
3. গ্রিন ওয়াল – সাহারার দক্ষিণ অংশে 11টি দেশ জুড়ে 8000 কিলোমিটার লম্বা ও 15 কিলোমিটার চওড়া সবুজ প্রাচীর তৈরি করা হয়েছে।
মরুকরণ রোধে গাছ লাগানোর গুরুত্ব কী?
গাছ লাগানোর মাধ্যমে মরুকরণ রোধ করা যায় কারণ –
1. গাছ মাটির ক্ষয় রোধ করে এবং মাটির উর্বরতা বাড়ায়।
2. গাছ বায়ুপ্রবাহ কমিয়ে বালিয়াড়ির চলন রোধ করে।
3. গাছ জলবায়ুর উন্নতি ঘটায় এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে।
মরুকরণ রোধে স্থানীয় জনগণের ভূমিকা কী?
স্থানীয় জনগণ নিম্নলিখিত ভূমিকা পালন করতে পারে –
1. বনসৃজনে অংশগ্রহণ – স্থানীয়ভাবে গাছ লাগানো ও রক্ষণাবেক্ষণ করা।
2. জল সংরক্ষণ – জল সঞ্চয় ও সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা।
3. স্থায়ী কৃষি পদ্ধতি অনুসরণ – শুষ্ক কৃষি ও শস্যাবর্তন পদ্ধতি অনুসরণ করা।
মরুকরণ রোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ?
আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে –
1. প্রযুক্তি ও জ্ঞান বিনিময় করা যায়।
2. আর্থিক সহায়তা প্রদান করা যায়।
3. বৃহৎ প্রকল্প যেমন গ্রিন ওয়াল অব আফ্রিকা বাস্তবায়ন করা যায়।
মরুকরণ রোধে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলির ভূমিকা কী?
সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলি নিম্নলিখিত ভূমিকা পালন করে –
1. প্রকল্প বাস্তবায়ন – যেমন থর মরুভূমিতে ইন্দিরা গান্ধি খাল প্রকল্প।
2. গবেষণা ও উন্নয়ন – CAZRI -এর মতো সংস্থাগুলি গবেষণা করে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে।
3. সচেতনতা বৃদ্ধি – স্থানীয় জনগণকে মরুকরণের বিপদ সম্পর্কে সচেতন করা।
মরুকরণ রোধে ব্যক্তিগতভাবে কী করা যায়?
ব্যক্তিগতভাবে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া যায় –
1. জল সঞ্চয় – জল অপচয় রোধ করা।
2. গাছ লাগানো – বাড়ির আশেপাশে গাছ লাগানো ও রক্ষণাবেক্ষণ করা।
3. পুনর্ব্যবহার – প্লাস্টিক ও অন্যান্য বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করা।
মরুকরণ রোধে প্রযুক্তির ব্যবহার কীভাবে সাহায্য করে?
প্রযুক্তির ব্যবহার নিম্নলিখিতভাবে সাহায্য করে –
1. সেচ ব্যবস্থা – ড্রিপ ইরিগেশন ও স্প্রিংকলার সিস্টেমের মাধ্যমে জল সঞ্চয়।
2. মৃত্তিকা সংরক্ষণ – শস্যাবর্তন ও জৈব সারের ব্যবহার।
3. ডেটা বিশ্লেষণ – স্যাটেলাইট ইমেজ ও ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে মরুকরণের হার নিরীক্ষণ।
মরুকরণ রোধে ভবিষ্যতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?
ভবিষ্যতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া উচিত –
1. জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা – কার্বন নিঃসরণ কমানো।
2. স্থায়ী উন্নয়ন – পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন।
3. গবেষণা ও উন্নয়ন – নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহার।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “মরু অঞ্চলের সম্প্রসারণ রোধের জন্য থর ও সাহারা মরুভূমিতে কোন্ কোন্ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “মরু অঞ্চলের সম্প্রসারণ রোধের জন্য থর ও সাহারা মরুভূমিতে কোন্ কোন্ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের প্রথম অধ্যায় “বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তার দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ – বায়ুর বিভিন্ন কাজ ও তাদের দ্বারা সংশ্লিষ্ট ভূমিরূপ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।