V-আকৃতির উপত্যকা – কল্পনা করো, পাহাড়ের চূড়া থেকে দ্রুত বয়ে চলেছে একটা নদী। নদীর জলের সাথে ভেসে বেড়াচ্ছে নুড়ি, পাথর, আর কত কি! এই নুড়ি-পাথর গুলো নদীর তলদেশে ঘষা খেয়ে খেয়ে নদীকে কেমন করে তোলে জানো?
হ্যাঁ, ঠিক ধরেছো! নদীটাকে গভীর এবং সংকীর্ণ করে তোলে। নদীর দু’পাশে তখন তৈরি হয় খাড়া দেয়ালের মতো উঁচু পাহাড়। এই গভীর, সংকীর্ণ নদী আর উঁচু পাহাড় মিলে তৈরি করে এক অদ্ভুত দৃশ্য, যা দেখতে অনেকটা ইংরেজি ‘V’ অক্ষরের মতো। তাই এই নদীগুলোকে বলা হয় V-আকৃতির উপত্যকা।
কতটা গভীর হতে পারে এই V-আকৃতির উপত্যকা? কখনো কখনো এই উপত্যকাগুলো এতই গভীর হয় যে, তলদেশ থেকে পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত উচ্চতার পার্থক্য হয়ে যায় কয়েক হাজার মিটার!.
‘V’-আকৃতির উপত্যকা কি?
উচ্চ-গতির বা পার্বত্য প্রবাহে নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে যেসব ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, ‘V’-আকৃতির উপত্যকা তার মধ্যে অন্যতম। পার্বত্য অঞ্চলে ভূমির ঢাল খুব বেশি থাকায় নদীর স্রোতের বেগ প্রচন্ড হয়। নদীর জলস্রোতের সাথে বাহিত প্রস্তরখণ্ড, নুড়ি ইত্যাদি নদীর তলদেশে অবঘর্ষণ ক্ষয়ের মাধ্যমে নদী উপত্যকাকে গভীর ও সংকীর্ণ করে তোলে।
এই প্রক্রিয়ায় নদী উপত্যকার দু’ধার খাড়া দেয়ালের আকার ধারণ করে। এই গভীর ও সংকীর্ণ নদী উপত্যকা ইংরেজি ‘V’ অক্ষরের মতো দেখতে হয়, তাই একে ‘V’-আকৃতির উপত্যকা বলা হয়। কখনো কখনো এই সমস্ত নদী উপত্যকার তলদেশের সাথে পার্শ্ববর্তী পর্বতের চূড়ার মধ্যে উচ্চতার পার্থক্য প্রায় কয়েক হাজার মিটার পর্যন্ত হতে পারে।
উদাহরণ: ভারতের শতদ্রু, ব্রহ্মপুত্র, চিনের ইয়াংসি, জার্মানির রাইন
নদীর উচ্চগতিতে V – আকৃতির উপত্যকা সৃষ্টি হয় কেন?
পার্বত্য অঞ্চলের প্রবাহপথকে নদীর উচ্চগতি বলা হয়। এই অংশে নদীর গতিপথে ‘V’ আকৃতির উপত্যকা সৃষ্টি হওয়ার কারণ —
- ভূমির ঢাল – পার্বত্য অঞ্চলের ভূমি বন্ধুর এবং ভূমির ঢালও বেশি। এজন্য নদী প্রবল বেগে নীচের দিকে নামে। প্রবল স্রোত এবং স্রোতের সঙ্গে বাহিত শিলাখণ্ড নদীগর্ভে ঘর্ষণ প্রক্রিয়ায় নদী উপত্যকায় নিম্নক্ষয় বৃদ্ধি করে। এভাবে নদী উপত্যকা ক্রমশ সংকীর্ণ ও গভীর হতে থাকে।
- বৃষ্টিবহুলতা ও আবহবিকার – বৃষ্টিবহুল পার্বত্য অঞ্চলে প্রথমে নদী উপত্যকার দুই পার্শ্বদেশ কিছুটা সংকীর্ণ থাকলেও রাসায়নিক আবহবিকার ও পুঞ্জিত ক্ষয়ের প্রভাবে (পার্শ্বক্ষয়ের দ্বারা) নদী উপত্যকা ক্রমশ প্রশস্ত হয়ে পড়ে। তা ছাড়া,
- ভূমিধস – দুই পাশ থেকে নদীতে ধস নামে ও কিছু উপনদীও এসে নদীখাতে মিলিত হয়। এর ফলে নদীখাত কিছুটা প্রশস্ত হয়ে ‘V’-আকৃতির উপত্যকা সৃষ্টি করে।
আরও পড়ুন – অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ কীভাবে তৈরি হয়?
V – আকৃতির উপত্যকা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
V আকৃতির উপত্যকা কীভাবে তৈরি হয়?
V আকৃতির উপত্যকা নদীর দ্রুত প্রবাহের ফলে তৈরি হয়। নদী যখন দ্রুত গতিতে বয়ে চলে তখন নদীর দু’পাশের তীর ক্ষয় করে এবং উপত্যকা তৈরি করে। এই ক্ষয় প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে এবং উপত্যকা ক্রমশ গভীর ও V আকৃতির হয়ে ওঠে।
V আকৃতির উপত্যকা কাকে বলে?
V আকৃতির উপত্যকা হলো এমন একটি উপত্যকা যা ইংরেজি V অক্ষরের মতো দেখতে। এই উপত্যকাগুলি নদীর দ্রুত প্রবাহের ফলে তৈরি হয়। নদী যখন দ্রুত গতিতে বয়ে চলে তখন নদীর দু’পাশের তীর ক্ষয় করে এবং উপত্যকা তৈরি করে। এই ক্ষয় প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে এবং উপত্যকা ক্রমশ গভীর ও V আকৃতির হয়ে ওঠে।