পশ্চিমবঙ্গে ভাগীরথী-হুগলি নদীতে বর্জ্য নিক্ষেপ ও তার প্রভাব সংক্ষেপে আলোচনা করো।

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “পশ্চিমবঙ্গে ভাগীরথী-হুগলি নদীতে বর্জ্য নিক্ষেপ ও তার প্রভাব সংক্ষেপে আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “পশ্চিমবঙ্গে ভাগীরথী-হুগলি নদীতে বর্জ্য নিক্ষেপ ও তার প্রভাব সংক্ষেপে আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের চতুর্থ অধ্যায় “বর্জ্য ব্যবস্থাপনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

পশ্চিমবঙ্গে ভাগীরথী-হুগলি নদীতে বর্জ্য নিক্ষেপ ও তার প্রভাব সংক্ষেপে আলোচনা করো।
পশ্চিমবঙ্গে ভাগীরথী-হুগলি নদীতে বর্জ্য নিক্ষেপ ও তার প্রভাব সংক্ষেপে আলোচনা করো।

পশ্চিমবঙ্গে ভাগীরথী-হুগলি নদীতে বর্জ্য নিক্ষেপ ও তার প্রভাব সংক্ষেপে আলোচনা করো।

পশ্চিমবঙ্গে ভাগীরথী-হুগলি নদীতে বর্জ্য নিক্ষেপ ও তার প্রভাব –

উৎপত্তিস্থল গোমুখ থেকে মোহানা বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত প্রায় 2500 কিমি দীর্ঘ গঙ্গা নদী ভারতীয় সভ্যতার ধারক ও বাহক। গোমুখ থেকে উৎপত্তি লাভ করে ভারতের উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে বিস্তৃত। পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে গঙ্গা দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে। প্রধান শাখাটি পদ্মা নামে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। অপর অপ্রধান শাখাটি ভাগীরথী-হুগলি নামে দক্ষিণে দিকে প্রায় 500 কিমি পথ অতিক্রম করে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। ভাগীরথীর দক্ষিণাংশ হুগলি নদী নামে পরিচিত। নবদ্বীপ থেকে যার দৈর্ঘ্য 280 কিমি।

শিল্প বর্জ্য নিক্ষেপ – শিল্পবিপ্লবের ফলে বিভিন্ন নদীর তীরে পাট, কাগজ, কাপড় প্রভৃতি শিল্প কারখানা গড়ে উঠতে থাকে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাবৃদ্ধির ফলে মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক চাহিদাপূরণের জন্য দ্রব্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বর্জ্য পদার্থের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিল্প কারখানাগুলি নদী তীরবর্তী অঞ্চলে গড়ে ওঠায় ভাগীরথী ও হুগলির জল দূষিত হচ্ছে। দুই তীরে গড়ে ওঠা অজস্র শিল্পের সমস্ত বর্জ্য এই নদীতে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। 150টি বড়ো শিল্প তাদের সমস্ত বর্জ্য নিক্ষেপ করে গঙ্গাতে। কল্যাণী থেকে ডায়মন্ড হারবারের মধ্যে নদীর দুই তীর থেকে প্রায় 350 ছোটো বড়ো নালার বর্জ্য জল গঙ্গাতে মিশছে। গঙ্গা দূষণে এদের ভূমিকা প্রায় 30%।

ভাগীরথী-হুগলি নদীতে বর্জ্য নিক্ষেপ
ভাগীরথী-হুগলি নদীতে বর্জ্য নিক্ষেপ

গৃহস্থালির কঠিন বর্জ্য – গৃহস্থালির আবর্জনা গঙ্গাকে প্রতিনিয়ত দূষিত করে চলেছে। প্রায় 860 মিলিয়ন লিটার গৃহস্থালির বর্জ্য প্রতিদিন এই নদীতে আসছে নর্দমার মধ্য দিয়ে। শহরের বহু কঠিন বর্জ্য অবাধে এই নদীতে ফেলা হয়। মুরশিদাবাদ থেকে দক্ষিণ 24 পরগনা পর্যন্ত প্রায় সর্বত্রই সব ধরনের বর্জ্য ভাগীরথী-হুগলি নদীতে নিক্ষেপ করা হয়।

প্রভাব –

  • কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের নির্ধারিত মান অনুসারে স্নানের জন্য গুণমানযোগ্য জলে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা 500/100 milliliter। কিন্তু ভাগিরথী-হুগলির অধিকাংশ স্থানে এর মাত্রা 50,000 -এর বেশি। দক্ষিণেশ্বরে এর মাত্রা 11000 এবং হাওড়া স্টেশনের সামনে এর মাত্রা 4,23,125 যা আসে মানুষ ও গবাদি পশুর মলমূত্র থেকে।
  • ফারাক্কা থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত ভাগীরথী-হুগলির দুই তীরে গড়ে ওঠেছে প্রায় হাজার সংখ্যক ইটভাটা। যার প্রতিটিতে গড়ে প্রায় 200 জন শ্রমিক কাজ করেন। এরা নদী তীরেই প্রাতঃক্রিয়া সম্পাদন করেন। বৃহত্তর কলকাতায় যে 1 কোটি 42 লক্ষ মানুষ বাস করেন তাদের \( \frac13 \) অংশ থাকেন বস্তিতে। এদের অধিকাংশের শৌচালয় বা স্বাস্থ্যকর পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা না থাকায় বিশাল সংখ্যক মানুষের রেচন বর্জ্য গঙ্গার জলে মেশে।
  • এ ছাড়া প্রতিমা নিরঞ্জনের কারণে প্রায় 10000 কিলোগ্রাম বিষাক্ত বর্জ্য প্রতিবছর ভাগীরথী-হুগলি নদীতে পড়ছে। উপরোক্ত কারণগুলি পশ্চিমবঙ্গে ভাগীরথী-হুগলি নদীর দূষণে বিশেষ ভাবে দায়ী।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

ভাগীরথী-হুগলি নদী কোথা থেকে উৎপত্তি হয়েছে?

গঙ্গা নদী গোমুখ হিমবাহ থেকে উৎপত্তি হয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে দুটি শাখায় বিভক্ত হয় — প্রধান শাখাটি পদ্মা নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করে, অন্যটি ভাগীরথী-হুগলি নামে পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।

ভাগীরথী-হুগলি নদীতে কী ধরনের বর্জ্য নিক্ষেপ করা হয়?

1. শিল্প বর্জ্য – পাট, কাগজ, বস্ত্র ও রাসায়নিক শিল্পের বিষাক্ত বর্জ্য।
2. গৃহস্থালি বর্জ্য – নর্দমার মাধ্যমে প্রতিদিন 860 মিলিয়ন লিটার মলমূত্র ও কঠিন বর্জ্য।
3. ধর্মীয় বর্জ্য – প্রতিমা বিসর্জনের ফলে সীসা, প্লাস্টার অব প্যারিস, রং ইত্যাদি।

নদী দূষণের প্রধান কারণ কী?

1. শিল্পকারখানার রাসায়নিক বর্জ্য নিষ্কাশন।
2. শহরাঞ্চলের অপরিশোধিত নর্দমার জল নদীতে মিশে যাওয়া।
3. বস্তি ও ইটভাটার মানুষের সরাসরি নদীতে মলমূত্র ত্যাগ।
4. ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে প্লাস্টিক ও বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার।

ভাগীরথী-হুগলি নদীর দূষণের প্রভাব কী?

1. স্বাস্থ্যগত প্রভাব – কলেরা, টাইফয়েড, হেপাটাইটিসের মতো জলবাহিত রোগ বৃদ্ধি।
2. জলজ প্রাণীর ক্ষতি – মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর মৃত্যু, বাস্তুতন্ত্রের ধ্বংস।
3. কৃষির ক্ষতি – দূষিত জল সেচে ব্যবহার করলে ফসলের ক্ষতি হয়।
4. অর্থনৈতিক প্রভাব – মৎস্যজীবীদের জীবিকা সংকট, পর্যটন শিল্পে ক্ষতি।

নদী দূষণ রোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত?

1. শিল্প বর্জ্য শোধন করে নদীতে ছাড়ার বাধ্যবাধকতা।
2. নগর পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থার উন্নয়ন ও বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন।
3. জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও প্লাস্টিক ও বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ।
4. নদী সংরক্ষণে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ জোরদার করা।

ভাগীরথী-হুগলি নদীর জলে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা কত?

কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের মান অনুযায়ী, স্নানের জলে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা হওয়া উচিত 500/100 মিলিলিটার, কিন্তু হাওড়া স্টেশনের কাছে এটি 4,23,125/100 মিলিলিটার পর্যন্ত পাওয়া গেছে, যা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

প্রতিমা বিসর্জনের ফলে কী ধরনের দূষণ হয়?

প্রতিবছর প্রায় 10,000 কিলোগ্রাম বিষাক্ত বর্জ্য (সীসা, প্লাস্টার অব প্যারিস, রাসায়নিক রং) নদীতে মেশে, যা জলজ প্রাণী ও মানুষের জন্য ক্ষতিকর।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “পশ্চিমবঙ্গে ভাগীরথী-হুগলি নদীতে বর্জ্য নিক্ষেপ ও তার প্রভাব সংক্ষেপে আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “পশ্চিমবঙ্গে ভাগীরথী-হুগলি নদীতে বর্জ্য নিক্ষেপ ও তার প্রভাব সংক্ষেপে আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের চতুর্থ অধ্যায় “বর্জ্য ব্যবস্থাপনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

বর্জ্যজনিত বায়ুদূষণ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে

বর্জ্যজনিত বায়ুদূষণ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে?

জীব-বিশ্লেষ্য ও জীব-অবিশ্লেষ্য পদার্থ বলতে কী বোঝো

জীব-বিশ্লেষ্য ও জীব-অবিশ্লেষ্য পদার্থ বলতে কী বোঝো? উদাহরণসহ বিপজ্জনক পদার্থের শ্রেণিবিভাগ করো।

বর্জ্যের পরিমাণগত হ্রাস কীভাবে করা যায়

বর্জ্যের পরিমাণগত হ্রাস কীভাবে করা যায়?

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি সম্পর্কে টীকা লেখো।

কল্পনা দত্ত স্মরণীয় কেন?

বীণা দাস স্মরণীয় কেন?

চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন সম্পর্কে টীকা লেখো।

বর্জ্যজনিত বায়ুদূষণ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে?