এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “নর্দমার জলকে কীভাবে পরিশোধন করা হয়?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “নর্দমার জলকে কীভাবে পরিশোধন করা হয়?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের চতুর্থ অধ্যায় “বর্জ্য ব্যবস্থাপনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

নর্দমার জলকে, কীভাবে পরিশোধন করা হয়?
অথবা তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়গুলি সংক্ষেপে লেখো।
তরল বর্জ্য পরিশোধনের বিভিন্ন পর্যায় –
বাড়ি-ঘর, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, পৌরপ্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা, মানুষের বাসস্থান ও কর্মস্থান থেকে যে দূষিত বা বর্জ্য জল নর্দমার মধ্যে এসে পড়ে তাতে জৈব পদার্থ, প্লাস্টিক, ধাতব পদার্থ, সংক্রামক বর্জ্য, ধুলো, বালি, কাদা প্রভৃতি মিশে থাকে। এই দুষিত জল সর্বত্র দুষিত করবে। এই কারণে নর্দমার এই দুষিত জলকে পরিশোধন করা প্রয়োজন। মূলত তিনটি পর্যায়ে জলকে পরিশোধন করা হয়। যথা –
- প্রাথমিক পরিশোধ।
- ছাঁকনি দ্বারা ছাঁকা ও থিতানো।
- তঞ্চন।
- পরিস্রাবণ।
- সংক্রামক রোগজীবাণু শূন্যকরণ।
- মাধ্যমিক পরিশোধন।
- মৃদুকরণ।
- বাতান্বিতকরণ।
- চূড়ান্ত পরিশোধন।
প্রাথমিক পরিশোধন (Primary Treatment) –
- ছাঁকনি দ্বারা ছাঁকা ও থিতানো (Screening and Sedimenta-tion) – নর্দমার জলকে বড়ো ছাঁকনির মধ্য দিয়ে প্রবেশ করানো হয়, তাতে বড়ো কঠিন বর্জ্যগুলি ছাঁকা হয়ে পৃথক হয়ে যায়। এর পর ওই জলকে বড়ো বড়ো জলাধারে (setting tank) রেখে থিতানো হয়। ফলে মাটি, বালি, কাদা ও ভারী ধূলিকণাসমূহ জলাধারের তলদেশে থিতিয়ে পড়ে।
- তঞ্চন (Coagulation) – কখনো-কখনো জলে মিশে থাকা সূক্ষ্ম ধূলিকণা ও বর্জ্যকণা স্বাভাবিকভাবে থিতিয়ে পড়তে চায় না। সেসব ক্ষেত্রে ফটকিরি, অ্যালাম [যেমন – পটাশ অ্যালাম K2SO4, Al2(SO4)3, 24H2O] প্রভৃতি জলে পরিমাণ মতো দেওয়া হয়। এর ফলে ওই সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম কণাগুলি একত্রিত অবস্থায় আকারে বড়ো হয়ে থিতিয়ে পড়ে। রাসায়নিক পদার্থের সাহায্যে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বর্জ্য কণা ও কলয়েড কণার থিতানোকে তঞ্চন বলে।
- পরিস্রাবণ (Filtration) – এরপর থিতিয়ে পড়া কাদা, ময়লা বা স্নাজ -এর উপরিভাগের জলকে বালির স্তরের মধ্য দিয়ে চালনা করে পরিস্তুত করা হয়।
- সংক্রামক রোগজীবাণু শূন্যকরণ (Abolishing of infectious elements and bacterias) – এরপর ওই পরিস্তুত জলকে সংক্রামক রোগজীবাণু শূন্যকরণের জন্য ক্লোরিন বা ব্লিচিং দিয়ে আন্দোলিত করা হয়। বর্তমানে ক্লোরিনের জায়গায় অতিবেগুনি রশ্মি বা হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড (H2O2) বা সিলভার আয়ন (Ag+) ব্যবহার করা হয়।

মাধ্যমিক পর্যায়ের পরিশোধন (Secondary Treatment) –
- মৃদুকরণ (Softening) – প্রাথমিক শোধনযুক্ত জলকে নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে আসা যায় মাধ্যমিক শোধনের জন্য। এখানে সজ্জিত নুড়ি-পাথরের মধ্য দিয়ে জলকে চালনা করা হয়। আণুবীক্ষণিক জীব দ্বারা জৈব ক্ষয়িষ্ণু পদার্থগুলি দূরীকরণ করা হয়। এর পরেও পরিষ্কার জলে ক্যালশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড, সালফেট, বাইকার্বনেট প্রভৃতি দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে। এই জলকে প্রথমে ক্যাটায়ন ও পরে অ্যানায়ন বিনিময়কারীর মধ্য দিয়ে চালনা করা হয়। ফলে জলের ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন মুক্ত হয়ে জল মৃদু ও প্রায় বিশুদ্ধ হয়।
- বাতান্বিতকরণ (Aeration) – প্রায় বিশুদ্ধ মৃদু জলের মধ্যে CO2, H2S প্রভৃতির পরিমাণ কমিয়ে বা দূর করে O2 -এর পরিমাণ বাড়ানোর জন্য উচ্চচাপযুক্ত বায়ুকে জলের মধ্যে চালনা করা হয়। ফলে অবাঞ্ছিত গ্যাসসমূহ বেরিয়ে যায় এবং জলে O2 -এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
চূড়ান্ত পরিশোধন (Ultimate Treatment) –
দ্বিতীয় পর্যায়ের পরিশোধিত জলকে বিশাল জলাধারে নিয়ে আসা হয়। সেখানে কিছু রাসায়নিক যৌগ বা দ্রব্য ব্যবহার করে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, সায়ানাইড, অ্যামোনিয়া প্রভৃতি দূর করে জলকে পানের যোগ্য করে তোলা হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
নর্দমার জল পরিশোধন কেন প্রয়োজন?
নর্দমার জলে বিভিন্ন ধরনের দূষিত পদার্থ (জৈব বর্জ্য, রাসায়নিক পদার্থ, রোগজীবাণু ইত্যাদি) থাকে, যা পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। পরিশোধনের মাধ্যমে এই জলকে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য বা প্রকৃতিতে ফেরত দেওয়ার উপযোগী করা হয়।
তরল বর্জ্য পরিশোধনের প্রধান পর্যায়গুলি কী কী?
তরল বর্জ্য পরিশোধন সাধারণত তিনটি পর্যায়ে করা হয় –
1. প্রাথমিক পরিশোধন (ছাঁকনি, থিতানো, তঞ্চন, পরিস্রাবণ)।
2. মাধ্যমিক পরিশোধন (জৈবিক পদ্ধতি, মৃদুকরণ, বাতান্বিতকরণ)।
4. চূড়ান্ত পরিশোধন (রাসায়নিক শোধন, জীবাণুমুক্তকরণ)।
প্রাথমিক পরিশোধনে কী কী পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়?
1. ছাঁকনি দ্বারা ছাঁকা – বড়ো কঠিন বর্জ্য (প্লাস্টিক, কাগজ ইত্যাদি) আলাদা করা।
2. থিতানো – জলাধারে রেখে বালি, কাদা ইত্যাদি তলায় জমা করা।
3. তঞ্চন – ফটকিরি বা অ্যালাম ব্যবহার করে সূক্ষ্ম কণাগুলো জমাট বাঁধিয়ে ফেলা।
4. পরিস্রাবণ – বালির স্তর দিয়ে জল ছেঁকে ময়লা দূর করা।
মাধ্যমিক পরিশোধনের উদ্দেশ্য কী?
জৈব বর্জ্য (যেমন – মল, খাদ্যকণা) ভেঙে ফেলার জন্য ব্যাকটেরিয়া ও অক্সিজেন ব্যবহার করা হয়। এতে জলের দূষণকারী পদার্থের পরিমাণ কমে।
বাতান্বিতকরণ (Aeration) কেন করা হয়?
অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য এবং দূষিত গ্যাস (CO₂, H₂S) দূর করতে উচ্চচাপে বায়ু প্রবেশ করানো হয়।
চূড়ান্ত পরিশোধনে কী করা হয়?
1. ক্লোরিন, অতিবেগুনি রশ্মি বা অন্যান্য রাসায়নিক ব্যবহার করে জীবাণুমুক্ত করা।
2. প্রয়োজন হলে ফসফেট, নাইট্রেট ইত্যাদি দূর করার জন্য অতিরিক্ত রাসায়নিক প্রক্রিয়া প্রয়োগ করা।
পরিশোধিত জল কী কাজে ব্যবহার করা যায়?
1. সেচের কাজে।
2. শিল্পে পুনর্ব্যবহার।
3. নদী বা জলাশয়ে ফেরত দেওয়া (পরিবেশের ক্ষতি না করে)।
বর্জ্য জল পরিশোধনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ কোনটি?
সব ধাপই গুরুত্বপূর্ণ, তবে জৈবিক শোধন (মাধ্যমিক পর্যায়) জলের দূষণকারী জৈব পদার্থ ভাঙতে সাহায্য করে, যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
বর্জ্য জল ব্যবস্থাপনায় সাধারণত কোন রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়?
1. তঞ্চনের জন্য – পটাশ অ্যালাম (K₂SO₄.Al₂(SO₄)₃.24H₂O)।
2. জীবাণুমুক্তকরণে – ক্লোরিন, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড (H₂O₂), সিলভার আয়ন (Ag⁺)।
3. মৃদুকরণে – ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন এক্সচেঞ্জার রেজিন।
বর্জ্য জল পরিশোধন না করলে কী সমস্যা হতে পারে?
1. নদী-নালা, জলাশয় দূষিত হবে।
2. মাটি ও ভূগর্ভস্থ জল দূষিত হয়ে ফসল ও পানীয় জলের উৎস নষ্ট হবে।
3. কলেরা, টাইফয়েডের মতো জলবাহিত রোগ ছড়াবে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “নর্দমার জলকে কীভাবে পরিশোধন করা হয়?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “নর্দমার জলকে কীভাবে পরিশোধন করা হয়?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের চতুর্থ অধ্যায় “বর্জ্য ব্যবস্থাপনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন